টুশকি [২]
১. আস্তে আস্তে কথা বলে ক্লাস নিতেন আহসানুল কবীর স্যার (বাংলা)। এতই আস্তে কথা বলতেন যে ঘুম ঠেকিয়ে রাখা মুশকিল হত। পিছনের দিকে কথা শোনা তো যেতই না উপরন্তু স্যারকে সেটা বললে ফ্যান বন্ধ করতে বলতেন। মোটামুটি ঘুমের ঘোরেই পার হয়ে যেত ক্লাস। এর ফাঁকে ফোকরে কেমন করে যেন কিছু কথা ঠিকই মনে আছে:
“কবিতার প্রতিটা শব্দ হবে রসগোল্লার মতোন। চাপ দিলে টুপ টুপ করে রস বের হবে”।
“রাত শুধু চোরেরই নয়, রাত চাঁদেরও”।
“জমিলাকে (লালসালু) বুঝতে হলে আবুল হাসনাতের “যৌনবিজ্ঞান” পড়ার দরকার নেই”।
“দেখ, দেখ আমার তুড়ি বাজে না। আমার কোন এক পূবর্পুরুষ খাঁটি ঘি খেয়েছিলেন কিনা, তাই এখনো আমার আঙ্গুল পিছলে যায়”।
২. সাদাসিধা মানুষ ইতিহাসের স্যার কলেজে যোগদান করেছিলেন বাইরে একটা কলেজে বেশ কয়েক বছর শিক্ষকতা করে। প্রথম প্রথম কলেজের ভাব চক্কর বুঝতে না বুঝতেই ক্যাডেটদের টার্গেটে পড়ে দাবায়ে টিজ খেয়ে কমপ্লিট আউলায়ে গেলেন। লাইব্রেরীর রিডিং রুমে বসে আমাদের কাছে জানতে চেয়ে গলায় ছুরি চালানোর ভঙ্গিতে আঙ্গুল চালিয়ে দিলেন আর বললেন, “আমাকে জবাই করে ফেল, জবাই করে ফেল”।
৩. চট্টগ্রামের পদার্থবিজ্ঞান স্যারের রোমান “থিটা” ও “ইটা”র পার্থক্য বোঝানোর প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা, “ইটা (এইটা) “তিতা” না, ইটা “ই-টা-আ”।
৪. কোন একটা স্পোর্টস কম্পিটিশনে প্যান্ডেলের নিচে দর্শকের সারিতে বসা অবস্থায় এ্যাডজুট্যান্টকে হাটু চুলকাতে দেখে ক্লাসমেটের মন্তব্য, “দ্যাখ দ্যাখ এ্যাডজুট্যান্ট মাথা চুলকায়”।
৫. আমাদের পাওয়া তৃতীয় এ্যাডজুট্যান্ট স্যারের ডায়লগ ছিল পুরো মিলিটারী স্টাইলের। প্যারেডে কি একটা উল্টাপাল্টা দেখে এক ক্যাডেটকে বলে উঠলেন, “*লসে এক লাথি মারব, দুই নাম্বার গেটে যাইয়া পড়বা”। উল্রেখ্য, ঘটনাস্থল থেকে দুই নাম্বার গেটের দূরত্ব প্রায় ৬০০ ফুট।
আরেকদিন স্টাফের উপর খেপে যেয়ে বললেন, “তোমার জায়গায় একটা কলাগাছ রাখলেও তো হয়”।
সোজা প্রশ্নের তেড়িয়া জবাব পেয়ে মাকসুদকে বলেছিলেন, “গাছের সাথে গা চুলকাইতে চাও ভালো কথা, কিন্তু মান্দার গাছের সাথে চুলকাইও না”।
প্যারেড গ্রাউন্ডে আরেকদিন কি কারণে যেন খেপে গিয়ে বলেছিলেন, “দুই ঠ্যাং ধইরা টান মাইরা মুরগীর মতোন ফাইড়া ফালাব”।
৬. আমাদের পাওয়া চতুর্থ ও শেষ এ্যাডজুট্যান্ট (রাজশাহীর এক্স ক্যাডেট)। কলেজের শেষের দিকে কোন এক সেন্ট্রাল ক্লাসে কথায় কথায় স্যারের মেয়ের প্রসঙ্গ উঠে আসল। আমরা ইঙ্গিতপূর্ণ ভাষায় স্যারের মেয়ের নাম ও বয়স জানতে চাইলাম। ব্যাপার বুঝতে পেরে মিটিমিটি হাসি মুখে স্যার চক দিয়ে টেবিলের উপর কি যেন আঁকিবুকি করলেন। তারপর বললেন, “তোমরা ৪৩ বিএমএ লং কোর্সে এ্যাপ্লাই করছ না? আফসোস, আমার মেয়ে টাংকি মারবে ৭৮ লং কোর্সের পোলাপানের সাথে”।
৭. রাজিককে ক্লাসে হাসতে দেখে আখতার হোসেন স্যারের থ্রেট, “হাসিস না, দাঁত হারাবি”।
:)) :))
ইমোশনাল হয়ে গেলাম... 😕
শুধু ক্যাডেটদের জন্যই না স্যারদের জন্যও মাঝে মাঝে ক্যাডেট কলেজ খুব কষ্টকর হয়ে যায়।
স্যার অবশ্য পরে খুব ভালো স্যুট করে গেছেন। ইনিশিয়াল ধাক্কাটা মনে হয় সবাই খায়।
Life is Mad.
আমরা একবার রমজানের ছুটি থেকে এসে দেখি মুজিব স্যার গোফ রেখেছেন।প্রথম প্রথম তো গোফ উঠেছে ইনসুইং আউটসুইং ।হাসির ঠেলায় মাথা নিচু করে ক্লাস করতাম। 🙁
লেখা ভাল লাগছে।
সাবাশ সায়েদ ভাই। :clap:
আহ্সানুল কবীর স্যার আমাদের বলতেন, 'রাশায় (রাশিয়ায়) কোনও কুকুর নেই'। একদিন কাকে যেন ফ্রগ্ জাম্প দেওয়াতে দেওয়াতে বলছেন, ' এই ব্যাটা বস বস, লাফা লাফা'। স্যার নাকি অনেকটা নাস্তিক টাইপ লোক ছিলেন।
আখতার হোসেন স্যার এর দুই ছেলেই বরিশালের ক্যাডেট ছিল। বড়জন ইকবাল ছিল আমাদের ব্যাচমেট। ছোটটা রায়হান, আমাদের ৫/৬ বছরের জুনিয়র ব্যাচে ছিল। জনৈক সিনিয়র কলেজে থাকতে যিনি খুবই স্থুলকায় এবং উশৃংখল ছিলেন উনি আর্মিতে চান্স পেলেন। স্যার এই খবর শুনে বললেন, 'বাংলাদেশ আর্মির যে কি হল?!'
আজিম স্যারের 'বেক্টর'(ভেক্টর), কো-অরডিনেট পড়ার সময় এক্স অক্ক(অক্ষ),অই(ওয়াই) অক্ক(অক্ষ)- আজো ভুলি নাই...
স্যার একদিন প্রাস(প্রজেক্টাইল) পড়াতে গিয়ে বিভিন্ন উদাহরণ দিচ্ছিলেন আমাদের একজন বলে উঠল,
'স্যার, আমরা যখন দাঁড়িয়ে 'ইয়ে' করি অইটার গতিপথও তো প্রাস...!!!'
স্যার বলেছিলেন,'উদাহরণ তো ঠিক আছে,তবে পরীক্ষার খাতায় আবার লিখ না...' 😀 😀
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
=))
=)) =)) =))
সায়েদ ভাই এইরকম দুই একটা লেখা পড়ার জন্যে সব কিছু করতে রাজি আছি।
হাচানি??তাইলে আরও দুইটা লেখা দেন...এক্ষন.. x-(
:salute:
=)) =))
সাতেও নাই, পাঁচেও নাই
x-( x-(
সায়েদ ভাই, কলেজের অনেক ঘটনা মনে করিয়ে দিলেন।
সময় করে ব্লগ আকারে ছাইড়া দিমুনে।
খুব ভাল লাগল আপনার লেখা পড়ে।
সাব্বির,
অপেক্ষায় রইলাম তোমার স্মৃতিচারণের।
Life is Mad.
সায়েদ,
অদ্ভুত সুন্দর লাগছে...।
কেন যে তোমাদের মত এত সুন্দর করে হাসির গল্প গুলো লিখতে পারিনা...
ওপেক্ষায় রইলাম আবার কবে লিখবা...
বেশী দেরী করাইওনা...
ভাই মুজিব বড়া একবার টিজ খেয়ে ডাইনিং হলে শুয়ে পড়ে বলছিল, আমি আর বাঁচতে চাই না। :((
বেচারা মুজিব স্যার। যেহেতু মানবিক এ পড়তাম কাজেই তাকে ছাড়া আর গতি ছিল না আমাদের। কংবা আমাদের ছাড়াো তার গতি ছির না।কত যে অভিযোগ ছিল তার ক্যাডেটদের বিরুদ্ধে
আপনারে আমি খুঁজিয়া বেড়াই
আরে ভাইরা মুজিব বড়ার কথা আর বইলেন না। ক্যাডেটদের কাছে টিজ খাইতে খাইতে এমন অবস্থা হইছে যে একবার তারে সালাম দিছিলাম। সে আমারে বলল, 'এই ছেলে তোমার সাহস তো কম নয় আমারে টিজ করো?' 😕 ভাইরা বলেন এরপর আমার আর কি বলার থাকে? 🙁
"আমি খুব ভাল করে জানি, ব্যক্তিগত জীবনে আমার অহংকার করার মত কিছু নেই। কিন্তু আমার ভাষাটা নিয়ে তো আমি অহংকার করতেই পারি।"