পুরোনো পাতায়ঃ বরফের দেশের গল্প ৩

দুপুর ১২টা ১৮ মিনিট। সোমবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৩
সকালে উঠতে দেরী হয়ে গেল। আসলে কিছু করার নেই। এখন সূর্য উঠে ৮টা ৩৫ মিনিটে। দেহ ঘড়ি সেই ভাবে নিজেকে ঠিক করে নিয়েছে। এই এলাকার লোকজন শীতকালে কিভাবে ৮টার অফিস ধরে আমার বোধগম্য নয়। ৮টায় অফিস ধরতে যাওয়া মানে আক্ষরিক অর্থে সূর্য উঠার আগে অফিসে ঢোকা। আমার মত অলস বাঙালীর জন্য যেটা চিন্তার বাহিরে। মেক্সিকান অমলেট নামক এক ফাঁকিবাজি নাস্তার মেনু শিখেছি নাইজেলা ল’সন এর ওয়েবসাইট থেকে। ঘাপলা বেশী করতে না চাইলে ১০ মিনিটে নাস্তা প্রস্তুত। ফেবু খুললাম। যতক্ষণ খাবো ততক্ষণ গুঁতাবো। ভিডিও, ছবি পোস্ট হচ্ছে, হয়েছে। তন্বী জানালো সবাই গেয়েছে জাতীয় সঙ্গীত। যারা যেতে পারেনি হলে টিভির সামনে দাঁড়িয়ে গেয়েছে। ভিডিও দেখতে দেখতে চোখে পানি চলে আসলো। “মা তোর বদনখানি মলিন হলে, আমি নয়ন জলে ভাসি” এই লাইনটি গাইবার সময় গায়ে কাটা দিয়ে উঠে। চোখ মোছার দরকার নেই। অস্বস্তিকর পর্যায়ের শুষ্ক এই এলাকায় চোখের পানি গালের মাঝামাঝি পর্যন্ত আসতে পারে না শুকিয়ে যায়। গানের শেষে বলে উঠলো জয় বাঙলা। কিন্তু প্রত্যুত্তরে জনতার গলার তেজ পাচ্ছিলাম না। ধরে নিলাম ভিডিও কোয়ালিটি ও ক্যামেরার অবস্থানের কারণে। তারপরেও উসখুস করছিল মন। ‘জয় বাঙলা’ কোন রাজনৈতিক স্লোগান নয়। একাত্তরে সর্বস্তরের মানুষ এই স্লোগান দিয়েছে। মেজাজটা খারাপ হয়ে গেল ‘জয় বাঙলার’ পর শুরু হলো নতুন কিছু উদ্ভট জয়ের। জয় বাঙলার পরে যদি কোন কিছু আসতেই হয় তাহলে একটি নামই আসবে আর তা হলো, ‘জয় বঙ্গবন্ধু।’ নাহ উনিও আওয়ামীলীগের নয়। উনি বাঙলাদেশের। উনাকে রাজনৈতিক উপলক্ষ বানিয়ে মানুষের কাছে ছোট করা হয়েছে। সেটার দায়দায়িত্ব আমি মনে করি আওয়ামীলীগের। তবে উনার নাম এড়িয়ে যাবার ব্যাপারটি হতাশাজনক ছিল। যাই হোক, আপাতত পলিটিক্যালি কারেক্ট এই স্লোগান দেয়ার চেষ্টা করে ভাল মানুষ সাজার কোন দরকার ছিল না। জয় বাঙলাতেই থেমে গেলেই চলতো। জুতো পেটা করতে ইচ্ছা করছে। হাস্যকর। লজ্জা হওয়া উচিৎ। আহসান ভাই (আকাশদা) বললো, একপাল ভেড়া নাকি গানের সাথে সাথে মাথার উপরে হাত উঠিয়ে নেড়ে নেড়ে গান গাইছিল, যেন কনসার্টের গান চলছে। পরে ভলান্টিয়ার এসে নাকি থামায়। এই ব্যর্থতার শুরু পরিবার থেকে। তারপরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সবশেষে বন্ধুবান্ধব। স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিবসের পার্থক্যই যেখানে করতে পারছে না, জাতীয় সঙ্গীত গাইবার নিয়ম কানুন জানবে সেই আশাও আমি খুব একটা করি না। শুধু হতাশ লাগে। মানুষের তৈরী জাতীয় পতাকার আগের রেকর্ডটা পাকিস্তানের ছিল। সেটা আমরা ভেঙ্গে দিলাম। একপাল মহাজ্ঞানী-মহাজন দেখলাম বিলাপ করছে, “নকল হয়ে গেল যে। একেবারে নকল হয়ে গেল যে। হায় হায়।” এই মহাজনদের দেখে প্রথমে করুণা হয়, তারপরে ক্রোধ ভর করে। গজারির ডাল দিয়ে পায়ের পাতায় কষে বাড়ি দিতে হবে। এরকম একটি মহাজনী পোস্টে ছোট ভাই নাফিসের মন্তব্যটি ভাল লেগেছে, “বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড ছিল পেলের। সেটা রোনাল্ডো ভেঙ্গে দেয়। এখানে নকলটা হলো কোথায়?” এ বছরটি বঞ্চিত হবার বছর ছিল। অনেক কিছুতে থাকতে পারলাম না। শোকে দুঃখে স্তুপাকৃত বরফ হয়ে যাচ্ছি। শেষ ধাক্কা ছিল বিজয় দিবসের এই আনন্দে থাকতে না পারা। আগামী বছর তো হাজার মানুষের পতাকা তৈরী হবে না। লাখো মানুষ জাতীয় সঙ্গীত গাইবে না রেসকোর্সে। পরিস্থিতি অনেক কিছু বদলে দেয়। আমি মনে করি দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি বাধ্য করেছে এই স্বতঃস্ফূর্ততা আনয়নে। সুবর্ণ জয়ন্তীর অপেক্ষায় রইলাম।

রাত ৮টা ১৪ মিনিট, রবিবার (২২ ডিসেম্বর, ২০১৩)
অবশেষে এই সেমিস্টারের কান্ডকারখানা শেষ করলাম। দুটো বিষয়ের ফলাফল তিরষ্কারপূর্ণ ইমেইলের সাথে পেয়েও গিয়েছি গতকাল। এবারের পারফরমেন্স সোজা কথায় জঘন্য। বিশেষ করে এই প্রফেসরের গতবারের কোর্সে অনেক ভাল করেছিলাম। মন্দের ভাল কানের পাশ দিয়ে গুলি গিয়েছে। স্কলারশিপ নিয়ে টান দেয়নি। এবারের সেমিস্টারের শেষের দিকে এসে যা হয়েছে তা আমার জন্য কিছুটা ভিতিকর ছিল। এরকম শেষবার হয়েছিল (এবং কারণ আজো অজ্ঞাত) ২০০৪ সালে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার আগে দিয়ে। বরাবরের মত গণিত ও রসায়নে গোঁত্তা খেতে খেতে একাদশ শ্রেণীতে থাকতেই নাম কামিয়ে ফেলেছিলাম। প্রিন্সিপাল স্যার ফেল করার কারণে ওয়ার্নিং দিতে ডেকে ৩৬তম ব্যাচের নতুন গডফাদার আবিষ্কারের নেশায় আমার ফাইল উল্টিয়ে দেখে সব ফিলিপস বাতির মত ফকফকা। থাকার মাঝে মাত্র ১৩টি ইডি, তাও উনার দৃষ্টিতে মামুলি কারণে। অনেক্ষণধরে ঘুরে ফিরে জানতে চাইছিলেন কোন কিছু নিয়ে উদ্বিগ্ন কিনা। পারিবারিক কোন সমস্যা হচ্ছে কিনা। বলেছিলাম কোন কিছু নিয়ে উদ্বিগ্ন নই। পারিবারিক সমস্যা থাকার প্রশ্নই আসে না। কোন সুরাহা করতে না পেরে তিরষ্কার করে ছেড়ে দিয়েছিলেন। তাকিয়ে থাকতাম। বই খুলে পাতার দিকে তাকিয়ে হারিয়ে যেতাম। কোন চিন্তায় নয়, দুশ্চিন্তায় নয়। আমি যাতে বিপদে না পড়ি তাই আমার ডেস্কের চারপাশ ঘিরে ছিল ভাল ছাত্রের দল (বামে শিশির, তার পিছে রাশেদুল, আমার পিছে হাসানুজ্জামান।), মুখ ঘুরিয়ে তাকালেই পড়া বন্ধ করে আমার দিকে মন দিত। কিছু জানতে চাইছি কিনা। ওদের বিরক্ত করতাম না। জানি ওরা বিরক্ত হবে না। তাও করতাম না। আমি বইয়ের পাতায় স্মৃতিভ্রমের মাঝে ডুব সাঁতার দিতাম। এরপর হঠাৎ সম্বিত ফিরে পেলে খেয়াল হতো বইয়ের প্রথম পাতায় তাকিয়ে ছিলাম গত মিনিট বিশেক। এবারো তাই হয়েছে — তাকিয়ে থেকেছি বইয়ের পাতায়, কিংবা ল্যাপটপের দিকে — এবং এটাই ছিল আমার জন্য ভয়ের বিষয়। ডুবে যাচ্ছি বুঝতে পেরে ভয়। এর সাথে কিছুটা ক্লান্তি, কিছুটা হতাশা মিলিয়ে হাল ছেড়ে দিচ্ছিলাম। প্রতিদিন ঘুরেফিরে একটা ভাবনা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল বা খাচ্ছে। কি করছি আমি এখানে? কেন করছি? উত্তরটা সহজ, পড়াশোনা করছি কিন্তু আমি সন্তুষ্ট ছিলাম না। ক্লান্তি আমায় ক্ষমা করো প্রভু। আরো সাত থেকে আটটি মাস থাকতে হবে এই দেশে এই শহরে। ব্যাপারটা আমার জন্য কিঞ্চিত ভীতিকর। কারণ এর কোন কারণ নেই। বইয়ের মাঝে চিন্তাবিহীন ডুব দেয়াটা সুস্থ কিছু না। কিন্তু হচ্ছে। সামনে থিসিস লিখা শুরু করতে হবে। এভাবে চললে মাঝি নৌকা নিয়ে ওপাড়ে পৌঁছাতে পারবে না।

দুপুর ১টা ৪৬ মিনিট, বুধবার (২৫ ডিসেম্বর, ২০১৩) – ক্ষুদে ভাবনা
বাঙলায় লেখার চেষ্টা করে দেখি। মোবাইলে এই ফ্রি সফটওয়্যারটা পেলাম নাম প্রাইভেট ডায়েরী। বেশ মজার। প্রতিদিন আবার সতর্কবার্তা দেয় লিখার জন্য। আজকে বড়দিন। ইউনিভার্সিটি টাউন হিসেবে পরিচিত হৌ’টন আগামী সেমিস্টার শুরু হবার আগ পর্যন্ত ভূতুড়ে শহর। সকাল থেকে এখন পর্যন্ত গোটা পাঁচেক গাড়ি আমার বাসার সামনে দিয়ে গিয়েছে। ডাউনটাউনে রাস্তার উপরে বসবাসের সুবাদে পার্থক্যটা সহজেই চোখে পড়ে। ছোট মামাতো বোন তৌশির গতকাল তৃতীয় জন্মদিন ছিল। দীর্ঘ কলহের পর পুরো নানাবাড়ি এক সাথে দেখে খুব ভাল লাগল। দেশে থাকলে কত আনন্দ করা যেত। দিনের পর দিন বিভেদের বিষ যন্ত্রণা দিয়েছে আমাদের। যাই হোক শেষ ভাল যার সব ভাল তার। যদিও শেষ এখনো হয়নি তবে একটি সুখী সমৃদ্ধ যৌথ পরিবার দেখার অপেক্ষায় রইলাম যেটা পরবর্তী প্রজন্ম অর্থাৎ আমাদের থেকে টুকরো হয়ে যাবে। দ্রুত চলে যাচ্ছে সময়। ব্যাপারটা চিন্তা করতেও কেমন জানি লাগে। যাই হোক আজকে মাছ রান্না করবো। মাছের দোপেয়াজা সাথে ঘন ডাল ও বাশমতি চালের ভাত। চিন্তা করতেই পেটে মোচড় দিয়ে উঠলো। নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের ভাষায় পেটে ছুঁচো কাবাডি খেলছে।

রাত ১২টা ১৭ মিনিট, বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর, ২০১৩) – বছর ঘুরে বড়দিন
ঘড়ির কাটা ১২টা ছাড়িয়েছে বলেই ২৬, কিন্তু আবেশে, আবহে এখনো ক্রিসমাসের রাত। ঢাকায় সিসিবির পিকনিক হয়ে গেল। এবারেরটা নাকি অনেকদিন পর হয়েছে। খুব যাবার ইচ্ছা ছিল কারণ এর আগে কখনো যাবার সুযোগ হয়নি। এবারো হলো না। সামনের কোন এক অনিশ্চিত বছরের অপেক্ষায় রইলাম। ডঃ আসিফ নজরুল ও শীলা আহমেদের বিবাহ নিয়ে কিছুটা গরম ছিল ফেবু। মানুষজনের উদ্ভট মন্তব্য ও আগ্রহ দেখে কেন জানি গা গুলিয়ে উঠলো। সূক্ষ্ম তিরষ্কার ও খোঁচা দিয়ে একটা স্ট্যাটাসও আপডেট করে ফেললাম। ইনবক্সে একবন্ধু অনুরোধ করলো, পোস্টটি লুকিয়ে ফেলতে। শীলা আহমেদের ফেবু প্রোফাইল নাকি হ্যাক করা হয়েছে। এইটা ২০০৪ সালের গুজব। বন্ধুর ডিপার্টমেন্টের বড় আপাও তিনি। ক্ষমা চেয়ে পোস্ট ডিলিট করে দিলাম। চেয়েছিলাম আসলে বন্ধুতালিকায় কিছু বন্ধুকে তিরষ্কার করতে। গুজব অথবা সত্য ব্যক্তিগত জীবনে বাঙালী উঁকি দিতে খুব পছন্দ করে। এর আগে ক্রিকেট তারকা সাকিব ও শিশিরের বিয়ে নিয়ে চলেছে একই ধরনের নাটক। হতাশাজনক। পলিসি সায়েন্সে unintended consequences বলে একটা বিষয় আছে। যেকোন সিদ্ধান্তের আশান্বিত ফলাফলের সাথে অনাকাঙ্খিত কিছু ফলাফলও লেজুড় হিসেবে এসে পরে। নীতি বিশেষজ্ঞ ও নীতি নির্ধারকদের একটি প্রধান কাজ এই অনাকাঙ্খিত ফলাফল কমিয়ে আনা। পড়াশোনার বিষয় নিজের জীবনে প্রয়োগ করার চেষ্টা বেশ গুরুতর আঁতলামি তারপরেও চেষ্টা করি নিজের মন্তব্য, কাজ যা সবাই শুনছে কিংবা দেখছে সেখানে unintended consequences কমিয়ে আনতে। বিয়ে বিষয়ক তিরষ্কারমূলক স্ট্যাটাসও সম্পূর্ণ ভিন্ন আঙ্গীকে বুমেরাং হতে পারে ধারনা ছিল না।

জামাত শিবিরের (বিএনপি বলা ছেড়ে দিয়েছি, রাজনৈতিক দল হিসেবে মাঠে বিএনপির অস্তিত্ব আমি আর দেখতে পাচ্ছি না) ধ্বংসযজ্ঞের ছবি দেখছিলাম। গরু পরিবহনকারী ট্রাকে অগ্নিসংযোগে জীবন্ত রোস্ট হয়ে গিয়েছে ৭টি গরু। অবোলা প্রাণি। খুব খারাপ লেগেছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো মানুষের জীবনের মূল্য নাই সেখানে গরু অনেক নিচে। আমি তারপরেও অন্যান্য বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা বেশী করছি। ঘুরে ফিরে unintended consequences চলে আসছে। রাস্তা অবরোধের জন্য শহরের বা রাস্তার ধারে গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ায় দক্ষিণ পশ্চিমের শীতকালীন সবজি চাষীরা ইতমধ্যেই লোকসান গুনছেন। বোরো আবাদ ঠিক মত করতে না পারলে ৬০% খাদ্য সয়ংসম্পূর্ণতা ভেঙ্গে পড়বে বলে আশংকা করছেন শায়খ সিরাজ। এদিকে অস্থিতিশীল পরিবেশের কারণে ৫০ কোটি ডলারের আর,এম,জি অর্ডার চলে গিয়েছে ভারতীয় প্রতিযোগী কম্পানির কাছে। গত কয়েকদিনে প্রচুর পরিমান ব্যক্তিগত যানবাহন পুড়েছে। বড় কম্পানির গাড়ি না হলে সাধারণ মানুষ ক্লেইম করার মত ইন্সুরেন্স পলিসি সাধারণত নেয় না। থার্ড পার্টি ইন্সুরেন্স নামক কিছু একটা নিয়ে চেকলিস্ট সম্পূর্ণ করে। এই সবই কিন্তু ক্ষতি। মানে টাকা উড়ে চলে গেল। বা পকেট তৈরী হলো। ব্যক্তিগত যানবাহনের ব্যাপারটা জাতীয় পর্যায়ে হয়তো প্রভাব ফেলবে না কিন্তু কৃষি ও তৈরী পোষাক শিল্প হোঁচট খেলে বিপদ হবে। জামাত-শিবির — একবিংশ শতাব্দির উদ্ভট এবং ভয়ংকর এক জন্তুর নাম। দেশের রাস্তায় রাস্তায় সমসংখ্যক হায়েনা কিংবা নেকড়ে নামিয়ে দিলে কি এত ক্ষতি করতে পারতো? জানি না।

সন্ধ্যা ৭টা ৫৯ মিনিট, শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর, ২০১৩) – আজেবাজে কথা।
সিডাটিভ হিপনোটিক্সের ফেবু স্ট্যাটাসটি পড়ছিলাম। কনস্টেবল সিদ্ধার্থ ককটেলের স্প্লিন্টারের আঘাতে মারা গেল। পুলিশ দম্পতি। নাহ! পুলিশ সমাজ বাদে খুব একটা বিচলিত নয় ফেবু ভিত্তিক সমাজ। আপাদত সবাই ব্যস্ত নজরুল-শীলা-সাকিব নিয়ে। কেউ সমালোচনার ঝড় তোলেনি। কেউ চায়নি বিচার। মানবাধিকার সংস্থা? সে তো পুরোনো কৌতুক। মানবাধিকার সংস্থার কথা উঠলেই মাথায় মতিকন্ঠের ‘মানবাধিকার বড়ির’ কথা মনে হয়। সাম্প্রতিক সময়ে এদের কার্যকলাপ অন্তত আমার মত উপেক্ষণীয় জনতার আস্থা হারাতে সক্ষম হয়েছে। বাঙলাদেশে মানবাধিকার আপাদত রাজনৈতিক মানবাধিকার বা নির্দিষ্ট করে বললে বৃহত্তর-জামাতে-ইসলামি বান্ধব মানবাধিকার। বর্ষীয়ান দল হিসেবে আওয়ামীলীগের দু-চারটি প্রভুভক্ত সংস্থা থাকার কথা। কিন্তু নেই। লীগের এখনো অনেক কিছু শেখার বাকি। এভাবে গদীতে গ্যাঁট হয়ে বসে রাজনীতি হয় না। আখেরে দুর্নাম কামাচ্ছে।

কথায় ফিরে আসি। আসলে ভাবছিলাম যে পরিমান ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বা হচ্ছে সেটা কি পুষিয়ে নেয়া সম্ভব হবে? পরিবারের উপার্জনক্ষম সদস্যের মৃত্যু থেকে শুরু করে সময় মত তৈরী পোষাকের চালান সময় মত পৌঁছে দিতে না পারা — সবই কিন্তু ক্ষতির খাতায়। ছোট কিংবা বড়। দেশের সার্বিক উন্নয়নে সরাসরি কিংবা লতায়-পাতায় এদের কোন না কোন অবদান আছেই। দেশের সুশীল সমাজ (যা এখন একটি গালি) বসে ছিল আছে থাকবে। এদের অনেকের লেখা পড়ি। বিভিন্ন মাধ্যমে। চমৎকার লেখা। সময়ের দাবী, যুগোপযোগী। কিন্তু সবাই ব্যস্ত ত্রুটি খুঁজে বের করতে। সমস্যার সমাধান কেউ দেয় না। সবাই বলে এটা খারাপ হচ্ছে, ওটা অনৈতিক। কেউ বলে না ভাল কিভাবে হতে পারে। সবাই ভাল-মন্দের একটি আবছা চিত্র তুলে ধরে। কেউ বলেনা পথ চলতে হবে ঠিক এভাবে। উদ্ভট এক মানসিকতা। নিরাপদ দূরত্বে থেকে তারস্বরে ঘেউঘেউ। না চাইতেও নিজের মাঝে বামপন্থী বিপ্লবী চিন্তা ভাবনা এসে পড়ে। হাতুড়ি-কাস্তে, কোপ হবে আস্তে। এদিকে বাবুনাগরিক শক্তি ইদানিং নিশ্চুপ। সিনেটরদের কোলে বসে নতুন ফন্দিফিকির করছে কিনা সে বলতে পারলাম না তবে তিনি মনে হয় কষাই কাদেরের মৃত্যুতে শোকাভিভূত। নাকি অভিমান করলেন? গুণীর কদর করতে পারিনি, মানীর সম্মান দিতে শিখিনি। চোখটা ভিজে গেল জলে মাননীয় স্পীকার, ভিজেই গেল। বাঙলার মানুষের ঘরে ঘরে আজ জাদুঘর। দারিদ্র্য আর সীমাহীন বৈষম্য সেখানে সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। স্বপ্ন হলো সত্যি। সুদের পরে সুদ মতভেদে মুনাফা।

আমার কথার মাঝে আওয়ামী গন্ধের প্রকট উপস্থিতি হয়তো অনেকেই লক্ষ্য করে থাকবেন। পারিবারিক ভাবে সেনাবাহিনীতে চাকুরীরত পিতা ছিলেন বামপন্থী। তিনি বেঁচে থাকলে বামাবেশে আবিষ্ট হয়ে আজ নিশ্চিত রকস্টার চে’ এর টি-শার্ট গায়ে দিয়ে ঘুরতাম। ছোট কাকা/সৎ পিতা কট্টর আওয়ামী পন্থী। বড় ভাই লীগের ভক্ত না হলেও জামাত-শিবির-বিএনপি দেখতে পারে না। হুম সব দিক বিচার করলে আমার বড় হয়ে উঠা আওয়ামী ঘরানায়। তবে গতবার ‘না ভোট’ দিয়েছিলাম। বাসায় মিথ্যে বলেছি। গণতন্ত্রের আদর্শ প্রয়োগে বিশ্বাসী আমার চিন্তা ছিল যোগ্য প্রার্থী নির্বাচনের দিকে। সেই হিসেবে কাউকে পছন্দ হয়নি। বাঙলাদেশের রাজনীতি যদিও এভাবে চলে না। যাই হোক। প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দেয়া শেষ। সঙ্গত কারণে লেখা থামাতে হবে তবে ধন্যবাদ জানাতে চাই হাই-কমোডের আবিষ্কারককে। বসে থেকে নিম্ন-সম্মূখ-পশ্চাদে ত্যাগের পাশাপাশি মাথা ও হাতের খোলামেলা এবং আরামদায়ক বিচরণের সুযোগ করে দেয়ার জন্য।

৩,০২৩ বার দেখা হয়েছে

১৮ টি মন্তব্য : “পুরোনো পাতায়ঃ বরফের দেশের গল্প ৩”

  1. নাফিস (২০০৪-১০)

    পুরা লেখাটায় ব্যাপক প্লাস ! খালি মাছের দোপেয়াজো আর বাসমতি চালের পার্ট টায় মাইনাস। ইহাকে উসকানি হিসেবে গণ্য করছি। আমার খাদ্যানূভুতি তে আঘাত লেগেছে। ক্ষুদা বেড়ে গেল 🙁

    জবাব দিন
    • মোকাব্বির (৯৮-০৪)

      ঐ মাঝে মধ্যে একটু যায় আরকি। ছোট মাছ গুলা একটু বিকট গন্ধ করলেও খাইতে বেদম মজা! আজকে ঘন ডাল যোগ করবো! :goragori: মা জননীর কাছে কৃতজ্ঞতা, রান্না শিখাইছিল! 😀


      \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
      অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

      জবাব দিন
  2. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    লেখার প্রায় প্রতিটি লাইনের সাথে একমত। পাতা চলতে থাকুক :thumbup:


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  3. তাহমিনা শবনম (৮৪-৯০)

    মোকাব্বির,
    এতো ভাল লেখ কেন? একটু কম ভাল হলে সমস্যা কী?

    (আপাদত-আপাতত,দারিদ্র্যতা-দারিদ্র্য)


    আমি চোখ মেললুম আকাশে
    জ্বলে উঠলো আলো পূবে পশ্চিমে

    জবাব দিন
  4. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)
    জয় বাঙলার পরে যদি কোন কিছু আসতেই হয় তাহলে একটি নামই আসবে আর তা হলো, ‘জয় বঙ্গবন্ধু।’

    :clap: :clap: :clap:


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।