কাজী রশীদ ছিল আমার সাথে পাশ করা এক ইঞ্জিনিয়ার। আজই কথা হচ্ছিল তার সাথে। আমি জানতে চাইছিলাম ৪০ বছর আগের বিজয় দিবসের অনুভুতির সাথে তার আজকের অনুভুতি তুলনা। আমাদের প্রজন্ম খুবই সৌভাগ্যবান যে আমরা প্রত্যেকেই আমাদের সাধ্যমত অবদান রাখতে পেরেছিলাম দেশের এবং জাতীর এক ক্রান্তিলগ্নে।
বরিশালের ছেলে রশীদ – এখনো কথা বলার সময় বলে ‘মনু, কেমন আছো তুমি।’ আমার শুনতে ভাল লাগে। আমি সব সময় সেই সব মানুষদেরকে বেশী পছন্দ করি যারা অকৃতিম এবং কোন ‘শো-অফ’ করার চেষ্টা করে না।
আমাদের মধ্যে রশীদ এমনি একজন ছেলে যার সৌভাগ্য হয়েছিল চাক্ষুষ ভাবে দেখা যখন নিয়াজী আত্মসমর্পন-পত্রে সাক্ষর দিচ্ছে তখনকার রেসকোর্স ময়দানে। দিনটি সম্ভবত ১৪ বা ১৫। কানাঘুসা গুজব ছড়াচ্ছে যে ইন্ডিয়ান আর্মি ঢাকার অনেক কাছে চলে এসেছে। বিশেষ করে ভারতীয় বিমান যেদিন আকাশ থেকে ইংরেজী ও উর্দূতে লেখা অনেক লিফলেট ছড়ালো পাকিস্তান আর্মিকে আত্মসমর্পন করার জন্যে – সেদিন থেকে সবাই ধরে নিল মুক্তি আসন্ন। হাটখোলার কাছে থাকতো রশীদ। মেইন রাস্তায় লোকজন নেই, কিন্তু পাশের গলিগুলিতে মানুষ প্রয়োজনে চলাচল করছে। কি একটা কাজে রশীদও বেড়িয়েছিল। তাকিয়ে দেখে সামনে মার্চ করে একদল আর্মি আসছে। সাধারনত মানুষ যা দেখতে চায়, চোখে তাই দেখে। সেখানকার উপস্থিত কিছু মানুষ ধরে নিলো ভারতীয় সৈন্য এসে গেছে এবং এরা তাদেরই অংশ। গলা ফাটিয়ে শ্লোগান দিল – “জয় বাংলা”। হঠাৎ ব্রাশ ফায়ারের শব্দে ভুল বুঝতে পেরে সবাই দৌড়ে পালালো প্রান হাতে নিয়ে। তাদের মধ্যে রশীদও ছিল।
এই ‘অতি সাধারন রশীদ’ যখন তার খোকা মামার (নুরুল আলম – দৈনিক পাকিস্তান অফিসে চাকরি করতেন) কাছ থেকে শুনলো যে এবার সত্যি ভারতীয় আর্মি এসে গেছে এবং রেস কোর্স ও ঢাকা ক্লাবের কাছে তাদেরকে দেখা গেছে তখন মামার সাথে সেও রওয়ানা হল সেদিকে। ১৬ তারিখের বিকেল তখন। ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সটিটিউটের কাছ থেকে হেটে রেস-কোর্সের এক পাশে যেয়ে উপস্থিত হল তারা। তাদের মতই আরো কিছু সাধারন মানুষ ছিল সেখানে। তাদের সংখ্যা খুব বেশী না – হয়তো বা ৩০/৪০ জন হবে। আর বাদবাকী ভারতীয় মিলিটারীতে ভর্তি। সবাইকে মনে হচ্ছে খুব ক্লান্ত এবং অভুক্ত। এক পাশে একটি টেবিল ও দু’টি চেয়ার পাতা – তাদের থেকে মাত্র ১০/১৫ হাত দূরে। সবাই দাঁড়িয়ে আছে। মিলিটারীরা একটা বৃত্যাকার তৈরী করেছে আর তার ঠিক বাইরে দাঁড়িয়ে তারা। এমন সময় সেখানে একটা কিছুটা পুরানো মার্সিডিজ বেইঞ্জ গাড়ীতে করে ভারতীয় জেনারেল (অরোরা) এসে নামলেন। জেনারেলের সাথে তার স্ত্রীও এসেছিলেন। তিনি দাঁড়িয়ে ছিলেন যেহেতু সেখানে তার বসার জন্যে অতিরিক্ত কোন চেয়ার ছিল না। ইন্ডিয়ান আর্মির পাশে পাশে কাদের সিদ্দিকী এবং তার বাহিনীর উপস্থিতি ছিল তখন উল্লেখযোগ্য।
একটু পরে জেনারেল নিয়াজী তার সশস্ত্র বডি-গার্ড সহ সেখানে এলেন। পাশাপাশি দু’টি চেয়ারে দু’জন বসলেন। নির্দেশ পেয়ে জেনারেলের স্টাফ তার হাতে ধরা ফাইল দিলেন অরোরার হাতে। তিনি কাগজটা এগিয়ে দিলেন নিয়াজীর দিকে। একটু চোখ বুলিয়ে স্বাক্ষর করার জন্যে নিয়াজী নিজের বুকের পকেট থেকে হাত ঘসে বের করলেন কলম। সাইন করার সময় মনে হল ‘পাকি-কলম’ থেকে কালি যেন বের হচ্ছে না। অরোরা তার নিজের কলম এগিয়ে দিলেন নিয়াজীর হাতে। স্বাক্ষর করার পর অরোরার ইঙ্গিতে উঠে দাড়ালেন নিয়াজী। এর পর এক এক করে তার বিভিন্ন ব্যাজ ও এপোলেট খুলে টেবিলের উপর রাখলেন। সব শেষে হোলস্টারসহ পিস্তল খুলে আরোরার হাতে তুলে দিলেন। তারপর নিয়াজী তার গার্ডসহ আবার গাড়ীতে উঠে এবার ইন্ডিয়ান আর্মির পাহারায় চলে গেলেন। গাড়ীতে ওঠার ঠিক আগের মুহূর্তে সাধারনের মধ্যে থেকে একজন ‘মার শালারে জুতা মার’ বলে তার পায়ের স্পঞ্জের স্যান্ডেল খুলে ছূড়ে মারলো। ক্রিকেটের বল লুফে নেবার মত একজন সৈনিক ধরে ফেললো সেটি।
রশীদ বহুদিন মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে চাকরি করেছে। বর্তমানে নিউ ইয়র্ক-এ এক নাম করা আমেরিকান কোম্পানীতে চাকরীরত। তার স্বপ্ন চাকরি থেকে অবসর নেবার পর দেশে ফিরে যেয়ে বাকি জীবনটা সে সুখে শান্তিতে কাটাবে। যতদিন তার বাবা-মা বেঁচে ছিল এবং ভাই-বোন মানুষ না হওয়া পর্যন্ত নিয়মিত দেশে টাকা পাঠিয়েছে মরুর দেশে কঠোর পরিশ্রম করে। কিন্তু এখন প্রতিবার সে দেশে যাবার পর মন খারাপ করে ফিরে আসে – ‘মনু, আমার সেই দেশটা কোথায় গেল? কে হাইজ্যাক করে নিল আমাদের সেই বিজয়?’
আখতার মাসুদ (মঞ্জু) ছিল শেরে বাংলা হলে আমার রুম-মেট। আমরা থাকতাম দক্ষিনের ২০৮ নম্বর রুমে। আমার জন্যে নিশ্চয় তখন তাদের অনেক অসুবিধা হত, কিন্তু মুখ ফুটে আমার বন্ধুরা কখনো এ জন্যে আমাকে কিছু বলেনি কখনো। আমার রুমের খালি বিছানাতে অনেক ছাত্র নেতা আপেক্ষিক নিরাপত্তার আশায় ‘৬৮-৬৯’-এর আয়ুব বিরোধী আন্দোলনের সময় রাত কাটাতেন। তাদের মধ্যে ছিল রাশেদ খান মেনন, মোস্তফা জামাল হায়দার, কাজী জাফর আহমেদ, ইত্যাদি।
খুবই ভাল আর্কিটেক্ট ছিল মঞ্জু। ফরিদপুরে ছেলে সে। অসম্ভব ভাল ব্যবহার ছিল তার। কখনো কারও সাথে ঝগড়া বা উচু-কন্ঠে কথা বলতে শুনিনি। ‘৭১-এ সেই তাকেই আর্মিরা ধরে নিল। অনেকদিন বন্ধী হয়ে ছিল। মার খেতে খেতে আর শেষের দিকে আর কষ্ট পেত না, সহ্য হয়ে গিয়েছিল এক ধরনের। এক সাথে প্রায় ৮০ জনকে আটকে রাখা হয়েছিল এক জায়গাতে। প্রত্যেকদিন কয়েকজনকে আলাদা ভাবে ডেকে নিত জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্যে। সবাই ফিরে আসতো না। আটক ৮০ জনের সংখ্যা কমে ৪০-শে দাঁড়িয়ে ছিল যখন তখন সে একরকম জীবনের আশা ছেড়েই দিয়েছিল।
যখন তার সাথে কথা হয় তখন চেষ্টা করে দেখেছি ঐ দুঃসহ দিনগুলির কথা সহজে আর বলতে চায় না। মঞ্জুর ছোট ভাই ভাল চাকরী করতো বিশ্বব্যাংকে। অনেকটা তার চাপাচাপিতে আর ছেলে-মেয়ের ভাল শিক্ষার কথা চিন্তা করে আমেরিকা এসেছিল সে। কিন্তু সব সময় তার মন পড়ে থাকতো দেশের প্রতি। টাঙ্গাইলে তার নিজের পৈত্রিক জমিতে স্কুল খুলেছিল নিজের টাকায়। প্রায় দেশে যাওয়া আসা করে। বর্তমানে দেশে অবস্থান করছে। ফোনে কথা বললাম তার সাথে। জানতে চাইলাম কি হচ্ছে সেখানে এখন।
– খাবলা-খাবলি হচ্ছে। যাদের বেশী আছে তারা আরও বেশী কি করে নেওয়া যায় সেই তালে ব্যস্ত এখন। নাহ, মনে হচ্ছে অরাজকতা আর অব্যবস্থাপনা দিন দিন বেড়েই চলেছে। কাদের নিয়ে হাসিনা দেশ চালাচ্ছে ঠিক আর বুঝিতে পারছিনা। মাঝে মাঝে ভাবি, আজকের এই অবস্থা দেখার জন্যেই কি সেদিন এত কষ্ট সহ্য করেছিলাম?’
আমার দুই প্রকৌশলী বন্ধু আকবর ও নুরুন্নবী। এরা দু’জনেই তখনকার দিনের ছাত্র রাজনীতিতে সক্রিয় অংশ নিয়েছিল। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে এদের এক জন ছিল ছাত্র লীগের দল নেতা ও অন্য জন মস্কো-পন্থী ছাত্র ইউনিয়নের। তখনকার দিনের নিয়ম অনুসারে আমরা ভিন্ন দলের হলেও একে অপরকে সন্মান করতাম। দেশের বৃহত্তর স্বার্থে একসাথে কাধে কাধ মিলিয়ে কাজ করতাম, আন্দোলন করতাম। এখনো আমরা ভাল বন্ধু। আমার এই দুই বন্ধুই সক্রীয় ভাবে দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল।
বীর প্রতীক নুরুন্নবী যখন আর্মিতে লেঃ কর্নেল, তখন এক অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাবার জন্যে তাকে বরখাস্ত করা হল। আমার এই বন্ধু এখনো তার পরিচয় লেখার সময় লেখে লেঃ কর্নেল (বরখাস্ত) নুরুন্নবী, বীর প্রতীক।
সেলুকস – কি বিচিত্র এই দেশ!
আরেকজন মুক্তিযোদ্ধা বন্ধু রওশন ছিল ফৌজদারহাটে আমার রুম-মেট। ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেশ তাকে পুরস্কৃত করেছে। আজও তার বৃদ্ধা মা কাঁদেন তার ছেলের জন্যে। অপেক্ষা করেন, এ জীবনে না হলেও যেন অন্য জীবনে আবার ছেলের সাথে মিলতে পারেন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের জন্যে স্বপ্ন দেখেছিল তার ছেলে – তাই কি তার অপরাধ?
প্রফেসর আহমদ কামাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক। বহুদিনের পরিচয় আমাদের। এক সাথে ছাত্র ইউনিয়ন করতাম আমরা। তার বাবা ছিলেন ফরিদপুরের বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্ব, আদিল উদ্দিন আহমেদ। পাকিস্তান আমলে এমএলএ, মন্ত্রী এবং পরে বাংলাদেশের এমপি। বাবার সাথে কামালের ভাগ্যেও জুটল আর্মির হাতে বন্ধী জীবন। অত্যাচারে তার নার্ভের যে ক্ষতি হয়েছিল তার থেকে এখনো সম্পূর্ণ মুক্ত হতে পারেনি – হয়তো এ জীবনে আর হবে না। শেখ মুজিব খুব সম্মান করতেন তার বাবাকে। ক্ষমতায় এসে পাব্লিক সার্ভিস কমিশনের সদস্য নিযুক্ত করেছিলেন।
প্রফেসর আহমেদ কামালের প্রকাশিত দু’টো বই আছে – ‘The State Against The Nation’ এবং ‘কালের কল্লোল’। অনেক অজানা তথ্য আছে এই বই দু’টিতে। আমরা যেন অনেক কিছুই আজ ভুলে গেছি বা জানতে চাচ্ছি না, ইচ্ছা করে। কামালকে কখনও আমি নিরাস হয়ে দেখিনি। শত বাধা-বিঘ্নের মাঝেও সব সময় দেখেছি হাসি মুখ এবং উজ্জ্বল ভবিশ্যতের প্রতি আশাবাদী। কিন্তু এখন কথা বলে মনে হল কি যেন এক আশংকা তার মনে। হাসিনা যেন ‘বিশেষ দাদাদের’ কথা মত দেশটাকে চালাচ্ছে।
আমি আজ ভাবি, আমার যে দুই চাচা যুদ্ধের সময় বিনা কারনে প্রান বিসর্জন দিলেন তার বিনিময়ে কি অর্জন করলাম আমরা?
বলতে পারি আজ ৪০ বছর পর আমরা এখন বিশ্বের ৭৬তম ধনী রাষ্ট্র। কিন্তু সোনা মিয়ার ভাগ্যে কতটা পরিবর্তন এসেছে এর ফলে? এ জন্যেই কি সোনা মিয়ারা যুদ্ধ করেছিল?
আমরা এখন জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনে সবচেয়ে বেশী সৈন্য প্রেরন করা দেশ। এক কথায় আমরা এখন পৃথিবীতে সব চাইতে সহজলোভ্য ‘মার্সিনারী দল’। এই কি আমরা চেয়েছিলাম?
এটা ঠিক যে রপ্তানিকারক দেশ হিসাবে বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বে ২৭তম, গার্মেন্টস শিল্পে প্রথম। কিন্তু আমাদের এই উন্নতিটুকু কি ‘ব্যালান্সড’ ভাবে হচ্ছে? মোট ‘ভ্যালু এডের’ কতটা পাচ্ছি আমরা? তার মধ্যে কত সামান্য পাচ্ছে ঐ সব শ্রমিকরা যারা ছোট সন্তানকে সারা দিনের জন্যে ফেলে আসছে এই শিল্পে কাজ করতে? কাজের সময়ে এদের সন্তানদেরকে দেখে রাখার জন্যে ঐ শিল্প প্রতিষ্ঠানেই কি একটা ‘ডে-কেয়ার’ জাতীয় ব্যবস্থা করা যায় না?
আমেরিকায় বাস করে আমি কি বাস্তবতাশুন্য হয়ে গেছি? কি ভাবছি আমি? যে খানে আগুন লাগলে সহজে বের হওয়া যায় না, খামোখা পুড়ে মরে শ্রমিকেরা – সেখানে ‘ডে-কেয়ার’ ব্যবস্থা…
মুজিবের সাড়ে ৩ বছর না হয় বাদই দিলাম – অন্তত তিনি সৎ ভাষন দিয়েছিলেন যে – “৩ বছর কিছু দেবার পারবো না।” কিন্তু এর মধ্যে যে আরও ৩৭ বছর পার হয়ে গেছে।
ঠিক আছে, আপাতত না হয় ‘ডে-কেয়ার’-এর স্বপ্ন বাদ দিলাম, তা বলে বিজয় দিবসের সকালে স্মৃতি সৌধে ‘ছাগল আর গরু’-র মারামারি দেখতে হবে? বোমার শব্দে আতংকিত হতে হবে সবাইকে বিজয় দিবসের পরদিনই? আমার বিজয়কে কি হাইজ্যাক করতে চাও?
সেইরকম লেখা। এটাও প্রিঅতে যাবে।
:boss:
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
বীর প্রতীক নুরুন্নবী যখন আর্মিতে লেঃ কর্নেল, তখন এক অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাবার জন্যে তাকে বরখাস্ত করা হল। আমার এই বন্ধু এখনো তার পরিচয় লেখার সময় লেখে লেঃ কর্নেল (বরখাস্ত) নুরুন্নবী, বীর প্রতীক।
উনার ব্যাপারে কি কিছু লিখেছিলেন? না লিখলে লিখেন সময় পেলে।
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
প্রফেসর আহমদ কামাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক।
আমার স্ত্রীর সাথে আমি মাঝে মাঝেই স্যারের ক্লাস করতাম।
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
বলতে পারি আজ ৪০ বছর পর আমরা এখন বিশ্বের ৭৬তম ধনী রাষ্ট্র। কিন্তু সোনা মিয়ার ভাগ্যে কতটা পরিবর্তন এসেছে এর ফলে? এ জন্যেই কি সোনা মিয়ারা যুদ্ধ করেছিল?
আমি এর মধ্যে খারাপ্টাই দেখি ভাইয়া। দেশের মানুষের অবস্থা এতো খারাপ তাইলে ৭৬ হয় কি করে?
উত্তর একটাই সম্পদের পাহাড়ে কিছু মানুষ বসে আছে। আর বাকিরা আস্তাকুড়ে।
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
আমরা এখন জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনে সবচেয়ে বেশী সৈন্য প্রেরন করা দেশ। এক কথায় আমরা এখন পৃথিবীতে সব চাইতে সহজলোভ্য ‘মার্সিনারী দল’। এই কি আমরা চেয়েছিলাম?
অনেক জটিল একটা কথা কি সুন্দরভাবে বললেন। :boss:
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
রাজীব,
অনেক ধন্যবাদ লেখাটা এত ভাল লাগার জন্যে। এখানে একটা কথা উল্লেখ করি আমার 'সোনা মিয়া' কিন্তু সত্যিই ছিল। শুধু নামটা বদল করা। লেখাটার বাংলা রূপান্তর এখনো করা হয়নি।
তবে শুধু বাংলাদেশ না, 'সোনা মিয়া'-কে যদি আমেরিকা, ইউরোপসহ পৃথিবীর সব দেশ 'হিরো' মেনে নিত এবং তার দেখানো পথ অনুসরন করতো - তবে বর্তমান এই অর্থনৈতিক দূর্যোগ হয়তো এড়ানো যেত।
কত কিছু শেখার আছে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে...
সাইদ ভাইয়ের লেখা, বরাবরের মতোই ...... :boss:
পৃথিবী কতো ছোট হয়ে গেছে; স্থানে, কালেও। আজই সকালে 'দেশী'তে স্যারের সাথে আলাপ করলাম ঘণ্টা দুয়েক!! যেমনটি বলছেন, তিনি সদা হাসিমুখ, প্রণবন্ত। বারবার করে আমাদের (মানে আমি আর আমার বউ) তার মেয়ের বাড়িতে যেতে বললেন। তিনি প্রতি বছরই এখানে এসে কিছুদিন থেকে যান। (সম্পাদিত)
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
মাহমুদ,
আসলেই কত ছোট হয়ে গেছে দুনিয়া...
ছাত্র জীবনে যখনই নিউ মার্কেট, বলাকা বা গুলিস্তানে গেছি - তখনই পরিচিত কারও না কারও সাথে দেখা হয়ে যেত। তবে এখন ঘন্টার পর ঘন্টা ওসব স্থানে ঘোরাঘুরি করলেও কেউ চিনবে না বা নাম ধরে ডাকবে না।
এলএ যাবার পথেও আজ কামালের সাথে কথা হয়েছে। জানতাম না তুমি তাকে চেন।
'বরাবরে মতই...' মানে কি? ভাল কথা - তোমার থিসিস-এর কতদূর? আমি কিন্তু অপেক্ষা করে আছি কবে তুমি এবং বন্ধুরা মিলে প্রফেসর ইউনুসের চাইতেও ভাল কিছু করে দেশে গরীবদের ভাগ্য ফেরাবে। আমাকে নিরাশ কোর না কিন্তু।
- মানে আমার খুব পছন্দ হয়েছে 🙂
ভাইয়া, দুইটা কম্প্রিহেন্সিভ এখনো বাকী, তারপর ডিসার্টেশন প্রপোজাল ডিফেন্ড করা লাগবে। তারপর ফিল্ড রিসার্চ...লেখা...ইত্যাদি... আরো কমপক্ষে ২ বছর।
দোওয়া চাই 🙂
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
আমরা উল্টোদিকে হাঁটছি সাইফ ভাই।উল্টোপথে, উল্টোরথে।
ইতিহাসকে তৈরী হতে দেখেছেন আপনারা, তৈরী করেছেন নিজের হাতেও।
আপনাদের দিকনির্দেশনা আমাদের খুব প্রয়োজন।
বিজয়ের মাসে বহুবছরই আর কিছু আলাদাভাবে অনুভব করিনা।
নূপুর,
"আপনাদের দিকনির্দেশনা আমাদের খুব প্রয়োজন।" - কথাটা হয়তো আর প্রযোজ্য না। বিগত ৪০ বছর যারা ক্ষমতার কাছাকাছি ছিল, সে যে দলেরই হোক না কেন - তারা সবই তো আমাদেরই আপনজন - কেউ আত্মীয়, কেউ বা বন্ধু।
আমাদের দিকে আর না চেয়ে, নতুন প্রজন্মের তোমরাই ঠিক করো - কোন দিকে নেবে দেশকে, ছোট হয়ে আসা এই পৃথিবীকে...
হয়তো প্রযোজ্য না সাইফ ভাই। যখন আমাদের সামনে ভ্রষ্ট সিস্টেম আর রাজনীতিবিদদের দেখি আর বিপরীতে আমাদের জেনারশনের (আমি সহ) পলায়নপরতা দেখি, তখন কোন আশাই খুঁজে পাইনা।
ও গুলো ছাগল বা গরু নয়, মাঝামাঝি টাইপের কিছু- যেমন খচ্চর।
অসাধারণ লেখা :boss:
আলীম,
'খচ্চর' জারজ হতে পারে, তবে খুবই শান্ত এবং উপকারী প্রানী। খচ্চরের সাথে তুমি যাদেরকে তুলনা করলে, সেটা শুনলে হয়তো খচ্চর মাইন্ড করতে পারে...
অদ্ভুত তুলনাহীন এই জাতি... নিজের ভাল মন্দও বুঝতে চায় না।
সাইফ ভাই - আপনি সেই প্রজন্মের যারা ঘটনা খুব কাছ থেকে দেখেছেন। আর আপনি তেমন একজন যিনি ঘটনার মধ্যে থাকা অনেককে ব্যক্তিগতভাবে চেনেন। এই বিষয়ে আপনার লেখা তাই একটা বড় সম্পদ। তবে এরকম ঘটনার সাথে জড়িয়ে থাকা অনেককেই দেখেছি কিছু বলতে চাননা। জিজ্ঞেস করলে বলে এখন আর তারা নিজেদের কোন বিতর্কে জড়াতে চান না। বিষয়টা অনেক দুঃখজনক।
আচ্ছা জাপান আর জার্মানী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আমাদের থেকে আরও অনেক ভংগুর অবস্থা থেকে বেড়িয়ে আসতে পেরেছিল। যুদ্ধের পর সাথে সাথেই সমৃদ্ধি না পেলেও অন্তত জাতির মধ্যে আশা এবং স্বপ্ন জেগেছিল। আমরা কেন স্বপ্ন হারিয়ে ফেললাম?
তারপর আশা আছে। মনে করছি আজ যারা খাবলা-খাবলি করছে তাদের পরবর্তী প্রজন্ম আর খাবলা-খাবলিতে আগ্রহ পাবে না। তখন গঠন আর দেওয়ার আ্নন্দে মেতে উঠবে।
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
শান্তা,
তোমার কথাটা যেন ঠিক হয়।
আসলে ব্যাক্তিগতভাবে নতুন প্রজন্মের যত জনকে আমি দেখেছি - তাতে আমিও আশা রাখি। তবে একটা জাতির জীবন থেকে ৪০টা বছর এ ভাবে নস্ট করাটা কি ঠিক ছিল?
যে দল হারবে সে আর পার্লিয়ামেন্টে অংশ নেবে না, সবসময় একে অপরকে দোষ দিয়ে চলবে... এসব আর ভাল লাগে না দেখতে। ভদ্রভাবেও তো অনেক কিছু করা যায়। বুদ্ধিমত্তার জোর না দেখিয়ে, গায়ের জোর দেখাতে হবে কেন এক গনতান্ত্রিক সমাজে? আমরা জন সাধারণ কি এতই অবুঝ?
সত্যি বললে সব সময় কারো না কারো লাগে - তাই তারা বুঝে গেছেন কিছু না বলাই ভাল।
:boss: :boss:
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
Thanks Akash.
অসাধারণ লেখা। :salute: :salute:
প্রেরণা, বুদ্ধিমত্তা, উদ্যম- কোনটাতেই বাঙালীদের ঘাটতি নেই, এটা নিশ্চিত করে বলা যায়। সমস্যাটা যে আসলে কোথায়, এটাই বুঝতে পারলাম না কোনদিন (আদতে মনে হয় এত বেশি সমস্যা যে একারণেই চোখে ধরা পড়ে না ভালোভাবে )
উদ্ভট উটের পিঠে চলেছে স্বদেশ।
@ ওয়াহিদা নূর আফজা আপু,
পরবর্তী পঞ্চাশ বছরে দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বে কে কে থাকবে চোখ বুজে ভাবুন। আর যে নতুন প্রজন্ম আজ দেখছে অমানুষিক, নৃশংস অপরাধ করেও যুদ্ধাপরাধীরা কিভাবে হেসেখেলে বেড়াচ্ছে, ন্যায়বিচারকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বেড়াচ্ছে, সেই প্রজন্মের সামনে নৈতিকতার কোন বাক্য ঠিক উচ্চারণ করা যায়, ভাবতে কষ্ট হয়। "ন্যায়বিচার" কি, তা বোধকরি শুধুমাত্র থিওরেটিকালি জেনেই বড় হচ্ছে তারা।
বড় ভয়ানক সময় দেখি আমি সামনে (খুব দুঃখিত এমন একটা কথা বলে ফেলায়)...
আলোর দিকে তাকাও, ভোগ করো এর রূপ। চক্ষু বোজো এবং আবার দ্যাখো। প্রথমেই তুমি যা দেখেছিলে তা আর নেই,এর পর তুমি যা দেখবে, তা এখনও হয়ে ওঠেনি।
নাফিজ, অন্যায় বা অপরাধের বিচার হতে অসুবিধা কি? কেন হচ্ছে না? তারমানে কি আমাদের দেশে আইনই এমন যে একে ঠেলে ঠেলে এগিয়ে নিতে হয় - এর কোন স্বাভাবিক গতি নেই?
আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা কি জান সবাই সবসময় একদফা নীতিতে চলতে চায়। মনে করে এই দফা পূরন হলেই সব হবে। পূরণ হওয়ার পর দেখা যায় অন্য আরেক জায়গায় আরো বড় সমস্যা হয়ে আছে।
একটা সময় বলা হতো বংগবন্ধু হত্যার বিচার হলে দেশে আইনের শাসন ফিরে আসবে। আমরা কু্লসুম কিম্বা মফিজ আলীর বিচারের কথা ভুলে গিয়ে শুধু বংগবন্ধুর বিচারের জন্য প্রার্থনা করেছিলাম। তারপর একসময় সেই বিচার হলো এবং অবাক হয়ে দেখলাম খুনী বিপ্লব প্রেসিডেন্টের ক্ষমা পেয়ে যাচ্ছে। তাই এখন যুদ্ধোপরাধীদের বিচার চাই। সেই সাথে কুলসুম আর মফিজ আলীদেরও বিচার চাই। নব্বইয়ে এই জাতি সব শক্তি দিয়ে স্বৈরাচার হটিয়ে ছিল। তারপর তাদের নিঃশেষিত শক্তি্র ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে গেল আরেক স্বৈরাচার। এই জাতি উঠে দাঁড়াতে চাইলে কয়েক দফা নিয়ে এগুতে হবে।
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
@আপু...আইন বা বিচার ব্যবস্থা সম্পর্কে ভালো আইডিয়া নেই আমার... তাই চুপ থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ।
একদফা নীতির কথাটা আসলেই ঠিক। আমরা কখনোই একটু দূরদৃষ্টি নিয়ে ভাবি না (সাধারণ মানুষজনের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে)
এদেশে দাবীদাওয়া আসলে ওঠে নেত্রীদের আঙ্গুলের সাথে, আর খানিকটা মিডিয়া হাইপের সাথে। দাবীর মিছিলে যারা যায় তারা বেশিরভাগই নিজেরাও জানে না তাদের দাবীটা আসলে কি...দাবীর উদ্দেশ্যটা কি। সোজা ভাষায়...আমাদের যা বোঝায়, আমরা তাই বুঝি।নেত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার দেশের সবচে বড় সমস্যা, আমরা বলি "ঠিক ঠিক"। মিডিয়া পারসোনা নিয়ে কথা বলে না, তেল গ্যাস নিয়ে কথা বলে না, আমরা তখন বলি "এইগুলো তো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু না, পেপারে দেখলামনা যে ।" আমার বুদ্ধিশুদ্ধি যা বলে, এভাবেই আসলে দেশের দাবীদফাগুলো তৈরী হয়।
যুদ্ধাপরাধ ইস্যুটাও আসলে এই গভমেন্টের একটা পলিটিক্যাল ইস্যু মাত্র। কিন্তু তবুও আমি এই ব্যাপারটার কথাই আলাদা করে লিখেছিলাম, কারণ এই ইস্যুটা আর সবগুলোর চেয়ে "বোধকরি" গুরুত্বপূর্ণ। শুধু অতীতের পাপমোচন না, আরো গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব আছে আমাদের বর্তমানে, ভবিষ্যতে। ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের দাম শোধের ব্যাপার তো আছেই, এইসব রাজাকারদের যদি এখন শাস্তি না হয়, তবে অদূর ভবিষ্যতে এরা আসবে একদিন সিংহাসনে। বায়তুল মোকাররমের সামনে আজকে শোনা যায় "ইসলামী শাসনতন্ত্র কায়েম চাই", কালকে শোনা যাবে "লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান, বানা লেঙ্গে আফগান "।গতকাল শাহবাগে বাস পুড়েছে, কয়দিন পর বাগদাদের মত রাস্তাঘাটে আত্মঘাতী হামলা শুরু হবে। অতীতের ছুঁচোরা হয়ে উঠবে ভবিষ্যতের হিংস্র দানব।এভাবেই ব্যাপারটা আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের সাথে জড়িত, আর সেকারণেই তা আলাদা করে উল্লেখ করা।
আলোর দিকে তাকাও, ভোগ করো এর রূপ। চক্ষু বোজো এবং আবার দ্যাখো। প্রথমেই তুমি যা দেখেছিলে তা আর নেই,এর পর তুমি যা দেখবে, তা এখনও হয়ে ওঠেনি।
নাফিস,
উপরে শান্তার লেখার সাথে আমি সম্পূর্ণ একমত।
আগের দিনে নেতা এবং তার প্রজ্ঞার যতটা প্রয়োজন ছিল ক্রমেই সেটা ক'মে যাচ্ছে 'টেকনোলজি'-র কারনে। এখন যেটা বেশী দরকার সেটা হচ্ছে 'সিস্টেম' ঠিকমত স্থাপন করা। যদি স্বচ্ছ এবং সঠিক বিচার ব্যবস্থা থাকে, তবে আলাদা করে 'যুদ্ধ অপরাধীদের' জন্যে ট্রাইবুনাল করার প্রয়োজন হয় না। যদি ঠিক মত রাস্তা তৈরী হয় এবং সবাই জানে কে কি করতে হবে, তবে রাস্তায় আলাদা পুলিস দেবার দরকার হয় না। বাংলাদেশের মানুষ আর যা হোক সবাই দেশ প্রেমিক। আমেরিকাতে পৃথিবীর নানা দেশের মানুষ বাস করে এবং একই ভাবে সবাই হয়তো দেশ প্রেমিক হতে পারে না - কিন্তু তাতে কোন আসুবিধা হয় না - কারন এখানে আধিকাংশ কিছু 'সিস্টেমের' মধ্যে ফেলে দেওয়া। সবাই জানে আইন সবার জন্যে সমান ভাবে প্রযোজ্য হবে। শুধু ঘুষের কথা টেলিফোনে বলার কারনে এক স্টেটের গভর্নরের ১৪ বছর জেল হয়ে গেল। সে ব্যক্তি আবার প্রেসিডেন্টের পার্টির লোক। এমন 'সিসটেম' বাংলাদেশে স্থাপন করো, দেখবে আলাদা করে যুদ্ধ অপরাধীদের বিচার করতে হবে না।
আমার মাঝে মধ্যে মনে হয়, আমাদের এক এক জনের ব্যক্তি পর্যায়ে কী করার আছে, সেটা ভেবে দেখা উচিত...
গুলশান,
ব্যক্তি পর্যায়ে ভাবা অবশ্যই উচিৎ, তবে সেখানে একটা সীমাবদ্ধতা আছে। পুরানো এক উদাহরন দিই - ধরো আমি ঠিক করলাম - কোন কাজ করতে ঘুস দেব না। আমার টেলিফোন লাইন খারাপ হয়ে গেল। কয়েকবার করে কমপ্লেন করলাম, কিন্তু কোন কাজ হচ্ছে না। একজন অভিজ্ঞ ব্যক্তি জানাল যে সামান্য কিছু টাকা ঘুস দিলে, লাইন চালু হয়ে যাবে। আমি বাধ্য হলাম ঘুস দিতে - চাই আর না চাই।
কিন্তু যখন 'সিস্টেম' এমন থাকবে যে আমি ইন্টারনেটে কমপ্লেন করলে সেটা রেকর্ড হচ্ছে এবং ক্রমানুসারে লাইন ঠিক হচ্ছে - তা হলে আর আমি ঘুস দিতে আগের মত বাধ্য হব না।
যেহেতু আমরা সমাজে বাস করি - সমাজের সবার সচেতনা একটি বড় ব্যাপার।
আমার সাধ্যের মধ্যে কী কী আছে, যা এখনও আমি করছি না? প্রশ্নের উত্তরটা হয়ত একেক জনের জন্য একেক রকম হবে, তবে এই ভাবনাটা সবার থাকা উচিত এবং নিজেদের মধ্যে শেয়ার করা উচিত বলে মনে করি। ঐসময় ঘুষ এড়ানোটা হয়ত আপনার সাধ্যের মধ্যে ছিল না। কিন্তু অন্য কিছু সাধ্যের মধ্যে থাকতেও পারে। আর শেয়ার করার মধ্য দিয়েই সচেতনতা তৈরি হবে, এই আশা করি।
সাইফ ভাই,
রাজনীতি আমার সবচেয়ে আগ্রহের বিষয়। আবার এখন এ নিয়ে কথা বলতে, শুনতে, পড়তে কেমন যেন বীতশ্রদ্ধ হয়ে গেছি। বিরক্তি জন্মে গেছে। হয়তো হতাশাও আছে।
আমাদের '৭১-এর বিজয় হাইজ্যাক হয়ে যায়, আমাদের '৯০-এর বিজয় দুই দল খাবলা খাবলি করে খায়। জানি না আগামীতে আবার কোনো সুযোগ আসবে কিনা।
নতুনদের উপর আস্থা রাখতে চাই। ওদের মধ্যে অনেক ভালো আছে। অনেকে মানুষ ভালোবাসে। তাদের জন্য কাজ করে। আবার ওদের মধ্যেও কালো দেখি। ওরা নারীকে শ্রদ্ধা করতে পারে না। ভোগের বস্তুই মনে করে। ওরা গালে পাকিস্তানের পতাকা আকে। ওদের অনেকে ভিন্নমত সহ্য করতে পারে না। পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না। তবে শেষ পর্যন্ত হতাশা গ্রাস করলেও আলোতেই ভরসা রাখতে চাই।
আপনি ঠিকই বলেছেন, দল না, মানুষ না; বদলাতে হবে ব্যবস্থা। যেটা হবে দলনিরপেক্ষ, ব্যক্তি নিরপেক্ষ। সেটা আবার চাইতে হবে, করতে হবে মানুষকেই; স্বাধীনতা পরবর্তী প্রজন্মকেই। আমরা ওই পরিবর্তনে নতুন প্রজন্মের সঙ্গী হতে চাই।
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
লাবলু,
'রাজনীতি' এই শব্দটাই বাদ দিতে হবে। 'রাজনীতি' মানে 'রাজার নীতি' তাই না? আমরা কি এখনো 'রাজার রাজত্যে' বাস করতে চাই?
খুব ভালো লাগলো, সাইফ ভাই।
crocodile farmer
crocodilefarmer@gmail.com
ধন্যবাদ - মুশতাক।
সাইফ ভাই আপনার লেখাগুলাও আমাদের জন্য বিশাল কিছু। অসম্ভব ভাল লাগে যখন আপনি আমাদের সিসিবিতে লেখেন।
আপনাদের প্রজন্ম কে হিংসা লাগে। একটা দেশ তৈরি হওয়া দেখেছেন এর সাথে যুক্ত ছিলেন। আবার একইসাথে এটাও মনে হয় আপনার কতটা কষ্ট সহ্য করছেন এখন। আমরা বাচ্চা বাচ্চা পোলাপান রাই এখন হতাশ হয়ে বলি কিছু হবে না আমাদের দেশের। আপনারা কিভাবে সহ্য করেন সেটা এত বছর ধরে নিজের সংগ্রামে যারা দেশটা আনলেন এই কথা শুনতে কেমন লাগে আপনাদের।
কামরুল,
এতকিছু সত্ত্বেও কিন্তু আমি আশাবাদী - বিশেষ করে যখন সেই সব সাধারণ, অতি সাধারণ মানুষের অসম্ভব রকম আত্মত্যাগ প্রত্যক্ষ্য করার সূযোগ হয়েছে।
বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ কিন্তু এ পর্যন্ত কোন ভুল সীদ্ধান্ত নেই নি।
অন্য ভাবে বলি কথাটা - চিন্তা করে দেখ - যত দুর্নীতি, অসৎ উপায়ে উপার্যন, অন্যায় ভাবে অন্যের জমি দখল - এগুলি সবই কিন্তু তথাকথিত শিক্ষিত, এবং সমাজের 'গন্য-মান্য' ব্যক্তিদের কাজ। সাধারণ মানুষেরা প্রচুর কষ্ট করে শুধু কিছুটা ভাল ভাবে বেঁচে থাকার জন্যে।
আজ বিবিসিতে শুনছিলাম ঢাকার কিছু বস্তীর অধিবাসীদের কথা। তাদের ত্যাগ এবং তিতিক্ষার কথা শুনে শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে আসে। এই সাধারণ মানুষেরাই আবার পথ দেখাবে - যেমন দেখিয়েছিল '৭১-এ তাদের পূর্বসূরীরা।
আমি আশাবাদী।
::salute::
শরিফ,
:salute:
জিসানের অকাল মৃত্যুতে তোমার আবেগমাখা লেখা পড়ে আমারও খুব খারাপ লেগেছে।
তোমরাই আমাদের ভবিষ্যত - ভুলনা কথাটা।
শুভেচ্ছা রইল। (সম্পাদিত)