সাভারনামা…

সাভারের ভবনধসের ঘটনা এখন পুরোনো হয়ে গেছে। আজ সেই সময় তোলা কিছু ছবি ফেবু’তে আপলোড করলাম। ছবি দেখে রাজীব ভাই/১৩তম বিসিসি; বললেন “সাভারের উদ্ধারকাজের উপরে একটা লেখা দে”! সাথে সাথে ফেবু বন্ধ করে সেই সময়কার কিছু স্মৃতি নিয়ে আজ লিখলাম। এক বসায় লিখেছি। ভুলভাল হতে পারে।

ভবন ধসে পড়ার পরপরই শাহবাগ গিয়ে রক্ত দিয়ে এসেছি। তবু কেমন যেন ছটফট করছিলাম। আরো কিছু করতে ইচ্ছা হচ্ছিলো। গত ২৬ এপ্রিল রাতে সুদুর সিউল শহর থেকে একটা মেসেজ পাই। প্রেরনকারী দিবস কান্তি দাস। মেসেজের বিষয়বস্তু “দোস্ত, কিছু কাজ করা লাগে সাভারের ভুক্তভোগী মানুষদের জন্য। তুই একটু মাঠ পর্যায়ে খাটতে পারবি?”   ঐ একটা মেসেজ এ যেন সারা শরীরে বিদ্যুত খেলে যায়। সেইরাতেই ছোট ভাই নাঈম রিজভী আর বন্ধু তন্ময়ের সাথে যোগাযোগ করে ঠিক করি যে পরদিন আমরা কিছু টাকা যোগাড় করে আমাদের অসহায় ভাই-বোনদের সাহায্য করতে যাবো। ফেসবুক আর ব্লগের কল্যানে আমাদের মেসেজটা অনেকের কাছে পৌছে যায়। পরদিন সকালে যা হয় তা সবটুকু যে কত গর্বের, কত গৌরবের…কিভবে বোঝাই!! এদেশের মানুষ যে কত ভালোবাসতে জানে সেইদিন শিখলাম। যার কাছে জানিয়েছি সেই সাহায্য করছে। আমাদের বিসিসি’র শৈবাল ভাই, হাফিজ ভাই, সেলিম ভাই, আশিক ভাই; অন্যান্য কলেজের মিকু ভাই, আরো কয়েকজন (এদের কাউকে আগে চিনতাম না; তাই নাম মনে আসছে না) যে যেখান থেকে পারছে সাহায্য পাঠিয়েছে। বিকাশ নম্বরে যে কত ১০০-২০০ টাকা আসছে তার কথা নাইবা বললাম। কাউকে চিনিনা জানিনা, অথচ কতনা আপন। সবাই সবার সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করলো।

কয়েকটা ঘটনা না বলে পারছিনা। কয়েকটা ছেলে, মালিবাগ এ বাসা; কিভাবে তারা খবর পেয়েছে জানিনা। ধনী পরিবারের ছেলে। বিলাসবহুল গাড়িতে চড়ে। অথচ সকাল বেলা সারা এপার্টমেন্টের ফ্লাটগুলো খুঁজে খালি প্লাস্টিক এর বোতল সংগ্রহ করে তাতে ফোটানো পানি নিয়ে এসেছে। যিলানী ও সাইফুল নামে ২টা ছেলে পুরান ঢাকাতে থাকে। তাদের কাছে টাকা নেই। তাঁরা চলে এলো শুধু কাজ করার জন্য। সারাটা দিন-রাত কি যে অমানুষিক পরিশ্রম করলো এই দুইজন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আই ই আর ডিপার্টমেন্টের জারিফা নামে এক আপু তাঁর ব্যাগ তন্নতন্ন করে খুঁজে ৩৩১৬ টাকা’র পুরোটাই আমার হাতে দিলেন। ভবন ধসে পড়ার পর থেকেই আপু’র মন খুব খারাপ ছিলো। কিছু করতে চাচ্ছিলেন। আমাদের দেখে আর দেরী করেননি। আমাদের কে চিনতেননা। জানতেননা। কিন্তু ব্যাগের সব টাকা আমাদের হাতে তুলে দিলেন। জানিনা ক্যাম্পাস থেকে বাসায় উনি কিভাবে গিয়েছেন।  জিজ্ঞেস করতে পারিনি। টাকা দিয়েই খুব দ্রুত তিনি চলে গেলেন। জানিনা কি কারনে আপু’র চোখের কোনে পানি চিকচিক করছিলো! হয়তো অপরিচিত কাউকে চোখের জল দেখাতে চাননি। এদের কাউকে আমি কোনদিন দেখিনি। অথচ সারাজীবন এরা আমার কাছে অনেক আপন হয়ে থাকবে।

আমাদের মশিউর (বিসিসি/২৫), আর ওঁর বন্ধু সুজন নিজে থেকে এলো। দুজনই ছাত্রলীগ’র ক্ষমতাবান নেতা। এই দুজন মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র যে কতটা উপকারে এসেছে তা বলে আমি ওদের আর ছোট করলাম না। কারন আমরা যখন যাই তখন সবচেয়ে জরুরী ছিলো ঔষধ। কি ঔষধ বা কি জিনিসপত্র লাগবে সুজন আর মশিউর না থাকলে আমরা বাকিরা কিছুই বুঝতাম না। মশিউরের ব্যাপারে একটা কথা বলি, GBS নামক এক ভয়াবহ রোগে ২০০৯/১০ এ আক্রান্ত হয়েছিলো। বাকিদের কথা জানিনা, ওকে BSMMU এর ICU তে নেবার পর আমি ওর বাঁচার আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। মৃত্যুঞ্জয়ী এই ছেলেটির মনে মানুষের জন্য অনেক ভালোবাসা! ওদের দুইজনকে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করার মতো বেয়াদব আমি না! তবে, মশিউরের খুব ইচ্ছা কারো লেখালেখিতে ও’র নামটা দেখার। লিখে দিলাম। আশা করি খুশি হবে।

দিবস কান্তি দাস। হাজার মাইল দূরে থেকে আমাদের কে ক্ষনে ক্ষনে উজ্জীবিত করেছে। বারবার ফোন করেছে। “অক্সিজেন লাগবে। নিয়ে যাস কিন্তু! লাজ ফার্মায় যা!” “এয়ার ফ্রেশনার নিছিস?” “ঔষধ নাকি লাগবে?” …“মেডিক্যালের কেউ থাকলে জিগা তো কি কি ঔষধ লাগবে?” আর অনলাইনে পুরোটা সময় আমাদের পক্ষে প্রচার-প্রচারনা চালিয়েছে। দিবস দোস্ত, তোরে তো কিছু বলার নাই। খালি একটা অনুরোধ তুই তাড়াতাড়ি দেশে চলে আয়। দেশের মানুষের প্রতি তোর এত ভালোবাসা! এদেশের মাটি-পানির গন্ধ ছাড়া তুই নিশ্চয়ই অনেক কষ্টে আছিস!

এছাড়া মঞ্জুর (এসসিসি/২৭), তন্ময় (এসসিসি/২৭), রিজভী (এসসিসি/২৯), রায়হান (বিসিসি/২৭), মোহায়মেন, হাবিব… (বাকিদের অনেকের নামটাও জানা হয়নি) সবাই যে কতটা আন্তরিক ভাবে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মানুষের সেবায় এগিয়ে এলো তাতে গর্বে বুক ফুলে ওঠে। যারা ক্লাসমেট তাঁদের সাথে তো ভালো সম্পর্ক ছিলোই। কিন্তু রায়হান আর রিজভী এই দুটি ছেলেকে আমি নতুন করে চিনলাম। এদের সাথে আমার চিরদিনের জন্য আত্মীয়তা হয়ে গিয়েছে। আমরা ক্যাডেট কলেজের যারা তাঁরা না হয় একটা অদৃশ্য বন্ধনে বাঁধা। কিন্তু বাকিরা? তাঁরা কিভাবে মিশে গেলো!! পরে বুঝলাম আমরা সবাই ‘মানুষ’ পরিবারের সদস্য। আমি যেখানে ভেবেছিলাম ৫-৬ জন যাবো হয়ত, সেখানে আমরা শেষ পর্যন্ত সাভারে যাই ২৩ জন। সাভারে কয়েকজন আমাদের সাথে যোগ দেয়ায় শেষমেশ আমরা হই ৩০ জনের ও বেশী।

সারা দেশের মানুষ যে কতোটা ভালো, কতোটা আন্তরিক, কতোটা দেশপ্রেমিক তাঁর পরিচয় সেদিন পেয়েছি। কার্জন হলের সামনে ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিলো। আমরা কয়েকজন ট্রাকে শুকনো খাবার তুলছিলাম। এক রিক্সাচালক কাউকে কিছু না বলে তাঁর রিক্সাটা তালা দিয়ে আমাদের ট্রাকে উঠে গেলেন। একবারো ভাবেননি তিনি কিভাবে মহাজনের ‘জমা’ দেবেন। এরকম রাস্তায় যে আরো কত লোক উঠলো আর উঠতে চাইলো!! জায়গা না থাকায় আমরা সবাইকে নিতেও পারিনি। সুচনা নামে এক সাভারে বসবাসকারী মেয়ে মিরপুর থেকে আমাদের ট্রাকে উঠে পড়ে। একবারও ভাবনি ট্রাকে আরো ২২ টা ‘অপরিচিত’ ছেলে আছে!! আমরা যখনই যা কিনতে গিয়েছি সবাই খালি কেনা দামটা রাখলো। শাহবাগ থেকে কলা কেনার সময় এক কলা বিক্রেতা আমাদের কাছে কেনা দামের’ও কম দাম নিলেন। আবার ১০০ টাকা দিলেন। ঔষধের দোকান থেকে ঔষধের কার্টন নিয়ে রিক্সায় করে ট্রাক পর্যন্ত গেলাম। রিক্সাওয়ালা ভাড়া নিলেননা। উলটো সারাদিনের উপার্জন ১২৬ টাকা আমার হাতে তুলে দিলেন।

সিফাত নামের এক ছেলে ঝালকাঠি সরকারী কলেজের এইচ এস সি পরিক্ষার্থী। আমাকে ফোন করে ছেলেটার সে কি কান্না! তাঁর একটাই আক্ষেপ সে ঢাকায় আসতে পারছেনা। ছেলেটা তাঁর কোন এক ফেসবুক ফ্রেন্ডের কমেন্টে দেখছে যে আমার নম্বরে কেউ সাহায্য পাঠাতে পারে। সে কিছু টাকা জমিয়েছিলো এইচ এস সি’র পর কক্সবাজার যাবে বলে। পুরো টাকা’টা সে পাঠিয়ে দিয়েছে আমার একাউন্টে। ছেলেটা’র ফোন রেখে আমি কিছুক্ষন হাউমাউ করে কেঁদেছি। কেন কেঁদেছি জানিনা!! আমিও কিছুদিন আগে প্ল্যান করেছিলাম সামনের ছুটিতে কয়েকজন মিলে বান্দরবান বা কক্সবাজার যাবো। আজ প্রতিজ্ঞা করলাম ঐ ছেলেটাকে আমি নিজের চোখে দেখতে যাবো। তাকে একবার জড়িয়ে ধরবো। ওঁর বুকের মাঝে ভালোবাসার অনেক বড় একটা সাগর আছে। সে সাগরে অবগাহন না করে কক্সবাজারে গেলে সেটা হবে ওঁর ভালোবাসার চরম অপমান! এই অপমান আমি করতে পারবোনা।

সাভারে যাবার পর যা দেখলাম তাঁর জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না। এতো দুঃখ- এতো মৃত্যু- এতো কান্না সইবার মতো ক্ষমতা আমার ছিলোনা। মৃত্যু তার ধারালো নখর বের করে চারদিকে ঘুরে বেড়াছে। যারা টিভি’তে দেখেছেন কেউ কল্পনা করতে পারবেননা সেখানকার পরিস্থিতি কতোটা ভয়াবহ!!! আটতলা ভবন দেড় তলা সমান উচ্চতা নিয়ে, মৃত্যু’র ভয়াবহতা’র রক্তচক্ষু দেখিয়ে যেন সবাইকে শাসাচ্ছে। জীবন যে কত তুচ্ছ মানুষের কাছে তা সাভারে না গেলে জানতাম না। বিন্দুমাত্র প্রশিক্ষন ছাড়া শুধু ভালোবাসা’র জো্রে সেই মৃত্যুকূপে ঢুকে যাচ্ছে সেচ্ছাসেবকরা। নিজেরা অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে, একটু বিশ্রাম নিয়ে আবার যাচ্ছে সেই গর্তে যেখানে একটু আগেই অসুস্থ হয়ে মারা যেতে বসেছিলো। চোখে পানি চলে আসে এক একটা কাহিনী শুনে। সামান্য স্ক্রু-ড্রাইভার নিয়েও ওনেকে ভেতরে চলে গেছে। যত লাশ এরা দেখেছে, লাশের মাঝে খুঁজে খুঁজে জীবিতদের উদ্ধার করেছে সেই দৃশ্য আমরা কেউ কল্পনাও করতে পারবোনা। একেকটা লাশ নিয়ে বের হবার সময়ও তাঁরা কাদছে, জীবিতদের নিয়ে বের হবার সময়ও কাদঁছে। কাউকে হয়তো চেনেও না। কিন্তু সবাইকে যেভাবেই হোক বাঁচাতে হবে। কাজী নজরুল এর মন্ত্রে সবাই উদ্দীপ্ত। “ কান্ডারী বলো ডুবিছে মানুষ, সন্তান মোর মার”…

ফায়ার সার্ভিস-সেনাবাহিনী কে নিয়ে অনেকে গুজব ছড়িয়েছে। আমি তাদের পায়ে ধরে অনুরোধ করি এই মানুষগুলো’র অকৃত্রিম ভালোবাসার এমন অপমান করবেননা। যুদ্ধক্ষেত্রেও সবখানে আর্মি অফিসাররা যায়না। কিন্তু এখানে যেন কোন শ্রেণী বিভাজন নেই। সবাই শুধু ‘মানুষ’।  সেনাবাহিনীর ও অন্যান্য বাহিনীর লোকজন যে কি অমানুষিক পরিশ্রম করেছে এই ধবংসযজ্ঞে  ;  তা নিজে না দেখলে বিশ্বাস করা অসম্ভব। সাধারন মানুষের মত আবেগ তাঁদেরও আছে। একেকটা লাশ কাধে নিয়ে বের হবার সময় সৈনিকরা অঝোরে কাঁদছে। পরমুহূর্তেই আবার আবেগকে সামাল দিতে হচ্ছে। অনেকে এমনকি সেচ্ছাসেবকরাও অভিযোগ করেছে যে সেনাবাহিনী ভেতরে যাচ্ছেনা। তাঁদের শুধু একটা কথাই বলি; সেনাবাহিনীকে অনেক কিছু ভেবে কাজ করতে হয়। আমাদের কাছে যেটা উচিত মনে হয় তা সব সময়ই ঠিক না। সেনাবাহিনীর জন্য খারাপটা লাগে এই কারনে যে তাদেরও আবেগ আছে, অথচ তাদের সেই আবেগকে গলা টিপে হত্যা করে বাস্তবসম্মত হতে হয়। দুর্যোগ ব্যাবস্থাপনায় সারা পৃথিবীতে আমাদের সেনাবাহিনী নাম করা। তারা যা করে ভেবেচিন্তে ভালো’র জন্যই করে। সালাম জানাই মেজর জেনারেল হাসান সারওয়ারদী কে। ১৯৭১ এ মহান মুক্তিযুদ্ধে অসীম সাহসিকতার পরিচয় দেয়া এই বীর সেনা আজ ৪২ বছর পরেও বীরত্বে বলীয়ান। তিনি নিজে বহুবার ঐ ধসে পড়া মৃত্যুকূপে ঢুকেছেন। যে ধবংসস্তুপ যে কোন সময় আবারো ভেঙ্গে পড়তে পারে; সেখানে ঢোকাকে কি বলবো? উত্তরের জন্য বোকামী ও সাহসিকতার ভেতর বাছাই করা খুব কঠিন।

আরেকটা ধন্যবাদ দিতে হয় এনাম মেডিক্যাল ও অন্যান্য ক্লিনিক-হাসপাতাল গুলোকে। এই প্রসঙ্গে একটা কথা বলা দরকার। আমার বাবা ১৯৯৮ সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে মারা যান। হাসপাতালে নেবার পর অনেকক্ষন তিনি বারান্দায় পড়েছিলেন। প্রায় তিন ঘন্টা পর ডাক্তার এসে জানিয়েছিলো তিনি মারা গেছেন। সেই থেকে আমি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজকে খুব অপছন্দ করতাম। আমি খুব অভিমানী। ১৫ বছর ধরে আমি কিছুটা অবচেতন মনেই সমগ্র ডাক্তার-মেডিক্যাল জাতটাকেই অপছন্দ করতাম। যখন কেউ বলতো ‘চিকিতসায় ভুলে রোগীর মৃত্যু’ আমার মাথায় খুন চাপতো। আমার ভেতরের এই বিষবৃক্ষ কে পুরোপুরি উপরে ফেলেছে এনাম মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল। সেকানকার সকল ছাত্র-ইন্টার্নি-ডাক্তার-নার্স যে কি পরিশ্রম করে চলেছে তা আমার মনে হয় সবাই জানে। নোবেল শান্তি পুরষ্কার কমিটি হয়তো এদের মর্ম বুঝবে না কিন্তু ১৬ কোটি মানুষের মন তারা জিতে নিয়েছে। এই কি বেশী না?

‘বাতাসে লাশের গন্ধ’ কথাটি শুধু কবিতায় পড়েছি। সাভারে গিয়ে বাস্তবে দেখে এলাম। আমরা যখন যাই তখন সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। প্রথমে গেলাম সব হাসপাতালে। সেখানে ঔষধ দিলাম। রোগীদের খাবারের ব্যাবস্থা করলাম। তারপর ঘটনাস্থলে। সেনাবাহিনীতে আমাদের ক্যাডেট কলেজের অনেকেই আছে। সেখানে গিয়ে সিলেটের লেঃ রাশশাদ কে পেলাম। ওর মাধ্যমে সেনাবাহিনী’র ক্যাম্পে খাবার, এয়ার ফ্রেশনার, মেডিক্যাল কিটস পৌছে দিলাম। এরপর এক স্থানীয় লোক আমাদের বললো, “ভাই, আপনাদের তো অনেক খাবার আছে। অনেক মানুষজন ও আছে।আপনারা একটু অধরচন্দ্র স্কুলে যান। ঐখানে মানুষগুলো না খেয়ে আছে। খাবারের ট্রাক নিয়ে অনেকে দাঁড়িয়ে আছে।কিন্তু কেউ খাবার নিতে আসেনা। আপনারা গিয়ে সরাসরি তাঁদের হাতে খাবার তুলে দেন”…  সাথে সাথে রওয়ানা হলাম।

 আমার জীবনের একটা আলাদা অধ্যায় হয়ে থাকবে সেইরাতের অধরচন্দ্র স্কুলের মাঠ। আমরা যখন যাই তখন রাত সাড়ে নয়টা। আমার জীবনে আমি এত করুন দৃশ্য দেখিনি। বিশাল এক মাঠ। যেখানে অন্য সময় শিশু-কিশোর’রা আনন্দ উচ্ছাসে মেতে ওঠে। আজ সেখানে মৃত্যু তাঁর কদর্য রুপ নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তখন বারান্দায় ৬০ জনের লাশ পড়ে আছে। স্বজনহারা মানুষ পাগলের মতো খুঁজে বেড়াচ্ছে। এ এক অদ্ভুত দৃশ্য! আমাদের ট্রাক সহ আরো তিন-চারটা ট্রাক ছিলো মাঠে। সবগুলো খাবারে ভর্তি। মাঠে হাজারখানেক উদভ্রান্ত মানুষ। ৩-৪ দিনের অভুক্ত। কারো ক্ষুধা নেই-তৃষ্ণা নেই। আমাকে যদি কেউ বলে সেই রাতে কয়টা লাশ ছিলো ঐ মাঠে। আমি বলবো হাজারখানেক। কারন স্বজন হারানো মানুষগুলোকে আর যাই হোক জীবিত বলা যায়না। তাঁদের চোখ খোলা। নিশ্বাঃস ওঠানামা করছে… কিন্তু তাঁরা কেউ ‘জীবিত’ ছিলোনা। সবাই খুঁজছে! লাশ খুঁজছে। অপেক্ষা করছে। যে প্রিয় মানুষের জন্য প্রতি রাতে খাবার নিয়ে বসে থাকে; আজ এই মাঠে তাঁর লাশ হয়ে আসবার অপেক্ষা করছে! সবাই খুব মনোযোগ দিয়ে প্রতিটা লাশ দেখছে। কিন্তু সবাই মনে মনে দোয়া করছে ‘আল্লাহ!এই লাশটা যেন না হয়’! যারা সব লাশের মাঝে নিজের স্বজনের লাশ পাচ্ছেনা তাঁরা একই সাথে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছে; আবার দুশ্চিন্তার ছাপ ঠিকই দেখা যাচ্ছে তাঁদের চেহারায়।

প্রচন্ড গরমে লাশগুলো তখন বিকৃত হতে শুরু করেছে। মা-বাবা ছাড়া ঐ লাশ চেনার সামর্থ আর কারো নেই। একটু পর একটা ছোট পিক-আপে করে আরো চারটা লাশ এলো। সমগ্র মাঠের মানুষগুলো হুমড়ি খেয়ে পড়লো। সেনাবাহিনী লাশগুলো’র ছবি তুলে নিচ্ছিলো আর সকল মানুষ পেছনে ধাক্কাধাক্কি করছে। কেন জানেন? লাশের জন্য!!! প্রিয়জনের লাশ ফিরে পেতে এমন ‘যুদ্ধ’ যেন পৃথিবীতে আর কাউকে করতে না হয়। এক একটা লাশের জন্য ৪-৫ জন দাবী করে। সেনাবাহিনী তখন আবার পরীক্ষা করে দেখে। যখন সেনাবাহিনী রায় দেয় যে যিনি দাবী করেছেন লাশটি আসলেই তাঁর স্বজনের। তখন একটু আহাজারী করার সুযোগও মেলেনা। লাশ ছাড়ানোর জন্য কিছু অফিসিয়াল কাজ-কর্ম সারতে হয়। আমি যতক্ষন ছিলাম লাশ ফিরে পেয়ে কাউকে কাঁদতে দেখিনি। বরং স্বস্তি দেখেছি। ‘যাক লাশটা তো পেলাম’! আমার মনে হলো আমি চোখের সামনে দোজখ দেখলাম।

এমন সময় এক বয়স্কলোক আমার দিকে এগিয়ে এলেন। অনেক বয়স্ক। চোখে ছানি পড়া। তাঁর হাতে একটা ছোট পাসপোর্ট সাইজের ছবি। তিনি আমাকে জানালেন তাঁর একটাই মেয়ে। গার্মেন্টসে চাকরী করে। কোন গার্মেন্টস নাম জানেননা। আদৌ রানা প্লাজায় কিনা তাও জানেননা। কিন্তু ঘটনার দিন থেকে নিঁখোজ। তিনি নিজে চোখে দেখেননা। আমাকে অনুরোধ করলেন তাঁর মেয়ের লাশ খুঁজে দিতে। শুনে আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। নতুন আনা চারটি লাশের কাছে গেলাম। প্রত্যেকটা ফুলে উঠেছে। এই অবস্থায় আমি কিভাবে চিনবো!!! তাও পাসপোর্ট সাইজের ছবির সাথে মিলিয়ে! খুঁজে পেলাম না। ভদ্রলোক শুনে শুধু বললেন, “আমি চোখে দেখিনা বলে আমার মেয়ের লাশ অন্য কেউ নিয়ে গেছে”.. কি বলবো? কি সান্তনা দেবো? আমি ঐ লোকের চোখ এড়িয়ে বলতে গেলে পালিয়ে এলাম। ফেরত আসার সময় সারা রাস্তা আমার চোখে ঐ চারটা লাশ ভাসছিলো। রাতে মহসীন হলে গেলাম। গোসল করতে গেলাম। ভয়ে দরজা লাগাতে পারছিলাম না। জানালা’র পাশে শুয়ে ভয় লাগছিলো। বিছানা বদলে শুয়ে দেখলাম। চোখ বন্ধ করতে পারছিলাম না। আমার মাথায় শুধু ঐ ছবি গুলো ভাসছিলো। আজ এতদিন হয়ে গেছে আমার এখনো অন্ধকারে একা থাকতে ভয় লাগে। আমার শুধু মনে হয় ঐ লাশগুলো আমার কাছে জবাব চাইছে; কেন তাঁদের এভাবে মরতে হলো?? কি জবাব দেব? ওরা তো মানুষ না; গার্মেন্টস শ্রমিক। বেঁচে ছিলো এইতো বেশী!!!

সাভারে গিয়ে একটা জিনিস জেনেছি। আমাদের দেশের মানুষ অনেক খাঁটি। এদেশে সব আছে। আমাদের খনিজ সম্পদ নেই তো কি হয়েছে? এদেশের সাধারন ছা-পোষা মানুষগুলোর হৃদয় এক একটা সোনার খনি। আমাদের জ্বালানী নেই? কে বলেছে? এদেশের তরুন সমাজের প্রত্যেকে এক একটা বিদ্যুত স্ফুলিংগ! তারুন্যের এই শক্তিতে জয় আমাদের অবশ্যসম্ভাবী! শুধু একটা ভালো নেতৃত্ব দরকার! একজন মহান নেতা পেলে এই দেশ বহুদুর এগিয়ে যাবে। ওইদিন সকাল থেকে আমার এতবার কান্না পেয়েছে, এত বার কেঁদেছি আর শুধু ভেবেছি এদেশের মানুষের হৃদয় কত বড়। কত খাঁটি। ভালোবাসা কত অকৃত্রিম। আমার শুধু চিতকার করে সবাইকে বলতে ইচ্ছা হচ্ছিলো… দেখো!!! আমাদের দেশ বাংলাদেশ! আমরা পৃথিবী’র সবচেয়ে ধনী দেশ। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সমুদ্র – সবচেয়ে বড় পাহাড় আমাদের দেশের প্রতিটি মানুষের বুকে। পানি’র সাগর নয়, পাথরের পাহাড় নয়;……সবটুকুই ভালোবাসার!!!

৪,৬৬৬ বার দেখা হয়েছে

৩১ টি মন্তব্য : “সাভারনামা…”

  1. শিবলী (১৯৯৮-২০০৪)

    ভাই বিদেশের মাটিতে বসে এরকম দৃশ্য দেখার কষ্ট বলে বোঝান যাবে না । আরো এসেছি চীনে, যেখানে CCTV ছাড়া অন্য কিছু দেখাটাও কল্পনা , আর সেখানে যা দেখায় তা দেখাটাও আর এক যন্ত্রণা ( ভাষার কারনে ) ।
    তারপরো jagobd.com এর কল্যানে কিছু দেখতে পেয়েছিলাম । দূরে বসে অন্য সবার অজান্তে চোখের পানি ফেলা ছাড়া আর কিছুই করতে পারিনি ।

    জবাব দিন
  2. দিবস (২০০২-২০০৮)

    আরেকবার সেই দিনগুলির কথা মনে করায় দিলি।অধরচন্দ্র স্কুলের অবস্থাটা চোখে ভাসালাম, জানি বাস্তবের ১%ও বুঝতে পারলাম না।

    আমরা সব পারি। সবই আছে আমাদের। কোন একজন এসে হালও হয়তো ধরে ফেলবে সব কিছুরই।


    হেরে যাব বলে তো স্বপ্ন দেখি নি

    জবাব দিন
    • মুশফিকুর রহমান তুষার (২০০২-২০০৮)

      দোস্ত, সেই দৃশ্য আর মনে করতেও চাইনা। ঘটনার পর যখন ঘুমাতে পারতাম না... মাঝে মাঝে নিজের ওপর খুব রাগ লাগতো। কেন গিয়েছিলাম ঐ মাঠে? আমি তো আমি... মশিউর আর সুজন; মেডিক্যাল পঞ্চম বর্ষের ছাত্র। লাশকাটা ঘরে গেছে। ওদেরও একই অবস্থা। আসলে লাশ দেখে কারো কিছু হতো না। খারাপ লাগছে স্বজনদের দেখে। এতগুলো 'জীবিত লাশ' দেখার মত মানসিক শক্তি আমাদের কারো ছিলো না।

      আমরা সব পারি। সবই আছে আমাদের। কোন একজন এসে হালও হয়তো ধরে ফেলবে সব কিছুরই।

      :boss: :boss:

      এই একটা আশায়ই বসে আছি। এত শত দেশপ্রেমিক। এদের একজনের নেতৃত্ব হলেই চলবে।


      ছোট হাতি

      জবাব দিন
  3. সামিউল(২০০৪-১০)

    ভাই পড়ে মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল.........
    ওইসময়ে পরীক্ষা, ক্লাস এইগুলার ছুতায় সাভারে যাইনি। কিন্তু আল্লাহ্‌র কাছে অনেক দোয়া করেছি। মাঝে মাঝে উনি আমাদের অনেক পরীক্ষায় ফেলেন।
    আর চাইনা এরকম কোন বিপর্যয়।


    ... কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালবাসে!

    জবাব দিন
  4. তাওসীফ হামীম (০২-০৬)

    তুষার দারুন একটা লেখা পড়লাম। মন ছোয়া। ফেসবুকে ছবি দেখেছি। লেখাটার জন্য ধন্যবাদ। বিদেশে বসে প্রতিক্ষণে শুধু সবার জন্য দোয়া করেছি।


    চাঁদ ও আকাশের মতো আমরাও মিশে গিয়েছিলাম সবুজ গহীন অরণ্যে।

    জবাব দিন
  5. মাহমুদুল (২০০০-০৬)

    বলতে দ্বিধা নেই, আমিও যাইনি। তবে যতটুকু পেরেছি সাহায্য করার চেষ্টা করেছি। তুষার লেখা খুবই ভালো হয়েছে। পড়লে প্রত্যেকটা দৃশ্য চোখে ভেসে উঠে।

    সাভারএর ঘটনায় আমার আক্ষেপ আছে। এই একটা মাত্র ভবন ধ্বসের ফলে যে মানবিক বিপর্যয় হয়েছিল তাতেই আমাদের সরকার কিংবা দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রনালয়ের ব্যবস্থাপনার চেয়ে অব্যবস্থাপনাই চোখে পড়েছে বেশি। যা লাগবে তার প্রায় সবই সাধারণ মানুষকেই যোগান দিতে হয়েছে। আমার প্রশ্ন হলো, হাজার হাজার কোটি টাকার মন্ত্রনালয়ের ভূমিকা কি ছিল? আরো বড় দূর্যোগে কি যে হবে ভেবে গা সিউড়ে উঠছে।

    তোমরা যারা অমানুষিক পরিশ্রম করেছ তাদের সবাইকে স্যালুট। মানবতার জয় হোক।


    মানুষ* হতে চাই। *শর্ত প্রযোজ্য

    জবাব দিন
  6. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    সাভারে গিয়ে একটা জিনিস জেনেছি। আমাদের দেশের মানুষ অনেক খাঁটি। এদেশে সব আছে। আমাদের খনিজ সম্পদ নেই তো কি হয়েছে? এদেশের সাধারন ছা-পোষা মানুষগুলোর হৃদয় এক একটা সোনার খনি। আমাদের জ্বালানী নেই? কে বলেছে? এদেশের তরুন সমাজের প্রত্যেকে এক একটা বিদ্যুত স্ফুলিংগ! তারুন্যের এই শক্তিতে জয় আমাদের অবশ্যসম্ভাবী! শুধু একটা ভালো নেতৃত্ব দরকার! একজন মহান নেতা পেলে এই দেশ বহুদুর এগিয়ে যাবে। ওইদিন সকাল থেকে আমার এতবার কান্না পেয়েছে, এত বার কেঁদেছি আর শুধু ভেবেছি এদেশের মানুষের হৃদয় কত বড়। কত খাঁটি। ভালোবাসা কত অকৃত্রিম। আমার শুধু চিতকার করে সবাইকে বলতে ইচ্ছা হচ্ছিলো… দেখো!!! আমাদের দেশ বাংলাদেশ! আমরা পৃথিবী’র সবচেয়ে ধনী দেশ। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সমুদ্র – সবচেয়ে বড় পাহাড় আমাদের দেশের প্রতিটি মানুষের বুকে। পানি’র সাগর নয়, পাথরের পাহাড় নয়;……সবটুকুই ভালোবাসার!!!


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
    • মুশফিকুর রহমান তুষার (২০০২-২০০৮)

      :hatsoff: :hatsoff: :hatsoff:

      ভাই, ঐদিন যে কি রকম লাগছিলো!! এক একটা অজানা নম্বর থেকে ফোন দেয়...'আমি কিছু টাকা দিতে চাই'...'আমার রুটির দোকান পুরান ঢাকায়...আমি কিছু খাবার দেবো...কই আসবো?'... এত আনন্দ লাগছিলো!! বারবার কান্না আসছিলো। সমগ্রদেশ স্থবির। টিএসসিতে দশ-বারো জন বন্ধু বসে আড্ডা দিচ্ছে। কিন্তু কারো মনে কোন আনন্দ নেই। মুখে হাসি নেই।

      মানানসই না। তবুও একটা কথা বলি। ১৯৭১ সালের বইয়ে পড়েছি বাসের হেল্পার-মাছ ব্যাবসায়ী-ধানমন্ডির ধনীর দুলাল-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সবাই একসাথে যুদ্ধ করেছে। পড়ে খুব ভালো লাগতো। সাথে এটাও ভাবতাম এই বিভিন্ন শ্রেনী-পেশার মানুষ কিভাবে মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়???
      সাভারে গিয়ে বুঝলাম। সত্যেন্দ্রনাথই ঠিক ছিলো...

      কালো আর ধলো বাহিরে কেবল
      ভেতরে সবারই সমান রাঙ্গা


      ছোট হাতি

      জবাব দিন
  7. আমরা পৃথিবী’র সবচেয়ে ধনী দেশ। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সমুদ্র – সবচেয়ে বড় পাহাড় আমাদের দেশের প্রতিটি মানুষের বুকে। পানি’র সাগর নয়, পাথরের পাহাড় নয়;……সবটুকুই ভালোবাসার!!!

    জবাব দিন
  8. ওবায়দুল্লাহ (১৯৮৮-১৯৯৪)
    আমাদের দেশ বাংলাদেশ! আমরা পৃথিবী’র সবচেয়ে ধনী দেশ। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সমুদ্র – সবচেয়ে বড় পাহাড় আমাদের দেশের প্রতিটি মানুষের বুকে। পানি’র সাগর নয়, পাথরের পাহাড় নয়;……সবটুকুই ভালোবাসার!!!
    :clap:

    :boss:


    সৈয়দ সাফী

    জবাব দিন
  9. সুশান্ত (০৩-০৯)

    অনেক দিন ধরে ই একটা খুব খারাপ লাগায় ভুগছিলাম। সেই ঘাঁ টা কিছুটা শুকিয়ে যেতে ই আপনার এই লেখাটা পড়লাম। কিছু টাকা সংগ্রহ করে পাঠিয়ে দেওয়া আর চোখের জল ফেলা ছাড়া তেমন কিছু ই করতে পারি নি। লেখা টা পড়ে তাই শুধু এই চোখের জল ফেলাটা আমাকে স্বস্তির চেয়ে ধিক্কার ই বেশি দিচ্ছে।

    মৃত মানুষ গুলোর আত্মা শান্তি পাক। আর ভুক্তভোগী যারা জীবিত আছেন তারা যেন আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেন এই কামনা করি।

    তুষার ভাই, আপনার লেখাটার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

    জবাব দিন
    • মুশফিকুর রহমান তুষার (২০০২-২০০৮)

      সুশান্ত, কোন সমস্যা না।

      কিছু টাকা সংগ্রহ করে পাঠিয়ে দেওয়া আর চোখের জল ফেলা ছাড়া তেমন কিছু ই করতে পারি নি। লেখা টা পড়ে তাই শুধু এই চোখের জল ফেলাটা আমাকে স্বস্তির চেয়ে ধিক্কার ই বেশি দিচ্ছে।

      এই কথাটাই আসল। চেনা না- জানা না মানুষগুলোর জন্য সাহায্য তুলেছিস। তবুও অতৃপ্তি; কেন আর কিছু করতে পারলাম না!! মানুষের প্রতি এই অকৃত্রিম ভালোবাসাই প্রমান করে আমরা মানুষ।
      আর শাহবাগের গণজাগরন মঞ্চে তোর উপস্থিতির কথাও আমার মনে আছে। :boss: :boss:
      চালায়ে যা!


      ছোট হাতি

      জবাব দিন
  10. রকিব (০১-০৭)

    এই নিয়ে প্রায় চারবার ঘুরে গেলাম এই পোষ্ট দেখে। মন্তব্য দিতে দুর্বার সাহস লাগে, পারিনি জড়ো করতে।

    ভুলে যাচ্ছি... ভুলে যাওয়াটা আমার-আমাদের অভ্যাস-নিয়তি।
    ভুলে যাওয়া যে দায় এড়ানোর সবচেয়ে সহজ উপায়।
    বাতাসে লাশের গন্ধ ভুলে যাচ্ছি,
    হাহাকার ভুলে যাচ্ছি,
    বৃদ্ধ পিতার ভেজা গন্ডদেশ ভুলে যাচ্ছি,
    কংক্রিটে চাপা পড়া হাতের রেখাগুলো ভুলে যাচ্ছি।
    ভুলে যাচ্ছি...


    আমি তবু বলি:
    এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।