আরেকবার, আর একটি বার…।।

নতুন বাসা টা শহরতলীর বাইরে। ফাঁকা ফাঁকা চার দিক। পেছনে জংলা মত একটা জায়গা।আর জংলামুখী আমার বারান্দা।ক্লাস থেকে ফিরেই অধিকাংশ সময় এই বারান্দায় চলে যাই।বিষণ্ণ বিকেল গুলো এখানেই কাঁটে।বাংলাদেশ সময় এখন মনে হয় রাত ১২ টা। এখানে ৮ টা।। সন্ধ্যা হতে এখনও ঢের দেরি। সামারে এখন সূর্য ডুবছে ১০ টায়। এই সময়টায় কেন জানি আশ্চর্য নিরব হয়ে যায় চার দিক। মাঝে মাঝে দম বন্ধ লাগে।। সবই আছে তারপরও কি জানি নেই কি জানি নেই!! বাসায় কথা বলি। ধরা কণ্ঠ মার কাছে লুকোতে পারি না।মা ঠিকই বুঝে নেন।। জিজ্ঞেস করেন,”বাবা তোর কি একা একা খুব বেশি খারাপ লাগে ওখানে?সময় হলে একবার নাহয় ঘুরে যা। “আসব মা”, বলে লুকিয়ে ফেলি, বুকের গভীর থেকে উঠে আসা একটা দীর্ঘশ্বাস। উনিও আর বেশি কিছু বলেন না।চাইলেই যে,যখন তখন তার বুকে ফিরে যাব,এটা এখন আর সম্ভব না। মা বুঝে নেন।।

লেখা টা যখন লিখছি, তখন দেশে তারিখ বদলে গিয়ে ১২ই মে। ২০০১ সাল এর এই দিন টায় সারা পৃথিবীর ভয়,আর অজানা অনেক প্রশ্ন নিয়ে পাবনা ক্যাডেট কলেজে আমাদের প্রথম দিন।আজকেও ১২ মে। মাঝখানে দীর্ঘ দশ বছর। অবাক লাগে। আরে সেই দিনই তো ঢুকলাম কলেজে। প্রথম দিন ডিনারে…টেবিল লিডার পানি চাইলেন।আমি উঠে গিয়ে পানি ভরেতে চাইলাম।আর চার দিকে হাসির রোল। আমার চেয়ে আমার গাইড বেচারা লজ্জা পেলেন বেশি।।এই তো সেই দিন।।প্রত্যেকটা দিন এতো স্পষ্ট।।প্রিয় মুখ গুলোর হাসি এখনও যেন চোখের সামনে দেখি।

অনেক কিছুই নাকি সম্ভব।অনেক কিছু। আরেকটি বার এই দিনটা কি ফিরে পাব? এবার ফিরে পেলে এই ভুল আর ভুলেও করব না।ইমতিয়াজ ভাই(আমার গাইড) কথা দিচ্ছি,আপনাকে আর লজ্জায় ফেলব না।একটা দিনের জন্য যদি ফিরে যেতে পারতাম,সেই সব দিনে। চার পাশ ঘিরে থাকা সেই প্রিয় মুখ গুলো। বন্ধুরা তোদের যে কতটা মিস্ করি বোঝাতে পারব না। আরেকটা বার তোদের সবার সাথে হাসতে চাই। তোদের মনে পরে, ক্লাস টুইয়েল্ভের দিন গুলো? কিভাবে প্রেপ ক্লাস গুলো পার করে দিতাম দুষ্টুমি তে।।কথা দিচ্ছি এবার যত খুশি টিজ কর, মুখ বাঁকা করে থাকব না।অনেক দিন প্রান খুলে হাসি না রে।। তোদের পেলে আরেকবার হাসতাম।।প্রেপ শেষ হলে গলা ছেঁড়ে গান গাইতাম,সবুজ মাঠটায় বসে থাকতাম। আড্ডা দিতাম।আর রাত গভীর হলে সিনিয়র ব্লকের টয়লেটে সিগারেট। একটা সিগারেট সবাই মিলে খেতাম নাহয়।।জানিস প্রতি টা বার যখন সিগারেট ধরাই,তোদের কথা মনে পরে। কত কাহিনি যে তোরা করতি,এই সিগারেট নিয়ে।।কত নাটক।।

তোদের মনে পরে ?ম্যাট্রিক পরিক্ষার মাঝে আমার একবার খুব জ্বর হল।।তোরা প্রতি দিন কেউ না কেউ আসতি। পাশে বসে থাকতি অনেকটা সময় নিয়ে। চোখ বড় বড় করে,আজ হাউজে এই হইছে সেই হইছে কত যে গল্প ছিল তোদের!!জ্বর এখনও হয়।পার্থক্য শুধু তোদের কাউকে আর পাশে পাই না। মাঝে মাঝে চোখ বন্ধ করে তোদের ভাবি। জ্বর হলে তোরা আরেকবার গল্প শোনাতে আসবি,খুব ভাবতে ইচ্ছে করে যে…।।

অনেক কিছুই আর সম্ভব না।যেমন টা আমাদের ৫৪ জন এর আরেক বার এক সাথে হওয়া। কিন্তু তারপরও তোরা সব সময় পাশেই আছিস। তোদের হাসি গুলো কানে বাজে,এখনও প্রতি টা মুহূর্তে।।পুনর্জন্মে বিশ্বাসী নই। তারপর ও যদি কখনো আরেক বার জন্ম নিই, তোদের সাথেই থাকব।বন্ধুরা যেখানেই থাকিস ভাল থাকিস। তোদের অনেক অনেক ভালবাসি।।

(গরু রচনা মুখস্থ করে পরীক্ষা দেওয়া বিদ্যায় আসলে সব কিছু লিখে বোঝাতে পারলাম না,অনেক কথা জমে আছে।।এই লেখা টা পাবনা ক্যাডেট কলেজ ২৪তম ব্যাচ সহ,ক্যাডেট কলেজ ০১-০৭ ইনটেকের সবার জন্য।)

২,৭৫৪ বার দেখা হয়েছে

২২ টি মন্তব্য : “আরেকবার, আর একটি বার…।।”

  1. নাফিজ (০৩-০৯)

    ভাই দিলেন তো মনটা খারাপ কইরা ।

    বি.দ্রঃ আপনার কথা উঠলেই এখন কোন কাহিনী সবার আগে পোলাপান মনে করে জানেন ??ওই যে রাতের বেলা টাঙ্কির উপরে উঠে ড্যান্স দিয়া ধরা খাইসিলেন :khekz: :khekz: :gulli:


    আলোর দিকে তাকাও, ভোগ করো এর রূপ। চক্ষু বোজো এবং আবার দ্যাখো। প্রথমেই তুমি যা দেখেছিলে তা আর নেই,এর পর তুমি যা দেখবে, তা এখনও হয়ে ওঠেনি।

    জবাব দিন
  2. Saiaf bin rayhan

    অনেক ভালো লাগলো দোস্ত !!! গ্রেট !!আজ সারাটা দিন সিগারেট খেয়ে কাটালাম..সিগারেট এর ধোয়া
    আর চোখের জল এক হয়ে যাচ্ছে......রুমমেট ভাই এক বার জিজ্ঞাস করলেন কি হইসে তোমার ? আমি বললাম না ভাই ধোয়া চোখে গেসে তো তাই চোখে পানি চলে আসতেসে.....আসল বেপার তা তো আমি জানি....


    Сайф

    জবাব দিন
  3. ভাই রে মন আমারও খারাপ। ভাইকিংস এর দেশে, আশে পাশে হারিকেন দিয়ে খুঁজেও এক্স ক্যাডেট পাইলাম না...।।

    আর ধরাতো আজীবনই খাইলাম।।ট্যাংকি কেসটা যা একটু আলোচিত আর কি... B-) 😀 😀

    জবাব দিন
  4. সামিয়া (৯৯-০৫)

    🙁
    আমিও চাই, একবার না, কোটি কোটি বার ফিরে যেতে চাই।
    তবে যেহেতু সেটা সম্ভব না, তাই আমার এখনকার লাইফও ক্যাডেট কলেজ টাইপ বানায় নেয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করি 😀

    জবাব দিন
  5. কিবরিয়া (২০০৩-২০০৯)

    ক্যাডেট কলেজ!!! ক্যাডেট কলেজ!!! 🙁 🙁


    যেমন রক্তের মধ্যে জন্ম নেয় সোনালি অসুখ-তারপর ফুটে ওঠে ত্বকে মাংসে বীভৎস ক্ষরতা।
    জাতির শরীরে আজ তেম্নি দ্যাখো দুরারোগ্য ব্যাধি - ধর্মান্ধ পিশাচ আর পরকাল ব্যবসায়ি রূপে
    - রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ

    জবাব দিন
  6. অয়ন মোহাইমেন (২০০৩-২০০৯)
    জানিস প্রতি টা বার যখন সিগারতে ধরাই,তোদের কথা মনে পরে। কত কাহিনি যে তোরা করতি এই সিগারতে নিয়ে।।কত নাটক।।
    চোখ বড় বড় করে,আজ হাউজে এই হইছে সেই হইছে কত যে গল্প ছিল তোদের!!জ্বর এখনও হয়।পার্থক্য শুধু তোদের কাউকে আর পাশে পাই না

    একই অবস্থা সবখানে। খুব ভালো লাগলো ভাই । :thumbup: :thumbup:

    জবাব দিন
  7. কেন যেন খুব খারাপ লাগছিল BUET যাবার পর। ইদানিং DMC তেও যাই না। এখনও মনে হয় হয়ত তুই পাশের (শাহ্ নেওয়াজ এর রুম) রুমেই আছিস,আমরা তো DMC তে না পড়েও ২ বছর ওখানেই ছিলাম। যাই হোক,রাত এ রুমে আসলাম। ফেসবুকে তোকে দেখেই কেন যেন মনে হল বারান্দায় যাই একটু। তারপর দেখলাম ,আমার চোখে পানি। এই বয়সেও চোখে পানি আসে কেন,মনটাকে বুঝাতেও পারলাম না

    জবাব দিন
  8. শাওন,

    লেখাটা মন ছুয়ে গেলো। আমরা সবাই তো পিছনে ফিরে যেতে চাই পুরনো বন্ধু, মায়ের আঁচলের গন্ধ আর বাবার বকুনি ফিরে পেতে। সেই সব অমূল্য ক্ষণগুলো আমাদের একান্ত ঐশ্বর্য্য (রাই না কিন্তু)। তারপরেও, বর্তমানেও কিন্তু কম সুন্দর মুহুর্ত নেই। আশা করি, তুমি বর্তমানের মুহুর্তগুলোকেও উপভোগ করছো। যখন বন্ধুদের সাথে আবার দেখা হবে, তখন ওদেরকে মজা করে বলার জন্য ইউরোপেও কিছু অসাধারণ ঘটুক ( টাংকির উপরে নাচ কিংবা নাচতে গিয়ে টাংকি সহ ) 😀 😀 😀 😀 😀 :grr: :grr: :grr: :grr:

    জবাব দিন
  9. রেজা শাওন (০১-০৭)

    পোলা পান COME ON !!...আরে এতো মন খারাপ করে থাকলে কি হয়? দূরে দূরে আছি, হারিয়ে তো কেউ যাইনি। এইতো আজকেও নাকি বুয়েটের প্রোগ্রামে শুরুতে সবাই ভেবেছিল ৫০ জনের বেশি হবে না। শেষ এর দিকে শুনলাম ২০০ নাকি ছাড়িয়েছে!!

    "ক্যাডেট কলেজ" নামের যে পরিবারে আমরা আছি।।সেখানে ভালোবাসা খুবই তীব্র রে।এখানে কেউ হারিয়ে যায় না। আমরা হারিয়ে যেতে দেই না।।

    হাল্কা একটা অ্যাডভাইসঃ আর যাদের এখনও খুব বেশি মন খারাপ তারা সামিয়া আপুর কছে রিপোর্ট কর। শুনলাম; উনাকে নাকি বুয়েট ক্যাম্পাসে,মাঝে মাঝে খাকী পড়ে ঘুরা ঘুরি করতে দেখা যায়।।( তথ্য সুত্রঃউনার কমেন্ট)

    সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। আর সামিয়া আপু রাগ করবেন না। মন টা আজকে একটু বেশিই খারাপ।

    জবাব দিন
    • সামিয়া (৯৯-০৫)

      হারামজাদা খাকি পিন্দা কেয়ামত পর্যন্ত ফ্রন্ট্রোল...সিনিয়ররে নিয়া মশকারি...গো গেট ডাউন ইউ ব্লাডি ক্যাডেট x-( x-(

      অফটপিকঃ বুয়েটে ক্যাডেটদের প্রোগ্রাম রক্স (বুয়েট রক্স কইনাই কিন্তু) B-) , বুয়েটে আমাদের প্রগ্রামেও অসংখ্য অসংখ্য অসংখ্য মানুষ হইসিলো..., চানাচুর নিয়া কি যে কাড়াকাড়ি পড়সিলো...শুনসি তপু ভাইদের ব্যাচেরও নাকি একই অবস্থা...

      জবাব দিন
  10. রকিব (০১-০৭)

    তোরে উলটা কইরা বাইন্ধা পিটানো দরকার!!!!!
    এমনেই কষ্টে আছি পুলাপাইনের ফেসবুকে আপলোড করা অ্যালবাম দেখতে দেখতে; তার উপর তুই ঢেলে দিলি নস্টালজিয়ার মলম!!!
    দুর্দান্ত লেখা মামা!!
    শুভ ব্লগিং দোস্ত।
    হাত পা খুলে লিখতে থাক ব্যাটা!!! 😀 😀


    আমি তবু বলি:
    এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

    জবাব দিন
  11. রেজা শাওন (০১-০৭)

    ধন্যবাদ রকিব। তোর তো শুধু নস্টালজিয়ার মলম লাগছে, আমি নস্টালজিয়ার আগুনে মোটামুটি ভাবে পুড়ে গেছি গত কাল!!

    আর সামিয়া আপু "কেয়ামত পর্যন্ত ফ্রন্ট রোল" ব্যাপার টা অনেক দিন পর শুনলাম। যাই হোক আমাদেরও একটা মান সম্মানের ব্যাপার আছে,ব্লগে কত জুনিয়র পোলা পান হামগুরি দেয়।।এদের সামনে এহেন কড়া পানিশমেন্ট...!! 😛 😛

    জবাব দিন
  12. সিদ্দিক কেমন আছিস ? আমি এম্নিতেই চুপচাপ লেখা পরি আর চইলা যাই্‌,তোর লেখার টাইটেল দেইখাই বুঝতে পারসি কি লিখছস, আসলে কি বলব, মন খারাপ করে দিলি রে, প্রতিবার বিশ পচিশ জন হইলেই বলি চরম গেট টুগেদর কিন্তু কখনই যে ৫৪ জনকে একসাথে পাব না, এ বাস্তবতা মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে!!!!!!! 🙁 🙁 🙁

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।