ডায়লগ (ভার্সন মির্জাপুর) – ২

জিহাদের পোস্ট দেখে অণুপ্রাণিত পোস্ট। কাউকে হেয় করা বা লোক হাসানো নয় জাস্ট আমাদের কলেজের অমর ডায়লগগুলো স্ম্বতির পাতা থেকে ব্লগের খাতায় নিয়ে আসার চেষ্টা।

ডায়লগ সমাচার লিখতে বসে ক্যাডেট কলেজের কত শত ডায়লগ মনে পড়ে যাচ্ছে। সেই ডায়লগ গুলোর মর্ম শুধু লেখায় তুলে ধরাটা বেশ কঠিন কাজ। এই লেখা ফ্লপ হবার তীব্র সম্ভাবনা জেনেও সিসিবির গুমোট ভাব দূরকরণের স্বার্থে লিখলাম। উল্লেখ্য ঘটনায় একটু উত্তেজনা আনয়নে কিঞ্চিত কল্পনার সংস্রব ঘটানো হয়েছে।

১.
এই ঘটনা ঘটেছিলো নজরুল হাউসে। যদিও আমি ঐ হাউসের না কিন্তু তারপরেও একবার আমাদের কলেজে স্ট্যান্ড পার্টি সম্বর্ধনা হওয়ার সুবাদে সেকানে থাকতে হলো। তখন আমরা ক্লাশ টুয়েলভে । পুরা কলেজ গাছাড়া দুই হাউসের ক্লাশ টুয়েলভ এক হাউসে। ঘটনা যতটা খারাপ হওয়ার কথা তার চেয়ে একটু বেশিই হয়ে গেল। আমরা লাগাম ছাড়া সোনালি পাতার ব্য ভার করলাম। ইমিডিয়েট সিনিয়াররা হাউসে এসে সাপ্লাইয়ের খুব সুবিধা করে দিল। তার সাথে রাতভর চলছে কার্ড। এমন সময় নজরুলের হাউস মাস্টার সাহেবের গলা পাওয়া গেল। আসতে আসতে বললেন, মিকসচারের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে মনে হয়। যা হোক মিকসচার(স্যারের ভাষায়) কিংবা তার ব্যবহারকারীদের ধরতে না পারলেও স্যার কার্ড সেট নিয়ে চলে গেলেন। সেই কার্ড উদ্ধারে আমরা যখন গেলাম, তিনি কঠোর দৃষ্টিতে তাকালেন। পর মূহুর্তেই নস্টালজিক হয়ে গেলেন। তিনি বললেন, তোমরা এখন কার্ড খেল। আমাদের সময়তো ……….. বলে কিছুক্ষণ বিরতি। আমরা চাপা উত্তজনা নিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম তিনি কী বলেন শোনার জন্য। আগের কথা টেনে আবার তিনি বললেন, আমাদের সময়তো আমরা ……… লুডু খেলতাম।

২.
এই ঘটনা হয়েছিলো বায়োলজির এক ডেমোনস্ট্রেটর স্যারকে নিয়ে। সেই স্যারের বদ অভ্যাস ছিল কথায় কথায় কথার শেষে একটা শব্দ জুড়ে দেন সেটা হলো বুঝলা। এই গল্প আমার আরেক জায়গা থেকে শোনা কথা। একদিন স্যার ক্লাশ নিচ্ছেন। প্রতি কথার শেষে যথারীতি বুঝলা আসতেসে। ছেলেরা বহু কষ্টে হাসি চেপে রাখছে। এক ছেলে একটু অন্যমনস্ক হয়ে গেছিল। তো তার সামনে দাঁড়িয়ে স্যার বললেন বুঝলা। বেখেয়ালের বশে সে বলে ফেলল, স্যার বুঝ..লাম না। ব্যস। তারপর তার ভাগ্যে কী ঘটল তা খুব সহজে অনুমেয়।

৩.
এইবারের ডায়গল ফ্লপ জোকের রাজা আমাদের কেমিস্ট্রির কিংবদন্তী এবং আমাদের কলেজে থাকার সময় এক হাউসের হাউস মাস্টার। তিনি প্রথম দিকে তার ভান করা জোক গুলা দিয়ে কিছু সস্ত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন। তো তার একটা বিখ্যাত ডায়লগ এখানে তুলে দিলাম। যেটা আমাদের ব্যাচের সবাইকে আজও তাড়িয়ে বেড়ায়। সেটা তার প্রথমদিককার কোন ক্লাশ। তখনও তার ফ্লপ রূপটা আমাদের কাছে পরিষ্কার না। ক্লাশ নাইনে ঠক কী নিয়ে পড়াচ্ছিলেন তা মনে নেই। তিনি ক্লাশে পড়ানোর ফাঁকে একটু জোকস করার অভিপ্রায়ে নামলেন। ফট করে দুজনকে দাঁড় করিয়ে বললেন, এই চান্দু গেল ঐ চান্দুর বাড়ি। কী খাইতে দিল — চুনের পানি। আমরা সয়ারের কাছে মেগা কোন কৌতুক শোনার আশায় উৎসুক করলাম। দেখি স্যার আর কিছু কয় না। এক জন উৎসাহী বলে বসল, স্যার তারপর কী হলো?স্যার ভস্ম করা দৃষ্টি হেনে বললেন, যা হবার তাই হলো। এ থেকে বুঝা যায়, তোরা শিক্ষকদের সম্মান করিস না। এমন অসংলগ্ন কথায় পুরো ক্লাশ হতভম্ব।

৪.
এই ঘটনার সাথে জড়িয়ে আছে আমাদের হারিয়ে যাওয়া বন্ধু আলম। আমার প্রথম পোস্টে এই ঘটনাটা খুব সম্ভবত বলেছিলাম। আমদের এক স্যার সব কথা বলেন প্রথম পুরুষে। তা আমি সেটা জানি না। সেই স্যারের ক্লাশ । আলম দেরিতে ঢুকেই বলতে লাগল আগের দিন ডিনারের গল্প। স্যার ওকে জিজ্ঞেস করেছেন কী আলম মাছ খাই না? আমি শুনে মাথামুন্ডু কিছু বুঝে ওঠার আগেই স্যার আমাকে আলমকে ডেকে বললেন- কি হল,দেরি করে আসি ক্লাশে আবার কথা বলি। এবার আমি পুরো ব্যাপার বুঝে ফেললাম। হাসি আটকাতে সেদিন বড় কষ্ট হয়েছিল।

৫.
এই ডায়লগ ম্যাথের টাক মাথার বিখ্যাত এক স্যার। তিনি আমাদের সাথে নানা বিষয়ে কথা বলতেন। সেই স্যারের ক্লাশ ছিলো খুবই আকর্ষণীয় তার অনুপম ব্যাটিং এর জন্য। তো সেই স্যার প্রথম যখন আমাদের ক্লাশে এলেন আমরা কথা বলছিলাম। তিনি খেপে গেলেন। এবং বললেন, এফসিসি কলেজ প্রিফেক্টের তো খুব নাম তোমরা শোন তাই না? জান একবার আমি এফসিসির এক কলেজ প্রিফেক্টরে চড় মারছিলাম। ঐ ছেলে আর আমার সামনে কখনো দাঁড়াইতে পারে নাই। রাতারাতি স্যার আমাদের কাছে আতংক হয়ে গেলেন। যিনি কলেজের সিপিকে অবলীলায় চড় মারতে পারেন তিনি আতংকে পরিণত হবেন এইটাই স্বাভাবিক। তবে সেই আতংক কাটিয়ে দিল আমাদের এক ফ্রেন্ড সিপি রহস্যের উদঘাটন করে। স্যারের দাবি মিথ্যা না। তিনি এক সেভেনের পোলারে চড় মারছিলেন সেই পোলা পরে সিপি হইছে।

৪,১৩৯ বার দেখা হয়েছে

৪১ টি মন্তব্য : “ডায়লগ (ভার্সন মির্জাপুর) – ২”

  1. জিহাদ (৯৯-০৫)

    সাবাশ আমিন ভাই। আপনাকে দিয়াই হবে ;;;

    আমারে দিয়া হয়নাই কারণ লিখতে বসলে একটা কাহিনীও ঠিকঠাক মনে আসেনা। খালি অনেকগুলা পোলাপান একলগে হইলে তখন হুড়মুড় হুড়মুড় কইরা আসে 🙁


    সাতেও নাই, পাঁচেও নাই

    জবাব দিন
  2. ফয়েজ (৮৭-৯৩)

    আমাদের অংকের এক স্যার প্রায়ই বলতেন ধরে করতে হবে, ধরি এত এর মান "ক"। পুরা ব্যাচে কমন ডায়লগ হয়ে গেল "ধরে করতে হবে"।

    ইতিহাসের ম্যাডাম পরীক্ষার ডেট নিয়ে ডিসকাস করছেন, ক্লাস টেষ্ট, কি করা যায়। পিছন থেকে এক ছেলে অবলীলায় বলে ফেলল "ম্যাডাম ধরে করলে কেমন হয়"?

    অনেক কষ্টে হাসি চাপিয়েছিলাম। ম্যাডাম খুব সাদাসিদা ছিলেন, বুঝতে পারেন নি গূঢ় অর্থ টা। 😉


    পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

    জবাব দিন
  3. সাল্লু (৯২/ম)

    "তিনি এক সেভেনের পোলারে চড় মারছিলেন সেই পোলা পরে সিপি হইছে। "
    ---হুবহু একই গল্প আমাদেরও এক স্যার কইছিল। তিনি অংকের টিচার ছিলেন (প্রায়ই ক্লাসে LHS=RHS প্রমাণ করতে গিয়ে LHS থেকে শুরু করতেন; অতঃপর বেশ খানিকক্ষণ অংক কষাকষির পর LHS-এই ফেরত যাইতেন, শেষমেষ বলতেন বাকীটুকু গাইড বই থেকে দেখে নিবা)। তার একটা কালজয়ী গালি ছিল (আমাদের ইমিডিয়েট জুনিয়ারদের দিছিলেন এবং একবারই) - "সব বাঈজীপাড়ার পোলাপান"। মনে হয় আমি আর তুমি এক টিচারের কথাই বলতেছি।
    ও তার একটা Remarkable বৈশিষ্ট্য ছিল। উনি প্রায়ই অনেকের বদনাম করতেন, কিন্তু তার নাম বলতেন না। কিন্তু Reference এমনভাবে দিতেন, কারোই বুঝতে বাকী থাকতোনা উনি কার কথা বলতেছেন। যেমন - "আমি তার নাম বলবোনা, সে তোমাদের মধ্যেই আছে, অমুক হাউসের JP", অথবা- "আমি তার নাম বলবোনা, সে তোমাদের মধ্যেই আছে, অমুক হাউসের অমুক রুমের ডান দিকের ৪ নং বেড এ থাকে" ইত্যাদি। তাই আমিও স্যারের মতো করেই বল্লাম - আমি যেই স্যারের কথা বলতেছি তিনি scratching এ অত্যন্ত পারদর্শী(সমসাময়িক মির্জাপুরিয়ানদের আর কোনো ক্লু দরকার নাই ), নামের শুরু "ম" দিয়া, শেষ "ন" দিয়া, মাঝখানে হইলো .... আর কমুনা কইলে বুইঝালাবি।

    জবাব দিন
  4. মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

    একবার আমাদের কলেজে স্ট্যান্ড পার্টি সম্বর্ধনা হওয়ার সুবাদে সেকানে থাকতে হলো

    আমরা যারা ফেলটুশ পার্টি তাদের কাঁচা ঘায়ে নুনের ছিটা দিয়া নিজে পার্ট নেওয়ার জন্য আমিন ভাইয়ের ভ্যাঞ্চাই x-(

    অফ টপিক-অনেক দিন পর ব্লগটা আবার পিড়া সিরাম মিজা পিইলাম :boss:

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।