রঙ্গরসে জীবনযাপন


বউকে ভয় পাওয়া নিয়ে অন্তত এক হাজার গল্প এখানে-সেখানে ছড়িয়ে আছে। সেসব লিখতে গেলে দিস্তা দিস্তা কাগজের প্রয়োজন পড়বে। তবে সেসব গল্প অনেকেরই অনেকবার শোনা। যাদেরই বউ আছে, তারা এসব গল্প জানেন। আর যারা বউকে ভয় পান না বলে দাবি করেন, তাদের বলি বউকে ভয় পাওয়া কিন্তু নিয়ম এবং লাভজনক। আবার বউকে ভয় না পেলেও ভয় পাচ্ছেন এখন একটা মনোভাব দেখানো কিন্তু বিরাট উপকারী। বউকে খালি বুঝিয়ে দেবেন যে তাকে ভয় পান। ব্যস, তাতেই বউ খুশি।

নাসিরউদ্দিন হোজ্জার সেই বিখ্যাত গল্পটা বলি। রসিয়ে রসিয়ে পড়তে হলে সৈয়দ মুজতবা আলীর লেখাটি পড়ুন। আর হাতের কাছে বইটা না থাকলেও এখানেই পড়ে ফেলুন। ভাষার আমেজটা পাবেন না, কেবল গল্পটাই জানবেন।
হোজ্জা ঠিক করলেন, তুরস্কে আপাতত থাকবেন না। চলে গেলেন ইরানে। অতিথি হলেন রাজার। কিছুদিনের মধ্যেই রাজা চিনে ফেললেন রতœটিকে। শেষ পর্যন্ত রাজার সঙ্গে সম্পর্কটি হলো বন্ধুত্বের। বন্ধুত্বের নিদর্শন হিসেবে একদিন রাজা হোজ্জাকে কিছু দিতে চাইলেন। কিন্তু কিছুই চাই না হোজ্জার। অনেক পীড়াপীড়িতে অবশেষে রাজি হলেন। তাহলে কী চাই হোজ্জার? প্রতিদিন শুধু ডিম। তাও আবার সবার কাছ থেকে না। রাজ্যের যে প্রজা বউকে ভয় পায় না, সে প্রতিদিন একটি করে ডিম দেবে হোজ্জাকে। পুরা রাজ্যে ঘোষণা দিয়ে দিলেন রাজা।
পরদিন ভোর হতেই নতুন কাণ্ড। হোজ্জার বাড়ির সামনে লম্বা লাইন। রাজ্যের প্রায় সব বিবাহিত পুরুষ চলে এসেছে ডিম নিয়ে। দু-একজন বীর পুরুষ বাসায় বসে ছিলেন, কিন্তু বউ যখন জিজ্ঞেস করল, ‘তাহলে তুমি আমাকে ভয় পাও না’। তখন কেউ আর ঘরে বসে থাকতে সাহস পেল না।
নাসিরউদ্দিন হোজ্জা প্রতিদিন হাজার হাজার ডিম পেতে লাগলেন, আর বিক্রি করেই কোটিপতি হোজ্জা। রাজা দেখলেন, তার মন্ত্রীরাও হোজ্জাকে একটা করে ডিম দিয়ে আসছেন।
এভাবে দিন যায়, মাস যায়। একদিন হোজ্জা রাজার কাছে ছুটি চাইলেন এক মাসের। তুরস্কে ফিরে যাবেন, পত্নীকে নিয়ে আসতে। বিরস বদনে ছুটি দিলেন রাজা। এক মাস পরে হোজ্জা আবার পত্নী নিয়ে ফিরেও এলেন।
হোজ্জা এসেছেন রাজার সঙ্গে দেখা করতে। অনেক কথার পর রাজা জিজ্ঞেস করলেন, ‘বন্ধু, আমার জন্য তুরস্ক থেকে কী এনেছ।’ হোজ্জা মুচকি হেসে বললেন, ‘রাজা মশাই, এমন কিছু এনেছি আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না।’ চরম আগ্রহে রাজা জানতে চাইলেন ‘কী এনেছ, হোজ্জা?’ গলা একটু চড়িয়ে হোজ্জা বললেন, ‘হুজুর, আপনি তো জানেন, পুরো দুনিয়ায় সৌন্দর্যে তুর্কি রমণীরাই সেরা। আমি সে রকম একজন তুর্কি রমণী এনেছি।’ রাজার আগ্রহ বেড়ে গেল। জানতে চাইলেন কেমন সেই রমণী। হোজ্জা এবার গলা আরেকটু চড়িয়ে তুর্কি রমণীর নখ থেকে মাথার চুল পর্যন্ত বর্ণনা শুরু করলেন। কিন্তু শেষ করতে পারলেন না, বর্ণনা একটু সরস হতেই রাজা ফিসফিস করে হোজ্জাকে বললেন, বন্ধু, একটু আস্তে বলো। অন্দরমহলে রানি আছেন। তিনি শুনতে পেলে সর্বনাশ।’
এবার হোজ্জা রাজার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললেন, রাজা মশাই, একটা করে ডিম কাল থেকে আপনিও পাঠিয়ে দেবেন।

এটা হচ্ছে আমার সদ্য প্রকাশিত বই রঙ্গরসে জীবনযাপন বইয়ের সামান্য একটা অংশ। আজই বইটি মেলায় আসলো। শুদ্ধস্বর প্রকাশনীতে পাওয়া যাবে।
ব্লগে পুরানা পোলাপাইন দেখে পোস্ট দিতে লোভ হল। ভাবলাম চামে নিজের বইয়ের প্রচারণাটাও করে ফেলি

৩,৭৫৭ বার দেখা হয়েছে

২৬ টি মন্তব্য : “রঙ্গরসে জীবনযাপন”

  1. রেজওয়ান (৯৯-০৫)

    ওয়েলকাম ব্যাক মাসুম ভাই 🙂
    এই সুদূর রংপুর থেকে কিভাবে সংগ্রহ করব সিসিবিয়ানদের বই সেইটা ভাবতেসি 🙁
    কেউ কি আছেন যে এই বান্দাকে সাহায্য করতে পারবেন ??? 😕

    জবাব দিন
  2. মুসতাকীম (২০০২-২০০৮)

    আহারে এই প্রবাসে বইসা আমি কই পামু 🙁 🙁 🙁


    "আমি খুব ভাল করে জানি, ব্যক্তিগত জীবনে আমার অহংকার করার মত কিছু নেই। কিন্তু আমার ভাষাটা নিয়ে তো আমি অহংকার করতেই পারি।"

    জবাব দিন
  3. নাজমুল (০২-০৮)

    ওয়েলকাম ব্যাক মাসুম ভাই
    এই সুদূর ইংল্যান্ড থেকে কিভাবে সংগ্রহ করব সিসিবিয়ানদের বই সেইটা ভাবতেসি
    কেউ কি আছেন যে এই বান্দাকে সাহায্য করতে পারবেন ???

    জবাব দিন
  4. কামরুল হাসান (৯৪-০০)

    এক কপি বুকিং দিলাম।

    মাসুম ভাই কেমন আছেন? আজকাল তো আপনাকে টিভি ছাড়া আর কোথাও দেখাই যায় না 😀


    ---------------------------------------------------------------------------
    বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
    ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।

    জবাব দিন
  5. রকিব (০১-০৭)

    অটোগ্রাফসহ হাতে নিমু দেশে গিয়ে। 😀
    অনেক কাল পর শওকত ভাইকে দেখিয়া বড়ই পুলকিত বোধ করিতেছি।


    আমি তবু বলি:
    এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

    জবাব দিন
  6. সাব্বির (৯৫-০১)

    ওয়েলকাম ব্যাক মাসুম ভাই
    এই সুদূর অস্ট্রেলীয়া থেকে কিভাবে সংগ্রহ করব সিসিবিয়ানদের বই সেইটা ভাবতেসি
    কেউ কি আছেন যে এই বান্দাকে সাহায্য করতে পারবেন ???

    জবাব দিন
  7. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    ঠিক কথা কইছেন বস। বউরে ভয় পাওয়া ভালো।
    আমিও পাই।
    সেই সাথে আরও দুই নারীকে ভয় পাই। আমার দুই মেয়েকে। বড় মেয়ে বকা দেয়। ছোটটা কামড় দেয়।


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
  8. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    ওয়েল্কাম ব্যাক মাসুম ভাই, বই এর জন্য শুভকামনা 😀


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।