হারিয়ে গেছে বন্ধু মিজান- মিজানুল মাহবুব। মেধাবী ছিল। আঁকার হাতটা ছিল দারুণ। বুয়েটে যখন স্থাপত্য বিভাগে ভর্তি হলো আমরা কেউ অবাক হইনি। ক্যাডেট কলেজে ঢুকে আমাদের অধিকাংশ বন্ধুর ড্রইংয়ে হাতখড়ি হয়েছিল। সেসময় মিজান, সোহেলসহ কয়েকজনকে আমরা রীতিমতো ঈর্ষা করতাম।
মিজান স্থাপত্য পড়া শেষ করে ছোটখাট কিছু কাজ করছে এমন সময় তার অসুখটা ধরা পড়লো। দুটো কিডনিই তার পুরো নষ্ট হয়ে গেছে। রোগের সঙ্গে লড়াই করতে করতে বন্ধু মিজান হারিয়ে গেল ১৯৯৩ সালে। তাও ১৫ বছর হয়ে গেল। তোর অভাবটা ভীষণভাবে অনুভব করি বন্ধু।
আরেক বন্ধু শিলার। চমৎকার নজরুল গীতি গাইতো। কলেজে ক্লাস সেভেনে আমাদের যে সম্বর্ধনাটা হয়েছিল সেখানে শিলার গেয়েছিল, “আমার যাবার সময় হলো দাও বিদায়”। কলেজ থেকে ১৯৮০ সালে বেরুনোর পর শিলারের সঙ্গে তেমন আর দেখা হয়েছিল কিনা মনে নেই। কেমন করে যেন শিলার হারিয়ে গেল কেউ জানে না। আজো আমরা বন্ধুরা যখন একসঙ্গে হই ওর কথা ওঠে। কেউ জানে না কোথায় গেছে শিলার। একটা জলজ্যান্ত মানুষ এভাবে হারিয়ে যায়! মরে গেলে শরীরটাতো পড়ে থাকে। কিন্তু সেটাও আজো আমরা পাইনি। সময়ে-অসময়ে শিলারের গানটা বেঁজে ওঠে।
১৯৭৪ সালের ১৭ আগস্ট ফৌজদারহাটে আমরা ৫৬টি বালক ভর্তি হয়েছিলাম। এখন আমরা জানি সময়ের স্রোতে দুজনকে হারিয়ে ফেলেছি। অনেকদিন যোগাযোগ নেই হাসিবুল, মঞ্জুর ওয়াহিদের সঙ্গে। হাসিবুল শান্তিনগর থাকে। ব্যবসা করে জানি। দেখা হয় না। মঞ্জুর ওয়াহিদ আরেক দারুণ বন্ধু, প্রানবন্ত সারাক্ষণ। হিন্দি গান ছিল ওর মুখে। একের পর এক গেয়ে যেত। সত্তুর-আশির দশকের হিট হিন্দি গানগুলো ও যখন চিৎকার করে বাথরুমে গাইতো শুনে শুনে আমরাও শিখে নিতাম। সর্বশেষ শুনেছিলাম ও আছে সৌদি আরবে। বহু বছর কেটে গেল দেখি না ওকে।
বন্ধুদের অনেকে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অষ্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডে থাকে। বেশির ভাগই অবশ্য ঢাকা আর চট্টগ্রামে। ইয়াহু গ্রুপে প্রবাসীদের সঙ্গে খোঁচাখুঁচি, তর্ক-বিতর্ক চলে। মাসে-দুমাসে কখনো দু সপ্তাহে আমাদের পরস্পরের সঙ্গে দেখা হয় কারো না কারো বাসায়। বউ-বাচ্চারা থাকে, খেতে খেতে আড্ডা চলে। সামনে ১৭ আগস্ট। আগে বা পরের এক ছুটির দিনে আমরা আবার বসবো অলস আড্ডায়। দেখতে দেখতে আমাদের বন্ধুত্বের ৩৪টা বছর হয়ে গেল।
ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজের ৫০ বছর পূর্তি হলো এ বছর। সামনের ডিসেম্বরে কলেজে মহা(!)পূনর্মিলনী হবে। বিদেশ থেকে বন্ধুরা প্রস্তুত হচ্ছে দেশে আসার। ফিরোজ, আবুল কামাল, সাঈদ, ফাহাদ ইতিমধ্যে জানিয়েছে তারা আসছে। সম্ভবত আসবে সাজিদও। আরো কেউ কেউ। ডিসেম্বরের আমাদের বন্ধুদের পূর্নমিলনীর জন্য ভীষণ অপেক্ষা করছি আমরা সবাই।
বন্ধু ...... শব্দটা শুনলেই বুকের গভীরে কোথাও টান পড়ে।
আপনাদের পুুনর্মিলনী সফল হোক। অনেক অনেক শুভকামনা রইল। 🙂
সাতেও নাই, পাঁচেও নাই
ধন্যবাদ জিহাদ।
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
আপনার লেখাটা পড়ে মনের মধ্যে দোলা দিয়ে গেল আমাদের বন্ধু আতাউরের কথা। রাজশাহী ক্যাডেট কলেজের ৩১তম ব্যাচের আতাউর। খুবই প্রাণবন্ত আর হাসিখুশি একটা ছেলে। খেলাধূলাতেও খুব ভাল ছিল। কলেজ থেকে বের হয়ে AFMC তে ঢুকেছিল- মানে আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজ এ। ভালই চলছিল... তারপর একদিন হঠাত শুনি আতাউরকে খুজে পাওয়া যাচ্ছেনা। AFMC তে নেই, ওর বাসাই নেই ... কোথাও নেই! অনেক খোজ করা হয়েছে তারপর- কিন্তু কোন নির্দিষ্ট খবর পাওয়া যায়নি। কানাঘুষায় অনেক কথা কানে এসেছে- জানিনা এর মাঝে কোনটা সত্যি আর কোনটা মিথ্যা। তবে যেটাই হোক- মনে মনে সব সময় প্রার্থনা করি - আতাউর, তুই যেখানেই থাক, আল্লাহ যেন তোকে সবসময় ভালো রাখেন.........
শহীদ ভাই , ভাবিকে দেখলাম সেইদিন। তবে স্যার কিন্ত আমাদের দাওয়াত দেন নাই। :(( so এক দিন ডেকে ভাবির হাতের রান্না দিয়ে penalty করতে হবে কিন্তু
হ্যা শিলারকে ভীষণ মিস করি।
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
বন্ধ্যগুলা আমার কাছে বাবা মার চেয়েও বড় কিছু।
আমাদের সময় হয়তো তাই ছিল। কিন্তু এখনকার ছেলেমেয়েদের কাছে বাবা-মা তো বন্ধুই। তাই না?
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
ইনশাল্লাহ এফ সি সি 'র গ্র্যান্ড রিউনিয়নে দেখা হবে সবার সাথে....
সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!
হুমম, বন্ধু ব্যাপারটা বেশ জটিল... 8->
সামিয়া, বন্ধু নিয়ে জটিলতাটা কোথায় ঠিক বুঝলাম না!
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
আমার যতদূর মনে হয় সামিয়া এখানে জটিল বলতে জোস টাইপ কিছু একটা মিন করেছে।
আজকালকার পুলাপান তো .... আমাদের ব্যবহার করা অনেক ভাষাই আপনাদের কাছে একটু এরকম ওরকম লাগতে পারে। 🙂
সাতেও নাই, পাঁচেও নাই
ধন্যবাদ জিহাদ। সামিয়ার জন্য শুভেচ্ছা।
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
>:)
অসাধারন।
আপনাদের বন্ধুত্বের ১০০ বছর পেরিয়ে যুগ যুগ টিকে থাকুক এই প্রত্যাশায়।
@সানাউল্লাহ ভাই
ভাইয়া আপনি কোথায়? বহুদিন আপনার কোন লেখা নাই। আমাদের এতিম কইরা দিয়া কই গিয়া বইসা আছেন? জদলি আসেন।
এইমাত্র খেয়াল করলাম সানাউল্লাহ ভাই যেই বছর কলেজ থেকে বের হইসেন তার পরের বছর আমার জন্ম। 🙁 🙁 🙁
ভাইয়া আপনি তো বুড়া হইয়া গেছেন। 😉 😉
বুড়া মানে!! আমাকে বাতিল করে দিচ্ছ? 'জটিল'- তোমাদের ভাষা শিখছি।
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
আস্তাগফিরুল্লাহ
ভাইয়া এইডা কি কন? বুড়া হইলে মানুষ বাতিল হয় নাকি! অভিজ্ঞতা বাড়ে। আপনে হইলেন আমাদের মইদ্যে সবচেয়ে অভিজ্ঞ বড় ভাই।
সময় পাইলে লিখেন, সমস্যা নাই। কিন্তু আপাতত কমেন্ট করেন অল্প সল্প। এতে তো আর বেশি সময় লাগে না।
মামু আমি তো তাইলে এই মাত্র দুইন্নায় আসলাম চিক্কুর পাইড়া কান্দার বদলে ব্লগ লিকতাসি 😀
তুই যদি মাত্র দুইন্নায় আইসা থাকস তাইলে জিহাদরা তো 😕 😕 থাক আর কইলামনা :grr:
সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!
ধন্যবাদ বালকেরা! আসলে ব্লগে মাঝেমধ্যে উকিঁঝুকি মারি তোমাদের পোস্ট পড়ে যাই। অসাধারণ লিখ তোমরা সব। জুনে অসুস্থ ছিলাম, তখন হাসপাতালে বসে-শুয়ে কিছু লিখেছিলাম। এখন একদম সুস্থির সময় পাচ্ছি না। শিগগিরই আমাদের রেডিও স্টেশন 'এবিসি' বাণিজ্যিক প্রচারে যাবে। তারই প্রস্তুতি চলছে। তোমাদের জন্য শুভকামণা। সময় পেলেই লিখবো।
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"