আমার প্রেমিকারা-৪

কেউ-ই আজকাল আর আমাকে দেখেশুনে রাখছেনা,তাই খুব দুষ্টু হয়ে যাচ্ছি।আচার-আচরণে,স্বভাবে কিংবা প্রেমিকার অভাবে চরিত্রের ধরন হয়ে যাচ্ছে সরকারি দলের ছাত্র-সংগঠনের মত।মানে মুরগির বাচ্চার চোখ না ফুটতেই ডিম পাড়ার ভাব। আমার এই অস্থিরতা দেখে কাছের এক বড় ভাই যিনি আবার এক বহুজাতিক কোম্পানির উর্ধ্বতন কর্মকর্তা,ডেকে বললেন-

‘শোন গাধা, ভাত ছিটানো যার স্বভাব, হয়না তার কাকের অভাব’।

আমি বললাম-গুরু, কিছুই তো বুঝলামনা। আবার আমায় সহজ করে বুঝিয়ে দিয়ে বললেন-‘টাকা খরচ কর, তাতে দেখবি আর যাই হোক প্রেমিকার অভাব হবেনা’।আমি বললাম,সে কি সম্ভব?উনি খুব খেপে গিয়ে আমারে বললেন-‘ব্যাটা, টাকায় আজকাল মা পাওয়া যাচ্ছে, আর তুই প্রেমিকা পাসনা ?’জিজ্ঞেস করলাম,সেটা আবার কিরকম ?তারপর উনি যা বর্ননা দিলেন- ‘আরে সেদিন ছিল বিশ্ব মা দিবস,আমাদের আবার এইসব দিবস-টিবস তো অফিসিয়াল ভাবেই পালন করতে হয়।তাই অফিসের বিদেশী বস ডেকে বললেন-কুদস,(ভাইয়ার পিতৃপ্রদত্ত নাম হল আবদুল কুদ্দুস,কিন্তু উনি এই নামেই আজকাল পরিচিত)তোমাকে তো সাভারে মা দিবস অনুষ্ঠানের দায়িত্ব দেয়া হল। আর তোমার মূল কাজ হল অনুষ্ঠানে কিছু মা নিয়ে আসতে হবে’।আমি তারপর গল্পের মাঝখানে বেরসিকের মত প্রশ্ন করলাম,তারপর কি করলেন গুরু ?বললেন-‘যেই ভাবা সেই কাজ, ট্রাকে করে শ’দুয়েক মা ভাড়া করে নিয়ে আসলাম।আর অনুষ্ঠান ব্যাপক খাইছে লোকজন আর বস ও খুশী,এই ধাক্কায় পদোন্নতি ও পেয়ে যেতে পারি’।আমি বললাম-‘বস,করছেন কি?আপনে তো একটা জিনিষ। দয়া করে আরেকটা কাজ করেন-আপনারা এবার একটা বিশ্ব প্রেমিকা দিবস চালু করেন,আর এই কাজের টেন্ডারটা খালি আমারে দেন,দেখবেন- ট্রাকে ট্রাকে ভরে প্রেমিকা নিয়ে আসব’।

সত্যি বলতে কি,আমার মাথায় এই প্রেমিকা দিবসের আইডিয়াটা নিজে থেকে কিন্তু আসেনাই।আমার এক পুরানো প্রেমিকা,যাকে দেখে আমি এই প্রচলিত কথায় বিশ্বাস করি-মেয়েদের ভাইটাল স্ট্যাটিক্টিস নাকি চার অঙ্কে, ৬০-৩৬-২৪-৩৬ এইভাবে। শেষের তিনটা তো সবাই জানে, কিন্তু প্রথমটা নাকি মেয়েদের মাথার সাইজ।বন্ধু কামরুলের কাছে এই কথাটা যখন আমি প্রথম শুনি,তখন শুধুই ঠাট্টা মনে করতাম। কিন্তু এখন মনে-প্রানে বিশ্বাস করি।যার কথা বলছিলাম,আমার সেই প্রিয়তমা খুব রূপচর্চা করত আর Ramp মডেল হিসেবে তখন বেশ নাম কামিয়েছে। আমি বলতাম,এত রূপচর্চা করে কি হবে?আমাকে বলতো, ও নাকি মিস ওয়ার্ল্ড হবে।আমি বলতাম,কি যে বলোনা?এও কি সম্ভব ?ও তখন বলত-দেখো,আমি বুঝে গেছি এই বিউটি কম্পিটিশানগুলো সব বহুজাতিক কোম্পানীগুলোর বিশেষ করে প্রসাধনীর একধরনের ব্যবসা।শুনে আমি বলি,এর সাথে তোমার মিস ওয়ার্ল্ডের কি সম্পর্ক?ও বলে- দেখ,আজকাল ভারত আর চীন থেকেও নিয়মিত বিশ্বসুন্দরী বের হচ্ছে।এর কারণ এই দুই দেশেরই বিশাল বাজার রয়েছে।ঘরে ঘরে মেয়েরা তাই এখন রূপচর্চা শুরু করেছে।আর বুঝো,দুই দেশে মেয়ে আছে একশ কোটির উপর।এরা সবাই যদি ঠোঁটে লিপস্টিক দেয়া শুরু করে,কার লাভ বেশি?আমি ওর কথা শুনে তাজ্জব বনে গেলাম,আর বলি-বটে,এত বুদ্ধি তোমার ঘটে।কিন্তু এরজন্য তুমি বিশ্বসুন্দরী হবে কিভাবে?তখন ও বলে-‘আমাদের জনসংখ্যা দেখছ কত?এরপরের বিশাল বাজার তো আমরাই।আর ওরা তাই এখন বাংলাদেশের বিশ্বসুন্দরী খুঁজছে।আর এখানেই তো আমার সুযোগ’।এরপর আমি ওকে আপসোস করে বলেছি-

‘শেষমেষ তো পিঁপড়াই খাবে দেহখানি, যখন তুমি থাকবে অন্ধকারকূপে,
ডাকে আমার ভালবাসা দিয়ে হাতছানি,মরতে চাই ডুবে তোমার রূপে’।

৬,০৩৯ বার দেখা হয়েছে

৫৭ টি মন্তব্য : “আমার প্রেমিকারা-৪”

  1. মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

    আমার জানামতে এই কনসেপ্টতা সত্যি-বিশেষ কারণে মার্কেটিঙ্গের কয়েকটা ক্লাসে সিট-ইন করছিলাম-ঘটনাক্রমে তখন ঠিক এই জিনিসটাই ক্লাসে পড়াইতেছিল।পর পর চারবার মিস ওয়ার্ল্ড/ইউনিভার্স(সুস্মিতা,লারা দত্ত,যুক্তামুখী,ঐশ্বরিয়া,প্রিয়াঙ্কা চোপড়া) ইন্ডিয়া থেকে হবার পর ইন্ডিয়ার মার্কেট যখন কস্মেটিক্স নির্মাতাদের দখলে চলে আসল-এর পর শুরু হল আফ্রিকার দিকে নজর।মিস নাইজেরিয়া যখন মুকুট জিতল তখন এক নামকরা দৈনিকে সংবাদ শিরোনাম ছিল-"শি ইজ নট মিস ইন্ডিয়া!"

    বেশি করে কসমেটিক্স ব্যবহার কর হে নারীজাতি- বৌদ্ধিক বিকাশের দরকার নেই,মানসিক উৎকর্ষতাও বাজারে নিষ্প্রয়োজন-খালি ফেয়ার এন্ড লাভলি মাখো এবং বেশি করে ফর্সা হও! নিজেকে পুরুষদের সামনে উৎকৃষ্ট পন্য হিসেবে উপস্থাপিত করতে না পারলে তো তোমার জীবন বৃথা! মনে পড়ে যায় ডঃহুমায়ুন আজাদের কথা- "আগে কাননবালারা আসত পতিতাপল্লী থেকে আর এখন আসে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।পড়াশোনায় যে মেয়েটি দারুন উজ্জ্বল,যে নিজ বিষয়ে চমৎকার সব গবেষণা করেছে-তার প্রতিযোগিতা করতে হচ্ছে তৃতীয় শ্রেণীর মূর্খ নির্বোধ পুতুল ওই রংচঙ্গা মেয়েটির সাথে- আর নির্বোধতর মানুষজন গুরুত্ব বেশি দিচ্ছে ওই মস্তিষ্কহীন মেয়েটাকেই"

    বি দ্র-আমার এ মন্তব্য মেয়েদেরকে অসম্মান করার উদ্দেশ্যে নয়,বরং শুধুমাত্র সৌন্দর্য দিয়ে তাঁদেরকে বিচার করার এবং মেয়েদের নিজেদেরও নিজেকে পন্য ভাবার যে মানসিকতা-এটি পর্যবেক্ষণ করে বিরক্তির বহিঃপ্রকাশ মাত্র।নারীদের যোগ্যতা বা সাফল্য নিয়ে মন্তব্য করার মত ধৃষ্টতাও আমার নেই।প্লিজ কেউ ভুল বুঝবেন না।

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।