কম্বল বিতরণের দিন সকাল সকাল উঠে রওনা দিলাম আমরা। এই দিকটায় যারা শীতবস্ত্র দিতে আসেন, তারা সবাই আশেপাশের রাস্তার ধারেই বিলিয়ে চলে যান, কারণ এতো লোড নিয়ে ভেতরে যাওয়াটা বেশ কষ্টকর। এই কারণে বান্দরবন ও তার আশেপাশের গ্রামের একজন একাধিক কম্বল পেলেও গভীর পাহাড়ে বসবাসকারীরা অসহায়ই থেকে যান। আমরা তাই ঠিক করলাম ভেতরে যাবো। বয়স কম, সুতরাং কষ্ট নামক পক্রিয়ার কথা মাথাতেও আসেনি আমাদের। এছাড়া তৈমু নামে যে এনজিওর সাথে যৌথভাবে কাজ করতে গিয়েছি, তার প্রধান গ্যাব্রিয়েল দাও আমাদের ভেতরে নিয়ে যেতে আগ্রহী। সকাল সাতটায় পিকআপে করে রওনা দিলাম, বান্দরবন থেকে চিম্বুক, নীলগিরি হয়ে থানচি যাবার পথ ধরে প্রায় পঞ্চাশ কিলোমিটার (+- হতে পারে কিছু) যাবার পর বলিপাড়ায় থামলাম আমরা। পিকআপ থেকে নেমেই কান ঝাঝা শুরু হয়ে গেছে- বোঝা গেলো বেশ উপরে উঠে এসেছি আমরা। বলি পাড়ার রাইফেলস ক্যাম্পের কর্মকর্তার থেকে পারমিশন নেওয়া শেষে বলিবাজারের বাজারের দিকে এগোলোম আমরা। সামনে হাঁটা পথ বেশ অনেকদূর, ঝিরি পার হতে হবে, ভাবলাম প্যাস্টিকের স্যাণ্ডাল কিনে ফেলি। পাহাড়ে সমতলের মানুষজনের থাকার কথা খুব শুনেছি, বলিপাড়ার মতো ভেতরে যেয়ে তার প্রমান পেলাম। সেখানকার বাজারের অনেক দোকানের দোকানদার বাঙালি। গ্যাব্রিয়েল দা’র সবাইকে ভালো করে চিনেন, তিনি প্রতিটা দোকানে যেয়ে যেয়ে আলাপ আলোচনা, হাসি তামাশা করছেন। এইসব দেখে আমি আরেকটা জিনিস বুঝলাম, ঢাকা থেকে পাহাড়ি-বাঙালি’র মধ্যে যে দা’কুমড়ো সম্পর্কের কথা আমরা শুনেছি সেটা পুরোভাগে সত্য নয়।
তারপর তৈমুর বিভিন্ন মানুষ, কেঁচোপাড়া (বলিপাড়া থেকে একঘণ্টা হাঁটা পথ) গ্রামের বসবাসকারী কয়েকজনের সাথে কথা বলে একটা জিনিস আমি বুঝতে পারলাম। বাঙালি- পাহাড়ি সমস্যা- বাক্যটির একটি ভিন্নমানে রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক পাহাড়ি ছেলে পড়ে, কই তাদের সাথে তো বাঙালিরা মারামারি করেনা, আমাদের কলেজে দর্পন পড়তো, কই আমরা তো কেউ তাকে কোনওদিন নিজেদের একজন ছাড়া ভিন্ন কেউ ভাবিনাই (তার উদ্ভট উচ্চারণ নিয়ে তাকে টিজ করতাম অবশ্য, কিন্তু সেটা আমরা বরিশাইল্লাদের আরও বেশি করছি)। তাহলে পাহাড়ে গেলেই বাঙালিরা পাহাড়িদের শত্রু হয়ে যায় কেন? আসলে সবাই হয়না, দীর্ঘদিন ধরে সমতলের যারা পাহাড়ে এসে বসবাস করছে তারা আদোপান্ত পাহাড়িদের সাথেই মিশে গেছে। কিন্তু অল্পকয়েকজন (আসুন তাদের আমরা ভুমি দস্যু বলি এবং এরা বাঙালি) এই ইস্যুটাকে ব্যবহার করে। বেশিরভাগ সময়ই তারা পাহাড়ের নেটিভ নয়, হঠাৎ করে উদয় হয়। তারা পাহাড়িদের গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়, তাদের ঠেলে দেয় আরো গভীরে। হ্যাঁ, বসবাসকারী সব বাঙালিরা দুধে ধোঁয়া তুলসি পাতাও হয়তো না, কিন্তু আদোপান্ত সমতলের এই ইমিগ্রেণ্টের ঢালাও দোষ দেবার আগে একটু ভেবে দেখার প্রয়োজন আছে।
এবার আসা যাক, সেনাবাহিনী প্রসংগ। সেনাবাহিনী নিজেও ভূমি দখলে জড়িত। নীলগিরি’র কথা আমরা সবাই জানি, সেখানে তারা বিশাল রিসোর্ট তৈরী করেছে, দশ মিনিটের জন্য হলেও গাড়ি পার্কিং চার্জ ২০০ টাকা। সকল জায়গা সরকারের, সেনবাহিনী সরকারের একটি অংশ সুতরাং পাহাড়ের জমি সেনাবাহিনীর নিজেরই জায়গা। তারা যেখানে ইচ্ছা থাকবেন, সেখানে ইচ্ছা যাকে ইচ্ছা তাড়াবেন, ক্যাম্প করবেন।” এই যুক্তি নিয়ে যারা তেড়ে আসার চেষ্টা করবেন, তাদের বলে দেই জ্বী, আমি জানি।
গ্যাব্রিয়েল দা ঐ এলাকার সন্তান। তার পাড়ার নাম, ত্রিপুরা পাড়া। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, বলিবাজার থেকে ভেতরের দিকে যাওয়ার জন্য তার নিজেরও নাম এণ্ট্রি করে যেতে হয়েছে, সন্ধ্যার আগে আগেই ফেরত চলে যেতে হবে নাম কাটিয়ে। এই ব্যবস্থায় তাকে বিশেষ রুষ্ট মনে হলোনা, যখন শুনলাম এই সেনাবাহিনী বিনাঅপরাধে তাকে দীর্ঘদিন আটকে রেখেছিল। পরে ড্যানিশ রাষ্ট্রদূতের প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপে তিনি ছাড়া পান। শান্তিবাহিনি জুজুর কারণে তখন পাহাড়ে বসবাস কারীদের সপ্তাহে একবার বাজারে আসতে পারতো, বাজারের পরিমাণও আর্মি ঠিক করে করে দিতো, এর বেশি কিনলে তা জব্দ হতো।
পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকার বলে কিছু আছে বলে আমার মনে হয়না। সেখানে সেনাবাহিনীই সরকার, সেখানে চলছে সেনাশাসন। এই সেনাবাহিনীইই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে উপরে উদিষ্ট ভুমি দখলদার বাঙালি সন্ত্রাসীদের পক্ষ অবলম্বন করে- এখানে উল্লেখ করতে চাই, এই মন্তব্যটি দ্বারা সমগ্র সেনাবাহিনী “ইন্সটিটিউশন” কে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছেনা। তবে সেনাকর্মকর্তাদের অনেকেই যে প্রমোশনের লোভে নিরীহ পাহাড়িকে সন্ত্রাসী বানিয়ে অস্ত্র উদ্ধারের নাটক করেন তা নিয়ে ইন্সটিটিউশনের কেউ দ্বিমত করবেন বলে মনে হয়না। ননকমিশনডরাও বিভিন্নভাবে তাদের পোশাকের ক্ষমতা ব্যবহার করেন। ব্লগে দ্বিমত হতে পারে, কিন্তু ইনফরমাল আড্ডায় কেউ আজ পর্যন্ত করেনি। বুঝলাম, অনেক খারাপ কাজ তারা করেছে, কিন্তু ভালো কাজও কী করেনি? রাস্তা তৈরী করেনি, পাহাড়িদের অসুখ হলে সেবা করেনি? অবশ্যই করেছে, কিন্তু তাদের ভালো কাজগুলোকে এপ্রিসিয়েট করার চেয়ে আমি খারাপ কাজগুলো নিয়েইই কথা বলতে বেশি আগ্রহী। কারণ সেনাবাহিনী দুধের শিশু নয় যে, তাদের “বাবা খুব ভালো কাজ করেছ, আরও করো” বলে উৎসাহ দিতে হবে। তারা যা ভালো কাজ করেছেন, মানুষ হিসেবে সেটা করা তাদের দায়িত্ব ছিল।
অভিযোগ পালটা অভিযোগে লেখা জর্জরিত করে লাভ হয়না, মূল আলোচনা হওয়া উচিত সমাধান কী হওয়া উচিত না নিয়ে। আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দেশের সবার পক্ষ থেকে সমাধান দিয়েছেন, “প্রয়োজনে পার্বত্য এলাকায় আরও সেনা মোতায়ন করা হবে”। তার (ত এর উপর ইচ্ছাকৃতভাবে ঁ দেওয়া হয়নি) নির্বুদ্ধিতা প্রসংশার দাবী রাখে। খবরে আরও সমাধান আসছে, বাঙালিদের পুর্নবার্সন করতে হবে, ইউএনডিপি নাকি এই প্রজেক্ট বাস্তবায়নের অর্থ প্রদান করতেও একপায়ে খাড়া। কিন্তু তাতে করেও কী সমতল থেকে উঠে আসা দীর্ঘদিন ধরে বসবাসকারী মানুষকে বাসস্থান থেকে উচ্ছেদ করা হবেনা? এটাও কোনও ফল বয়ে আনবে বলে মনে হয়না।
আমার যা মনে হয়ঃ
১। পর্যায়ক্রমে শান্তিচুক্তির সঠিক বাস্তবায়ন করতে হবে।
২। অপহরণের নাটক বন্ধ করতে হবে। প্রমোশনের লোভ ছাড়াও আরও একটা কারণে অপহরণের নাটক মঞ্চায়িত হয়, সেটা হলো পার্বত্য এলাকায় বৈদেশিক ফাণ্ডিং, বৈদেশিক এনজিও এর অতিরিক্ত আগমন ঠ্যাকানো। তাতে লাভ? লাভটা খুব সোজা, যতো এনজিও আসবে, ততো পাহাড়িদের কর্মসংস্থান বাড়বে, ততো তারা স্বাবলম্বী হবে, পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর হাত ততো দূর্বল হবে। সাধারণ চোখে এটাকে অবাস্তব এনালজি মনে হলেও, এটা এই কারণেই সত্যি যে, আমরা ইউটোপিয়ান সমাজে বাস করিনা, আমাদের সমাজের পলিটিক্স বড় রুঢ়।
৩। বর্ডার গার্ড ছাড়া, অপ্রয়োজনীয় (সত্যিকার অর্থেইইইই অপ্রয়োজনীয়, ভুং ভাং প্রয়োজন না) সকল ধরণের সেনা প্রত্যাহার করতে হবে (শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন হলে এটাও হবে)।
৪। পাহাড়িদের কর্ম সংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি করতে হবে।
৫। স্বাধীনতা পরবর্তী বঙ্গবন্ধু প্রণীত “তোরা সব বাঙালি হইয়া যা” এই তত্ত্ব বাতিল করতে হবে। পাহাড়িদের উপর বাংলার আগ্রাসন কমাতে হবে, তাদের মার্তৃভাষায় তাদের প্রাথমিক শিক্ষা পর্যন্ত পড়াশোনার ব্যবস্থা করতে হবে।
৬। “ডিভাইড এণ্ড রুল” এই মতবাদের সত্যতা প্রমাণের জন্য সরকারের সৃষ্টি ইউপিডিএফ এর কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে। ইউপিডিএফ শান্তিচুক্তির বিরোধী, অর্থাৎ তারা জনসংহতি সমিতির বিরুদ্ধ পক্ষ। এই ইউপিডিএফকে খুব সম্ভবত ভাইয়ে ভাইয়ে মারামারি লাগিয়ে সেখানে একটা বিশৃংখলার আগুন জ্বালিয়ে রাখার জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে।
৭। আদতে এতো মারামারি কাটাকাটির কথা শুনলেও, পাহাড়ে বসবাসকারী মানুষেরা মারাত্মক অসহায়, তাদের কাছে খেয়ে পরে বেঁচে থাকাটাই সবচেয়ে বড়। আমাদের সবার নিজ নিজ অবস্থানে থেকে তাদের সাহায্য করতে হবে। কীভাবে? আপনি ডাক্তার, যান সাতদিন একটু ঘুরে আসুন, তাদের সাথে কথা বলুন- আপনার হাজার টাকার ওষুধ দিতে হবেনা, আপনার মুখ থেকে সামান্য ভালো কথাই তাদের জন্য অনেক কিছু। তারা আমাদের ভাই এবং আজ পর্যন্ত বান্দরবনে ঘুরতে যাওয়া ব্যতিত সেই ভাইদের কথা আমরা ভাবিনাই, কিন্তু ভাবতে হবে।
৮। পাহাড়িরা খুব খারাপ, ছেড়ে দিলে একদিন তারা স্বাধীন বান্দরবন বা স্বাধীন রাঙামাটি ঘোষণা করে ফেলবে- এইটাইপ তত্ত্ব থেকে বের হয়ে আসতে হবে।
সর্বোপরি, সবগুলোই আমার ব্যক্তিগত মতামত। গতকয়েকদিন ধরে মানসিকভাবে খুব ডিস্টার্বড। এই লেখা তা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য। আমি খুব ভালো করেই জানি, ব্লগের পাতায় হাজার শব্দও চল্লিশমন ধান পুড়ে যাওয়া মানুষটির মুখে কোনোভাবেই হাসি ফোটাতে পারবে না যা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আর্মি হয়তো পারবে।
হায়রে বাঙালি ... হায়রে সরকার ... হায়রে সরকারি আর্মি ... ...
:salute: :salute:
R@fee
আমি ২০০২ থেকে ২০০৫ সাল প্রতিবছর নিয়মিত পাহাড়ে গিয়েছি। আমাদের একটি ছোটো কিন্তু গোছানো ট্রেকিং ক্লাব ছিলো, বান্দরবন এবং লোয়ার রাঙামাটিতে আমাদের ক্লাবের সদস্যরা প্রচুর ট্রেক এক্সকারশনে গেছেন, কেবল তানজিওডং [তাজিনডং নামে পরিচিত] ট্রিপটিতে আমি যেতে পারিনি, বাকিগুলোতে গিয়েছি।
এই ট্রিপগুলিতে গিয়ে একাধিকবার আমি জীবনসংশয়ে পড়েছি [সম্ভবত আমি ভোদাই কিসিমের বলেই]। পাহাড়ের খাদে পড়েছি এক রাতে, রুকস্যাকের স্ট্র্যাপে আটকে বেঁচে গিয়েছি, হাতের লাঠি ভেঙে পড়তে পড়তে বেঁচে গিয়েছি আরেকবার, ডাকাতেরা একবার ক্ষক্ষ্যংঝিরি থেকে বান্দরবান ফেরার পথে গাড়ির ওপর ফায়ার ওপেন করেছিলো, সেরেব্রাল ম্যালেরিয়ায় আমাদের অন্য এক দলের দুই সদস্য মারা গিয়েছিলেন, আমি নিজে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পাঁচ মাসের মতো শয্যাশায়ী ছিলাম। এতকিছুর পরও আমাদের ঐ পাহাড়ি অংশটুকু আমার বড় প্রিয়। আমি আবারও দেশে গেলে পাহাড়ে ট্রেক করতে যাবো।
এই ট্রিপগুলোতে আমরা বান্দরবান আর রাঙামাটির দুর্গম সব এলাকায় বম, মারমা, ত্রিপুরাদের পাড়ায় রাত কাটিয়েছি। কেবল কারবারীর বাড়িতে স্বাভাবিক পরিস্থিতিতেই নয়, পথ হারিয়ে গভীর রাতে পা ভাঙা একজনকে কাঁধে নিয়ে আমরা পাহাড়িদের গ্রামে আশ্রয় চেয়েছি, তাদের পাশে মাটিতে স্লিপিংব্যাগ পেতে ঘুমিয়েছি, তাদের ভাগের খাবার সকালে উঠে খেয়েছি। এরা হতদরিদ্র মানুষ। কলাগাছ সিদ্ধ করে ভাত খেতে দেখেছি অনেককে। পাহাড়ের মাটি তো ধান চাষের জন্যে উপযোগী না, সেগুলোতে সিট্রিয়াস ফলটল ভালো ফলে কেবল, একটি ছোটো পরিবারের ভাত জোটাতে এদের সারা বছর দশ কিলোমিটার রেডিয়াস এলাকার দুর্গম সব পথ পার হয়ে পাহাড় সাফ করতে হয়, চাষ করতে হয়। হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে এরা নিজেদের মতো থাকে। এই দরিদ্র মানুষগুলোর কাছে আমরা এখনও কৃতজ্ঞ।
সেটলার বাঙালির বদমায়েশি একবেলা হঠাৎ বাজারে গিয়ে চোখে পড়বে না। এদের শোষণ অন্যরকমের। গহীন পাহাড় থেকে একমণ আদা পিঠে নিয়ে যে পাহাড়ি চাষী বাজারে বেচতে নামে, সে ভাবে এই আদা বেচে সে যা টাকা পাবে তা দিয়ে বাজার করে সে ফিরবে। হয়তো একটু শুঁটকি কিনবে। বাঙালি পাইকার তাকে সারাটা দিন বসিয়ে রাখবে, ঘোরাবে। বাজারে তার চেনা কেউ না থাকলে, পয়সা সাথে না থাকলে, ঐ চাষী অভুক্ত বসে থাকে আদার ঝুড়ি নিয়ে। সন্ধ্যের দিকে তাকে ন্যায্য দামের দশভাগের এক ভাগ সাধা হয়। সেই লোক কি তখন একমণ আদা নিয়ে ফিরে যাবে তিরিশ মাইল আপহিল? সে বাধ্য হয়ে কমদামে আদা বেচে যা পায় তা দিয়ে কিছু খায়, কিছু বাজার করে ফিরে যায়। এটা হচ্ছে বাঙালির চোদনামির নমুনা।
আমি বলছি না ভালো বাঙালি নেই, কিংবা বাটপার পাহাড়ি নেই। পাহাড়িদের মধ্যেও স্মাগলার, গান রানার আছে। আমি এদের টাকার বান্ডিল ধরে জুয়া খেলতে দেখেছি গভীর পাহাড়ের পার্বণে। কিন্তু এদের কখনোই কিছু হবে না। হবে দরিদ্র পাহাড়ি চাষীর, যার কোনো বন্ধু নাই ওখানে।
থানচি ভর্তি সাতকানিয়ার বাটপার সেটলার। বলিপাড়াতেও তাই। আমার শেষ ট্রিপে থানচি থেকে রুমা ট্রেক করার কথা ছিলো, সাথী একজনের বাবা আবার জনৈক মেজর জেনারেলের বন্ধু, তিনি তার বন্ধুকে সরল মনে জানিয়েছিলেন, আমার ছেলেরা যাচ্ছে একটু দেখিস তো! বাস। পদে পদে আর্মি থামায়, পুলিশ থামায়, বিডিয়ার থামায় আর আমরা ঠিক আছি কি না খোঁজ নেয়। এক এক্স-শান্তিবাহিনী কমান্ডারকে গাইড হিসাবে নেয়ার কথা ছিলো, হাতি পারিং নামে সে বেশ পরিচিত, সে শান্তিবাহিনী থেকে রিটায়ার করার পর নিষ্ঠাবান খ্রিষ্টান হয়ে গেছে, রবিবারে সে চার্চে কী একটা ডিউটি করে, ওটা সে বাং মারতে পারবে না বলে আমাদের সাথে যেতে রাজি হলো না। সে পরিচিত লোক, আমাদের সাথে তাকে দেখলে বিডিআর কী করতো কে জানে। বলিপাড়ায় রাইফেলস এর [কত নাম্বার মনে নেই] সিও আমাদের থামিয়ে কথা বললেন। আমাদের ট্রেকিং প্ল্যান শুনে নিরুৎসাহিত করলেন, নানারকম সমস্যা নাকি তখন মাথাচাঁড়া দিচ্ছে। তাঁকে জানালাম আমরা আগেও এ অঞ্চলে ট্রেক করেছি, তিনি ধৈর্য ধরে শুনে আবারও নিরুৎসাহিত করলেন। পরে থানচির বিডিআর ক্যাম্পের বিডিআরদের সাথে আলাপ করে দেখলাম, সবার মধ্যে পাহাড়ি জুজু প্রবল। পাহাড়িরা বদ, তারা শয়তান, ভয়ঙ্কর, বাঙালি পেলেই ক্ষতি করে, ইত্যাদি। পাহাড়ে শহুরে বাঙালির উপস্থিতি পাহাড়ের বাঙালিরাও অপছন্দ করে। কেবলমাত্র কোনো পাহাড়ি ঐ চার বছরে কোনো সমস্যা করেনি।
ধন্যবাদ হিমু ভাই আপনার বাস্তব অভিজ্ঞতা বর্ণনার জন্য। আপনার ও নীচে কচুপাতা ভাইয়ের কারণে আমি নিজে অনেক কিছু জানলাম। ভালো থাকবেন।
দোস তোর লেখাটা জটিল হইসে।২/৩ টা ব্যাপারে তোর সাথে দ্বিমত আছে।আমি পরে একবার ঢাকা আসলে ক্লীয়ার কইরা লমুনে। ফ্রেন্ড ইন কনফিডেন্স 😉 😉 😉
:thumbup:
---------------------------------------------------------------------------
বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।
প্রার্বত্য চট্টগ্রামের কয়েকদিন ধরে যা ঘটছে, তা নিয়ে আমি খুব লজ্জিত। জাতি হিসাবে আমরা নিজেদের যতো শ্রেষ্ঠই মনে করিনা কেন, পাহাড়ে আমরা চরম উপনিবেশিক আচরণ করি। সেই সাথে আছে বর্ণবাদী, স্বার্থবাদী এবং অবদমননীতি আদিবাসীদের প্রতি।
পাহাড়ের বর্তমান সময়ের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আসলে খুব জটিল মনে হয় আমার কাছে, কারণ এটা উপনিবেশিক প্রেক্ষাপটে অন্ধ জাতীয়তাবাদের রাজনীতিতে এবং ভীষণ রকমের রাজনৈতিক ভুল সিদ্ধান্ত এবং প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর মিডল ফিঙ্গার তুলে রাখার কারণে এখন চারিদিকে একটা অসহিষ্ণু অবস্থা তৈরি হয়েছে এবং তার কোন সহজ সমাধান নেই বলে মনে হয়, কারণ কেন্দ্রিয় রাজনীতির উদার দৃষ্টিভঙ্গি এবং দূরদর্শীতার অভাব। শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন অবশ্যই প্রয়োজন, কিন্তু সেটা তেরো বছর আগের চুক্তি, এখনকার প্রয়োজনের চরিত্র কিছুটা পাল্টে গেছে এবং নতুন সংযুক্তির প্রয়োজন রয়েছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে পাহাড়ের সাধারণ আদিবাসীদের পক্ষে, কারণ তারা নিপীড়িত। যেকোন বিবেকবান মানুষের তাদের পাশেই দাড়ানো উচিত।
আমার সামরিক বাহিনীর কলেজ বন্ধু এবং পারিবারিক বন্ধুদের সাথে কথা বলে মনে হয়েছে, পার্বত্য বিষয়ে তাদের স্ট্রাটেজিক ধ্যানধারণা খুব প্রখর। কিন্তু প্রকৃত ইতিহাস এবং মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির অভাব রয়েছে। কারণ তারা তাদের প্রাতিষ্ঠানিক নীতি ও কৌশলের মাধ্যমে প্রভাবিত হন। সামরিক বাহিনীতে বেশ কয়েকজন 'বীরপ্রতীক' রয়েছেন, যারা মূলত আশির দশকে তাদের পার্বত্যাঞ্চলের সাহসীকতার জন্য পুরষ্কৃত হয়েছিলেন। একটা সময় ছিল যখন পার্বত্য অঞ্চল ব্যবহৃত হতো এশিয়ার একটা গুরুত্বপূর্ন
'সাইকোলজিকাল ওয়ারফেয়ার' প্রশিক্ষনের ফিল্ড হিসাবে। তাই এই সামরিক প্রেক্ষাপটটা বোঝার প্রয়োজন রয়েছে। সিভিল প্রশাসনেও পাহাড়ী ডিসকোর্স নিয়ে স্পষ্ট ধারনার অভার রয়েছে। ইউএনডিপি'র সিএইচটির টিমলিডার রবের সাথে গতবছর কথা হয়েছিল, ডিফেন্স, পুলিশ এবং পাবলিক সার্ভিস ট্রেনিং একাডেমিগুলোতে পার্বত্য সংস্কৃতি, ইতিহাস এবং রাজনীতির একটা মডিউলের ব্যাপারে, সেটা খুব একটা সফল হয়নি। কারণ ইউএনডিপি সরকার তোয়াজ করে চলে এই জাতীয় বিষয়ে।
প্রার্বত্য চট্টগ্রামে সরকার পরিচালিত চার ধরনের প্রশাসন কাজ করে তার মধ্যে সামরিক বাহিনী সবথেকে শক্তিশালী এবং বিতর্কিত। নীলগিরি আমি একবারই গিয়েছি, জায়গাটা সত্যি অসাধারণ, কিন্তু সেটা আসলে ম্রো আদিবাসীদের জায়গা। এবং সেটা দখলকৃত জায়গায় ক্যাম্প ও রিসোর্ট। বান্দরবনের কিছু জায়গায় ম্রোদের সাথে সামরিক বাহিনীর ভূমি নিয়ে দ্বন্ধ রয়েছে। তার খেসারত দিতে হয়েছিল রাংলাইদাকে, কারণ তিনি প্রতিবাদ করেছিলেন সামরিক ভূমি দখলের বিরুদ্ধে। তারই ফলাফল তার ১/১১ পরবর্তী "সন্ত্রাসী" খেতাব পাওয়া ও অমানবিক নিপীড়নের স্বীকার হওয়া। পাহাড়ে এমন অসংখ্য রাংলাই রয়েছে, যারা তার মতো সুপ্রসন্ন ভাগ্য নিয়ে জন্মায়নি।
বান্দরবানের অবস্থা খাগড়াছড়ি এবং রাঙ্গামাটি থেকে ভিন্ন। কারণ মূলত জনসংখ্যার বৈচিত্র। বান্দরবানে ১২টা আদিবাসী গোষ্ঠি এবং বাঙ্গালীসহ ১৩টা। অন্য দুই জেলায় চাকমা, মারমা এবং ত্রিপুরারা বেশি। তাই তারা কিছুটা সংগঠিত প্রতিবাদ করতে পারে রাষ্ট্রের অন্যায়ের বিরুদ্ধে, তাছাড়া তাদের শিক্ষার হার বেশি। বানন্দবানে কুকিচিন অরিজিন গোষ্ঠি বেশি, যারা উচু ও গভীর পাহাড়ে থাকে। তবে এখন রাস্তাঘাট হচ্ছে, তাই সংঘাতের ঝুকি বাড়ছে।
পাহাড়ে সামরিক সাহায্যপুষ্ট আরামআয়েশি টুরিজমের বিকাশটা আমার ব্যক্তিগতভাবে একটা খারাপ প্রবনতা বলে মনে হয়। ইকো ট্যুরিজম একটা ব্যবসার ধারণামাত্র, এরমধ্যে মহত্ব কতটুকু আছে তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। সবাই একধরণের আদিমতা উপভোগ করতে যায়। যা জীবন্ত যাদুঘরের নামান্তর মাত্র এবং একটা উপনিবেশিক মানসিকতার আধুনিক রুপান্তর। বেড়ানো উপভোগ করি ঠিকই, কিন্তু আদিবাসীদের সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধা দেখাই না।
আরেকটা বিষয় হলো, চল্লিশ, পঞ্চাশ ও ষাটের দশকের স্বেচ্ছা অভিবাসিত বাঙ্গালী আর সত্তুর ও আশিক দশকের রাষ্ট্রপরিচালিত সামরিক সাহায্যপুষ্ট অভিবাসিত বাঙ্গালীদের মধ্যে চরিত্রগত পার্থক্য্ রয়েছে। তাদের রাজনৈতিক ম্যানডেটও ভিন্ন। পাহাড়ীদের মধ্যেও এখন এলিট শ্রেনীর বিকাশ হয়েছে, তাদের অবস্থা আবার অসহায় সাধারণ আদিবাসীদের থেকে ভিন্ন। তাছাড়া সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসন দীর্ঘদিন ধরে তাদের মধ্যে একটা দালাল শ্রেনীর তৈরি করার চেষ্টা করে রাষ্ট্রীয় সার্থে। এই বিষয়গুলোও খুব গুরুত্বপূর্ন।
অনেক কথা বললাম, আসলে আমাদের পার্বত্য রাষ্ট্রীয় নীতির পরিবর্তন দরকার। সেই সাথে আদিবাসীদের স্বীকৃতি ও তাদের প্রাপ্য সম্মান দেওয়া উচিত। রাষ্ট্রের ভুল স্বীকার করা উচিত। আদিবাসীদের প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন খুব জরুরী। যোগ্যতার দিক দিয়ে তারা কেউ কম নয়, কানাডায় একটা নামকরা ইউনিভার্সিতে একমাত্র বাংলাদেশী ভাইস চ্যান্সেলর হলো একজন পার্বত্য আদিবাসী। তিনিই কানাডার ইতিহাসে প্রথম বাংলাদেশী ক্যানেডিয়ান যে কিনা কোন ইউনিভার্সিটির এত সম্মানজনক একটা দ্বায়িত্বে আছেন। তাই তারা শুধু কোটা সুবিধা নেয় না, তারা স্ব স্ব ক্ষেত্রে যথেষ্ট যোগ্য।
পার্বত্য একালায় চলমান পরিস্হিতিতে ধীক্বার জানাচ্ছি এবং আদিবাসীদের প্রতি গভীর সমবেদনা।
আমার বন্ধুয়া বিহনে
ইকো ট্যুরিজম নিয়ে এই সন্দেহটা পুরোপুরি সমর্থন করলাম।
ওয়েস্টার্ন ওন্টারিওতে অমিত চাকমার ভিসি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের খবর শুনে গর্বিত বোধ করেছিলাম, বাংলাদেশী হিসেবে। এই গর্বববোধটুকু কেড়ে নিতে বসেছে পার্বত্য চট্টগ্রামে শোষণে নিয়োজিত সরকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ।
ধন্যবাদ ভাই,
আপনার মন্তব্য বড় হলেও মনে হচ্ছে এর প্রতিটি পয়েণ্ট নিয়ে আপনি আরও ডিটেইল করে লিখলে আমার সবার আরও সুবিধা হতো। সেটুকু না হলেও এই মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ- ব্লগ দিয়ে বেশ অনেক কিছু জানতে পারলাম। ভালো থাকবেন।
এ ক ম ত। চমৎকার দেখার চোখ আপনার।শাবাশ! :clap:
---
আপনাকে আমাদের 'আদিবাসী বাংলা ব্লগ' [লিংক] এ স্বাগত জানাই। 🙂
ওপরের মন্তব্যটি @ কচুপাতা। :clap:
৮ টা প্রস্তাবনার সাথেই একমত। আমরা যে ৪৭-৭১ এর পাকিস্তানী আচরণই করছি সেটা বোঝার একটা বড় উপায় হলো বাংলাদেশের সরকারের মধ্যে এমন একটা ভাব দেখা যায় যে পার্বত্য চট্টগ্রাম একটি বিচ্ছিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর অবৈধ বাসস্থান, এটাকে যেভাবেই হোক শাসন এবং আরও টাইট দেয়ার জন্য শোষণ করতে হবে। সরকার তার রাষ্ট্রযন্ত্রের মাধ্যমে সাধারণ একটি জেলাকে যেভাবে পরিচালনা করে পার্বত্য চট্টগ্রামকে কেন সেভাবে করছে না? কারণ প্রথমেই পাহাড়ী-বাঙালি জাতিভেদ সৃষ্টি করা হয়েছে, সরকারের মাধ্যমেই সেই শেখ মুজিব থেকে। যখন বিভেদটা সৃষ্টি হয়ে গেছে তখন অনেকে দেখেছে এই বিভেদকে কাজে লাগিয়ে অনেক ফায়দা লুটা যায়। যথারীতি বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী মহলের ফায়দা লুটার কাজ শুরু হয়েছে।
ঋত্বিক ঘটকের সুবর্ণরেখা সিনেমাটার কথা খুব মনে পড়ছে। এতে দেশভাগের সময় বাংলাদেশ থেকে ভারতে চলে যাওয়ার হিন্দুদের একটি প্রান্তিক কলোনির চিত্র দেখানো হয়েছিল। সেই কলোনিতেও পাবনা আর ঢাকা থেকে আসা লোকের মধ্যে বিভেদ। স্বথর্থান্বেষী একজনকে বলতে শোনা যায়: "এই বিভেদকেও যদি আমরা টিকিয়ে রাখতে না পারি তাহলে কি উপায় হবে"... এই টাইপের একটা কথা। অর্থাৎ বিভেদ সৃষ্টি করা যখন সোজা এবং সেই বিভেদের মাধ্যমে যখন অনেক স্বার্থান্বেষী মহলের সুবিধা তৈরি হয়ে যায় তখন সেটাই হয়ে যায় গন্তব্য। পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে বলে আমার মনে হয়। যারা পাহাড়ী-বাঙালি বিভেদের মাধ্যমে লাভবান হচ্ছে তারা যে সরকারকে প্রভাবিত করার ক্ষমতাও রাখে সেটা বলাই বাহুল্য। আর আর্মি যেহেতু পুরোপুরি বাঙালি সেহেতু যেকোন কাজে আর্মির ৯০% সাপোর্ট ই যে বাঙালিদের পক্ষে থাকবে সেটা না বলে দিলেও চলে।
যদ্দুর শুনলাম, বান্দরবান এবং রাঙামাটির তুলনায় খাগড়াছড়ির পাহাড়ীরা নিজেদের অধিকার এবং জমিজমার সংরক্ষণ নিয়ে অনেক বেশি সচেতন। তাই তারা এই প্রেক্ষিতে সোচ্চার হয়েছে। বান্দরবানে চিম্বুকের নিচে অনেক জমি দখলদারদের হাতে চলে গেছে, বাঙালিদের জন্য সেই জমি পাহাড়া দেয়ার দায়িত্বও নিয়েছে আর্মি। বান্দরবানে অনেকগুলো রিজর্ট তৈরি করেছে আর্মি, এগুলোকে সরকারী জমি মেনে নিয়ে আর্মির যাচ্ছেতাই ব্যবহার সমর্থন করি না। বাঙালিদের পার্বত্য এলাকায় জমি দখল মেনে নেয়ার প্রশ্নই আসে না। আসলে শুধু বললে হবে না, আমাদের কিছু করা দরকার। কিন্তু কি করব ভেবে পাই না...
একটা বিষয় বোঝা দরকার, পার্বত্য এলাকায় আর্মির অপকর্ম তুলে ধরা মানে পুরো মিলিটারি ইনস্টিটিউশন কে অবমাননা করা নয়। বাংলাদেশে সচিবালয়, লোক প্রশাসন যতোটা সহনশীলতা চর্চা করতে পেরেছে আর্মি সে তুলনায় পারে নি। সচিবালয়ের অনেক প্রতিষ্ঠান অনেক উল্টাপাল্টা কাজ করে- সেগুলো নিয়ে কট্টর সমালোচনাও করা যায়। সরকারের যেকোন প্রতিষ্ঠানকে তীব্র সমালোচনার মধ্য দিয়েই যেতে হবে, এটাই স্বাভাবিক।
পার্বত্য এলাকায় সামরিক শাসনের ভয়াবহতা আছে বলে মনে হয়েছে। ব্যাপারটা এমন যে: উত্তরা থেকে মহাখালি যাওয়ার পথে আমার ৩০ মিনিট দাড়িয়ে থেকে নাম লেখাতে হচ্ছে, হাসি হাসি মুখ নিয়ে এনসিও দের সাথে কথা বলতে হচ্ছে, তাদেরকে সন্তুষ্ট করতে হচ্ছে, আবার সন্দেহজনক কিছু করে বসলেই শেষ; পাহাড়ী হলে তো কথাই নেই। একটা বিষয় মনে হয়েছে: এসব চেকপোস্টে বাঙালিদের নাম লেখানোর সময় এমন আর্মি এমন ভাব নেয় যে বাঙালিদের রক্ষা করার জন্য এমনটি করছে তারা; আর পাহাড়ীরা নাম লেখানোর সময় এমন ভাব নেয় যে মনে হয় পাহাড়ীরা কোন আকাম-কুকাম যেন করে বসতে না পারে সেজন্য নাম লেখানো হচ্ছে। এমন ব্যবহার ও ভঙ্গি আমি নিজেই দেখতে পেয়েছি।
পাহাড়ে বাঙালিরা এমন কোন কুকাজ নেই করে নি: গণহত্যা, ধর্ষণ, জমি দখল, বিনা কারণে দীর্ঘদিন আটকে রাখা ইত্যাদি ইত্যাদি। সরকার একদিনে কোন চেঞ্জ আনবে না জানি। বেসরকারী পর্যায়ে আমাদের যেটা করা উচিত সেটা হলো পাহাড়ীদের নিজের পায়ে দাঁড়াবার ব্যবস্থা করে দেয়া উচিত। সংস্কৃতি চর্চা, শিক্ষা-দীক্ষা প্রযুক্তি সবকিছুতে তাদের এমনভাবে সহায়তা করতে হবে যাতে শাষনযন্ত্রের জবাব তারা নিজেরাই গঠনমূলক উপায়ে দিতে পারে। সে পথে পাহাড়ীরা অনেকদূর এগিয়ে গেছে।
পার্বত্য এলাকা আমাদের এক বিরাট সম্বল। কারণ বাংলাদেশে বৈচিত্র্যের একটি অনন্য ভাণ্ডার এই পার্বত্য এলাকা। যে দেশে বৈচিত্র্য যত বেশি সে দেশ তত বেশি সুন্দর। এই বৈচিত্র্য টিকিয়ে রাখতে হবে, বৈচিত্র্যগুলো চর্চার সুযোগ করে দিতে হবে প্রত্যেককে।
:thumbup:
ধন্যবাদ রায়হান আবীর। তোমার আর মুহাম্মদের বক্তব্যের সূত্র ধরে দারুন এক আলোচনার সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছি। এই পোস্টটিতেও কিছু আলোচনার সূত্রপাত হয়েছিল, কিছু লিন্কও শেয়ার করা হয়েছে। তার কিছু কিছু তোমাদের কাছে প্রাসঙ্গিক মনে হতে পারে।
হ্যা রায়হান ভাই, ঐ পোস্টে আপনার মন্তব্য পড়ে ব্যাপারটা খুবই প্রাসঙ্গিক মনে হচ্ছে। আসলেই প্রশ্নটা ভাববার মতো: "পার্বত্য চট্টগ্রামে সহিংসতার ঘটনা ঘটলেই আমরা নিজেদেরকে পাকিস্তানীদের সাথে তুলনা দেয়া শুরু করি কেন?" এরকম ঢালাওভাবে করা উচিত না আসলেই। ইতিহাসের সাথে বর্তমান বাস্তবতাকে এভাবে তুলনা করা অধিকাংশ সময়ই একটা ফ্যালাসি হয়ে যায় মনে হয়। অনেক সময় মনে হয় নিজেদের পাকিস্তানীদের সাথে তুলনা করে আমরা নিজেদের নৈতিক অনুভূতিতে শান দিচ্ছি। শান দেয়ার কাজে এটা ব্যবহার করা উচিত না আসলেই।
এরপর থেকে সতর্ক থাকবো আরও...
:thumbup:
রশিদ ভাই,
ব্যাপার হলো, আপনার মন্তব্য দেখেই আমি ব্লগ লিখতে বসেছি (বইটা পড়িনাই যদিও)। বই আর রিপোর্টের লিংকের জোগান দেবার জন্য ধন্যবাদ। অনেক প্রশ্নের জবাব এখানেইই পাওয়া যাবে।
রায়হান সামগ্রিকভাবে তোমার এই পোষ্টটার জন্য ধন্যবাদ। এই পোষ্ট এবং সাথে কিছু মন্তব্য এসেছে যাতে মনে হচ্ছে আসল সমস্যার দিকে দৃষ্টিপাত করা হয়েছে।
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
পোস্ট এবং কমেন্টগুলো পড়ে অনেক কিছুই জানতে পারলাম ...... অনেক ধন্যবাদ আবির, হিমু, মুহাম্মদ এবং কচুপাতা।
খুব সুন্দর লেখা। অনুমতি ছাড়াই share করলাম.
রায়হান লেখাটা ভালো হয়েছে...এবং অন্যান্য আরো অনেক লেখার মতো আউলফাউল পয়েন্ট না এসে ভালো পয়েন্ট গুলা আসছে। কিন্তু আমার কথা একটাই।।শুধু আর্মি কে দোষ দেয়াটা ঠিক না। সরকার এর যদি এসব বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত বা সমর্থন না থাকতো , বা আর্মি যদি শুধু নিজের ইচ্ছাতেই গুলি বা দখল করতে পারতো, তাহলে আজকে আমি বা আমার অনেক কলেজ এর আর্মি ক্লাসমেট বেচে থাকুক না থাকুক গত ২৫শে ফেব্রুয়ারী পিলখানাতে একজন বিডিয়ার ও বেচে থাকতো না
( অফেন্সিভ কমেন্ট এর জন্য দুঃখিত।)
আর্মি একটা টুল (হাতিয়ার) মাত্র। মুল দায় সরকার তথা শাসনযন্ত্রের।
এক ছোটভাই লেখাটা পড়তে বললো বলে পড়া । একটা লিঙ্ক শেয়ার করতে চাই
http://www.somewhereinblog.net/blog/dinmojurblog/29104837
আবারো পড়লাম। খুব সরাসরি বলছি:
এটি যথেষ্ট আবেগী লেখা। লেখক এবং অধিকাংশ মতামতকারী পার্বত্য সমস্যাকে রাজনৈতিক সমস্য হিসেবে না দেখে ভাসাভাসাভাবে 'পাহাড়ি-বাঙালির জমাজমা দখলের সদস্যা' হিসেবে দেখেছেন। দু-একজন মতামতকারী তো আবার পাহাড় রোমহর্ষক অ্যাডভেঞ্চারের ফিরিস্তি দিয়েছেন! 😛
যতদূর মনে পড়ে, মুক্তমনা ডটকম-এ এই লেখাটি প্রকাশের পর এর সহযোগি লেখা হিসেবে আমি এই লেখাটি লিখেছিলাম : পাহাড়ে কোনো এতো সহিংসতা? [লিংক]
অনেক ধন্যবাদ। চলুক। 🙂
এবং ইউপিডিএফকে নিষিদ্ধ করার আহবানের মানে বুঝলাম না। ইউপিডিএফএর বিরুদ্ধে যদি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকে তাহলে জানান। তারপর বলুন 'এইসব কারণে সংগঠনটিকে নিষেদ্ধ করা দরকার'। ইউপিডিএফকে কেউ সৃষ্টি করে দেয়নি। ইউপিডিএফ বঞ্চনা-লাঞ্চনা-নির্যাতন-নিডীড়নের বিরুদ্ধে ঐক্য্দ্ধ হয়ে লড়াই করতে সৃষ্টি হয়েছিল।
আলোচনার এই পর্যায়ে বjক্তিগত দায়েবদ্ধতা থেকে কিছু লিখবার প্রয়োজন অনুভব করছি. বাক স্বাধীনতার একটি প্রাসঙ্গিক পূর্বশর্ত হলো, বস্তুনিষ্ঠতার প্রতি নিরপেক্ষ থাকা. নিতান্ত আবেগ কখনো সত্যের বিকল্প হওয়া উচিত নয়, এবং সত্যের কাছাকাছি আসার জন্য পড়াশোনা ও বjক্তিগত অভিজ্ঞতার বিকল্প নেই. কিছু প্রশ্ন রাখছি. সচেতন পাঠক মাত্রই প্রশ্নের উত্তর গুলো জানবার চেষ্টা করবেন বলে অনুরোধ করি.
১. মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের পাহাড়ি জনগোষ্ঠির ভুমিকা সম্পর্কে আমরা কতটুকু জানি?
২. আই এল ও কনভেনসন অনুযায়ী নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠির যে সংগা দেয়া হয়েছে, আমরা সে সম্পর্কে অবগত কিনা ?
৩. জাতিসংঘ আদিবাসীদের সঙ্গায়নে যে সকল বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত করার কথা বলেছে, সেখানে একটি দেশে মূলধারার জনগোষ্টি এবং আদিবাসীদের প্রতি আইনগত আচরণে এমন কিছু পার্থক্য রয়েছে, যা একটি দেশের সার্বভৌম কে প্রশ্নবিদ্ধ করে. আমরা এসম্পর্কে কতটুকু জেনে এই আলোচনাগুলো করছি?
৪. ইউ এন ডি পি গত কয়েক বছরে পাহাড়ি অঞ্চলে পঞ্চাশ ও একশবিশ মিলিয়ন ডলার এর উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে. যার ৭৮ শতাংশ চাকমা আদিবাসীদের জন্য. যেখানে বান্দরবান উন্নয়নের প্রশ্নে সবচেয়ে পশ্চাদপদ. উদ্দেস্য কি ?
৫. এক ই প্রজাতির আদিবাসীর উপস্থিতি থাকার পর ও এক ই ধরনের সন্ঘার্সিক প্রশ্ন আমাদের প্রতিবেশী ইন্ডিয়া তে উত্থাপিত হচ্ছেনা কেন? জাতিসংঘ ই বা নিরব কেন?
৬. পাহাড়ে সামরিক বাহিনীর স্বার্থ সম্পর্কে বস্তুনিষ্ঠ ও তথ্য নির্ভর কি পরিমান প্রমান লেখক দিতে পারবেন? এই পাহাড়ে সামরিক বাহিনীর কত শত সদস্য জীবন দিয়েছেন এবং কেন দিয়েছেন ই বিষয়ে লেখক কতটুকু জানেন?
৭. সামরিক বাহিনীর সমালোচনা করা একটা টেবু. আমরা যারা অহরহই এটা করে আত্মতৃপ্তিতে ভুগি, তারা কেন ভুলে যাই, সামরিক বাহিনী আমাদের ভাই, বন্ধুদের সমন্নয়েই গঠিত. এবং সামরিক বাহিনী নিশ্চই একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান. প্রান্তিক জনগোষ্ঠী এখনো যেকোনো বিপর্যয়ে সামরিক বাহিনীর ওপর আস্থা রাখে. আমরা যারা একরাত কম্বল বিতরণ করে একটি জনগোষ্ঠির ইতিহাস সম্পরকে মন্তব্য করি, তারা এই প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কতটা কাছাকাছি অবস্থান করি?
৮. আমাদের যে সকল বুদ্ধিজীবিরা আবেগে আজ বিগলিত, তাদের পূর্ববর্তী আচরণ আমাদের কোন স্বার্থের দিকে নির্দেশ করে?
৯. আমরা কি জানি আমাদের সার্বভৌম দেশের অঙ্গস পাহাড়ে কি পরিমান প্রাকৃতিক সম্পদের সম্ভাবনা রয়েছে? আমরা কি জানিনা, উপনিবেশিক মানসিকতার দেশগুলো কোন কৌসলে এই প্রাকৃতিক সম্পদের দিকে হাত বারাযে ?
১০. আমরা কি ভুলে গেছি যে, আমাদের স্বার্থ নিয়ে যারা প্রতিনিয়ত খেলা করে, তারা সবার আগে কিনে নেয় আমাদের সুশীল মাথাগুলোকে?
সুদুর প্রবাস থেকে দেশের জন্য প্রাণ কাঁদা স্বাভাবিক. কিন্তু আমরা যেন সকল বjক্তি ও প্রতিষ্ঠানের প্রতি নিরপেক্ষ , জ্ঞাত ও শ্রদ্ধাসুলভ সংবেদনশীল আচরণ করতে শিখি. তাতে আমাদের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পায়ে বই কমে না. কাউকে বjক্তিগত আঘাত করার জন্য এই লেখা নয়. এরূপ অনুভূত হলে নিজ গুনে ক্ষমা করবেন.