ক্লাস সেভেন এ যাবার এক সপ্তাহের মধ্যে একটা পরীক্ষা হয়। মান যাচাই পরীক্ষা। তেমন কিছু না। ২০ কি ২৫ মার্কসের মধ্যে বাংলা, ইংরেজি, অঙ্ক, সাধারন জ্ঞান সবই থাকে। এতদিনের ‘ভাল’ ছাত্র ক্লাসে ফার্স্ট, সেকেন্ড হওয়া ছাত্র আমি। পাত্তাই দিলাম না। প্রশ্ন পাবার পর আমার চেহারা হল এই রকম। কসম। এই রকমই হইছিল।
পরীক্ষা শেষ করলাম। ভাবলাম যাক বেচে গেলাম। দেখি, না বাচি নাই। খাতা দেবার সময় ফর্ম মাস্টার কম মার্কস পাওয়া খাতাগুলো আগে দিয়ে দিলেন। দুই একজনের পরেই দেখি আমার নাম ধরে ডাকছে। খাইছে। লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে দাড়াইলাম। স্যার আমার দিকে ক্রুদ্ধ দৃষ্টি হেনে বললেন, ভালো ভাবে পড়াশুনা করবে। যাক এ যাত্রায় বেচে গেলাম।
ক্লাস সেভেন-এইটে আমাদের কলেজে আরবী পড়তে হত। আরবী কবিতা, গল্প, সেগুলো থেকে প্রশ্ন, শুন্যস্থান এবং ট্রান্সলেশন। বলা বাহুল্য, এর আগে আমি আরবী লেখা গুলো শুধু কোরানের পাতায়ই দেখেছি। জীবনে পড়ার চেষ্টাও করিনি। ছুটিতে এসে বাসায় বললাম। আমার জন্য একজন হুজুর রাখা হলো। সেই ছুটিতে শুধু অক্ষর গুলোই শিখতে পারলাম। এবং প্রতি ছুটিতে বাসায় গিয়ে পড়তাম। ফলাফল ইতিবাচক কিছু হইত না। কোনবার টেনেটুনে পাশ, বেশিরভাগই ফেল করতাম। মজা লইত বন্ধুরা। আরবী পরীক্ষার আগে সবাই নাকে তেল দিয়ে ঘুমাইত আর আমি ১০৭ নং রুমের করিডরের লাইটের আলোতে সারারাত পড়তাম।
লাভ হয় নাই। কপালে ফেল টা খোদাই করে লেখা ছিল মনে হয়।
শুধু আরবী না, অঙ্কেও আমার যথেষ্ট দখল ছিল। প্রশ্ন দেখেই শুধু প্যান্ট ভিজিয়ে ফেলা বাকী ছিল।
‘ফেল’ এর জন্য। পাটিগণিত আর জ্যামিতিতে ফুল মার্কস পাইতাম কিন্তু বীজগণিতের বেলায় ভাঙ্গা থালা নিয়ে বসতাম। সেই থালায় যদি স্যার দুই একটা নাম্বার ফেলে দেন এই আশায়। অথচ সবাই বীজগণিতে ভালো করত।
আর পরীক্ষার হলে এক্সটারনাল রা যেভাবে থাকত। একটু যে দেখে লিখব তারো উপায় নাই।
আর আমার অবস্থা ছিল এই রকম।
এই আমার পাস ফেল নিয়ে আমিই শুধু চিন্তিত এবং হতাশ ছিলাম না। আমার রেজাল্ট নিয়ে শঙ্কিত ছিল বন্ধুরা এবং হাউসের প্রিফেক্টরা। আমার পাস-ফেলের সাথে যে হাউসের একাডেমিক এবং ওভার অল চ্যাম্পিয়নশীপ জড়িত। তাই সিনিওর, প্রিফেক্ট কিংবা বাবা-মা রেজাল্ট জিজ্ঞাসা করলেই আমার চেহারা হত এই রকম
এর মধ্যে যে বাসার রেজাল্ট কার্ড কতবার যে গাপ করে দিয়েছি। আর মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছি নেক্সট টার্মে ফাটায় দিব।
প্রতি টার্ম শেষ করতাম আর ফ্রেন্ডদের প্রয়োজনটা উপলদ্ধি করতাম।
কোন সন্দেহ নেই কলেজের ইতিহাসে খারাপ স্টুডেন্টদের তালিকায় আমার নাম সবার উপরে থাকবে। কাহিনী এতদূর পর্যন্ত হলে ভালই ছিল, অন্য কিছুতে যদি ভালো হতাম। এই যেমন অনেকে মাঠ কাপিয়ে বেড়ায়, কেউবা স্টেজ। কোনটাই করা হয় নাই। ‘হয় নাই’ নয়, পারিনি। কলেজের প্রথম কালচারাল ফাংশনে গিয়ে বিভীষিকার মত দুই দুইটা নিক নেম কামিয়েছি। যা এখনো তাড়া করে বেড়ায়। মাঝে মাঝে ঘুম থেকে চিৎকার করে উঠি এই নিক নেমের যন্ত্রনায়। অবশ্য আরেকবার স্টেজে উঠেছিলাম। বাংলা বানান প্রতিযোগিতায়। আগে নিয়ম ছিল, মডারেটর শব্দ বলবেন, সেটা কাগজে লিখে জমা দিতে হবে। সেইবারে নিয়ম করা হল, শুধু বানান লিখলেই হবে না, শব্দের অর্থটাও বলতে হবে। ফলাফল যা হবার তাই, কোনটার বানান পারি তো অর্থ পারিনা, অর্থ পারিতো বানান ভুল করি। অবস্থা দাড়াল এমন।
রেজাল্ট আমি ৫ম। সেখানেই আবার স্টেজ ক্যারিয়ার ধ্বংস করে দিল। অবশ্য টেস্ট ম্যাচে জায়গা না করতে পারলেও ওয়ানডের মত কালচারাল ফাংশন গুলোতে পারফর্ম করেছি নিয়মিত। তাই বলে আবার ভাববেন না, গান বাজনা করতাম। নাটকের ছোট খাট রোল পেতাম আর কি। 😛
বাকি থাকে খেলাধুলা। সাহস করে একবার জুনিওর গ্রুপে লং জাম্পে গেলাম। দেখি আমি প্রানপনে দৌড় দিয়ে এসে যতটুকু লাফাই সিনিয়র গ্রুপের ভাইয়েরা হপ স্টেপ দিয়ে তার চেয়ে বেশি যায়। ফলাফল এবারো ৬ষ্ঠ। আরেকবার গিয়েছিলাম পোল ভল্টে। আমাদের ব্যাচের লিডিং। পোল ভল্টে কোন প্রতিযোগী নাই আমাদের হাউসে। লিখিয়ে দিলাম নাম। প্র্যাকটিস করলাম জোরেশোরে। আশা হাউসের জন্য ৩-৪ পয়েন্ট যদি দিতে পারি। যাই হোক। ফাইনাল ইভেন্টে গিয়ে লাফ দিলাম। দড়ি পরে গেল। পরের বার দিলাম। আগেরবারের পুনরাবৃত্তি। লাস্ট চান্স। দিলাম এইবার পার হলাম। উচ্চতা ৫ ফিট। অপর পার্শ্বে হাই জাম্প দিয়ে প্রতিযোগীরা সাড়ে পাচ ফিট পার হয়ে যাচ্ছে। সিক্সথ হয়ে বীর দর্পে মাঠ ছাড়লাম।
খেলাধুলায় একমাত্র অবদান হকিতে। আইসিসি টিমের গোল কিপার ছিলাম। B| অবশ্য সেখানেও ২ টা গোল হজম করে দলকে ৪ র্থ বানিয়ে ফিরলাম পাবনায়। অর্জন হলো কিছু অন্য কলেজের কিছু এমন ফ্রেন্ডের…
তবে কিছু কিছু আন অফিশিয়াল ইভেন্টে ভালো ছিলাম কলেজে। পড়াশুনা, খেলাধুলা, স্টেজে যাদের খুজে পাওয়া যায় না তাদের কোথায় পাওয়া যায় বুঝতেই পারছেন। সেগুলো আরেক ব্লগে লেখা যাবে।
😀
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
রাজীব ভাই তো আমার মত হাসি দিয়া দিলেন 😛 এই দলে ছিলেন নাকি? (সম্পাদিত)
মানুষ* হতে চাই। *শর্ত প্রযোজ্য
পাশ ফেইল কোন ঘটনা না। প্রি টেস্টের সময় বাংলাদেশ- জিম্বাবুয়ের টেস্ট চলতেছিল। কেউ পরীক্ষা দেয় নাই। বিষয় প্রতি ৩০০ হারে জরিমানার যে টেকাটুকা কলেজ পেয়েছে সেটা দিয়ে জয়পুরহাটের একটু বাইরে বিঘা খানেক ধানী জমি কিনে ফেলা সম্ভব ছিল।
ম্যাট্রিকের পর সরাসরি ইন্টারপাশ করেছি, বললে কেউ বিশ্বাস করে না। B-)
:khekz: :khekz: :khekz:
মানুষ* হতে চাই। *শর্ত প্রযোজ্য
আফসোসের কিছু নাই ভাই। কিংবদন্তিরা এমনই হয়।
আমার লেখার মধ্যে কোথাও আফসোস ছিল কি? 😮
কিংবদন্তির দেখছো কি? আমার এক ফ্রেন্ড কলেজ পালাইতে গিয়ে দেয়ালের কাচে পা কেটে আট টা সেলাই নেয়। মেডু জিজ্ঞেস করার পর বলছে, স্যার পড়তেছিলাম। একটা অঙ্ক পারছিলাম না। মেজাজ খারাপ হইছে। টেবিলে লাথি মারছি। আর টেবিলের পেরেক এ কাটছে। :bash: :bash: :bash:
মানুষ* হতে চাই। *শর্ত প্রযোজ্য
:)) :))
আমাদের এক দোস্ত ফোর্টনাইট পরীক্ষায় পাশের জন থেকে কপি করায় এমনি মগ্ন ছিলো যে, নামটাও নিজের না দিয়া সেইজনেরটাই দিছে। ফলে খাতা দেয়ার দিন সে এক দৃশ্য।
:pira2: :khekz: :khekz: :khekz:
ওই ভাইরে ::salute:: ::salute:: ::salute::
মানুষ* হতে চাই। *শর্ত প্রযোজ্য
একাদশ শ্রেণীতে যখন কলেজে ফেরলাম তখন রক্ত গরম সবার। একে অন্যকে পাল্লা দিয়ে নিয়ম ভাঙ্গি। লোক দেখানো কাজ কর্ম আর কি.. এসময় জনৈক সহপাঠী বললো যে একাদশ শ্রেণীতে উঠে গণিতে ফেইল না করলে নাকি ক্যাডেট লাইফ পূর্ণতা পায়না। আইডিয়া টা ভালো লাগলো। পড়ালেখা না করার একটা অজুহাত পেয়ে গেলাম। মনসুর স্যার প্রশ্ন করেছিলেন। পড়ালেখা করলেও পাশ করতাম কিনা সেটা নিয়ে সন্দেহ ছিল, আর পড়ালেখা না করায় যা হওয়ার তাই হলো.. কাহিনী হলো অবাক বিস্ময়ে খেয়াল করলাম যে বন্ধু এই আইডিয়া দিয়ে আমাদের অনুপ্রাণিত করলো সেই বন্ধুই এ প্লাস পেয়ে ভুড়িতে হাত বুলাচ্ছে। একটু কষ্ট পেলেও পরে যখন দেখলাম আমি ছাড়াও আরো ১৪/১৫ জন আছে এই ফেইল পার্টিতে তখন খুব মজা পাইছিলাম। 😀
ক্যাডেট লাইফ পূর্ণতা দেওয়ার বিনিময়ে ৫০০ টাকার জরিমানা দিতে হয়েছিল পরে 😛
থ্রি ইডিয়টস এর চতুর।
😛
মানুষ* হতে চাই। *শর্ত প্রযোজ্য
ক্যাডেট কলেজে রেজাল্ট খারাপ করার জন্য বিশেষ কষ্ট করতে হয় নাই। শুরু থেকে ফরটি ইয়ারস ওলড ভার্জিন, থুক্কু চল্লিশের ওপারে জায়গা করে নিয়েছিলাম। চাইলেও ভাল করতে পারতাম না। উদাস উদাস লাগতো। একা একা লাগতো। কবি কবি লাগতো। সে এক ঝাঁপসা চোখে দেখা ছয় বছর। সিজিপিএ সিস্টেমের দ্বিতীয় ব্যাচ এসএসসিতে। তারপরেও দেখা দেখি আর এমসিকিউ মিলায় ৪ পয়েন্ট ৭৫ বাইর কইরা ফালাইলাম। যাই হোক এসএসসির পরে আইসা পুরাই আউলা হইয়া গেলাম। কোন কিছুতে মন নাই। ম্যাথ কেমিস্ট্রি নগদে উস্টা খাওয়ার উপর চলতে থাকলো। শেষ রক্ষা হইলো না। ইন্টারে ৪ দশমিক ১০ নিয়া বাইর হইলাম। যার নাই কোন গতি সে পরে গিয়া করলো ওকালতি! :grr: :grr: :grr:
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\
:)) :)) :))
রেজাল্ট নিয়ে এই টেনশন শুধু আমার এই ক্লাস সেভেন এইটেই নিতে হইছে। তারপর ডিরেক্ট মানবিকের অমানবিক ক্যাডেট হয়ে গিয়েছিলাম। তারপর অবশ্য ফিরে তাকাতে হয়নি। শুধু উপরের দিকেই উঠেছি। স্বপ্নে। 😛
মানুষ* হতে চাই। *শর্ত প্রযোজ্য
"মেরা বেটা ইনজিনিয়ার বানেগা" এই ফাঁপরে না পড়লে আজকে আমিও মানবিক অমানবিক হইতাম। তবে উস্টা খাইসি বইলাই কিন্তু ওকালতিতে আইলাম। মানবিকে ফাটায় দিলে কই যাইতাম কে জানে। 😀
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\