ক্যাডেট কলেজের ব্যাপারে আমার প্রথম জ্ঞানগম্যি হয় বন্ধুর বড় ভাইকে দেখে। ক্যামনে কি যেন হল ১৯৮৯ এর কোন এক সুন্দর সকালে শফিক ভাই আমাদের স্কুল ছেড়ে গটগট করে চলে গেলেন রংপুর ক্যাডেট কলেজে। দিনকতক পরে তাকে দেখলাম ছুটিতে এসেছেন। বিছানায় শুয়ে টুক টুক করে গল্প করছেন মা’র কোলে মাথা রেখে। তারপর তাকে যখন আমরা ছোটরা ভাগে পেলাম তখন শুনলাম সেই আলোকোজ্জল স্বপ্নময় জীবনের কথা, যেই পরশপাথরের স্পর্শ তিনি মাত্র পেয়ে এসেছেন। তাদেরকে বরণ করে নেয়া অনুষ্ঠানে শোনা একটা গান গুনগুন করে গাইতেন,
“ছাইড়া গেলাম মাটির পৃথিবী,
জীবন খেলায় হারাইলাম সবই
বুকে জমাট বাঁধা অভিমান
কি নিঠুর এই নিয়তির বিধান…”।
সাদা কাফন পইড়া আন্ধার কবরে যাবার মতোন অদ্ভুত সুন্দর কথাগুলোর পাশাপাশি ক্যাডেট কলেজ ব্যাপারটাও ভালো করে মাথায় গেঁথে গেল। বাবার বদলীজনিত কারণে পরবর্তী বছর তাদের থেকে দূরে সরে গেলেও বাংলাদেশ ডাক বিভাগের বদৌলতে ধীর অথচ স্থায়ী মাধ্যমে নিয়মিত যোগাযোগ হত। ততদিনে মির্জাপুরের এক বড় ভাইয়ের সাথে পরিচিত হয়েছি। তার নামধাম কিছুই আজ মনে নেই, তাকে মনে রাখার বিশেষ কোন কারণও নেই – সেইরকম সখ্যতা হবার সুযোগই হয়নি। শুধু ঐ ক্যাডেট কলেজের পরিচয়টাই তাকে আমার স্মৃতিতে স্থায়ী করে দিয়েছে। আর তখন ক্লাস সিক্সে পড়ি বলে অবচেতনে ক্যাডেট কলেজে যাবার স্বপ্ন দেখা শুরু করেছি।
স্বপ্নটা আমার চাইতে আমার আব্বার বোধ করি বেশি ছিল। ফাইনাল পরীক্ষার সর্বশেষ বিষয়টা দিয়ে আসতেই না আসতেই সন্ধ্যাবেলা ধরে নিয়ে গেলেন “বিকাশ” ক্যাডেট কলেজ কোচিং সেন্টারে। সেখানে নিজের আগ্রহ আর স্যারের ব্যাতের বাড়ির ভয়ে শীতের রাত জেগে পড়া শুরু করলাম – জীবনে সেটাই প্রথম। ক্রমান্বয়ে ফর্ম ফিল আপ, প্রসপেক্টাস ইত্যাদি দেখে আমি মনে মনে বরিশাল ক্যাডেট কলেজটা বুনতে থাকি। তিন হাউসের বর্ণনা দেখে সবুজ হাউসটা খুব মনে ধরেছিল। ক্যাডেট নম্বর দিয়ে শফিক ভাইকে চিঠি লিখতাম বলে ব্যাপারটার সাথে পরিচয় ছিল। মনে মনে আশা করেছিলাম আমার ক্যাডেট নম্বরটা হবে ১০ দ্বারা বিভাজ্য, মানে আগের সংখ্যাগুলো যাই হোক না কেন শেষ হবে শূন্য দিয়ে।
টানা দুই মাস গাধার খাটুনি খেটে লিখিত পরীক্ষা দিলাম (ইনডেক্স নম্বরটা এখনও মনে আছে – ১১২৭)। ভুজুং ভাজুং দিয়ে তাতে টিকেও গেলাম। তারপর শুরু হলো মৌখিক পরীক্ষার প্রস্তুতি। আগেই বলেছি আব্বার আগ্রহ আমার থেকেও বেশি। যেদিন মৌখিক পরীক্ষা দিতে যাব তার আগের রাতে রিহার্সাল দেওয়ালেন। আমার এক মামাকে সাথে নিয়ে তিনি সাজলেন ভাইবা বোর্ডের প্রেসিডেন্ট। সালাম দিয়ে কেমন করে অনুমতি নিয়ে রুমে ঢুকতে হবে সেই সহবত থেকে শুরু করে এটা সেটা নানা বিষয় নিয়ে চলল ড্রাই রিহার্সাল। জিনিসটা কাজে দিয়েছিল – জাপানের পূর্বনাম যে নিপ্পন সেটা পরদিন কমন পড়েছিল। ভাইবার সাথে সাথে আমার বাপজান যে মেডিক্যালের ড্রাই রিহার্সালও দেয়াননি তা আমার সাত জনমের ভাগ্যি 😀 ।
ইতিমধ্যে আদমজীর ক্লাস সেভেনে ভর্তি হয়ে ক্লাস শুরু করেছি। একদিন দোতলার বারান্দার রেলিংএ ঝুঁকে দাঁড়িয়ে আছি। ভিপির রুম থেকে পেপার দেখে বের হয়ে এসে জুবায়ের (পিসিসি) চিৎকার করে জানালো আমি চূড়ান্তভাবে টিকে গেছি। বিভিন্ন কলেজে মোট ১১জন, শুধু বরিশালেই ৫ জন! বাসায় এসে আম্মাকে বলতেই কাছে এসে জড়িয়ে ধরলেন। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানানোসহ ছলোছলো চোখে আরও কি কি যেন বললেন। একদিকে ছেলের সাফল্যের গর্ব অন্যদিকে একরকম স্থায়ীভাবে দূরে চলে যেতে দেয়ার বেদনা – মায়ের সেই আনন্দঅশ্রু মাখা দৃশ্যটা আজও আমার স্মৃতিতে অমলিন।
[হাসনাইনের “স্বপ্নবাজ” লেখাটার প্রতি কৃতজ্ঞতা। সেটাই আমার গত কয়েকদিনের বিক্ষিপ্ত মনটাকে টেনে বেঁধে বসিয়েছে। হাউসের ব্যাপারে আমার মনের সুপ্ত বাসনাটা পূরণ হলেও ক্যাডেট নম্বরের ব্যাপারে ঠনঠনাঠনঠন হয়েছে 😛 । “স্বপ্নময় স্মৃতি, স্মৃতিময় স্বপ্ন”কে আরও কয়েক পর্ব টানার ইচ্ছা আছে।]
1st
😮 😮
তিন তিনটা কী চাইপা রবিন কমেন্ট টাইপ করছে !! 😮 😮 😮
:khekz: :khekz: :khekz:
:goragori: :goragori: :goragori: :pira:
;)) ;))
গানের কথাগুলা সিরুম। কার গান ভাই?
আমারও সেইম কেস। এক্সটা হিসেবে চেক দেওয়াও শিখতে হইছিলো :(( , ফাইনালে অবশ্য দেই নাই। 😛
টাইনা দৌড়াবে ভাই। :clap: :clap:
আহারে কতকিছু মনে পইড়া গেল। :dreamy:
যতদূর মনে পড়ে 'চাইম' এর গান... :-B
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
গান টা মনে হয় টিপু এর।
তাই তো মনে হয়, অবসকিউর ব্যাণ্ডের গান, ভোকাল ছিল টিপু।
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
@ হাসনাইন
আমি তো মনে করছিলাম এই কেস খালি আমারই 😛 😛 ।
গানটা "চাইম" নাকি "অবসকিওর" এর????
Life is Mad.
ভাই গানের লিংকটা দিতে পারবেন কেউ?
হাস্না, নিচের লিংক ধরে গেলে পাইবা...
http://www.gaanwala.com/index.php?iref=34008628
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
অনেকদিন পর গানটা শুনলাম। জুনি ভাইরে :thumbup:
:salute:
ভালো লাগল সায়েদ ভাই। একটু এদিক ওদিক করে দিলে আমার কাহিনী হয়ে যাবে। ড্রাই রিহার্সেল নিয়া এক কাহিনী মনে পড়ে গেল।
ভাইভার আগের দিন বাপের সাথে বাজারে না কোথায় যেন গিয়েছিলাম। বাবার বন্ধু অথবা পরিচিত- ঠিক মনে নাই এক আংকেলের সাথে দেখা হলো। তিনি আবার এক ক্যাডেটের বাপ। আব্বা আমার ভাইভার কথা বলতেই তিনি আচমকা আমার কলার চেপে ধরলেন। দাঁত কটমট করতে করতে জিজ্ঞাস করলেন, "হোয়াট ইজ দিস?"
আমি তো ভ্যাবাচাকা খেয়ে প্যান্ট খারাপ করে ফেলি আরকি। তাও সেকেন্ড দশেক লাগল নিজেকে সামলে নিতে। ভয়ে ভয়ে বললাম,
"এটা তো কলার।"
তিনি আমার কলার ছেড়ে দিয়ে বললেন,
"এভাবে বললে তো হবে না। ইংরেজিতে বলতে হবে- দিস ইজ মাই কলার। বুঝেছো?"
আমি তো মনে করলাম তিনিই ক্যাডেট 😀 😀 😛 😛 ।
Life is Mad.
:khekz: :khekz: :khekz: :khekz:
আপনারে আমি খুঁজিয়া বেড়াই
দোস্ত, এখানে "সহবত" শব্দটার মানে বুঝলাম না, আরবীতে এর কাছাকাছি একটা শন্দ আছে মনে হয় :-B
দেখি বাবা সায়েদ, একটু কাশি দাও তো 😀 😀 😀
সহবত শব্দটা টিনটিনে (সম্ভবত "নীল কমল"এ) প্রথম পেয়েছিলাম। আভিধানিক অর্থ আমারও জানা নাই। তবে সেখানে ব্যবহার দেখে বুঝেছিলাম আদব কায়দা টাইপ কিছু একটা হবে।
এই একটা ব্যাপার যা আমাদের সব্বাইকে একই কাতারে এনে দাঁড় করিয়েছে - তা সে দোর্দন্ড প্রতাপশালী কর্মকর্তাই হোন আর যে কোন জাঁদরেল বসই হোন। অতীতের এই একটা মাত্র ঘটনাই আমাদের সব্বাইকে এক জায়গায় নিয়ে আসতে সক্ষম 😀 😀 😀 😀 ।
Life is Mad.
=)) =)) =)) =)) =)) =))
"আমি খুব ভাল করে জানি, ব্যক্তিগত জীবনে আমার অহংকার করার মত কিছু নেই। কিন্তু আমার ভাষাটা নিয়ে তো আমি অহংকার করতেই পারি।"
হেব্বি কইছ তো, এই ভাবে তো ভাবি নাই। উপদেষ্টাও :khekz: :khekz: :khekz:
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
সায়েদ ভাই হেব্বি লিখছেন :clap: :clap: :clap:
"আমি খুব ভাল করে জানি, ব্যক্তিগত জীবনে আমার অহংকার করার মত কিছু নেই। কিন্তু আমার ভাষাটা নিয়ে তো আমি অহংকার করতেই পারি।"
কয়েক পর্ব কেন? টুশকি ছিড়িয়ে যান
দারুণ এবং :salute: :salute:
আপনারে আমি খুঁজিয়া বেড়াই
ছুডুকালে গ্রামে ছুটি কাটাতে যাবার পর আমারে একবার গ্রাম এক সম্পর্কীয় দাদা ডাইকা জিগাইলেন, হোয়াট ইজ ইয়ুর নেইম। আমি নাম কইয়া চইলা আসার পর শুনি উনি আব্বারে কইতাছেন, তোর পোলায়তো ঠিকঠাক আংরেজি পারেনা! আমার নাকি নামটা বলা উচিত আছিলো " মাই নেম ইজ" শুদ্ধা 😀
ক্যাডেট কলেজে ভাইবা দিতে গিয়া আমার সবচে বেশি আক্কেল গুড়ুম অবস্থা লাগছিলো ভাইবা বোর্ডে প্রিন্সিপাল স্যার সহ আরো জনা সাতেক জাদরেল লোক দেইখা (আফসুস, চেক মারা শিখায় নাইতো কেউ :(( ) একজন কইল, মুখে মুখে এই অংকটা কও। মনে আছে ঢোক গিল্লা একটা কথাই কইছিলাম, স্যার মুখে মুখে করুমনে আগে খাতা কলম আর একটা ক্যালকুলেটর লাগবো :((
সায়েদ দোস্ত, চলুক সিরিজ। অনেক কিছুই মনে করাবি বুঝতাছি।
ঠিক ঠিক....
😀 😀 😀 😀
Life is Mad.
:)) :))
সায়েদ ভাই, বরাবরের মতই সুন্দর, সাবলীল লেখা।
আমার খুব প্রিয় একটা গান ভাইয়া। মনে করিয়ে দিলেন।
থ্যাংক ইউ ব্রাদার।
Life is Mad.
আমারে ক্যাডেট কলেজের ভাইবার সময় প্রিন্সিপাল, ভাইস প্রিন্সিপাল আর এডজুট্যান্ট এই তিনজন এক রুমে বইসা কইলো 'একটা গান গাও'। আমি গাইছিলাম- 'তিন পাগলের হইলো মেলা গঞ্জে এসে' 😉 😉 😉
সায়েদ ভাই, ছেলেবেলা চলছে চলবে। তাড়াতাড়ি বড় হইয়েন না কিন্তু। 😀
ঠিক ঠিক।
(চামে নিজের কমেন্ট কাউন্ট বাড়াইয়া নিতেছি। 😀 )
তোমারে ওইখানেই ন্যাংটা করায় নাই 😛 😛 😉 😉 ????
Life is Mad.
এভাবে বলতে হয়নারে :no: । বলবি এভাবেঃ
তোমারে ওইখানেই কাশি দেয়ায় নাই ? 😉
ছি! 😀
কাশি তো দেয়ায় ডাক্তার সাব। 😀 আর সেই কাশি এই ব্লগের সবাই দিছি আমরা। 😀 😀
এর চাইতে সত্য কথা আর কি আছে 😀 😛 😛 ???
Life is Mad.
আপনার তো ভাইয়া,সামান্য ভাইভা। আমার বাপ তো, আমাকে নিয়ে BAF শাহীন, আদমজী ক্যান্ট - এগুলো তে সারাদিন ঘুরাইছে।
সুন্দর লেখা।
আমার ইনডেক্স নম্বর ও মনে আছে স্পষ্ট - ৫৪৪২,বেশি দিন অবশ্য হয় ও নি।মাত্র ১০ বছর।
আমারও বেশিদিন না মাত্র ১৬ বছর 😀 😀 ।
মনে হয় এইতো সেইদিন।
Life is Mad.
কোনদিকে যে গেলোগা এতগুলা বছর 🙁
ষোল বছর 😕
সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!
আপনারা এত ইমোশনাল হয়ে গেছেন... :dreamy:
থাক, তাইলে আর না কই যে মামুন (৯৯-০৫) দের ১০ বছর হয়ে গেলে, আপনাদের তো ১৭ বছর হয়ে যাবার কথা... :-B
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
:)) :))
গোনাগুনি ভালোই মনে রাখছস দেখি 😉
সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!
কলেজে থাকতে যেইটা হইতো 🙂
সেভেন থেইকা এইটে উঠার পর পর যখন ইমিডিয়েট সিনিয়রদের কেউ কেউ ভুলে ডাইকা বসত 'ইয়েস ক্লাস সেভেন' বইলা তখন শুইনাও না শুনার ভান কইরা থাকতাম 😀 অবশ্য পাঙ্গাও চলত ভাব ধরার লাইগা :khekz:
সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!
এইখানে তো গোনাগুনির ভালোই প্রাকটিস হয়। এই তো গতকালই তো মনে হয় "সা-ঝুপ" বরাবর মানুষের কয় ঠ্যাং তার গোনাগুনতি হয়ে গেল 😉 😉 ।
Life is Mad.
বইল্যা পাঙ্গানি... :grr:
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
ওই মিয়া, এক পর্ব লেইখা মূলা ঝুলাইয়া রাখার জন্যে আপনার ব্যাঞ্চাই। 😛 😛 😛
ধৈর্য্য ধর ভাইডি...........ব্যস্ততা সরাইয়া মাথাডা ঠান্ডা কইরা বসতে তো হইবো 😛 😛 😛 😛 ।
Life is Mad.
ইনডেক্স নাম্বার ৩০১৭, ভুলি কেমনে।
২২ বছর।
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
ইনডেক্স নম্বর ৯২৮৫... :-B
১৪ বছর... :dreamy:
(ভুল কইলেও কেউ ধরতে পারব না...মু হা হা হা হা... 😉 :khekz: )
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
শিরোনাম এওবং উপস্থাপনা - দুটোই হৃদয় ছোঁয়া সায়েদ।
খুব সুন্দর লেখা তোমার।
:thumbup:
সৈয়দ সাফী
:shy: :shy: :shy: :shy: :shy: :shy: :shy: :shy: :shy: :shy:
Life is Mad.
খুব ভালো লাগলো সায়েদ ভাইয়া 🙂
অফটপিকঃ টুশকি কখন ছাড়বেন আবার?
টুশকি আপাতত হিমঘরে আছে 🙁 :(( :(( 🙁 🙁 ।
Life is Mad.