যে কথা বলা হয়নি।

আমার বাবা একজন ভীষণ বোকা মানুষ। সারাজীবনই চাকরীসুত্রে বাইরে বাইরে কাটিয়েছেন। দূরত্ব বিবেচনা করলে,মার সাথে আমার দূরত্ব এক ইঞ্চি হলে, বাবার সাথে কয়েক আলোকবর্ষ। বাবা ছিলেন আমাদের দুই ভাইের প্রধানতমশত্রু। ছোটকাল থেকেই আমরা দুই ভাই চূড়ান্তভাবে স্বাধীন। মা টাইট দেওয়ার চেষ্টা করতেন অবশ্য। কিন্তু সে চেষ্টায় বিশেষ কোন লাভ হয়নি।

আমাদের টাইট দিতে পারতেন আমাদের বাবা। ছয়ফুট শরীরের বিশালদেহী একজন মানুষ। সাধারণ শিশুরা ছুটি ছাটায় বাবারা বাড়ি এলে, পর্যাপ্ত পরিমানে খুশি হয়। আমরা দুই ভাই অসাধারণ ছিলাম। বাবা বাড়ি এলে কখনোই খুশি হতে পারিনি। বাবা যে কয় দিন বাড়িতে থাকতেন, সামরিক আইন চালু করা হতো। হেন অপরাধে চড় খেয়ে আমরা ভূপতিত হতাম। বয়সে একটু বড় ছিলাম বলে, বাবার মৃত্যু কামনা করতে পারিনি। কিন্তু ছোটভাই আমার মত ছিল না। তার শিশুকালের খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা সময় গিয়েছে, বাবার মৃত্যু কামনা করে।

আমাকে শায়েস্তা করার জন্য ক্যাডেট কলেজে পাঠানো হয়। বলা যায়, আমি বাবার অত্যাচার থেকে বেঁচে গেলাম। কিন্তু ছোটভাই বেচারা একা পড়ে গেল। মাঝে মাঝেই ও আমাকে চিঠি লিখতো। জ্বালাময়ী ভাষায় লেখা বিশাল বিশাল সব প্রতিবাদী চিঠি। চিঠির শেষের দিকটায় কেন জানি প্রতিবারই একই ধরনের লাইন লিখা থাকতো।

“ভাইয়া আরেকটু বড় হয়ে নিই। ওরে(বাবাকে) দেখে নিব। তুই টেনশন নিস না।”

আমাকে খুব একটা টেনশনও করতে হয়নি। আমার অত্যাচারী বাবা এর কিছুদিন পড়েই বাড়াবাড়ি রকমের ভাল হয়ে গেলেন।

৯৭ সালের অগাস্টের বারো তারিখে দাদা মারা যান। বাবা তখন চাকুরীসুত্রে রাঙ্গামাটির বরকল নামে এক জায়গায়। বাবাকে খবর পাঠানো হল, যে তাঁর বাবা অসুস্থ। উনি যাতে যতদ্রুত সম্ভব বাড়ি চলে আসেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম তখন খুবই অস্থিতিশীল। বাবা আসতে পারেলন না। উনি আসলেন চার দিন পর।

এসেই ভয়াবহ ধরনের পাগলামি শুরু করলেন। আমার দাদার কবরের পাশে উদ্ভ্রান্তের মত সারাদিন বসে থাকেন। কেউ কাছাকাছি না থাকলে, কবরের খুব কাছাকাছি চলে যান। আমি আর আর আমার ছোটভাই দূর থেকে বাবাকে দেখি। বাবার কাছে যাওয়ার মত সাহস আমদের হয়না। অবস্থা চরমে পৌঁছালে আমরা দুই জন বাবার কাছে গেলাম। তিনদিন পর আমার বাবা কাঁদলেন।

বাবা সে বছরই চাকুরী ছেড়ে দিলেন। আমরা দেখলাম,সীমাহীন দুঃখ চোখে মুখে নিয়ে একজন মানুষ আমাদের চার পাশে ঘোরাফেরা করছেন। তাঁর পায়ের শব্দ আমরা শুনি, কিন্তু তাঁর অস্তিত্ব টের পাই না। আমার সাথে বাবার দূরত্ব সব সময়ই বেশি। সে দূরত্ব আরও বাড়লো। শুধু আমার সাথে না, সবার সাথেই বাবার দূরত্বটা বেড়ে গেল। বাবা সারাদিন চুপচাপ বসে থাকেন। বুক পর্যন্ত লম্বা দাড়ি রাখলেন। একটা কথা বলে রাখা ভাল, বাইপাস সার্জারি করার সময়টুকু বাদে আমার বাবা কখনই নামাজ ক্বাযা করেন নি। আমাদের চোখের সামনে বাবা সম্পূর্ণ অন্য একটা মানুষে বদলে গেলেন।

আমি কলেজে ফিরে গেলাম। প্রতিবার অভিবাবক দিবস সবার বাবা-মা একসাথে আসেন। আমার আসে একজন। শুধু মা। বাবা আসেন না। ক্যাডেট কলেজের ওই কঠোর শৃঙ্খলিত পরিবেশে আমরা খুব ছোট থেকেই শিখে গিয়েছিলাম, কিভাবে বাবা-মা ছাড়া একা একা থাকতে হয়। কান্না আসলে, কিভাবে সে কান্না চেপে রাখতে হয়। আমার বন্ধুরা তবুও মাঝে মাঝে রাত গভীর হলে, কান্না কাটি করতো। আমার ভেতরে মায়া-দয়া কম। আমি কখনো কাঁদিনি। তারপরও অভিভাবক দিবসগুলোতে শুধু মাকে আসতে দেখে, অকারণ ঝামেলা করতাম। আমার খুব ভাল মানুষ বাবা’কে আমার মা ফিরে গিয়ে কখনও অভিযোগ করতেন কি না- তা আর আমার জানা হয় নি। আর এই সব বলেও বিশেষ কোন লাভ হতো না। বাবা তখন দরবেশগিরিতে ব্যস্ত। পুত্রের জাগতিক অভিমানের অর্থহীন সব গল্প শোনার সময় তার হাতে নাই। উনি ঘর থেকেই বের হন না।

বাবা কলেজে প্রথম দিন একবার আমাকে রাখতে এসেছিলেন। তারপর আর আসেন নি। আমার বন্ধুরাও জানতো অন্য সবার মত আমারও একজন বাবা আছে। কিন্তু কোন এক অজ্ঞাত কারণে উনি কলেজে আসেন না। ক্লাস টেন পর্যন্ত এভাবেই গেল। বাবা আমার কলেজে আসলেন না।

একাদশ শ্রেণীতে উঠে আমি বেশ বড় হয়ে গেলাম। কলেজের চার দেয়ালের সীমানা টেনে দেওয়া জীবন ভাল লাগে না। নতুন নতুন সিনিয়র হয়েছি। নিয়ম ভাঙার ক্ষমতা আর সাহস দুইটা এক সাথে পেলাম। বাবা-মার জন্য মন খারাপ হওয়ার যে ব্যাপারটা ছিল- সেটা কমে গেল। আসলে মন খারাপ হওয়ার মত সময়ই ছিল না। দুনিয়ার তাবৎ বাঁদরামিকে আমরা আমাদের ক্লান্তিহীন প্রচেষ্টা দিয়ে একটা শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেলাম। আমাদের মধ্যে কেউ কেউ স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে দিল। রাতে প্রেপ টাইমে আমাদের কখনই ক্লাসে পাওয়া যেতো না। দেখা যেতো, আমরা ফুটবল মাঠের কোনায় অন্ধকার দিকটায় ঘাসের উপরে শুয়ে আছি। চোখ মুখে দুর্দান্ত একটা দার্শনিক ভাব নিয়ে আমরা আকাশের তারা দেখি। পড়াশুনা আগেও যে খুব একটা করতাম এমন না, তবে একাদশ শ্রেণীতে উঠে পুরোপুরি ছেড়ে দিলাম। দিন যায়, দিন আসে- কিন্তু আমার বই খাতা চির নতুনই থাকে, পুরনো আর হয় না।

পরীক্ষার আগে আগে হাজারী আর নাগ সাহেবের রসায়ন আমাদের সাপ হয়ে কামড়াতে আসে। আসুক, সমস্যা কি?? পরীক্ষা পাশের চেয়ে পৃথিবীতে তখন আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল। আমরা সেই সব কাজে মনোনিবেশ করলাম। আমাদের অত্যাচারে কলেজ প্রশাসন একটা সময়ে নড়ে চড়ে বসে। আমাদের নিয়মিত বিরতিতে ডলা দেওয়ার একটা চেষ্টা অব্যাহত থাকলো। কিন্তু আমাদের চামড়া তখন গণ্ডারের চেয়েও মোটা আর টাকি মাছের চেয়েও পিচ্ছিল। কোন ধরণের শাস্তিতেই আমাদের কিছু হয় না। শেষে এসে কলেজে প্রশাসন যা করলো, তার জন্য আমরা কেউই প্রস্তুত ছিলাম না।

দিন ক্ষণ ধার্য করে আমাদের অভিভাবকদের ডাকা হলো। সবারই অল্প বিস্তর মন খারাপ। নিজেরা বাঁদর হতে পারি, নচ্ছার হতে পারি,এটা মেনে নিয়ে কঠিন থেকে কঠিনতর শাস্তি পেতে আমাদের কোনই সমস্যা নেই। কিন্তু সবার বাব-মা ই খুবই ভাল। এটা তাদের দুর্ভাগ্য যে- তারা আমাদের মত সন্তান জন্ম দিয়েছেন। আমাদের করা অপরাধের শাস্তি পাবেন তাঁরা। তাঁদের ডেকে নিতান্তই অপমানজনক কিছু কথা বলা হবে। ক্ষেত্রবিশেষে যা না, তাও বলা হবে।

বন্ধুদের সবারই আতংকে দিন কাটছে। তাদের বাবা-মাকে ডেকে এনে ছোট করা হবে। আমিও যে খুব সুখে আছি, এমন না। তবে ওদের চেয়ে আমার টেনশন একটু কম। আমার বাবা কলেজে আসেন না। আমার আসেন মা। মা’রা সব কিছু খুব তাড়াতাড়ি ভুলে যান। আমার মা ও ভুলে যাবেন।

নির্ধারিত দিনে আমরা প্রিন্সিপালের রুমের দাঁড়িয়ে আছি। ইতিমধ্যেই কারও কারও বাব-মা চলে এসেছে। যাদের বাবা-মা চলে এসেছেন, তারা মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে। আমার এই বন্ধুরা খুব একটা লজ্জা পাওয়ার ভাব ধরেছে। ক্যাডেট আর যাই পাক, লজ্জা পায় না। লজ্জা জিনিসটা আমরা কলেজে প্রবেশের পূর্বেই যে মেডিকেল চেক আপ হয়, সেখানে ফেলে এসেছি। তবুও পরিস্থিতি বলে কথা। আজকে আমাদের লজ্জা পাওয়ার ভাব ধরতে হবে। আমি অপেক্ষা করছি। কখন আমার মা আসবে, আর আমি লজ্জা পাওয়ার অভিনয়টুকু শুরু করবো।

সৃষ্টিকর্তা সেদিন আমার জন্য বিশাল একটা সারপ্রাইজ রেখেছিলেন। উনি সেদিন আমার মা কে অসুস্থ বানালেন। দীর্ঘ চার বছর পর বাবা আমার কলেজে আসলেন। শুরুতে আমার বিশ্বাস হয়নি। দূর থেকে দেখছিলাম বুক পর্যন্ত লম্বা দাড়িওয়ালা এক লোক ধীর পায়ে এই দিকে আসছে। দুনিয়াতে দারিওয়ালা হুজুরের অভাব নেই। খুব চাইছিলাম যাতে এই লোকটা আমার বাবা না হয়। আমার চাওয়াটা সেদিন আমার মত হয়নি। কাছে এসে বাবা খুব শান্ত ভাবে আমার চোখে চোখ রাখলেন। আমি চোখ নামিয়ে নিলাম। আসলে চোখ না নামিয়ে উপায় ছিল না। পৃথিবীতে খুব শর্ট লিস্টেড কিছু হতভাগা আছে, যাদের জন্য তাদের বাবা-মা রা অপমানিত হয়। আমি সেই শর্ট লিস্টেড কুলাঙ্গারদের একজন।

এর পরের সময়’টুকু জীবনে ভুলতে পারি নি। বোধহয় পারবোও না কোন দিন। আমার সামনে বাবা কে যা বলা হল,তাতে আমার কেমন অনুভূতি হলো জানিনা। আমি শুধু দেখলাম আমার বিশালদেহী বাবা ধীরে ধীরে ছোট হয়ে যাচ্ছেন। এক পর্যায়ে বলা হলো, আমাকে কলেজে রাখা হবে না। বাবা চাইলে আমাকে তার সাথে বাড়ি নিয়ে যেতে পারেন। আমি খুব ভাল করে জানি, এই সব তুচ্ছ কারণে বহিষ্কারের ক্ষমতা জনাব অধ্যক্ষ রাখেন না। উনার বড় অংকের একটা জরিমানা করার পরিকল্পনা। সে জন্য নাটক সাজাচ্ছেন। ব্যাপারটা আমি বুঝলাম, আমার সহজ সরল বাবা ব্যাপারটা বুঝলেন না। চোখের সামনে তাকে ভেঙে পড়তে দেখলাম। অধ্যক্ষ সাহেব বুঝলেন তার গুটির চাল জায়গামত পড়েছে। উনি এমন একটা ভাব নিলেন যে, এবারের মত ক্ষমা করে দেওয়া হলো। কিন্তু ফ্রিতে না। উনার ক্ষমারও একটা অর্থমূল্য আছে। জরিমানার টাকার অংকটা বাবাকে জানিয়ে দেওয়া হলো।

বাবা প্রিন্সিপালের রুম থেকে বের হয়ে সোজা হাঁটা দিলেন। ক্ষমা চাওয়ার সুযোগটুকুও উনি আমাকে দিলেন না। অবশ্য উনি যে আমাকে সুযোগ দেবেন, এটাও বা আমি আশা করি কিভাবে? কুলাঙ্গার সন্তানদের আবার কিসের ক্ষমা? সেদিনের জন্য বাবার কাছে পরেও আর কোনদিন ক্ষমা চাওয়া হয়নি। বাবা’রা বোধহয় সন্তনাদের চির অপরাধী করে রাখতে ভালবাসেন। সেদিনের পর বাবা আর কোনদিনই আমার কলেজে আসলেন না।

বাবাকে নিয়ে এই লেখাটার ইতি টেনে দিচ্ছি। কেন জানি, এই লেখাটাকে আর দীর্ঘ করতে ইচ্ছে করছে না। শেষ করার আগে কিছু কথা বলা দরকার। আমার বাবার কোন ইচ্ছাই আমি পূরণ করতে পারিনি। বাবা খুব চাইতেন, তাঁর ছেলে ভাল ছবি আঁকবে। দুঃখজনকভাবে আমার চিত্রাঙ্কন প্রতিভা আজীবনই ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ আর বৃত্ত আঁকানোর মাঝে সীমাবদ্ধ ছিল। বাবা চাইতেন, তাঁর বড় ছেলে তাঁর কাছে থাকুক। তাঁর সে ইচ্ছাও পূরণ করা হয়নি।

দেশ ছাড়ার আগে আমাকে বিদায় জানাতে সবাই এয়ারপোর্টে ইমিগ্রেশন পর্যন্ত এলো। বাবা এলেন না। উনি আমাকে বিদায় দিলেন এয়ারপোর্টের বাইরে থেকে। আমার বোকা বাবা,হয়তো খেয়াল করলেন না। কিন্তু আমি ঠিকই খেয়াল করলাম। এয়ারপোর্টের বাইরে খুব অভিমানী একজন মানুষ কোনভাবেই তাঁর কান্না থামাতে পারছেন না। এয়ারপোর্টর মোটা কাঁচের এপার থেকেও এই লোকের কান্না আমাকে বড়সর একটা ধাক্কা দিল। আমি এলোমেলো হয়ে গেলাম।

খুব ইচ্ছা করলো, বাবার পাশে দাড়িয়ে তাঁর হাতটা ধরে বলি, “বাবা মানুষ হিসেবে আমার ক্ষুদ্রতা খুবই বেশি। আমি অনেক বড় হতে চাই। তুমি আমাকে দোয়া করে দাও। আমি তোমার মত একজন বাবা হব।”

৯,০১০ বার দেখা হয়েছে

৭৯ টি মন্তব্য : “যে কথা বলা হয়নি।”

  1. রুম্মান (১৯৯৩-৯৯)

    :hatsoff:


    আমার কি সমস্ত কিছুই হলো ভুল
    ভুল কথা, ভুল সম্মোধন
    ভুল পথ, ভুল বাড়ি, ভুল ঘোরাফেরা
    সারাটা জীবন ভুল চিঠি লেখা হলো শুধু,
    ভুল দরজায় হলো ব্যর্থ করাঘাত
    আমার কেবল হলো সমস্ত জীবন শুধু ভুল বই পড়া ।

    জবাব দিন
  2. তারেক (৯৪ - ০০)

    লেখাটা পড়ে অনেকদিন পরে সিসিবিতে লগ ইন করতেই হলো। লেখার ভেতরের হাহাকারটুকু মন খারাপ করিয়ে দিচ্ছে বারে বারে, তারপরেও লেখার অসামান্যতাটুকু ভুলতে দিচ্ছে না একদম।
    অনেকদিন এরকম লেখা পড়িনি। তুমি ভাল থাকো, তোমার বাবাও, এবং তোমার লেখার হাত।


    www.tareqnurulhasan.com

    জবাব দিন
  3. আজিজুল (১৯৭২-১৯৭৮)

    রেজা শাওন, তোমার প্রতি শুভেচ্ছা রইল। একটা সহি হাদিস বলিঃ রাসুলুল্লাহ (সঃআঃ) জুম্মার নামাজের মিম্বারে উঠছেন, উনি সিঁড়ির একধাপ উঠে বললেনঃ আমিন, এইভাবে দ্বিতীয় ও তৃতীয় সিঁড়িতে আরো দুই বার আমিন উচ্চারন করলেন।
    নামাজের পর সাহাবাদের প্রশ্নের উত্তরে উনি বল্লেনঃ সিঁড়ির প্রথম ধাপে আরোহণ করার পর জিব্রাইল (আঃ) এসে আমার কানে উচ্চারণ করলেন।" যে জীবদ্দশায় পিতা মাতাকে পাইলো কিন্তু তাদের খেদমত ও রাজি খুশি করতে পারলোনা , তাদের উপর আল্লাহের লান্নত! রাসুল (সঃআঃ) আমিন বলে Authenticate করলেন।২য় বার কানের কাছে উচ্চারণ করলেনঃ যে জিবদ্দশায় রমজান পাইল, কিন্তু গোনাহ মাফ করাইতে পারলনা, তার উপর আল্লাহর লান্নত।৩য় বার বললেনঃ যে নবী করিমের (সঃআঃ) নাম শুনলেন এবং তার উপর দরুদ পাঠ করলেন না, তার উপর আল্লাহর লান্নত। এই তিন টার উপরই রাসুল (সঃআঃ) আমীন বলে সায় দেন।
    বড় ভাই হিশাবে মিনতি করি, বাবা-মা থাকতে একটু সেবা , একটু ভাল ব্যবহার ওঁদের মনকে অনেক বড় করে। আর দোয়া মুখে বলতে হয় না, মন থেকেই আসে।এই জানুয়ারিতে বাবাকে হারিয়েছি, আর নিজে দুইটি বড় বড় ছেলের বাবা। তাই টেবিলের দুইটি প্রান্ত থেকে দেখেই তোমাকে এই উপদেশ টুকু দেয়ার সাহস করলাম।সময় নষ্ট না করে যত টুকু সম্ভব দোয়া নাও, জীবনের পাথেয় হয়ে থাকবে । লিখা অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহী এবং সুন্দর হয়েছে। ভাল থেকো । (সম্পাদিত)


    Smile n live, help let others do!

    জবাব দিন
  4. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    বাসায় আসিস তোদের জন্য গিফঅট আছে।
    তেমন কিছুই না। অন্যদের বলিস না।
    ওদের জন্য সারপ্রাইজ।


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
  5. তানভীর (৯৪-০০)

    ভাইয়া... আমি তোমার আগের লেখাগুলো পড়েছি, তখন মনে মনে বলেছি- "বাহ! এই ছেলেটা তো ভালো লিখে" কিংবা "এই ছেলের লেখার হাত তো অনেক ভালো"। আজ এই লেখাটা পড়ার পর আর কথাটা মনের ভেতর রাখতে পারিনি, একদম ঠিক এখানে এসে বলে যাচ্ছি- অসাধারণ একটা লেখা লিখেছ, পড়তে গিয়ে অনেক মন খারাপ হয়েছে, এমনকি চোখে পানিও এসে গিয়েছিল...

    আংকেল তার সব সন্তানদের নিয়ে অনেক সুখে থাকুক এই দোয়া করি।

    জবাব দিন
  6. নাফিজ (০৩-০৯)

    ভাই অনেকদিন আগে আপনারে বলসিলাম..."রোমান্টিক গল্প ছাড়াও অন্য কিছু লেখা ট্রাই করেন ।" এর চে সুন্দরভাবে মনে হয় সেই ট্রাইটা করা যেত না।

    দুর্দান্ত লেখা (সংক্ষেপেই বললাম)।

    :hatsoff:


    আলোর দিকে তাকাও, ভোগ করো এর রূপ। চক্ষু বোজো এবং আবার দ্যাখো। প্রথমেই তুমি যা দেখেছিলে তা আর নেই,এর পর তুমি যা দেখবে, তা এখনও হয়ে ওঠেনি।

    জবাব দিন
  7. রেজওয়ান (৯৯-০৫)

    আমার পড়া সিসিবির সেরা লেখাগুলোর একটা.....
    অনেক কিছুর সাথে মিলে গেল, আমার বাবাকেও কলেজ এ ডেকে আমার কৃত কর্মকান্ডের জন্য বয়ান দেয়া হয়েছিল, সেদিন বাবাকে দেখে আমার মধ্যে তোলপার হয়ে গিয়েছিল.....আমি জীবনে প্রথম বার বাবাকে কারও কাছে ছোট হতে দেখেছিলাম সেদিন.....আর দুরত্ব......সেটা যে কতদূর হয়ে গেছে তা মেপে দেখার সাহস ও নেই 🙁
    বাবাকে নিয়ে আরেকটি লেখা

    জবাব দিন
  8. সাব্বির (৯৫-০১)

    বাবা কে নিয়ে চমৎকার একটা লেখা।
    বাবাকে ভালবাসি আজ অব্দি বলতে পারিনি, মাঝে মাঝে চিৎকার দিয়ে বলতে ইচ্ছে করে কিন্তু বলা হয় না।
    কিন্তু রাগ এর বেলায় পিতা-পুত্রের কোন কার্পণ্য নেই। ভালবাসাটা প্রকাশ করতে দ্বিধা। ব্যপারটা উল্টো হওয়া উচিত।

    জবাব দিন
  9. রাশেদ (৯৯-০৫)

    অনেক লেখায় ঠিক কী বলব মাথায় আসে না। কত সহজ ভাষায় কঠিন কথা গুলা বললা। শুধু এই লেখাটায় কমেন্ট করতে লগইন করতে হল। তুমি মিয়া দারুণ লিখ। আর বেশি বেশি লিখবা সামনে।


    মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

    জবাব দিন
  10. সামিয়া (৯৯-০৫)

    সবাই তো সবকিছু বলেই দিয়েছে 🙂 । আমি আর কি বলি...প্রথম দিনেই পড়ে ফেলেছিলাম, এতদিনেও কমেন্ট করতে পারিনাই, বুঝে নাও কত ভাল্লাগছে লেখাটা 🙂

    তবে যারা বাবা, কিংবা বাবা হবে সবার জন্য একটাই অনুরোধ, ছেলেমেয়েদের সাথে এত দুরত্ব রেখে কি লাভ? ছেলেমেয়েকে সুযোগ করে দিন, তারা যেন আপনাকে বলতে পারে আপনাকে সে কত্ত কত্ত ভালবাসে...আপনারও লাভ, ছেলেমেয়েদেরও।

    আর পুলাপানদের জন্য বলতে ইচ্ছা করে, ব্যাটা, যদ্দিন আছে, সুদে আসলে সব তুলে নে, চলে গেলে পরে দুঃখ করতে হবে ক্যান আরেকটু ভালবাসতে পারলাম না।

    জবাব দিন
  11. রকিব (০১-০৭)

    সিদ্দিক, লেখা নিয়ে মন্তব্য করবো না; ধৃষ্টতা দেখানো হয়ে যাবে।খালি এটুকুই বলা- ভীষণভাবে নাড়া দিয়ে গেলি ব্যাটা।
    ভালো থাকিস, আর বাবাকেও ভালো রাখিস।


    আমি তবু বলি:
    এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

    জবাব দিন
  12. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    বাবাকে নিয়ে এর থেকে ভাল কোন লেখা পড়েছি বলে মনে পড়ছে না, ভিতরটা নাড়িয়ে দিয়েছে। তোমার লেখা আরো বেশি বেশি পড়তে চাই।


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  13. কাইয়ূম (১৯৯২-১৯৯৮)

    অসাধারণ লেখা শাওন।
    তোমাকে এবং তোমার বাবা কে :salute:

    দারুন লেখার হাত তোমার ভাইয়া।
    তোমার লেখাগুলো পড়তে পড়তে আমাদের মহিবকে খুব মিস্‌ করছি কেন জানি। হয়তো তোমার মতোই দারুণ সাবলীল ঝরঝরে লাগতো ওর লেখা।
    ছেলেটা কেনযে হুট করে ছেড়ে দিলো লেখালেখি! তুমি এরম কইরোনা কিন্তুক। দারুণ দারুণ সব লেখালেখি জারি থাকুক সিসিবিতে, এটাই চাওয়া তোমার কাছে :boss:


    সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!

    জবাব দিন
  14. আমিন (১৯৯৬-২০০২)

    লেখাটা আগে কেনো যেনো পড়া হয়নি। আজকে পড়া হলো।
    বেটার লেট দ্যান নেভার 🙂 🙂

    তোমার বাবার মতো আমার বাবার সাথেও আমার আলোকবর্ষ দূরত্ব ছিলো। বাচ্চা কালে বাসায় বাবা থাকলে তক্কে তক্কে থাকতাম কখন বাবা বাইরে যান। আমার বাবা অবশ্য আড্ডাপ্রিয়া লোক। উনার ঘুরে বেড়ানোর নেশার জন্য ছোটবেলায় বরাবরই শান্তি মিলত। আমি যখন ক্লাশ ওয়ানে পড়ি তখন বাবার কাছে আছাড় খাইছিলাম। সেই স্মৃতিতেই কিনা এখনও ভয়ে ভয়ে চলি। বাচ্চাকালে কদাচিৎ আমার বাপ পড়ালেখার খোঁজ নিতেন। অবশ্য সেই খোঁজ নেয়ার নিয়তি নির্ধারিত ছিলো। ব্যাপক মাইর খাওয়ার মধ্যেই তার শেষ হতো। অবশ্য শুনছি আমি একাই না, আমার বড় কাজিন ভাই বোন এমনকি আমার ফুফুরাও বাবাকে একই রকম ভয় পেত। কারণ ঐ একটাই সবাইকে চোখ রাঙিয়ে পড়াতে বসাতো।
    সময়ে সব বদলে যায়। আমার বাবা হঠাৎ করেই শিশুর মত হয়ে যান আমার মায়ের মারা যাবার পরে। চুপচাপ বসে থাকেন। কখনো কখনো নিজের আপন মনেই কেঁদে উঠেন। শিশুসুলভ কাতরতা তার মাঝে দেখা যায়। এই মানুষটির জন্য আমি কষ্ট পাই অথচ ছোটবেলার সেই বেঁধে দেয়া দূরত্ব দূর হয় না। আমার বাবাকে আমি ভয় পাই এখনো। তার সাথে সহজ ভাবে কথা বলতে পারি না। তার কষ্টকে কমিয়ে দেয়ার জন্য সান্ত্বনা সূচক কিছু বলতে পারি না। এয়ারপোর্টে আমাকে তুলে দেবার সময় তার চোখে জল দেখা যায়। আমি সজ্ঞানেই দুর্বল মুহূর্তকে এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করি। দেশে যখন ফোন করি, আগের সেই দুর্দান্ত মানুষটিকে খুঁজে পাই না, খুঁজে পাই দিশেহারা একজন মানুষকে। বলতে চাই অনেক কিছু কিন্তু বলা হয় না কখনো।

    অনেক কথাই বলে ফেললাম। শাওন তুমি খুব ভালো লিখো।
    ভালো থেকো।
    শুভকামনা।

    জবাব দিন
    • রেজা শাওন (০১-০৭)

      ভাই বাবাদের এই ব্যাপারগুলি খুবই মিলে যায় সব জায়গায়। কিছু কিছু কথা আসলেই কোন দিনও বলা হয়ে ওঠে না। আর পরিবারের বড় ছেলেরা দূরে থাকলে বাবারা বোধহয় একটু দিশেহারাই থাকেন।

      আমি গত কাল বাংলাদেশে এসেছি। অবাক হয়ে দেখলাম, আমার বাবার কোন ফিলিংস নাই। আমি হুট করে চলে আসছি, এক দিনের প্ল্যানে।

      যে আশা নিয়ে এসেছিলাম, সেটা হয় নাই। বাবাকে চমকাতে পারি নাই।

      🙁 🙁 🙁

      জবাব দিন
  15. আহমেদ (১৯৯৪-২০০০)

    কাজ কাম ফালায়া তোমার লেখা গুলা সব পইড়া শেষ করে ফেললাম। কিন্তু আফসোস হচ্ছে না, এ তো সব আমার নিজেরই কথা....
    :hatsoff: :hatsoff: আরেকটা দারুন, অসম্ভব গোছান এবং আবেগময় লেখা উপহার দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।

    জবাব দিন
  16. আমীন (০১-০৭)

    ২০০৯ এ তোদের বাসায় গেলাম, তুই ছিলিনা কিন্তু তোর ভাই ছিল। সেদিন আঙ্কেলের সাথে দেখা করে আসছিলাম।
    গত মাসে আন্টি ঢাকায় আসলেন, একা। তোর ভাইকে কোচিং এ ভর্তি করাতে।
    গতকালও আন্টি আর সিয়ামের সাথে আমার দেখা হয়েছে। আংকেল কেমন আছে জিজ্ঞেস করিনি কারন আমি জানি উনি কেমন আছেন। আর যাই হোক বন্ধু, আজ যে তুই এখানে তার প্রধান কারন তোর বাবা।
    তুই যদি সত্যি তোর বাবার মত হতে পারিস আমি বলব যে জীবনে আসলেই কিছু ভাল কিছু হতে পারছিস।
    আল্লাহ আংকেল্কে ভাল রাখুন ।
    (আমার কথা পেচিয়ে যাচ্ছে, যা লিখতে চাচ্ছিলাম তা পারতেছিনা)

    জবাব দিন
  17. তাওসীফ হামীম (০২-০৬)

    আজ কিছুই পড়তে ইচ্ছে হচ্ছিল না। পড়লাম এই লেখাটা। আমারও এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে, ক্যাডেট কলেজের বাবা- মা কে ডেকে এই অপমান করার ঘটনা আমার ক্ষেত্রেও হয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে এই জন্য আমার ক্যাডেট কলেজের জন্য কোন আবেগ অথবা অনুভূতি নেই। প্রতিষ্ঠান হিসাবেই দেখি আর কিছুই না। চমৎকার কিছু বন্ধু, জুনিয়র সিনিয়র আর শৈশবের কিছু চমৎকার মুহূর্তের জন্য ক্যাডেট কলেজের অনেক অমানবিক আচরনের বিরুদ্ধে চুপ করে থাকি। কেন সেইটা নিজেও বুঝি না।


    চাঁদ ও আকাশের মতো আমরাও মিশে গিয়েছিলাম সবুজ গহীন অরণ্যে।

    জবাব দিন
  18. তাওহীদ

    কমেন্ট করার জন্যে অনেক কষ্টে লগ-ইন করলাম । আংকেলকে নিয়ে দেশে এসে কোথাও ঘুরতে যাইস। শুধু তুই আর আংকেল । তোর দেশের বাইরে তোলা ছবিগুলো এলবাম করে আংকেলকে গিফট করতে পারিস। আংকেল অনেক খুশি হবে। 🙂 🙂 তোর লেখার হাত অনেক ভাল । 🙂 হুমায়ুন আহমেদ এর মত, আবেগগুলো কিভাবে কিভাবে যেন মিলে যায় ।

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।