ক্লাস নাইন ১৯৮০

১ ফেব্রুয়ারী, ১৯৮০।
গতকাল রাত ১২টায় শ্রীমঙ্গল স্টেশন থেকে মেইলে উঠেছিলাম। দ্বিতীয় শ্রেণীর কামরা। সকাল ১০ টায় ট্রেন এসে থামলো চট্টগ্রাম স্টেশনে। আজ জীবনের দ্বিতীয় বারের মতো চট্টগ্রাম নিউ মার্কেটে ঘুরাঘুরি করলাম। ওখানে এসকেলেটার দিয়ে দোতলায় উঠা যায়। আমি কয়েক বার উঠা-নামা করলাম। বিকেল ৪টায় নাভিদের সাথে কলেজে  চলে এলাম। বছরের শুরুতে একমাস উইন্টার ভ্যাকেশন ছিলো। কাল থেকে শুরু হবে নতুন ক্লাসে নতুন জীবন।

২ ফেব্রুয়ারী ’৮০।
সকাল ৭.১০ এ খাজা ঘুম থেকে জাগালো। আজ পিটি নাই। ব্রেক ফাস্টেও পর অডিটোরিয়াম যেতে হলো। চীনা ডেলিগেশন এসেছে।
আজ আমাদের গ্রুপিং হয়ে গেলো। আমি সাইন্স নিলাম। প্রথম বারের মতো সাইন্স রুম এ বসলাম। বাড়ির জন্য মনটা খারাপ লাগলো। বাবা ও মামার চিঠি পেয়েছি কাল। আজ অনেক গুলো চিঠি লিখলাম। বাড়িতে মাকে, লন্ডনে বড় মামা ও বাবার কাছে চিঠি লিখলাম। বাবা লিখেছেন ইংরেজীতে চিঠি লিখতে হবে।

৩ ফেব্রুয়ারী ’৮০।
আজ বোরবার। পিটি নাই। ডিউটি ক্যাডেটের হুইসেল শুনে ঘুম ভাঙলো। ব্রেক ফাস্টের পর গেমস করলাম। বেল্ট সু পলিশ করলাম। আজ সব খানে আলোচনা হচ্ছে, এ বছর থেকে সবার বার্ষিক বেতন বাড়ানো হবে। আমাদের এক এক জন এক এক রকম ফী দিয়ে থাকি। অভিভাবকের বার্ষিক আয়ের উপর নির্ভর করে এ বেতন ঠিক করা হয়। আমার বেতন বছরে ৩৬০০ টাকা। কেউ কেউ ৪২০০ টাকা দেয়। আহমদ দেয় ১৫০০ টাকা। এখন থেকে নাকি সবার বেতন বছরে ৬০০০ টাকা করে দেবে।  এতো টাকা আমার বাবা কি করে দেবেন?

৪ ফেব্রুয়ারী ’৮০।
সোমবার। আজ সপ্তাহ শুরু। সোমবারে প্রিন্সিপালস প্যারেড। সাড়ে ৫টায় ঘুম থেকে উঠে ইস্ত্রি থেকে আসা প্যান্ট শার্ট আর গতকালের ওয়াটার পালিশ করা সু আর মেটাল পালিশ করা বেল্ট পরে প্যারেডের জন্য তৈরী হলাম।
আজ ‘ম‘ আমার সাথে বেইমানী করলো। আমি নতুন ৭টা খাতা তার কাছে রাখতে দিয়ে ছিলাম গত টার্মে। আজ যখন খাতা গুলো চাইলাম, বলে কিনা ও গুলো ফেরত দিয়ে দিয়েছে। ও একটা মিথ্যাবাদী। আমি ওকে উচিৎ শিক্ষা দেবো। অথচ অংক পরীক্ষায় আমি ওকে ৫০ নম্বরের অংক দেখিয়েছি। বেইমান।

৫ ফেব্রুয়ারী ’৮০।
লাঞ্চের পর রেস্ট টাইম। এখন আমরা বেশ সিনিয়ার হয়ে গিয়েছি। এইটের ছেলেরা বিছানায় চিৎ হয়ে শুয়ে আছে। আমরা এখন রেস্ট টাইমে শুই না। আমরা আড্ডায় বসে যাই। আজকে জানতে পারি বেতন বাড়ানোর বিষয়টি চুড়ান- হয়ে গেছে। আমার বাবার শরীর ভালো না। তার উপর ৮/১০ জনের সংসারে একা রোজগারী। আমি বড় ছেলে। বাবা কি বছরে ৬ হাজার টাকা ফী দিতে পারবেন? জানি না।

৬ ফেব্রুয়ারী ’৮০।
৬ হাজার টাকা ফী হওয়ার কারনে যদি বাবা আমাকে কলেজ থেকে তুলে নেন, তবে আবার গিয়ে গ্রামের স্কুলে ভর্তি হতে হবে। ওখান থেকে সহজে  কেউ সেকেন্ড ডিভিশন ও পায় না। আমার রেজাল্ট কি হবে, বুঝতে পারছি না। আমাকে ডাক্তার হতেই হবে। ডাক্তারী পরিক্ষায় চান্স পেতে হলে আমাকে যে এখানেই থাকতে হবে। কিছু বুঝতে পারছি না।
আজ প্রথম বায়োলজী ক্লাস হলো। মিস্টার মাহবুব খুব সুন্দর করে পৃথিবী ও মানব সৃষ্টির কাহিনী শোনালেন। বায়োলজী আমাকে খুব টানছে।

৭ ফেব্রুয়ারী ’৮০।
আজ নতুন কেমিস্ট্রি টিচারের সাথে পরিচয় হয়। তাঁর নাম মিস্টার আসাদুজ্জামান। স্যার খুব রসিক।
আজ ব্লাক মাংকি আমার সাথে ঝগড়া করলো।
কলেজ ম্যাগাজিনের জন্য লেখা আহবান করা হয়েছে। গতকালের মিস্টার মাহবুবের লেকচার থেকে যা নোট নিয়ে ছিলাম, তা নিয়ে লিখলাম ‘পৃথিবী, জীবন ও জীব সৃস্টির আদি কথা।’ মিস্টার মাহবুবকে দেখিয়ে ওটা জমা দেবো।

৮ ফেব্রুয়ারী ’৮০।
আজ শুক্রবার। হাউজ মাস্টার্স ইনস্‌পেকশন। ডিনারের আগে হয়ে গেলো। তাড়াহুড়ো করে কাবার্ড গুছালাম। ডিনারের পর প্রেপ এ যেতে হলো। আজ প্রেপ করতে ইচ্ছা হচ্ছিলো না। কিন’ উপায় নাই। যেতে তো হবেই। ‘ম‘ র কাছে আমার খাতা ফেরত চাইলাম। বলে- দেবে না। ওগুলো নাকি ওর। আমি প্রতিশোধ নেবো।

৯ ফেব্রুয়ারী ’৮০।
খুব শীত পড়েছে। ৫-৪০ এ পিটির ঘন্টা পড়ে। চোখ খুলতে পারি না। চোখ বন্ধ রেখে ব্রাশে পেস্ট লাগিয়ে বাথরুমে দৌড়াই। আজ পিটি হলো অন্ধকারের মধ্যে। পিটির পর গোছল করে ব্রেকফাস্টের জন্য যখন লাইনে দাঁড়িয়েছি, তখন সূর্য উঠলো।
আজ শনিবার। রাতে প্রেপ নাই। শনিবারে সিনেমা দেখানো হয়। কিন’ আজ হলো না। মিস্টার ফায়জুল হাসান সিনেমার চার্জে। পোলাপান তার উপর ক্ষেপে আছে।
সিনেমা না হবার কারনে রাতে ডিনারের পর দুই ঘন্টা সময় পাওয়া গেলো। অংক করতে বসে গেলাম। গত বছরের রেজাল্ট ভালো হয়নি। এবার ভালো করতেই হবে।
বাড়ির কথা মনে পড়ছে। আমার ছোট ভাইটির বয়স ৪ হলো। সারাক্ষণ ভাইয়া ভাইয়া ডাকতো। এখন নিশ্চয়ই কাউকে ভাইয়া ডাকতে পারছে না।

১০ ফেব্রুয়ারী ’৮০।
আজ রোব বার। পিটি নেই। ৭টা পর্যন- ঘুমানো যায়। আহ্‌ কী মজা! ব্রেক ফাস্টের পর গেমসে গেলাম, কিন’ বেশী ক্ষণ খেলতে পারলাম না। গার্ডেনিং এর জন্য ডাকা হলো। কোদাল দিয়ে মাটি কেটে বেড বানাতে হবে। হাউজে এসে দেখি রুম চেঞ্জের নোটিশ। রুম চেঞ্জ হলো। ১৮ নং রুমে ছিলাম। এখন এলাম ১৩ নং রুমে। আমাকে এসিসট্যান্ট রুম প্রিকেক্ট করা হলো।
রাতে প্রেপ করতে খুব বোরিং লাগে।

১১ ফেব্রুয়ারী ’৮০।
আজ অনেক গুলো মজার ঘটনা ঘটলো। আজ তিনটা স্ট্রাইপের এপুলেট পেলাম। খাকি ড্রেসের সাথে তিন এপুলেট লাগিয়ে জীবনের প্রথম ক্লাসে যাওয়া।
প্রিন্সিপাল্‌স প্যারেডে আমাদের শহীদুল্লাহ হাউজ থার্ড হয়। জুনিয়ার হাউজ প্রিফেক্ট সালেক ভাই আমাদের ক্লাসের ১৩ জনকে ডেকে ড্রেনে নামালেন। বললেন – আমাদের ঢিলেমির জন্য নাকি হাউজ থার্ড হয়েছে। জুনিয়াররা দেখলো কিনা টের পাইনি। অবশ্য এ সময় তারা শুয়েছিল।

১২ফেব্রুয়ারী ’৮০।
আগামী শনিবার নাকি ‘সূর্য গ্রহণ‘ হবে। পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিজ্ঞানীরা ভারতে এসে গেছেন।
আমার লাইব্রেরী কার্ড হারিয়ে গেছে। মিস্টার আক্কাস আলীর কাছে এপ্লিকেশন দিলাম। কিন’ তিনি জানান – আমার কার্ড হবে না।

১৩ ফেব্রুয়ারী ’৮০।
আজ শুরু হয়েছে ইন্টার হাউজ ক্রিকেট কম্পিটিশন। প্রথম দিনের খেলায় নজরুল হাউজ রবীন্দ্র হাউজকে হারায়। বিকেলে আমাদের শহীদুল্লাহ হাউজের সাথে ফজলুল হক হাউজের খেলা হবার কথা ছিলো। কিন’ বল না থাকার কারণে খেলা হয়নি। প্রেয়ার টাইমে ইরফান ৫টাকার কুপন দিলো। ১ টাকা হাসান নিয়ে গেলো। ইরফান আমাকে দুইটা ফান্টা খাওয়ানোর কথা ছিলো। ফান্টার পরিবর্তে টাকা দিয়ে দিলো।
আজ শুয়েবের চিঠি পেলাম।

১৪ ফেব্রুয়ারী ৮০।
আজ নতুন ক্লাসের সব বই পাওয়া গেলো। বই গুলো পেয়ে মলাট লাগিয়ে নাম লিখলাম সবগুলোর উপর। অনেক কাজ করলাম। ক্রিকেট খেলা দেখা কম্পালসারী ছিলো না, অপশোনাল ছিলো, তাই হাউজে সময় কাটিয়ে দিলাম।
শনিবারে সূর্য গ্রহণ হবে। সবাইকে সাবধান থাকতে হবে। বাড়ির জন্য চিন-া করছি। বাড়িতে খবর পাঠাই কি করে? এখন চিঠি  লিখলে শনিবারের আগে তো পাবে না। বাড়িতে ওরা যদি সূর্যের দিকে তাকায়, তবে তাদেও রেটিনা নস্ট হয়ে যেতে পারে।
সুয়েব, কাশেম ভাই, সুয়াই ভাই, বাবুল ভাই ও ছানুর কাছে চিঠি লিখলাম।

১৫ ফেব্রুয়ারী ’৮০।
৮২ বছর পর আগামী কাল বাংলাদেশ সূর্যকে পূর্ণগ্রাস করবে। আমার খুব দেখতে ইচ্ছা হচ্ছে, গ্রাস করা সূর্যকে। কিন’ জানি, তাকানো যাবে না। মাহবুব ভাই এক্সরে প্লেট নিয়ে এসেছেন। ওটার ভেতর দিয়ে দেখবেন। খালি চোখে তাকালে রেটিনা নস্ট হয়ে অন্ধ হয়ে যেতে পারে। জানি না এ সব কথা বাড়ির লোকজন জানে কিনা।
আজ ৫ রানে রবীন্দ্র হাউজের সাথে আমরা হেরে যাই। রাতে ‘সূর্য কণ্যা‘ ছবিটি দেখানো হলো। ছবিটি পুরোপুরি বুঝতে পারিনি। তবে ছবিটা নিয়ে অনেকক্ষণ চিনত্মা করেছি।

১৬ ফেব্রুয়ারী ’৮০।
আজ ৩টা ১৬ মিনিটের সময় সূর্য গ্রহণ হয়। আমাদেরকে রুমের ভেতর শুইয়ে রেখে জানলা গুলো কালো কম্বল দিয়ে ঢেকে রাখতে বলা হয়। আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। দেখতে পারিনি। বড়ো আফসোস হচ্ছে। কেউ কেউ এক্সরে প্লেট লাগিয়ে দেখেছে। রাতে টেলিভিশন খবরে সূর্য গ্রহন দেখলাম। বাড়ির জন্য চিন-া হচ্ছে। না জানি তারা কি করছে। কেউ কি তাকিয়ে ছিলো?

১৭ ফেব্রুয়ারী ’৮০।
আজ রোববার। ব্রেক ফাস্টের পর ক্রিকেট ব্যাট নিয়ে মাঠে ক্রিকেট খেলতে গেলাম। জীবনের প্রথমবারের মতো ক্রিকেট ব্যাট হাতে ধরা।
আজ শাহানা নামক একটা মেয়েকে পত্র মিতালীর জন্য চিঠি লিখলাম। বিচিত্রার ব্যক্তিগত বিজ্ঞাপনে মেয়েটির ঠিকানা পেলাম।

১৮ ফেব্রুয়ারী ’৮০।
আজ সোমবার। প্রিন্সিপাল্‌স প্যারেড। কিন’ প্যারেড হলো না। পিটি হলো। সকালে খুব বৃষ্টি ছিলো । জিমনেশিয়াম থেকে নিজের টেবিল ও চেয়ার বৃষ্টির মধ্যে মাথায় করে একাডেমিক ব্লকে নিয়ে আসি।

২০ ফেব্রুয়ারী ’৮০।
আজ অনেক দিন পর বাবার কাছ থেকে চিঠি পেলাম। মালোয়েশিয়ার পেনাং থেকে লিখেছেন। ক্রস কান্ট্রি রেসের প্র্যাকটিস শুরু হয়ে গেছে। হাউজ গুলোর পেছনে ৩টা পাহাড়। ওগুলো ক্রস করে প্রায় ৩ মাইলের মতো পথ দৌড়ে ক্রস করা। দম বেরিয়ে যায়। আগের বার অনেক পেছনে ছিলাম। এবার ইনশাআল্লাহ ৩০ এর মধ্যে থাকবো। এবার আমরা ইন্টার মিডিয়েট গ্রুপ।

২১ ফেব্রুয়ারী ’৮০।
৫ টায় ঘুম থেকে উঠা। ৫-৫০ এ প্রভাত ফেরী শুরু হলো। আজ ক্লাস এইটের সবগুলো ছেলেকে ব্রেক ফাস্টের পর রুমে ডাকলাম। লাইন করে দাঁড়িয়ে আধঘন্টা পানিশমেন্ট দিলাম। প্রভাত ফেরীতে ওদেরকে বারবার বলেছিলাম ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো‘ গানটি জোরে জোরে গাইতে হবে। আমার কথা শুনেনি তারা- এ জন্য এই পানিশমেন্ট।
আজ ছুটির দিন। তাই লাঞ্চের আগ পর্যন- গার্ডেনিং করতে হলো। গার্ডেনিং করার সময় তাজুল ওস-াদ (হাবিলদার ) এসে রায়হানকে নিয়ে গেলো। কিছুক্ষণ পর রায়হান ইভনিং ড্রেস পরে ঢাকায় চলে গেলো। ওর বাবার নাকি শরীর খারাপ।
বাবার চিঠির জবাব দিতে হবে। পোস্ট অফিস থেকে এয়ার লেটার কিনতে হবে। কিন’ আমার কাছে তো এয়ার লেটার কেনার পয়সা নাই। কি করি!

২২ ফেব্রুয়ারী ’৮০।
ক্রস কান্ট্রি প্র্যাকটিসের সময় সবচেয়ে উঁচু পাহাড়ের উচুঁ শৃঙ্গে উঠলাম। জুনিয়ার গ্রুপে থাকার সময় আমাদের পাহাড় চড়তে হতো না। তবে ওতো উঁচুতে ওখানে কেউ যায় না। আমি গেলাম। উপর থেকে ক্যাম্পাসকে দেখবো বলে। আমাদের কলেজের বিল্ডিং গুলোকে খুব ছোট ছোট কুড়ে ঘর বলে মনে হলো। একটু সামনেই বঙ্গপোসাগর। তার সামনে, বেশ দূরে কত গুলো গাছ দেখা যায়। এটা কোনো দ্বীপ হবে নি:সন্দেহে। পাহাড় থেকে সমুদ্র দেখা খুব আনন্দের। আমার যদি একটা ক্যামেরা থাকতো, আমি খুব সুন্দর ছবি তুলতে পারতাম। একটা ছবি আঁকার ইচ্ছা হচ্ছে। ওয়াটার কালার।  এ রকম একটা ইচ্ছা হয়েছিল গত বছর রাঙামাটিতে। আমাদের কলেজ পিকনিকের সময় মিস্টার ভূইয়াকে দেখেছি বসে বসে ছবি এঁকেছেন।
২৩ ফেব্রুয়ারী ’৮০।
আজ ছিলো ক্রস কান্ট্রি রেস।ইন্টারমিডিয়েট গ্রুপে নাইন টেন মিলে দুই ক্লাসে ১০০ জনের মত ক্যাডেট। পার্টিসিপেট করেছে ৯২জন। আমি থার্টিনথ হলাম। অনেক উন্নতি হয়েছে আমার। আগের বছর জুনিয়ার গ্রুপে ছিলাম। সেখানেও ৯০জনের মধ্যে আমি হয়েছিলাম ফিফটি নাইনথ। এবার আমার এই উন্নতিতে আমি খুব খুশি। বিকেলে খুব ক্লানি- লেগেছিল। পা গুলো ব্যাথায় নাড়ানো যাচ্ছে না।
আজ হাসান ক্যান্টিনে চারটাকা খাওয়ালো।

২৪ ফেব্রুয়ারী ’৮০।
আজ মাসের শেষ রোববার। প্যারেন্টস ডে। মনে মনে ভেবেছিলাম আমার কেউ হয়তো আসতে পারেন। না কেউ এলেন না। কে ই বা আসবে? প্যারেন্টস ডে তে প্যারেড গ্রাউন্ড ভরে যায় গাড়িতে। ক্যাডেটদের বাবা মা গাড়ি করে আসেন। কত রকমের খাবার নিয়ে আসেন। গাড়িতে বসে বসে ছেলেরা খায়। আমি তাকাইনা। আমার অভ্যাস হয়ে গেছে। আমি প্রায়ই প্যারেন্টস ডে তে রুম থেকে বেরোই না।
আজ খবর পেলাম রায়হানের বাবা গত ২০ তারিখেই মারা গিয়েছিলেন। তিনি ব্যারিস্টার ছিলেন।

২৫ ফেব্রুয়ারী ৮০।
আজ থেকে ডাইনিং এ খাবার মেনু বদলে গেছে। এখন থেকে সপ্তাহে ৩দিন নাকি চাপাতি দেয়া হবে। এমনিতে বেতন বেড়েছে, তার উপর খাবারের এই মান! অসহ্য!

২৬ ফেব্রুয়ারী ’৮০।
আজ ইন্টার হাউজ হকি ম্যাচে আমাদের হাউজ নজরুল হাউজের কাছে ৩-০ গোলে পরাজিত হয়। ফজলুল হক হাউজ আর রবীন্দ্র হাউজের ম্যাচের সময় হাউজে চলে এসে ১৮ নং রুমে মোজা দিয়ে বল বানিয়ে আমি আর গিয়াস উদ্দিন ক্রিকেট খেলি। একটা ভাঙা মশারি স্ট্যান্ড রুমে ছিলো। ওটা দিয়ে ব্যাটের কাজ হলো।

২৭  ফেব্রুয়ারী ’৮০।
হাউজ মাস্টার মিস্টার জামান রায়হানকে নিয়ে রেস্ট টাইমে হাউজে এলেন। রায়হান আমার রুমমেট। খুব শক্ত ছেলে। বেশ নরমাল মনে হলো।
আজ হকিতে রবীন্দ্র হাউজ আমাদেরকে ৩-০ গোলে হারালো।
আম্মার চিঠি পেয়ে খুব ভালো লাগলো। লিখেছেন, লতিফ (আমার ৪বছর বয়সী ছোট ভাই) সূর্য গ্রহনের সময় চোখ বুজে ঘরের ভেতর ছিলো। উনারা কেউই সূর্যের দিকে তাকাননি। ছোট্ট ভাইটি আমার এখন কি করছে জানলে খুব মজা হতো।

২৮  ফেব্রুয়ারী ’৮০।
লাঞ্চের পর মিজান ভাই আমাদের ৫ জনকে ডাকলেন। একটা আর্টিকেল লিখতে হবে। আজ ফজলুল হক হাউজের সাথে আমরা ২-০ গোলে হারলাম।

২৯  ফেব্রুয়ারী ’৮০।
আজ হাউজ মাস্টার্স ইনসপেকশন হবার কথা ছিলো, কিন’ হয়নি। কাবার্ড থেকে অনেকের জিনিসপত্র চুরি হচ্ছে। এটা নিয়ে প্রিফেক্টদের সাথে হাউজ মাস্টার মিটিং করলেন।
খাজার কাছ থেকে টাকা ধার করে এয়ার লেটার কিনে বাবার কাছে চিঠি লিখলাম।

১ মার্চ ’৮০।
আজ দেখানো হলো বাংলা সিনেমা ‘যৌতুক’। একেবারে বাজে ছবি। আজ ফিফথ পিরিয়ডের সময় সিদ্ধান- নেয়া হলো, রায়হানের বাবার মৃত্যুর জন্য আমাদের ক্লাস মসজিদে কোরানখানী করবে। কাল পড়া হবে।

২ মার্চ ’৮০  ।
আজ রোববার। রোববারে সকাল ৭টা পর্যন- ঘুমানো যায়। কিন’ আজ পৌনে পাঁচটায় খাজা ঘুম থেকে উঠিয়ে দিলো। ফজরের নামাজ মসজিদে পড়ে আমাদের ক্লাসের সবাই মিলে কোরান খতম আদায় করলাম। আমি বলেছিলাম ১পারা পড়বো। কিন’ কাদের এসে আমার সাথে ঝগড়া বাধিয়ে দিলো। আমি ৭পাতা পড়ে জমা দিয়ে দেই।

৩ মার্চ ’৮০।
আজ প্রিন্সিপালস প্যারেডে আমাদের হাউজ চ্যাম্পিয়ান হয়। আমি বেশ পলিশড জুতা ও বেল্ট পরে গিয়েছিলাম। আমার ধারনা ছিলো  ‘ বেস্ট টার্নড আউট ক্যাডেট’ হিসাবে প্রিন্সিপাল স্যার আমার নাম এসেমবলিতে ঘোষনা দিতে পারেন। কিন’ না, এবার পেলাম না। রায়হান পেলো। আজ ৪জন মার্কার ঠিক করা হলো। আমার হাইট কম। তাই মার্কার ও হতে পারলাম না। শামীম হয়েছে। আমি ইদানিং কাপড় চোপড়ের দিকে মন দিয়েছি। আগে বেল্টের উপর শার্ট কেমন যেনো কুচো হয়ে থাকতো। এখন আর থাকে না। শহরের ছেলেদের মতোই আমাকে মনে হয় এখন।

৪ মার্চ ’৮০।
আমাদের হাউজ থেকে স্টোরটা খুব কাছে। বিকেল বেলা সময় পেলেই স্টোরে গিয়ে পুরনো ভালো প্যান্ট শার্ট খুজি। ভালো কিছু পেলে বদলিয়ে আনি। রায়হান এভাবে অনেকগুলো শার্ট প্যান্ট বদলিয়েছে। তাকে খুব স্মার্ট লাগে। আমি ও আজ মাগরিবের নামাজের সময় একটা ভালো প্যান্ট বদলিয়ে আনলাম। নামাজে যাইনি। অবশ্য কেউ দেখেনি। নামাজের পর স্টোর থেকে বেরিয়ে এসেছি।

৫ মার্চ ’৮০।
আমি এখন ফর্ম প্রিফেক্ট। ‘হা’ প্রতিদিন আসে অংক বুঝার জন্য। আমার নিজের পড়ার সময় নস্ট করে।
আজ বাবার চিঠি পেলাম। অস্ট্রেলিয়া থেকে লিখেছেন। খুব খুশী লাগলো।
আগামী ৯ তারিখ প্রাইজ ডিট্রিবিউশন সিরিমনি। চিঠি গেছে কাসেম ভাইর কাছে। তিনি কি আসবেন? না এলেই ভালো। কষ্ট করে এসে আরো কষ্ট পাবেন। কারন, আমি তো কোনো প্রাইজ পাবো না।

৬ মার্চ ’৮০।
আজ সন্ধ্যায় নামাজ ফাঁকি দিতে ইচ্ছে হয়েছিল। ইভনিং ড্রেস পরে লাল চাদর গায়ে দিয়ে শুয়ে আছি। রুম বাইরে থেকে লক করা। এর মধ্যে হঠাৎ  জানলা দিয়ে দেখি জিয়া করিম ভাই (দশম শ্রেণীর) চিৎকার করে উঠেন ‘ব্লাডি ফুল, গেট আউট, গো ফর প্রেয়ার।’ উনি নিজে যান নি, কিন’ আমাকে থাকতে দেবেন না। আমি প্যান্ট পরে শুয়ে ছিলাম। এতোক্ষণে নামাজ শেষ। কিন’ যেতে হয়েছিল মসজিদে। টুপী নিয়ে প্যান্ট পরেই নামাজ পড়লাম।

৭ মার্চ ’৮০।
‘র’র সাথে গল্প করছিলাম রুমে। একটা সাদা কাগজ চাইলাম। দিলো না। খুব কস্ট পেলাম। আমি তাকে কত কিছু দেই। অথচ সে এমন করলো! এখন থেকে ‘র’ আর ‘ম’ কে কিচ্ছু দেবো না। পরীক্ষার সময় ও কোনো সাহায্য করবো না।

৮ মার্চ ’৮০।
আজ এডমিনিস্ট্রেশন ডে। সকালে প্যারেড প্র্যাকটিস হলো। কালকের অনুষ্ঠানের জন্য জুতা ওয়াটার পালিশ করতে হবে। শামীমের জুতা আয়নার মতো চকচকে হয়েছে। ওকে পাম্প দিয়ে আমার জুতাটা ওকে দিয়ে ওয়াটার পালিশ করিয়ে নিলাম। ওকে একটু প্রশংসা করলে ও ফুলে যায়।

৯ মার্চ ’৮০।
আজ প্রাইজ ডিস্ট্রিবিউশন সিরিমনি আর প্যারেন্টস ডে। কতজন বাবা মার সামনে কত পুরস্কার নিয়ে গেলো। আমি আজ একবার ও বেরোই নি। কারণ কোথাও আমার পুরস্কার পাওয়ার কথা নয়। প্যারেড শেষ করে হাউজে এসে  শুয়ে পড়লাম। শুয়েবকে চিঠি লিখলাম।

১১ মার্চ ’৮০।
আজ ছানু ও মার চিঠি পেলাম। ছানু লিখেছে আমার চিঠি সে পায়নি। এখন আবার আরেকটা চিঠি লিখতে কত খরচ। কুপন ও দেয়া হচ্ছে না। টাকাও নাই।

১২ মার্চ ’৮০।
আজ ফিজিক্স এর সিলেবাস দিয়ে দেয়া হলো। এখন আর ডায়রী লিখার সময় হবে না। পড়াশুনায় মন দিতে হবে। আজ ইসলামিয়াতের ক্লাস টেস্ট ছিলো।

১৭ মার্চ ’৮০।
আজ হাসান একটা চকলেট আর একটা দুধের সন্দেশ দিলো। যদিও ওর এক ব্যাগ ভর্তি চকলেট আর দুধের সন্দেশ দেখেছি। কিন’ আমাকে একটা দিলো। ও এবার পড়ালেখায় মন দিয়েছে। কিন’ আমি আর পারলাম না।

১৯ মার্চ ’৮০।
আজ পাটী গণিত ক্লাস টেস্টে ২০ এ ২০ পেলাম। বায়োলজি পরীক্ষা ভালো হয়নি। বাংলাতেও ১টা প্রশ্নর জবাব ভুল হয়েছে। কেমিস্ট্রির রেজাল্ট পেলাম। ১৫তে সাড়ে ১২। আমি অন্য ছেলেদের মতো রাত জেগে পড়তে পারিনা। ২৭ তারিখ পরীক্ষা শুরু। খুব ব্যস-।

২৬ মার্চ ’৮০।
কাল থেকে পরীক্ষা। মোটেও ভালো প্রিপারেশন নাই। আজ পেরেন্টস ডে তে পিটি কম্পিটিশন ছিলো। আমাদের হাউজ থার্ড হয়েছে। আমি ডজিং মেরেছি। পিটি করিনি। লাঞ্চে ডেয়ারিংনেস দেখালাম। টাই পরিনি।

২৭ মার্চ ’৮০।
বাংলা পরীক্ষা হলো। ভালো হয়েছে। ৬৫ পেতে পারি। কাল ইংরেজী। আগের টার্মে ভালো হয়নি। এবার কেমন হয় জানি না।

২৯ মার্চ ’৮০
ফিজিক্স পরীক্ষা ছিলো। বড় কোনো ভুল হয়নি। ক্লাস টেস্টে ২০ এর মধ্যে ২০ ছিলো। টোটালে ৯০‘র উপর থাকবে।
টিভিতে ‘বেদ্বীন’ ছবি দেখলাম। খুব মজা লাগলো। ওয়াসীম, সোহেল রানা, জাফর ইকবাল, উজ্জ্বল, অলিভিয়া, শুভ্রা ছিলো।

৩১ মার্চ ’৮০।
অংক খুব ভালো হলো। বায়োলাজী ভালো হয়নি।

১ এপ্রিল ’৮০।
কেমিস্ট্রি আর ইসলামিয়াত পরীক্ষা ছিলো। দু’টোই খুব ভালো হয়নি। আজ ইসলামিয়াত পরীক্ষা হচ্ছিলো জিমনেশিয়ামে। এ সময় ফিজিক্সের মিস্টার হাসেম একজনের কাছে জানতে চাইলেন, ক্যাডেট নং ১২৩৬, ক্যাডেট শাকুর কে? আমি শুনছিলাম। পরে আমার কাছে এসে বললেন আমি ফিজিক্সে হাইয়েস্ট নাম্বার পেয়েছি। আজ প্রেপের সময় ফিজিক্স আর ইংরেজীর খাতা দেয়া হলো। ফিজিক্সে পেলাম ৯২। ইংরেজীতে ৬২, হাইয়েস্ট মার্ক উঠেছে ৭১। হাউজ মাস্টার মিস্টার জামান আমাকে বললেন ইন্টার হাউজ ইংলিশ ইমপ্রমপচুর জন্য প্রিপারেশন নিতে।

২ এপ্রিল ’৮০।
ইলেকটিভ এলজাবরা পরীক্ষা হলো। সব পেরেছি। ৯৫ উপর পাবো। ২ঘন্টায় সব আনসার শেষ হয়ে গেলো। আধাঘন্টা আগে বেরিয়ে গেলাম। আজ বায়োলজী খাতা দেয়া হলো। ৭২ পেয়েছি। আজ ইমপ্রমপচু প্র্যাকটিস করলাম।

৩ এপ্রিল’ ৮০।
পরীক্ষার জন্য প্রতিদিন ভোর সাড়ে চারটায় উঠতাম। আজ উঠলাম ৬টায়। পিটির টাইমে পেট ব্যাথা করছিলো। পিটি করিনি। ওস-াদকে বলে বেঞ্চে বসেছিলাম। বাংলাতে ৬১, ইসলামিয়াতে ৮০, অংকে ৯৫ পেলাম।

৪ এপ্রিল ’৮০।
সব মার্ক দেয়া হয়ে গেছে। এবার সেভেন’ হলাম। আগের বছর থার্টিন’ ছিলাম । প্রমিজ করেছিলাম দশের মধ্যে থাকবো। যাক, থাকতে পারলাম। সামনের পরীক্ষায় পাঁচের মধ্যে আসবো ইনশাআল্লা। কাল থেকে ছুটি। বাড়ি যাবো। আজ বাবার কাছ থেকে একটা ভিউ কার্ড পেলাম। ম্যানিলা থেকে পাঠিয়েছেন।
আমাদের জীবনটা কি? কোথা থেকে এসেছে? বিরাট নীল আকাশের নীচে চলার জন্য আমরা কোথা থেকে শক্তি পাই? বুঝতে পারি না।

৫ এপ্রিল ’৮০।
আজ বাড়ি যাবো তাই ৫টায় ঘুম থেকে উঠা। ধুপীর কাপড় দিয়ে, সাড়ে ৫টায় ব্রেক ফাস্ট করে, ৮টায় কলেজ বাস নিয়ে  গেলো ভাটিয়ারী রেল স্টেশনে। যাচ্ছি শ্রীমঙ্গল। ট্রেন থেকে বাইরের পৃথিবীকে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে। আমি যেনো ফিরে যাচ্ছি আমার গ্রামে।
সোয়া চারটায় শ্রীমঙ্গল এসে পৌছালো ট্রেন। পুতুল ভাইর সাথে সিনেমা দেখলাম ‘চিত্রালী’ সিনেমা হলে। ছবির নাম ‘হারানো মানিক’।

৬ এপ্রিল’ ৮০।
শ্রীমঙ্গল থেকে পুতুল ভাইকে নিয়ে কোচে করে সিলেট রওয়ানা হলাম। মাঝপথে কোচ নস্ট হয়ে যায়। অন্য কোচে উঠে সিলেট এলাম। তুহীন (হাসান) এর বাসায় এসে ভাত খেলাম। থাকার জন্য অনেক অনুরোধ করলো। থাকলাম না। বাস স্ট্যান্ড এসে দেখি মাথিউরার ডাইরেক্ট বাস চলে গেছে। বিয়ানী বাজার গামী বাসে উঠলাম। বিয়ানী বাজার  এসে আগের ছেড়ে যাওয়া মাথিউরার বাস পেয়ে যাই। সন্ধ্যার সামান্য আগে বাড়ি এসে পৌছলাম। আমি সম্ভবত: সবচেয়ে দূরের ক্যাডেট, যে ফৌজদারহাট থেকে বিয়ানীবাজারের মাথিউরা গ্রামে পৌছাতে ২দিন লাগে।

৭ এপ্রিল’ ৮০।
বাড়ি  এসে ভালো লাগছে না। বোরিং লাগছে। কারো সাথে মিশতে ইচ্ছা করে না। সকালে নানা বাড়ি গেলাম। দুপুরে খেয়ে ঘুমালাম। সন্ধ্যার আগে উঠলাম। রেডিও শুনছি। আর ইলেটিভ ম্যাথ করার চেষ্টা করছি। বেশ জটিল মনে হচ্ছে ইলেকটিভ ম্যাথ। কেমিস্ট্রিও প্র্যাকটিক্যাল খাতা নিয়ে এসেছি। ড্রয়িং গুলা করবো।

৮ এপ্রিল’ ৮০।
নানা বাড়ি গেলাম আজও। বিকেলে প্র্যাকটিক্যাল খাতার কাজ শেষ করে ফেললাম। ভালো লাগছে।

১০ এপ্রিল’ ৮০।
আজ ফুফুর বাড়ি গেলাম বাউর বাগ। কুটুপাখী ভাই দুবাই থেকে এসেছেন। তিনি আমার পড়াশুনার খবর নেন। রাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলো। প্রচন্ড শব্দে ঝড় এসেছিল। বৃষ্টি ও ছিলো।

১১ এপ্রিল’ ৮০।
বাউর বাগ থেকে ১১ টায় বাড়ি এলাম। বিকেলে লতিফ হারিয়ে গেলো। তাকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলো না। এ সময় ওর টিউটর একরাম স্যার এসেছিলেন। আমি নানা বাড়ি গিয়ে তাকে খুঁজে বের করলাম। বিকেলে নানীর জন্য বাজার করলাম। সন্ধ্যায় মনিরা খালা এলেন। নানার কাছে লন্ডনে চিঠি লিখলাম।

১৪ এপ্রিল’ ৮০।
বাড়িতে ঘরের ভিতর খুব গরম। কলেজে অনেক আরাম। ফ্যান আছে। এখানে তো ফ্যান নাই। দিনে নানা বাড়ি চলে গেলাম। মনিয়া খালা পেপে আর আম খাওয়ালেন। সারা দিন রেডিও শুনি। পড়াশুনা করতে ইচ্ছা করে না। ফাহিম (তুহীনের ছোট ভাই) আমাদের বাড়িতে বেড়াতে আসতে চায়। কিন’ ওকে নিয়ে আসতে অনেক খরচ হবে। আমার কাছে কোনো টাকা নাই।

১৫ এপ্রিল ’৮০।
আজ ১০ টায় আমার পুরনো স্কুল ‘মাথিউরা দ্বিপাক্ষিক উচ্চ বিদ্যালয়’ এ যাই। আমার পুরনো টিচার আর ক্লাস মেটদের সাথে দেখা হয়। খালেদরা আমাকে খুব আদর করলো। ওদের সাথে সিনিয়র ক্লাসে বসলাম। ফেরার পথে পোস্ট অফিসে এলাম। নানীর চিঠি এলো লন্ডন থেকে। বিকেলে লুডু খেললাম। বাড়িতে বোরিং লাগছে। রাতে নুরু ও লতিফকে পড়াতে বসলাম।

১৬ এপ্রিল ’৮০।
আজ আবার স্কুলে গেলাম সুয়েবের সাথে দেখা করতে। গিয়ে শুনি সে চলে গেছে। হেনা আপার সাথে দেখা হলো। সেলিম এখন রাজশাহীতে চাচার বাসায় থেকে পড়াশুনা করছে। বললেন, আমাকে দেখে নাকি তার ভাইর কথা মনে পড়লো। আমাকে তিনি খুব আদর করেন।

১৭ এপ্রিল ’৮০।
আজকে স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া। একটা অনুষ্ঠান শুরু করতে তাদের অনেক সময় লাগে। কোনো ডিসিপ্লিন নাই। আমার খুব বোরিং লাগছিলো। চলেও আসতে পারছিলাম না। সন্ধ্যায় বাড়ি এলাম।

২৩ এপ্রিল ’৮০।
সুয়েবের বাড়ি গিয়ে ওর সাথে দেখা করলাম।

২৪ এপ্রিল ’৮০।
আজ হাসানের বাসায় সিলেট চলে এলাম। কাল আমরা কলেজে যাবো। বিকেলে কয়েকজন অপরিচিত ছেলের সাথে ফুটবল খেললাম। একটা ছেলে খুব ভালো খেলে। নাম কার্জন।
২৫ এপ্রিল ’৮০।
হাসানের বাসায় সারাদিন। সকালে ৫টাকা ঘন্টা হিসাবে লামা বাজার থেকে একটা সাইকেল ভাড়া করলাম। এবার ছুটিতে সাইকেল চালানো শিখেছি। কিন’ আমার সাইকেল নাই। তাই চালাতে পারলাম না। সাইকেল চড়ে প্রথমবারের মতো কয়েকটা গুরুত্বপূর্ণ বিল্ডিং দেখতে গেলাম। মদন মোহন কলেজ, মেডিক্যাল কলেজ এবং রেডিও স্টেশন দেখলাম। হাউজিং এস্টেট গেলাম। আজ জীবনে প্রথম বারের মতো লিফট চড়লাম মেডিক্যাল কলেজে। সাড়ে তিনটায় ‘লালকুটী’ সিনেমা হলে ছবি দেখলাম ‘চম্পা চামেলী’। সন্ধ্যা সাড়ে ৮টায় বৃষ্টির মধ্যে রেল স্টেশনে এলাম। ১০টায় ট্রেন ছাড়ে।
২৬ এপ্রিল’ ৮০।
সারা রাত ট্রেনে বসে সকাল সাড়ে ১০টায় চট্টগ্রাম এসে পৌছালাম। ইমতিয়াজের বাসায় ব্যাগ রেখে নুপুর সিনেমা হলে ‘রংবাজ’ দেখলাম। খুব চমৎকার ছবি। কলেজে এসে পৌছালাম সাড়ে চারটায়। বাড়ি থেকে আসার সময় ২০০ টাকা নিয়ে এসেছিলাম। তুহিনের সাথে সিনেমা দেখা আর সব মিলে ১০০ টাকা খরচ হয়ে গেছে।

২৭ এপ্রিল’ ৮০।
কলেজে এসে ভালো লাগছে না। শুধু বাড়ির কথা মনে পড়ছে। মার কাছে চিঠি লিখে রেখেছি গতকাল। আজ সুয়েব, নুরুল, তুহীনের বোন, বাবা ও ছানুর কাছে চিঠি লিখলাম। আসার সময় একটা গ্লাস্কোস ডি কিনে এনেছি। মোটা হবার চেষ্টা করছি, কিন’ হচ্ছি না।
আজ এডমিনিস্ট্রেশন ডে ছিল, তাই গেমস হলো না।

২৮ এপ্রিল’ ৮০।
আজ থেকে সেকেন্ড টার্মের ক্লাস আরম্ভ হলো। প্রেপ করতে ভালো লাগে না। এবার রেজাল্ট খারাপ হবে।
সামনে ইন্টার হাউজ সকার কম্পিটিশন। আমাদের হাউজ লাস্ট হবে। তবুও উন্নতি করার চেষ্টা করছি। একটা লিস্ট করে সে অনুযায়ী প্র্যাকটিস করাবো।

৩০ এপ্রিল’ ৮০।
আজ ও কাল দুইদিন ছুটি। পিটি প্যারেড নাই। ক্লাস, প্রেপ নাই। খুব মজা। সকালে বৃষ্টি হলো। খুব মন খারাপ। কিছুক্ষণ পর রোদ উঠলো। মাঠ শুকিয়ে গেলো। খেলতে গেলাম। আজ হাউজের সিনিয়র টিমের সাথে খেললাম। আমি ১টা গোল দিয়েছি। কিন’ ইন্টার হাউজ খেলাতে কোনো গোল করতে পারবো বলে মনে হয় না।

১ মে’ ৮০।
দু’দিন ছুটির আজ শেষ। ১১ টায় মিলক ব্রেক। যেতে ইচ্ছা করেনি। গেলাম না। খালিদ ভাই দেখে ফেলেছেন আমরা দুধ খেতে যাইনি। সে জন্য আমি, রায়হান, আলাউদ্দিন, লুৎফুল আর আশরাফ খালিদ ভাইর কাছে পানিশম্যান্ট খেলাম। বিকেলে ক্লাস টেনের সাথে ভালিবল খেললাম।

২ মে’ ৮০
সকালে প্যারেড প্র্যাকটিস। রাতে হাউজ মাস্টার্স ইনসপেকশন। এই টার্মেও পড়ালেখা শুরু হয়ে গেলো। কিন’ পড়তে ইচ্ছা করেনা।

৩ মে’ ৮০।
বাংলা সিনেমা ‘অন-রালে’ দেখালো। মোটামুটি। বিকেলে ফুটবল খেলতে গিয়ে মাঠে বল ফেটে গেল। মনটা খারাপ হয়ে যায়। ধীমান ভাই আমাদের ফুটবল প্র্যাকটিস করাচ্ছেন। মনে হয় পাঠানকে ক্যাপ্টেন দিয়ে দিবেন। কিন’ ভলিবলে আমাকে ক্যাপ্টেন না দিলে আমি খেলবো না। সিক লিভ নিয়ে নেবো।

৪ মে’ ৮০।
আজ রোববার। বেশীর ভাগ ছেলেই আজ সারাদিন বই নিয়ে পড়ে থাকে। আমি ছুটির দিনে একটুও পড়িনা। বিকেলে বাস্কেটবল খেলতে গিয়ে আশরাফের সাথে ঝগড়া হলো। এখন কথা বলি না। কাল সকার খেলার সময় ওকে মজা দেখাবো। বল দিয়ে গায়ে মারবো।

৬ মে’ ৮০।
আজ সকালে বৃষ্টি হলো। পিটি হয়নি। বৃষ্টি হলেই বাড়ির কথা মনে  পড়ে। আমাদের টিনের চালে বৃষ্টি পড়ে। আমি দাদার সাথে বসে গল্প করি। দাদা কলকাতার গল্প শোনান। কতদিন দাদার গল্প শুনিনা।
বিকেলে রোদ উঠলো। কাদার মধ্যেই ফুটবল খেললাম। আমাদের ’কলেজ বেস্ট’ ক্লাস টুয়েলভের টিমকে আমাদের জুনিয়র টিম ২-১ গোলে হারিয়ে দেয়। একটা গোল এসেছে রাইট আউট থেকে আমার করা লব থেকে। অবশ্য আঙ্গুলে ব্যাথা পেয়েছি। কিন’ রিপোর্ট করিনি। সিক রিপোর্ট করলে একসকিউজ দিয়ে দিতো। খেলতে পারবো না।

৭ মে’ ৮০।
আজ রোজ কিয়ামত হবার কথা ছিল। কিন’ হয়নি। পেপারে দিয়েছিল। লস এনজেলেসের এক জ্যোতিষি ভবিষ্যৎ বাণী করে ছিলেন আজ রাত ৬-৮টা সময়ের মধ্যে মহা প্রলয় হবে। খুব মজা লেগেছিল চিন-া করতে যে মহা প্রলয় দেখতে পাবো। কিন’ হলো না। জানি না, সে মহিলা জোতিষি এখন কি করছেন।
আম্মার কাছে থেকে চিঠি পেয়ে জবাব দিলাম।
বাবার কাছে অনেক আগের লেখা একটা চিঠি ফেরত এসেছে। ঠিকানা ভুল লিখেছিলাম।
কাল থেকে ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়বো বলে ওয়াদা করলাম। জানি না কতটুকু সফল কাম হবো।

১০ মে’ ৮০।
শনিবার হিসাবে দিনটা মাটি হয়নি। একটা বাংলা সিনেমা দেখানো হয়েছে। মোটমুটি ছিলো। সকার প্র্যাকটিস করছি। ভলিবল কম্পিটিশন পিছালো। ইন্টার হাউজে সকার আর ভলিবল দুইটাতেই লাস্ট হবো। চেষ্টা করছি অন-ত: থার্ড যেনো হতে পারি।

১১ মে’ ৮০।
রোববার টা মাটি। সারাদিন বৃষ্টি। বিকেলে যদিও বৃষ্টি থামলো, কিন’ ওস-াদ মাঠে নামতে দিলো না।
১২ মে’ ৮০।
সকালে প্রিন্সিপালস প্যারেড হলো না। হলো প্যারেড প্র্যাকটিস। নতুন প্রিন্সিপাল কর্ণেল আশরাফ জয়েন করলেন, কর্ণেল মুজিব রিটায়ার্ড করে চলে যাবেন। আজ সারাটা দিন ফকফকা ছিলো। গেমসে নামার ১০ মিনিটের মধ্যে বৃষ্টি এলো। দিনটা মাটি।

১৩ মে’ ৮০।
প্যারেড প্র্যাকটিস শুরু হয়েছে। আমার খুব ভালো লাগে। কর্ণেল মুজিবকে বিদায় জানাতে সিরিমনিয়েল প্যারেড হবে। তার আয়োজন চলছে। প্যারেডের সময় ড্রামের শব্দ আমার রক্তের মধ্যে শিহরণ জাগায়। আমার ভালো লাগে।
১৬ মে’ ৮০।
কর্ণেল মুজিবের বিদায় উপলক্ষে আজ সিরিমনিয়েল প্যারেড এবং রাতে কালচারাল প্রোগ্রাম আর ফেয়ার ওয়েল ডিনার হলো। ডিনারে পোলাও, মুরগীর রোস্ট, সুপ, কাবাব, খাসীর রেজালা, বোরহানী ছিলো। ডিনারের পর আইসক্রীম দেওয়া হয়। খুব মজা ছিলো আইসক্রীমটা। আজ ক্লাস হয়নি। কলেজ ছুটি ঘোষণা করা হয়।

১৭ মে’ ৮০।
সকালে পিটি ছিলো না। তাই ঘুমালাম। ব্রেকফাস্টের হুইসেল শোনার পর দৌড় দিয়ে বাথরুমে যাচ্ছি, স্লিপিং ড্রেসে হাউস কেপ্টেন খালিদ ভাই দেখে ফেললেন। দৌড়ে যখন ডাইনিং হলে যাচ্ছি, দেখি খালেদ ভাই সামনে দাঁড়ানো। বলেন- ফ্রন্টরোল দিতে দিতে ডাইনিং হলে যেতে হবে। গেলাম।
আজ ডিনারের পর টিভিতে রবীন্দ্রনাথের নাটক ‘রক্ত করবী’ দেখানো হলো। নাটকটি ১২ পর্যন- চললো। খুব স্লো নাটক। কঠিন।

১৮ মে’ ৮০।
আজ কর্ণেল মুজিব চলে যাবেন। রোববার, তাই ক্লাস নাই। সকাল সাড়ে দশটায় কলেজ মেইন রোডে কলেজের সব ছাত্র এক লাইনে দাড়ালাম। ৩০০ ক্যাডেটকে এক এক করে পার হয়ে তিনি গেট দিয়ে বেরিয়ে গেলেন।

১৯ মে’ ৮০।
সকালে পিটিতে দৌড়াতে ইচ্ছা হচ্ছিলো না। পেছনে পেছনে হাঁটছিলাম। ওস-াদ দেখে দুই দুই চারটা ফ্রন্টরোল দিতে বলেন। সিনিয়ারদের সাথে বিকালে সকার ম্যাচ খেললাম। ৩-৩ ড্র।

২৫ মে’ ৮০।
আজ প্যারেন্টস ডে। ১৩ নং রুমের এসিসট্যান্ট রুম প্রিফেক্ট এর বিছানায় শুয়ে শুয়ে দিন কাটালাম। আমার কেউ আসেনা। চট্টগ্রামের একজন আসেন আমার দূর আত্নীয়। তাঁদের গাড়ি দেখেছি। খাজা আম খাওয়ার জন্য বললো। ওর বাবা নিয়ে এসেছেন। আমি খেতে যাইনি। এ বছর যখন আম খাওয়া হয়নি, তাই থাক- একদিন না খেলেও কিছু হবে না।

২৭ মে’ ৮০।
ইন্টার হাউজ ফুটবল কম্পিটিশন শুরু হয়েছে। নজরুল হাউজের সাথে ম্যাচ ছিলো। খেলা শেষ হবার ৫ মিনিট আগে গোল খেয়ে গেলাম। আমার খেলাটা একেবারে হয়নি। রাতে প্রেপে বইয়ের আড়াল করে ঘুমালাম। খুব ক্লানি- লাগলো।

২৮ মে’ ৮০।
আজ সিনিয়ারদের নজরুল হাউজ ৩ গোলে হারালো। আমরা খুশী। জুনিয়াররা খেয়েছি ১ গোল, সিনিয়াররা ৩ গোল। রেজাল্ট বুঝে গেছি, আমরা লাস্ট হবো।

২৯ মে’ ৮০।
ক্লাস এইটের ছেলেরা লাইনে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলো। ব্রেকফাস্টের পর তাদের ডাকলাম। সবগুলোকে পানিসমেন্ট দিলাম। দুপুরে ক্যারামের সেমি ফাইনাল ছিলো জুনিয়ার গ্রুপের। ক্লাস এইটের টিপুর কাছে হেরে গেলাম। সকালে পানিশমেন্ট খেয়েছিল টিপুও। এ জন্য তার জেদ ছিল বেশী।

৭ জুন’ ৮০।
তিন দিন পর হাসপাতাল থেকে কলেজে চলে এলাম। সামান্য গলা ব্যাথা ছিলো। এর জন্য এডমিট হওয়া দরকার ছিলো না। কিন’ ডাক্তারকে বলেছিলাম খুব বেশী ব্যাথা। এ জন্য ভর্তি করিয়ে দিলেন। হাসপাতালে আমাদের খুব মজা হয়। অনেকক্ষণ ঘুমানো যায়। পিটি, প্যারেড, ক্লাস থাকে না। ক্যারম খেলা যায়। গান শোনা যায়। আরো থাকতাম। কিন’ আজ শনিবার। কাল রবিবার। সুতরাং হাসপাতালে থেকে লাভ নাই। দিদিকে বললাম আমি পুরো ভলো হয়ে গেছি। আমাকে ছেড়ে দিলো। চলে এলাম।

৮ জুন’ ৮০।
সামনে ভলিবল কম্পিটিশন। প্র্যাকটিস শুরু হয়ে গেছে। আজ প্র্যাকটিসে গিয়ে শুনি শামীমকে ক্যাপ্টেন করেছে, আমাকে করেনি। থাক, আমি মন খারাপ করলাম না। টিমকে জিতিয়ে দেবো ইনশা আল্লা। পড়াশুনা করতে ইচ্ছা করেনা।

৯ জুন’ ৮০।
আজ আমি ডিউটি ক্যাডেট হলাম। কলেজ জীবনে প্রথম ডিউটি ক্যাডেট। আমি চাইলে আরো আগেই করতে পারতাম। কিন’ আজকের ডেট বেছে নিলাম। কারণ, আজ প্রিন্সিপাল্‌স প্যারেড। আমাকে প্যারেডে থাকতে হবে না। আজ একটা ঘটনা ঘটলো। খাজার সাথে ‘আ’র ঝগড়া হলো। খাজা বলে দিয়েছে আমাদের ব্যাচের কেউ ‘আ’র সাথে কথা বলবে না। আমি বলি- ‘আ’ তো আমার সাথে কিছু করেনি, আমি কেনো কথা বলা বন্ধ করবো? তখন বললো, তা হলে তোমার সথেও কেউ কথা বলবে না। আমি বলি, ঠিক আছে, তাহলে আমি কারো সাথে কথা বলবো না।

১৩ জুন’ ৮০।
আজ হাউজ মাস্টার্স ইনসপেকশন ছিলো। আমি রেলিং এ দাঁড়িয়ে আকাশ দেখছিলাম। হাঠাৎ টের পেলাম মিস্টার জামান রুমে ঢুকে গেছেন। তিনি রুমে ঢুকতেই চিৎকার করে উঠলেন। আমি রুমের বাইরে আছি, এটা আমার ফ্লট। বেয়ারাকে দিয়ে কেইন আনালেন। হ্যান্ডস ডাউন করিয়ে পরপর ৪টা কেইন মারেন। অবশ্য বেশী ব্যাথা পাইনি।

১৭ জুন’ ৮০।
বাবা, ছানু আর নুরুলের চিঠি পেলাম। মা’র কোনো চিঠি পাচ্ছি না। কাল না পেলে আবার লিখবো।

২২ জুন’ ৮০।
টুয়েনটি সেভেন’ ব্যাচের ইনটেক আজ। খাকী পরে টিচিং ব্লকে ক্লাস সেভেনের নতুন ক্যাডেটদের রিসিভ করতে গেলাম ৩ টায়। আজ প্যারেন্টস ডে ছিলো। আজও আমার কেউ এলো না।

২৬ জুন’ ৮০।
ভলিবল ম্যাচ শুরু হলো। রবীন্দ্র হাউজের সাথে আমাদের খেলায় স্টেইট টু তে হেরে গেলাম।

২৭ জুন’ ৮০।
আজ শবে বরাতের রাত। রাত সাড়ে ১১টার দিকে নফল নামাজ পড়ে ঘুমাতে গেলাম। কাল রোজা রাখবো।
২ জুলাই’ ৮০।
আজ থেকে পরীক্ষা শুরু হয়েছে। ইংরেজী পরীক্ষা খারাপ হয়েছে। ভলিবল খেলায় ফজলুল হক হাউজকে প্রথম গেমে হারিয়ে ছিলাম। পরের দুই গেম জিততে পারলাম না।
আজ আম্মার চিঠি এলো। চিঠির ভেতর ২০ টাকার নোট। বাড়ি যেতে টাকা লাগবেতো! তাই পাঠিয়েছেন।

৩ জুলাই’ ৮০।
বাংলা পরীক্ষা ভালোই হল। কিন’ ইংরেজী কাল খারাপ হয়েছে। এবার কোনো ভরসা নাই। কাল অংক। আমাদেরকে এখন লাইটস আউটের পর রিক্রেশন রুমে ১১টা পর্যন- পড়তে দেয়। আমি অবশ্য বেশীক্ষণ জাগিনি।

৪ জুলাই’ ৮০।
সবগুলো অংক কারেক্ট করেছি। দেখা যাক কি হয়। ক্লাস টুয়েলভ বিদায় নেবে কলেজ থেকে। তাদের জন্য অডিটরিয়ামে ফাংশান হলো। খুব মজা হয়েছিল। টুয়েলভের ভাইরা কেমন যেনো নরম নরম হয়ে গেছেন।
আজ ডিনারের সময় পিলারের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম। এ জন্য ডিউটি প্রিফেক্ট আমাকে সবার সামনে নীল ডাউন করিয়ে রাখলো। প্রথম বারের মতো কলেজের সামনে নীল ডাউন হলাম আজ।

৫ জুলাই’ ৮০।
‘শাকুর তোমার সঙ্গে খুব একটা আমার কথা হয়নি। তবে যতটুকু হয়েছে, সত্যি ভালো লেগেছে। সুখে শানি-তে কলেজ জীবনের বাকী কয়েক বৎসর কাটিয়ে দাও।’ – ওয়াসিম (দ্বাদশ বর্ষের বিদায়ী ভাই)

৬ জুলাই’ ৮০।
‘শাকুর, মনে রাখবে তো? তোমাকে ভুলার নয়। তোমার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বলতর হোক। দোয়া করি’ – হালিম
‘সুখে থাকো, সুন্দর থাকো, ভালো থাকো’ – আলী নূর।

৮ জুলাই’ ৮০।
ইলেকটিভ ম্যাথ পরীক্ষা ছিলো। একটা এলজাবরা কাটা যাবে।
৯ জুলাই’ ৮০।
পরীক্ষা শেষ হলো। ইংরেজী ছাড়া বাকী গুলো ভালো হয়েছে। মনে হয় না এবার দশের মধ্যে থাকতে পারবো বলে। বায়োলজী খাতা দেখানো হলো। আমি পেলাম ৫৭+২২=৭৯। মিস্টার মাহবুবকে দেখালাম। তিনি লেটার মার্ক হবার জন্য ১ যোগ করে দিলেন।

১০ জুলাই’ ৮০।
ছেলেটা স্বার্থপর। কথায় কথায় আমার কাছে অনেক কিছু চায়। আজ বলে আমার ঘড়িটা তাকে দিয়ে দিতে। বলে, আমি নাকি তার বেস্ট ফ্রেন্ড। অসম্ভব! আমি কেনো আমার ঘড়ি তাকে দিয়ে দেবো?

১১ জুলাই’ ৮০।
কাল বাড়ি যাবো। প্রথমে যাবো সিলেট তুহীনের বাসায়। সেখান তেকে পরদিন বাড়ি। আজ ফেয়ার ওয়েল ডিনার হলো। বিকেলে লেকচারার ভার্সেস ক্যাডেট ভলিবল ম্যাচ হলো। খুব মজা হয়েছিল। সন্ধ্যায় মামুনুর রশিদের লেখা নাটক ‘ওরা কদম আলী’ মঞ্চস’ হলো। কলেজের ইলেভেন আর টুয়েলভ ক্লাসের ভাইরা একটিং করলো। ওমর ভাই মাস-ানের পার্ট খুব সুন্দর করেছে। মিস্টার জামান আমার একটা টর্চ লাইট সিজ করেছিলেন। আজ চাইলাম। বলেন- ওটা ওনার বাসায়।

১২ জুলাই’ ৮০।
আখাউড়ায় এসে খবর পেলাম এস এস সির রেজাল্ট বেরিয়েছে। আমাদের কলেজ খুব খারাপ রেজাল্ট করেছে। কুমিল্লা বোর্ডে কম্বাইন্ড মেরিট লিস্টে মাত্র ৩জন এসেছে।
রাত ১২টায় তুহীনের বাসায় এসে পৌছালাম। পথে উল্কা সাড়ে তিন ঘন্টা বন্ধ ছিলো।

১৩ জুলাই’ ৮০।
সকাল সাড়ে ৯টায় তুহীনের বাসা থেকে বাড়ির পথে বেরুলাম। মাইক্রোবাসে করে গাছতলা নামলাম। সেখান থেকে নৌকায় ঈদগা বাজার। সেখান থেকে বাড়ি। কাল থেকে রোজা শুরু হবে। ইনশা আল্লাহ সবগুলো রোজা রাখবো।

২৪ জুলাই’ ৮০।
৮জুন স্বাক্ষরিত কলেজ প্রিন্সিপালের একটা চিঠি এলো বাবার নামে। এ চিঠিতে লেখা:
ঋৎড়স ১ংঃ ঔঁষু ৮০ ঃযবংব রঃবসং রিষষ হড়ঃ নব ংঁঢ়ঢ়ষরবফ রিঃযড়ঁঃ ঢ়ধু. ঞযবু ধৎব: ইবফ ঈড়াবৎ. ইবফ ঝযববঃ, চরষষড় িপড়াবৎ, ঠবংঃং, টহফবৎধিৎব, ধহফ ঐধহশু.
ঞযব ভড়ষষড়রিহম রঃবসং রিষষ নব রংংঁবফ ধপপড়ৎফরহম ঃড় ঃযব ংপধষব ধহফ ৎবংঃ ড়ভ ঃযব ংঃধঃরড়হধৎু রিষষ নব রংংঁবফ ড়হ ঢ়ধুসবহঃ. ঞযবংব ধৎব:
১.    ঋধৎব হড়ঃব নড়ড়শ. – যিরঃব/ৎঁষব – ১০০ ঢ়ধমব. চবৎ ংঁনলবপঃ ২ পড়ঢ়রবং ঢ়বৎ ুবধৎ.
২.    জড়ঁময হড়ঃব নড়ড়শ – যিরঃব, ভঁষষ ংপধঢ়ব, ঢ়বৎ রঃবস ড়হব পড়ঢ়ু
৩.    খরনৎধৎু হড়ঃব নড়ড়শ – ধপপড়ৎফরহম ঃড় ঃযব ফবঢ়ধৎঃসবহঃ ধফারংব
৪.    ঊীধসরহধঃরড়হ ংযববঃ – অং হববফ.

৪ আগস্ট’ ৮০।
এ পর্যন- যারা যারা আমার বেস্ট ফ্রেন্ড হয়েছে, তারা হচ্ছে – হাসান, গিয়াস, আশরাফ, আলাউদ্দিন, রায়হান, মহিউদ্দিন, মোর্শেদ, রহিম, নওশাদ, আহমেদ, হানিফ আর মোসলেহ।

১১ আগস্ট’ ৮০।
অনেক দিন কিছু লিখি না। বাড়িতে এসে ডায়রী নিয়ে বসতে ইচ্ছা করে না। ৯.৩০- ১০.৩০ এ ঘুম থেকে উঠা, কেরাম বোর্ড খেলতে যাওয়া, পোস্ট অফিস যাওয়া আর রেডিও শোনা ছাড়া অন্য কোনো কাজ হচ্ছে না। পড়াশুনা একদম করতে ইচ্ছা করেনা।
বিকালে বৃষ্টির মধ্যে নানী বাড়ি গেলাম ইফতারি নিয়ে।

১২ আগস্ট’ ৮০।
রোজার মাস শেষ হয়ে এলো। কাল ঈদ। এবার ২৭টা রোজ রাখলাম। কলেজে কি কি জিনিস নিয়ে যেতে হবে তার লিস্ট :
১. টুথপেস্ট – ১টা
২. আন্ডারওয়ার – ২টা
৩. টাকা – ১০ (হাউজ ফান্ড)
৪. জামবাক – ১টা
৫. সাবান ৩টা/৩টা
৬. ইনভেলাপ  ২০
৭. এয়ার লেটার ৫টা

২২ আগস্ট’ ৮০।
কয়েকদিন আগে বিরাট একটা ভুল করে ফেলেছিলাম। খাজার প্রস-াবে রাজী না হয়ে, হাউজের ১১জনের বিরুদ্ধে চলে গেলাম। এক সময় হাউজের ১২জনই আমাকে ভালোবাসতো। কলেজে আসার পর যথক্রমে আলাউদ্দিন, রায়হান, আশরাফ, মহিউদ্দিন ও চাকমা আমাকে খুব ভালোবাসতো। কিন’ আজ ওদের কেউ আমার নয়। ফর্মালি তাদের কেউ আমার সাথে কথা বলে না খাজার ভয়ে। তবে কয়েকদিন ধরে গোপনে আমার সাথে লুৎফুল, আলা উদ্দিন আর চাকমা কথা বলে। এটা অবশ্য খাজা জানে না।

২৩ আগস্ট’ ৮০।
আজ চিঠি পেলাম দু’টো। বাবা লিখেছেন চিলি থেকে, নাদিম লিখেছে ঝিনাইদহ থেকে। নাদিম আমার পেন ফ্রেন্ড। ইয়াং অবজারভারের পেন প্যাল বিভাগে আমার নাম ঠিকানা পাঠিয়ে ছিলাম। আমার ঠিকানা দেখে নাদিম চিঠি দিয়েছিল। আমিও লিখি। আজ ৮ পৃষ্ঠার চিঠি লিখেছে। আজ উর্দূ সিনেমা দেখানো হলো। ‘দরদে দিল’।

২৪ আগস্ট’ ৮০।
মিস্টার পি.সি. মজুমদার জানালেন, একদিন দেরী করে কলেজ আসার জন্য আমাকে ২০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

২৫ আগস্ট’ ৮০।
‘একটি মনের দাম দিতে গিয়ে/ জীবন চলার পথটি হারিয়ে/ কি আমি পেলাম।’ তাই তো? আহমদকে তারা একঘরে করতে চেয়েছিল। আমি কোনো দলের সাথে ভিড়ে গেলাম না? এখন আমি ও একঘরে। আমার আহমেদকে ভালো লাগে না। সে আমার কখনো বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলো না। তবু কেনো আমি তার পক্ষ নিলাম? অবশ্য আমার দিনগুলো ভালোই কাটছে। আমার সাথে তো কেউ খারাপ ব্যবহার করেনা। শুধু কথা বলে না। এইটুকু। রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন: ‘যাহা চাই তাহা ভুল করে চাই, যাহা পাই তাহা চাই না।’
আজ প্রিন্সিপালস প্যারেডে আমাদের হাউজ ফার্স্ট হলো।

২৬ আগস্ট’ ৮০।
প্রেপের সময় আলাউদ্দিন আমার বায়োলজি খাতা নিয়ে গেলো। কিছুক্ষণ পর এসে আমার ডেস্কের উপর ৫টাকার একটা নোট রেখে অন্যদিকে তাকিয়ে বললো, ওটা বায়োলজি খাতার ভিতর ছিলো।
আমার মনে পড়লো, বাড়ি থেকে আসার সময় খাতার ভিতর লুকিয়ে এই ৫টাকা নিয়ে এসেছিলাম। হাউজে ঢুকার সময় ধরা পড়লে নগদ টাকা রাখার অপরাধে কলেজ থেকে আউট হতে হতো। এখনও কোনো টিচার দেখলে বিপদ হতো। আলাউদ্দিন আমাকে বাঁচিয়ে দিলো। আমার সাথে সরাসরি কথা বলা বন্ধ। কিন’ আমরা থার্ড পার্সনে কথা বলি।

২৭ আগস্ট’ ৮০।
একটা উপন্যাস লিখতে ইচ্ছে হচ্ছে। কিন’ কিভাবে শুরু করবো বুঝতে পারছি না। একটা লিখে ছিলাম। খাতাটা হারিয়ে গেছে। সলিমুল্লাহ নিয়েছিল পড়ার জন্য। পড়া শেষে নাকি আমার ডেস্কের উপর রেখে এসেছে। আমি পরদিন ক্লাসে গিয়ে ডেস্কে কোনো খাতা পেলাম না। নতুন করে একই জিনিস লিখতে ইচ্ছা করলো না। এ বছর না লিখতে পারলে সামনের বছর সময় পাবো না। ক্লাস টেনে উঠলে ব্যস-তা তিনগুন বেড়ে যাবে। এমনিতে মিস্টার হুমায়ূন কবিরের বাংলার ক্লাস আমাকে আচ্ছন্ন করে দেয়। স্যারের সবগুলো কথা বুকে এসে লাগে। জানিনা কখনো লিখতে পারবো কি না।

২৯ আগস্ট’ ৮০।
আজ পরিস্কার মনে পড়ছে, আজ থেকে ৪বছর আগের এই দিনটির কথা। যদিও আজ শুক্রবার, কিন’ সেদিন ছিল রবিবার। বাড়িতে বসে রেডিওতে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুনছি। হঠাৎ করে সিনেমার গান বন্ধ হয়ে ভক্তিমূলক গান প্রচার শুরু হলো। ঠিক বুঝতে পারিনি আসলে কি ঘটেছে। ২-৩ মিনিট পর ঘোষণা এলো ‘আজ সকাল ১১-২০ মিনিটের সময় ঢাকার পিজি হাসপাতালে কবি কাজী নজরুল ইসলাম ইনে-কাল করেন।’ খবরটা শুনে মনে খুব আঘাত লেগেছিল।

৩০ আগস্ট’ ৮০।
আজ প্রথমবারের মতো বেস্ট কাবার্ড পেলাম। হাউস মাস্টার্স ইনসপেকশনের সময় মিস্টার জামান অনেকক্ষণ ধরে আমার কাবার্ড দেখলেন। তখনই মনে হয়েছিল এ সপ্তাহের পুরস্কারটা আমারই হবে। গেমস থেকে এসে অল্পক্ষণে আলমারী সাজিয়েছি। বাবার পাঠানো অনেক গুলো ভিউ কার্ড লাগানো ছিলো কাবার্ডে। আর কেউ এরক ভিউ কার্ড দেখাতে পারেনি।

৩১ আগস্ট’ ৮০।
আজ আবার পেরেন্টস ডে। এই দিন এলেই  আমার খুব খারাপ লাগে। এখন থেকে সিস্টেম বদলে গেছে। কার্ড দেখিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে হবে। আমার লোকাল গার্ডিয়ানরা এসেছিলেন তাদের ছেলেকে দেখতে। আমার সাথে ২/৩ মিনিট আলাপ হয়েছে। আহমেদের সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছি। এখন ১৩ জনের মধ্যে ৩দল। একদলে আমি একা, অপর দলে আহমেদ একা, বাকী দলে ওরা এগারো জন।

১ সেপ্টেম্বর’ ৮০।
আজ রেস্ট টাইমে হাউজ ক্যাপ্টেন ডাকলেন। গিয়ে দেখি বাবার পাঠানো একটা প্যাকেট। ভেতরে চিঠি, দুইটা ভিউ কার্ড আর একটা ছবি। বাবা এখন যে জাহাজে আছেন তার সামনে তোলা ছবি। মনটা ফুর্তিতে ভরে গেলো। কিন’ আম্মার কোনো চিঠি পাচ্ছিনা আজ প্রায় ১৫ দিন। খুব চিন-া হচ্ছে মার জন্য।
৩ সেপ্টেম্বর’ ৮০।
মা কি চিঠি লিখে পোস্ট করাতে পারেন নি? নাকি বাড়িতে কোনো অঘটন ঘটেছে, যে কারনে চিঠি লিখছেন না? গত আড়াই বছরে এতো দেরীতে তো মার চিঠি কখনো পাইনা। বাবা বলে গেছেন, প্রতি সপ্তাহে মাকে দু’টা চিঠি দিতে। আমি দু’টো চিঠি লিখছি, কিন’ মার জবাব পাচ্ছি না।

৪ সেপ্টেম্বর’ ৮০।
রেস্ট টাইমে হাউজ ডিউটি ক্যাডেটের ডাকে ঘুম ভাঙলো। প্রথমে খুব বিরক্তি লেগেছিল। পরে ওর হাতে মার চিঠি দেখে মনে খুব আনন্দ লাগলো। একটা বাংলা সিনেমা বা একশো টাকা পেলেও এ রকম আনন্দ হতো না।

২৬ সেপ্টেম্বর’ ৮০।
অনেক দিন হয়ে গেলো, অলসতার জন্য ডায়রী লেখা হচ্ছিলোনা। শরতের এই দুপুরে হাউজের ফ্যানের তলায় যখন শীতল বাতাস খাচ্ছিলাম এমন সময় হুইসেল পড়লো। সুইমিং পুলে যেতে হবে। ওখানে ৩দিন ধরে ইন্টার হাউজ সুইমিং কম্পিটিশন শুরু হয়েছে। আজ ফাইনাল ইভেন্ট। উপসি’তি কম্পলাসারী।

২ অক্টোবর’ ৮০।
ইন্টার হাউজ জেনারেল নলেজ টেস্ট দিলাম। সব আন কমন প্রশ্ন এসেছে। যা প্রিপারেশন ছিলো, তা থেকে কিছুই আসেনি। তবুও ৫০-৬০ এর মধ্যে মার্ক পাবো।

৩ অক্টোবর’ ৮০।
সকাল ৯টায় বৃষ্টির মধ্যে দৌড়ে গেলাম অডিটরিয়ামে। মোহাম্মদ আলী আজ লড়বেন ল্যারি হোমস্‌ এর সাথে। খেলা যথা সময়েই শুরু হলো। কিন’ ১০ রাউন্ডের মাথায় আলী হেরে গেলেন টেকনিক্যাল নক আউট হয়ে। লেরি হোমস্‌ই এখন হেভী ওয়েটে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন।
১১ অক্টোবর’ ৮০।
বায়োলজী ক্লাসে একটা অঘটন ঘটে গেলো। কাল ভলিবলে হেরেছি। মিস্টার মাহবুব ছিলেন রেফারী। আমার দিকে তাকিয়ে বলেন- ‘ক্যাডেটস অব শহীদুল্লাহ হাউজ, স্ট্যান্ড আপ।’ আমরা মুখ চাওয়া চাওয়ি করে দাঁড়ালাম। আমার দাঁড়াতে খানিক অসুবিদা হচ্ছিল। বায়োলজী ল্যাবের টুলের উপর বসা ছিলাম। সেখান থেকে টুলের নীচের একটা কাঠের উপর ভর করে এমন ভাবে দাঁড়ালাম- তাতে আমাকে বেশ উঁচু দেখালো। অন্য ছেলেরা হেসে দিল। আমিও হেসে দিলাম। মিস্টার মাহবুব রেগে গেলেন- চিৎকার করে বলেন ‘ইউ গেট আউট ফ্রম মাই ক্লাস, এন্ড নেভার কাম টু মাই ক্লাস ইন নেক্সট ফাইভ ডেইজ।’ আমি মাথা নীচু করে বেরিয়ে যাই। তিনি বলেন- ‘টেক ইয়োর খাতা এন্ড বুকস।’ আমি বই খাতা নিযে বেরিয়ে পড়ি। কিন’ কোথায় যাবো? এখন ক্লাস টাইম। আমাকে বারান্দায় বা বাইরে কেউ দেখলে আরো বিপদ। বাথরুমে ঢুকে দরোজা বন্ধ করে বসে থাকলাম। ক্লাসের ঘন্টা পড়লে সবাই যখন নিজের ক্লাসে চলে গেলো আমি ভাবলাম মিস্টার মাহবুবের কাছে মাফ চেয়ে আসি। কারণ এই বিষয় যদি তিনি প্রিন্সিপালের কাছে জানান, তবে আমাকে কলেজ থেকে আউট করে দেয়া হবে। আমি ভয়ে ভয়ে স্যারের রুমে গেলাম। দরোজায় দাঁড়িয়ে রুমে ঢুকার পারমিশন চাইলাম। তিনি বলেন ‘নো’। আমি কাকুতি মিনতি করি, তিনি চিৎকার করে বলেন-‘গেট আউট, ইউ উইল বি রিপোর্টেড।’ আমি ভয়ে আছি, না জানি কি হয়।

১৩ অক্টোবর’ ৮০।
হাউজ মাস্টার মিস্টার জামান আমাদের ক্লাসের ১৩ জনকে ডাকলেন। সবার সামনে বললেন যে, ‘আই এ্যাম সরি টু সে দ্যাট’ অল অব ইউ ম্যা নট কাম ব্যাক আফটার দ্যা ভ্যাকেশন।’ তারপর সরাসরি আমাকে বললেন, তুমি মিস্টার মাহবুরের সাথে বেয়াদবি করেছো এন্ড ইউ নো দ্যা রেজাল্ট। আমার ক্লাস মেটরা কেউ আমার সাথে কথা বলে না। কিন’ এবার দেখি সবাই হাউজ মাস্টারকে অনুরোধ করলো- প্রিন্সিপাল স্যারকে বিষয়টি না জানানোর জন্য। হাউজ মাস্টার একটা শর্ত দিয়ে বসলেন। কাল এগারোটার মধ্যে মিস্টার মাহবুবের কাছে পায়ে ধরে যদি আমি ক্ষমা চাই, তবে তিনি রিপোর্ট করবেন না।

১৪ অক্টোবর’ ৮০।
সাড়ে দশটার ব্রেকে টিতে না গিয়ে সরাসরি মাহবুব স্যারের রুমে চলে গেলাম। দরোজায় দাঁড়িয়ে বললাম- ‘ম্যা আই কাম ইন স্যার?’ স্যার কোন কথা বলেন না। তাকিয়ে থাকেন। আমি আবার বলি। তিনি তাকিয়ে থাকেন। আমি আবার বলি। তিনি তাকিয়ে থাকেন। আমি তার অনুমতি না নিয়ে তার চেম্বারে ঢুকে টেবিলের নীচে তার পা ধরতে যাই। তিনি আমাকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরেন। সিলেটী ভাষায় বলেন। ‘তোকে আমি এতো পছন্দ করি, আর তুই আমার সাথে বেয়াদবী করলি?’ বলে দেখি প্রায় কেঁদে দেন। উল্লেখ্য, মিস্টার জামান আর মিস্টার মাহবুব, দু’জনই সিলেটের।

১৬ অক্টোবর’ ৮০।
আজ বাড়ি যাবো। ১২ টায় ট্রেন আসলো আখাউড়ায়। আখাউড়া থেকে ট্রেন বদলাতে হয় সিলেটের জন্য। পরবর্তী ট্রেন ৩টায় আসার কথা। এলো ৫টায়। সিলেট পৌছালাম রাত ১২টায়। কাল বাড়ী যাবো।

৩০ অক্টোবর’ ৮০।
কাল কলেজ খোলা। আজ বাড়ি থেকে বেরুলাম। এবার ২০০ টাকা নিলাম মার কাছ থেকে। যদিও ১৫০ টাকা নিলেই হতো। নৌকা করে গাছতলা, গাছতলা থেকে বাসে করে সিলেট। এসে শুনি তুহিন ট্রেনে রিসার্ভেশন করে রাখে নি। সেকেন্ড ক্লাসের হাফ টিকেট কেটে উঠে পড়লাম রাতের ট্রেনে। হাসানের বুদ্ধি। সারা রাত জেগে জেগে বসে থেকে ভোরে এসে চট্টগ্রাম নামি।

৩১ অক্টোবর’ ৮০।
হাফ টিকেট করার জন্য মনে খুব ভয় ছিলো। ট্রেন থেকে নামার পর যদি টি টি ধরে ফেলে? হাসান বুদ্ধি দিলো। ট্রেন স্টেশনে ভিড়ার আগে স্লো  হয়ে যাবে, সে সময় ট্রেন থেকে নেমে যেতে হবে। হাসান নেমে দৌড়ালো, কিছু হলো না। আমি নেমে দাঁড়িয়ে রইলাম এবং পাথরের উপর পড়ে হাঁটুতে ব্যাথা পেলাম। চিটাগাং নেমে সিনেমা দেখলাম ‘সংঘর্ষ’।

৭ নভেম্বর’ ৮০।
আজ অকারণে ‘বাম’ মিস্টার জামানের কয়েকটা স্নেপ খেতে হলো আমাকে। আজ উনি ডিউটি মাস্টার। লাঞ্চের সময় লাইনে দাঁড়িয়েছি, হঠাৎ মনে হলো ইউসুফকে জিগ্যাস করি – সাইন্স ভার্সেস ইন্ডাস্ট্রিয়াল আর্টস ভালিবল ম্যাচ খেলবে কিনা। উনি দেখে ফেলেন এবং কিছু বুঝার আগেই লাইনে দাঁড়িয়ে কথা বলার জন্য আমাকে ঠাস করে স্নেপ করে বসলেন। আবার বলেন, হাউজে যখন কুপন দেয়া হচ্ছিলো তখন আমি কোথায় ছিলাম? সানাউল ভাই আমাদের দিয়ে গার্ডেনিং করাচ্ছিলেন। আমার অংশ শেষ করার পর আমাকে ছেড়ে দিলেন। আমি দৌড়ে ভলিবল গ্রাউন্ডে চলে গেলাম। বাকীরা যায়নি। হাউজে ছিলো। তারা কুপন নিয়েছে। আমি এই কথা বলতে যাবো- এমন সময় জুনিয়ারদের সামনে আবার স্নেপ দিলেন। আমার কাঁদতে ইচ্ছা হচ্ছে।

৮ নভেম্বর’ ৮০।
বাড়ির জন্য খুব মন কাঁদে। মা কি সুস’ আছেন? একদিন পেটে ব্যাথা হয়েছিল। আমি রাত ১০টায় একা ফার্মেসীতে গিয়ে ৬টাকা দিয়ে ৪টা বোরালজিন ট্যাবলেট কিনে দিয়েছিলাম। ব্যাথাটা কমেছে তো? লতিফ আমাকে ছাড়া ব্যাডমিন্টন খেলে না। ও নিশ্চয়ই আঙ্গুলে দিন গুনছে, ভাইয়া কবে আসবে। পুতুল ভাইর সাথে ফারুকের দোকানে বসে কতদিন আড্ডা হয়না, ব্যাডমিন্টন খেলা হয় না।

৯ নভেম্বর’ ৮০।
আমাকে ছাড়া ইন্ডাস্ট্রিয়াল আর্টস গ্রুপ আমাদের সাইন্সকে হারিয়ে দিয়েছিল ভলিবলে। আজ তার শোধ নিলাম। আজ আমরা জিতেছি।

১১ নভেম্বর’ ৮০।
আজ জীবনের একটা স্মরণীয় ঘটনা ঘটলো। আমাদের ক্লাসকে মেরিন একাডেমীতে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রথমবারের মতো কর্ণফুলী নদী দেখলাম, বড় বড় জাহাজ দেখলাম এবং স্পীড বোট চড়লাম। বঙ্গোপসাগরে সূর্যাস- দেখার খুব ইচ্ছা হয়েছিল, কিন’ এ সময় ডাইনিং হলে টি ছিলো তাই দেখা হয়নি। ওয়াসীম ভাইর সাথে দেখা হলো। তাকে দেখে মেরিন একাডেমীতে ভর্তি হতে ইচ্ছা হলো। কিছুক্ষণ পর কয়েকজন জুনিয়ার দেখলাম। তাদের দেখে আর মেরিন একাডেমীতে ভর্তি হতে ইচ্ছা করলো না। জায়গাটা খুব সুন্দর। কর্ণফুলীর মোহনায়। ফেরার পথে আমরা বাসের পেছন দিকে সারা পথ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাওয়ালী আর পপ গান গাইলাম। মাকসুমুল গান গাইলো। আমাদের সাথে একটা ক্যামেরা ছিলো, ব্ল্যাক এন্ড হোয়াইট ফিল্ম ১ রোল কেনা হয়েছিল, কিন’ আমি যেহেতু ক্যামেরা গ্রুপের সাথে ছিলাম না, আমার ছবি মাত্র ২টা উঠলো, তা ও গ্রুপে।

২৭ নভেম্বর’ ৮০।
ক্লাস নাইনের দিন গুলো শেষ হয়ে আসছে। সকালে খুব শীত লাগে। দু’টো কম্বল গায়ে থাকে। এগুলো সরিয়ে ভোর সাড়ে পাঁচটায ঘুম থেকে উঠতে খুব কষ্ট হয়। পিটি, প্যারেড, ক্লাস, কিছু ভালো লাগে না। শুধু গেমস ভালো লাগে। পরীক্ষার আর বেশী দিন নাই। পড়তে ও ইচ্ছা করেনা।

২৯ নভেম্বর’ ৮০।
ক্লাস নইনের রেজাল্ট।
অংক – ২৫+৭৮= ৯৮, ইলেকটিভ – ২৫+৭৫= ১০০, বায়োলজি – ২২+৫৮= ৮০, কেমিস্ট্রি – ২১+৬০= ৮১, বাংলা- ১০+৫৪= ৬৪, ইংরেজী – ১৩+৩৪= ৪৪, ফিজিক্স- ২০+৬৬= ৮৬, ইসলামিয়াত- ২৩+৫৭= ৮০, মোট ৬২৯, ৭৮.৬২%।
বর্তমান পজিশন -১৩

৩০ নভেম্বর’ ৮০।
আজ কলেজের এক্সিবিশন ছিলো। আমি ফিজিক্স ক্লাবে। একটা ইলেকট্রিক কলিং বেল বানালাম। কলেজ অডিটরিয়ামে একজিবিশন হলো। আজ প্যারেন্টস ডেও ছিলো। এক ভদ্রলোক আমার বেল নিয়ে অনেক প্রশ্ন করলেন। পরে বললেন, তিনি চট্টগ্রাম কলেজের ফিজিক্সের লেকচারার। আর্ট ক্লাবের একজিবিশনে ও আমর আঁকা একটা ওয়াটার কালার চান্স পেয়েছে।
আজ মনে  পড়ে দু’বছর আগের কথা। এরকম এক একজিবিশনের দিনে বৃষ্টি ছিলো। সেদিন বড় মামা, কাশেম ভাই আর সুয়াই ভাই আমাকে দেখতে এসেছিলেন। বড় মামা ক্যামেরা নিয়ে এসেছিলেন। অনেকগুলো ছবি তুলেছিলেন। কিন’ পরে আমি ছবি পেলাম না। মামা লিখলেন রীলটা হারিয়ে গেছে।

৩০ ডিসেম্বর’ ৮০।
কালের চাকা ঘুরে এলো। একটা বছর শেষ। দশম মানে উঠে গেলাম। কিন’ মনের ভেতর বড়ো অশানি-। আজ মিস্টার জামানের কথায় একটু সান-না পেলাম। আমি তাহলে কলেজে ফিরে আসছি।
আগামী বছর থেকে নতুন করে শুরু করবো, নতুন জীবন। ৮১ সাল থেকে শুরু হবে অন্য জীবন।

৫,৫৭০ বার দেখা হয়েছে

৩৭ টি মন্তব্য : “ক্লাস নাইন ১৯৮০”

  1. আমিন (১৯৯৬-২০০২)

    আমি ২য়।
    সালাম শাকুর মজিদ ভাই।
    আপনার নাম অনেক শুনেছি। আপনার মত এমন একজন গুণী লেখককে আমাদের মাঝে পেয়ে অনেক ভালো লাগলো।
    লেখা নিয়ে মন্তব্য করবো সময় করে। আপনার পোস্ট সিসিবি দেখে উচ্ছ্বাস সংবরণ করতে পারলাম না।

    জবাব দিন
  2. সামিয়া (৯৯-০৫)

    ভাইয়া খুবই ভাল লাগছে আপনাকে এখানে পেয়ে। পোস্ট অর্ধেকটা পড়ে মন্তব্য করছি। পুরোটা পড়ে বাকি মন্তব্য করবো। আপনাকে নিয়মিত পাবো আশা করি।

    ওই রকিব, ভাইকে এক কাপ চা দে।

    জবাব দিন
  3. ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

    শাকুর ভাই স্বাগ্তম সিসিবিতে। নিশ্চয় সত্যি সত্যি সে সময় লেখা ডায়েরী। এতো সব কিছু তো এখন মনে রাখা সম্ভব নয়।


    “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
    ― Mahatma Gandhi

    জবাব দিন
  4. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    ক্লাস নাইনে পড়া ছেলের লেখা এতো সুখপাঠ্য হতে পারে ভাবতে পারিনি। অসাধারণ। সত্যি অসাধারণ।
    প্রিয়তে নিছি।
    ফেসবুকে শেয়ার দিছি।
    এখন আপনাকে ফেসবুকে আপাঙ্কে অ্যাড করতে হবে। আপনি কি আছেন ফেসবুকে?


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
  5. নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

    শাকুর ভাই,
    কি যে ভালো লাগছে একেবারে অপ্রত্যাশিতভাবে আপনাকে এখানে পেয়ে।
    আপনারা যে বছর বেরিয়ে গেলেন সে বছরের মে মাসের ১৮ তারিখ আমরা জয়েন করেছিলাম। আপনারা এইচ এস সি পরিক্ষার্থীরা ছাড়া কলেজে আর কেউ ছিলোনা তখন, কলেজের ছুটি চলছিলো তখন।আপনার মনে আছে কি?
    এখানে প্রথম ব্লগ লেখার পর একটা ছোট্ট ফর্মালিটি আছে; আপনি সিনিয়র মানুষ, সানা ভাই (সিসিবির প্রিন্সিপাল)-ই আপনাকে মনে করিয়ে দেবেন আশা করি। 😀
    ভালো থাকবেন। আর অবিরতভাবে এখানে লিখতে থাকুন।

    জবাব দিন
  6. রাব্বী (৯২-৯৮)

    শাকুর ভাই, আপনাকে সিসিবিতে দেখে খুব খুশি হলাম। সেই বয়সে এমন লিখতেন এবং সেটা ধরে রেখেছিলেন দেখেই হয়তো আজ আপনি "শাকুর মজিদ"!

    ব্লগে স্বাগতম! সিসিবির সাথেই থাকুন।


    আমার বন্ধুয়া বিহনে

    জবাব দিন
  7. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    ঐ মাহবুব স্যার কি এক্স ক্যাডেট ছিলেন?
    ফায়জুল হাসান স্যার ভূগোলের হইলে, পাইছি।
    আক্কাস স্যার আমাদের বাংলা পড়াতেন। সোহরাওয়ারদি হাসে হাউস মাস্টার ছিলেন। তার ছেলে আমাদের সেভেন্থ ব্যাচে ছিল।
    স্যারের পড়ানোর ভঙ্গি অসাধারণ ছিল।
    এখনো চোখ বন্ধ করলে প্র, পরা, অপ, সম দেখতে পাই।


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
  8. সামিয়া (৯৯-০৫)
    কাল সকার খেলার সময় ওকে মজা দেখাবো। বল দিয়ে গায়ে মারবো।

    খুবই মজা পেলাম :))

    প্যারেডের সময় ড্রামের শব্দ আমার রক্তের মধ্যে শিহরণ জাগায়। আমার ভালো লাগে।

    কাউকে বলিনি কখনও, কিন্তু আমারও খুব ভাল লাগত যখন ড্রাম বাজাত, আপনার মতই রক্তে শিহরণ আসত ।

    কলেজ থেকে যে চিঠিটা আসল, সেটা পড়তে পারলাম না, বোধহয় আপনি কপিপেস্ট করেছেন বলে বিজয়ের ফন্ট এখানে সমস্যা করছে। পড়তে পারলে মজা হত।

    এ পর্যন- যারা যারা আমার বেস্ট ফ্রেন্ড হয়েছে, তারা হচ্ছে – হাসান, গিয়াস, আশরাফ, আলাউদ্দিন, রায়হান, মহিউদ্দিন, মোর্শেদ, রহিম, নওশাদ, আহমেদ, হানিফ আর মোসলেহ।

    এটা পড়ে খুবই মজা পেলাম, আমারও একটা লিস্ট ছিল। এদের সাথে কথা বলব, এদের সাথে বলব না, এড়িয়ে চলব টাইপ। :))

    জবাব দিন
  9. আমিন (১৯৯৬-২০০২)
    আমাদের জীবনটা কি? কোথা থেকে এসেছে? বিরাট নীল আকাশের নীচে চলার জন্য আমরা কোথা থেকে শক্তি পাই? বুঝতে পারি না।

    ক্লাশ নাইনের ছেলের মাঝে এমন গভীর ভাবনা !! পুরাই অভিভূত।
    লেখাটা পড়ে গেলাম। শুধু পড়েই গেলাম একটানে। গল্পগুলো পড়ে মনে হলো চরিত্রগুলোকে আমি চিনি, দেখেছি কোথাও। সব কিছু চোখের সামনে দেখতে পেলাম। ক্যাডেট কলেজগুলো মনে হয় সব কালে সব সময়ে একই রকম থাকে।

    জবাব দিন
  10. এহসান (৮৯-৯৫)

    অনেক দিন পরপর ব্লগে এলাম। আপনার দ্বিতীয় লেখাটা আগে পরেছি। এখন এইটার অর্ধেক পড়লাম। অফিসে যেতে হবে। সিসিবিতে আপনি লিখছেন এটা দেখে খুবই আনন্দিত। দারুণ অভিভূত আপনার ডায়েরী পড়ে। আমিনের মতই বলি... ক্যাডেট কলেজগুলো মনে হয় সব কালে সব সময়ে একই রকম থাকে। কিন্তু এত বড় লেখা আপনি লিখলেন কেমনে? আলসেমী লাগে নাই???

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।