বর্তমান সময়ের মানদন্ডে যারা একটু বেশী ‘দেশপ্রেমিক’ তাদের হয়তো বেশী ভাল লাগবে না আমার এই লেখাটা। অনেকে হয়তো সম্মান দেখাবার কারনে এর মন্তব্যে নিজের মনের কথাটা স্পষ্ট করে লিখবে না। কিন্তু আমি চাই এ ব্যাপারে আমরা একটু খোলাখুলি ভাবে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করি। এতে ক্ষতির বদলে লাভের সম্ভবনা বেশী।
৪০ বছর পার হলো বাংলাদেশের জন্মের পর, কিন্তু কেন যেন মনে হচ্ছে আমরা এখনো সঠিক ভাবে বলতে পারছি না কি আমাদের পরিচয়। আমরা যেন একটা আঁকাবাঁকা পথ ধরে গন্তব্যের দিকে যাচ্ছি – কিন্তু এখনো সঠিক জানিনা গন্তব্যটা কোথায়।
সম্প্রতি একটি অনুগল্প লেখার চেষ্টা করেছিলাম – ‘আমার জন্মভূমি যশোর’ – এই নামে। উদ্দেশ্য ছিল কম কথায় অনেক কিছু বলা। পরে বুঝলাম সক্ষম হইনি। সামান্য কথার মধ্যে যে কথাটা ফুটাতে চেয়েছিলাম – তা আমার প্রিয় পাঠকেরা অধিকাংশই খুঁজে পায়নি। অক্ষমতাটা আমার।
ঐ অনুগল্পে এক লাইনের একটা প্রশ্ন ছিল – “আচ্ছা কবরীরা কি এখনো সেখানে আছে? নাকি অন্য অনেক হিন্দু পরিবারের মত তারাও ভারতে চলে গেছে।”
আসলে ‘কবরী’ আমার কল্পনার সৃষ্টি। রাজ্জাক-কবরীর কবরী ছাড়া আর কোন কবরীকে আমি নামেও চিনিনা – পরিচয় দূরে থাকুক। বারো বছর বয়সে কোন মেয়ের হাতে গোলাপ তুলে দেবার চিন্তা/সাহস/সৌভাগ্য কোনটায় হয়নি। তবে আমার ছোটবেলায় বেশ অনেক হিন্দু পরিবারের সাথে আমাদের পরিচয় এবং সৌহাদ্য ছিল। তাদের অনেকেই ক্রমে ক্রমে দেশ ছেড়ে চলে গেছে। সত্যি বলতে কি তখনকার দিনে – অর্থাৎ ৫০/৬০ বছর আগে শিক্ষিত এবং সংস্কৃতমনা পরিবার বলতে আধিকাংশই ছিল হিন্দু পরিবার। যশোরে অবলাকান্ত মজুমদার নামে এক ভদ্রলোক ছিলেন – প্রতি সপ্তাহে এক দিন তার বাড়িতে ‘সাহিত্য আসর’ বসতো। আমার বাবা নিয়মিত অংশ নিতেন সেই আসরে। আমার এক সাহিত্য প্রেমিক বোন (সাদেকা শফিউল্লাহ) সেই আসর থেকে ‘সাহিত্য রত্ন’ সন্মামনা পেয়েছিলেন। এর ফলেই হয়তো পরবর্তী জীবনে সাহিত্যিক হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছিলেন আমার বোন।
স্কুলে আমার এক ঘনিষ্ট বন্ধু ছিল – তার নাম ছিল প্রদীপ। পরে আর তাকে খুঁজে পাইনি – শুনেছি ভারতে চলে গেছে। আচ্ছা, আমার যেমন নিজের জন্মভূমি দেখতে ইচ্ছা করে – প্রদীপের কি তেমন করে না?
তেমনি ক্যাডেট কলেজে আমার প্রিয় বন্ধু ছিল নুসরত। ‘৪৭ সালে তাদের পরিবার পাটনায় তাদের পৈত্রিক সম্পতি ত্যাগ করে চলে আসে তখনকার পূর্ব-পাকিস্তানে। নুসরতের জন্ম এদেশেই – আমার মত। তার বাবা রেলওয়েতে বেশ বড় একটা চাকরী করতেন। আমি সান্তাহারে তাদের বাড়ীতে যেয়ে থেকেছি। এত ভদ্র পরিবার আমি খুব একটা দেখিনি। বাড়ীতে স্বামী-স্ত্রী, ভাই-বোন সবাই সবাইকে সম্মান করে ‘আপ’ সম্মোধন করে। আমার কোন ভাই নেই জেনে তার বাবা বলেন এখন থেকে মনে কর নুসরত তোমার ছোট ভাই। আমাকেও নিজের ছেলের মত ব্যবহার করেন।
প্রকৌশলে পড়ার সময় আমার রুম মেট ছিল নুসরত। ভাল বাংলা বলতে পারতো সে। বাংলাদেশ হবার পর সান্তাহার থেকে কোন মতে প্রানটা শুধু বাঁচিয়ে ঢাকায় চলে আসে তাদের পরিবার। পুরানো ঢাকার এক বাড়ীতে দেখতে গিয়েছিলাম এক দিন তাকে। বাড়ীতে তার খুব ছোট এক ভাই আমাকে দেখেই হঠাৎ ভয়ে কেঁদে ফেললো। নুসরতের কাছে জানলাম সান্তাহারে তাদেরকে মারতে এসেছিল কিছু লোক এবং ঐ ছোট ভাইয়ের গলায় ছুরি ধরেছিল। তখন থেকে কোন অচেনা লোককে বাড়ীতে আসতে দেখলে ভয়ে কেঁদে ফেলে তার ভাই। ইতিমধ্যে বিষয় সম্পত্তি এবং চাকরী সবই হারিয়েছেন তার বাবা। ক্যান্টনমেন্টে তাদের একতলা একটি বাড়ী ছিল – বেদখল হয়ে যায়। নিজের জন্মভূমিতে পর হয়ে যায় নুসরত। পরে নেপাল হয়ে জীবনে প্রথমবারের মত পাটনা যেয়ে পৌঁছে সে। সেখানে তার পরিচিত কিছুই ছিল না। পরে আরও অপরিচিত শহর করাচিতে কিছু দিন কাটিয়ে, সে সৌদী আরবে একটা চাকরী জোগাড় করে। সেখানেই ইলেক্টিকাল সাব-ষ্টেশনে কর্মরত অবস্থাতে এক এক্সিডেন্টে ইলেক্টিকাল ফ্লাশ-ওভারে মারা যায়। মারা যাবার এক সপ্তাহ আগে সৌদী আরব থেকে লেখা তার একটা চিঠি আসে আমার কাছে। লিখেছিল আমাদেরকে এবং ফৈজদারহাটের কথা সব সময় মনে পড়ে তার। তখন কি আমি জানতাম এই হবে তার শেষ চিঠি আমার কাছে।
ফৌজদারহাটে আমাদের সমসাময়িক দুই জন পাহাড়ী ছাত্র ছিল। একজন ছিল পিনাকী দেওয়ান – আমাদের সিনিয়ার। অন্যজন ছিল নীতিশ দেওয়ান – আমাদের জুনিয়ার। এরা দু’জনেই ছিল চাকমা সম্প্রদায়ের এবং সম্ভবত এরা ছিল কাজিন। আমি দু’জনকেই পছন্দ করতাম তাদের সুন্দর ব্যবহারের জন্যে। নীতিশ ছিল খুব চুপচাপ, বেশী কথা বলতো না। পরে শুনেছিলাম নীতিশ শান্তি বাহিনীতে যোগ দিয়েছে। খুব অবাক হয়েছিলাম। এত শান্ত এবং শান্তিপ্রিয় ছিল নীতিশ – ভাবতে কষ্ট হচ্ছিল সে অস্ত্রহাতে যুদ্ধ করছে বাংলাদেশ মিলিটারীর বিরুদ্ধে। পরে চিন্তা করে দেখলাম – এতে অবাক হবার কি আছে? খুবই নিরীহ এবং শান্তিপ্রিয় বাঙ্গালী জাতি যদি ১৯৭১-এ পাকি বাহিনীর বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নিতে পারে, তাহলে নীতিশ কেন পারবে না?
বরগুনা বাংলাদেশের দক্ষিণে সমুদ্রকূলের ধারে এক ছোট জেলা। সেখানকার এক অখ্যাত গ্রাম আমতলী। আমার সেখানে যাবার কোন কারন ছিল না। আমি জানতাম না যে বর্গীদের উত্তরসূরী ‘রাখাইন’ সম্প্রদায়ের বেশ কিছু লোক সেখানে বাস করে। আমি গিয়েছিলাম স্কাউট জাম্বুরী ‘কমডেকা’-তে হ্যাম রেডিও ষ্টেশন বসিয়ে স্কাউটদেরকে দেখাতে। সেখানেই পরিচয় হল এক রাখাইন মেয়ের সাথে। আমাকে ‘তুমি’ বলে সম্মোধন করলো। পরে জানলাম ‘আপনি’ বলাটার অত চল নেই তাদের মধ্যে। জানলাম এর আগে এক স্কাউট জাম্বুরীতে নির্বাচিত হয়ে হল্যান্ডে গিয়েছিল সে। এক সন্ধ্যায় তাদের বাড়ীতে দাওয়াত পেলাম রাতের খাবারের জন্যে। কাঠের দোতলা বাড়ী। বেশ ভাল লাগলো তাদের বাড়ীর পরিবেশ। রাখাইন সমাজ সম্পর্কে বেশ কিছু জানলাম। মেয়েটির কম্পুউটার শেখার আগ্রহ দেখে বলে এলাম ভবিষ্যতে ঢাকাতে এলে আমার সাথে দেখা করতে। কিছু দিন পরে সত্যি ঢাকাতে এসে দেখা করল সে আমার সাথে। সাথে এক বাঙ্গালী মুসলমান ছেলে – ভালবাসে তারা একে অপরকে। ভর্তি করে দিলাম আমার কম্পুউটার কোম্পানীর এডুকেশন সেন্টারে। একদিন জিজ্ঞাসা করলাম তারা কবে বিয়ে করবে। কিছুটা করুণ চোখে তাকালো আমার দিকে। জানালো সেটা হয়তো কখনো সম্ভব হবে না। জিজ্ঞাসা করলাম – কেন?
– তুমি কি বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থা সম্পর্কে কিছুই জানো না?
আসলে আমি সত্যিই অনেক কিছু জানিনা, স্বীকার করতে হলো।
এরপর এক দিন আমাকে ধরে বসলো তাকে আমি আমেরিকা যাবার ব্যবস্থা করে দিতে পারি কিনা।
– কেন যেতে চাও আমেরিকা? – প্রশ্ন করলাম।
– বাংলাদেশে কি আমাদের কোন ভবিষ্যত আছে? কত ভয়ে ভয়ে আমাদেরকে সব সময় থাকতে হয় সেটা কি তুমি জানো?
কিন্তু কেন এমন হবে? কেন কাউকে ভয়ে ভয়ে জীবন জাপন করতে হবে শুধু মাত্র ভিন্ন ধর্ম বা ভিন্ন ভাষা বা ভিন্ন জাতিসত্ত্বার জন্যে?
ভাই অসাধারন ::salute:: ::salute:: ::salute::
সহমত
এই প্রশ্নের উত্তরের অপেক্ষায় :-/
"আমি খুব ভাল করে জানি, ব্যক্তিগত জীবনে আমার অহংকার করার মত কিছু নেই। কিন্তু আমার ভাষাটা নিয়ে তো আমি অহংকার করতেই পারি।"
মুসতাকীম,
উত্তর কিন্তু তুমি এবং তোমাদের প্রজন্ম থেকেই আসবে।
অসাধারন লেখা সাইফ ভাই, যে প্রশ্ন তুলেছেন এর কোন জবাব বা কোন প্রতিকার অদূর ভবিষ্যতে হবে বলে আমি অন্তত আশাবাদি না।
শেয়ার করলাম।
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
আকাশ,
প্রতিকার না হলে আমরাই ধংশ হব। ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষপ্ত হব।
চমৎকার লেখা ভাইয়া।
নিজের কিছু সংকীর্ণতার কথা বলা দরকার। দেশের বাইরে আসার পর আসলে সুযোগ পেলেই মাঝে মাঝে রেসিসম নিয়ে বড় বড় বক্তব্য দিতে পিছপা হই না।
কিন্তু নিজেরা যে কত বড় রেসিস্ট সেটা প্রায়ই ভুলে যাই।
লাইক :hatsoff:
"আমি খুব ভাল করে জানি, ব্যক্তিগত জীবনে আমার অহংকার করার মত কিছু নেই। কিন্তু আমার ভাষাটা নিয়ে তো আমি অহংকার করতেই পারি।"
রেজা,
ঠিক, এভাবেই নিজেকে উন্নত করা যায় নিজের ভুল স্বীকার করে নিয়ে।
"কিন্তু নিজেরা যে কত বড় রেসিস্ট সেটা প্রায়ই ভুলে যাই।" - চমৎকার অনুধাবন।
:boss: :boss: :boss:
৫ *।
এখন মোবাইলে। পরে লিখব আমার অনুভুতি।
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
রাজীব,
অপেক্ষা করে আছি।
ভাইয়া আপনার বক্তব্যের সাথে ১০০ ভাগ সহমত।
নিচে দেখুন আমার বক্তব্য। ভালো থাকবেন ভাইয়া।
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
ভাইয়া, আমার ধারনা এটা সুপিরিয়রিটি কমপ্লেক্স, এবং সবার মাঝেই এটা আছে, শুধু অনুকূল পরিবেশের অপেক্ষায় থাকে, পরিবেশ পেলেই ছোবল মারে, মা-বাবা এমনকি নিজেকেও।
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
ফয়েজ,
এটা কি 'সুপিরিয়রিটি কমপ্লেক্স', না 'ইনফিইরিটি কমপ্লেক্স' ?
সত্যিকার 'সুপিরিয়র' মানুষ দুর্বলের উপর ক্ষমতার আস্ফলন দেখায় না।
আপনি সঠিক ভাইয়া, লেখার পর থেকেই মনে হচ্ছিল ভুল লিখলাম, ইনফিইরিটি কমপ্লেক্স এর সংগে গুলায় ফেললাম। 🙂
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
অনেক গুলি মন্তব্য পেয়েছি - এখাঙ্কার গুলি ছাড়াও ই-মেইলে। সময় করে সবাইকে আলাদা ভাবে লেখার ইচ্ছা আছে।
আমার প্রশ্নটা আরও স্পষ্ট করে লিখি। আরও ৪০ বছর পরে - কি হবে দেশের রূপ? কি হবে মানুষের মন ও মানষিকতা?
আদতেই কি 'বাংলাদেশ' বলে কোন দেশের অস্তিত্ত্ব থাকবে?
বর্তমানের ' আমেরিকার ' দিকে দেখে এই প্রশ্নের উত্ত্রর খোজবার চেষ্টা করুনঃ
৪০/৫০ বছর আগে ঐ দেশের সভ্য সমাজের কি মন মানষিকতা ছিল? সাদা মুখোশ পরে 'কালোদের' কে ধরে ধরে রাতের অন্ধকারে গাছে ঝুলিয়ে,পুড়িয়ে, হত্যা করা হোত।
-আজ তাদেরই একজন কে সেদেশের সর্বোচ্চ' রাষ্ট্রপতি'র আসানে বসাতে তারা বাধ্য হয়েছে।
নারী-শিশু, শ্রমিকদের অবস্তাও ছিল আমাদের তুলনায় অনেক করুন।এমনকি নারীদের ভোটাধিকারতো ছিল, এই সেদিনের কথা।
- আজ তারাই সেদেশের সমাজের অন্তর্নিহিত শক্তি।
তাই আপনার 'স্পষ্ট' প্রশ্নের উত্তরে নির্দ্বিধায় বলা যায়, 'বাংলাদেশের অস্তিত্ব ৪০ বছর পর উন্নত দেশের সারিতে পৌঁছবে ইনশাল্লাহ' ! তবে মার্কিনদের রাষ্ট্র গুলি যুক্ত থাকবে কিনা , সন্দেহ আছে।
Smile n live, help let others do!
আজিজুল,
এই ধরনের বিশ্বাস থাকা ভাল। তবে একই সাথে সব ধরনের পরিস্থিতির ব্যাপারে চিন্তা করলে কোন ক্ষতি নেই। সোভিয়েত রাশিয়া ভেংগে যাবার কয়েক বছর আগেও সে সম্ভাবনার কথা সহজে উদয় হয়নি অনেকের কাছে। এমনকি আমেরিকাও প্রস্তুত ছিল না, প্রস্তুত ছিল না তার 'মিলিটারী-ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্স' [যার ফলে এখন খুঁজে খুঁজে বের করতে হচ্ছে কার সাথে যুদ্ধ করবে]।
যদি ইতিহাস দেখি - তবে এমন অনেক উদাহরন খুঁজে পাওয়া যাবে।
এক সময়ের বিশাল 'অটোম্যান সাম্রাজ্য' কেন ভেংয়ে গেল বলতে পার?
সাইফ ভাই,
আমি আপনাকে মুদ্রার অপর পীঠটা এবার দেখাতে চেষ্টা করবোঃ
১। ৬৫ বছর হতে চলল্ পাক-ভারত স্বাধীন হয়েছিল। আমার পূর্ব পুরুষরা 'কোলকাতার' ব্যবসা, মাল ভর্তি গুদাম, ২-৩ টা দালানের মালিকানা ছেড়ে এক কাপড়ে চলে আসতে বাধ্য হন। এরপর শত চেষ্টায়ও গড়িয়া হাটা, বড় বাজারের মত বাণিজ্যিক এলাকার বাড়িগুলির মালিকানা আর ফেরত পাওয়া যায় নাই। ঐ দেশটায় তো সবই ' সিসটিম্যেটিক চলছিল, শুধু আমরা পূর্ব বঙ্গীয় মুসলিম ছিলাম এই যা !
২। পাক-ভারত স্বাধীনতার পর, 'বিহার' এর মুসলিম গুষ্ঠি পাকিস্তানে মাইগ্রেট করার মনস্ত করে। যদিও ওরা উর্দু ভাষী, তবুও পশ্চিম পাকিস্তান তাদের বাসস্তানের ব্যবস্তা করতে অস্বীকার করে।এই বাঙ্গালিরা তাদের চাটগাঁ, সইয়োদপুর আবাসনের সুযোগ করে দেয়। প্রতিদ্যান হিসাবে '৭১ যে পুরুষ্কার বাঙ্গালিরা পায়, তা ভুলার নয়।
এদেশে বসবাসকারী বলে রাস্তা- ঘাট, আউয়ামিলিগীদের পরিচিত থাকায় এরাই হয়ে উঠে হানাদারদের এক নম্বর দোসরে।আর নিজেরাও চালায় জঘন্য হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন!
আপনার সহপাঠী 'নুসরাত' এবং তার পরিবার হয়ত ভাল মানুষ ছিলেন, কিন্তু ঝড় আসলে কি আর 'সেগুন গাছ' ,'চন্দন গাছ' বাছ বিচার করে উপড়ে ফেলে?
সব শেষেঃ এটা দেশ বা দেশের মানুষের কোন দোষ নয়। জার্মানিতে ইহুদী, আমেরিকাতে রেড ইন্ডিইয়ান,অস্ট্রেলিয়ায় এবারজিনো, ইসরাইলে মুসলিম আরব,... সকল সময়ে, সকল দেশে স্বার্থের সংঘাতে এই উচ্ছেদ, এই ভয় চলে আসছে এবং ভবিষ্যতেও চলতে থাকবে, এতে "বাংলাদেশের" কোন দোষ 'দেশ প্রেমিক' হিসাবে আমার দৃষ্টি গোচর হচ্ছে না! লিখার ও মতামত চাওয়ার জন্যে ধন্যবাদ।
Smile n live, help let others do!
ভাবী কি আপনার লেখা পড়েন? মনে হয় পড়েন। তাই সেফ সাইডে থাকার জন্য নিচের লাইনটি এনেছেন?
মনে হয় না ভাবী মাইন্ড করবেন। আশা করি কবরীর গল্প লিখবেন। অপেক্ষায় রইলাম।
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
আপনার অকপট লেখা আমার খুব ভালো লাগে।
ঠিক যেমন ৭১ এ আমার দাদা-বাবা-মামা-চাচারা যুদ্ধে গিয়েছিলো। পাকিস্তানপন্থীদের কাছে তারা ছিলেন বিচ্ছিন্নতাবাদী, নীতিশ ভাইও বাংলাদেশের কাছে তাই।
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
সত্য উঠে আসার বড় দরকার ভাইয়া।
মুক্তিযোদ্ধাদেরও কিছু কিছু বিষয় আসে যা কিনা বিব্রতকর।
যেমন ধরেন কাদের সিদ্দিকী বিচারপতি (প্রেসিডেন্ট) আবু সাইদ চৌধুরীর বাসায় ডাকাতি করেছেন। ব্যাংক লুট করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের পর রাজাকারের সাথে ব্যাবসা করেছেন।
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
এই প্রবল সত্যিটি যারা অস্বীকার করে তাদেরকে ধিক।
কালিয়াকৈরের (গাজীপুর জেলার) তানভীর সিদ্দিকীর নাম আপনি শুনেছেন কিনা জানিনা। একসময় বিএনপির স্থায়ীকমিটির মেম্বার ছিলেন; জমিদার। এখনো খাজনা নেন। লোকজনের সাথে হ্যান্ডশেক করতেন গ্লাফস পড়ে।
২০০৮ না ০৯ এর নির্বাচনে যেমন আওয়ামীলীগ ধালাও সিট পেয়েছিলো; ২০০১ এও বিএনপি জামাতের অনেকটা সেইরকম অবস্থা হয়েছিলো। সেবারো তানভীর সিদ্দিকি জিততে পারেননি।
কালিয়াকৈরে এখনো অনেক হিন্দু রয়েছে। হিন্দু দোকানদারদের দোকানে তালা মেরে দেওয়া হয়। তানভির সিদ্দিকিকে টাকা দিয়ে দোকানীরা চাবি নিয়ে এসে দোকান খোলেন। বিভিন্ন অঞ্চলে ভোটের আগেরদিন রাতে হিন্দুদের বাড়ির আশপাশের কচু গাছ কেটে আসা হয়। এরপর ভোট দিতে যাবে হিন্দুরা। কার ঘাড়ে একটার বেশি মাথা!
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
আজিজুল,
তোমার ক্ষোভের কারন বুঝতে পারি। কিন্তু এ জন্যেই গান্ধী বলেছিলেন - "An eye for an eye only ends up making the whole world blind." এছাড়া এক অন্যায়ের কারনে আরেক অন্যায় করার অধীকার সভ্য সমাজে থাকা উচিৎ না।
রাজীব,
খুবই সঠিক কথা বলেছো - "সত্য উঠে আসার বড় দরকার ভাইয়া।"
আর কিছু দিন পরে আমরা থাকবো না, তখন বিভিন্ন ধারার ইতিহাসের বইতে হয়তো বিভিন্ন কথা লেখা থাকবে। তর্ক-বিতর্ক হবে কোনটা সঠিক ছিল। যেহেতু আমি এখনও বেঁচে আছি এবং আমার ব্যক্তিগত কোন স্বার্থ বা অনুগত্যতা নেই বাংলাদেশের কোন রাজনৈতিক দলের প্রতি তাই সত্য বলতে আমার বাধা নেই। তবে যারা দেশের ভিতরে রয়েছে তাদের সবার পক্ষে 'সবটা সত্য বলা হয়তো সব সময় সম্ভব নাও হতে পারি - সেটা আমি বুঝি।
আমাদের প্রজন্মের অসম্পূর্ন কাজ তোমরা এগিয়ে নেবে এই প্রত্যাশা করি।
ধন্যবাদ ভাইয়া।
চেষ্টা সবাইকেই করে যেতে হবে।
আমি করে যাবো।
দোয়া করবেন ভাইয়া।
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
লেখার শিরোনামটা আকর্ষণ করলো। লেখাটা পড়তে এসে আপনার জ্যেষ্ঠতা দেখে চমকে উঠলাম। এতো পুরনো একজন ক্যাডেট ভাই এর লেখা এখানে পাবো, তা আশা করিনি। লেখার বিষয়বস্তুর সাথে একমত। লেখার শেষে যে প্রস্ন করেছেন, তার উত্তর নতুন প্রজন্মকে খুঁজে বের করতে হবে। তবে আমার ভয় শুধু একচোখা লোকদের নিয়ে।
স্বাধীনতা যুদ্ধ দেখেছি, যুদ্ধের সময় অনেক কিছু হয়। মানতে চাই না যদিও। কিন্তু স্বাধীন দেশে মানুষের এমন বর্বরতা! মানুষ হয়ে মানুষের প্রতি মানুষ এমন নিষ্ঠুর হয় কিভাবে? মনটা গুমড়ে গুমড়ে কাঁদে। মানুষ কবে ভাল হবে?