গতকাল ল্যাবে বসে ঝিমাচ্ছি এমন সময় কেউ একজন খোমাখাতায় নক করে বললো ভাই মির্জাপুরের এক্স ক্যাডেট এক বড়ভাই মারা গেছে জানেন? খবরটা শুনে মন খারাপ হয়ে গেলো। মৃত্যু সংবাদ শুনলেই আমার ভালো লাগে না, তার মাঝে মৃত্যুটা যদি হয় পরিচিত কোন মানুষের সেটা মেনে নেয়া কষ্টেরই। তবে পরিচিত বলে ফেললাম অবলীলায় অথচ তাকে আমি কখনও দেখিনি। তারা যে বছর কলেজ থেকে বের হয়ে গেছেন তার পরের বছর আমরা ঢুকেছি। তারপরেও ভাইয়ার ফেসবুক প্রোফাইলে গিয়ে যখন দুজন মিচুয়াল ফ্রেন্ড দেখলাম অবাক না হয়ে পারলাম না। সেই দুজন শেরপুরের আমার বুয়েটের ক্লাশমেট। ওদের কাছ থেকেই শুনলাম ভাইয়ার কথা। ওরা ভাইয়ার সরাসরি ছাত্র ছিলো। ওদের ইনসপাইরেশনও বটে। শেরপুরে এই মানুষটা অসম্ভব জনপ্রিয় ছিলেন। সোস্যাল একটিভিটিজেও জড়িত ছিলেন।
বুয়েটের মেকানিক্যাল থেকে পাস করলেও সফটওয়ারে তার দক্ষতা ছিলো। জব শুরু করেছিলেন মিলেনিয়াম ইনফরমেশন সলুশনসে, পরে গ্রামীন সলুশন শ বিভিন্ন জায়গায় কাজের পর নিজের স্বউদ্যোগে প্রতিষ্ঠান খুলেছিলেন। ভাইয়া (৮৯-৯৫) ব্যাচ, উনার স্ত্রী ময়মনসিংহ গার্লস ক্যাডেট কলেজের রুকসানা লোপা (৯০-৯৬), রংপুর মেডিক্যাল কলেজের। গতকাল রাতে ( ৯ই নভেম্বর) শেরপুর থেকে ঢাকায় আসার পথে টেকনগর এলাকায় ট্রাকের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষে পড়ে তাদের প্রাইভেট কার। আর তাতেই ঝরে যার দুটি প্রাণ। তবে তাদের শিশুপুত্র নিহাদ এখন সুস্থ আছে।
খবরটা নিয়ে খুব বেশি বড় করে আমার বলার কিছু নেই। তবে কখনও না দেখা ভাইয়া ও আপুর প্রতি অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে প্রার্থনা। সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিদিনই ঘটে। কাছের মানুষের বিদায়ে আমরা আবার নতুন করে ভাবতে শিখি আবার ভুলে যাই। আর কত প্রাণ অকালে ঝরে যাবে সড়ক দুর্ঘটনায়। চার বছরের যে শিশুটি আর কোনদিনই তার মা বাবাকে দেখতে পাবে না তার কথা ভেবে মন আর্দ্র হয়ে যায় বারবার। ব্যাক্তিগত ভাবে আমি তাদের চিনতাম না। তবে অনেক আগে সিসিবিতেই কোন এক ভাইয়ার কমেন্ট বারবার কানে বাজছিল, ” আমরা গাছ থেকে ফুল তোলার সময় যেমন ভালো ফুলটাকে আগে তুলে নেই , খোদাও হয়তো সেরা ফুলটাকে অকালে তুলে নিয়ে যান।”
সিসবির সবার সাথে সংবাদটা শেয়ার করলাম দেশে বিদেশে ভাইয়ার আপনজন শুভানুধ্যায়ীদের কাছে খবরটা পৌঁছে দেবার জন্য।
ভালো থাকুন ভাইয়া ও আপু ওপারে, ভালো থাকুক শিশু নুহাদ !!
কাল খবরটা পেপারে দেখেই খুব ভাল করে প্রথমে নামটা পড়েছিলাম। বুয়েটের যেহেতু চিনতেও পারি ভেবে। এরপর দেখলাম চিনিনা। তখনো একবার মনের মধ্যে মনে হচ্ছিল যে ক্যাডেট কলেজের না তো। সেটাই হল শেষ পর্যন্ত।
ঠিক করেছি আর কারো সাথে পরিচিত হব না। জীবনের দ্বিতীয় অর্ধে এসে এখন প্রায় নিয়মিতই এদিক ওদিকে চেনা পরিচত লোকের চলে যাবার খবর শুনি। ভাল লাগে না। চোখ কান সব বন্ধ করে বসে থাকব।
ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্নাইলাইহি রাজিউন।
বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছি।
মা-বাবা হারানো শিশুটির জন্য ভালবাসা ও শুভকামনা।
চ্যারিটি বিগিনস এট হোম
খবরটা আমি ফেসবুকে দেখেছিলাম। কেন যে এমন খবর পড়তে হয়। লোপার কথা বেশ মনে পড়ছে। বাংলাদেশের রাস্তায় এক জেলা থেকে আরেক জেলায় যেতে সত্যিই খুব ভয় লাগে। দেশে যারা আছেন সাবধানে চলাচল করেন।
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
There's no value of human life in bangladesh anymore.
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্নাইলাইহি রাজিউন।আল্লাহ এর কাছে উনাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি ।
ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজীউন......
ধন্যবাদান্তে,
মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান শাওন
প্রাক্তন ক্যাডেট , সিলেট ক্যাডেট কলেজ, ১৯৯৫-২০০১
["যে আমারে দেখিবারে পায় অসীম ক্ষমায় ভালো মন্দ মিলায়ে সকলি"]
ভালো থাকুন ভাইয়া ও আপু ওপারে, ভালো থাকুক শিশু নুহাদ...
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
আল্লাহ উনাদেরকে বেহেশত নসীব করুন...
আল্লাহ তাদের মৃত আত্মাকে শান্তি দিন। বাচ্চাটার জনয় খারাপ লাগছে।
মনোয়ার ভাই আমাদের এসিস্টেন্ট হাউস প্রিফেক্ট ছিলেন।
কেন জানি ভাইয়ার খাকী ড্রেসের সাথে একতারা সবুজ এপুলেটের চেহারাটাই বারবার মনে পড়তেসে।
ভাই, ভালো থাকবেন।
"আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস"
আমার দেশের বাড়ি শেরপুর হওয়ায় ক্যাডেট কলেজ থেকে পাশ করার পরও বেশ কয়েকবার দেখা হয়েছিল মনোয়ারের সাথে।
প্রাণচঞ্চল এই ছেলেটা দারুণ উদ্যমী ছিল। সবসময় হাসি লেগে থাকা ওর সরল চেহারাটা বারবার মনে পড়ছে।
আল্লাহ ওঁদের দুজনকেই বেহেশ্ত নসীব করুক।
আর নিহাদ বাবা'র জন্য অশেষ ভালবাসা জানাই।
সৈয়দ সাফী
একই কথা শুনেছি উঁনার ছাত্র আমার দুই বন্ধুর কাছেও।
হয়তো এক্স ক্যাডেট রিইউনিয়নে দেখেছি অথবা দেখিনি। যা হোক আর কখনও দেখা হবে না।
আল্লাহ উঁনাদের ভালো রাখুন সবার মতো আমিও বলি।
আমাদের মত বিপ্লবকে যাদের কাছে থেকে চেনার সু্যোগ হয়েছে তারা জানি আমরা কাকে হারালাম। শুধু এইটুকু বলতে পারি আমার ৩৫ বছরের জীবনে এতটা perfect কারও সাথে পরিচয় হয়নি। তার বিনয়, দায়িত্বশীলতা, ধীরস্থিরতা, উদ্যম, সৎসাহস, নেতৃত্বদাদানের ক্ষমতা ছিল চোখে পড়ার মত। আমাদের সমাজকে তার অনেক কিছুই দেওয়ার ছিল, তার সে ক্ষমতা ছিল। ইতি মধ্যে সে তার প্রমাণও দিয়েছে...কিন্তু চলে গেল তার আগেই....আমরা হারালাম আ্মাদের এক প্রিয় বন্ধুকে, ৫ বছরের নুহাদ হারাল তার বাবাকে....জানি, ওর শুন্যতা কেউ পুরন করতে পারবে না।
আমিন, আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ লেখাটির জন্য।
অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া মন্তব্যের জন্য। জানি কাছের বন্ধুকে হারাবার কষ্ট কেমন। আপনাদের জন্য কোন সান্তনাই যথেষ্ট নয়, যেমন যথেষ্ট নয় ভাইয়া আপুর বাবা মা এবং শিশু নুহাদেরও। তারা সারা জীবন বয়ে বেড়াবেন দুটো জীবনের জন্য মনের গভীরে অব্যক্ত কষ্ট।
ভাইয়া আর আপুর জন্য আমরা এখন শুধু প্রার্থনা করতে পারি।