৪
ঢাকা শহরে আমরা বস্তি দেখেই বড় হয়েছি। কিন্তু এবার দেশে গিয়ে প্রথম পানির ভাসমান বস্তি দেখলাম। এ শহরে এখন জমির আকাশচুম্বী মূল্য। রবীন্দ্রনাথের মতো কেউ থাকলে আজ দু বিঘের বদলে এক ইঞ্চি জমি দখলের কবিতা শুনতে পেতাম। প্রতিটি ইঞ্চি মেপে মেপে শহর দালান-কোঠার জংগলে ভরে যাচ্ছে। আর ওদিকে বস্তি উঠে গেছে পানির উপরে। এক-একেকটা বেড়ার ঘর, কোনরকমভাবে বাঁশের পিলারের উপর দাঁড়িয়ে আছে। দেশে থাকলে এসব দৃশ্য গা-সওয়া হয়ে গেলেও প্রবাসী চোখে প্রথম প্রথম এই বৈষম্যটা বড্ড বেশি চোখে ঠেকে। মনে মনে সান্ত্বনা খুঁজি এই ভেবে যে পশ্চিমে অর্থনৈতিক বৈষম্য থাকলেও খালি চোখে তা খুব একটা বোঝা যায় না। যদিও দেশে যাওয়ার পর দুদিনেই আমরা আবার এসবে অভ্যস্ত হয়ে যাই। ছিয়ানব্বই সালের দিকে একবার ট্রেনে করে কলকাতা থেকে দিল্লি যাচ্ছিলাম। ভোরবেলা জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে সাথে সাথেই চোখ ভেতরের দিকে ফিরিয়ে নিতে হলো। ভারত ভ্রমণের সে যাত্রায় বুঝতে পারলাম যে ভারত মানে শুধু ঝাঁ-চকচকে বোম্বে আর দিল্লি নয়। সে দেশের গ্রামাঞ্চলের একটা বিশাল অংশ জুড়ে তখন পর্যন্ত কোন সভ্য স্যানিটেশন ব্যবস্থা গড়ে উঠেনি। অথচ গেল বছর এই ভারতের বুক চিরেই দাঁড়িয়ে গেল বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল আবাসিক ভবন। মুকেশ আম্বানির এই ভবন তৈরি করতে নাকি এক বিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে। দেশ কেমন উন্নতি করছে তা বোঝাতে কতগুলো সূচক ব্যবহার করা হয়। এই যেমন জিডিপি, বেকারত্বের হার, মুদ্রাস্ফীতি, মুদ্রার বিনিময় যোগ্যতা, সম্পত্তির মূল্য, স্টক মার্কেট, কেন্দ্রীয় সরকারের ঋণ প্রবাহ নীতি, ব্যক্তি পর্যায়ের ঋণ প্রবাহ – এরকম অনেক কিছু। এসব কিছুতে ভারত হয়তো এগিয়ে থাকবে। কারণ তারা ড্রইংরুমে আম্বানির বিলিয়ন ডলার শোপিস সাজিয়ে রেখে বড়লোক সাজছে আর ওদিকে লুকিয়ে রাখছে ভাঙ্গাচোরা অপরিছন্ন টয়লেট। নারীদের জীবনযাত্রার মানে বাংলাদেশ ভারত থেকে এগিয়ে আছে। আমি বুঝি না উন্নয়নের সূচকে কেন কোন দেশের বিশাল দরিদ্র জনগোষ্ঠীর নূন্যতম চাহিদা পূরণ না হবার বিষয়টি উঠে আসে না? আমেরিকাতে আর যাইহোক এদেশে গরীবেরা চাইলে মুরগী খেতে পারে। সেই প্রথম থেকে দেখে আসছি ম্যাকডোনালসে সবসময়ই একটা এক ডলারের বিফ বার্গার পাওয়া যায়। তার উপর আবার এরা আজকের খাবার কালকে পরিবেশন করে না। রেস্টুরেন্ট বন্ধ করার সময় সব অবিক্রীত খাবার ফেলে দেয়। কেউ চাইলে সে খাবার বিনামূল্যে নিয়ে যেতে পারে। গরিবদের জন্য এখানে নামমাত্র মূল্যে খাদ্য, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা ব্যবস্থা করা আছে।
মোটামুটিভাবে ধরা হয় যে মেক্সিকান আর আফ্রিকান-আমেরিকান এথনিক ভুক্ত লকেরা এদেশের গরিব শ্রেণী। আমার এক পরিচিতের লস এঞ্জেলস আর সিলিকন ভ্যালির মাঝামাঝি জায়গায় একটা ফার্ম হাউজ আছে। সেখানে গরু পালা হয়। দশ-বারোজন মেক্সিকান সে ফার্মে কাজ করে। সারাদিন তারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে। প্রতিদিন এরা খায় মেক্সিকান রেস্টুরেন্টে। আর দিন শেষে লা-বাম্বা টাইপের মেক্সিকান মিউজিকের সাথে বিয়ার খেয়ে নাচতে নাচতে ফুর্তি করে। এরা গরিব কিন্তু এদেরকে বেশ সুখী মনে হয়। কারণ এরা এদের চাহিদা কম। অন্যদিকে আফ্রিকান-আমেরিকানদের একটা বিশাল অংশই অপরাধের সাথে জড়িত। সেই সতেরশো শতকে আফ্রিকা থেকে তাদের এই দেশে দাস হিসেবে ধরে নিয়ে আসা হয়েছিল। শুধু দাস হিসেবেই অকথ্য নির্যাতন সহ্য করতে হয়নি, সেই সাথে কেড়ে নেওয়া হয়েছিল তাদের সংস্কৃতি। অর্থাৎ যে রকম জীবন ব্যবস্থায় তারা অভ্যস্ত ছিল তাতে বাদ সাধা হয়। কোন একটি জাতিকে জোর করে তার সংস্কৃতি বদলে দেওয়ার চেষ্টা করলে কি হয় উত্তর আমেরিকার কালোরা তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। আজ পাঁচশ বছর পর এই আফ্রিকান-আমেরিকান জনগোষ্ঠী আমেরিকার বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই গোষ্ঠীর ছেলেদের ভবিষ্যৎ হচ্ছে খুন-খারাবীতে মৃত্যু কিম্বা জেলের বন্দী জীবন। দারিদ্র একটা চক্রের মতো। স্বপ্ন হারিয়ে ফেললে সেই চক্র থেকে আর বের হওয়া যায় না।দার্শনিক, বুদ্ধিজীবী, লেখক, রাজনীতিবিদ, নেতা, কিম্বা সাংস্কৃতিক কর্মীরা জাতির সামনে সংস্কৃতির ধারাটি তুলে ধরেন। কিন্তু যখন সেই ধারাটি স্পষ্ট করার কেউ থাকে না তখন একটা বিরাট শূন্যতার সৃষ্টি হয়। কিন্তু প্রকৃতির ধর্ম পানির মতো। জলবৎ-তরলং। এখানে কোন শূণ্যতার স্থান নেই। তাই দিকনির্দেশনা-হীন হয়ে পরলে ঘড়ির পেন্ডুলামের মতো দুলতে দুলতে কখনও আরব সংস্কৃতি কিম্বা কখনও ভারত সংস্কৃতিতে ছাউনির নীচে আশ্রয় নিই। এই যুগে আর চাবুকের আঘাতে সংস্কৃতি বদলে যায় না। এক মিডিয়াই যথেষ্ট।
৫
একবিংশ শতাব্দীর সভ্যতার স্পর্শ যেখানেই পরেছে সেখানেই মানুষ হয়ে পরছে মিডিয়া নিয়ন্ত্রিত জীব। আমাদের বাড়ির জানালাগুলো গ্রাস করছে কম্পিউটারের মনিটর। বারোয়ারী নাগরিকেরা পাশের বাড়ির শিলা বা চামেলিদের এখন সেখানে খুঁজে ফেরে। প্রভা বা রুমানার পক্ষ-বিপক্ষালম্বণ করে একে অন্যের জানালায় টোকা দিয়ে জানিয়ে দিচ্ছি প্রেম, বন্ধুত্ব বা যৌন-সম্পর্কের সীমারেখা সম্পর্কে আমাদের ধারণাগুলো। প্রতিবেশী কিম্বা পরিবারের পরিচিত মুখগুলো ছাড়িয়ে আমার চিন্তাভাবনায় জায়গা দখল করে নিচ্ছে ভার্চুয়াল মানুষেরা। মনে হয় এ যুগের ইমেজটা এরকম – যে যত বেশি হাইটেকে অভ্যস্ত সে তত বেশি আধুনিকমনস্ক। কিন্তু আসল কথা হলো আমরা প্রযুক্তিতে আধুনিক হচ্ছি কিন্তু মননশীলতায় যেই লাউ সেই কদুই থেকে যাচ্ছে। কম্পিউটারের মনিটরে আমরা কি দেখছি, মুঠোফোনে আমরা কি এতো কথা বলছি? তবে হাই-টেক সোশ্যাল-নেটওয়ার্কিং আমাদের মনে করিয়ে দিল যে মানুষ মূলত সমাজবদ্ধ জীব। আমরা আসলে ভেতরে ভেতরে খুব খুশি হয়ে উঠি যখন দেখি যে আমি আসলে একা নই। আমার চারপাশে আরও অনেকে আছে। আনন্দে আহ্লাদিত হয়ে উঠি যখন দেখি যে আমার কথা কেউ শুনছে। আবার এর উল্টোটা ঘটলে মন খারাপ হয়ে যায়। ফেসবুক বা ব্লগ জনপ্রিয় হয়ে উঠার পেছনের কারণটা বোধহয় একই সাথে আমাদের সমাজবদ্ধতার প্রতি আকর্ষণ এবং একে নিয়ন্ত্রণের ইচ্ছা।
ভাষা আবিষ্কারের পর থেকে মানুষ নিজেদেরকে পশুদের থেকে আলাদা করতে পেরেছে। কথা বলা মানুষের একটি স্বাভাবিক চাহিদা। লিবিয়ার গাদ্দাফি নাকি দেশের জনগণকে খুব একটা খারাপ রাখেননি। কিন্তু সেদেশে মানুষের কথা বলার সুযোগ ছিল না। তাই জনগণ ফুঁসে উঠলো। এজন্যই বোধহয় এখনও গণতন্ত্রের জয় জয়াকার। এই মিডিয়াই আমাদের আশরাফুল আর সাকিবদের চেনাচ্ছে। আবার এই মিডিয়া-জনিত অতিরিক্ত চাপ নিতে না পেরে আশরাফুলরা হারিয়ে যাচ্ছে। মিডিয়ার সবচেয়ে খারাপ দিক হলো সাংস্কৃতিক আগ্রাসন। আমরা এখন ভারতীয় সংস্কৃতিতে মজে যাচ্ছি। আবার ভারতীয়রাও অনুকরণ করছে পশ্চিমা সংস্কৃতির। বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে অন্ধ অনুকরণ বিষয়টি অপসংস্কৃতির জন্ম দেয়। এতে জাতি দিকভ্রান্ত হয়ে পড়ে। কিছুদিন আগে একটি পত্রিকায় দেখলাম নব্য বিত্তশালী ভারতীয়রা বিনোদনের জন্য থাইল্যান্ড ছুটছে। তাদের নাকি খুব জুয়ার নেশা। আর মধ্যবিত্তের মধ্যে তো ইঁদুর দৌড় লেগেই আছে। কোথায় জানি পড়েছিলাম ইঁদুর দৌড়ের সবচেয়ে খারাপ দিক হলো যে কেউ এ প্রতিযোগিতায় জিতলেও শেষ পর্যন্ত সে একজন ইঁদুরই থেকে যাচ্ছে।
৬
মিডিয়ার আগ্রাসন থেকে পশ্চিমও কোন অংশে মুক্ত নয়। গ্রোসারী শপের কাউন্টারের পাশে থরে থরে সাজানো থাকে গসিপ ম্যাগাজিন। এই ম্যাগাজিনগুলো আসলে আসামীদের রিমান্ডে নেওয়ার মতো এক একটা টর্চার সেল। এখানে একজন সেলিব্রেটিকে আতসি কাঁচের নীচে রেখে তন্ন তন্ন করে তাদের মানসিক ব্যবচ্ছেদ করা হয়। জেসিকার কেন ওজন বাড়ল, স্যান্ড্রার বর ঝোপের আড়ালে কার সাথে প্রেম করছে, জেনিফার আনিস্টন কেন প্রেমিক খুঁজে পাচ্ছে না, ডেমি মুরের স্বামী তাদের বিবাহবার্ষিকীর দিন কোথায় ছিল – ইত্যাদি ইত্যাদি। জনগণের একটু আগ্রহ আছে জানতে পারলেই এদেশের ম্যাগাজিন তাদের লুফে নেয়। তারপর যতদিন জনগণের আগ্রহ থাকছে ততদিন সেই সব সেলিব্রেটিদের নিয়ে লাফালাফি হচ্ছে। পশ্চিমে তো পাপারাজি বলে একটা বিশাল গ্রুপ আছে। লেডি ডায়না তো শেষ পর্যন্ত এদের হাত থেকে বাঁচার জন্য মারাই গেলেন। ব্রিটনি স্পিয়ারের হলো নার্ভাস ব্রেক-ডাউন। পশ্চিমে সেলেব্রিটি হয়ে টিকে থাকত হলে মিডিয়ার প্রচণ্ড চাপ সহ্য করে টিকে থাকতে হয়। আমাদের সাকিব তামিমদের এদের থেকে অনেক কিছু শেখার আছে।
৭
যদিও ক্রমশ ছেলেদেরও তা গ্রাস করছে তবে মিডিয়ার চাপে নারীকুলের বড়ই ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। জিরো সাইজ, পোরসেলিন ত্বকের হুর পরীদের দেখিয়ে মিডিয়া ক্রমাগত নারীদের মনে অপরাধ বোধ প্রবেশ করাচ্ছে। সবাইকেই যেন প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান দখল করতে হবে। সুন্দর আর ফিট থাকার প্রলোভন দেখিয়ে প্রসাধনী ইন্ডাস্ট্রি বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার কামিয়ে নিচ্ছে। বইয়ের দোকানগুলো উঠে গিয়ে পাড়ায় পাড়ায় গজিয়ে উঠছে পার্লার, স্পা, ফিটনেস ক্লাব। নিজের ঘরের যাবতীয় শারীরিক পরিশ্রমের কাজ কাজের বুয়ার হাতে তুলে দিয়ে আমরা জিমে ছুটছি ইনস্ট্রুমেন্টস ব্যবহার করে কিছু শারীরিক পরিশ্রম করার জন্য। আশির দশকে অপর্ণা সেন ‘পরমা’ নামে একটা ছবি বানিয়েছিলেন। সে সময় ছবিটাকে রীতিমতো পর্ণ মুভি ভাবা হতো। আমার মতে ছবিটার বিষয়বস্তু ছিল সে সময়ের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। সেখানে দেখানো হয়েছে এক নারী তার মা, স্ত্রী, মাসি, পিসি, জেঠি এরকম হাজারটা পরিচয়ের আড়ালে চাপা পড়ে যাচ্ছে। একজন মানুষের আসলে নিজের পরিচয় কি? মিডিয়া আজ সক্রেটিসের ‘নিজেকে জান’ ফিলসফি ছিনতাই করে নিয়েছে। ক্রমশ আমরা বিজ্ঞাপনের দাস হয়ে পড়ছি। তাই আজকালকার অতি মাত্রায় আত্মসচেতন পরমারা বেবিফুডের বদলে ফেসপ্যাক কিনছে। মনে করছে লোকে সুন্দর বললেই সুখী হওয়া যায়। সৌন্দর্য জিনিষটা ক্ষণস্থায়ী। কিন্তু ব্যক্তিত্ব, কর্ম এসব থেকে যায়। আমরা বিংশ শতকের বেগম রোকেয়াকে চিনি। কিন্তু তার সময়ের সুন্দরী শ্রেষ্ঠা কোন নারীর নাম বলতে পারব কি? ঠিক তেমনি এ যুগে জাহানারা ইমামের ব্যক্তিত্ব প্রভায় অদৃশ্য হয়ে যায় কতো শত সুন্দর মুখ। আগে পশ্চিমের সংবাদে দেখতাম বয় ফ্রেন্ডকে বিয়ে করবার জন্য মা নিজ হাতে খুন করছে পেটের সন্তানকে। আজ পূবের পত্রিকার পাতায়ও একই সংবাদ। মায়ের প্রেমের কারণে বলী হচ্ছে ছোট্ট সন্তান।
আজকের নারীরা অর্থ উপার্জন করলেও অনেকাংশে দেখা যাচ্ছে সে অর্থ তারা ধরে রাখতে পারছে না। অনেকাংশেই খরচ করছে বিবেচনাহীন ভাবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর উত্তর আমেরিকাতে কর্মজীবী নারীদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। সেই সাথে বাড়তে থাকে শপিং মল। শখ থাকলে শখ মেটাবে এটাই স্বাভাবিক। নইলে নিজের ভেতরটা পূর্ণ হবে কি করে? কিন্তু আমার ভেতরের আধারের যদি কোন তল না থাকে, চাহিদার কোন সীমারেখা না থাকে তাহলে হাজার জিনিষেরও তো নিজের শখ পূরণ হবার নয়। কারণ যেই সমাজে আমরা বাস করছি সেই সমাজই তৈরি করছে পিয়ার প্রেশার নামের এই ইঁদুর দৌড়ের প্রতিযোগিতা। এই একবিংশ শতাব্দীতে ঘর থেকে বাইরে বেরুচ্ছি, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ভোগ করছি, কিন্তু দূর করতে পারছি না মনের হাহাকার। এ যুগে অনেক পরমাই সুযোগ পেয়েও হারিয়ে ফেলছে নিজের গন্তব্য।
(চলবে)
চমৎকার কিছু ব্যাপার বিশ্লেষণ করেছেন আপু। এই সব ব্যাপার আমাকেও ভাবায় মাঝে মাঝে।
অবাক লাগে এটা ভেবে যে, বাসা ভাড়া যাতায়াত বাদে ইউরোপ আর ঢাকার খরচ প্রায় একই। অন্যদের কথা জানিনা। আমার কাছে এমনই লাগে। মোটামুটিভাবে ৭০ ইউরোতে আমার সারা মাসের খাবার খরচ হয়ে যায়।
উপায়তো নাই আপু। তিন-চারদিন ফেসবুক অফ করে রাখলে মনে হয়, তিনদিন পৃথিবীর অনেক খবরই আমার জানা হয়নি... 😛 😛
যেই যুগে যদাচার। তবে মিডিয়া আমাদের নিয়ন্ত্রণ করবে না আমরা আমাদের প্রয়োজন মতো মিডিয়া ব্যবহার করবো সে প্রশ্নটা থেকে যায়। আমিও এখন ফেসবুক আসক্ত হয়ে গেছি। তবে হয়তো আবার তা কিছুদিনের জন্য ছেড়ে দিব। অন এন্ড অফ। অল্প সময়ে অনেক মানুষের জীবন জানা যায় - মজাই লাগে। কার মন ভাল নেই থেকে সীমান্ত সমাচার। ওল্ড মিডিয়া আর দেখা হয় না।
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
শান্তা,
খুব শক্তিশালী লেখা।
আমার একটা সোজা প্রশ্ন আছে - কাউকে সাহস করে জিজ্ঞাসা করতে পারিনি। কম বয়েসের মেয়েরা কেন সাজে সেটা বোধগম্য (ডারিউনের থিয়রী না জানলেও চলে), কিন্তু একটু বয়স্ক এবং যাদের স্বামী সন্তান সবই আছে, এ ধরনের মহিলারা কেন সাজে? কি চায় তারা, কেন?
কোথায় পড়েছো এটা? খুব মজার কথা।
সাইফ ভাই, মজার প্রশ্ন। এই প্রবাসে আমার চারপাশের মানুষজনের কথাই বলি। ধরেন আমরা একই বয়সী অনেক মেয়ে ছিলাম। আমরা ক্রমশ আমাদের বিশের কোঠা ছাড়িয়ে, ত্রিশের কোঠা এবং ক্রমশ চল্লিশের কোঠায় প্রবেশ করব করব অবস্থা। এর মধ্যে অনেকে হিজাব ধরলো। কিন্তু সাজগোজ বা নিজেকে আকর্ষনীয় রাখার চেষ্টার কোন কমতি নেই। কথাবার্তাও মোটামুটি কিভাবে রিংকেল দূর করা যায়, কিভাবে চুল পাকা/পড়া রোধ করা যায়, কিম্বা মেদ-ভূড়ি কি করি টাইপের সমস্যা। ডারউইনকে পীর মানলে সমস্যা আছে। সে লোক সব সমস্যার কাজী নয়। আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না মেয়েরা আসলে মেয়েদের কাছ থেকে প্রশংসা পাওয়ার জন্য উদগ্রিব থাকে। যে যতো প্রশংসা পায় সে নিজেকে তত ক্ষমতাশালী বলে মনে করে। এই প্রবাসে দেখেছি অনেক মেয়েই সারা সপ্তাহ ধরে অপেক্ষা করে উইকএন্ডে কখন একটা দাওয়াতে যাবে, একটু প্রশংসা শুনবে। জানি না আপনার প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলাম কিনা।
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
সাইফ ভাই লেখাটা কোথায় পড়েছি তা ভুলে গেছি। তাই উক্তিকারকের নাম উল্লেখ করতে পারলাম না।
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
সাইফ ভাই আরেকটা কথা - অল্প বয়সে বয়স সাথে থাকে তাই সাজার দরকার হয় না কিন্তু বেশি বয়সে তো আর বয়স ধরে বসে তাই তখন মেকাপের দরকার হয়। সাজে মানুষ সুন্দর থাকার জন্য। সুন্দর থাকলে তো মনও প্রফুল্ল থাকে।
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
র্যাটরেস জিনিসটা খুব যাচ্ছেতাই। আর সেটা যদি হয় অর্থহীন তাহলে তো কথাই নাই। নারীদের প্রসঙ্গে যেটা বললেন আমার চারপাশে (দেশে-প্রবাসে) তার অংসখ্য বিচরণ। মিডিয়ার প্রভাব ব্যাপক - একজন সচেতন সাধারণ মানুষের জন্যও খুব কঠিন অপ্রয়োজনীয় বিষয়গুলো থেকে নিজেকে সরিয়ে প্রভাবমুক্ত রাখা।
ফেসবুক থেকে দূরে আছি প্রায় একবছর। খানিকটা ক্লান্তি থেকেই। এটা ঠিক অনেকের খবর পাওয়া যায় না। তবে দুই-তিনশো মানুষের খবর রাখা প্রতিনিয়ত কত চাপের কথা ভাবুন। সেটাই করেছি কয়েক বছর। এখন দেখি - খোঁজখবর নেয়া থেকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা - যারা আপন মনে করে তারা ঠিকই অন্যভাবে করে। হয়তো আবার একদিন ফেসবুকে ফিরতে পারি, যখন বুঝবো আমি সীমিত ব্যবহার করতে সক্ষম।
আমি নিজে যেহেতু বাক্সবন্দী জীবন কাটাই। তাই মাঝে মাঝে মনে হয় এই কম্পিউটার স্ক্রীনটায় কিভাবে দিনের পর দিন আটকে আছি!
আমার বন্ধুয়া বিহনে
কম্পিউটার স্ক্রিন কিন্তু আমাদের আলাপ-আলোচনা এবং সমমনা মানুষদের খুঁজে পেরে সাহায্য করছে। ব্লগ না থাকলে আমার লেখা হতো কিনা সন্দেহ। তোমার কি মনে হয়? তুমি লিখতে এরকম একটা প্ল্যআটফর্ম না পেলে?
ফেসবুক নিয়ে যা বললে তা ঠিক।
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
ব্লগ নিঃসন্দেহে একটা গুরুত্বপূর্ন স্পেস। এমন ইন্টারেকটিভ কমিউনিটি প্ল্যাটফর্মের সাথে পরিচয় না হলে এভাবে বাংলায় লেখা/মন্তব্য/মতামত প্রকাশ করা হতো না নিঃসন্দেহে। তবে সিসিবিতে যারা ভাল লেখে তাদের হাতে গোনা ক'জন ছাড়া কেউ লেখে না - সেদিকে দিয়ে একটা হতাশা কাজ করে।
আমার বন্ধুয়া বিহনে
প্রসাধণ বাণিজ্যের ব্যপারটা খুব চমৎকার ব্যখ্যা করেছেন। আগে ইউরোপের, বিশেষ করে পূবের ধনীরা ছুটি কাটাতে যেতেন ফ্রেঞ্চ রিভিয়েরায়। সেখানে সমুদ্রস্নান ও রোদে পুড়ে তাদের ফ্যাকাসে সাদা চামড়ায় যে তামাটে ভাব আসতো, সেটাই ট্যান। তাই ট্যান ওদিককার চালু ফ্যাশন, এদিকে ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি। পাড়ায় পাড়ায় লাইব্রেরি উঠে গিয়ে স্পা, জিম আর পার্লারে ভরে যাচ্ছে, সেটা খুব চিন্তার বিষয়। সব সৌন্দর্য বিশেষজ্ঞই বলেন, সৌন্দর্য্য হচ্ছে ভেতরকার ব্যপার, কিন্তু গণমাধ্যম ক্রমশ সংজ্ঞাটা পালটে দিচ্ছে।
সুন্দর থাকাটা খারাপ না। সমস্যা হলো এটাকে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেওয়া। তোমার ট্যান আর ফেয়ার এন্ড লাভলীর ব্যাপারটা ভাল লাগল।
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
:gulli2: :gulli2: :gulli2: :thumbup:
অসাধারন লেখা আপু।
সুন্দর থাকাটা খারাপ না। সমস্যা হলো এটাকে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেওয়া।
একেবারে একমত।
আশা করি আপু এর পরের পর্বগুলোতে ছেলেদের বিষয় গুলো উঠে আসবে।
উন্নয়নের সূচকে কেন কোন দেশের বিশাল দরিদ্র জনগোষ্ঠীর নূন্যতম চাহিদা পূরণ না হবার বিষয়টি উঠে আসে না?
উত্তর খুজছি। পাচ্ছি না আপু।
মানুষ* হতে চাই। *শর্ত প্রযোজ্য