(কিছু একটা লেখার জন্য অফুরন্ত সময় হাতের কাছে। হাতের কাছেই লেখা প্রস্তুত করার জন্যে সবকিছু আছে- কী বোর্ড, বাংলা টাইপিং সফটওয়্যার- মনিটরে নোডপ্যাড।
কিন্তু ‘কিছু একটা’ নেই।
লেখার জন্য বোধহয় সেই ‘কিছু একটা’ প্রয়োজন। তবুও মাঝেমধ্যে দু:সাহস থেকে লিখে ফেলি। আরো মাঝমধ্যে একটা দুইটা লেখায় তৃপ্তি পাই। ভরপেটে বেনসন সিগারেট না হলেও- অন্তত একটা স্টার সিগারেট খাওয়ার তৃপ্তি।
বিরিয়ানি হজম করার পর স্টার সিগারেট টাইপ -কয়েকদিনের পুরনো- সুনীল- নীরা- লেখাটা তাই সিসিবিত দেয়ার লোভ সামলাতে পারলাম না। )
আইইউটিতে আমার নোংরা বিছানার পাশে একটা নোংরা দেয়াল আছে। সেই নোংরা দেয়ালে পার্মানেন্ট মার্কার দিয়ে কয়েকটা লাইন লেখা। “আমি কীরকম ভাবে বেঁচে আছি, তুই এসে দেখে যা নিখিলেশ!”
অথচ নিখিলেশ নামের আমার কোন বন্ধু নেই। এমনকি খানিকটা চেনা জানা যেসব মুখ আমার- তাদের কারো পরিচয় নিখিলেশ নামে না! তবুও যখন বুঝি- অনন্ত পতন। তখন নোংরা বিছানার পাশে নোংরা দেয়ালে মলিন হয়ে আসা লাইনগুলোর দিকে তাকাই। মনে মনে বলি, আমি কীরকম ভাবে বেঁচে আছি, তুই এসে দেখে যা।
সুনীল গাঙ্গুলীর সাথে পরিচয় বড় রহস্যময় একটা সময়ে। যে সময়ের নাম ‘কৈশোরকাল’। বড় রহস্যময় সেই কাল। রাস্তার পাশে রঙিন পোস্টারের সবকিছু- কিংবা সেই মেয়েটা, সুনীলের কবিতা পড়ে যার নাম দিয়েছিলাম ‘নীরা’। সব রহস্যের একেকটা মহাকাব্য।
এর মাঝে একদিন যখন পড়লাম, “নারীর বুকে দাঁত বসানো কী শারীরিক আক্রমণ?” কিংবা,
আমি স্বপ্নের মধ্যে বাবুদের বাড়ির ছেলে
সেজে গেছি রঙ্গালয়ে, পরাগের মতো ফুঁ দিয়ে উড়িয়েছি দৃশ্যলোক।”
আমি এক নতুন রহস্যের সামনে এসে হাজির হই। আমার মনে হয়- একদিন বুঝি আমিও শ্মশানে গিয়ে মরে যাবার বদলে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। কিংবা আমার ভেতর থেকে অন্য একজন উঠে এসেছিল, যে কীনা রিকশার হুড তুলে তার কিশোরী প্রেমিকার চিবুক ছুঁয়ে বলেছিল, “তুই দেখতে ঠিক নীরার মতন! অথবা তুই তোর করমচা রঙের হাতটা বিকেলের দিকে মেলে ধর্। সূর্য’র আবার যুবক হতে সাধ হবে। ”
এরপর এমন হলো- তার মনে হতো কবিতা বোধহয় একা পাঠ করতে নেই। নইলে তারা দুজন কেন চলে যাবে রিকশায় চড়ে- কোচিং ফাঁকি দিয়ে ‘নুপুর মার্কেট’- যেখানে সস্তায় পুরনো বই পাওয়া যায়?
নইলে কেন, তারাও অংকের খাতার মাঝখানে আনাড়ী হাতে কবিতা লিখে বলবে, ‘এটা তোর জন্য।” ?
কেনইবা তারা চশমা বদল করবে ক্ষণিকের জন্য, শুধু একটু শিহরণের আশায়?
আমার ভেতর থেকে উঠে আসা লোকটা একদিন ঝুম বৃষ্টিতে নীরার বাড়ি গ্যালো। খুলশীর পাহাড় ঘেঁষা এক বাড়ির সামনে- এক বারান্দা- তার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। তার কিশোরী প্রেমিকা- যার নাম দেয়া হয়েছিলো নীরা- তাকে বললো, “তুই রূপালী মানবী! আমি এখানে বৃষ্টির নীচে দাঁড়িয়ে দেখবো- তোর একা বসে থাকা। বৃষ্টিতে না ভেজা।”
এরপর পড়লাম পূর্বপশ্চিম। তার নাম দিলাম অলি। অতীন মজুমদারকে খুন করার সেই ইচ্ছাটা আমার এখনো রয়ে গেলো।
পড়লাম ‘একা এবং কয়েকজন’। আমার সূর্য হতে ইচ্ছে হলো।
পড়লাম ‘সেই সময়’। হীরামণির জন্য কাঁদলো কিশোর।
পড়লাম ‘প্রথম আলো’। রবি কিংবা কাদম্বরী দেবীকে দেখতে মন চাইলো।
আরো পরে পড়া হলো, ‘অর্ধেক জীবন’। মধ্যরাতে কলকাতা শাসন করে চারজন যুবক। দীপক ট্রামরাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে। প্রত্যেকটা ট্রাম যাবার সময় বাইরে থেকে ডাকে, ‘সুনীল, সুনীল’। দীপক জানে, যে কোন একটা ট্রামে সুনীল থাকবেই!
এরপর সময় গ্যালো। গাঢ় অভিমানে মানুষ কিংবা মানুষের মতন আর যা কিছু আছে- বুক চিরে দেখলাম। জানলাম- সেই করমচা রঙের হাতের কিশোরী- আমার ভেতর থেকে উঠে আসা একজন যার নাম দিয়েছিল নীরা- তার বুকে মাংসের গন্ধ- সে তখন যে কোনো নারী!
কিন্তু কৈশোরকাল দূর হলো না!
বললো- দেয়ালের চুন-ভাঙা দাগটিও বড় প্রিয়!
১ম নাকি?
ডাউট দিছেন? তাইলে আমি ১ম ... 😉
ভাবী...তাইলে ২য় আমি বুকিং দিলাম।
মানুষ এত সুন্দর করে কিভাবে প্রকাশ করে ! ! ! :bash: :bash:
সুনীল আমার অল-টাইম ফেবারিট।
সুনীলের কৈশরকে সবথেকে ভালো পাওয়া যায় তার 'একা এবং কয়েকজন' উপন্যাসে যা' কি না তার নিজেরও সবথেকে প্রিয় লেখা।
পূর্বপশ্চিমের অতীন মজুমদারের ডিগ্রী পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতির স্টাইল ফলো করার চেষ্টা করতে গিয়ে এইচএসসি'র আগে পুরা একটা দিন নষ্ট করে ফেলেছিলাম :shy: । (বিমান কাকা'র মেয়ের জন্য এখনো মন কেমন যেন 'কেমন কেমন' করে)
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
অনেক প্রিয় স্মৃতি মনে করিয়ে দিলে ভাই ......... অসাধারন ... :clap: :clap: :clap:
:boss: :boss: :boss: :boss:
(প্রসংশা করার ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না )
"আমি খুব ভাল করে জানি, ব্যক্তিগত জীবনে আমার অহংকার করার মত কিছু নেই। কিন্তু আমার ভাষাটা নিয়ে তো আমি অহংকার করতেই পারি।"
খুব ভালো লাগল লেখাটা।
সুনীল আমার খুব পছন্দের লেখকদের মধ্যে একজন।
এরকম সুন্দর করে লিখে যেও সবসময়।
অসাধারণ প্রকাশ। জাস্ট :boss:
তুমি আমার প্রিয় লেখকদের একজন।
সুনীল এবং মহিব- দু'জনই জটিল!! অসাধারণ, দারুণ, চমৎকার- এরকম শব্দগুলো বহু ব্যবহারে অসহ্য হয়ে গেছে। তাই তোমাদের প্রজন্মের ভাষায় বললাম!!
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
লেখনীস্য জটিলং, প্রিয়ং পাঠেয়ং :hatsoff:
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
সুনীল আবার বার বার এবং মনযোগ দিয়ে পড়া বলে সব কিছুই কমন পড়লো। মনে হলো এইরকম একটা লেখা আমারই লেখার কথা ছিল। কিন্তু আমি জানি এতো সুন্দর করে লেখার ক্ষমতা আমার নাই।
:(( :(( :((
People sleep peaceably in their beds at night only because rough men stand ready to do violence on their behalf.
মুহিব,
খুব বেশী সুন্দর করে লিখে ফেলেছো... ধীরে ধীরে আমার পছন্দের তালিকায় তোমার অবস্থান আরো পাঁকা-পোক্ত হলো...
মহিব, তোকে চিনেছিলাম গিটার হাতে খুব সম্ভব প্রথম icclmm 2004 এ...
আমার যতদূর স্মরণ হয়, তুই স্টেজে উঠেছিলি "ইচ্ছে করে যাই চলে যাই অচিনপুর" নিয়ে...
সেদিন আমি ভিড় ঠেলে হুড়মুড় করে গিয়ে তোকে ছুয়ে বলেছিলাম, " বন্ধু খুব ভালো লেগেছে... "
স্মৃতি যদি বেঈমানী না করে-- সেই মহিবকে আজ বলতে চাই--
বন্ধু খুব ভালো লেগেছে রে! ......
তোর পরপর দুইটা দারুণ লেখা!
:boss: :boss: :boss:
কিরে ফয়সাল ছোয়া-ছুয়ির ব্যাপার আসছে কেন 😀 আমি তো জানতাম তুই রাজশাহীর 😉
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
=)) =)) =))
"আমি খুব ভাল করে জানি, ব্যক্তিগত জীবনে আমার অহংকার করার মত কিছু নেই। কিন্তু আমার ভাষাটা নিয়ে তো আমি অহংকার করতেই পারি।"
হারামী রাশেদ,
X-(X-(X-(
আমি কত্ত মন দিয়া এই কমেন্টটা লেখলাম... আর কুত্তা তুই পুরা গরম ভাতে পানি ঢাইলা দিলি...
আরে আগে মহিব রে পড়তে তো দিবি!
পোলাডা এত্তো সুন্দর কইরা লিখলো-- আর একটা ভালো কমেন্টও হইলো না তোর জ্বালায়...
তোরে আমি দেইক্ষা লমু...
কলেজ লাইফের সেরা প্রাপ্তি ছিল মনে হয় সুনীলের উপন্যাস। তখন কোন কবিতা পড়ি নাই। তোর উৎসাহেই প্রথম সুনীলের কবিতা পড়ছি আর মুগ্ধ হইছি।
লেখায় :thumbup:
এত সুন্দর করে কিভাবে লিখো ভাইয়া? 🙂
অসাধারন লেখা... :hatsoff: :hatsoff:
সুনীলের একা এবং কয়েকজন, পূর্ব-পশ্চিম, সেই সময়, প্রথম আলো কলেজে থাকতে পড়েছিলাম, যখন যেটা পড়তাম তখন সেটার মধ্যে পুরো ডুবে যেতাম...
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
সুনীল আমার সবচেয়ে প্রিয় লেখক । অনেকবার সুনীলের মত বোহেমিয়ান হয়ে যেতে চেয়েছি, চেয়েছি সুনীলের গল্পের মত কাউকে পরোয়া না করে এগিয়ে যেতে । আর প্রিয় লেখককে নিয়ে মুগ্ধতা সৃষ্টিকারী মুহিবের লেখাটা মুগ্ধতা আরো বাড়িয়ে দিল । সচলে আগেই পড়েছিলাম, তখন বলা হয়নি এখন বলে গেলাম ।
অসাধারণ লেখা
মন্তব্যের জন্য সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ। 🙂 🙂
কষ্ট শুরু হয়ে গেল! 🙁 🙁 সুনীল পড়লে খালি দীর্ঘশ্বাস আসে কেন??
People sleep peaceably in their beds at night only because rough men stand ready to do violence on their behalf.
জীবন এ মিসস করে গেলাম অনেক কিসুই
কি বলব ? ভাষা খুঁজে পাচ্ছিনা ।
ক্যাডেট কলেজ এ বন্ধুদের জোর করে সুনীলের বই গুলো পড়িয়েছিলাম। কেউ যদি বলে তার প্রিয় লেখক সুনীল মনে হয় তার রুচি খুব ভালো। কলকাতার আরো লেখক পছন্দ কিন্তু কেন জানি মনে হই সুনীলের কাছে আমার অনেক ঋণ।
কিরে মহিব,"ইচ্ছে করে যাই চলে যাই অচিনপুর" নিয়ে উঠেছিলি নাকি ??? মনে পরে না তো !!!! 😛 😛
ভালো লাগলো। বড় পরিচিত ঘটনা, পরিচিত জয়গা।