ভাষণ প্রতিলিপি
আজ দুঃখ-ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। আপনারা সবই জানেন এবং বুঝেন। আমরা আমাদের জীবন দিয়ে চেষ্টা করেছি- আজ ঢাকা, চট্টগ্রাম, রংপুর ও যশোরের রাজপথ আমার ভাইয়ের রক্তে রঞ্জিত হয়েছে।
আজ বাংলার মানুষ মুক্তি চায়-তারা বাঁচতে চায়। তারা অধিকার পেতে চায়। নির্বাচনে আপনারা সম্পূর্ণভাবে আমাকে এবং আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করেছেন শাসনতন্ত্র রচনার জন্য। আশা ছিল জাতীয় পরিষদ বসবে, আমরা শাসনতন্ত্র তৈরী করবো এবং এই শাসনতন্ত্রে মানুষ তাদের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তি লাভ করবে।
কিন্তু ২৩ বছরের ইতিহাস বাংলার মানুষের রক্ত দিয়ে রাজপথ রঞ্জিত করার ইতিহাস। ২৩ বছরের ইতিহাস বাংলার মানুষের মুমুর্ষু আর্তনাদের ইতিহাস, রক্ত দানের করুণ ইতিহাস। নির্যাতিত মানুষের কান্নার ইতিহাস।
১৯৫২ সালে আমরা রক্ত দিয়েছি। ১৯৫৪ সালে নির্বাচনে জয় লাভ করেও ক্ষমতায় বসতে পারিনি। ১৯৫৮ সালে দেশে সামরিক শাসন জারি করে আইয়ুব খান দশ বছর আমাদের গোলাম করে রাখলো। ১৯৬৬ সালে ৬-দফা দেয়া হলো এবং এর পর এ অপরাধে আমার বহু ভাইকে হত্যা করা হলো। ১৯৬৯ সালে গণ-আন্দোলনের মুখে আইয়ুবের পতনের পর ইয়াহিয়া খান এলেন। তিনি বলেলেন, তিনি জনগণের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেবেন, শাসনতন্ত্র দেবেন, আমরা মেনে নিলাম।
তার পরের ঘটনা সকলেই জানেন। ইয়াহিয়া খানের সংগে আলোচনা হলো-আমরা তাকে ১৫ ইং ফেব্রুয়ারী জাতীয় পরিষদের অধিবেশন ডাকার অনুরোধ করলাম। কিন্তু ‘মেজরিটি’ পার্টির নেতা হওয়া সত্ত্বেও তিনি আমার কথা শুনলেন না। শুনলেন সংখ্যালঘু দলের ভুট্টো সাহেবের কথা। আমি শুধু বাংলার মেজরিটি পার্টির নেতা নই, সমগ্র পাকিস্তানের মেজরিটি পার্টির নেতা। ভুট্টো সাহেব বললেন, মার্চের প্রথম সপ্তাহে অধিবেশন ডাকতে, তিনি মার্চের ৩ তারিখে অধিবেশন ডাকলেন।
আমি বললাম, তবুও আমরা জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে যাব এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হওয়া সত্বেও কেউ যদি ন্যায্য কথা বলে আমরা তা মেনে নেব, এমনকি তিনি যদি একজনও হন।
জনাব ভুট্টো ঢাকা এসেছিলেন। তাঁর সঙ্গে আলোচনা হলো। ভুট্টো সাহেব বলে গেছেন আলোচনার দরজা বন্ধ নয়; আরো আলোচনা হবে। মওলানা নুরানী ও মুফতি মাহুমুদ সহ পশ্চিম পাকিস্তানের অন্যান্য পার্লামেন্টারী নেতা এলেন, তাদের সঙ্গে আলোচনা হলো- উদ্দেশ্য ছিলো আলাপ-আলোচনা করে শাসনতন্ত্র রচনা করবো। তবে তাদের আমি জানিয়ে দিয়েছি ৬-দফা পরিবর্তনের কোন অধিকার আমার নেই, এটা জনগণের সম্পদ।
কিন্তু ভুট্টো হুমকি দিলেন। তিনি বললেন, এখানে এসে ‘ডবল জিম্মী’ হতে পারবেন না। পরিষদ কসাই খানায় পরিণত হবে। তিনি পশ্চিম পাকিস্তানী সদস্যদের প্রতি হুমকি দিলেন যে, পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিলে রক্তপাত করা হবে, তাদের মাথা ভেঙে দেয়া হবে। হত্যা করা হবে। আন্দোলন শুরু হবে পেশোয়ার থেকে করাচী পর্যন্ত। একটি দোকানও খুলতে দেয়া হবে না।
তা সত্বেও পয়ত্রিশ জন পশ্চিম পাকিস্তানী সদস্য এলেন। কিন্ত পয়লা মার্চ ইয়াহিয়া খান পরিষদের অধিবেশন বন্ধ করে দিলেন। দোষ দেয়া হলো, বাংলার মানুষকে, দোষ দেয়া হলো আমাকে, বলা হলো আমার অনমনীয় মনোভাবের জন্যই কিছু হয়নি।
এরপর বাংলার মানুষ প্রতিবাদ মুখর হয়ে উঠলো। আমি শান্তিপূর্ণ সংগ্রাম চালিয়ে যাবার জন্য হরতাল ডাকলাম। জনগণ আপন ইচ্ছায় পথে নেমে এলো।
কিন্তু কি পেলাম আমরা? বাংলার নিরস্ত্র জনগণের উপর অস্ত্র ব্যবহার করা হলো। আমাদের হাতে অস্ত্র নেই। কিন্তু আমরা পয়সা দিয়ে যে অস্ত্র কিনে দিয়েছি বহিঃশত্রুর হাত থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্যে, আজ সে অস্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে আমার নিরীহ মানুষদের হত্যা করার জন্য। আমার দুঃখী জনতার উপর চলছে গুলী।
আমরা বাংলার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ যখনই দেশের শাসনভার গ্রহণ করতে চেয়েছি, তখনই ষড়যন্ত্র চলেছে-আমাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে।
ইয়াহিয়া খান বলেছেন, আমি নাকি ১০ই মার্চ তারিখে গোলটেবিল বৈঠকে যোগদান করতে চেয়েছি, তাঁর সাথে টেলিফোন আমার আলাপ হয়েছে। আমি তাঁকে বলেছি আপনি দেশের প্রেসিডেণ্ট, ঢাকায় আসুন দেখুন আমার গরীব জনসাধারণকে কি ভাবে হত্যা করা হয়েছে, আমার মায়ের কোল খালি করা হয়েছে ।
আমি আগেই বলে দিয়েছি কোন গোলটেবিল বৈঠক হবে না। কিসের গোলটেবিল বৈঠক? কার গোলটেবিল বৈঠক? যারা আমার মা বোনের কোল শূন্য করেছে তাদের সাথে বসবো আমি গোলটেবিল বৈঠকে ?
তেসরা তারিখে পল্টনে আমি অসহযোগের আহবান জানালাম। বললাম, অফিস-আদালত, খাজনা-ট্যাক্স বন্ধ করুন।আপনারা মেনে নিলেন।
হঠাৎ আমার সঙ্গে বা আমাদের সঙ্গে আলোচনা না করে একজনের সঙ্গে পাঁচ ঘণ্টা বৈঠকের পর ইয়াহিয়া খান যে বক্তৃতা করেছেন, তাতে সমস্ত দোষ আমার ও বাংলার মানুষের উপর চাপিয়ে দিয়েছেন। দোষ করলেন ভুট্টো- কিন্তু গুলী করে মারা হলো আমার বাংলার মানুষকে। আমরা গুলী খাই, দোষ আমাদের- আমরা বুলেট খাই, দোষ আমাদের।
ইয়াহিয়া সাহেব অধিবেশন ডেকেছেন। কিন্ত আমার দাবী সামরিক আইন প্রত্যাহার করতে হবে, সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নিতে হবে, হত্যার তদন্ত করতে হবে। তারপর বিবেচনা করে দেখবো পরিষদে বসবো কি বসনো না। এ দাবী মানার আগে পরিষদে বসার কোন প্রশ্নই ওঠে না, জনগণ আমাকে সে অধিকার দেয়নি। রক্তের দাগ এখনো শুকায়নি, শহীদদের রক্ত মাড়িয়ে ২৫ তারিখে পরিষদে যোগ দিতে যাব না।
ভাইয়েরা, আমার উপর বিশ্বাস আছে? আমি প্রধানমন্ত্রীত্ব চাইনা, মানুষের অধিকার চাই। প্রধান মন্ত্রীত্বের লোভ দেখিয়ে আমাকে নিতে পারেনি, ফাঁসীর কাষ্ঠে ঝুলিয়ে নিতে পারেনি। আপনারা রক্ত দিয়ে আমাকে ষড়যন্ত্র মামলা থেকে মুক্ত করে এনেছিলেন। সেদিন এই রেসকোর্সে আমি বলেছিলাম, রক্তের ঋণ আমি রক্ত দিয়ে শোধ করবো; মনে আছে? আজো আমি রক্ত দিয়েই রক্তের ঋণ শোধ করতে প্রস্তুত।
আমি বলে দিতে চাই, আজ থেকে কোর্ট-কাচারী, হাইকোর্ট, সুপ্রীম কোর্ট, অফিস, আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমুহ অনির্দিষ্ট-কালের জন্য বন্ধ থাকবে। কোন কর্মচারী অফিস যাবেন না। এ আমার নির্দেশ।
গরীবের যাতে কষ্ট না হয় তার জন্য রিক্সা চলবে, ট্রেন চলবে আর সব চলবে।
ট্রেন চলবে- তবে সেনাবাহিনী আনা-নেয়া করা যাবে না। করলে যদি কোন দূর্ঘটনা ঘটে তার জন্য আমি দায়ী থাকবো না।
সেক্রেটারীয়েট, সুপ্রীম কোর্ট, হাইকোর্ট জজকোর্ট সহ সরকারী, আধা-সরকারী এবং স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলো বন্ধ থাকবে। শুধু পূর্ব বাংলার আদান-প্রদানের ব্যাঙ্কগুলো দু-ঘন্টার জন্য খোলা থাকবে। পূর্ব বাংলা থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে টাকা যেতে পারবেন না। টেলিগ্রাফ, টেলিফোন বাংলাদেশের মধ্যে চালু থাকবে। তবে, সাংবাদিকরা বহির্বিশ্বে সংবাদ পাঠাতে পারবেন।
এদেশের মানুষকে খতম করা হচ্ছে, বুঝে শুনে চলবেন। দরকার হলে সমস্ত চাকা বন্ধ করে দেয়া হবে।
আপনারা নির্ধারিত সময়ে বেতন নিয়ে আসবেন। যদি একটিও গুলী চলে তাহলে বাংলার ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তুলবেন। যার যা আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে। রাস্তা ঘাট বন্ধ করে দিতে হবে। আমরা তাদের ভাতে মারবো-পানিতে মারবো। হুকুম দিবার জন্য আমি যদি না থাকি, আমার সহকর্মীরা যদি না থাকেন, আপনারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
তোমরা আমার ভাই, তোমরা ব্যারাকে থাকো, কেউ কিছু বলবেনা। গুলী চালালে আর ভাল হবে না। সাত কোটি মানুষকে আর দাবীয়ে রাখতে পারবা না। বাঙ্গালী মরতেশিখেছে, তাদের কেউ দাবাতে পারবে না।
শহীদদের ও আহতদের পরিবারের জন্য আওয়ামী লীগ সাহায্যে কমিটি করেছে। আমরা সাহায্যের চেষ্টা করবো। আপনারা যে যা পারেন দিয়ে যাবেন।
সাত দিনের হরতালে যে সব শ্রমিক অংশ গ্রহণ করেছেন, কারফিউর জন্য কাজ করতে পারেননি-শিল্প মালিকরা তাদের পুরো বেতন দিয়ে দেবেন।
সরকারী কর্মচারীদের বলি, আমি যা বলি তা মানতে হবে। কাউকে যেন অফিসে দেখা না যায়। এ দেশের মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত খাজনা-ট্যাক্স বন্ধ থাকবে। আপনারা আমার উপর ছেড়ে দেন, আন্দোলন কিভাবে করতে হয় আমি জানি।
কিন্তু হুঁশিয়ার, একটা কথা মনে রাখবেন, আমাদের মধ্যে শত্রু ঢুকেছে, ছদ্মবেশে তারা আত্মকহলের সৃষ্টি করতে চায়। বাঙ্গালী-অবাঙ্গালী, হিন্দু-মুসলমান সবাই আমাদের ভাই, তাদের রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের।
রেডিও, টেলিভিশন ও সংবাদপত্র যদি আমাদের আন্দোলনের খবর প্রচার না করে তবে কোন বাঙ্গালী রেডিও এবং টেলিভিশনে যাবেন না।
শান্তিপূর্ণভাবে ফয়সালা করতে পারলে ভাই ভাই হিসাবে বাস করার সম্ভাবনা আছে, তা না হলে নেই। বাড়াবাড়ি করবেন না, মুখ দেখাদেখিও বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
প্রস্তুত থাকবেন, ঠাণ্ডা হলে চলবে না। আন্দোলন ও বিক্ষোভ চালিয়ে যাবেন। আন্দোলন ঝিমিয়ে পড়লে তারা আমাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়বে। শৃংখলা বজায় রাখুন। শৃংখলা ছাড়া কোন জাতি সংগ্রামে জয়লাভ করতে পারে না।
আমার অনুরোধ প্রত্যেক গ্রামে, মহল্লায়, ইউনিয়নে, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সংগ্রাম কমিটি গড়ে তুলুন। হাতে যা আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকুন। রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেবো। এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ।
এবারের সংগ্রাম, মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম।
মর্মার্থ
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ সেদিন বাঙালীদের স্বাধীনতার জন্য উজ্জীবিত করেছিল। রমনার রেসকোর্স ময়দানের জনসমুদ্রে তাঁর সেই ভাষণ আজও অমর বাণী হয়ে আছে। তাঁর সেই ভাষণ পরবর্তিতে রাজনৈতিক ও গবেষণার উপাদানে পরিণত হয়
৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু ধাপে ধাপে মানুষকে একটা সংকল্পের কাছে পেঁৗছে দিয়েছেন। শুরুতে সেই দুঃখবোধ, তারপর পাকিস্তানিদের শঠতার ইতিহাস। শুরুতে মানুষের বোধের কাছে তার প্রশ্ন ‘কী অন্যায় করেছিলাম?’ এবং একটু পরই ঠিক যখন মানুষ পাকিস্তানিদের শঠতার বিষয়টিকে ঘৃণা জানাতে শুরু করেছে, বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় একটি প্রশ্ন, ‘কী পেলাম আমরা?’ এই প্রশ্নে যখন মানুষ একটা হিসাবের দিকে তাকাতে শুরু করেছে নিজেদের মতো করে, বঙ্গবন্ধু জানিয়ে দিলেন, আমরা পয়সা দিয়ে যে অস্ত্র কিনেছি বহিঃশত্রু থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্য, আজ সেই অস্ত্র ব্যবহার হচ্ছে দেশের গরিব-দুঃখী-আর্ত মানুষের মধ্যে। কী সুন্দর, ঝরঝরে তার বাংলা। অথচ এই মুহূর্তটি মানুষের ঘৃণার একটা চরম বহিঃপ্রকাশের সময়ও। কিন্তু বঙ্গবন্ধু বাঙালির গুলি খাওয়ার প্রসঙ্গ থেকে আবার চলে গেলেন এহিয়া খানের প্রসঙ্গে এবং এ প্রসঙ্গের এক পর্যায়ে যখন বললেন, পাঁচ ঘণ্টা গোপন বৈঠক করে এহিয়া খান বক্তৃতা দিলেন আর সব দোষ দিলেন বঙ্গবন্ধু ও বাংলার মানুষকে, রেসকোর্সের জনতার কাছে পক্ষ-প্রতিপক্ষের বিষয়টি স্থির নিশ্চিত হয়ে গেল। তারপরই দ্বিতীয়বারের মতো ‘ভাইয়েরা আমার’ বলে জানিয়ে দিলেন, ‘ওই শহীদের রক্তের ওপর দিয়ে’ তিনি অ্যাসেম্বলিতে যোগ দিতে পারবেন না। তারপরই শুরু হলো তার ভাষণের সবচেয়ে কেজো অংশটা, যেখানে তিনি হরতালের ঘোষণা দিয়েছেন, হরতালে গরিব মানুষের যাতে কষ্ট না হয়, সে জন্য দিকনির্দেশনা দিয়েছেন এবং অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন। প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল বলে তিনি যখন আহ্বান জানালেন এবং ‘যা কিছু আছে’ তা নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোল, তখন মানুষের সামনে একটা পথ খুলে গেল। সে পথটি আমাদের নিয়ে গেল মুক্তিযুদ্ধে।
সংরক্ষণ
বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ সংরক্ষণও একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। রোমাঞ্চকরও বটে। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনা দেশে-বিদেশে পৌঁছে দেয়ার গুরু দায়িত্ব পালন করেছিলেন কিছু সাহসী মানুষ। তাঁদেরই অন্যতম একজন এম এ খায়ের। বঙ্গবন্ধুর স্নেহধন্য এই তরুণ তখন গোপালগঞ্জ থেকে নির্বাচিত এমএনএ। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে তাঁকে ডেকে নিয়ে মনোনয়ন দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। দেশের মানুষের মুক্তির জন্য রাজনীতি শুরু করেন খায়ের। একইসঙ্গে তিনি ছিলেন গ্রামোফোন কোম্পানি ঢাকা রেকর্ডসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। দেশের কিংবদন্তি শিল্পীদের গানের রেকর্ড প্রকাশ করতেন।
আগেই ভাষণের গুরুত্ব অনুধাবন করতে পেরেছিলেন এম এ খায়ের। তাই ভাষণ রেকর্ড করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। খুব অনুমান করা যায়, কাজটি সহজ ছিল না। ঝড়ের আশঙ্কায় ভীরু পাকিস্তানীরা কাঁপছিল। নজর রাখছিল সব কিছুতে। কিন্তু সকল ভয়কে জয় করে মঞ্চে উঠে পড়েছিলেন খায়ের। তাঁর সঙ্গে ছিলেন ঢাকা রেকর্ডসের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর এনএইচ খন্দকার। জানা যায়, বঙ্গবন্ধু মঞ্চে ওঠার বহু আগেই দু’জন পৌঁছে যান রেসকোর্স ময়দানে। শব্দ ধারণের জন্য সঙ্গে নেন বিশালাকৃতির একটি যন্ত্র। কিন্তু কেউ সেটি দেখতে পারেননি। পাকিস্তানী বাহিনীর হাত থেকে বাঁচাতে মঞ্চের নিচে স্থাপন করা হয় যন্ত্রটি। সে অবস্থায় খুব নীরবে চলে অডিও ধারণের কাজ। মঞ্চের ওপরে বসে তখন দারুণ রোমাঞ্চিত এম এ খায়ের। ভাষণ শুনতে শুনতে শরীরের লোমকূপ জেগে উঠেছে তার। আর ভেতরে ভেতরে প্রতীক্ষা করছেন, কখন রেকর্ডিংয়ের কাজ শেষ করে অফিসে ফিরবেন। ১৮ মিনিট পর সে প্রতীক্ষার অবসান ঘটে। রেকর্ড নিয়ে তেজগাঁওয়ের অফিসে ফিরতে সক্ষম হন এম এ খায়ের। এর মাত্র কয়েক দিন পর বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের রেকর্ড প্রকাশিত হয়। ১৭ মার্চের একটি কপি বঙ্গবন্ধুকে উপহার দেন খায়ের। জানা যায়, কপি হাতে পেয়ে দারুণ উচ্ছ্বসিত হয়ে পড়েন শেখ মুজিব। তবে রেকর্ড প্রকাশের খবর জানাজানি হয়ে গেলে পাকিস্তানীরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে।
রেকর্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের খোঁজ শুরু হয়ে যায়। তবে ইতিহাসের অমূল্য সম্পদ রক্ষায় এবারও গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে ঢাকা রেকর্ডস। এম এ খায়ের জানান, ২৫ মার্চ রাতে তাদের অফিসে ৫০০ রেকর্ড ছিল। সেগুলো মাটির নিচে পুঁতে রাখেন তাঁরা। আর অরিজিনাল কপিটি নিজের সঙ্গে করে নিয়ে যান। পরে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেটি নিয়ে জিঞ্জিরা আগরতলা হয়ে তিনি পৌঁছেন কলকাতায়। সেখানে গিয়ে ভাষণটি এইচএমভি অফিসের কর্মকর্তাদের শোনান। এবং অনুরোধ করেন, এর কিছু কপি করে দেয়ার জন্য। আশ্চর্যের হলেও সত্য যে, অনুরোধ রক্ষা করে ভারতের খ্যাতনামা এই গ্রামোফোন কোম্পানি বিনা খরচে ভাষণে ৩ হাজার কপি করে দেন। মুজিবনগর সরকারের কাছে এগুলো হস্তান্তর করা হয়। এসব কপি পরে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময় বঙ্গবন্ধু ছিলেন পাকিস্তানী কারাগারে বন্দী। কিন্তু এর পরও তার দিকনির্দেশনা অনুযায়ী কাজ হয়েছে। আর সে দিকনির্দেশনা আসে ৭ মার্চের রেকর্ড থেকে।
জানা যায়, ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালনের অপরাধে সাভারে ঢাকা রেকর্ডসের ফ্যাক্টরি গুঁড়িয়ে দেয় পাকিস্তানীরা। এম এ খায়েরের দিলু রোডের বাড়িটিও ডিনামাইট দিয়ে উড়িয়ে দিতে এসেছিল পাকিস্তানী আর্মি। ১৪ এপ্রিল পুরো বাড়িটি ঘিরে ফেলে তারা। পরে এই বাড়ি সরকারের অন্য কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে এমন যুক্তিতে তারা ফিরে যায়। এ বাড়িতেই এখন নীরবে বসবাস করছেন দুঃসাহসী বীর একাত্তরের যোদ্ধা এম এ খায়ের।
ভাষণ পরবর্তী প্রতিক্রিয়া
ইতিহাস নিশ্চিত করবে এ সময় একমাত্র বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বই প্রতিষ্ঠিত ছিল পূর্ব পাকিস্তানে। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশেই চলছিল বেসামরিক প্রশাসন। যদিও মানুষ জানে না কতটা ভয়ঙ্কর আঘাত আসবে, তবুও তারা বাঁশের লাঠি হাতে পাড়ায়-মহল্লায়, শহরে-গ্রামে সর্বত্রই নেতার নির্দেশে মানসিক ও শারীরিক প্রস্তুতি নিতে থাকে। একটি ভাষণের কী শক্তি—সোয়াত জাহাজ ভিড়েছে চট্টগ্রাম বন্দরে। বাঙালিকে হত্যা করার জন্য মারণাস্ত্র বোঝাই হয়ে এসেছে। কাউকে সচেতন করতে হয়নি। ডক শ্রমিকরা বেঁকে বসেছে, এসব খালাস করবে না তারা। ২৩ মার্চ পাকিস্তানের প্রজাতন্ত্র দিবস। ঘরে ঘরে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, অফিস-আদালতে পাকিস্তানের জাতীয় পতাকা ওড়ার কথা। ৭ মার্চের ভাষণ ততক্ষণে বাঙালির লক্ষ্য তৈরি করে দিয়েছে। তারা মানসিকভাবে বিদায় জানিয়েছে পাকিস্তানকে। বুকের ভেতর তৈরি হয়েছে বাংলাদেশ। তাই কারও বলার অপেক্ষা ছিল না। বাঙালি ততক্ষণে লাল-সবুজ পতাকা তৈরি করেছে। লাল বৃত্তের মধ্যে দিয়েছে হলুদ বাংলাদেশের মানচিত্র। পাকিস্তানের পতাকা পোড়াল এ দিন বাঙালি। সর্বত্র ওড়াল স্বাধীনতার প্রতীক লাল-সবুজ আর হলুদে মাখানো পতাকা। দিন যায়—পাকিস্তানের সামরিক মহড়া বাড়তে থাকে। এ দেশের স্বাধীনতাপ্রত্যাশী লড়াকু মানুষ বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে দিকনির্দেশনা পেয়ে গেছে। তারা জানে না কত ভয়ঙ্কর আক্রমণের প্রস্তুতি নিয়েছে শাসকচক্র। তবুও অকুতোভয় সবাই। সেনানিবাস থেকে সামরিক বাহিনীর চলাচলের পথে ব্যারিকেড দিচ্ছে। বাঁশের লাঠি আর ইট-পাথর নিয়ে প্রতিরোধের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
স্বাধীনতার পথে
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা সশস্ত্র সংগ্রামের ভেতর দিয়ে স্বাধীনতা অর্জনকারী অন্যান্য দেশের থেকে পৃথক। আলজেরিয়া, মালয়েশিয়া, চীন, ভিয়েতনাম এমনকি আমাদের প্রতিবেশী মিয়ানমার প্রভৃতি দেশ সুদীর্ঘ সময় জুড়ে গোপনে সশস্ত্র সংগ্রামের প্রস্তুতি নিয়েছে, গেরিলা যুদ্ধ করেছে এবং বহু বছরব্যাপী সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করেছে।
কিন্তু চূড়ান্ত বিচারে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ অন্যান্য দেশের মতো দীর্ঘায়িত হয়নি। মাত্র ৯ মাসের যুদ্ধে আমাদের দেশ হানাদারমুক্ত হয়। অনন্যসাধারণ আমাদের এই মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে তাই অন্য কোন দেশের মুক্তিযুদ্ধ বা স্বাধীনতা সংগ্রামের কোন মিল খুঁজে পাওয়া যাবে না। সিপিবি, ন্যাপ প্রভৃতি দল মুক্তিযুদ্ধ দীর্ঘায়িত হবে বলে তত্ত্বগতভাবে এবং বাস্তবেও বিশ্বাস করতো। তাদের বিশ্বাসের ভিত্তি হচ্ছে কনভেনশনাল আইডিয়া আর ক্লাসিক্যাল মুক্তিযুদ্ধ (ভিয়েতনাম, লাওস, কম্পোচিয়া অথবা আলজেরিয়ার মতো) তবে বঙ্গবন্ধু জানতেন, যদি ব্যাপারটা যুদ্ধ পর্যন্ত গড়ায় তাহলে তা কোন ক্ল্যাসিক্যাল কনভেনশনাল মুক্তিযুদ্ধ হবে না। এটা হবে জনগণের সশস্ত্র গণঅভু্যত্থান। তা-ই ঘটেছিল ১৯৭১-এ। এই সশস্ত্র গণঅভু্যত্থানটি সাসটেইন করেছে ৯ মাস। সত্য বটে চূড়ান্ত পর্বে এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল ভারতীয় মিত্রবাহিনী। কিন্তু সেটি ছিল ঘটনাবলীর লজিক্যাল সমাপনী। তবে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণে প্রদত্ত সশস্ত্র গণঅভু্যত্থানের দিক-নির্দেশনা না থাকলে এবং বাংলাদেশের মানুষ তার জন্য অকাতরে জীবন না দিলে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন ছিল অসম্ভব।
তথ্যসুত্র-
১)কালের কণ্ঠ ২) দৈনিক জনকণ্ঠ ৩)ব্লগ প্রিয় ৪) মুক্তিসেনা ব্লগস্পট ৫) সুজনহেরা
৭ই মার্চ হলো ৭ই মার্চ।
বাঙালি জাতির জন্য শেখ মুজিবুর রহমানের সেই ভাষণ শুধুমাত্র ভাষণ নয়। আরো বেশি কিছু। আমাদের মুক্তির সনদ। ১৯৪৭ এ করা সোহরাওয়ারদি, ফজলুল হকদের ভুল এভাবেই শেখ মুজিব শুধরান। আমরা বাঙালিদের সৌভাগ্য যে জাতির সেই ক্রান্তিলগ্নে এক অনন্য নেতা আমাদের পথ দেখিয়েছেন।
শেখ মুজিবুর তোমার কাছে বাঙালি জাতি ঋণী। তুমি সালাম গ্রহণ কর। বিনম্র শ্রদ্ধায় আমার মস্তক অবনত আজ।
পরিশেষঃ শেখ মুজিবের সাথে কেউ আজকের আওয়ামী লীগকে মেলাবেন না দয়া করে।
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
কথাটা ঠিক বলেছেন ভাই। মেলানো অর্থহীন হবে।
চাঁদ ও আকাশের মতো আমরাও মিশে গিয়েছিলাম সবুজ গহীন অরণ্যে।
এই লেখাটা থাকুক এখানে।
এক বিদেশি সাংবাদিক ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ সকাল থেকেই একজন দোভাষী খুঁজছিলেন, সেদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে ভাষণ দেবেন তা তাৎক্ষণিক ইংরেজি করে তাকে শোনাবে, সে জন্য। দুপুরের আগে আমার সঙ্গে তার যোগাযোগ হলো, বললাম ভাষণ শুরুর আগে টিএসসিতে এসে তার সঙ্গে রেসকোর্স মাঠে যাব। মাঠে সেদিন কত মানুষ ছিল, কেউ বলতে পারবে না। হয়তো ১০ লাখ। হয়তো আট লাখ। কিন্তু মনে আছে ভাষণ শুরুর আধঘণ্টা আগে যখন বিদেশি সাংবাদিককে সঙ্গে নিয়ে বেরোই, মনে হলো সারাদেশ ভেঙে পড়েছে রেসকোর্স মাঠে। সাংবাদিকদের জন্য মঞ্চের সামনে জায়গা ছিল। সাংবাদিক হাত ধরে আমাকে টেনে সেখানে নিয়ে গেলেন। আমি আমার কপালকে ধন্যবাদ দিলাম। এত সামনে থেকে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনতে পাব, ভাবতেও পারিনি।
বঙ্গবন্ধুকে বেশ চিন্তিত মনে হচ্ছিল। বক্তৃতা শুরুর আগে দু'একবার হাত দিয়ে মাথার চুল সমান করলেন; আকাশে একটা হেলিকপ্টার উড়ছিল। সেদিকে একবার তাকালেন। তারপর সামনের মানুষের দিকে গভীর দৃষ্টি ফেললেন। মনে হলো তার চিন্তা সরে গিয়ে মুখে একটা প্রসন্ন ভাব যেন এলো। তিনি লেকটার্নের সামনে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা শুরু করলেন। পুরো বক্তৃতাই এখন ডিভিডিতে পাওয়া যায়। কিন্তু যা পাওয়া যায় না তা হচ্ছে ওই কুড়ি-বাইশ মিনিটের জাদু। সেই জাদুর স্পর্শ অনুভব করেছিল তারাই, যারা সেদিন রেসকোর্সে ছিল। বঙ্গবন্ধু কথা বলছিলেন না, তিনি যেন বাঙালি জাতির সংগ্রামী ইতিহাসের একটা মুখবন্ধ লিখছিলেন।
যাতে প্রতিফলিত হচ্ছিল বাঙালি চরিত্রের শ্রেষ্ঠ প্রকাশগুলো তার সাহস আর সংকল্প, তার আত্মদৃপ্ত এবং বলিষ্ঠ প্রত্যয়, তার সততা আর সৌজন্য, তার ভেতরের আগুন এবং বারুদ। সারা মাঠের মানুষ নিঃশব্দে শুনছিল সেই জাদুময় ভাষণ, যা তাদের সব দ্বিধাদ্বন্দ্ব ঝেড়ে ফেলে তাদের এক একজন যোদ্ধায় পরিণত করছিল। এরকম গভীর আর জলদ কণ্ঠের ভাষণ বঙ্গবন্ধুও হয়তো আর দেননি এবং বক্তৃতাটি শেষ হলে কারও মনে কোনো সন্দেহ ছিল না তিনি কী চাইছেন :তিনি যা চাইছিলেন, আমরাও তা চাইছিলাম বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং তার ভাষণে তিনি মানুষকে প্রস্তুত হতে বলেছিলেন। তার ভাষণটি পাকিস্তানিরাও সঠিক পড়তে পেরেছিল। কিন্তু পাকিস্তানিরা কাপুরুষ ছিল এবং কাপুরুষরা যা করে তারাও তা করেছিল। ঘুমন্ত মানুষ, নারী ও পুরুষের ওপর তারা রাতের অন্ধকারে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। বঙ্গবন্ধুর ভাষণটি ছিল একটি সাহসী জাতির প্রত্যয়ী কিছু উচ্চারণ। বঙ্গবন্ধু নিজেও হয়তো পাকিস্তানিদের কাপুরুষতার ব্যাপকতাটা বুঝতে পারেননি, যদিও তাদের কপটতা ও মিথ্যাবাদিতার বিষয়টি তিনি তার ভাষণে তুলে ধরেন।
২. একটা দুঃখবোধ থেকে ভাষণটা তিনি শুরু করেছিলেন। 'আজ দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি।' এভাবেই তার ভাষণ শুরু। 'দুঃখ', 'দুঃখের বিষয়', 'দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়' এবং 'করুণ ইতিহাস'_ শুরুর কয়েক মিনিটেই এরকম বর্ণনা তিনি কয়েকবার দিলেন। আমি প্রথম তিন-চার লাইন দ্রুত অনুবাদ করলাম, কিন্তু সাংবাদিক আমাকে থামিয়ে দিলেন। 'আমি বরং ভাষণটা শুনি, তুমি যদি পার, মনে রাখার চেষ্টা কর, পরে আমাকে অনুবাদে শুনিও' সাংবাদিক বললেন। বঙ্গবন্ধুর ভাষণের পুরোটা সময় সেই সাংবাদিক একাগ্রতা নিয়ে ঠায় বসেছিলেন। তার মুখ দেখে মনে হচ্ছিল তিনি প্রতিটি বাক্য বুঝছেন, যেন বঙ্গবন্ধু বাংলাতে নয়, ইংরেজিতে ভাষণটা দিচ্ছেন।
এবং আশ্চর্য, শুনতে শুনতে ভাষণটা আমার মাথায় একটা জায়গা করে নিল। বিকেলে চারুকলায় সাংবাদিককে যখন মূল বিষয়গুলো অনুবাদ করে দিচ্ছিলাম, দেখতে পেলাম, আমার গলাতেও যেন আলাদা একটা জোর এসেছে, যেন ভাষণটা আমাকে আলাদা শক্তি জোগাচ্ছে। সাংবাদিক বললেন, কী ছিল শেখ সাহেবের ভাষণে? আমি কিছু বলার আগে তিনি নিজেই বললেন, 'নিশ্চয়ই জাদু। ইট ওয়াজ সিম্পলি ম্যাজিক্যাল', তিনি বললেন।
৩. জাদু তো বটেই। ইতিহাসের কিছু কিছু সময় থাকে, যখন জাদুর প্রয়োজন হয়; যখন বাস্তব এমন কঠিন হয়ে পড়ে, পরিস্থিতি এমন প্রতিকূলে চলে যায় মানুষের যে একটা জাদুর ঘটনা না ঘটলে কিছুতেই মানুষ পথ খুঁজে পায় না, পায়ের ওপর শক্ত হয়ে দাঁড়াতে পারে না। শিরদাঁড়াটা তাদের প্রয়োজনীয় দার্ত্য পায় না। বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ছিল সেই জাদুর ঘটনা। একাত্তরের মার্চের দিকে তাকান। ৭ মার্চের আগের ও পরের দিনগুলোর কথা ভাবুন। ৭ মার্চের পর বাংলাদেশের ইতিহাস বদলে গেল। আমরা বুঝে নিলাম, পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের উদ্ভট গৃহস্থালির দিন শেষ।
কী ছিল সেই ভাষণে?
আজকালকার রাজনীতিবিদদের বক্তৃতা শুনলে দুঃখ হয়, খুব কমই কাউকে তার মনের ভাষা খুব পরিষ্কারভাবে বলতে শুনি। বেশিরভাগ রাজনীতিক বাক্য সমাপ্ত করেন না, অশুদ্ধ বাংলা ব্যবহার করেন। বঙ্গবন্ধুর অনেক গুণগ্রাহী এবং অনুসারীকেও দেখি, তার মতো গুছিয়ে বলতে একেবারেই অপারগ। বঙ্গবন্ধুর ভাষণগুলোতে তিনি প্রতিটি বাক্য শেষ করতেন। একটি বাক্য থেকে অন্য বাক্যে তার যাত্রা হতো অবধারিত এবং যৌক্তিক। তিনি বুঝতেন কখন, কোথায়, কতটা আবেগ মাখাতে হবে কথায়; কোথায় দিতে হবে প্রেরণার বাণী অথবা কাজের উপদেশ।
৭ই মার্চের ভাষণে তিনি আঞ্চলিক অনেক শব্দ ব্যবহার করেছেন 'শাসনতন্ত্র তৈয়ার' করা, 'বলে দেবার চাই যে', 'হুকুম দেবার না পারি', 'মায়নাপত্র নেবার পারে' এরকম বলেছেন। এক সময় যখন তিনি বললেন, 'সাত কোটি মানুষকে দাবায়া রাখতে পারবা না' মনে হলো, এখানে 'দাবিয়ে রাখতে পারবে না' বললে যেন তার গলার আগুনটা ঠিকমতো উত্তাপ ছড়াতে পারত না। যে মুহূর্তে কথাগুলো তিনি বলছিলেন, সেটি একটি আরোহণের মুহূর্ত। যুক্তি দিয়ে, উদাহরণ দিয়ে তিনি যুক্তির অংশটি প্রতিষ্ঠা করে 'দাবায়া রাখার' মুহূর্তে উঠে গেলেন আবেগ ও প্রত্যয়ের একটি চূড়ায়। ঠিক ওই সময়ে তার আঞ্চলিক ভাষা থেকে কয়েকটি শব্দ ধার নেওয়াটা যেন বাংলাদেশের প্রাণের উচ্চারণটি তীব্র স্বতঃস্ফূর্ততায় প্রকাশ করার জন্য জরুরি হয়ে পড়ল।
অথচ তার ভাষণের অনেক জায়গায় বঙ্গবন্ধু বাংলা ভাষাকে খুব সাজিয়ে ব্যবহার করেছেন। '২৩ বছরের ইতিহাস, মুমূর্ষু নর-নারীর আর্তনাদের ইতিহাস', অথবা 'বাংলার ইতিহাস এ দেশের মানুষের রক্ত দিয়ে রাজপথ রঞ্জিত করার ইতিহাস।' অথবা 'তারা শান্তিপূর্ণভাবে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার জন্য স্থির প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলো।' বঙ্গবন্ধুর ভাষণটির মুদ্রিত রূপটি আমাদের এরকম একটা ভাবনার কাছে নিয়ে যায়। তিনি কি আগে লিখেছিলেন ভাষণটির একটি খসড়া? তা না হলে এত সুন্দর কী করে হয় তার বাংলা? এত সুঠাম বাক্যে কীভাবে তিনি সাজান তার কথাগুলো?
বঙ্গবন্ধুর কয়েকটি ভাষণ শুনেছি বলে আমি বলতে পারি, ওইদিন ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর থেকে রেসকোর্স পর্যন্ত যাত্রায় ভাষণটি তিনি তার মাথায় লিখে নিয়েছিলেন। মাত্র কুড়ি-বাইশ মিনিটের ভাষণ, কিন্তু কী বাঙ্ময়। বাঙালির সংগ্রামের ইতিহাস থেকে নিয়ে সংগ্রামের রূপরেখা, মানুষের করণীয় এবং স্বাধীনতার একটা ঘোষণা। সবই তিনি ওই সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় বলে দিলেন। বঙ্গবন্ধু ইংরেজি ভালোই জানতেন। স্বাধীনতার পর ডেভিড ফ্রস্টকে দেওয়া তার সাক্ষাৎকারটি শুনলে বোঝা যাবে, ইংরেজিতে তার দখল মন্দ ছিল না। কিন্তু ৭ মার্চের ভাষণে তিনি অকারণ কোনো ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করেননি। 'প্রেসিডেন্ট', 'ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি' অথবা 'সেক্রেটারিয়েট', 'সুপ্রিম কোর্ট'। এসব শব্দ বা বর্ণনা ব্যবহার করেছেন; কিন্তু এগুলো তো ভাষার প্রতিদিনের ব্যবহারেই আমরা বলি। কিন্তু তিনি অর্থনৈতিককে ইকোনমিক বলেননি, সাংস্কৃতিককে কালচারাল বলেননি। মুক্তিকে ইন্ডিপেন্ডেন্স বলেননি, নেতৃবৃন্দ না বলে লিডার্স বলেননি। পুরো ভাষাটা বাংলার প্রাণবন্ত ব্যবহারের একটি দলিল, যা একই সঙ্গে শিক্ষাহীন গ্রামের মানুষ এবং শিক্ষিত শহুরে মানুষ বুঝতে পারবে। একাত্তরের ৭ মার্চ যারা রেসকোর্সে এসেছিল, তারা সবাই বুঝেছে, পরের দিন যখন রেডিওতে সেটি প্রচারিত হয়, সবাই বুঝেছে। আজও যখন ভাষণটি কেউ শোনেন, সমাজ বা বিত্তের যে প্রান্তেই তার অবস্থান, তিনি সেটি বোঝেন।
বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণকে কেউ কেউ একটি কবিতার সঙ্গে তুলনা করেছেন। কবিতাই বটে। কবিরা যদি যথাস্থানে যথাশব্দ ব্যবহারে পারদর্শী হন, তাহলে বঙ্গবন্ধুও তো কবি। এ ভাষণটিতে ব্যবহৃত প্রতিটি শব্দই নির্বিকল্প, প্রতিটি শব্দই তাৎপর্যমণ্ডিত। বক্তৃতার শেষে উচ্চারিত 'এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম' একটি দু'পঙ্ক্তির কবিতাই বটে। এখানে মুক্তি ও স্বাধীনতার দুটি ব্যাখ্যা দেওয়া আমাদের জন্য জরুরি হয়ে পড়ে। স্বাধীনতা যতটা রাজনৈতিক-ভৌগোলিক, মুক্তি ততটাই অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং মনস্তাত্তি্বক। একটি জাতি স্বাধীন হলেই সে মুক্ত হয় না। একটি দেশ অন্য কোনো দেশের আদর্শ ধারণ করে তার মুক্তিকে বিলিয়ে দিতে পারে। বঙ্গবন্ধু মুক্তির তাৎপর্য কী, তা জানতেন। তার কথা প্রথমেই উল্লেখ করেছেন। স্বাধীনতার বিষয়টি নিয়ে তার দ্বিধা ছিল না। স্পষ্ট কণ্ঠে স্বাধীনতার কথা বলেছেন। সেদিন তার শ্রোতারা দুটিই চেয়েছিল। কিন্তু মাত্র সাড়ে চার বছর পর তার যে ঘাতকরা পাকিস্তানি কাপুরুষতার পুনরাবৃত্তি ঘটাল, তারা স্বাধীন দেশের নাগরিক হয়েও মুক্তি পায়নি। তারা পাকিস্তানের কাছে আত্মা বিক্রি করে দিয়েছিল। যুদ্ধাপরাধী, উগ্রবাদীরাও মুক্ত নয়। তাদের নিয়ন্ত্রণ করছে পাকিস্তানি ভাবাদর্শ এবং অনেক ক্ষেত্রে অর্থ। বঙ্গবন্ধু সেই মুক্তি চেয়েছিলেন, যা স্বাধীনতাকে অর্থবহ করে।
বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনতে শুনতে আমার মনে হচ্ছিল, তিনি শুধু প্রত্যয় নয়, সৌজন্যে? সততায় সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন। তিনি 'এহিয়া সাহেব', 'ভুট্টো সাহেব' বলেছেন একাধিকবার। তার কণ্ঠে হয়তো কিছুটা শ্লেষ ছিল। কিন্তু সৌজন্যও ছিল। একবার বলেছেন, 'আমরা ভাতে মারব, আমরা পানিতে মারব', কিন্তু ঠিক তারপর বলেছেন, 'তোমরা আমার ভাই, তোমরা ব্যারাকে থাক, কেউ তোমাদের কিছু বলবে না।' এই সৌজন্য পাকিস্তানি কোনো নেতা কোনোদিন দেখাতে পারেননি। এ জন্যই কি-না, ভুট্টো এত বিরাট জমিদার আর প্রতিপত্তিশালী রাজনীতিবিদ হয়েও বঙ্গবন্ধুর সামনে এলে বাহাদুরিটা মুলতবি রাখতেন। ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু ৬ দফা দাবি তুললে ভুট্টো হইচই শুরু করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু তাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন, তার সঙ্গে তর্কে নামতে। ভুট্টো সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেননি। অথচ জাতিসংঘে পাকিস্তানের সামরিক অভিযানের পক্ষে ঘণ্টার পর ঘণ্টা তিনি বক্তৃতা দিতেন। বঙ্গবন্ধুর কাছে ছিল যুক্তি এবং সততা, ভুট্টোর ছিল কপটতা আর অযুক্তি। বঙ্গবন্ধুর সামনে তার নিজেকে অরক্ষিত মনে হওয়াটাই স্বাভাবিক।
৭ই মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু ধাপে ধাপে মানুষকে একটা সংকল্পের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। শুরুতে সেই দুঃখবোধ, তারপর পাকিস্তানিদের শঠতার ইতিহাস। শুরুতে মানুষের বোধের কাছে তার প্রশ্ন 'কী অন্যায় করেছিলাম?' এবং একটু পরই ঠিক যখন মানুষ পাকিস্তানিদের শঠতার বিষয়টিকে ঘৃণা জানাতে শুরু করেছে, বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় একটি প্রশ্ন, 'কী পেলাম আমরা?' এই প্রশ্নে যখন মানুষ একটা হিসাবের দিকে তাকাতে শুরু করেছে নিজেদের মতো করে, বঙ্গবন্ধু জানিয়ে দিলেন, আমরা পয়সা দিয়ে যে অস্ত্র কিনেছি বহিঃশত্রু থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্য, আজ সেই অস্ত্র ব্যবহার হচ্ছে দেশের গরিব-দুঃখী-আর্ত মানুষের মধ্যে। কী সুন্দর, ঝরঝরে তার বাংলা। অথচ এই মুহূর্তটি মানুষের ঘৃণার একটা চরম বহিঃপ্রকাশের সময়ও। কিন্তু বঙ্গবন্ধু বাঙালির গুলি খাওয়ার প্রসঙ্গ থেকে আবার চলে গেলেন এহিয়া খানের প্রসঙ্গে এবং এ প্রসঙ্গের এক পর্যায়ে যখন বললেন, পাঁচ ঘণ্টা গোপন বৈঠক করে এহিয়া খান বক্তৃতা দিলেন আর সব দোষ দিলেন বঙ্গবন্ধু ও বাংলার মানুষকে, রেসকোর্সের জনতার কাছে পক্ষ-প্রতিপক্ষের বিষয়টি স্থির নিশ্চিত হয়ে গেল। তারপরই দ্বিতীয়বারের মতো 'ভাইয়েরা আমার' বলে জানিয়ে দিলেন, 'ওই শহীদের রক্তের ওপর দিয়ে' তিনি অ্যাসেম্বলিতে যোগ দিতে পারবেন না। তারপরই শুরু হলো তার ভাষণের সবচেয়ে কেজো অংশটা, যেখানে তিনি হরতালের ঘোষণা দিয়েছেন, হরতালে গরিব মানুষের যাতে কষ্ট না হয়, সে জন্য দিকনির্দেশনা দিয়েছেন এবং অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন। প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল বলে তিনি যখন আহ্বান জানালেন এবং 'যা কিছু আছে' তা নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোল, তখন মানুষের সামনে একটা পথ খুলে গেল। সে পথটি আমাদের নিয়ে গেল মুক্তিযুদ্ধে।
৪. একজন মানুষ এত সহজ ভাষায় মানুষের মনের ভেতরে, মাথার ভেতরে, রক্তের ভেতরে কীভাবে ঢুকে যেতে পারেন, তার প্রমাণ একাত্তরের ৭ মার্চে আমি পেয়েছিলাম। বঙ্গবন্ধুর প্রতিটি কথা দূরবিস্তারি অনুরণন তুলছিল রেসকোর্সের মাঠে। মানুষ আন্দোলিত হচ্ছিল, উদ্বেলিত হচ্ছিল ভাষণটির প্রতিটি বাক্য শুনে। আঞ্চলিক শব্দ মিশিয়ে যে বাংলা তিনি সেদিন ব্যবহার করেছিলেন তাতে ইতিহাসের, লোকসংস্কৃতি আর জনজীবনের গভীরের দোলা অনুভব করা যাচ্ছিল। আজও যখন ভাষণটি শুনি, চোখ বন্ধ করলে বঙ্গবন্ধুর তেজোদীপ্ত চেহারাটা মনে ভেসে আসে। তার কথাগুলো পরিষ্কার শুনতে চাই আর অনেক দিন আগের সেই অপরাহ্নে ফিরে যাই। বিদেশি সাংবাদিক তার হোটেলে ফিরে যাওয়ার আগে আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম। এ ভাষণের পর কী হতে পারে। তিনি এক মুহূর্তে ভেবে বলেছিলেন, 'গেট রেডি ফর দ্য ওর্স্ট, অ্যান্ড দ্য বেস্ট।' ওর্স্ট ছিল ২৫ মার্চের তারপর বেস্টও ছিল ২৫ মার্চের বাঙালির জ্বলে ওঠা এবং স্বাধীনতাকে করতলগত করা। বঙ্গবন্ধুর ভাষণটি শুনতে শুনতে ঠিক এই কথাগুলো, লাখ লাখ মানুষের মতো, আমিও ভাবছিলাম। ভাষণের শুরুতে বঙ্গবন্ধু যে কিছুটা চিন্তিত ছিলেন, তা কি ওই ওর্স্টের সম্ভাবনা ভেবে? সে জন্যই কি এতটা উদ্দীপ্ত ছিল তার ভাষণ, এতটা সাবলীল এবং জাদুবিস্তারি, সেই ওর্স্টকে ছাড়িয়ে বেস্টের সাধনায় বাঙালিকে তৈরি করতে? তবে এটি তো নির্দ্বিধায় বলা যায়, ভাষণটি শুধু একাত্তর নয়, সব সময়ের জন্য প্রাসঙ্গিক যতদিন আমাদের সব ক্ষেত্রে মুক্তি না অর্জিত হবে ততদিন আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে, যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে এবং সাধনা চালিয়ে যেতে হবে 'বেস্ট'-এর জন্য।
------ভাষার জাদু :বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ
: সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ