পরীক্ষা রঙ্গ

( এখানে পোস্ট দিতে গিয়ে সামুতে প্রকাশিত লিখতে লিখতে বিরক্ত হয়ে যাই। এই লেখাটা সিসিবি ছাড়া কোথাও প্রকাশিত হবার চান্স নেই। মন খারাপ ভাব কাটাতে একটু হালকা ধর্মী পোস্ট। কারো ভালো না লাগলে আমি দায়ী নই। )

ক্লাশ নাইনে পাক্ষিক পরীক্ষার কথা। সমাজবিজ্ঞান পরীক্ষার বিষয় ছিলো ইতিহাস। সবাই পরীক্ষায় লিখতে লাগলাম। এক্সট্রা পেজ নেয়াও হলো প্রায় সবারই। লিখে গেলাম সবাই যে যত পারি। রুদ্ধশ্বাসে মহাপুরুষদের মহিমার গুণগান করতে ব্যস্ত সবাই। কে কত লিখতে পারে ( পড়ুন চাপা মারতে পারে) তার যেন প্রতিদ্বন্দ্বিতা। একজনকে এ প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দেখা গেলো না। যে দশ মিনিট আগে খাতা জমা দিয়ে মুখে চাপা হাসি নিয়ে ক্লাশ থেকে বেরুলো।
তার চাপা হাসি আরো রহস্যে পরিণত হলো যখন নাম্বারে সে একটা বড় রসগোল্লা পেলো এবং সাইফুল ইসলাম স্যারের ডাস্টারের বাড়ি তার থুতনিতে পড়ল। রহস্য খোলাসা হলো যখন স্যার তার খাতাটা তুলে দেখালেন সবাইকে। তিতুমীরের সংগ্রামের বর্ণনায় সে শ্রশ্মুমণ্ডিত তিতুমীরের সুন্দর ছবি এবং পাশে জীর্ণ বাঁশের কেল্লার বিধ্বস্ত অবয়ব। সেই ছবি দেখে হাসি চাপতে না পেরে কিছু প্যাদানি যে আমার উপর পড়েনি সে কাহিনী উহ্যই রেখে গেলাম।


এই কাহিনীর নায়ক আমাদের ক্লাশের আমাদের হাউসের একজন। তার পরিচয় না বলে তার কাজটিকে স্যালুট করি আমি। কোন এক ইংরেজি পরীক্ষার কথা। তো ইংরেজি রচনায় সে অবলীলায় কবিগুরুর দুইটি লাইন তুলে দিয়ে এলো। স্যার হতবাক। ইংরেজি খাতায় বাংলা লেখার এমন নজির বোধ করি কেউ দেখাতে পারেনি। স্যার তাকে ডাকলে সে দ্ব্যর্থ কন্ঠে জবাব দিল স্যার বাংলা রচনায় ইংরজি কোটেশন ব্যবহার করা গেলে উল্টোটাও অবশ্যই করা যাবে। জুনিয়র টিচার ছিলেন বলে প্যাদানি পড়েনি ওর ঘাড়্বে। কিন্তু নাম্বারের খবর ঠিক বলতে পারি না।


শামসুল হক নামে আমাদের এক স্যার ছিলেন যিনি ক্যাডেট মহলে “ফস” নামে পরিচিত। তার সাথে মজা করার ব্যাপারে যিনি ছিলেন অগ্রদূত- তিনি আমাদের সবার প্রিয় রেদওয়ান ভাই। রেদওয়ান ভাইয়ের পিছে ফস লেগে থাকতো তেমনি ভাবে রেদওয়ান ভাই ও ফস কে জব্দ করার নিত্যনতুন কৌশল অবলম্বন করতেন। তো প্রাকটিক্যাল পরীক্ষার ভাইভায় কাচুমাচু মুখে রেদওয়ান ভাই ফসের সামনে। ফস তাকে সবার সামনে জব্দ করতে বললে, “রেদওয়ান নামাজ পড়ো?” এমন অদ্ভুত প্রশ্ন শুনে রেদওয়ান ভাই হতবাক। তো তিনি কোন মতে বললেন “জ্বি স্যার”। ভেবেছিলেন এখানেই শেষ কিন্তু ফসও ছাড়ার পাত্র নন। বললেন, “কয় ওয়াক্ত”? এবার রেদওয়ান ভাই ঠাণ্ডা গলায় বললেন “ক্যান স্যার পাঁচ ওয়াক্ত। ” এহেন মিথ্যাচারে খেপে গেলে ফস। বললেন , ” কই প্রেয়ার রুমে তো দেখি না। মিথ্যা কথা বলো ক্যান?” রেদওয়ান ভাই বললো, ” স্যার আমি পাঁচদিনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি। ” এবার পরিষ্কার বোল্ড হয়ে ফস আসল প্রশ্নে মন দিলো।


এই ঘটনা যতটা না পরীক্ষার তার চেয়ে বেশি পরীক্ষার হলের। আমাদের এস এসসি পরীক্ষার টেস্টের সময়কার কথা। আমাদের বায়োলজি পরীক্ষা। পরীক্ষায় গার্ডে আছেন তখনকার হার্ট থ্রব ফরিদা ম্যাডাম। পরীক্ষা দেই আর ম্যাডামের দিকে তাকাই । প্রথম দিকের চেয়ারে থাকায় ম্যাডামকে কাছে থেকে দেখতে পাচ্ছি বলে নিজের ভাগ্যকে মনে মনে সাধুবাদ দেই। হঠাৎ করেই মনে হলো ম্যাডামের দৃষ্টি ঘুরে গেলো। সাথে সাথে একটা আওয়াজ। আর ম্যাডামের ওষ্ঠে হাসির রেখা দেখে তার দৃষ্টিকে ফলো করি। অডিটোরিয়ামের সামনে তিন পায়ের চেয়ারে বসে থাকা এক হাঁটু মাটিতে স্পর্শ করে চ্যাংদোলা হয়ে থাকা প্রিয় …….. স্যারকে দেখতে পাই।

৩,৭১৮ বার দেখা হয়েছে

৩১ টি মন্তব্য : “পরীক্ষা রঙ্গ”

  1. মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)
    ইংরেজি খাতায় বাংলা লেখার এমন নজির বোধ করি কেউ দেখাতে পারেনি।

    আমি লেখছিলাম, মাস্টার্সের থিসিসে। ৬টা বাংলা গল্প (ন্যারাটিভ ড্যাটা) 😛


    There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

    জবাব দিন
  2. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

    যাক, আমিনের বোধহয় মন একটু ভালোর দিকে... 😀
    দুইদিন যা দেখাইলা... 😛
    মনরে এত পাত্তা দিলে চলব???? ;;;

    যে যত যাই বলুক, ব্লগে স্মৃতিচারণমূলক লেখাগুলোই বেশি জোস লাগে... ;;)


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন
  3. শামস (১৯৯৬-২০০২)

    ভালু ভালু... আমারো স্মৃতিচারণমূলক লেখা বেশী ভাল লাগে। অনেক অনেক দিন পরে আসলাম...এবং ব্লগের অবস্থা দেখে আক্ষরিক অর্থেই মাথাটা ঘুরে গেছে। জটিল!!! :salute: :salute: :salute:

    জবাব দিন
  4. আদনান (১৯৯৭-২০০৩)
    তিতুমীরের সংগ্রামের বর্ণনায় সে শ্রশ্মুমণ্ডিত তিতুমীরের সুন্দর ছবি এবং পাশে জীর্ণ বাঁশের কেল্লার বিধ্বস্ত অবয়ব।

    পরীক্ষার হলে দেখি ভাইডি ভিজুয়ালাইজেশনে ব্যাস্ত... কোপাআআআ!!! সেইরাম ভিজুয়ালাইজ করসে :pira:

    জবাব দিন
  5. আদনান (১৯৯৪-২০০০)

    ব্রাভো আমিন মন ভাল হইসে দেইখা ভাল লাগলো । আরো লেখা দাও মিয়া । আচ্ছা একটা সিরিয়াস কথা স্যার ম্যাডামদের আসল নাম না দিলে হয় না? :just: ভেবে দেইখো ।

    জবাব দিন
    • আমিন (১৯৯৬-২০০২)

      হুম ভাইয়া ভালো। স্যার ম্যাডামদের আসল নাম ব্যবহারের ব্যাপারটা দেয়ার আগে ভাবছি। স্যারদের নাম কিংবা নিক নাম আগে ব্যবহৃত হইছে। আর অস্বস্তিকর কিংবা অপ্রীতিকর ব্যাপারে আমি ঠিকই স্যারের নাম এড়িয়ে গেছি ( চ্যাংদোলা হয়ে পরা স্যারের নাম)। তৃতীয় ঘটনার স্যারের নাম ব্যবহার আমার কাছে আপত্তিকর মনে হচ্ছে না। কিন্তু সবাই বললে এডিট করে দিবনে।

      জবাব দিন
  6. মাহমুদ (১৯৯৮-২০০৪)

    আমিন ভাই,FP নিয়ে কথা যেহেতু উঠলই,একটা কথা না বলে আর পারছিনা। =)) =))
    ক্লাসে একদিন তিনি রওনকের কান মুচড়ে দিলেন।ম্যাডাম ক্লাস থেকে বের হতেই,রওনককে বললামঃ"কানটা বাঁধাই করে রাখিস ।"
    ম্যাডাম সাথে সাথে ক্লাসে আবার ঢুকলেন।বললেনঃ "মাহমুদ,খুব ইচঁড়ে পাকা হয়েছ,না?"

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।