অনুবাদকের দুই পয়সা
সবার মতোই আমিও পত্রপত্রিকা পড়ি। সময় পেলে বেশ খুঁটিয়েই পড়ি। অনেক সময়ই দেশের চলমান ঘটনাগুলোতে বিশেষত রাজনৈতিক ঘটনা প্রবাহে হতাশ হই। আমি নিশ্চিত যে এটা আমি একা নই, আরো অনেকের ক্ষেত্রেই ঘটে থাকে। এ মাসের প্রথম দিকে যখন মিশরে সামরিক বাহিনী জনসমর্থন সাঙ্গ করে নির্বাচিত ইসলামিক দল মুসলিম ব্রাদারহুডকে ক্ষমতাচ্যুত করে – সংবাদমাধ্যমে তার গতিপ্রকৃতি খেয়াল করছিলাম আর মনে হচ্ছিল এ যেন আমাদের দেশের ‘ওয়ান ইলেভেন’ ভিন্ন মোড়কে। তখন তারেক ওসমানের একটি নিবন্ধ পড়ি। স্থান, কাল, পাত্র সবকিছু আরব বিশ্ব হলেও অনেক কিছুর সাথে যেন আমাদের কত মিল! আর আরব বিশ্বের ধর্মীয় উগ্রবাদের উৎত্থানের সাথে আমাদের ইতিহাস ঘাটলে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ সংযোগ যে আছে সেটি বোঝা কঠিন নয়। আরব বিশ্ব যেমন সেক্যুলার এবং ইসলামপন্থী ভাবধারার দ্বদ্ধ-সংঘর্ষে অস্থির, আমাদের অবস্থা সেই একই মাত্রায় সংঘর্ষময় না হলে পদপ্রকরণ প্রায় একই। আমাদের সমাজেও সামাজিক-রাজনৈতিক ঘাত-প্রতিঘাত মূলতঃ দুই ধারার – সেক্যুলার এবং ইসলামপন্থী শক্তির। অবশ্য এরমাঝে এক বিশাল সদা টলায়মান জগাখিচুড়ি অংশ রয়েছে। রাজনৈতিক ইসলাম প্রায়শই জনসাধারণের মাথা চিবিয়ে খায়। এমনকি খুব উচ্চ শিক্ষিত মানুষজনের ক্ষেত্রেও ব্যত্যয় তার হয়না। যাইহোক, আমি কথা বিশেষ বাড়াবো না। তারেক ওসমানের নিবন্ধটি অনুবাদ করার তাগিদ অনুভব করলাম কারণ নিবন্ধটি ভাবনাকে উসকে দিতে সক্ষম। আসলে এটা ঠিক অনুবাদ না, বরং বলা যায় ভাবানুবাদ। যাইহোক আমার আশাবাদ আবার কিছুটা ফিরে এসেছে নিবন্ধটি পড়ে এই কারণে যে আমাদের গ্রামীণ সংস্কৃতিতেই এমন উপাদান বিদ্যমান যা রাজনৈতিক ইসলামকে একটা সহ্য সীমার পর ঠিকই প্রতিহত করতে সক্ষম। এবং সাথে পুরো রাজনৈতিক ইসলামকে আরব ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে দেখারও সুযোগ ঘটলো। তাহলে এখন তারেকের লেখাটি পড়ি …
ইসলামিক রাষ্ট্রের প্রেক্ষিতে
জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহের গনরোষ এবং সামরিক সমর্থিত মিশরের রাজনৈতিক ইসলামের উৎপাটন ছাড়াই, আরব বিশ্বে ইসলামিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সম্ভাব্যতা আসলে খুবই ক্ষীন। গত তেরশো বাহান্ন বছরে, ইমাম আলীর মৃত্যুর (নবী মুহম্মদের তুতো ভাই এবং চতুর্থ খলিফা) পর থেকে, আরব বিশ্বের কোথাও ইসলামিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়নি। কোথাও কেউ বিচারিক আইন কাঠামো শুধুমাত্র কুরআন ভিত্তিক কানুন দিয়ে চালাতে পারেনি, এমন কোন নেতা নেই যিনি শুধু ধর্মতাত্ত্বিক ভিত্তিতে নির্বাচিত ছিল; এবং সকলেই অবিসংবাদিতভাবে হয় জাতীয়, নয়তো গোত্র, কিংবা পারিবারিক ভিত্তির উপর ভর করে এসেছিল, সেখানে ইসলাম ছিল শুধুমাত্র খোলস হিসেবে উপরি কাঠামো
এক্ষেত্রে আসলে গত তেরশো বছরের প্রতিটি আরব (পারস্য থেকে তুরস্ক) রাষ্ট্রকে বিশ্লেষণ করার সুযোগ এ নিবন্ধে নেই। কিন্তু সবথেকে গুরুত্বপূর্ন যেটি তা হলো সববৃহৎ এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন এই রাষ্ট্রগুলোর শাসন কাঠামোকে ব্যবচ্ছেদ করা। উমায়েদরা, অর্থাৎ আলীর মৃর্ত্যুর পর আরব বিশ্ব শাসন করে যে প্রথম পরিবারতন্ত্র, তারা তাদের বংশভিত্তিক শাসন ক্ষমতার ভিত্তি স্থাপন করেছিল নবী মুহম্মদের নিজ সন্তানের সাথে ধুন্ধুমার যুদ্ধের পর (এবং ভয়ংকর দুদ্ধর্ষ এক সংঘর্ষের পর)।
তারা উত্তর আফ্রিকা, আন্দালুসিয়া, এবং ইরানকে নিজেদের নিয়ন্ত্রনে নিয়ে এসেছিল, এবং সেটি তখন এমন একটি সময় ছিল যখন ইসলাম দক্ষিন রাশিয়ার ইসলামিক রাষ্ট্রগুলোতে প্রবেশ করেছিল। উমায়েদদের লেজিটেমেসি – যেটি আসলে কখনোই পরিপূর্নভাবে প্রতিষ্ঠিত ছিল না – তারা একপর্যায়ে বিভিন্ন ইসলামিক স্থাপনা ক্রয়ের দিকে মনোনিবেশ করে, প্রাথমিকভাবে আল-হেজাজে (ইসলামের জন্মস্থান) এবং পরবর্তীতে লেভান্টের বিভিন্ন ইসলামিক শিক্ষা কেন্দ্রগুলো। উমায়েদরাও কখনোই এমন কিছু দাবি করেনি যে তাদের গোত্র প্রধানরা (ইসলামিক খলিফারা) ইসলামিক জাতিরাষ্ট্রের ধর্মীয় নেতৃত্বে ছিলেন; সেই পদ নিরাপদ রাখা তাদের জন্য প্রায় অসম্ভব ছিল এবং সেটি তারা মক্কা, মদিনার (এবং পরে কিছুটা দামেক্সতে) বুজুর্গ আলেমদের জন্য ছেড়ে দিয়েছিলেন। উমায়েদ শাসকরা মূলতঃ ছিলেন ক্রমবর্ধনশীল রাষ্ট্রের সম্রাট যেটি বরং তাদের খ্যাতি বাড়িয়ে তুলেছিল।
তাদের শাসনকেন্দ্রগুলো যে কন্সটেনটাইনোপলের পূর্ব রোমান সাম্রাজের মডেলে প্রতিস্থাপন করাটা মোটেই কোন কাকতাল ব্যাপার ছিল না। এবং অনেকক্ষেত্রেই বরং উমায়েদদের রাজ্য শাসন বিভিন্নভাবে যারা নবী মুহম্মদের নীতি এবং শিক্ষার সত্যিকার রক্ষাকারী হিসেবে দাবিদার ছিল তাদের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিল, যেটির প্রতিউত্তর দিয়েছিল উমায়েদ শাসকরা সামরিক ভাষায়। এমন একটি ঘটনায় একবার, তাদের সামরিক বাহিনী মক্কায় ইসলামের সবথেকে পবিত্র ঘর কাবাঘরকে পুড়িয়ে দিয়েছিল।
গত তেরশো শতাব্দী ধরে, বৃহত্তর মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে অসংখ্য রাজ্য উমায়েদদের শাসন স্কীম হুবহু অনুকরণ করে আসছে। প্রথমত, ক্ষমতা সামরিকভাবে দখল করো। তারপর, এমন একটি ভাবধারা তুলে ধরো যে এটা হলো ইসলামিক রাষ্ট্র। এরপর, স্বীকৃতি এবং নিয়ন্ত্রন নিশ্চিত করো – যদিও সেটি কিন্তু সবসময় বিভিন্ন সময়ের বুজুর্গ (এবং বিখ্যাত) ইসলামিক আলেম-চিন্তাবিদদের অনুমোদন পেতে ব্যর্থ হয়। পরবর্তীতে যেটি হয়, যেমন খুশি তেমন শাসন করো, গোল্লায় যাক ইসলামিক আইন-কানুন, নীতি, বা পরিচয়।
সাধারনত শাসন ক্ষমতার লেজিটেমেসি প্রতিষ্ঠা করার জন্য ইসলামিক যৌক্তিকতা ব্যবহার করা হতো , অথবা তৎকালীন কোন শাসকতন্ত্রের বিরুদ্ধে সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে চ্যালেঞ্জ করার প্রাক্কালে সেটার সমর্থন আদায়ের জন্য। আব্বাসীয় বংশ, যারা নবী মুহম্মদের এক চাচার বংশধর, একটি সামরিক-রাজনৈতিক ক্যাম্পেইনে স্লোগান ব্যবহার করেছিল, “প্রকৃত ইমাম হতে হবে মুহম্মদের বাড়ীর” যেটা ছিল আব্বাসীয়দের দু্ই-দশক ধরে চালানো ব্যাপকভিত্তিক গোপন অপারেশনের মূল ভিত্তি, এবং যেটি দিয়ে তারা সমর্থক-অনুগতদের সমন্বয়ে একটি সেনাবাহিনী গঠন করেছিল (যাদের বেশিরভাগ ছিল পারস্যিক)। তারা উমায়েদদের শাসনকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করে গুড়িয়ে দেবার আগে একটি বিশাল তহবিল এবং অর্থ বিপনন ব্যবস্থা চালু করেছিল, যার বিস্তৃতি ছিল আজকের ইরান, ইরাক, এবং পূর্ব ভূমধ্য সাগরীয় অঞ্চলে।
আনুমানিক প্রায় ২৫০ বছর পর, দশম শতকে, ফাতিমিদরা নিজেদের দাবি করে বসেছিল নবী মুহম্মদের কন্যা, ফাতিমার (ইমাম আলীর স্ত্রী) বংশধর হিসেবে, তারা শাসন প্রতিষ্ঠা করেছিল আজকের দিনের তিউনিসিয়াতে, এবং পরবর্তীতে সেনা মার্চ করিয়ে মিশরের তৎকালীয় আব্বাসীয় শাসনকে চ্যালেঞ্জ করেছিল, দেশটিতে দখল প্রতিষ্ঠা এবং তাদের নতুন রাজধানী কায়রো প্রতিষ্ঠার জন্য।
একইভাবে, অটোম্যানরা ষোড়শ শতকে সামরিক আগ্রাসনকে মুসলিম বিশ্বের রাজনৈতিক নেতৃত্বের মোড়কে তাদের শাসন সম্প্রসারণ করেছিল মিশরের লেভান্টে (আল-আযহার হলো সুন্নী ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন শিক্ষা কেন্দ্র), এবং আল-হেফাযে নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে, যার আরেক অর্থ হলো ইসলামের পবিত্র দরগাহগুলোর অভিভাবকত্ব আদায় করা।
কিন্তু, এসব উদাহরণ, অন্য সব এতিহাসিক ঘটনাগুলোর মতোই, শাসন কাঠামো সবক্ষেত্রে একই রকম ছিল। এবং অন্য শাসকরা কোন ব্যত্যয় ঘটাননি, এমনকি যারা নিজেদের সরাসরি নবীর বংশধর হিসেবে দাবিদার ছিল, দাবি করতো যে মুসলিম বিশ্বের ধর্মতাত্ত্বিক কর্তৃত্ব তাদের হাতে। যে কাজ ছিল মূলতঃ ইসলামিক শিক্ষা কেন্দ্রগুলোর পন্ডিতদের, সেই শহরগুলো যেন দিনদিন অধিকতর বিচ্ছিন্ন এবং ভৌগলিকভাবে রাজনৈতিক রাজধানীগুলো থেকে দূরে সরে গিয়েছিল।
বর্তমান সময়ে
ধরণটা বর্তমান সময়েও একই। উনবিংশ শতকের প্রথমাংশে মুহম্মদ আলী পাশা মিশরে যে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন সেটি আরব বিশ্বের সবগুলি দেশের উনবিংশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধের এবং বিংশ শতকের শুরুর দশকগুলোতে রাষ্ট্র গঠনের মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।
১৯৫২ পযর্ন্ত চলমান মিশরের শাসন সামরিক ক্যুর মাধ্যমে রাজতন্ত্রের অবসান ঘটায়, মুহম্মদ আলীর অনুসারীরা রাষ্ট্রের “ইসলামিক চরিত্র” বজায় রেখেছিলেন; তারা মিশরের ধর্মীয় স্থাপনাগুলি: আল-আযহারের সাথে আন্তরিক সম্পর্ক এবং নিয়ন্ত্রন নিশ্চিত করে রেখেছিল। কিন্তু তারা আইন-পর্ষদ, আইন ব্যবস্থা, অর্থনেতিক, সামাজিক, শিক্ষা, এবং রাজনৈতিক যেসব ব্যবস্থাগুলো প্রতিষ্ঠা করেছিল সেগুলো ছিল অবিসংবাদিতভাবে ইয়্যুরোপ থেকে আমদানী করা। এমনকি যে আরব দেশগুলির শাসন ধর্মীয় পরিবারতন্ত্র নির্ভর এবং পরিবারতন্ত্রে ন্যস্ত ছিল তারাও একই পথের পথিক ছিল সেসময়, উদাহরণ হিসেবে বলা যায় জর্ডানের হাশেমীয় শাসন এবং মরোক্কোর আল-ওয়াতিসরা (দুইটাই ইমাম আলীর বংশধর)।
উনবিংশ শতকের শেষদিকে এবং বিংশ শতকের মধ্যভাবে যখন সামাজিক এবং রাজনৈতিক আধুনিকায়নের নব-তরঙ্গে আরব উদারবাদী কালের অভ্যুদয় হয় সেটি আরবের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলিকে মারাত্বক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করেছিল। সেক্যুলার শিক্ষা, পশ্চিমা সামাজিক রীতিনীতি (যেমন ধরা যাক, পাবলিক প্লেসে নারী-পুরুষের মিথস্ক্রিয়া), এবং বিংশ শতকের প্রাক্কালে আরব সমাজে নতুন সংস্কৃতির পরিচয় (প্যারিস, লন্ডন, এবং ভিয়েনামূখী) শুধুমাত্র ধর্মীয় স্থাপনার ট্রাডিশনাল নিয়ন্ত্রনকে নড়বড়ে করেই ছাড়েনি, বরং যেটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্নভাবে অনুভুত হচ্ছিল – শুধুমাত্র ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলি না, এমনকি বিভিন্ন মাত্রার সামাজিক বিভাজনে – চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছিল এসব সমাজের প্রতিনিধিত্ত্বশীল ইসলামিক পরিচয়ের বোধটিতে।
সে সময়ের কিছু অগ্রগামী চিন্তক চলমান দুই ধারার আত্মিক মিলনের জন্য বিংশ শতকের উষালগ্নে, মোহাম্মেদ আবদ্যুউর নেতৃত্বে, একটি মিটিং ডেকেছিলেন “আধুনিকতা এবং ধর্মীয় এতিহ্য এবং শিক্ষার যৌক্তিকতা” শিরোনামে। অন্যরা একটি অবশ্যম্ভাবী দ্বন্ধ দিব্য দেখেছিলেন: “পশ্চিম এবং তার অধস্তনতা” থেকে ইসলামকে রক্ষার তাগিদ, সেই অধস্তনতা ছিল – আরব এবং উদার মুসলমানদের নেতৃত্বে সেই সময়ে আরব বিশ্বে শিক্ষা, অনুবাদ, সাহিত্য, নাট্য, সংগীত এবং পরবর্তীতে সিনেমায় যে অগ্রগতি এবং জয়জয়কার ধাবিত হচ্ছিল।
ধীরে ধীরে দুই ধারার ন্যারেটিভস প্রতিষ্ঠা পাচ্ছিল। প্রথমত, আরব উদারবাদী কালের সাংস্কৃতিক উন্নয়নের জোয়ারে, সেই সময়ে এ অঞ্চলে আরব এবং ভূমধ্যসাগরীয় ‘পরিচয়’ নির্মানের চুম্বকীয় আবেদন। এই আন্দোলনের কিছু চিন্তাবিদ সে সময় এই অঞ্চলের সমাজগুলোতে যে ইসলাম এতিহ্যগতভাবে নেতৃত্ব দিয়ে আসছিল তার প্রভাব পুরোপুরি উপেক্ষা করেছিলেন। যার ফলাফলস্বরুপ সেক্যুলার আরব দর্শনের জোয়ায়ে আলোকিত সময়কাল (মূলতঃ ত্রিশ এবং চল্লিশের দশকে) খুব স্বল্প সময়ের মধ্যে উধাও হয়ে গিয়েছিল মূলধারা থেকে।
সেসময অগ্রগামী চিন্তকদের যে ধারা আধুনিক ভাবনার সাথে ইসলামিক ট্রাডিশনকে সমন্বয়ের চেষ্টা করেছিলেন তাদের দৃষ্টিভঙ্গিগুলি স্থায়িত্ব পেয়েছিল। তারা গুরুত্ব দিয়েছিলেন ‘ইসলাম’ (এখানে মূলতঃ সভ্যতা অর্থে) হলো আরব সমাজগুলোর সবচেয়ে প্রতিনিধিত্বশীল কাঠামোর রুপরেখা। কিন্তু রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রগুলিতে, তারা সেসময় কাজ করছিলেন এমন ধারার আরব রাষ্ট্র গঠনে যার মূলে ছিল আধুনিক প্রতিষ্ঠানগুলো।
এই ধারার ফলাফল হয়েছিল ১৯২৩ সালের মিশরের সংবিধান (যেটি পরবর্তীতে অনেকগুলো আরব দেশের সংবিধানের মডেল হিসেবে গৃহীত হয়), সাংবিধানিকভাবে রাজতন্ত্র গ্রহন (প্রথমে মিশরে এবং পরে কিছুটা এদিক-ওদিক করে সিরিয়া, ইরাক, এবং সংক্ষিপ্তভাবে লিবিয়ায়), এবং তারপর একই ধারায় বিভিন্ন কর্তৃত্বের মধ্যে গ্রহনযোগ্য সমন্বয়ের ব্যবস্থা করা (রাজতন্ত্র, সংসদ, আইনবিভাগ প্রভূতির মধ্যে, শুধুমাত্র জটিল অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক ক্ষমতা কেন্দ্রের বাইরে)।
পুরানো শাসন ফর্মুলার মূল ভিত্তি – ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং স্থাপনার সমর্থন আদায় করা, সেই প্রভাব ক্রমান্বয়ে হারিয়ে যাচ্ছিল। আরব জাতীয়তাবাদ সেটিকে আরো পাকাপোক্ত করে। যে সুনামি, মধ্য-১৯৫০ থেকে ১৯৬০ দশকে মিশরের গামাল আবদেল নাসের ছড়িয়ে দিয়েছিলেন আরব সমাজে, যেটা ১৯৭০এ তাঁর মৃত্যুর পর আরো এক দশক ক্রিয়াশীল ছিল, সেটি ছিল খুবই সেক্যুলার, যদিও স্বাধীন রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলোর দৃষ্টিভঙ্গি তখন কিছুটা ব্যক্তি-নির্ভর পড়েছিল। আরব জাতীয়তাবাদ জোয়ারের প্রথম দুই দশক, আরব রাজনীতিতে নতুন সংযুক্তি এনেছিল: যেটাতে মধ্যবিত্ত এবং নিন্ম মধ্যবিত্ত শ্রেনীর সমর্থন ছিল অবিসংবাদিতভাবে সেক্যুলার শাসন আইডিওলজির প্রতি – যেটি ইয়োরোপীয় ভাবধারায় বুঁদ ধনীক শ্রেনীর চাপানো ছিল না, ছিল জনমানস সমর্থিত।
১৯৫০ এবং ১৯৬০ দশকে যে সক্ষমতা, শক্তি এবং অভাবনীয় সাফল্য আরব জাতীয়তাবাদ অর্জন করেছিল সেটা পূনরায় আরব অঞ্চলের ধর্মীয় স্থাপনা এবং বিংশ শতকের প্রথমাংশের আন্দোলনে জন্ম নেয়া উপধারা “ধর্ম রক্ষা আন্দোলন” -কে চ্যালেঞ্জ উস্কে দিয়েছিল, এখানে বিশেষভাবে মিশরের মুসলিম ব্রাদারহুডের কথা বলা যায়।
ক্রমান্বয়ে ইসলামিকীকরণ?
কিন্তু গত ১৩০ বছরে, ১৮৮০ সালের আরব রাষ্ট্রের গোড়াপত্তন থেকে শুরু করে “আরব স্প্রিং” পর্যন্ত, কখনোই ইসলামিক আন্দোলনের শক্তিসমূহ সেক্যুলার উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে থামাতে পারেনি। গত দুই বছর, রাজনৈতিক ইসলামের উত্থান সমগ্র উত্তর আফ্রিকায় এবং এর নেতৃত্বে প্রভাবিত পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে (ফিলিস্তিনে হামাস, লেবাননে হেজবোল্লাহ, এবং সিরিয়ার বিরোধী শক্তিতে বিভিন্ন ইসলামিক গ্রুপ) ধারণা উস্কে দেয় যে বিভিন্ন আরব দেশ ক্রমান্বয় ইসলামিকীকরণের সম্ভাবনার দ্বার প্রান্তে দাড়িয়ে।
ইসলামিকীকরণ হচ্ছে বিভিন্ন তরিকায়, কিন্তু দুটো উল্লেখযোগ্য ধারা এখানে দৃশ্যমান। প্রথমটা হলো বিভিন্ন ইসলামি দলগুলো চেষ্টা করছে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ইসলামিকীকরণের: যেখানে চাপ সৃষ্ঠি করা হচ্ছে ইসলামিক চরিত্রের আদলে তাদের দেশের নতুন সংবিধানের রুপরেখা দিতে, দন্ডবিধিকে যুক্ত করতে বলা হচ্ছে ইসলামিক কানুনের সাথে (শরীয়াহ), মতপ্রকাশের ক্ষেত্রে ধর্মভিত্তিক নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠা করার জন্য, এবং বিশেষভাবে ক্ষমতা কেন্দ্রে ইসলামিক রাজনীতি-অর্থনীতির প্রভাব বাড়ানো।
দ্বিতীয় ধরণটা, কিছু আগবাড়ানো সালাফি দলগুলো থেকে আসছে, তাদের লক্ষ্যবস্তু “সমাজকে” ইসলামিকীকরণ করা, এসব দলগুলোর মতে সমাজ “সঠিক ইসলামিক পথ” বিচ্যুত। এই ধরণের ইসলামিকীকরণ – কার্যতঃ অবশ্যম্ভাবীভাবে দ্রুততার সাথে ইসলামপন্থী দলগুলোর ক্ষমতায় উত্থান – যে প্রকিয়াটি অনেক আরব উদারবাদী মানুষের জন্য চাপ সৃষ্টি করেছে, যারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সাংগঠনিকভাবে একত্রিত নয়, নেতৃত্বহীন, এবং জনগণের সাথে বিশেষভাবে সমাজের নিন্ম মধ্যবিত্ত এবং দরিদ্রদের খুবই দূর্বল সংযোগ।
যার ফলাফলটা হলো দূর্বলচিত্ত, পরষ্পর বিরোধীতা, বিচ্ছিন্নতা, ক্রমবর্ধনশীল সহিংস সামাজিক শক্তিগুলি দ্বান্ধিকভাবে মুখোমুখি, এবং ক্ষেত্রবিশেষে সব ছেড়েছুড়ে দেয়া; ফলাফল – বর্তমানে উত্তর আফ্রিকা এবং পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে লক্ষ্যনীয় যে বিপদজনক মাত্রায় শিক্ষিত সমাজের সবথেকে শিক্ষিত এবং মেধাবী জনগোষ্টি, যারা আর্ন্তজাতিক চাকরির বাজারে কর্মস্ংস্থান খুঁজে পেতে সক্ষম তারা দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে।
কিন্তু এই ইসলামিকীকরণ সফল হবে না। প্রথমত, বৃহদাংশ আরব মুসলমানদের ধর্মীয় ভক্তি থাকা সত্ত্বেও, যারা মূলতঃ বৃহৎ আরব অঞ্চলের নেতৃত্বে, ইসলামীকিকরণ প্রচেষ্টা প্রতিটি দেশের জাতীয় পরিচিয়কে মৌলিকভাবে চ্যালেঞ্জ করে। যতোই বাকচতুরতা থাকুক, ইসলামিকীকরণ অর্থ হলো মিশরীয়, তিউনিশীয়, সিরীয়, ইত্যাদির একটি অংশ দিয়ে অন্য অংশগুলোর উপর নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠার চেষ্ঠা যেটা এইসব গভীরে প্রোথিত পরিচিতিগুলোর সাথে সংযুক্ত।
আরব বিশ্বের পুরোনো দেশগুলো এখন এই কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি, যাদের সীমানা, সামাজিক সমন্বয়, এবং বিশেষভাবে – পরিচয়গুলো – দীর্ঘদিন ধরে বহু শতকের সমৃদ্ধিতে স্থিত হয়েছে। ইসলামিক আন্দোলনগুলো যতোবেশি তাদের বিশ্বদৃষ্টিভঙ্গি এবং সামাজিক বোধগুলিকে ছড়িয়ে দিতে চাইবে, তারা ততো বেশি জাতীয় পরিচয়কে বাধাগ্রস্থ করবে, ততো বেশি মধ্যবিত্ত সমাজ বিক্ষুদ্ধ এবং বিচ্যুত হবে।
দ্বিতীয়ত, এই ইসলামিকীকরণর প্রচেষ্টা চলছে এমন এক সময়ে যখন এই সমাজগুলো কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে – এবং সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী দুর্দশাগ্রস্থ অর্থনৈতিক অবস্থার ভেতরে রয়েছে। এবং বের হবার কোন পথ নেই। ইসলামিক শাসক নেতৃত্ব নিদারুণ কাঠামোগত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করে যাচ্ছে অর্থনীতিকে।
এদের কিছু অংশ পার পাচ্ছে বৈদেশিক সহায়তায় সময়টা ঠেকা দিতে এবং সংস্কার ঠেকিয়ে রাখতে (যেটা আসে রাজনৈতিক চড়া মূ্ল্যে)। কিন্তু আজ হোক আর কাল হোক, তাদেরকে কঠিন সামাজিক-অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে যেটা সাধারণত কাঠামোগত সংস্কারের জন্য প্রয়োজন হয়। এখন যে ইসলামিক নেতৃত্ব ক্ষমতায় একসময় এই দুর্দশার জন্য তাদেরকে দায়ী করা হবে। খুব দ্রুতই, যেসব অঞ্চল তাদের ভোট দিয়ে ক্ষমতায় এনেছে তারা বিকল্প খুঁজবে।
তৃতীয়ত, জনগনই ইসলামিকীকরণ প্রচেষ্টা প্রতিরোধ করবে। আরব বিশ্বের ৩৪০ মিলিয়নের মধ্যে ২০০ মিলিয়ন মানুষের বয়স হলো ত্রিশের নিচে। বিভিন্ন ব্যর্থতার ফলাফল যেটা বয়ে আনবে, এই তরুন জনগন প্রতিদিনের ভিত্তিতে সেসবের মুখোমুখি হবে। প্রতিরোধ এবং উৎপাটনের সংস্কৃতি ইতিমধ্যেই গড়ে উঠেছে, তরুণ প্রজন্ম ধুনফুন মতবাদ গ্রহন করতে চায় না – এমনকি সেটা ধর্মের নামে হলেও নয়। অবধারিতভাবে, এই উদীয়মান অসংখ্য আরব তরুণ, বিশেষভাবে সাংস্কৃতিকভাবে উষ্ণ আরব বিশ্বের নগর কেন্দ্রগুলিতে (কায়রো, তিউনিস, বেইরুট, দামাস্কাস, কাসাব্লাংকা, কুয়েত, মানামা)জনপ্রিয়তা বাড়বে – উদার সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিতে, রাজনৈতিক অবস্থানে, অর্থনেতিক ধারায়, এবং সামাজিক পরিচয়, এবং কাঠামোর যোগসূত্রতে।
সর্বশেষ, ইসলামিকীকরণ প্রকল্প, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, সংকটে পড়বে কৌশল প্রনয়ণকারী এবং ব্যবস্থাপকদের হাতেই। আরব বিশ্বের বৃহৎ ইসলামিক দলগুলির নেতৃত্ব একটি ব্যাপক ভিত্তিক অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হবে – বিভিন্ন কার্যক্রম এবং চ্যারিটি কাঠামোর উন্নয়ন এবং ব্যবস্থাপনায়, আন্ডারগ্রাউন্ড রাজনেতিক সংযোগ-ব্যবস্থা চালানোর ক্ষেত্রে, তহবিল সংগ্রহ, এবং ভোটের প্রচারণায়, বিশেষভাবে গ্রাম্য এবং প্রান্তীয় অঞ্চলে। কিন্তু তারা মূল যে সমস্যার সম্মুখীন হবে তা হলো রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অনভীক্ষতা কিংবা বৃহৎ সামাজিক-রাজনৈতিক ন্যারোটিভসগুলোকে সামাল দিতে গিয়ে। এই অনভীক্ষতার ফলাফল গড়াবে অযোগ্যতায়।
কিন্তু এই ব্যাপারগুলো অবশ্য রাতারাতি ঘটবে না, সময় নেবে। একবিংশ শতকের দ্বিতীয় দশক শুধু যে আরব রাজনীতিতেই পরিববর্তনশীল ধারা আনবে তা নয়, বরং বিশেষভাবে আরব সমাজগুলোর জন্যও। পুরানো ধারার ক্রমান্বয়ক স্থলন এবং উচ্চ সম্ভাবনা রয়েছে ইসলামিকীকরণ প্রচেষ্টার পরাজয় ঘটার, তরুণ আরবরা তাদের নতুনধারা খুঁজে নিবে। কিছু আরব দেশে এই প্রক্রিয়া হবে সহজ, কিছু দেশে এই প্রক্রিয়া হবে রক্তাক্ত, এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সংঘর্ষের কন্টকময়তা দীর্ঘকাল রয়ে যাবে।
তাই ফলাফল হবে বহুধা – ভিন্নতায় পরিপূর্ন দ্বান্ধিক সামাজিক ধারাসমূহ। অনেক ক্ষেত্রেই, আমরা হয়তো দেখবো আইডিওলজির এক জগাখিচুড়ি (আরববাদ, ভূমধ্যসাগরীয়বাদ, ইসলামবাদ, এবং অন্যান্য)। কিন্তু গত তেরশো বছর যেমন আরব দেশগুলো কখনোই পুরোপুরি ইসলামিক ছিল না, আরব দেশগুলোকে ভবিষ্যতেও ইসলামিক হবার আশা নেই।
তারেক ওসমান একজন মিশরীয় লেখক। তিনি পড়ালেখা করেন আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয় কায়রোতে এবং বোকোনি বিশ্ববিদ্যালয় ইটালিতে। তার প্রকাশিত বই “ইজিপ্ট অন দ্য ব্রিঙ্ক: ফ্রম নাসের টু মুবারাক (২০১০)।
পুনশ্চ: লেখকের অনুমতি ছাড়াই ভাষান্তর করা এবং ব্লগে প্রকাশ। যোগাযোগ করতে চাইছিলাম। করা হয়নি যদিও।
এই কথাটা আপনার ঠিক কেন মনে হইছে?
আরব দেশগুলোর ক্ষেত্রে আসলে যদি তা হয় তাহলে আশার কথা। আমাদের দেশের ইতিহাসে কেবল বিশ্বাসঘাতক আর বিশ্বাসঘাতক (পৃথিবীর ইতিহাসেই...)। এবং এরা নিজেদের পক্ষে একটা দল দাঁড় করায় ফেলতে পারে। এই বিশ্বাসঘাতকেরা কেন আসে, এদের মোটিভেশনটা আসলে কি তা নিয়ে জানতে ইচ্ছা করে।
এই লেখা পড়ে আশা লাগলো কিনা বলতে পারব না। আমার জন্য বিশাল বড় লেখা। আমি সাধারণত এত জ্ঞানীগুণী লিখা পড়িনা, আপনার লিখা বলে পচুর কষ্ট করে পড়সি। এখন একটা আইসক্রীম দেন।
এই কথাটা আমার মনে হলো আমাদের লোকজ সংস্কৃতির কারণে। যেটার প্রভাব আমাদের জীবনে প্রতিনিধিত্বশীল। রাজনৈতিক ইসলাম এটারে রাতারাতি প্রতিহত করতে পারবে না। এবং রাজনৈতিক ইসলাম গ্রামীন অর্থনৈতিক এবং সামাজিক সংকট মোকাবিলায় অক্ষম।
জার্মান আইসক্রিম তো দারুণ মজা! কাঁকতাল ব্যাপার হলো আমি আজ আইসক্রিম লাঞ্চ করছি।
আমার বন্ধুয়া বিহনে
:clap: :clap: :clap:
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
লেখা প্রিয়তে।
ভালো অনুবাদ হইছে। 😀
পরে আরো বিস্তারিত আলোচনা করবো।
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
ধন্যবাদ
আমার বন্ধুয়া বিহনে
এতদিন পরে এসে মন্তব্য করছি কারণ তখন যথেষ্ট ধৈর্য ছিলোনা পাঠ করার।
অনুবাদ খুব ভালো হয়েছে, যদিও কিছু দীর্ঘ বাক্যে একটু হোঁচট খেতে হয়েছে। তবে মোটের উপর এত বড় নিবন্ধ অনুবাদে নামানো সহজ কাজ নয় - অথচ তোমার লেখায় যাকে অনায়াস-সাধ্য বলে মনে হচ্ছে।
গ্রন্থের ইসলাম, রাজনীতির ইসলাম এবং সাংস্কৃতিক ইসলামের মধ্যে মিলন-সংঘাতের নানান স্তর রয়েছে। তবে শেষ বিচারে মানুষকে ঠিক করতেই হবে, অবচেতনে রেখে দেয়া কেবল একটি প্রশ্নকে চেতনে তুলে এনে শেষপর্যন্ত নিজেকে বিদ্ধ করবার 'সৎ' সাহস সে দেখাতে পারবে কি না -- যে-প্রশ্নটি হচ্ছে - "স্বর্গ, না বোকার স্বর্গ -যেখানে আমি যেতে চাই?"