কঠিনেরে ভালবাসিলাম
ইস্পাত-মোড়ানো বেতের লাঠির শপাং শপাং শব্দ হচ্ছে। শব্দের শেষ প্রান্তে আঘাতের থপ্ থপ্ আওয়াজ। আঘাতগুলো পড়ছে ইমুর গায়ে। হাতে, কাঁধে, কোমরে, কোমরের নিচে, পিঠে, নখে। প্রতিটা আঘাতের সঙ্গে ইমু কেঁপে উঠছে, কিন্তু ঠায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। তার চেহারা দেখে আঘাতের তীব্রতা বোঝার উপায় নেই। প্রিন্সিপাল নিজেই মারছেন। আমরা বাকি একান্ন জন যারা এ দৃশ্য দেখছি আর রাগী মন নিয়ে আঘাতের শব্দ শুনছি, তাদের আওয়াজ শুনেই বুঝে নিতে হচ্ছে ইমু কতখানি কষ্ট পাচ্ছে। এক এক করে সবাই গুণলাম, ইমু পঁচিশটা বেতের বাড়ি হজম করলো। দশ মিনিটে পঁচিশটা। এই দশ মিনিটে ইমু আমাদের সবার চোখের দিকে একবার করে তাকিয়েছে। চাহনিতে কোনো ব্যথা নেই। মনে হলো যেন, সে বুঝতে চেষ্টা করছে আমাদের কার মধ্যে কি প্রতিক্রিয়া হচ্ছে। আমার চোখে-চোখ পড়লো কুড়িটি আঘাতের পর। স্থির হয়ে গেলাম। এমন চাহনির মুখোমুখি আমি এর আগে কখনো হইনি; ইমু যেন আমার দিকে তাকিয়ে কথা বলছে।
চোখে চোখে কথা বলা সম্ভব, এই প্রথম টের পেলাম। কোথা থেকে যেন একটা অদ্ভূত আত্মবিশ্বাস এসে ভর করল আমার ওপর। এর আগে কখনো এভাবে নিজেকে সাহসী মনে হয়নি। ইমুর চাহনিই যে আমাকে শক্তি জোগাল, বুঝতে পারলাম। ওর চোখে-চোখ রেখেই ওপর-নিচে মাথা নাড়ালাম। তার চোখে এক অদ্ভূত দু্যতি এলো। এত অপমানের মাঝেও তার চেহারায় প্রশান্তির প্রচ্ছন্ন আলো লক্ষ্য করলাম। সে বুঝল, আমি কিছু একটা করতে যাচ্ছি। কিন্তু কিভাবে কি করব স্থির করতে পারলাম না। ঝড়ের বেগে কয়েকটি চিন্তা এলো। চিৎকার করে আমাদের চোখের সামনে যা হচ্ছে, তার বিরোধিতা করব? অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাওয়ার ভান করব? কিংবা বলব, ইমু যে কারণে মার খাচ্ছে সে দোষে আমিও দোষী? তাহলে আমার কি হবে? ইমুকে পেটানোর বিরোধিতা করব আমি, আমার জন্য করবে কে? কেউ না; কেউ সাহস পাবে না। সবাইকে একসঙ্গে বিরোধিতা করতে হবে, তাহলে কিছু একটা হতে পারে…। তাড়াতাড়ি।
‘স্স্ৎ’
মাথাটাকে ঈষৎ ডানে ঘুরিয়ে শব্দটি করলাম। পাশে দাঁড়ানো সেজান। সে শুনতে পেল। নড়ে উঠল; কিন্তু বুঝে উঠতে পারল না, আমি কি বোঝাতে চাইছি।
‘স্স্ৎ’
আবার করলাম শব্দটি। কোনো সাড়াশব্দ নেই।
‘স্স্ৎ’
আবার!
এবার সাড়া এল, সেজানের কাছে থেকে। সেও আমার মতো শব্দ করল, ওর ডান দিকে আরেফের উদ্দেশ্যে। আরেফ তার পাশে দাঁড়ানো তাইমুরকে লক্ষ্য করে শব্দটি করল কি-না বুঝে উঠতে পারলাম না। তবে মনে-প্রাণে আশা করলাম, সেও করেছে। এই-ই হলো ইমুকে বাঁচানোর মন্ত্র। শব্দটি পাঁচ বছরের ক্যাডেট-জীবনে আমরা অনেকবার ব্যবহার করেছি। কারণেও করেছি, অকারণেও করেছি। আজ এটা কাজে লাগতেই হবে। মন্ত্রটি আরও পঞ্চাশজনের কাছে পেঁৗছুতে যতক্ষণ সময় লাগে ততক্ষণ চোখ বন্ধ করে থাকব। তারপর কিছু একটা করা যাবে। চোখ বন্ধ করলাম।
শপাং!
আবারও আঘাতের শব্দ। চোখ খুলতে আর ইচ্ছে হলো না। সহ্য হচ্ছে না শব্দটা। মনে হচ্ছে, আমার নিজের গায়েই লাগছে। আমার ছুঁড়ে দেওয়া মন্ত্র সবার কাছে পেঁৗছুতে কমপক্ষে আরও দুই মিনিট লাগবে। থেমেও যেতে পারে মাঝ পথে। আমাদের যেসব বন্ধু ইমুকে একেবারেই পছন্দ করে না, তারা নিজেরা তো এটি গ্রহণ করবেই না, আরেকজনকেও জানাবে না।
চোখ বন্ধ রেখেই সেকেন্ড গুণতে থাকলাম-এক, দুই, তিন, চার… ত্রিশ পর্যন্ত গুণে আর চুপ করে থাকতে পারলাম না। এক্ষুণি আবার আঘাত নেমে আসবে ইমুর ওপর।
মাথা নিচু করে ডান হাত সোজা করে উপরে তুললাম। মনের মধ্যে প্রচণ্ড একটা ভয় অনুভব করলাম। হয় খুব ভাল একটা কিছু ঘটতে যাচ্ছে, না হয় খুব খারাপ। পাঁচ সেকেন্ড কেটে গেল। চোখ খুলে তাকিয়ে দেখলাম, আমার হাত কেউ খেয়াল করছে না। সবার নজর ইমুর দিকে। তাকে ঘিরে যারা দাঁড়িয়ে আছে তারা চাইছে, ইমু ব্যথা পাক। এবার আমাকে কথা বলতেই হবে।
‘স্যার’।
এতই করুণ আর ফাটা শব্দে বললাম যে, পাশে সেজান আর সামনের কুমার ছাড়া আর কেউ শুনতে পেল না। জোরে একটা নিঃশ্বাস নিলাম।
‘স্যার আমি কিছু বলতে চাই।’ ইংরেজিতে বললাম।
গুরুত্বপূর্ণ সব কথাই আমাদের কলেজে ইংরেজিতে বলা হয়। আমরা মাঝে মাঝে ভাবতাম, সালামটা তো খুব গুরুত্বপূর্ণ, সেটা ইংরেজিতে বললে কেমন হয়! দশাসই শরীরের লেফটেন্যান্ট কর্নেল নুরুল বাশার মাসুদ রানার গল্পের ভিলেনের মতো ইমুকে ঘিরে পায়চারি করা থামালেন। স্থির হয়েই ধীরে ধীরে আমার দিকে তাকালেন। চোখে সানগ্লাস। আমরা সবসময়ই তাকে দেখে মজা পেয়েছি। তার নড়াচড়া, চলা-চলন দেখলে মনে হয়, সবসময় একটি মুভি ক্যামেরা তার ছবি তুলে যাচ্ছে। শুটিং শেষে পরে একটা চলচ্চিত্র তৈরি হবে। ভয় পেলাম! অনেকটা বাঘের সামনে হরিণের মতো অবস্থান হলো।
‘ইয়েস, ফাকিং শীট, ফল আউট্; কাম হিয়ার অ্যান্ড টক’-হুংকার ছাড়লেন কর্নেল বাশার।
লাল হাউসের স্কোয়াডের শেষ লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলাম অ্যাটেনসান হয়ে। হাত দুটো গায়ের সঙ্গে সেঁটে রেখেই ধীরে ধীরে প্রিন্সিপালের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। এখন কর্নেলকে একেবারেই ভয় লাগল না। তার সানগ্লাসের দিকে তাকালাম, নিজের প্রতিফলন দেখতে পেলাম।
‘স্যার, আই ওয়াজ অলসো উইথ ইমরুল।’
‘নাও, ইয়ু বাসটার্ডস্ আর টকিং’, কর্নেলের ঠোঁটে স্মিত হাসি বড় হতে লাগল এবং এক পর্যায়ে বাংলা সিনেমার ভিলেনের মতো শোনাল।
‘সো উই’ভ গট এ্যনাদার মাদার ফাকার!’ বলেই তিনি এ্যাডজুট্যান্ট মেজর তামজীদের দিকে তাকালেন।
পেছনে আমাদের পুরো ক্লাসের সবাই দাঁড়িয়ে আছে। পিনপতন স্তব্ধতা। কেউ নড়ছে না। নিঃশ্বাসের শব্দও আর শোনা যাচ্ছে না। আমি ততক্ষণে বুঝে গেছি, আমার ভাগ্যে কি ঘটতে যাচ্ছে। আমাদের বন্ধুদের মাঝ থেকে আরও কয়েকজন যদি এগিয়ে না আসে তাহলে আমার আর ইমুর ক্যাডেট কলেজ জীবন এখানেই শেষ। চোখে একবারে অন্ধকার দেখলাম। ক্লাস সেভেন থেকে টুয়েলভ-এই ছয় বছরই তো। পাঁচ বছরের মাথায় ক্লাস ইলেভেন-এ উঠে বেরিয়ে যেতে হলে বাবা-মাকে মুখ দেখাব কি করে? ভর্তিই বা হবো কোথায়! বাইরের কলেজগুলোতে যখন যাব; তখন কলেজ কর্তৃপক্ষ, ছাত্রছাত্রী-সবাই জানবে যে, আমাকে ক্যাডেট কলেজ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। কি লজ্জা! মনভরা লজ্জা নিয়ে ইমুর দিকে তাকালাম, কিছুটা আশ্বাসের ভঙ্গিতে। আমার দিকে সে খেয়ালই করছে না। এতকিছু করছি ওর জন্য আর সে কিনা পাত্তাই দিচ্ছে না! শয়তান তো শয়তানই! এটা করতে যাওয়াই আমার ভুল হয়েছে। ওর জন্য আমার জীবনটাই এখন নষ্ট হতে চলেছে। না, আসলে তা নয়; ইমু তাকিয়ে আছে-আমার পেছনে দাঁড়ানো আমাদের পুরো ক্লাসের দিকে। গভীর দৃষ্টিতে সবার চোখের দিকে তাকাচ্ছে। ঘাসের উপর শিশির যেমন সূর্যের আলোতে চিক চিক করে, ওর চোখটা তেমনি জ্বলছে। ওকে দেখে মনে হচ্ছে-ও জানে, এখন আরও কিছু ঘটবে। ইমুর এত সাহস আসে কোথা থেকে? অন্যের ওপর এত আস্থা সে পায় কি করে? পুরো কলেজে খারাপ ক্যাডেটদের সে একজন_পড়াশোনা করে না, সারাক্ষণ খেলার চিন্তা, আড্ডা, কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরোধিতা করা। কর্নেল বাশার মেজর তামজীদকে কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনই সেজানের ফঁ্যাসফেসে গলা শোনা গেল।
‘স্যার, আই ওয়াজ অলসো উইথ দেম।’
তারপর নীল হাউসের সাবির, তাওসিফ, আমরান, হামিদ; সবুজ হাউসের নাবিল, নাঈম কাওসার, সুমন-মনে হচ্ছে, সবাই হাত তুলতে যাচ্ছে। এতো খুশি লাগল যে, তারপর আর খেই রাখতে পারলাম না কে কে হাত তুলেছে! মনে হচ্ছে, সবাই বলছে-‘মি টু, মি টু।’
কর্নেল সাহেবের অবস্থা হলো দেখবার মতো। ছানাবড়া, দইবড়া, মিষ্টিবড়া-সব একসঙ্গে দেখা গেল তার চোখে। কেমন যেন দেখালো শক্তিধর মানুষটিকে। এই কিছুক্ষণ আগেও যিনি তার পুরো শক্তি দিয়ে ইমুকে বেত্রাঘাত করছিলেন, হুংকার দিচ্ছিলেন-তাকে এখন দুর্বল দেখাচ্ছে। বিশ্বাস করতে পারছেন না-নিজের চোখ, কানকে। এ দৃশ্য তিনি আগে কখনো দেখেননি! হয়তো তার ছাত্র জীবনেও না, আর্মি জীবনে তো নয়-ই।
ইমু এবার আমার দিকে তাকালো। চোখে রাজ্যের কৃতজ্ঞতা। যেন বলছে, ‘আমি আছি বন্ধু দেখিস আমিও একদিন…।’
পালাবার পথ নেই
ইমু দোষ করেছে। কলেজের চোখে অমার্জনীয়। শুধু দোষ করেই ক্ষান্ত হয়নি, তা সে স্বীকারও করেছে নীল হাউসের হাউস টিউটরের কাছে। মিঃ বুলবুল। তার একটা ভাল নাম আছে। কিন্তু সবার কাছে তিনি এ নামেই পরিচিত। আমরা অবশ্য ডাকতাম ‘বুলবুলি’ বলে। আমাদের কলেজের তিনটি হোস্টেল-আমরা যেগুলোকে বলি হাউস, ছয়জন হাউস টিউটর আছেন। তাদের মধ্যে তিনজন থাকতেন প্রত্যেক হাউসের তিনতলায়-দুটি ঘর নিয়ে। তাঁরা সাধারণত অবিবাহিত হন। খোদাই জানেন এদেরকে কেন ‘টিউটর’ বলা হয়। টিউটরিং না করে তাঁরা বেশিরভাগ সময় ব্যয় করেন কোন্ ক্যাডেট সোয়া-দশটার পর বাতি নেভালো না, কে মশারি টাঙায়নি, কে রাতে আড্ডা মারছে, কে সিগারেট খেল, কে নামাজ পড়তে যায়নি-এসব। আমার এই পাঁচ বছরের ক্যাডেট-জীবনে কোনো হাউস টিউটরকে টিউটরিং করতে দেখিনি। কে জানে, আমিই সম্ভবত টিউটর শব্দের অর্থ ঠিক জানি না! কি আর করা! হাউস টিউটরের কাজই হলো আমাদের সবার দোষ ধরা। কতর্ৃপক্ষ তাদের খুব ভাল করে শিখিয়ে দিয়েছেন। আমরা ক্যাডেটরা যখন তাদেরকে একবারেই আশা করতাম না, তখনই তারা কোথা থেকে যেন উদয় হতেন। তাদের প্রতি এটা প্রিন্সিপালের আদেশ। মহাপরাক্রমশালী প্রিন্সিপাল। ক্যাডেট কলেজের লেফটেন্যান্ট কর্নেলরা হলেন একেকজন জেনারেল। ক্যাডেট কলেজগুলো যেন একেকটা দেশ-দক্ষিণ আমেরিকার, আফ্রিকার একেকজন সেনাশাসক। তিনি হঁ্যা বললে, সব ‘হঁ্যা’; না বললে, সব ‘না’। আর হাউস টিউটররা হচ্ছেন তার প্রতিমন্ত্রী।
এই মি. বুলবুল-ই ইমুকে হাতেনাতে ধরে ফেললেন, সিগারেট ফোঁকার সময়। গতকাল সোমবার দুপুরে খাবার পর নীল হাউসের দোতলার কমন রুমে আমরা দশ-বারোজন জমা হয়েছিলাম, মনের সুখে স্টার সিগারেট টানবো বলে। প্রায় প্রতিদিন সবাই এক হই, এখানেই। তার কারণ, নীল হাউসেই সবচেয়ে বেশি সিগারেট-খেকোর বসবাস। আর উপরতলার কমনরুমে হাউস টিউটর অথবা ডিউটি মাস্টাররা দুপুরে খাবার পর তেমন আসেন না। মি. বুলবুল গতকাল ডিউটি মাস্টার ছিলেন। একাধারে তিনি ডিউটি মাস্টার এবং নীল হাউসের হাউস টিউটর। কি মনে করে তিনি সেদিন তিনতলা থেকে নেমে সেখানে এলেন! পরে জেনেছিলাম, তিনি নীল হাউসের হাউস লিডার জামির ভাইকে খুঁজছিলেন।
ইমুর কি যেন একটা তাড়া ছিল। সিগারেটে বড় বড় কয়েটি টান দিয়ে বুক ভর্তি ধোঁয়া নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার পথে দরজাটা খুলেই ধোঁয়াটা ভূউষ করে ছাড়লো। ঠিক সেই মূহূর্তেই মি. বুলবুল দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে। পড়বি তো পড় মালির ঘাড়ে-ইমুর মুখ থেকে বেরুনো ধোঁয়া আছড়ে পড়ল একবারে স্যারের মুখের ওপর। এবার আর পালাবার পথ নেই-মি. বুলবুলের চেহারা চক্চক্ করে উঠল।
‘ইউ ব্লাডি ফুল! আই গট ইউ দিস টাইম’, তিনি হাসতে হাসতে বললেন। এবার একটা প্রমোশন হবেই। ঠিকই ভেবেছেন তিনি। দুষ্টু ঘুঘুর মতো ইমু অনেকবার ধান খেয়ে পালিয়ে গেছে। গত পাঁচ বছরে কতবার যে সে সিগারেট খেয়ে ধরা পড়তে পড়তে বেঁচে গেছে তার শেষ নেই। এর আগে অন্তত পাঁচজন শিক্ষকের কাছে সে এই একই দোষে ধরা পড়েছিল। কিন্তু তাকে ভূউষ করে ধোঁয়া ছাড়তে দেখেনি।
কমনরুমের ভেতরে আমরা সবাই লাল, সবুজ হাউস থেকে এসেছি। দুই-তিনজন ক্লাস টুয়েলভ-এর সিনিয়রও আছেন। হাউজ লিডার জামির ভাইও আছেন। দরজা থেকে কমনরুমের ভেতরটা দেখতে হলে আরও ভেতরে এসে একটা বাঁক নিতে হয়। মি. বুলবুল আমাদেরকে দেখতে পাচ্ছেন না। আমরা বাকি সবাই কিছুটা হলেও ভয় পেলাম। ইমু যদি স্যারের কাছে আমাদের কথা বলে দেয়, তাহলেই ধরা। জামির ভাইয়ের চেহারা ফ্যাকাশে দেখাচ্ছে। আমরা নিশ্চিত ইমু নিজে বাঁচার জন্য আমাদের কথাও জানিয়ে দেবে।
‘ইমরুল, হু এলস্ আর উইথ ইউ?’, স্যারের গলা শোনা গেল।
‘নো ওয়ান, স্যার। আই ওয়াজ এ্যালোন ইন দেয়ার’, ইমুর গলা।
‘দেন হোয়্যার\’স ইওর সিগ্রেট বাট?’ মি. বুলবুল জানতে চাইলেন।
‘আই থ্রু ইট আউটসাইড স্যার’, ইমুর কণ্ঠে কোনো ভয়ের চিহ্ন নেই।
‘ও কে, কাম উইথ মি’।
মি. বুলবুল ইমুকে তিনতলায় নিয়ে গেলেন। সে নির্লিপ্ত চেহারায় তাঁর পিছু পিছু গেল। পায়ের শব্দ মিলিয়ে যেতেই, আমরা সবাই আমাদের বুট জুতা খুলে, মোজা পায়ে যে যার দিকে দৌড় দিলাম। খোঁজ নেওয়ার চেষ্টাও করলাম না ইমুর ভাগ্যে কি ঘটল। যাই ঘটুক আমরা কেউই তার মতো অবস্থায় পড়তে চাই না। নীল হাউসের যারা আমাদের সঙ্গে ছিল, তাওসিফ আর সাবির ছাড়া সবাই যে যার ডর্মে চলে গেল। অন্যান্য হাউস থেকে যারা এসেছিলাম, তাদের পক্ষে এখন বেরুনো সম্ভব না। বেরুতে গেলেই তিনতলা থেকে মি. বুলবুল আমাদের দেখে ফেলবেন। ধরে নিতে পারেন আমরাও সিগারেট ফুকছিলাম। ……
ক্যাডেট কলেজের সুখের স্মৃতির কোনো তুলনা হয় না। লাখ লাখ আনন্দঘন মুহূর্ত কাটে ক্যাডেটদের। এরই সঙ্গে বেদনার স্মৃতিও আছে। তবে সুখের স্মৃতির প্রভাব এতোটাই প্রবল যে, বিমর্ষ সময়ের কথা তারা ভুলে যায় অথবা তা নিয়ে কোনো কথা বলে না। এই উপন্যাসিকা কিছু সেরকম ঘটনার সনি্নবেশ। এ গল্পে যে ঘটনাগুলোর উল্লেখ আছে, তা সত্য। যে চরিত্রগুলো ঘটনাগুলোকে টেনে নিয়ে যায়, তারাও সত্য। শুধু সত্য নয় তাদের নামগুলো। এ গল্পের প্রধান চরিত্র জনৈক কোনো ক্যাডেট নয়, প্রতিটা ক্যাডেট এটির প্রধান চরিত্র। একজন বালক শারীরিক প্রতিকুলতা, মানসিক পতন আর পারস্পরিক বৈরিতা অতিক্রম করে কিভাবে একজন সোনার মানুষ হয়ে ওঠে, এটি তারই গল্প। নিজেকে আবিষ্কার করে একজন আরেকজনের বন্ধু হিসেবে। বন্ধু হয় ভাইয়ের চেয়েও আপন। হয়ত সারা জীবনের জন্য। এ গল্প বন্ধুত্বের বিজয়ের গল্প। এই গল্পের বাকী অংশ জলদি বই আকারে আসবে।।।
:boss:
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
ভাইয়া যে ভাষা প্রিন্সিপাল আর এ্যাডজুটেন্ট ব্যবহার করলেন-অন্তত মা বাবা তুলে গালিগালাজটুকু আমাদের সময়(১৯৯৭-২০০৩) করা হলে নিশ্চিত ক্যাডেটরা ক্ষেপে গিয়ে এরকম কিছু একটা বা তার চেয়ে খারাপ কিছু ঘটাতো।
লেখাটা একটানে জেসিসিতে নিয়ে গেল আমাকে...
You'll like it when you read the whole novel. I'll not post the entire book here. Surprises are there for you when it gets published...
:clap: বাকিটুকুর অপেক্ষায় থাকলাম। :clap:
চ্যারিটি বিগিনস এট হোম
বইটার নাম বললেন না ভাইয়া।
এই বইমেলায় আসবে কি?
বইটার নাম "বন্ধু - এক দুষ্টু ক্যাডেটের গল্প"। চেষ্টা করছি মেলায় আনতে।
এতো আমাদের গল্প.........। একদম আমাদের নিজেদের
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
কিছু কিছু গল্প নিজের সাথে এত মিলে যায় যে সেটা নিজের বলে মনে হয়।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ :hatsoff:
দারুন লাগলো ইকরাম ভাই। মনে হলো, আমাদের ব্যাচের গল্প।
আমার বন্ধুয়া বিহনে
সব ব্যাচের গল্প। গল্প।
অপুর্ব ...... :boss: :boss: :boss: :boss:
দারুন...... 😀
বইটি বের হলে জানিয়েন...
that's a promise!
এটা ইকরাম ভাইয়ের না। এটা সব ক্যাডেটের গল্প। ধন্যবাদ ভাইয়া আমাদের সবার হয়ে গল্পটা লিখার জন্য।
আর কি করবা ইকরাম? সাংবাদিকতা, তিনতলার দায়িত্ব- এইবার উপন্যাস! না ছেলেটা দেখতে দেখতে বড় হয়ে গেল!! ;)) ;)) ;))
দারুণ লাগলো। প্রতিটি ক্যাডেট কলেজের প্রায় প্রতিটি ব্যাচে এইরকম একটা করে কাহিনী আছে। তুমি আমাদের আবার ওই বয়সে ফিরিয়ে নিয়ে গেলে। উপন্যাস তো বহুত বড় লেখা....... রহস্যটা আরো জমাতে আরো দুয়েকটা কিস্তি নামাও। নইলে বই কিনবো না কিন্তু!! :grr: :grr: :grr:
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
দু'কিস্তি দিলাম।
ফয়েজ ভাইয়ের মতো বলি,
এতো আমাদের গল্প………। একদম আমাদের নিজেদের।
ইকরাম ভাই, দারুণ।
---------------------------------------------------------------------------
বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।
এইবার বইমেলায় বের হলে ঠিকানা ঠিকুজি সহ একটা পোস্ট দিয়েন। অবশ্যই কিনবো। অবশ্যই!
পড়তে পড়তে মনে হলো এমন সরস, অনাবিল গদ্য অনেকদিন পড়ি নাই। বিশেষ করে পানিশমেন্টের মাঝে হুট করে ফল-ইন থেকে বের হয়ে আসার দুরুদুরু সাহস! আহ! চোখের ভেতর দিয়েও কতো কথা বলা যায়...
খুবই ভালো লাগলো ইকরাম ভাই।
ঠিক।
"এ গল্প বন্ধুত্বের বিজয়ের গল্প"
:hatsoff: :hatsoff:
অসাধারণ!
বইমেলার বই কেনার লিস্টে এই বইটাও ঢুকে গেল। 🙂
অসাধারণ za বলে বুঝতে পারবনা :boss: :boss: :boss: :boss:
মজা পাইলাম 😀
আমাদের সময় একজন এ্যাডজুটেন্ট ছিলেন, হুনাইন হাউসের সামনে 'গন-আদালত' করতেন। বড়ই ভয়ানক জিনিস ছিল সেটা।
x-( ওই শালার কথা মনে করাইস না x-(
ভাইয়া, অসাধারণ লাগলো লেখাটা পড়ে। :thumbup: :thumbup: :thumbup:
ক্যাডেট কলেজের এই ইউনিটি-ই একটা জিনিস, যেইটা ক্যাডেট কলেজের আর বাইরের ফ্রেন্ডগুলোর মধ্যে একটা মেইন ডিফারেন্স। এই ইউনিটি নিয়া আমাদের গর্বের শেষ নাই। বাইরের ফ্রেন্ডদেরকে যখন আমাদের এই ধরণের কোনো কাহিনী বলি, কতটা গর্ব নিয়ে বলি বুঝিয়ে বলতে হবে না জানি।
লেখাটা অন্নেক সুন্দর হইছে ভাইয়া। তয়, প্রিন্সিপালরে কোপাইতে মন চাইতেসে। (অবশ্য একদিক থেকে প্রিন্সিপাল একটা ভালো কাজই করে ফেলছেন। বিপদে না পড়লে ফ্রেন্ড চেনা যায় না, ফ্রেন্ডশীপ গাঢ়োও হয়না।)
প্রিয়তে নিলাম, শেয়ারেও দিলাম।
:boss: :boss: :boss: :boss:
ধন্যবাদ ভাই লেখাটার জন্য...ক্যাডেট কলেজের বন্ধুরা শুধু মুখের বন্ধু না আত্বারও বন্ধু...
বইটা কি বের হইছে?
প্রিন্সিপ্যাল স্যারের নাম খুব সম্ভবতঃ লেঃ কঃ নুরুল আনোয়ার হবে। নুরুল বাশার নয়।
প্রিন্সিপ্যাল স্যারের নাম খুব সম্ভবতঃ লেঃ কঃ নুরুল আনোয়ার হবে। নুরুল বাশার নয়।