সন ‘৭৮, ক্লাস ওয়ান।
সকাল আট কি সাড়ে আট, ফাঁকা ক্লাসঘরে দু’জন বন্ধু বসে বসে পরস্পরের টিফিন বাক্স নিয়ে মেতে উঠেছি।মা সক্কালবেলা পেট ভরে ভাত খাইয়ে পাঠাতো, ফলে বেশিরভাগ সময় টিফিনবক্সই থাকতোনা সংগে। খুব সংকোচ হতো।কিছু একটা টিফিন নিতেই হবে এমন একটা পণ করে বসতাম একেকদিন।ওর বাক্সে দেখলাম পাউরুটির মধ্যে লাল মত কিসের প্রলেপ, লোলুপ দৃষ্টিতে চেয়ে রইলাম সেদিকে।বন্ধুটি আমাকে সেই জেলি-পাউরুটির ভাগ দিলো, আমার দিক থেকে প্রতিদান পাবার প্রত্যাশা ছাড়াই।বললো, দোস্ত তোকে আমি এত পছন্দ করি, কিন্তু তোর জন্য আমার খুব মায়া লাগে (মায়া লাগা মানে করুণা নয়, সহানুভূতিই বুঝিয়েছিলো সে)।
অবাকচোখে তাকাতে বললো, তুই যে বেহেশতে যেতে পারবিনা! তখন ক্লাসঘর আস্তে আস্তে ভরে উঠেছে, ম্যাডাম এসে পড়েছেন।গলা উঁচিয়ে বোধ হয় বলছেন, বাচ্চারা চুপ, কোন কথা না।ব্ল্যাকবোর্ড ঝাপসা হয়ে এসেছে, চোখ থেকে কি একটা দলা পাকিয়ে টপ করে খাতায় গিয়ে পড়ে — সব ফের ঠিকঠাক দেখা যায়। প্রিয়বন্ধুর সংগে বেহেশতে যেতে না পারার অনিবার্যতায় আমার টিফিন পিরিয়ড পানসে হয়ে যায়।
সন ‘৮০, ক্লাস থ্রি।
চার-পাঁচজন বেশ শক্তসমর্থ ছেলে ক্লাসের বাইরে একটা রোগামতন ছেলেকে ঘিরে ধরেছে – এ্যাই, গান্ধীপোকা চিনস? ছেলেটি মাথা নেড়ে উঠলে জটলাটিতে হাসির হল্লা বয়ে যায়, মাথায় ঠোনা মেরে বলে ইন্ডিয়ার গান্ধীপোকার কথা বলি, ইন্দিরা গান্ধী।ইন্ডিয়া না তোদের দেশ!
‘৮০ কি ‘৮১, কলোনী-বিল্ডিং এর সিঁড়িঘর।
স্কুল থেকে ফিরে মাকে লুকিয়ে নেমে এসেছে খেলবে বলে, মাঠে ফড়িঙ-এর পিছু পিছু ছুটবার আগে নিজেই ফড়িঙ হয়ে যায় হঠাৎ।কয়েকজন মিলে জাপটে ধরে মুখে কি যেন ঘষে দিলো। মশলার ঘ্রাণে ছেলেটির জিভে জল চলে আসার মুহূর্তে শুনছে – অই অই গরু খাইসে, গরু খাইসে।এখন মুসলিম হইয়া গেসে।
‘৮৪-‘৮৬।
কৈশোরের বন্ধুত্ব গাঁটে গাঁটে বেড়ে উঠছে, কোনদিন ছিন্ন হবার নয় যে বন্ধন। তাদেরো কথায় সেই বিপন্ন আর্তি, দোস্ত ইসলামে আয়।লেটেস্ট ধর্ম, বেহেশত পাবি।ছেলেটি আঁতিপাঁতি করে কোরান হাদিস ঘাঁটে, যত পড়ে তত যুগপৎ ভয়ে দ্বিধায় সিঁটিয়ে যায় – মুসলমান তাকে হতেই হবে একদিন না একদিন, পুলসেরাত পার হতে হবে বীরের বেশে।
ছেলেটি ভীতু ছিলো, বাবা-মার কথা ভেবে ধর্মান্তরিত হবার ইচ্ছেটি তাকে দমিয়ে রাখতে হয়।কিন্তু ক্লাসরুমে এসে পৌরনীতির শিক্ষক পড়ানো বাদ দিয়ে প্রায়দিনই বদর, ওহদ আর খন্দকের যুদ্ধের কাহিনী বলতে থাকেন আর তার দিকে একটুও না তাকিয়ে বলে যেতে থাকেন বিধর্মীদের জন্যে কি কি ভয়াবহ শাস্তি অপেক্ষা করছে।সে মনে মনে বলতে থাকে, স্যার, আমিও তো ইসলামে বিশ্বাস এনে ফেলেছি – আমি কি আর বিধর্মী? আপনি কেন যে আমাকে অ্যাভয়েড করেন!
একেকদিন তবু দোজখের বর্ণণা শুনে খুব ভয় করে উঠতো। ভাবলো, পৌরনীতির ক্লাস যখন হচ্ছেনা,পালানো যাক। বাথরুমে যাবার কথা বলতেই স্যার দিলেন বিশাল এক স্ল্যাপ, ক্লাস ভাল্লাগেনা না ইডিয়েট? ‘ইডিয়েট’-ই বলেছিলেন, ইডিয়ট নয়।
‘৯০-‘৯১।
তারপর কিছু বছর এলো গেলো, কত সোনারূপো ছড়ালো বাতাস।কত দিকে কত ধর্মের কল নড়বড়ে হয়ে গেলো।টের পাচ্ছিলো, দোজখের অভিজ্ঞতা পাবার জন্যে মৃত্যু বা কেয়ামতের শেষ বিচার পর্যন্ত অপেক্ষা না করলেও চলবে।অবিশ্বাসীদের মূর্তি বিগ্রহ যখন মুখ থুবড়ে পড়েছিলো, শাঁখ কোসাকুসি ফাটা ঢোল যখন বিস্ফারিত চোখে পড়েছিলো মেঝেয় তখন তার এমন কিছু আযৌক্তিক মনে হয়নি সবটা।
অবিশ্বাসীরা এর থেকে বেশি কি-ইবা আশা করতে পারে!
তার বরং বিস্ময় জেগেছিলো তার বন্ধুদের আচরণ দেখে, যাদের সংগে নিত্যদিনের ওঠাবসা।যেন কোথাও কিছু ঘটেনি।নিত্যদিনের আড্ডা হাসি তামাশায় কোন ছেদ পড়েনি।পাশেই, একপাড়া দূরত্বে দোজখ গুলজার হয়ে যাচ্ছে, মিছিলে মিছিলে প্রকম্পিত শহর – কেঁচোর মতো সিঁটিয়ে গেছে মূর্তি পুজারীদের পুরো জনপদটি, জেহাদী জোশ তখন মিছিলের বাইরেও ড্রয়িং রুমে, পাড়ার অলস আড্ডায় আড্ডায় বিরাট সরীসৃপের তৃপ্ত জিভ নেড়ে যাচ্ছে।
২০০১।
কোন গ্রাম্য কর্মস্থল।
ইলেকশনের আগে কাজকর্ম গুছিয়ে শহরের বাস ধরবে বলে তাড়াহুড়ো করছে এমন সময় অধস্তন প্রবীণ সহকর্মী খুব কাঁচুমাঁচু করে বললেন, স্যার, ইলেকশনের রেজাল্ট বুইঝা আইসেন। এইদিকে পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার চান্স বেশি। মনে কিছু নিয়েননা, সাবধান থাকা ভালো।
২০০৪।
কলকাতা অভিমুখী রাজধানী এক্সপ্রেস।
”বাংলাদেশে এখনো হিন্দু আছে? কয় পার্সেন্ট?” হাসিমুখে প্রসংগটি এড়ানোর চেষ্টা করেও এড়ানো যায়না, অশ্লীলভাবে গায়ে লেগেই থাকে। বাংলাদেশের হিন্দুদের প্রতি যার এত সমবেদনা, স্বদেশের মুসলমানদের জন্যে কতটা টান জানার জন্যে বেপরোয়া সে বলেই ফেলে, যাই বলেন গুজরাতে যা হলো তা কিন্তু লজ্জাজনক। ত্বরিত জবাব, ও, ‘ওরাই’ তো প্রথমে শুরু করেছে।’ একদলা থুতু এসে জমা হয় মুখে, কোন কথা সরেনা।
কিছুদিন আগে।
তুমি যেন কোথায় ছিলে? ওহ্, ভারতে বুঝি! আচ্ছা আচ্ছা তা কি করছিলে সেখানে? একটু খোঁজ নিতে হচ্ছে তো তোমার সম্পর্কে ভায়া — হে হে।
এ সপ্তাহ।আজ এবং আগামীকাল।
তথাগত তবু নির্বিকল্প ধ্যানে মগ্ন। একাধিক তথাগত নিজেদের মধ্যে কথা কয়ে চলেছেন অনর্গল। আগুনে আর উল্লসিত উন্মত্ত জিঘাংসায় কারুর নাক খসে গেছে, কারুর বা খসে গেছে পুরো মুণ্ডুটাই। ধ্বংস আর অপমানের হতচকিত বিহবলতা নিয়ে ঝাপসা চোখে নড়বড়ে পায়ে দাঁড়িয়ে আছে যে জনপদ – সেই জনপদের দিকে স্মিতহাস্যে সমবেত গৌতম বুদ্ধেরা কি বলতে চাইছেন? তার বোধগম্য হয়না।
পরিশিষ্ট:
সারাদেশ প্ল্যাকার্ড ব্যানারে ছেয়ে গেছে। বক্তারা রগ ফুলিয়ে বক্তৃতা করছেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সাথে সংগম করছেন। তার বোধগম্য হয়না।
দুবেলা খেতে না পাওয়ার দেশে রোহিংগাদের আরো দশবেলা খেতে দিলে না কি এমন কিছু সমস্যা হবেনা কারু, এমন মানবিকতায় দুদিন আগেও ভেসে যাচ্ছিলো সকলের হৃদয়।
সে সকল হৃদয়বান মানুষের নির্বিকল্প নীরবতার অর্থও মস্তিষ্কের গভীরে প্রবেশ করেনা আজকাল।
বাংলা তালেবান হইবার উপক্রম হইলে নাকি সে সকল অগ্রজেরাই প্রতিরোধের দু্র্মর প্রাচীর গড়িবেন এমন স্বপ্ন দেখাইয়া ল্যাজসমূহ কি প্রকারে এবং কোথায় গুটাইলেন তাহাও সে ঠাহর করিতে পারিতেছেনা।
জয় বাংলাস্তান।জয় তালেবাংলা।
পুনশ্চ:
ওহ্ হো, ‘জয়’ না লিখিয়া ‘জিন্দাবাদ’ লিখিলে কি ভালো হইতো? যাকগে, চুলায় যাক।
:boss:
tameema
নূপুরদা কেমন আছেন?
লেখাটা পড়ে খুবই খারাপ লাগল। আমরাই অসাম্প্রদায়িকতার ধ্বজা উড়িয়ে সেই আমরাই সাম্প্রদায়িক দাংগায় বিরুদ্ধচারণ তো দূরের কথা, সেটা নিয়ে আলোচনাতেও জড়াই, আমরা কি এতটাই স্বার্থপর??? 🙁
জুলফিকার,
বুঝতেই পারছো বেশ অস্থিরতায় কাটছে সময়টা।
মানুষের পরিচয় তার ধর্মে নয়, তার মানবিকতায় তার রুচিতে।শত আঘাতেও সে তার মানবিক মূল্যবোধ হারিয়ে ফেলছেনা - এমন দিনের স্বপ্ন নিশ্চিতভাবেই দেখতাম।
কিন্তু কেন যে না এগিয়ে আমরা কেবল পিছিয়ে যাচ্ছি!
মাঝরাতে হটাৎ ঘুমভেঙ্গে লেখাটা একটা নাইটমেয়ারের মতো মনে হলো। যদিও এই খন্ড খন্ড অভিজ্ঞতাগুলো বেশ চেনা এবং পরিচিত। আশেপাশেই ঘটতে দেখেছি অহরহ। একটা সময় এসব সামনে হতে দেখলে সংখ্যাগুরুর দলে ছিলাম বলে লজ্জা হতো, সংকোচ হতো, নিজেকে অনেক ছোট মনে হতো। কখনো কখনো বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠতাম। আজকাল অনুভূতিগুলো অনেক ভোঁতা হয়ে যাচ্ছে হয়তো।এখনো বিচলিত হই। তারপর নিজের মধ্যেই ক্ষোভটা চেপে রাখি অন্তরালে। হয়তো জেনে গেছি এভাবেই চলবে। আমার বলা না-বলায় কিচ্ছু এসে-যায় না।
সত্যি খুব হতাশ লাগে। কি হচ্ছে এসব? সাংঘাতিক ভয়ংঙ্কর। লোক দেখানো নয়, প্রয়োজন ব্যক্তিগত পর্যায়ে শক্ত প্রতিবাদ এবং প্রতিকার এসব ধর্মীয় বৈকল্য এবং দলবদ্ধ অপরাধের বিরুদ্ধে।
আমার বন্ধুয়া বিহনে
রাব্বী,
ভেবে দেখো, ৩০-৩৫ বছর ধরে এ কথাগুলো, এভাবে কাউকে বলিনি। বলার কিছু আছে বলে মনে করিনি।বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের মাথা নীচু করে থাকতে দেখে উপহাস করেছি বরং, তাদের মানসিক সংকীর্ণতায়ও কষ্ট পেয়েছি। কারণ তাদের মাঝেও আশংকাজনকনভাবে সাম্প্রদায়িক মনোভাব বিদ্যমান।একটা জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে তো এসবের উর্ধ্বে উঠতেই হবে, এর কোন বিকল্প নেই।
কিন্তু সংকীর্ণতা তো এমনি এমনি আসেনি, এমনি এমনি তো তার মাথাটা হেঁট হয়ে যায়নি! তাই সর্পেও তার রজ্জুভ্রম হয়, সিঁদুরে মেঘ দেখলেই আগুনের লেলিহান রূপ মনে পড়ে যায়।মানসিক এ অবস্থান থেকে এরা কি করে বেরিয়ে আসবে? এর দায়-দায়িত্ব কি শুধু তাদের একার?
তখন মাথায় আসে 'শান্তিপ্রিয়' প্রতিবেশীদের কথা, যারা এসব অনর্থে বিশ্বাস করেনা আবার প্রতিরোধও করেনা। 'দুস্কৃতিকারী'দের প্রতি মৌখিক ঘৃণা বা নিন্দা জানিয়েই খালাস।নিরাপত্তাহীনতাবোধ ধিকিধিকি করে জ্বলতেই থাকে, জ্বলতেই থাকে -'সম্প্রীতি'-র সুদৃশ্য মোড়কে ঢাকা পড়ে থাকে। আমরা সান্ত্বনার ঢেকুর তুলি, দেখেও না দেখার ভান করি।প্রশ্ন হচ্ছে, সম্প্রীতিই যদি সত্য হবে, তবে এত সহজে তুষের আগুনে কি করে পুড়ে যায় উপাসনালয়, ঘর-বাড়ি, মানুষের আস্থা?
আমরা কি এগুলো নিয়ে ভাববো এবার? খোলাখুলি, সোজা সাপ্টা কথা বলবো? ঠারে ঠারে ভালোমানুষি কথা বলে আর আত্মপ্রবঞ্চনা না করে একটু বসবো সমস্যার সমাধানের জন্যে?
সে কাজ যদি করতে না পারি, তাহলে চলুক এই প্ল্যাকার্ড সর্বস্ব প্রতিবাদ। আরো রামু, সাতক্ষীরা বাংলাদেশে গুঁড়িয়েই যাবে, তার দায় বাংলাদেশ আগেভাগে নিক, নিয়েই এসব ভড়ং চলুক।
মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন............!!! খালি একটা...... দীর্ঘশ্বাস!
\"why does the weasel go pop? does it matter?
if life is enjoyable, does it have to make sense?\"
অসাধারন তো হয়েছেই, ভাই আজ আপনি আমার নিজের কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন।
আমি বড় হয়েছি হিন্দু-মুসলিম যৌথ সামাজিক সঙস্কৃতির ভেতর দিয়ে। কোনদিন আমার শৈশবের প্রিয় বন্ধুটির সাথে বেহেশত নিয়ে এরকম হয় নি, কিন্তু স্কুলে হতে দেখেছি। আমার একবার শুধু বন্ধুর সাথে একটা ব্যপার নিয়ে বেধেছিল যে মুসলমানদের নলকূপে পানি আর হিন্দুদের নলকূপে জল ওঠে কিনা(আমাদের ওখানে হিন্দুদের পানিকে জল বলতে দেখি।), তাও সেটা নিছক ছোটবেলার কৌতুহল। কিন্তু এখনও পূজার সময় ওদের বাসার লাড্ডূ না খেলে ভাল লাগে না, ঈদের দিন প্রিয় বন্ধুটিকে নিয়েই দুপুরে খেতে বসি। খুব কস্ট লাগে যখন দেখি মুরুব্বি শ্রেণীর লোকেরা বলে পূজার সময় কেন হিন্দুদের বাসায় খেতে যাই। আমি নিজের ধর্ম বিশ্বাস করি, কিন্তু অন্য ধর্মের মানুষকে সেজন্য অন্য কিছু ভাবতে নারাজ।
"রাম রহিম এক হ্যায়/ দোনোকা মালিক আল্লাহ হ্যায়।" (সম্পাদিত)
কোথাও, যে কোথাও ফর্ম পুরণের সময় ধর্মীয়/জাতিগত পরিচয় লেখার বাধ্যবাধকতা আমার কাছে অশ্লীল মনে হয়।শিশুরা যখন ধর্মীয় পরিচয়ে বেড়ে ওঠে, তখনা তার মনোজগতে ঘটে অনিবার্য সংঘর্ষ।তার শৈশব ছারখার হয়ে যেতে থাকে।
এবং এভাবেই আমরা একেকটি প্রজন্ম গড়ে তুলি। তারা মানুষ না হয়ে শুধু হিন্দু বা মুসলমান হয়ে ওঠে।এবং এরকমভাবে একেকটি প্রজন্ম গড়ে তুলে আমরা যখন অসাম্প্রদায়িক চেতনার সমাজ গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখি তা আমার কাছে সোনার পাথরবাটি বা কাঁঠালের আমসত্ত্বের মতো শোনায়।
মাগো জন্মেছি এই দেশে!
এইরকম একটা লেখা প্রিয় তে যাবে এইটা কাম্য নয়। কিন্তু একটা আয়না থাকা ভালো।
পুড়ছে আমার দেশ,
পুড়ছে আমার শহর,
পুড়ছে আমার গ্রাম,
পুড়ছে আমার মা,
পুড়ছে আমার বাবা,
পুড়ছে আমার বোন,
পুড়ছে আমার বিবেক,
পুড়ছে আমার শরীর,
পুড়ছি আমি নিজে।
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
হুম।
ঘটনাগুলো এক একটা দুঃস্বপ্নের মত মনে হলেও এগুলোই চরম বাস্তবতা। আমাদের আশেপাশেই অহরহ এগুলো ঘটে চলেছে, নিজে না করলেও আমরা এসব চুপচাপ দেখে চলেছি, আবার এই আমরাই ভার্চুয়াল জগতে অসাম্প্রদায়িকতার কথা বলে বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলি।
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
একটা ছড়া মনে পড়ল "হিন্দু হিন্দু তুলসী পাতা,হিন্দুরা খায় গরুর মাথা" ছোটবেলায় কিছু সময় এটার মুখোমুখি হতে হইছে।খুব রাগ লাগছে,মাঝে মাঝে মারামারিও করছি ওদের সাথে।এখন বুঝি দোষটা আসলে ওদের ছিল না,ছিল ওদের বাবা মায়ের।
দাদা লেখাটা দরকার ছিল এই সময়ে।এগুলো নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা হওয়া উচিত বলে মনে করি। (সম্পাদিত)
হেরে যাব বলে তো স্বপ্ন দেখি নি
মুসলমানদের, মুসলমান সমাজকে খাটো করে বানানো ছড়া আমরাও তো কম শিখিনি দিবস! সাহস করে সেটা কেবল বলতে পারতামনা, কারণ প্রতিক্রিয়াটাও সহজ হতোনা বলে।
শেষ বিচারে অন্ধলোকেদের পাল্লাভারী হলে এসব চলতেই থাকবে, আজ এ তরফে কাল ও তরফে।
সমস্যা হচ্ছে শুভবুদ্ধির লোকেরা ভীতু রয়ে গেলো চিরটাকাল, ইতিহাসের প্রতি সমাজের প্রতি তাদের দায়বদ্ধতার প্রতি সে পেছন ফিরে বা গর্তে মুখ লুকিয়ে জীবন পার কড়ে দেয়া যাবে বলে ভেবেছে।
আমার কথা হচ্ছে কোন সমাজই এসব সাম্প্রদায়িক লোককে ঠাঁই না দিক। শুভবুদ্ধিসম্পন্ন ভীতুদের প্রয়োজন ফুরিয়েছে। আমাদের যূথবদ্ধতা প্রমাণ করুক অন্ধরাই সংখ্যায় লঘু, আলোকিতরা নয়। (সম্পাদিত)
দাদা আপনার কথা ঠিক আছে,সব ধর্মই বলে অন্য ধর্মের মানুষকে ভালবাসতে কিন্তু কিভাবে যেন সেই ধর্মই আবার অন্য ধর্মের মানুষের মধ্যে একটা অদৃশ্য দেয়াল তৈরী করে দেয়।এটা মনে হয় সব ধর্মই নিজেদের শ্রেষ্ঠ দাবী করে সেখান থেকেই আসে।হিন্দু সমাজের কথা বলতে গেলে সেখানে অবস্থা আরো খারাপ।জাতের ভেদাভেদ এখনো বহাল তবিয়তেই আছে।
হেরে যাব বলে তো স্বপ্ন দেখি নি
নূপুর ভাই অশিক্ষিত সমাজ থেকে এর থেকে বেশী কি আশা করা যায়। আমি চট্রগ্রামের পাথরঘাটায় থাকার কারনে অনেক হিন্দু বন্ধু ছিল, কখনই নিজের থেকে আলাদা কেউ ভাবতে পারে নি ওদের কে। এখনো আমাদের সম্পর্কে কোন ছেদ পরে নি। ইসলাম কখনই সাম্প্রদায়িকতার পক্ষে নয়। যা ঘটেছে তা আমাদের অশিক্ষিত সমাজের একটি রূপ। আমরা লজ্জিত যারা এই কাজ করেছে। তাদের অনেক শাস্তি হওয়া উচিত।
জিয়া,
আমি মনে করি সবধর্মেই সাম্প্রদায়িক এলিমেন্ট কমবেশি আছে।তা থাক।সকল দর্শনই নিজেকে কালোত্তীর্ণ দাবী করে থাকে।কিন্তু ধর্মের গণ্ডির বাইরেও মানুষের যে পরিচয়, যে সম্ভাবনা তাকেই উর্ধ্বে তুলে ধরতে হবে, নইলে মুক্তি নেই।
সহমত নূপুর দা
আমিই শ্রেষ্ঠ এইটাই তো সবাই বলে।
আসল সঙ্খালঘু তো আমরা।
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
নিস্ফল দুঃখ প্রকাশ করা ছাড়া আর কিই বা করার আছে!
দিনদিন হতাশা বেড়েই চলেছে।
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
এই কাজ গুলো আমিও নিজের চোখে হতে দেখেছি ... পূজায় শতাব্দীর বাড়িতে বেড়াতে গিয়েও তথাকথিত মানসিকতার বন্ধুদের দেখেছি বাড়িটা মুসলিম বাড়ি থেকে কোন কোন দিক দিয়ে ভিন্ন তা ফিসফিস করে বর্ণনা করতে... এগুলো কষ্টই ... চাপা কষ্ট ... যা বেড়ে যায়... কমেনা
যখন চলে যাব দূরে...বহুদূরে...নৈশব্দের দূর নগরীতে
নিজেদের মাঝে দেয়াল তুলে দেওয়ার সংকীর্ণ ভাবনাগুলো হয়তো দেখা যায় না, কিন্তু অনুভব করা যায়। বড় রুঢ় এই অনুভূতি।
ভাল লাগছে না কিছুই। এই তো, কিছুদিন খুব হইচই হলো, প্রতিবাদ আর স্ট্যাটাসে ঝড় উঠল। এখন আবার সবাই টিটুয়েন্টি, অনন্ত জলিল কিংবা অন্যান্য রসালো হাসির বিষয় নিয়ে মেতে উঠছে। যার গেছে, যার যাবে, সেটা একান্তই তার একার ক্ষতি। আর কারো কিচ্ছু আসে যায় না। এই অশ্লীল স্বার্থপরতা এখন আমাদের সামাজিক ও ব্যক্তিগত মূল্যবোধের সীমানা গড়ে দিয়েছে।
আমার আশঙ্কা এই সীমানা আরো সংকীর্ণ হয়ে আসবে।
লঘু কথাগুলো লঘু নয়, যেমন লঘু নয়, লঘু মানুষেরা ...
তখনো স্কুলে যাইনা...সাদা ডিম মুখে নিয়ে চলা পিঁপড়ার সারি দেখে মুগ্ধ হওয়ার বয়স...সেই বয়স থেকেই জানি- লাল পিঁপড়া গুলা বেজায় বজ্জাত, কারণ ওরা হিন্দু!
আমি তবু আশাবাদী...আমাদের সন্তানেরা এইসব অশ্লীল গল্প শুনে বড় হবেনা...
জানি নপুংসকতা- তবুও; আপাততঃ এই জনমে নিস্ফল দুঃখ প্রকাশ আর ক্ষমা প্রার্থনা।
"আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস"
সব সময় চেষ্টা করি দেশের এত সমস্যার পরেও দেশকে নিয়ে আশার কিছু চিন্তা করব...একদিন ভাল হবে...কিন্তু যত দিন যাচ্ছে মিথ্যে আশারাও মুখ লুকাচ্ছে... 🙁
একজন মানুষকে কেন আগে মানুষ হিসেবে দেখা যায় না... তাকে কেন বিভিন্ন দলে-উপদলে ভাগ করে দেখতে হয়... এই শিক্ষার অর্থ বুঝতে পারি না... নিজেকেই তখন মূর্খ মনে হয়... দুঃখবোধ ছাড়া আর কিছুই জানানোর নেই ভাইয়া... 🙁
কি এক ছিলো কথা হচ্ছিলো দাদা এক জায়গায়, আপনার এই লেখাটার কথা মনে পড়লো।
নিষিদ্ধ লোবান পড়েছেন দাদা?
আমার মতে বিলকিসের সাথে পাকিস্থানী মেজরের কথোপকথন সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ স্থান ঐ বইএর। আমাদের কান ঐসব কথা শুনতে পারবে না বলে গেরিলা তে ঐসব কথা আসেনি।
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
পড়িনি বইটা। 🙁
খুব ছোট কিন্তু ওজনদার বই
লিঙ্ক দিলাম
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
আবার যদি পড়তে চান তাই খেলারাম ও দিয়া দিলাম
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ