ক্লাশ ফোরের ঘটনা। কি এক কারণে আমি কয়েকদিন ক্লাশে অনুপস্থিত থাকার পর একদিন উপস্থিত হয়ে জানতে পারি, আমাদের ক্লাশে নাকি হেভী ধুন্ধুমার এক ভালো ছাত্র এসেছে। সবার মুখে মুখে তখন ঐ একই কথা। আমার খুব কাছের বন্ধু মিল্টন এসে ফিস ফিস করে বললো, “জানিস, নতুন একটা ছেলে এসেছে আমাদের ক্লাশে। প্রচন্ড ভালো ছাত্র। মনে হয় তোর চেয়েও…।“ ক্লাশে তখন আমি সর্ব স্বীকৃত সেরা ছাত্র। এমনিতেই নিজের নতুন প্রতিদ্বন্দী’র কথা জানতে পেরে যথেষ্ট বিরক্ত, তার উপর আমার সাথে তুলনা করায় এবং তুলনায় আমার চেয়ে তাকে একটু এগিয়ে রাখায় মেজাজ কন্ট্রোলে রাখাই দায় হয়ে গেল। মিল্টনকে কিছু না বলে এমন এক দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকালাম যেন, ”কত্ত দেখলাম।” যাহোক, কিছু সময় পর সবার কথিত সেই নতুন বিস্ময় বালকের দেখা মিললো। কাছে গিয়ে ভাব নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, “কি নতুন এসেছো? শুনলাম তুমি নাকি খুব ভাল স্টুডেন্ট? দেখা যাবে কত ভাল।” ছেলেটি উত্তরে ভীষণ বিণয়ী হয়ে অত্যন্ত শুদ্ধ উচ্চারণে বললো, “না-রে ভাই। আমি খুব-ই সাধারণ মাপের ছাত্র।“ কি জানি কি ছিলো সেই কথায়। ভীষণ এক ধাক্কা খেলাম মনে মনে।
ক্লাশ শুরু হলো। স্যার’রা সাধারণতঃ আমার কাছে পড়া জানতে চাইতোনা। তাদের বদ্ধমূল ধারণা ছিল, আমি পড়া না পেরে যাই-ই না। এই ঘটণা বুঝতে পেরে অনেক দিন পড়া তৈরী না করেও নিশ্চিন্তে স্কুলে গিয়েছি। ২য় পিরিয়ডে অন্য ক্লাশের এক স্যার (আমাদের ক্লাশের নিয়মিত বিজ্ঞান স্যারের অনুপস্থিতিতে তিনি ক্লাশ নিতে এসেছিলেন)এসে আমার কাছে পড়া জানতে চাইলেন। আমি দাঁড়িয়ে বললাম যে আমি বিগত কয়েকদিন অনুপস্থিত ছিলাম, তাই পড়া জানতাম না। স্যার আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে বললেন। নতুন সেই বিস্ময় বালকের কাছে যখন পড়া জানতে চাইলেন, তখন দেখলাম সে গরগর করে কি সব জানি বলে দিল। স্যার ওকে “ভেরী গুড” বলে বসতে বললেন। ক্লাশ শেষে বই খুলে দেখলাম ঐ বিস্ময় বালক দাড়ি, কমা, সেমিকোলন সহ মুখস্থ বলেছে। ভিতরে ভিতরে আমি প্রমাদ গুণলাম। এর পরে স্কুলে যত পরীক্ষা হয়েছে, আমি কোন দিন-ই সেই বিস্ময় বালককে অতিক্রম করতে পারিনি। ক্লাশের ১ম পজিশনটা যেন ওর জন্যই নির্ধারিত ছিল।
বিস্ময় বালকটির নাম ছিল ইমন। ভীষণ ভদ্র, লাজুক, বিনয়ী, সাধারণ চালচলন এবং বন্ধু বৎসল। ইমনের লাজুকতার একটা উদাহরণ দেই। কোন একদিন টিফিনের সময় ইমন বাসায় গিয়েছিল। বাসা থেকে ফেরত আসার সময় নামলো ঝুম বৃষ্টি। ওদিকে স্কুলের সময়ও হয়ে যাচ্ছে। কি করবে এখন? ওর ইচ্ছের বিরুদ্ধে ওর বাবার অফিসের গাড়িতে করে ওকে স্কুলে পৌঁছে দেয়া হলো। ইমনকে গাড়ি থেকে নামতে দেখে সবার-তো চোখ ছানাবড়া। মফস্বল শহরে সেই আমলে কেবল মাত্র উচ্চতর চাকুরে ছাড়া অন্য কেউ গাড়ির কথা চিন্তা ও করতে পারতোনা। আর সেই সব চাকুরেদের ছেলে মেয়েদের ভাব স্কুলে ছিল অন্য রকম। ক্লাশের সবাই যখন ইমনকে ঘিড়ে ধরে জানতে চাইলো গাড়ী কার, ইমন তখন লজ্জায় মরে যাচ্ছিল। ওর আচরণে মনে হচ্ছিল, গাড়ীতে স্কুলে এসে ও মস্ত অপরাধ করে ফেলেছে। স্কুলের সবাই অবাক। নতুন এই ছেলেটার বাবার অফিসের গাড়ী আছে, কিন্তু অন্যদের সাথে সে হেঁটে স্কুলে আসে। এ যে অন্যান্য গাড়ীতে আসা ছেলে-মেয়েদের চরিত্রের সাথে একদমই বেমানান। আমি নিজেও খুব অবাক হয়েছি সেদিন। ইমনের মানবীয় গুণাবলীও ছিল প্রচুর। ধীরে ধীরে আমি আমার সব ঈর্ষা ভূলে ইমনের জাদুতে মজে গেলাম।
স্কুলে তখন ক্লাশে টীম ধরে ফুটবল খেলা হতো। সবাই ইমনকে নিজের দলে নেয়ার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ত। স্কুল ছাড়িয়ে পাড়াতেও ইমনের ফ্যান হয়ে গেল সবাই। ইমনদের পাড়ার ক্লাবের হয়ে ফুটবল ও খেলেছে আন্তঃ ক্লাব ফুটবল প্রতিযোগীতায়। একবার কোন এক সংগঠণ কর্তৃক আয়োজিত উপস্থিত বক্তৃতায় অংশগ্রহণ করি আমরা দু’জন। ইমনের টপিক ছিল “বাংলাদেশের প্রধান ফসল”। ঐ দিন দেখলাম ছেলেটার জ্ঞানের গভীরতা। বেশ কিছু প্রজাতির ধানের নাম এবং তাদের চাষ পদ্ধতি আমি ঐদিন-ই ওর মুখে প্রথম শুনলাম। ধীরে ধীরে আমি ইমনকে বস মানা শুরু করলাম।
ক্যাডেট কলেজে সেবার আমাদের জেলা থেকে মাত্র ৩জন চান্স পেয়েছিল। আমাদের আগের ব্যাচ থেকে একজন (মনজুর, যে কলেজে থাকাকালীন আমাদের এস এস সি পরীক্ষার ৩ দিন আগে দূর্ঘটনায় মারা যায়) আর আমি এবং ইমন। কলেজে এসে দেখলাম আমরা ৩ জন আলদা আলাদা ৩ হাউসে। কলেজে এসে ঈমনের অন্য নাম হয়ে গেল এবং আরো ক্ষুরধার হতে থাকলো ওর সব প্রতিভা। না চাইতেও ক্লাশের ডমিন্যান্ট ক্যারেক্টারদের মধ্যে একজন হয়ে গেল ওর স্বভাবজাত গুনাবলী দিয়ে। যত দেখি তত আরো ভাবি, একটা মানুষ কি করে সব দিক থেকে এত উন্নত মানের হতে পারে? গল্প করতে গেলে পুরো ক্লাশ সে মাতিয়ে রাখে। যে কোন আড্ডার মধ্যমণি হতে সময় লাগেনা ওর। আর পড়া লেখার কথা নাইবা বললাম। ডাবল স্ট্যান্ড করা এই ছেলেটি বুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্সে পড়াশোনা শুরু করলো এবং যথারীতি সেখানেও তার জয় যাত্রা অব্যাহত রাখল।
বুয়েট থেকে পাশ করে “থেরাপ” এ জয়েন করেছিল ও। আমার পেশাগত কারণে অনেক দিন পরে পরে যখন ঢাকায় আসতাম, তখন ওর সাথে যোগাযোগ হত। শুনেছিলাম থেরাপেও নিকি ও ভীষণ জনপ্রিয় ছিল সহকর্মী হিসেবে। আমাদের কলেজের বা ব্যাচের গেট-টুগেদার গুলোতে সবসময় ও আসর জমিয়ে রাখতো। গত কয়েক বছর আগে উন্নত একটা সুযোগ পেয়ে আমেরিকা পাড়ি জমায়। ওখানেও নাকি ভালোই করছিলো। আমেরিকায় যাওয়ার পরে দেশের সবার সাথেই একটু কম যোগাযোগ হতো ওর সাথে। এমনকি গ্রুপ মেইলেও। আমেরিকায় আমাদের অন্যান্য ক্লাশমেটরা মিলে ওখানে গেট-টুগেদার করে যখন গ্রুপ মেইলে ছবি আপলোড করতো, তখন সেখানে ওর সদা হাস্যোজ্জল মুখটা দেখা যেত। অবিকল সেই আগের মত-ই।
হঠাৎ সেদিন গ্রুপ মেইলে আমাদের অন্য আরেক ক্লাশমেট মাহবুব এর মেইল পেলাম। মেইলটা পেয়ে আমার মাথা গুলিয়ে গেল। বুকের মধ্যে কেমন যেন করে উঠলো। কি বলে এগুলো? আস্তে আস্তে একে ওকে ফোন করি। সবাই জানালো “সাজ্জাদের ক্যন্সার…এবং একটু খারাপের দিকেই।“ পাঠক, আমার ছোটবেলার স্কুলের সেই ইমন-ই হচ্ছে আমাদের সাজ্জাদ। সবার সাথে কথা বলে মানসিকভাবে প্রচন্ড বিধ্বস্ত হয়ে বসে পড়লাম। চোখ ফেঁটে পানি গড়িয়ে পড়লো। অনেক দিন এত কষ্ট পেয়ে কাঁদিনি।
এত কিছুর পড়েও সেই বিস্ময় বালক তার আচরণ দিয়ে আমাদের আরো বিস্মিত করতে থাকলো। আল্লাহর কাছে ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে এই বলে যে, “আল্লাহ তো আমাকে হঠাৎ মৃত্যু দেয়নি। অন্তত ক্ষমা চাওয়ার সুযোগটুকু তো দিয়েছে।।“ জীবনের প্রতি, সৃষ্টি কর্তার প্রতি এত পজিটিভ একটা মানুষ কি করে হারিয়ে যাবে আমাদের মাঝ থেকে? আমরা কি এটা হতে দিতে পারি? আমাদের কি কোন কিছুই করার নেই? আমরা কি আমাদের সাধ্যমত সবকিছু দিয়ে এই মানুষটিকে আমাদের মাঝে ফিরিয়ে এনে মানবতার ন্যূনতম দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারিনা?
সাজ্জাদের চিকিৎসার জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন। আমরা ক্যাডেটরা অনেক কিছুই পারি। আমরা শুধু এটা কথায় না, কাজেও প্রমাণ করেছি। আপনাদের সবার কাছে আমি হাত জোড় করে আমার বন্ধুর জীবনটা ভিক্ষা চাইছি। প্লিজ আপনারা সবাই যার যার অবস্থান থেকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। সদা হাস্যোজ্জল আমার এই বন্ধুটির মুখে তার নিষ্পাপ হাসিটি ফিরিয়ে দিন। বাংলাদেশের জন্য সাজ্জাদ একটি সম্পদ। দেশের এই মেধাবী সন্তানের কাছ থেকে তার মায়ের এখনো অনেক কিছুই পাওয়ার আছে। প্লিজ আপনারা সবাই আমাদের এই বন্ধুটিকে বাঁচান। প্লিজ…
********************************************************************************
আপনার সহযোগীতার জন্য নীচের যে কারো সাথে যোগাযোগ করুনঃ
http://www.ankur-international.org/sazzad_mostofa_94_cncr.htm
Dhaka:
Monirul (Murad) – 01711505253
Masum – 01729292925
Sydney, Australia –
Razu – (02) 8814 8801 Mob: 0414901137
Fazle Rabbi – 02-87 899 317 Mobile: 0430-120-357
North America –
Mahbub – (651) 845-4062
Sayeem – (408) 480-6760
বাংলাদেশে আমরা সবাই আমাদের ক্লাশমেট মুরাদের একাউন্টে টাকা জমা দিচ্ছি। ওর একাউন্ট নম্বর এখানে দিয়ে দিলাম…
S. M. Monirul Haque
HSBC Account Number : 003-090081-001
Standard Chartered Bank account Number : 18-1102527-01
সাজ্জাদ ভাই এর জন্য যদি কিছু করতে পারতাম তাইলে খুব ভাল লাগত। কি আর করবো ভাই ।ছাত্র মানুষ । লেখা শেয়ার করা ছাড়া আমার আর কিছুই করার নাই ।লেখাটা শেয়ার করলাম ।
দোয়া কইরো ভাই...
প্রকৃতির সাথে যুদ্ধে মানুষের অসহায়ত্ব, সীমাবদ্ধতা মেনে নিতে পারি, কিন্তু মানুষের বিবেকহীনতা মেনে নিতে পারি না। সবাইকে আহ্বান করবো সাজ্জাদের পাশে এসে দাড়ানোর জন্য। আমার কাছে অনেকেই ঢাকার কোন ব্যাংক একাউন্ট আছে কিনা জানতে চেয়েছে। এই তথ্যটি তোর জানা থাকলে একটু জানাস। না জানা থাকলে ঢাকার কারোর সাথে যোগাযোগ করে একটু এখানে জানা।
Mostofa...
Can u call Murad or Masum in Dhaka...
their contacts are as above...
Dhaka:
Monirul (Murad) – 01711505253
Masum – 01729292925
they can help out on this...
ওরা কি আমাদের ব্যাচের, ক্যাডেট কলেজের নাকি বুয়েটের? একটু ধারণা দিলে আলাপে সুবিধে হতো। তবে আমি ওদেরকে ফোন দিবো।
সাজ্জাদ এবং মাসুম দুইজন ই আমাদের ব্যাচের...
আহসান, কোন একটা ব্যাংকে একাউন্ট কি খোলা যায় না? অনেকেই হয়তো ফোনে কথা বলার চেয়ে একাউন্টে গিয়ে টাকা জমা দেয়াতেই বেশী সাচ্ছন্দ্য বোধ করবে।
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
আর যদি একাউন্ট থেকেই থাকে তবে সেটা এখানে লটকিয়ে দাও। ইবিএল, ডাচ, ব্র্যাক এসব ব্যাংকের ব্রাঞ্চ বেশী, টাকা জমা দেয়ার সুবিধা।
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
ফয়েজ ভাই ঠিকই বলেছেন। অনেকেই ফোন করতে চাইবে না হয়তো। আমাদের ব্যাচের সাকিবের জন্য যখন ক্যান্সার চিকিৎসার ফান্ড সংগ্রহ করা হয় তখন ব্যাংক একাউন্ট বেশ কাজে দিয়েছিল দেশে। বিদেশে অংকুরের পেপ্যাল একাউন্ট ঠিক আছে।
সাজ্জাদ ভাইয়ের জন্য সুস্বাস্থ্য এবং শুভকামনা।
আমার বন্ধুয়া বিহনে
ফয়েজ ভাই,
আমরা সবাই আমাদের ক্লাশমেট মুরাদের একাউন্টে জমা দিচ্ছি। ওর একাউন্ট নম্বর এখানে দিয়ে দিলাম...
S. M. Monirul Haque
HSBC Account Number : 003-090081-001
Standard Chartered Bank account Number : 18-1102527-01
আহসান, একাউন্ট ডিটেইল মূল পোস্টে যোগ করে দাও। আর একটা দেশী ব্যাংকে একাউন্ট খুলতে পার, ঢাকা-চিটাগাং ছাড়া এইচ-এস-বি-সি কিংবা স্টান্ট-চার্ট এর অন্য কোনখানে কোন শাখা নেই।
টাকা জমা দেয়ার ব্যাপারটা যতটা পার স্মুথ করে ফেল। ফোন নাম্বার ইম্পর্টেন্ট নয় এখানে, একাউন্ট নাম্বারটাই ইম্পর্টেন্ট
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
ফয়েজ ভাই,
ধন্যবাদ। একাউন্ট খোলার ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের জানিয়ে দেয়া হয়েছে... আমি নম্ব্র জানার সাথে সাথে জানিয়ে দেব ইনশাল্লাহ...
ফয়েজ ভাইয়ের সাথে সহমত। দেশে যেই ব্যাঙ্কের বেশি সংখ্যক শাখা কিংবা এটিম বুথ রয়েছে সেরকম একটি ব্যাঙ্কে একাউন্ট খুলা হলে বেশি কার্যকরী হবে।
ফয়েজ ভাইয়ের সাথে সহমত।
Vaia taratari sustho hya jak ai Allahr kse prarthona.
Only Allah can... /if money is the only key, i believe we can. We just have to communicate the message and collect money in an organized way. 22-24th Dece3mber is MECA reunion. I believe if it i plce roperly can arrange a good amount of fund!!! We can, we just need to do. . .
ভাইয়ার জন্য আমাদের সবার শুভকামনা রইল............।
Sajjad vai ekhon kemon achen? Keu update dile valo lagto.