জাতি হিসাবে আমরা বেশ অদ্ভুত। যদিও নিকট অতীতে এক সার্ভেতে আমরা ১১তম সুখী রাষ্ট্র কিন্তু পরচর্চা, পরনিন্দা, পরকে ঘৃণা করা আমাদের জাতীয় বৈশিষ্ট্য বললে মনে হয় কম বলা হয় না। প্রতিবেশি ব্যাগ উপচে পড়া বাজার নিয়ে ঘরে ফিরলে বলি, এই দুর্মূল্যের বাজারে এতো টাকা পায় কই! আর খালি হাতে বা তলানি নিয়ে বাড়ি ফিরলে বলি, ছোটজাত, কোনদিন খেয়েছে নাকি, বাজার করা শিখবে কোথা থেকে!
আমরা ভালো কে ভালো, সত্যিকে সত্যি, মিথ্যাকে মিথ্যা বলতে পারি না। উপরন্তু নিজেকেই শ্রেষ্ঠ বলে দাবী করি; তা সে নামে হোক, মানে হোক, বংশে হোক, চাকুরীতে হোক, শিক্ষায় হোক, স্বামীতে হোক, স্ত্রীতে হোক, শ্বশুর বাড়িতে হোক, দেশে হোক, বিদেশে হোক……।
কিছু উদাহরণ ভাবা যাক;
০১ আমার নাম সৈয়দ হুমায়ুন কবীর। সৈয়দ বলে দিচ্ছে আমি বড় বংশের। আমার পূর্ব পুরুষ ইসলাম প্রচারের জন্য এদেশে এসেছিলেন। সুতরাং আমি আশরাফ মুসলিম। আমার গায়ের রঙ দেখো টকটকে গৌর বর্ণের। তোমাদের দেশের কালিমা বা ছোটলোকি আমার মাঝে নেই।
আমরা নবাবি আমল থেকে ধনী।
আমার পুর্বপুরুষের ভিটা ইটের দালান; মেঝের মার্বেল এসেছিলো ইটালি থেকে জাহাজে করে, সেই জাহাজ এসে থেমেছিলো কলকাতা বন্দরে।
বৃটিশদের সাথে আমার প্রপিতামহের ব্যাবসা ছিলো।
আমার শ্বশুরবাড়ির ওরা খানদানি ফ্যামিলি। ঢাকার নবাবদের সাথে ওদের ওঠাবসা ছিলো। ওদের প্রতিটি ঘরে পারস্যের গালচে বিছানা; গালচে বিছানোর কারিগর এসেছিলো হায়দ্রাবাদ থেকে। আমার বিয়ের সময় যে দস্তরখান বিছানো হয় তাতে বসে শাহ সুজা পর্যন্ত আহার গ্রহণ করেছিলেন।
আমার দাদা পোলাও খেয়ে পুকেরের যেই ঘাটে হাত ধুতেন সেই ঘাটের পানি নিয়ে যেতো গায়ের লোকেরা, সেই পানি দিয়ে রান্না করবে বলে (ঘি মিশে থাকতো সেই জলে)
আমাদের ঘরের কুকুরগুলি লেডি কার্জনের উপহার দেয়া সেই টম কুকুরের বংশধর। যেই পায়রাগুলো উড়ছে ছাদে, বাড়ির আশে পাশে সেগুলোর পুর্বপুরুষদের আনা হয়েছে বাহাদুর শাহের লাল কিল্লা থেকে।
ঐ ডাব গাছের পানি দিয়ে আপ্যায়িত করা হয়েছে ফজলুল হক সাহেবকে, সোহরাওয়ার্দি সাহেবকে, মাওলানা সাহেবকে; শেখ সাহেবও ছিলেন সাথে, ছিলেন মোশতাক সাহেবও। জেনারেল জিয়া আমার বাবার বসানো নলকূপের পানি খেয়ে বলেছেন, বাহ বেশ মিষ্টি ; হাতের আজলা ভরে তিনি পানি পান করেন, চোখে ছিলো তার রেব্যান সানগ্লাস। বন্যা হলে গামবুট পড়ে জেনারেল এরশাদ আমার কাচারি ঘরে এসে বসেন; তাকেও ডাবের পানি দেয়া হয় খেতে। হালকা চুমুক দ্যান তিনি। রুমাল দিয়ে ঠোট মোছেন। আসলেই ব্যাবহারে বংশের পরিচয়। তাকে জাম্বুরা মাখিয়ে দেয়া হলে তিনি বলেন জাম্বুরা তার খুব প্রিয় ফল। সরিষার তেল, কাচা লঙ্কা দিয়ে মাখানো আর হালকা ধনে পাতা ছিটানো জাম্বুরা খেতে খেতে তিনি যেনো তার শৈশবে ফিরে গেলেন। আহ সেই নিষ্পাপ মুখচ্ছবি!
আজ ফজরের নামায শেষে যখন জেনারেল সাহেবের সরল মুখখানা ভেসে আসলো মানসপটে তখন মনটা হু হু করে উঠলো। আহা এই সরলতাই তার পতন ডেকে এনেছিলো। ছোটজাতে ভরা এই দেশের যোগ্যতা নেই গণতন্ত্র চর্চা করা বা বুঝার। এদের জন্য সহীহ ছিলো লৌহমানব আইয়ুব খানের বেসিক ডেমোক্রেসি। পুবে ৪০ হাজার, পশ্চিমে ৪০ হাজার। আমার ভোটের মূল্য আর ঐ জোলা, কামার, কুমার, বাইদ্যা, দিনমজুরের ভোটের মূল্য এক! আমার কথা আর ঐ অন্ধ মিসকিন, আমার ঘরের দাসী, কামলার কথার ধার একই! আমার জ্ঞান আর ঐ মাঝি, জাউলা, সহিসের বুঝার ক্ষমতা এক! ঐ ঘ্যাগওয়ালা ভিখারি, মুচি আর আমার ভোটের কোনই তফাত নাই! যেইদিন থিকা মুড়ি, মুড়কির একই দর হইলো সেইদিন থিকা এই দ্যাশের সর্বনাশ হইলো। তার চাইতে আচানক কথা পোলা-মাইয়া সমান হয় কি কইরা?
এই বাংলার চাই মরদ পোলার শাসন। মাইয়ালোক থাকবো ঘরে, তাগো বাইরে কি? কুচক্রী ইহুদী, নাছারা রা দ্যাশ ছাড়ছে কিন্তু কম্যুনিজম, নারীমুক্তি, আর গণতন্ত্রের মতো বেশরিয়তি জিনিস রাইখা গেছে।
০২ মনে আছে এক সময় এক রকম একটা ঘোর নিয়ে মাসুদ রানা পড়তাম। মাসুদ রানার প্রিয় পারফিউমের তালিকায় ছিলো/আছে শ্যানেল নাম্বার ফাইভ। আজকে ইউ টিউব ওপেন করতেই ব্র্যাড পিটের করা এডটি দেখলাম। ভাবলাম শেয়ার করি। বাংলাদেশে কি ইউ টিউব ওপেন হইছে? অনেকেই তখন সমালোচনা করছে ইউ টিউব বন্ধ করা নিয়ে। রামুর ঘটনা প্রমাণ করেছে মানুষের জন্য প্রযুক্তি, অমানুষের জন্য নয়।
কেউ ঘটনা বা দুর্ঘটনাকে নিতে পারছে না। কিন্তু সত্যি তো এটাই পুরো বিশ্ব জুড়ে মুসলিম জাতি আজ ইহুদী-নাছারাদের পদতলে। জ্ঞান-বিজ্ঞান তো তৈরিই হলো মুসলমানদের হাতে। শৌর্যে-বীর্যে এক নম্বর জাতি মুসলমানের আজ একি দশা। মুসলিম নারী নিজেকে ঢেকেছে হিজাব আর বোরখায়। কিন্তু মুসলিম পুরুষেরা শয়তানের ধোঁকায় ঐ ইহুদী,নাছারা, হিন্দু নারীদের কোলে মুখ গুজেছে। আর এই সুযোগে বিধর্মী কাফের, মুনাফেকের দল একে একে দখল করে নিয়েছে মুসলিমের বিজয় পতাকা। কিন্তু আল্লাহ এর পরেও মুখ ফিরিয়ে নেয়নি মুসলিম জাহানের উপর থেকে। সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যের নিচে মহান আল্লাহ পাক তেল সম্পদ দিয়ে ভরিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহর রহমতে এই সম্পদ শেষ হবার নয়। মুসলিম উম্মাহর শুধু এক হতে হবে আর পালন করে হবে মহান গ্রন্থের হুকুম ও আহকাম। সমস্ত মুসলিম উম্মাহর এক পতাকাতলে আসতে হবে। মুসলিমদের কোন আলাদা দেশ নেই, আলাদা জাতি নেই, আলাদা ভাষা নেই।
একটাই দেশ, আরব; বাংলাদেশ, পাকিস্তান, মিশর, ইরাক, আফগানিস্থান অঙ্গরাজ্য মাত্র।
একটাই জাতি, মুসলিম; বাঙালি, ইরাকি, কুর্দি, সিন্ধি, বালুচ, আফগানী, মিশরীয় উপজাতি মাত্র।
একটাই ভাষা আরবি; বাঙলা, উর্দু, কুর্দিশ, পশতু, তুর্কি, ফারসি উপভাষা মাত্র।
লাল-সবুজ বলে কোন পতাকা থাকবে না আজ থেকে, একটাই পতাকা হবে সবুজ/সাদাজমিনের উপর তরবারি, আর আল্লাহর কালাম, লা ইলাহা ইল্লালাহু, মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ।
আজ রামুতে মন্দির ভাঙ্গা হয়েছে বলে অনেকের হৃদয় যেনো ভেঙ্গে যাচ্ছে খান খান হয়ে। কই আমার মুসলিম ভাই-বোন-সন্তানদের গৃহহারা করা হচ্ছে, হত্যা করা হচ্ছে ফিলিস্তিনে তখন তাদের মানবতা কই থাকে?
এই যে মুসলিমদের আগুন ধরিয়ে হত্যা করা হলো, ধর্ষণ করা হলো ভারতে তখন তাদের মানবতা কই থাকে?
আজ আফগানিস্থান, ইরাকের উপর যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়া হলো, নিজেরা টুইন টাওয়ার ধ্বংস করে দায়ী করলো সাদ্দাম হোসেন, ওসামা বিন লাদেন আর মোল্লা ওমরকে। কোথায় ছিলেন আপনারা?
এই যে আপনার প্রতিবেশী রাষ্ট্র মায়ানমার; কি অত্যাচারই না হচ্ছে তাদের উপর। আমার দুচোখ ভিজে যায় জলে, আমার শরীরে সহস্র ব্যাঘ্রের ক্রোধ। আমার ভাই বোন, সন্তানেরা ভাসে জলে অথচ তাদের ফিরিয়ে দেয়া হয় মৃত্যুকুপে।
লেখার ঢং এ মজা পাইছি।
কিন্তু আর্গুমেন্ট কি? তুই কি কইবার চাস স্পষ্ট কইরা ক' 🙂 (বাঙ্গালের আদি বাংলার নানান ধরণের মধ্যে একটা ব্যবহার করার চেষ্টা করলাম আর কি ......)
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
কোন আর্গুমেন্ট নাই।
আজকেই একজনের গলা কাটা হইছে সে মুসলিম থিকা খ্রিষ্টান হইছে বইলা।
লিংক
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
এটার ন্যায্যতা নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে (না থাকাই ভাল) তবে বৈধতা আছে, রাজীব ভাই। আল্লামা আহমদ শফী'র মুখবন্ধিত বইয়ের রেফারেন্স দিতে পারি। আপ্নে কি উনাত্তে বেশি বোজেন? B-)
এমন মানব জনম, আর কি হবে? মন যা কর, ত্বরায় কর এ ভবে...
সেটা কি সম্ভব।
নানা নোজ এভরিথিং।
হ্যা আমি জানি,ধর্মত্যাগ করলে কতল। (সম্পাদিত)
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
অনেক অনেক thanks.... bro..
খুব ভালো লাগ ল আপ নার পোস্ট টা পড়ে i like this
🙂
ধন্যবাদ।
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
বড়ই হতাশায় পরিপুর্ন চারিদিক।
তবে আমার ধারনা, এটা মৃত্যুর আগে ঘটা শেষ কাতরানির সাথে তুল্য।
এই উল্টো দৌড়ানোটা আসলে এটাই বুঝতে যে পিছনের অন্ধকার আসলে কতটা কালো ছিল।
পুরোটা বুঝতে একটু সময় লাগছে ঠিকই কিন্তু এইবার যারা অসামঞ্জস্য গুলো ধরতে পারবে, দেয়ার উইল বি নো রিটার্ন।
কারন তথ্য এখন এতটাই উন্মুক্ত যে ব্যাখ্যার জন্য অমুককে ধরা লাগে না।
অমুকের বাপেদের করা শত সহস্র ব্যাখ্যা ও প্রতিব্যাখ্যায় সয়লাব হয়ে আছে নেট।
নেক্সট জেনারেশনের নখের সামনেই সব তথ্য হাজির।
তুমি আমি তাদের উল্টা পাল্টা বুঝাতে চেষ্টা করলে ঝাড়ি খাওয়াটা নিশ্চিত হয়ে যাবে.........
Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.
:thumbup:
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
আমার পরিচিত একজন মুসমান হয়েছেন কিছুদিন পূর্বে। তাকে পৈতৃক সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। কবি এখানে নীরব।