অদ্ভুত সুন্দর এক গোধুলীর রং-এ মাখা পড়ন্ত বিকেল। পার্কের রাস্তায় একাকী হাঁটছি। দূরের মানজানো পাহাড়ের উপর পড়ন্ত বিকেলের শেষ রোদ্দুরের আলো এসে পড়েছে। আকাশে একই সাথে সাদা, কালো এবং কমলা মেঘের আনাগোনা। বিস্তীর্ন দিগন্ত একই সাথে দেখতে পাচ্ছি। পশ্চিমের দিগন্তে যেখানে সূর্য অস্ত যাবে সেদিকেই আমার ফেলে আসা প্রিয় জন্মভূমি। হাতের ঘড়িতে দেখলাম বুধবার, ১ আগষ্ট। তার মানে বাংলাদেশে এখন ২ আগষ্ট। বিশ বছর আগের ঠিক এই দিনে মন ছুটে গেল।
সারা রাত হাসপাতালে মার শয্যার পাশে বসে রাত কাটিয়েছি। আমি যখন এসে তার পাশে বসেছি তখন তিনি অচেতন। তার প্রিয় বুয়া তখন মার বিছানার পাশে একটা টুলে বসে ডিউটি দিচ্ছে। জিজ্ঞাসা করে জানলাম মা নাকি একবার চোখ খুলে তাকিয়ে আমাকে খুঁজেছিলেন। বুয়া মাকে বলেছে – ‘মামা রাত্রে আসবেন।’ এরপর আবার নিশ্চিন্তে মা চোখ বন্ধ করেছেন এবং আর চোখ খোলেননি। আইসিইউ ইউনিটে সাধারণত একের বেশী লোককে রুগীর সাথে থাকতে দেয় না। তবু ঠিক করলাম আমি থাকবো রাতে। পাশের এক বিছানার পাশে পড়ে থাকা একটা টুল টেনে এনে আমিও বসে পড়লাম মার শয্যা পাশে। মার ডান হাতটা টেনে এনে দুই হাতে ধরলাম তার হাত। ঠিক বুঝলাম না মা ঘুমাচ্ছেন না ইতিমধ্যে কোমাতে চলে গেছেন।
সারা দিনে আমার বোনেরা বিভিন্ন সময়ে এসে দেখে গেছে মাকে। তারা আমাকে ফোন করে বলেছে ডাক্তার নাকি বলেছে মা এখন কোমাতে। আমার কিন্তু মনে হল খুব নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছেন মা। এই বুয়াটা খুব ভাল মেয়ে। মিথ্যা বলে না। মা কে সে খুব ভালবাসে। আমার মায়ের এক আশ্চার্য ক্ষমতা ছিল যে কোন মানুষকে আপন করে নেবার। দেখলাম বুয়াটা নিঃশব্দে কাদঁছে। পলি-মাটির বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের মন খুব নরম। অবাক লাগল এই ভেবে যে, আমি কাদঁছি না অথচ এই কাজের বুয়াটা কাঁদছে দেখে।
মার বিছানার পাশে বসে অনেক কিছু মনে এল। সারাটা জীবন আমি মাকে অনেক কষ্ট দিয়ে এসেছি। আমি বোধ হয় এক ধরনের ‘স্যাডিষ্ট’ – যারা আমাকে ভালবাসে তাদেরকে কষ্ট দিই আমি। আমার মার জীবনটা অনেক কষ্টের ছিল। খুব ছোট বেলায় তার মা মারা যান, ফলে মায়ের আদর আর পাননি। তার বাকী জীবন কেটেছে আমাদের ৭
ভাই-বোনকে মানুষ করতে। যখন আমরা বড় হয়েছি এবং বাবা-মায়ের একটু সুখে অবসর জীবন কাটাবার কথা – তখন যুদ্ধের কারনে অনেক কিছু হারিয়েছেন তারা। বুড়া বয়েসে মেয়ের বাড়ীতে দিন কাটাতে হয়েছে নাতি-নাতনী মানুষ করে। কিছু দিন আমিও রেখেছিলাম আমাদের বাড়ীতে মা-বাবাকে। কিন্তু আমিতো সারাক্ষণ আমার কাজ, ব্যবসা আর ক্লাব নিয়ে ব্যস্ত। খুব কমই সময় দিতে পেরেছি তাদেরকে। তাই বোনের বাচ্চা হবার কারনে বোন যখন তাদেরকে নিতে চেয়েছে, আপত্তি করিনি। সপ্তাহে এক-দুই বার করে তাদেরকে দেখে এসেছি – অনেকটা কর্তব্য বলে। ভালবাসার প্রকাশ এটাকে বলা যায় না। কেন এমন হলাম আমি? এটা কি ছোট বেলা থেকে হোস্টেলে থাকার কারনে? মার পাশে বসে আক্ষেপ হল বেশ। মা বেড়াতে পছন্দ করেন। আমি যখন অফিসে, তখন অধীকাংশ সময় ড্রাইভার কাজ ছাড়া বসে থাকে। আমিতো তাকে পাঠিয়ে দিতে পারতাম মার ইচ্ছা মত ঘুরে বেড়াবার জন্যে। এবার মা সুস্থ হয়ে উঠলে তাই করতে হবে ঠিক করলাম।
খুব ভোরে উঠে চলে এলাম বাড়ীতে একটু বিশ্রাম নিতে। মা তখনো ঠিক সে ভাবেই গভীর নিদ্রায় আচ্ছন্ন। ঘন্টা খানেকও বিশ্রাম নিতে পারিনি – বউ এসে ঘুম থেকে উঠিয়ে দিল। বললো – ‘তোমার বোনেরা ফোন করেছে, তুমি এখনি হাসপাতালে যাও।’
হাসপাতালে এসে দেখি আইসিইউ-এর পাশের এক ঘরে মায়ের বিছানা ঠেলে নেওয়া হয়েছে। মার প্রিয় নাতী এবং এই হাসপাতালের ডাক্তার রেজা তখন সাথে আরও কয়েক জন ডাক্তারকে নিয়ে বুকে ধাক্কা দিয়ে নিশ্বাস ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে যাচ্ছে। আমি বুঝে গেলাম মা মারা গেছেন। ইশারায় রেজাকে বললাম আর চেষ্টা না করতে। মার মুখের উপর কাপড় টেনে ঢেকে দিল রেজা। পাশের রুমে দেখলাম সব বোনেরা বসে আছে। কোন কথা না বলে লিফট দিয়ে নীচে নেমে এলাম। ঐ সময় দেখলাম আমার এক ভাগ্নী রিক্সা করে নামছে সেখানে। খুব স্বাভাবিক ভাবে বললাম – ‘তোমার নানী মারা গেছেন, যাও উপরে।’ আমার মা মারা গেছেন কিন্তু আমার মধ্যে কোন পরিবর্তন নেই। খুবই স্বাবাভিক যেন আমি। আমার ড্রাইভারকে বাড়ীতে পাঠিয়ে দিলাম খবর জানিয়ে।
আবার উপরে ঊঠার জন্যে লিফটের সামনে এসে দাঁড়ালাম। আরও কয়েক জন আমার সাথে দাঁড়িয়ে। দরজা খুলে লিফট-ম্যান বললো পাস দেখান। আমার কোন পাসের বালাই ছিল না। পাস ছাড়াই রাত কাটিয়েছি আমি।
– আমাকে নামতে দেখো নি সকালে?
এই কথাটা বলে সজড়ে একটা চড় কষে দিলাম লিফট-ম্যানের গালে। দেখতে দেখতে বেশ লোক জড় হয়ে গেল সেখানে। বুঝলাম আমাকে এবার ধোলায় করা হবে। আচ্ছা অন্য লোকের মার খেলে কি আমি কাঁদবো? পাশাপাশি অন্য লিফট-গুলি তাদের চালকরা চাবী দিয়ে বন্ধ করে দিল। আমি কথা না বলে এক ভাবে দাঁড়িয়ে আছি যেন লিফট চালু হলে উপরে উঠবো। এই সময় ডাক্তার রেজা সেখানে এসে হাজির হল। সে আস্তে করে অন্যদেরকে জানিয়ে দিল যে এই মাত্র আমার মা মারা গেছে। দেখলাম সবার মনভাবের পরিবর্তন। এমনকি চড় খাওয়া লিফট-ম্যানের চোখেও দেখলাম সহানুভূতির চিহ্ন। আবার অনুভব করলাম পলি-মাটির বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের মন খুব নরম। আর কোন কথা না বলে আমাকে লিফটে নিয়ে চারতলায় আমার মার কাছে পৌঁছে দিল সে।
খোলা ট্রাকে মাকে নিয়ে আমাদের গুলশানের বাড়ীর পথে যাচ্ছি তখন। রাস্তার ঝাকনিতে মার শরীর নড়ে উঠছে দেখে উপুর হয়ে মাকে জড়িয়ে নিলাম আমার বুকের সাথে। ছোটবেলায় এই মা আমাকে বুকে জড়িয়ে কত আদর করে বড় করেছে। এত দিনে কি আমার সময় হল তাকে বুকে নেবার? গুলশানের এই বাড়ীতে মা কখনো থাকেননি। পল্লবীতে বোনের বাড়ীতে জীবনের শেষ দিন গুলি কেটেছে তার। মরার পরে আজ সময় হল আমার মাকে আমার বাড়ীতে আনার।
খবর পেয়ে অনেকে এলো – আত্মীয়, অনাত্মীয়, বন্ধু-বান্ধব, অফিসের সহকর্মী, ইত্যাদি। তাদের বসার জন্যে ভাড়া করা চেয়ার এবং সামিয়ানা টাঙ্গানো হল। বাইরের ঘরে কিছু ভাড়া করা মওলানা সাহেবরা সজোরে কোরান খতম করছেন তখন। মা মারা যাবার কোন বিশেষ অনুভূতি তখনো আমার মনে স্থান করেনি। গুলশান মসজিদে জানাজা পরাবার পর নিয়ে গেলাম বনানী কররস্থানে। মার বড় নাতী আর আমি – আমরা দু’জনে নামলাম কবরে। সবাই ধরাধরি করে মাকে আব্বার কবরের পাশের কবরে শুইয়ে দিলাম।
১৩ বছর আগে এই ভাবে আব্বাকে কবর দিয়েছিলাম আমরা। পরের দিন যখন মাকে আবার নিয়ে এসেছি আব্বার কবর জেয়ারত করতে তখন মায়ের একটা কথা খুব মনে লেগেছিল আমার। আব্বার কবরের দিকে তাকিয়ে মা হঠাৎ বলেছিলেন – ‘তোর বাবা অনেক সৌভাগ্যবান, না হলে এই বনানীতে কবর হবার ভাগ্য কি হত।’ মাকে কিছু না বলে পরের দিনই আমি আব্বার পাশের কবরের স্থানটি মার জন্যে কিনে নিয়েছিলাম। এ কথা আর মাকে বলিনি।
বেশ কিছু দিন পরে আবার আমি মাকে নিয়ে আব্বার কবর জিয়ারত করতে এসেছি। এবার এক দীর্ঘ শ্বাস ফেলে মা বলে ফেললেন তার সুপ্ত ইচ্ছার কথা।
– বাবা, আমার খুব ইচ্ছা ছিল ঠিক তোর বাবার পাশে আমার কবর হবে। কিন্তু তা আর ভাগ্যে হল না।
– কেন মা, এ কথা কেন বলছো?
– তোর বোনদের দিয়ে আমি খোঁজ নিয়েছিলাম। শুনলাম পাশের কবরটা বিক্রি হয়ে গেছে। তোর বাবার সংসারে আমি যখন এসেছিলাম তখন আমার বয়েস মাত্র ১০ বছর। তারপর এই ৫৫টি বছর সে আমাকে যত্নে আগলে নিয়ে রেখেছে। ইচ্ছা ছিল আমার মৃত্যুর পর আবার তার সাথে থাকবো। কিন্তু মানুষের সব ইচ্ছাই কি আর পূরণ হয়।
এবার আর নিজেকে লুকিয়ে রাখতে পারলাম না।
– মা, আব্বার পাশের কবরের জায়গাটা আমিই কিনে রেখেছি সে দিন তোমার ইচ্ছার কথা শোনার পর।
এবার মা আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। মাকে এতো খুশী কখনো দেখিনি।
মার জন্যে জীবনে আমি মাত্র একটা ভাল কাজই করেছি।
দুইবার এসেছে একই মন্তব্য...তাই একটা মুছে দিলাম (সম্পাদিত)
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
সাইফ ভাই,
আপনার মায়ের জন্য রমযানের এই বিকেল বেলায় প্রাণ খুলে দোওয়া করলাম যেন তার আত্মা শান্তিতে থাকে।
আমার মা বেচে আছেন, বাবাও। কিন্তু হাজার হাজার মাইল দূরে। ইচ্ছে থাকলেও সামর্থ নাই কাছে এনে রাখার।
খুব খারাপ লাগছে, খুবই।..... মনে হচ্ছে বড় হওয়াটা আসলে খুবই বড় রকমের লস। (সম্পাদিত)
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
মাহমুদ,
মাকে দো'য়া করার জন্যে অনেক ধন্যবাদ। মা এমনই একটি জিনিস, যতই দিন যায় ততই যেন তাকে বেশী করে মিস করি। আমার নীচের গল্পটা কি পড়েছিলে? 'অলখ আমেরিকা' বইটাতে এই গল্পটা ঢুকিয়েছিলাম।
অপূর্ণ শেষ ইচ্ছা
সাইফ ভাই,
আপনার প্রতিটা লেখাই আমি পড়ি, কোন কোনটাতে মন্তব্য করিনা হয়তো।
গল্পটার সমাপ্তির চেয়ে আপনার বাস্তব জীবনের গল্পের সমাপ্তি ভালো লেগেছে। আপনি আসলেই ভাগ্যবান!
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
কি জানি, মনে হচ্ছে আপনি ভাগ্যবান।
আর মায়ের সংগে দূরত্ব, এতো সব ক্যাডেটের ললাটেই মনে হয় সেটে গেছে।
আবার দূরত্ব নয় হয়তোবা, সম্পর্কটাই এমন আমাদের সবার।
আপনার মার মৃত্যু আর আমার মার মৃত্যুর ব্যাপারগুলো খুব কাছাকাছি। বিছানায় শুয়ে থাকা, রাত জেগে মাকে পাহাড়া দেয়া। মৃত্যু, এর পরে লাশ নিয়ে বাড়ি ফেরা, সব।
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
ফয়েজ,
আসলেই আমি ভাগ্যবান। আমার বাবা এবং মা - দু'জনের মৃত্যুর সময় তাদের সাথে শেষ রাত কাটাবার সূযোগ আমার হয়েছিল। আমার নিজের ভাগ্যে অবশ্য এটা হবে না তা আমি জানি...
True.
আল্লাহ আপনার মাকে বেহেস্ত নসীব করুন।
অনেক ধন্যবাদ, সাকলায়েন।
সাইফ ভাই আপনার বেশিরভাগ লেখাই আমার প্রিয়তে।
লেখক কে প্রিয় তে নেয়ার একটা ব্যাবস্থা থাকা উচিত ছিলো।
চমৎকার একটি লেখার জন্য :boss: :boss: :boss:
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
রাজীব,
এই ভাবে সব সময় প্রসংশা করলে শেষে না আমি আবার 'হাসিনা'-র মত হয়ে যাই।
না ভাইয়া সেই সুযোগ নেই, হাসিনা বা খালেদা হতে পারবেন না। কোনদিন সেরকম কিছু লেখেন, জানিয়ে দিবো দ্বিমত। তর্ক করবো, কিন্তু তালগাছ নিয়ে বসে থাকবো না ভাইয়া।
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
আর হ্যাঁ ভাইয়া ক্যাডেট কলেজ কিছুটা দায়ী। আমরা কেউই আমাদের মানবিক আবেগগুলো সেইভাবে প্রকাশ করতে পারি না।
কিছুদিন আগে পার্কে এক ছেলে আমার মেয়ের সাথে খেলছিলো। বিভিন্ন রাইডে হেল্প করছিলো। জিজ্ঞাসা করলাম নাম কি? কোন ক্লাসে পড়ে? নাম বলল জন, সিক্সে পড়ে। ওর অনেক বাঙালি বন্ধু আছে ক্লাসে তাও বলল। আমি ভেবেছিলাম ঐ ছেলে বড়জোড় থ্রি বা ফোরে পড়ে।
ক্যাডেট কলেজ ভালো না খারাপ সেই কথায় যাবো না কিন্তু আমার মেয়েদেরকে কখনো দিবো না।
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
রাজীব,
ঠিকই বলেছো। ১২ থেকে ১৮ - এই বয়েসটা খুবই প্রভাব ফেলে জীবনে।
"কিন্তু আমার মেয়েদেরকে কখনো দিবো না" - শুধু মেয়েদেরকে দেবে না?
ভাইয়া এখন পর্যন্ত বিয়ে করেছি একটা। সন্তান ২ জন; মেয়ে।
আর বিয়ে করারও ইচ্ছা নাই, বাচ্চা নেবারও ইচ্ছা নাই।
বংশধারা ইত্যাদি ফালতু কথা।
যদিও একটা ভুল বলে ফেলেছি, আমার ইচ্ছা ছিলো চার মেয়ের। চার মেয়ে একসাথে বসে লুডু খেলবে, আর আমরা জয়েন করতে চাইলে মনোপলি।
আমার বউ বলেছে আর না। আর যেহেতু সব কষ্টটাই তার করতে হবে তাই আমিও তার সাথে সহমত হয়েছি।
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
তারমানে তোমার ছেলে থাকলে (এখনও সম্ভাবনা আছে) তাদেরকেও ক্যাডেট কলেজে পড়তে যেতে দিতে না - তাই কি?
না ভাইয়া দিতাম না। আর সেই সম্ভাবনাও নাই, মানে ছেলে হওয়ার।
আর সন্তানই তো নিবো না।
আমার দুই বান্দরই যথেষ্ট।
ক্যাডেট কলেজের প্রতি আমার কোন অনুযোগ নেই।
কিন্তু আমার সন্তানের বড় হয়ে ওঠার সময় আমি পাশে থাকবো না, তাদের আনন্দ- বেদনায় সাথী হবো না তা কি করে হয়!
দুধে-ভাতে থাকুক আর ডালে-ভাতে থাকুক আমার সন্তান থাকবে আমার সাথে।
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
রশীদ করিমের 'মায়ের কাছে যাচ্ছি' উপন্যাসের কথা মনে হলো আপনার লেখাটা পড়ে সাইফ ভাই। এমনি, উপন্যাসের কাহিনীটা এমন ছিলোনা মনে হয়।শুধু 'মায়ের কাছে যাচ্ছি' কথাটার কারণেই।
নূপুর,
যারা পর জীবনে নিশ্চিন্তে বিশ্বাস করে তাদের জন্যে ‘মায়ের কাছে যাচ্ছি’ কথাটা বড় রোমান্টিক হতে পারে। আমার বিশ্বাস যে অতটা শক্ত না...
খুব অকালেই আমার আম্মা চলে গেছেন অন্য জগতে, দেখে যেতে পারেননি ছেলে মেয়েদের চার মহাদেশে ছড়িয়ে বসৎ গড়া, তাদের সাফল্য বা একাকিত্ত। জীবনেও শোনেননি ‘মাদারস ডে’ র নাম, কিন্ত উনার সব ছেলে মেয়েরা স্ন্বরন করে সুখের দিনে তো বটেই সবচেয়ে মনে করে অসুখ,বিশুখ বা যখন কিছুইনা, হটাৎ মন একা হয়ে যায় তখন, মনে মনে কত কথা যে হয়, অন্তস্থল থেকে কামনা হয়, ‘যেখানে আছো, ভালো থেকো মা!’
‘মা’ মানেই কিম্বদন্থি এক ভালোবাসার নাম,
জন্মলগ্নেই যায় যে খুলে এক অতীন্দ্রিয় খাম।
হীরের মত ছোট্ট শিশু মায়ের চোখে জীবন্ত বিস্ময়,
হাসি-কান্নায় স্নেহের দ্যুতি, কি যে মায়াময়।
শিশু যখন হাটতে থাকে জীবন যাত্রাপথে,
মায়ের স্নেহ প্রলেপ লাগায় হোচট খাওয়া ক্ষতে।
কোলাহলের মাঝেও থাকেন, সঙ্গে থাকেন
জীবন যখন একা, ভীষন একা,
কাছে থেকেই স্বপ্ন দেখান, পথটি যখন বাঁকা।
অনেক পরে যখন সে আই-বুড়ো এক ব্যাস্ত মানুষ
গহীন মনে সাজিয়ে রাখে, সেই যে শিশু বেলা।
সময় যেন থমকে থাকে, শুদ্ধ স্মৃতির মেলা।
হটাৎ হটাৎ দুজনারই মনটা কেন এমন করেই টানে,
বারে বারে ফিরতে যে চায় সেই শিকড়ের পানে।
শিকড় ঘিরে মন যে বানায় একটি দুর্গ-ঘর,
সেখানেতে স্মৃতির খেলায় মায়ের সাথে শিশু-যাদুকর।
আসমা খান
আসমা,
আমিও দোয়া করবো তোমার আম্মার আত্মা শান্তিতে থাকুন। ‘যেখানে আছো, ভালো থেকো মা!’
সুন্দর কবিতা।
লেখাটি একটানে পড়ে গেলাম।
খুব নিখুঁতভাবে সেই সময়ের অনুভূতি গুলো যেন দেখতে পেলাম।
এই অনুভূতি আমি চিনি। তবে দুঃখের কষ্টের অনুভূতির মাঝেও মনে হলো আপনি ভাগ্যবান। চলে যাবার আগের সময়টায় মায়ের পাশেই ছিলেন সারারাত ।
জগতের সকল মায়েদের জন্য প্রার্থনা।
আমিন,
কিছু অনুভূতি আছে যেগুলি অনেকটা চিরন্তনী। ঠিকই বলেছো। হ্যাঁ, আমি ভাগ্যবান।
একটি বিষয়ের জন্যে এই বিশ বছর পরেও আমি খুবই অনুতপ্ত। সেই লিফট-ম্যানের কাছে আমি ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আমি আজই সঠিক বুঝতে পারিনি আমার ঐ ব্যবহারের কারণ। কি মনে হয় তোমাদের?
সাইফ ভাই, একটা প্রশ্ন করি - স্বামী-স্ত্রী পাশাপাশি সমাধীস্ত হবার তাৎপর্যটা কি? মৃত্যুর পর এর কি কোন প্রয়োজন থাকে? এই ঝোঁকটা কেন মনে কাজ করে?
আমার বন্ধুয়া বিহনে
রাব্বী,
কি উত্তর শুনতে চাও? আমার কাছে জানতে চাইলে হয়তো বলবো ঝগড়া করার সুবিধা হয় কাছাকাছি থাকলে - 🙂
আমার মৃত্যুর পর আমি বরং ছাই হয়ে মাটির সাথে মিশে যেতে পছন্দ করবো। মৃত্যুর পর যে আরও কিছু আছে সেটা ভাবতে ভাল লাগে, তবে যতই জানছি ততই সেটার সম্ভাবনা কম দেখছি (এর সাথে ধর্মকে আবার মিশিও না)।
আমার মায়ের কি ইচ্ছা কাজ করেছে সেটা আমার জানা নেই। তবে ব্যাপারটার মাঝে একটা রোমান্টিক ভাব আছে স্বীকার করি।
আমার চেনা এক দম্পতি তাদের দাম্পত্যের শেষ পাঁচ বছর স্বেচ্ছায় আলাদা ছিল কোন আনুষ্ঠানিক বিচ্ছেদ ছাড়াই যখন তাদের বয়স ৬৫এর বেশি। বৃদ্ধের মৃত্যুর পর বৃদ্ধা এমন ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন যেন তাদের পাশাপাশি সমাধিস্থ করা না হয়। যদিও বৃদ্ধার মৃত্যুর পর বৃদ্ধের পাশেই তার স্থান হয়েছে। তাই আপনাকে জিজ্ঞেস করলাম।
আমার বন্ধুয়া বিহনে
সাইফ ভাই আপনার মায়ের জন্য প্রাণ খুলে দোওয়া করলাম যেন তার আত্মা শান্তিতে থাকে।
অনেক ধন্যবাদ রমিত।