মহিবের ব্লগের মন্তব্যে বলেছিলাম, “দে শ্যুট পিকচার্স” আমার প্রিয় মুভি সাইটগুলোর একটা। এবার কারণ দর্শানোর পালা। কেন এত পছন্দ করি সাইটটা? এখানে তো ভাল কোন মুভি রিভিউ নেই, মুভি নিয়ে গভীর কোন আলোচনাও নেই, বরং পরিচিতিমূলক লেখা বেশী। কথা ঠিক, কিন্তু তারপরও এটা আমার ফেভারিট। কারণ হল একটা তালিকা- সর্বকালের সেরা ১০০ চলচ্চিত্রকারের (মূলত পরিচালক) তালিকা।
ইন্টারনেটে মুভি সংশ্লিষ্ট অনেক তালিকা আছে, সর্বকালের সেরা ১০০ অমুক, তমুক, ইত্যাদি, টিত্যাদি। কিন্তু এই তালিকাটা অনন্য এবং সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য। অনন্য হওয়ার কারণ- জটিল হিসাব-নিকাশ, মাস্টারপিসগুলোর উপর বিশেষ নজরদারি, কোন নির্দিষ্ট সংস্কৃতির পক্ষপাতিত্ব না করা ইত্যাদি। এই তালিকাটা আমার মুভি দেখায় খুব বড় প্রভাব ফেলেছিল। আসলে সিনেমা দেখা শুরু করেছিলাম রটেন টম্যাটোসে রেটিং দেখে। সেখানকার রেটিংটা খুব নির্ভরযোগ্য। রেটিং দেখতে গিয়ে কয়েকজন পরিচালককে খুব ভাল লেগে গিয়েছিল। ঠিক তখন থেকেই পরিচালক দেখে সিনেমা বেছে নেয়া শুরু করেছিলাম। লেখক দেখেই যেমন বই পড়ি, তেমন পরিচালক দেখেই সিনেমা দেখা উচিত- এটা আমি বিশ্বাস করি। যে পরিচালককে ভাল লেগে যায় তার সবগুলো সিনেমাই দেখার চেষ্টা করি। সুতরাং প্রভাবশালী পরিচালকদের এরকম একটা তালিকা আমার ভাল লাগারই কথা।
আরেকটা বড় কারণ ছিল সত্যজিৎ রায়। বাঙালি হওয়ার কারণে আমি স্বভাবতই সত্যজিৎ রায়ের খুব বেশী ভক্ত, যতটা হওয়া দরকার তার থেকেও বেশী। কবিদের পরিচয় যতটা জাতীয়, চলচ্চিত্রকারদের পরিচয় যেন ঠিক ততটাই আন্তর্জাতিক। কারণ অন্য ভাষার কবিতা বোঝা যত কষ্টকর, সিনেমা বোঝা ঠিক ততটাই সহজ। তারপরও বাংলা সিনেমার প্রতি পক্ষপাতিত্বটা সরানো সম্ভব না। আমাদের আইডল সত্যজিৎকে যখন সেই তালিকায় ৩৩ নম্বরে দেখলাম তখনই মনটা ভরে গেল। আসলে সত্যজিৎ যে এতো বড় মাপের পরিচালক সেটা আগে কল্পনাই করিনি। আর এখন তো মনে করি, তার অবস্থান আরও আগে থাকা উচিত ছিল।
এই তালিকা ধরেই এর পরে আমার সিনেমা দেখা এগিয়েছে। একেকজন পরিচালক ধরে সিনেমা ডাউনলোড করেছি। অবস্থা বেশী ভাল না হলেও খুব একটা খারাপ না, এই ১০০-র মধ্যে ৪০ জনের সাথেই ইতিমধ্যে পরিচয় হয়ে গেছে। বাকিদের সাথে হওয়ার সম্ভাবনা বেশ কম, কারণ তাদের সিনেমা বেশ দুর্লভ। ভবিষ্যতে হয়তো সুযোগ আসবে।
এই তালিকা সবারই কাজে আসতে পারে। তাই প্রথমেই তালিকাটার সাথে পরিচয় করিয়ে দেব এবং এরপর এই তালিকায় আমার প্রিয় পরিচালকদের সম্পর্কে দুই এক লাইন বলব। প্রথমেই জানা দরকার, এই তালিকা কিভাবে করা হয়েছে:
দে শ্যুট পিকচার্স প্রথমেই সর্বকালের সেরা ১০০০ চলচ্চিত্রের তালিকা তৈরী করেছে। এই তালিকাও খুব নির্ভরযোগ্য, কারণ এটা তৈরী হয়েছে ক্রিটিকদের রিভিউয়ের উপর ভিত্তি করে। এই ১০০০ সিনেমায় যেসব পরিচালকের কমপক্ষে ২ টি সিনেমা আছে তাদেরকে আলাদা করা হয়েছে। এরপর এই পরিচালকদের উপর চলেছে বিভিন্ন ধরণের সার্ভে। অন্যান্য টপ হান্ড্রেড তালিকা, ক্রিটিকদের দৃষ্টিভঙ্গি, সেরা ১০০ সিনেমার সংখ্যা, সেরা ১০০০ এ সিনেমাগুলোর ড়্যাংকিং ইত্যাদি বিষয় বিবেচনায় এসেছে। এটা দেখার সময় তাই কয়েকটি বিষয় লক্ষ্য করতে হবে:
– পরিচালকদের নামের পাশে বন্ধনীর ভেতর যে সংখ্যা লেখা সেটা হল তাদের পূর্বতন ড়্যাংকিং। উল্লেখ্য নির্দিষ্ট সময় পরপর দে শ্যুট পিকচার্স ড়্যাংকিং আপডেট করে। পূর্বতন ড়্যাংকিং বলতে এখানে পূর্বের তালিকায় তাদের ড়্যাংকিং বোঝানো হচ্ছে। বর্তমান ড়্যাংকিং একেবারে প্রথমেই দেয়া আছে। সাজানোও আছে বর্তমান ড়্যাংকিং অনুযায়ী।
– বন্ধনীর পর আবছাভাবে যে সংখ্যা লেখা আছে সেটি সেরা ১০০০ এ তাদের কয়টি সিনেমা আছে তা নির্দেশ করে।
এবার তাহলে সরাসরী তালিকায় চলে যাই। পুরো তালিকা এখানে না দিয়ে আমি মূল তালিকার লিংক দিয়ে দিচ্ছি। নিচের ছবিতে ক্লিক করলেই তালিকার পৃষ্ঠাটি চলে আসবে: (এই সুযোগে কপিরাইটটাও রক্ষা করলাম আর কি)
কোন পরিচালকের সারা জীবনের কাজকে এক বাক্যে মূল্যায়ন করা সম্ভব না। তাই সেরা ১০০-র মধ্যে আমার প্রিয় পরিচালকদের শুধু পরিচয়টা দেব। তাদের সিনেমার মূল বৈশিষ্ট্য তুলে ধরাটাই এখানে মুখ্য:
১। অরসন ওয়েলস – যিনি চল্লিশের দশকে মার্কিন দর্শক ও ক্রিটিকদের ছয়টি ইন্দ্রিয়কে একসাথে আঘাত করেছিলেন। অর্ধ শতকের প্রচেষ্টায় নির্মিত সুরম্য অট্টালিকার ভিত নাড়িয়ে দিয়েছিলেন। গড়ে তুলেছিলেন শিল্পের এক নতুন প্রাসাদ। “সিটিজেন কেইন” (১৯৪১)- ইতিহাসের সবচেয়ে ইনোভেটিভ সিনেমা- এর পরিচালক হিসেবেই তিনি পরিচিত। কারণ এই সিনেমার ভাষা, সিনেমাটোগ্রাফি, থিম সবকিছুই ছিল একেবারে নতুন। এটাতেই প্রথম “ডিপ ফোকাস” দেখেছিলাম। পরে অনেক সিনেমাতেই ডিপ ফোকাসের ব্যবহার দেখেছি, কিন্তু সিটিজেন কেইনের সাথে কোনটারই তুলনা চলে না।
২। আলফ্রেড হিচকক – সাসপেন্স এবং রহস্যের জাদুকর, মানুষকে নিয়ে যিনি পিয়ানোর মত খেলতে পারতেন। থ্রিলার-সাসপেন্স জাগানোর নাকি পাঁচটি প্রধান সিনেমাটিক টেকনিক আছে। একমাত্র হিচককই এই পাঁচ টেকনিক একসাথে সফলভাবে প্রয়োগ করতে পেরেছেন। হিচককের সিনেমা দেখতে হয় পুতুলের মতো- নিজেকে শিশু মঞ্চের পুতুল ভেবে রাশ দুটো ছেড়ে দিতে হবে হিচককের হাতে, তিনি যেভাবে নাচান সেভাবেই নাচতে হবে, এখানে হিচককের ভূমিকা অনেকটা ঈশ্বরের মতো।
৩। ফেদেরিকো ফেলিনি – জীবনকে কাব্যিকভাবে উপস্থাপন করার ধারা তিনিই শুরু করেছিলেন। কাব্যিক হওয়ার কারণেই ফেলিনির সিনেমায় বাস্তবতা আর স্বপ্নের মধ্যে পার্থক্য খুব কম। তার “এইট অ্যান্ড আ হাফ” সিনেমায় তো পার্থক্যটা একেবারেই লোপ পেয়েছে।
৫। স্ট্যানলি কুবরিক – আমার প্রিয় চলচ্চিত্রকার। তিনি চলচ্চিত্রের ঈশ্বর। ঈশ্বর যেমন সর্বদ্রষ্টা, সর্বনিয়ন্তা, কুবরিকও তার সিনেমার সেটে তেমনি সর্বদ্রষ্টা এবং সর্বনিয়ন্তা- একেবারে চূড়ান্ত পারফেকশনিস্ট। একই শট ১১৮ বার নিয়ে তিনি বিশ্ব রেকর্ড করেছেন। নির্দিষ্ট কোন জনরাঁর প্রতি তার ঝোঁক নেই। তার অধিকাংশ সিনেমাকেই কোন জনরাঁতে ফেলা যায় না। তবে একটা বিষয় নিশ্চিত- তিনি মানুষের মনকে খুব একটা নাড়াতেন না; মনোবিজ্ঞান নয় সমাজবিজ্ঞানই ছিল তার সিনেমার ভিত্তি। ভবিষ্যতে যখন মহাকাশ যুগ শুরু হবে, তখন মহাকাশের নাবিকেরা এই একজন শিল্পীর প্রতি তাদের ঋণের পরিমাণটা বুঝতে শুরু করবে, এখন সেটা বোঝা সম্ভব না। মানুষকে তিনি দেখছেন একজন মানবিক ঈশ্বরের দৃষ্টিতে।
৭। আকিরা কুরোসাওয়া – আরেক পারফেকশনিস্ট। যুদ্ধের তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড হয়ে যাওয়া একটি দেশকে বুকে ধারণ করে বেড়ে উঠেছিলেন তিনি। তাই তার সিনেমার অনেকটা জুড়ে থাকে মানুষের দুঃখ-কষ্ট, হিংস্রতা, বিশ্বাসঘাতকতা। আত্মপীড়নও মাঝেমাঝে দেখা যায়। এই কষ্ট থেকেই বোধহয় তিনি শেক্সপিয়ারের ট্র্যাজেডিগুলোকে সেলুলয়েডে বন্দি করেছিলেন। এখন পর্যন্ত সবচেয়ে সফল শেক্সপিয়ারিয়ান চলচ্চিত্রকার।
৮। ইংমার বারিমান – সুইডেনে ধর্ম পালনের হার সবচেয়ে কম হলেও বারিমান বড় হয়েছেন কড়া ধর্মীয় পরিবেশে। সবাই আত্ম-আত্মা, জীবন-মরণ, সসীম-অসীম নিয়ে প্রশ্ন করে। ছোটবেলায় তিনি বোধহয় এই প্রশ্নগুলোর খুব কড়া জবাব পেয়েছিলেন যা তার অতিরিক্ত সংবেদনশীল মনকে ধ্বংস করে দিয়েছিল। সিনেমা আর মঞ্চ নাটক দিয়ে আজীবন সেই মন পুনরায় গড়ে তোলার চেষ্টা করে গেছেন। তার “গড ট্রাইলজি”-তে এক অদ্ভুত ঈশ্বরানুভূতির সন্ধান পাই। বারিমানকে বলতে হবে চলচ্চিত্রের দার্শনিক এবং দর্শনের চলচ্চিত্রকার।
৯। ফ্রান্সিস ফোর্ড কপোলা – যুদ্ধ কাকে বলে?- এই প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে অবশ্যই দর্শন আর সমাজবিজ্ঞানের কাছে হাত পাততে হবে, কিন্তু উত্তরটা উপলব্ধি করতে হলে দেখতে হবে কপোলার “অ্যাপোক্যালিপ্স নাউ”। এখন পর্যন্ত নির্মীত সেরা যুদ্ধবিরোধী সিনেমা। দেবতা-অসুর, অক্ষশক্তি-মিত্রশক্তি যাই বলি না কেন- যুদ্ধ মানে খেলাচ্ছলে নিজের অপরূপ সৃষ্টিগুলোকে ধ্বংস করে দেয়া। এই খেলা আমরা দেখেছি গডফাদারে। আর খেলা শেষের ভাঙা খেলাঘর দেখেছি অ্যাপোক্যালিপ্স নাউ-এর শেষ ৩০ মিনিটে।
১০। জঁ লুক গোদার – নিয়ম ভাঙার কারিগর। সিনেমার জগতে সর্বশ্রেষ্ঠ প্রথাবিরোধী- নির্মাণ কৌশল এবং রাজনৈতিক অন্তর্দৃষ্টি- দুদিক দিয়েই। হলিউডের গতানুগতিক ঘ্যাচাং-ঘ্যাচাং অ্যাকশন-কমেডিকে ব্যাঙ্গ করে গেছেন আজীবন। তৎকালীন ফ্রান্সের তথাকথিত মূল্যবোধকে ময়লা ভেবে ঝেড়ে ফেলেছেন। সতীর্থদের সাথে মিলে জন্ম দিয়েছেন সর্বকালের সেরা চলচ্চিত্র আন্দোলনের- নুভেল ভাগ বা ফ্রেঞ্চ নিউ ওয়েভ বা ফরাসি নবতরঙ্গ।
১১। চার্লি চ্যাপলিন – হাসিমুখে যিনি চপেটাঘাত করতে পারতেন। পৃথিবী থেকে চলচ্চিত্র শিল্প বিলুপ্ত হয়ে গেলেও নাকি যার শিল্পকর্ম টিকে থাকবে। মুখমণ্ডলে যিনি ভয়ংকর সমাজ-সচেতনতা ফুটিয়ে তুলতে পারতেন।
১২। বিলি ওয়াইল্ডার – শক্তিশালী সিনেমাটোগ্রাফির বদলে যিনি শক্তিশালী চিত্রনাট্য ও পরিপূর্ণ কাহিনীকে গুরুত্ব দিতেন। রাজনীতির ও সমাজের বদলে তিনি ছিলেন মানব সচেতন। গতানুগতিক বিনোদনের মধ্যেও তিনি শিল্পের জন্ম দিয়েছিলেন। তার “সাম লাইক ইট হট” অনেকের মতে সর্বকালের সেরা কমেডি সিনেমা।
১৪। মার্টিন স্করসেজি – তার সিনেমার চরিত্রগুলো খুব সাধারণ কিন্তু দুর্লভ স্বপ্নের খোঁজে ছুটে বেড়ায়। কিন্তু বাস্তব ছুটে বেড়ানোটাই আমরা দেখতে পাই। তার চরিত্রগুলো প্রচণ্ডভাবে অস্তিত্বশীল। স্করসেজি স্বপ্নপূরণের সহিংস এবং বেদনাদায়ক পথকেই শৈল্পিকভাবে উপস্থাপন করেছেন। আর আমরা অবাক হয়ে লক্ষ্য করেছি, শেষে গিয়ে চরিত্রগুলো যেই অসীমে ছিল সেই অসীমেই রয়ে গেছে। ট্যাক্সি ড্রাইভারের শেষ দৃশ্য স্বপ্ন না বাস্তব- এটা তাই আমাদের পক্ষে বোঝা সম্ভব হয়ে উঠেনি, রেইজিং বুলের শেষ দৃশ্যে রবার্ট ডি নিরোর শৈল্পিক ঘুষাঘুষি কোন দ্রোহের প্রতীক সেটাও আমরা বুঝে উঠতে পারিনি। এই বুঝতে না পারার ব্যঞ্জনাই স্করসেজি দর্শকদের তাড়িয়ে বেড়ায়।
১৮। ফ্রিডরিশ ভিলহেল্ম মুর্নাউ – যার উচ্চাভিলাষ সকল পর্বতের চূড়া ছাড়িয়ে গেছে। অকাল মৃত্যু না হলে তিনি যে কত কি করে দেখাতেন সেটা ভাবতে গিয়ে একালের সিনেমোদীদের দম বন্ধ হয়ে আসে। ড্রাকুলা নিয়ে করা প্রথম সিনেমা তার, নাম নসফেরাতু (১৯২২)- জার্মান এক্সপ্রেশনিজমের সর্বোৎকৃষ্ট উপহারগুলোর একটি। শুধু ছবি দিয়ে কথা বলতে চাইলে আমাদের বারবারই তার কাছে ফিরে যেতে হবে।
২১। ফ্রিৎস লাং – মাস্টার অভ ডার্কনেস। তার “মেট্রোপলিস” (১৯২৭) নির্বাক যুগের সবচেয়ে ব্যয়বহুল সিনেমা। এত ব্যয় করেছিলেন কেবল মানব সভ্যতার ডার্কনেস তুলে ধরার জন্য। প্রযুক্তিকেন্দ্রিক সভ্যতার রূপ তিনি সেকালেই উপলব্ধি করেছিলেন; মেট্রোপলিসের শিল্প কারখানার আন্ডারগ্রাউন্ড যেন সভ্যতার অন্ধকার ভিত্তিভূমিকেই নির্দেশ করে। ইনিই হলিউডী ফিল্ম নয়ারের জনক। সিনেমাটগ্রাফিক স্টাইলের মাধ্যমে মানুষের অন্ধকার দিক তিনিই প্রথম তুলে ধরেছিলেন, “এম” (১৯৩১) সিনেমাতে।
২৩। ফ্রঁসোয়া ত্রুফো – নুভেল ভাগের আরেক স্বপ্নদ্রষ্টা। তার সিনেমা যেন তার জীবনেরই প্রতিধ্বনি। এরকমটা একটা জীবন না পেলে “দ্য ফোর হান্ড্রেড ব্লোস” এর মত সিনেমা বানাতে পারতেন কি-না কে জানে। উল্লেখ্য ত্রুফো জীবন শুরু করেছিলেন চলচ্চিত্র সমালোচক হিসেবে। সিনেমার বিখ্যাত “ওটার তত্ত্ব” তাদেরই (তৎকালীন ফরাসি ক্রিটিক গোষ্ঠী) দেয়া।
২৫। ডেভিড লিন – লরেন্স অফ অ্যারাবিয়া এবং ব্রিজ অন দ্য রিভার কাওয়াই এর নির্মাতা হিসেবে ডেভিড লিনের সাথে অনেকেই পরিচিত। এপিক সিনেমা বানাতে তার জুড়ি নেই। মানব জীবনের মহিমা রূপায়নে তিনি অপ্রতিদ্বন্দ্বী।
৩০। স্টিভেন স্পিলবার্গ – স্পিলবার্গ সর্বকালের সেরা এন্টারটেইনিং চলচ্চিত্র শিল্পী। বক্স অফিসে দুর্দান্ত সাফল্য এবং সমালোচক মহলে প্রশ্নাতীত গ্রহণযোগ্যতা কজনার ভাগ্যে জোটে? তিনি ইতিহাসের সবচেয়ে ধনী চলচ্চিত্রকারও- সিনেমা বানিয়ে প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলার কামিয়েছেন। ৭০-৮০-৯০ এই তিন দশকের সবচেয়ে ব্যবসা সফল ছবি তিনটাই তার করা: জস, ইটি এবং জুরাসিক পার্ক। ইটির শিল্পমূল্য এবং শিন্ডলার্স লিস্টের মানবতাবোধই তাকে সবচেয়ে বেশি মহিমান্বিত করেছে।
৩২। ভিত্তোরিও দে সিকা – মানুষের আত্মাকে যিনি ভিডিও করতে পারতেন। আত্মা নিয়ে অনেকে গবেষণা করলেও আত্মার সন্ধান খুব কম চলচ্চিত্রকারই পেয়েছে- দে সিকা সেই কয়েকজনের মধ্যে সেরা। নগ্ন বাস্তবতা দিয়েও যে শিল্প সৃষ্টি করা যায়, “বাইসাইকেল থিফ” (১৯৪৮) এ আমরা সেটাই দেখেছি। টু উইমেন (১৯৬০) এর ধর্ষণ দৃশ্যের আর্তনাদ ডি সিকার কারণেই আমাদের কাছে মানবতার আর্তনাদ হিসেবে ধরা দিয়েছে। উল্লেখ্য ডি সিকা ইতালিয়ান নিওরিয়েলিজম আন্দোলনের পথিকৃৎ।
৩৫। সত্যজিৎ রায় – যার সম্পর্কে লিখে শেষ করা যাবে না। রাসা-ভক্ত সত্যজিৎ ক্লোজ-আপ এর মাধ্যমে মানুষের মুখমণ্ডলে মানবতা ফুটিয়ে তুলতে পেরেছিলেন। তার সিনেমার অদ্ভুত তারল্য ভারতীয় সংস্কৃতিকে বিশ্বের সকল সিনেমোদীর কাছে আপন করে তুলেছে। তার “অপু ত্রয়ী” সর্বকালের অন্যতম সেরা ক্ল্যাসিকের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত। সত্যজিৎ পুরো একটি দেশের চলচ্চিত্র শিল্পের মেরুদণ্ড নির্মাণ করেছেন। পরিচালনা, চিত্রনাট্য, আবহ সঙ্গীত, চিত্রগ্রহণ, পোস্টার তৈরী, শিল্প নির্দেশনা সব দিকেই ছিলেন সমান পারঙ্গম।
৩৭। উডি অ্যালেন – প্রেম এবং কামের চলচ্চিত্রকার। তার অ্যানি হলেই বোধহয় আমরা প্রথমবারের মত সেক্স-কমেডি দেখেছি। মানব-মানবীরা যতদিন প্রেম করবে ততদিনই উডি অ্যালেনের সিনেমা জীবন্ত থাকবে।
৪০। রোমান পোলানস্কি – মানুষের নিঃসঙ্গতা তীব্র আবেদন নিয়ে ধরা দিয়েছে যার সিনেমাতে। মানুষকে তিনি সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে এমন সব জায়গায় নিয়ে গেছেন যেখানে প্রেম-দ্রোহ-শিল্পের জন্ম হয়।
৪৩। ফ্রাংক কাপরা – হলিউডের স্বর্ণযুগের মানুষ। স্রোতে গা ভাসিয়ে না দিয়ে যে কজন পরিচালক শিল্পমুল্য ধরে রেখেছিলেন তাদের মধ্যে কাপরা সেরা। তার রোমান্টিক এবং সামাজিক কমেডিগুলোতে আবহ সঙ্গীতের যথার্থ প্রয়োগ লক্ষ্য করা যায় যা সেকালের হলিউডে ছিল না বললেই চলে। তার “ইট হ্যাপেন্ড ওয়ান নাইট” (১৯৩৪) আমার অল টাইম ফেভারিট। কাপরার ক্যামেরায় কেবল সুখী মানুষেরাই স্থান পেয়েছে- যারা ক্ষেত্রবিশেষে দুঃখ অনুভব করলেও একসময় পরিপূর্ণ সুখের সন্ধান পায়। “ইটস আ ওয়ান্ডারফুল লাইফ” (১৯৪৬) সেদিকটাই তুলে ধরে।
৪৬। সের্জিও লেওনে – মানুষের অতি সূক্ষ্ণ সব অনুভূতিকে অতি সূক্ষ্ণ উপায়ে তুলে ধরার একটা উপায় তিনি আবিষ্কার করেছিলেন- সেটা হল বিগ ক্লোজ আপ। তার সিনেমার অনেক দৃশ্যে কেবল এক জোড়া চোখ দেখা যায়, পুরো স্ক্রিন জুড়ে। মার্কিন সভ্যতার বিবর্তন নিয়ে তার আগ্রহের কারণেই আমরা ডলার্স ট্রাইলজির মত অসাধারণ ওয়েস্টার্ন পেয়েছি। ওয়ান্স আপোন আ টাইম ইন দ্য ওয়েস্টের মাধ্যমে ওয়েস্টার্ন সংস্কৃতির পতন প্রত্যক্ষ করেছি। আর ওয়ান্স আপোন আ টাইম ইন অ্যামেরিকাতে দেখেছি- নব্য সহিংসতাকে কেন্দ্র করে মানুষ জেগে উঠছে। লেওনে আমাদের বারবার মনে করিয়ে দেন- তার চরিত্রগুলো যত হিংস্রই হোক- সবাই হোমো স্যাপিয়েন্স।
৫০। বেরনার্দো বেরতোলুচ্চি – বলা যায় মাস্টার অভ ভয়ারিজম। ভয়ারিজম মানে ঈক্ষণকাম, অর্থাৎ লুকিয়ে লুকিয়ে অন্যের রতিকর্ম উপভোগ করা। সমাজের সবচাইতে গোপন যৌন সম্পর্কগুলো তিনি নির্লজ্জের মত সবার সামনে তুলে ধরেন। ড্রিমার্স সিনেমায় তিনি নিজেই বলেছেন, “চলচ্চিত্রকার মানে ভয়ারিস্ট, ক্যামেরা হল তার গোপন বাইনোকুলার”। তিনি ইনসেস্ট তথা অজাচারের মত বিতর্কিত বিষয়েরও বস্ত্রহরণ করেছেন। তবে এই ভয়ারিজমের আড়ালে তিনি জটিল মনস্তত্ত্বের ছাপ রেখে দেন, একটু লক্ষ্য করলেই যা বোঝা যায়। এজন্য অনেক বিতর্কের পরও তিনি সম্মানিত, কারণ তিনি শিল্পী।
৫২। রিডলি স্কট – শুধু “ব্লেড রানার” করে মারা গেলেও যাকে আমরা আজীবন মনে রাখতাম। কুবরিকের “২০০১: আ স্পেস অডিসি” যে ভিজ্যুয়াল স্টাইলের জন্ম দিয়েছিল সেটার পুনরুত্থান ঘটেছে ব্লেড রানারে যা পরবর্তীতে অনেক পরিচালককে প্রভাবিত করেছে। ব্লেড রানারে এত বেশি থিমের সার্থক সমন্বয় ঘটেছে যে আজ থেকে লক্ষ-কোটি বছর পরও এটার প্রয়োজনীয়তা ফুরাবে না। তবে ইদানিং রিডলি স্কট আমাদের বেশ হতাশ করছেন।
৫৬। জর্জ কিউকর – সুনীল বলেছিলেন, হলিউডের আমাদেরকে দেয়া সেরা উপহার হচ্ছে মিউজিক্যাল সিনেমাগুলো। কিউকরের “মাই ফার্স্ট লেডি” দেখার পর সে কথার মর্ম বুঝেছি।
৬১। ভের্নার হের্ৎসগ – জার্মান নিউ ওয়েভের প্রতিনিধি। যিনি মানুষের মনে অ্যাডভেঞ্চার জাগিয়ে তুলেন। যিনি স্রোতহীন নদীর স্লো শট দেখিয়েও আমাদের মনকে আন্দোলিত রতে পারেন। তার “আগির্রে, ডের ৎসর্ন গটেস” (১৯৭২) আমার দেখা সেরা ট্র্যজেডি এবং অ্যাডভেঞ্চার সিনেমা। তার ছবিতে অসম্ভব স্বপ্নকে তাড়া করে বেড়ানো নায়ক চরিত্র এবং খুব সাধারণ কোন ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের অনন্য গুণের পরিচয় পাওয়া যায়।
৬২। ডেভিড লিঞ্চ – অবচেতনের পরাবাস্তব শিল্পী। আধুনিক চলচ্চিত্রে প্রথম যুগের শৈল্পিক মাধুর্য্য ফিরিয়ে এনেছেন তিনি, তবে এক্সপ্রেশনিজম বা ইমপ্রেশনিজমের বদলে সাররিয়েলিজমের মাধ্যমে। তার সিনেমাতেও বাস্তব-অবাস্তবের সীমারেখা ঝাপসা। ট্রান্সেন্ডেন্টাল মেডিটেশন থেকে তিনি শিল্পের অনুপ্রেরণা পান। তাকে বলা যায় এ যুগের পাগলা ডিরেক্টর। মানুষের “ভীতি” এবং “সম্মান” তার সিনেমার প্রধান বিষয়বস্তু।
৭০। উইলিয়াম ওয়াইলার – তার একটা সিনেমাই আমি দেখেছি: রোমান হলিডে- আমার জীবনে দেখা সেরা রোমান্টিক কমেডি। পুরো সিনেমা জুড়ে এতসব মনকাড়া দৃশ্যের পর হৃদয় বিদারক সমাপ্তিটাই আমাকে রোমান হলিডের সাথে যুক্ত করে রেখেছে। এই মোহ থেকে কোনদিন মুক্তি পাব না, মুক্তি পেতে চাইও না।
৭১। আব্বাস কিয়ারোস্তামি – যিনি কোন নিয়ম ভাঙারও ধার ধারেননি। সব ফেলে দিয়ে একেবারে নতুন ভাষা তৈরী করেছেন। সিনেমাকে এক নতুন রূপ দিয়েছেন। কিয়ারোস্তামির সিনেমা হল নতুন যুগের সিনেমা, পরিচালক এবং দর্শকের সিনেমা। তার সিনেমায় আধ্যাত্মিকতা ও দর্শনের প্রভাব লক্ষ্যনীয়। ফেলিনির কাব্যিকতাকে পূর্ণতা দেয়ার মাধ্যমে তিনি এক দিক দিয়ে ইরানী কবিতা আন্দোলনকেই পূর্ণ করেছেন। তিনি হলেন চলচ্চিত্রের কবি এবং কবিতার চলচ্চিত্রকার। সেদিক থেকে তার সিনেমার আয়ুই বোধহয় সবচেয়ে বেশি।
৭৫। মিলশ ফরমান – সমাজরূপী পাগলা গারদ থেকে কেবল একজনই পালাতে পেরেছিল- ওয়ান ফ্লু ওভার দ্য কুকুস নেস্ট অন্তরে গেঁথে নেয়ার মত সিনেমা। একজন পূর্বে, আরেকজন পশ্চিমে যায়- কিন্তু পূর্ব-পশ্চিম সবদিকেই দাড়িয়ে থাকে সমাজ। পালিয়ে যায় একজন, সমাজ ছেড়ে দূরে কোথাও। মোৎজার্টের জীবনী নিয়ে করা তার “আমাদেউস” সিনেমাটা দেখার খুব ইচ্ছা কিন্তু কোথাও পাচ্ছি না।
৮১। কুয়েন্টিন টারান্টিনো – সহিংসতাকে যিনি নৈসর্গ্যিক রূপ দিয়েছেন। টারান্টিনো হয়ত একদিন হঠাৎ বুঝতে পেরেছিলেন, পৃথিবী থেকে কোনদিন সহিংসতা যাবে না। কিন্তু শিল্পী হয়ে এই সহিংসতার সাথে সহবাস করার উপায় কি? নিজেই সে উপায় বের করেছেন। সহিংসতা যখন যাবেই না, তখন বরং এটা নিয়ে রং-তামাশা করে সুখে থাকি। সেই থেকে তার সিনেমা বানানো শুরু। তাকে বলা যায় আর্টিস্ট অভ এক্সট্রিম ভালোলেন্স।
৮২। ডেভিড ক্রোনেনবার্গ – যার থ্রিলার অনেক দিক দিয়ে হিচককের চেয়ে আলাদা। তার মতে, হিচকক তার দর্শকদেরকে পুতুল মনে করতো আর তিনি তার দর্শকদের মানুষ মনে করেন। তার থ্রিলারে যে নগ্ন সহিংসতা দেখা যায় সেটার মানবিক গভীরতা হিচককের সাইকটিক সিনেমাগুলোর সাথে তুলনীয়। ক্রোনেনবার্গের আরেক বড় পরিচয় বডি হররের জনক হিসেবে। গুলির আঘাতে বিধ্বস্ত মুখমণ্ডল, ছুরি দিয়ে রসিয়ে রসিয়ে গলা কাটা- এগুলো তিনি ক্লোজ-আপ এর মাধ্যমে তুলে ধরেছেন।
৮৩। জোল কোয়েন এবং ইথান কোয়েন – ব্ল্যাক কমেডির প্রবাদ পুরুষ- একজন না অবশ্য দুজন। দুই ভাই মিলে অসাধারণ কিছু সিনেমা বানিয়েছেন যার অন্তত তিনটিকে মডার্ন ক্ল্যাসিক হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়। বার্টন ফিংকে (১৯৯২) যে শিল্প বিশ্লেষণ দেখা গেছে সেটা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে এক মাইলফলক। ব্ল্যাক কমেডির পাশাপাশি কোল্ড থ্রিলারেও তারা সিদ্ধহস্ত। তবে তাদের কমেডি-থ্রিলারের অন্তরালে থেকে যায় সমাজ সচেতনতা এবং মানবিক উৎকর্ষতা।
৮৬। ক্লিন্ট ইস্টউড – অন্য কোন অভিনেতা পরিচালক হিসেবে এত নাম করতে পারেনি। তার মূল পরিচয় ষাটের দশকের ওয়েস্টার্ন হিরো নাকি এ যুগের অন্যতম সফল পরিচালক সেটা নিয়েই আমাদের দ্বিধায় পড়তে হয়। তার সফলতার পরিচয় বহন করছে দুই দুইবার অস্কার জয়- আনফরগিভেন (১৯৯৩) এবং মিলিয়ন ডলার বেবির (২০০৫) জন্য। তিনি মানুষের ভালো দিকটাকে খুব বেশী বিশ্বাস করেন। ওয়েস্টার্ন সংস্কৃতি থেকেই বোধহয় এই চেতনা এসেছে। কাঁদতে চাইলে ইস্টউডের সিনেমা দেখার বিকল্প নেই।
৯১। সিডনি লুমেট – প্রথম সিনেমা দিয়েই নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করেছিলেন। “টুয়েলভ অ্যাংগ্রি মেন” (১৯৫৭) সিনেমাটা পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের ভাল লাগার মতো। সিনেমায় সবগুলো চরিত্র সমান গুরুত্বের সাথে ফুটিয়ে তুলতে ওস্তাদ তিনি। তার সবগুলো চরিত্রই নিজের হয়ে কথা বলে।
৯২। ব্রায়ান ডি পালমা – জনপ্রিয় ধারার সিনেমাই বেশি করেছেন। “স্কারফেস” (১৯৮৩) ভোলার মত না। রিমেইক সিনেমাও এত নাম করতে পারে, স্কারফেস না দেখলে বিশ্বাস হতে চায় না। আল পাচিনোর এই রূপ অন্য কোথাও দেখিনি। তবে ইদানিং স্কট সাহেবের মত পালমাও বেশ হতাশ করছেন।
৯৫। জর্জ লুকাস – স্টার ওয়ার্সই তাকে এই পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। এছাড়া তিনি ইন্ডিয়ানা জোন্স সিরিজের লেখক। এন্টারটেইনার হিসেবে স্পিলবার্গের পরই লুকাসের অবস্থান। স্টার ওয়ার্সের প্রথম দিককার সিনেমাগুলোর শিল্পমূল্য লক্ষ্য করার মত- বিশেষত সেগুলোতে ডিপ ফোকাসের ব্যবহার।
লেখাটা শেষ করছি একজন নারী চলচ্চিত্রকারের কথা বলে। অন্য সব পেশা মত এখন অনেক নারী চলচ্চিত্রকার হিসেবেও নাম কুড়াচ্ছেন। ফ্রান্সিস ফোর্ড কপোলার মেয়ে সোফিয়া কপোলা, মোহসেন মাখমালবফের মেয়ে সামিরা মাখমালবফ, হলিউডের ন্যন্সি মায়ার্স বা নিউ ফ্রেঞ্চ এক্সট্রিমিটির রূপকার Catherine Breillat উল্লেখযোগ্য। তবে সর্বকালের সেরা ১০০-র মধ্যে নারী কেবল একজন। তার নাম Chantal Akerman, বেলজিয়ামের; অবস্থান ৯৯। তার কোন সিনেমাই দেখিনি, সুতরাং কিছু বলতে পারছি না। নেট ঘেটে দেখলাম তার সবচেয়ে বিখ্যাত সিনেমা “Jeanne Dielman, 23 quai du Commerce, 1080 Bruxelles”- তিন দিন ধরে একজন মা-র দৈনন্দিন কাজ কারবার দেখানো হয়েছে এতে, ৩ ঘণ্টা ২০ মিনিটের সিনেমা।
কেউ দেখি কমেন্টায় না!!
চামে ১ম হইয়া লই। (দিহান ভাবী মনে হয় অফ লাইনে আছে B-) )
২য় হইলাম। 😕
B-)
হার-জিত না, অংশগ্রহণই বড় কথা :grr: :grr:
জেমস ক্যামেরনের নামটা না দেখায় হতাশ হইলাম। 🙁
কথাটা পছন্দ হইছে।
অবশ্যই কাজে আসবে। এই পোস্ট টা আমার প্রিয় তে যোগ করে রাখলাম। মুভি ডাউনলোডের আগে এক বার করে চেক করে নিব :grr:
লেখা টা বেশ হইছে। মুহাম্মদ আপ্ আপ্ B-)
কাজে আসবে জেনে ভাল লাগল।
মুহম্মদ ভাইয়া, অনেকের ছবি দেখেছি। কিন্তু এই তালিকাটা পড়িনি আগে।
অফটপিকঃ ভাইয়া, বানান ভুল গুলো কি তুমি ঠিক করে দিবে? আমার চোখে পড়েছে মাত্র ২টা।
দড়ান আরেকবার রিভিশন দিতেছি। বানাগুলো ধরিয়ে দিলে বেশি ভাল হতো। তাড়াতাড়ি ঠিক করে ফেলতে পারতাম। 🙂
এই সামারে একটা টার্গেট ঠিক করলাম। অন্তত তালিকার ৩০ জনের ছবি দেখার চেষ্টা করবো। হয়তো সবার সিনেমা খুজে পাওয়া সম্ভব হবে না, তারপরো......। অসংখ্য ধন্যবাদ তালিকাটার জন্য।
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
ব্রাভো 🙂
তোর সাথে কথা বলার পর মনে হচ্ছে সারাদিন অন্য কাজের সাথে দুই একটা ভাল সিনেমা দেখা জরুরী
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
শিল্পের সাথে যোগাযোগ থাকাটাই মুখ্য। তোর তো সে যোগাযোগ আছে। সিনেমা না দেখলে একটা জিনিস মিস করবি এতে সন্দেহ নাই। ভাল লাগলে অবশ্যই দেখতে পারস।
ফ্রিডরিশ ভিলহেল্ম মুর্নাউ , মিলশ ফরমান আর জর্জ লুকাসের মুভি এখনো দেখা হয় নাই।
মার্কিন স্করসিজ ড়্যাংকিংএর আরো উপরে যাবেন একদিন মনে হয়।
লেখা ফাটাফাটি হইছে। পঞ্চতারকা। 🙂
ঐ, ফরমানের সিনেমা তো দেখছস: ওয়ান ফ্লু ওভার দ্য কুকুস নেস্ট।
আর আমার মতে তালিকাটা এমন হতে পারে:
১৩। মার্টিন স্করসেজি
১৪। ফ্রান্সিস ফোর্ড কপোলা
আমার মতে স্করসেজি ১৩ তে থাকার মতই। এর উপরে যেতে পারবে না। একান্তই ব্যক্তিগত অভিমত।
চমৎকার লেখা।
আমি কিছু যোগ করি, যেকোন পরিচালকের প্রথম চলচ্চিত্র দেখা উচিত। এতে তার সম্পর্কে ভালো ধারণা পাওয়া যায়। আর যদি ক্রমানুসারে দেখা যায় তাহলে পরিচালকের মানসিকতার ধারাবাহিকতা বোঝা যায়। তবে এতে সিনেমা দেখার মজা কমে যেতে পারে। আমার মনে হয়, সিনেমা দেখতে হয় পক্ষপাতিত্ব শূন্য হয়ে, পরিচালক ভালো, সমালোচকরা বলছে ভালো, আমি খারাপ বললে 'রুচিহীন' উপাধি পেতে পারি, এই আশঙ্কা কাজ করলে মভি দেখে মজা পাওয়া কঠিন।
উপরের তালিকায় কখনোই আসবেনা এমন কয়েকটা নাম বলি,
জহির রায়হানঃ তাঁর প্রথম সিনেমা "কখনও আসেনি"... দেখার পর আমি অনেকক্ষণ থমকে ছিলাম।
বুদ্ধদেবঃ ক্যানো জানি এই ভদ্রলোকের "লাল দরজা" সিনেমা টার সাথে "forrest gump" এর মিল পাই, একটা মানুষ কতটা একা হতে পারে সেটা বুঝতে পারি।
শেখ নিয়ামত আলীঃ "সূর্য দিঘল বাড়ী" - একটু সময় নিয়ে দেখে ফেলা যেতে পারে।
আর 'দহন'... শুধু নামটাই বললাম... আর কিছুই বলার নাই এই মুভির ব্যাপারে।
জহির রায়হান বেঁচে থাকলে বাংলাদেশী চলচ্চিত্র অনেক কিছু পেতো। আফসোস লাগে আর কষ্ট হয়।
রেশাদ ভাই, আমি কিন্তু বলি নাই যে, এই পরিচালকদের দেখেই সিনেমা দেখা উচিত। আমি বলেছি "পরিচালক দেখে সিনেমা দেখা উচিত"। সেটা যে পরিচালকই হোক। আপনি নিশ্চয়ই লেখকের নাম না জেনে কোন বই পড়তে বসেন না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আপনি আপনার প্রিয় লেখকের সব বই পড়ার চেষ্টা করেন। আর সাহিত্যের বোদ্ধারা নতুন লেখকের বই পড়ে সেটাকে মূল্যায়ন করেন। কিন্তু যারা বোদ্ধা নন তারা কিন্তু প্রতিষ্ঠিত লেখকদের বই পড়েই জীবন কাটান।
এ কারণেই আমাদের মত সাধারণ দর্শকদের আমার মতে প্রতিষ্ঠিত পরিচালকদের সিনেমা দেখেই জীবন কাটানো উচিত। তবে যদি কারও মনে হয় তিনি নতুন পরিচালক দেখতে চান তাহলে অবশ্যই পারেন। কিন্তু দেখার পর সেই নতুন পরিচালক সম্পর্কে তার একটা দৃষ্টিভঙ্গি তৈরী হতে বাধ্য, যদি নামই না জানেন তাহলে দৃষ্টিভঙ্গি তৈরী হবে কিভাবে।
আমরা যেভাবে বই পড়ি সেভাবে কেন সিনেমা দেখতে পারি না? কারণ, আমাদের মধ্যে একটা বিষয় ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে যে সিনেমা নিছক মজার জন্য, বইয়ের মত অত সিরিয়াস কিছু না।
আমি কিন্তু এখানে ক্রিটিকদের কথা বলিনি, আমি বলেছি চলচ্চিত্রের স্রষ্টাদের কথা। আমি শুধু এই পরিচালকদের সিনেমা দেখি ব্যাপারটা এমনও না। এর বাইরেও অনেক পরিচালকের সিনেমা ভাল লেগেছে, কিন্তু সবদিক বিবেচনা করলে তারা এই পরিচালকদের সাথে তুলনীয় না। এই ১০০ জনের মধ্যে অন্তত ৫০ জন একেবারে অনন্য। যেমন, আমার সুনীলের কবিতা ভাল লাগে, তাই বলে নিশ্চয়ই আমি কখনও বলব না, সুনীল শেক্সপিয়ারের সমমানের কবি: অথচ দেখেন আমি জীবনে শেক্সপিয়ারের কোন কবিতার মূল ইংরেজি পড়ি নাই। তারপরও আমি শেক্সপিয়ারকে বস মানছি, আবার সুনীলের কবিতাও আমার ভাল লাগছে- এ দুটোতে তো কোন বিরোধ নেই।
এই দৃষ্টিভঙ্গিটা সিনেমায় দেখা যায় না। যারা নিয়মিত নতুন নতুন সিনেমা দেখেন তাদের অনেককেই দেখা যায় মুর্নাউয়ের নসফেরাতু (১৯২২) দেখে এক বাক্যে "বাজে" বলে ফেলতে। অথচ ব্যাপারটা এমন না। কবিতা বা সাহিত্যের প্রতি আমাদের যে সিরিয়াস দৃষ্টিভঙ্গি আছে সিনেমাতে সেটা নিয়ে আসার জন্যই আমি এ ধরণের পোস্ট লিখেছি। জহির রায়হান, মোরশেদুল ইসলাম, আলমগীর কবির, তারেক মাসুদরা অবশ্যই ভালো পরিচালক- তাই বলে তারা কেন ভিত্তোরিও দে সিকার সাথে তুলনীয় হবেন? আবার দে সিকার সিনেমা ভাল লাগে বলে কি আমার জহির রায়হান ভাল লাগতে পারবে না? জহির রায়হান কে তো আমি খুব মিস করি। কিন্তু এই তালিকা তো জহির রায়হানকে স্থান দেবার জন্য করা হয়নি। তাদের নিয়ে আলাদা তালিকা করা যেতেই পারে।
আরেকটা বিষয় বলে রাখি: একমাত্র চলচ্চিত্র নিয়েই বোধহয় এমন তালিকা করা যায়। কারণ চলচ্চিত্র সবচেয়ে আন্তর্জাতিক শিল্প মাধ্যম। আন্তঃজাতি যোগাযগের সর্বশ্রেষ্ঠ উপায় চলচ্চিত্র। তাই বিশ্বের সব দেশের চলচ্চিত্রকারদের এক মানদণ্ডে মূল্যায়ন করা যায়। এর আরেকটা কারণ: অন্যান্য শিল্প মাধ্যমের দীর্ঘ বিবর্তনের কারণে যে বিভিন্ন ধরণের ভাষা তৈরী হয়েছে সিনেমায় সেটা হয়নি। সিনেমার ভাষা কমবেশী প্রায় একইরকম।
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে আরো একজনের নাম বলতে হবে, আলমগীর কবীর। বাঙালি নাগরিক হয়ে ওঠা সম্ভবত তার কাছে শেখা। শুধু কনডমের একটা ছেড়া প্যাক দেখিয়ে সম্পর্ক বোঝানো, আমি এই দৃশ্যটা ভুলতেই পারিনা।
দারুণ মুহাম্মদ। আমি সিনেমা দেখি খুবই কম, বুঝি আরো কম। কিন্তু তোমার আর মাসুমের পোস্টগুলো তৃষ্ণা জাগিয়ে তোলে।
বানানের বিষয়ে একটা কথা। তুমি ড়্যাংকিং লিখো কেন? র্যাংকিং নয় কেন? এখানে সমস্যা আছে। কিন্তু তুমি অভ্র ব্যবহার করতে পারো।
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
আমার পিসিতে কেন জানি র এর পর য-ফলা আসে না। অনেক চেষ্টা করেছি, কিন্তু কিছু হচ্ছে না। এজন্যই এভাবে লেখা। দেখি ঠিক করার চেষ্টায় আছি।
সম্ভবত মুভি নিয়ে করা তোমার সেরা পোস্ট (আমি যে কয়টা পড়েছি)। রাতেই পড়েছিলাম, কিন্তু এতই ক্লান্ত ছিলাম যে মন্তব্য করা হয়নি।
প্রথমেই এত ভালো একটা সাইটের খোঁজ দেয়ার জন্য ধন্যবাদ। আমি একটু ঘুরে ঘুরে দেখলাম। পরিচালকের লিস্টের পাশাপাশি ১০০০ সেরা ছবির লিস্ট আছে দেখে আত্মহারা হয়ে গেলাম। এখন আর বাকিজীবনে দেখার মত মুভি খুঁজতে হবেই না!
যে পরিচালক-দের তুলে এনেছ, তাদের অনেককেই চিনি। বেশ কিছু ছবি দেখেছি। আমার ব্যক্তিগত প্রিয় হলেন কুবরিক। যে কোন মানসিক পরিস্থিতিতে আমি তাঁর ছবি দেখার সুযোগ হাতছাড়া করতে চাই না।
অনেক ছবিই দেখা হয়নি। তবে মজা লাগলো, যে "আমাদিউস" আমি দেখে ফেলেছি বলে। ছবিটা আমার এক বন্ধু রাইফেলস্ স্কয়ার থেকে কিনেছিল। এখন পাওয়া যাবে কি না জানি না, তুমি খুঁজে দেখতে পারো ওয়েস্টার্ন ক্রেজ, মুভি প্লাস এই দোকানগুলোয়।
===
খালি একটাই দ্বিমত তোমার সাথে। সিনেমার ভাষার চেয়ে আমার কাছে সাহিত্যের ভাষা অনেক বেশি তীব্র ও স্থায়ী মনে হয়। যদিও দুটি মাধ্যমের গঠন থেকে শুরু করে পাঠক/দর্শক পর্যন্ত সবকিছুতেই আকাশ-পাতাল তফাৎ, তবুও তুলনাটা চলে আসে কারণ প্রায়ই সাহিত্যের চলচ্চিত্ররূপ দেয়া হয় বলে। আমার মতে, এই কাজটি একেবারেই ঠিক না। একটা মাধ্যম থেকে অপর মাধ্যমে রূপান্তরের সময়ে যে কোন সৃষ্টিই পরিবর্তিত হয় যেটাকে আমার মিউটিলেশন বলে মনে হয়! এমনকি কবিতাকে গানের সুর দেয়া (বাংলায় রবীন্দ্রনাথই এজন্যে মূলত দায়ী)-কেও আমি ঠিক মেনে নিতে পারি না। যে অপু ট্রিলজি'র জন্য সত্যজিত রায় এত প্রশংসিত হন (তিনি আমারও খুব প্রিয় পরিচালক) সেই ট্রিলজি'টা তিনি না বানালেই আমার কাছে বেশি ভাল লাগত! তাঁর অন্য ছবিগুলো যতটা অনবদ্য লাগে, এই সিরিজটি আমার কাছে সেই মাত্রায় অসাধারণ লাগে না সেটির এডাপ্টেটিভ চরিত্রের কারণে।
বর্তমানে এটা অবশ্যই সত্য। অন্তত কবিতার সাথে চলচ্চিত্র কখনও প্রতিযোগিতা করতে পারবে না। কিন্তু সাহিত্যের অন্যান্য মাধ্যমগুলোকে চলচ্চিত্র অনায়াসেই পেরিয়ে যেতে পারে। আমি উপন্যাসের তুলনায় চলচ্চিত্র দ্বারা অনেক বেশী প্রভাবিত হই। কারণ হাজার হলেও এটা কিন্তু সত্যি যে, মানুষের ইন্দ্রিয়গুলোর মধ্যে চোখই সবচেয়ে তীব্র। চলচ্চিত্রের সুবিধা হল সে পেইন্টিং এর মত একটি পরিপূর্ণ শিল্পকে অধিগ্রহণ করতে পারে। চলচ্চিত্র অনেকগুলো শিল্প মাধ্যমকে এক করতে পারে বলে অনেকে এটাকে সেভেনথ আর্ট বলেন। কিন্তু সেভেনথ আর্টের সংজ্ঞা পেরিয়ে চলচ্চিত্র ভিন্ন শিল্প হয়ে উঠেছে। আরেকটা বিষয় দেখতে হবে, চলচ্চিত্র সবচেয়ে নবীন শিল্প মাধ্যম। তাছাড়া মঞ্চ নাটকের তুলনায়ও আমার চলচ্চিত্রকে প্রভাবশালী মনে হয়। কিন্তু মঞ্চ নাটকের বয়স ২৫০০ বছর, অথচ চলচ্চিত্রের বয়স ১০০ বছর। সুতরাং এখনও মঞ্চ নাটকের পরিপক্কতা অনেক বেশী। অন্যান্য শিল্পগুলো যে বিবর্তন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গেছে চলচ্চিত্রের এখনও সেই সৌভাগ্য হয়নি। তারপরও আমি বলব, এটা ব্যক্তি বিশেষের উপর নির্ভর করে। অনেকে চলচ্চিত্র দিয়ে বেশী প্রভাবিত হয়, অনেকে সাহিত্য দিয়ে।
উপন্যাস থেকে সিনেমা করার ব্যাপারে কিছু কথা বলি: চলচ্চিত্রকারের উদ্দেশ্য যদি হয় উপন্যাসের মূল ভাবটা চলচ্চিত্রে অনুবাদ করা, তাহলে বলতে হবে তিনি গোড়াতেই ভুল করেছেন। সত্যজিতের পথের পাঁচালীকে আমি কখনই বিভূতিভূষণের অনুবাদ হিসেবে দেখি না। আমি দেখি, সত্যজিৎ বিভূতিভূষণের তৈরী ভিতের উপর দাড়িয়ে নিজের স্বতন্ত্র একটি শিল্প সৃষ্টি করেছেন। বিভূতিভূষণ উপন্যাসে যা বলতে চেয়েছেন, সেটাই চলচ্চিত্রের মাধ্যমে বলার কোন উদ্দেশ্য সত্যজিতের ছিল না। অপু ত্রয়ীর রিভিউগুলো দেখলে বুঝবেন- কোন রিভিউয়েই উপন্যাসের ভিত্তিতে চলচ্চিত্রের মূল্যায়ন করা হয়নি। বিভূতিভূষণ যা দেখাতে পেরেছেন সত্যজিৎ সেটা দেখাতে পারেননি, আবার সত্যজিৎ সিনেমায় যা দেখিয়েছেন তার সিংহভাগ বিভূতিভূষণও দেখাতে পারেননি। প্রকৃতপক্ষে দুজনেই নিজের মত করে স্বতন্ত্র শিল্প সৃষ্টি করেছেন। আসলে পারেননি না বলে এখানে চাননি বলা উচিত। সুতরাং পথের পাঁচালীর চলচ্চিত্র ভার্সন দেখছি- এই মনে করে যদি কেউ সত্যজিৎ দেখতে বসেন তাহলে তিনি প্রচণ্ড হতাশ হবেন- এতে কোন সন্দেহ নেই।
যেমন আপনি যে অ্যাডাপ্টিভ চরিত্রের কথা বললেন সেটাই কিন্তু সত্যজিতের অপু ত্রয়ীকে বিল্ডুংস্রোমান বা নস্টালজিয়া অতিক্রম করে একটা সমাজতাত্ত্বিক ভিত্তি দিতে পেরেছিল। উপন্যাসে সেটা একভাবে করা হয়েছে, সিনেমায় করা হয়েছে সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে। অপুর সমাজতত্ত্ব নিয়ে কেউ যদি গবেষণা করতে চান তাহলে আমার মনে হয় সত্যজিৎকেই প্রধান অবলম্বন করতে হবে।
সিনেমার ভাষাকে আমিও মাঝেখনে একবার দুর্বল ভাবতাম। কিন্তু সত্যজিৎ পথের পাঁচালী থেকে চিত্রনাট্য কিভাবে লিখেছেন- সেটা দেখার পর চিন্তাধারা পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছি।
আপনাকে স্ট্যানলি কুবরিকের দুইটা সিনেমার কথা বলি: আ ক্লকওয়ার্ক অরেঞ্জ এবং দ্য শাইনিং। ক্লকওয়ার্ক অরেঞ্জ নিয়ে কারও দ্বিধা নেই। বিংশ শতকের অন্যতম সেরা এই ইংরেজি উপন্যাস থেকে করা সিনেমাটাও সবার কাছে যথার্থ মনে হয়েছে। কিন্তু কেউই এখানে উপন্যাসের সাথে সিনেমা তুলনা করছেন না। কারণ কুবরিক উপন্যাসের স্বত্ত্ব কিনে নেয়ার পর সেটাকে ইচ্ছেমত ব্যবচ্ছেদ করেছেন, সেটা আর মূল উপন্যাস থাকেনি হয়ে উঠেছে একেবারে ভিন্ন আরেকটি শিল্প। এটা মোটেই অনুবাদ না। আর "দ্য শাইনিং" সিনেমা দেখে স্বয়ং উপন্যাসের লেখক স্টিফেন কিং-ই অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, আমার উপন্যাসের পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্কের দিকটা সিনেমায় একেবারেই আসেনি। কিন্তু কথা হল, কুবরিক সেটা ইচ্ছে করেই বাদ দিয়েছেন। দ্য শাইনিং এর মাধ্যমে কুবরিক অন্যকিছু বোঝাতে চেয়েছিলেন, এটা বোঝাতে সফল হয়েছেন বলেই উপন্যাসের সার্থক অ্যডাপ্টেশন না হয়েও দ্য শাইনিং ইতিহাস গড়তে সক্ষম হয়েছে। মানুষের উপর "আ ক্লকওয়ার্ক অরেঞ্জ" বা "দ্য শাইনিং" উপন্যাসের তুলনায় সিনেমার প্রভাব অনেক বেশী বলে মনে হয়েছে। কিংবা একালের "নো কান্ট্রি ফর ওল্ড মেন" এর কথা বলতে পারেন। এক্ষেত্রেও সিনেমার জয় হয়েছে।
তবে এটা সত্যি যে, উপন্যাসের শতকরা ৬০ ভাগ অ্যাডাপ্টেশনই বাজে হয়। কারণ সেগুলো নিছক অ্যাডাপ্টেশন, নতুন একটি শিল্প হয়ে উঠতে পারে না।
শিল্পের সময়কালের বিচারে চলচ্চিত্র নবীন, একারণে তার অনেক পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যেতে হবে। এখনও অনেক অদ্ভুত রূপবদল ঘটবে নিশ্চিত (এবং আমরা সেগুলো দেখতেই পারবো না)!
কিন্তু তারপরেও সেটা "স্থায়ী" বা "তীব্র" হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। তুমি বললে ইন্দ্রিয় হিসেবে চোখের কথা। আমিও বলি, চলচ্চিত্রের দৌড় কিন্তু ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য মাধ্যম হিসেবেই সীমাবদ্ধ। সেখানে একটা বই, তার বর্ণনা (গদ্য বা কবিতা ফর্মে) সরাসরি মানুষের মস্তিষ্কে আঘাত করে। যে তাড়না সেখানে তৈরি হয় সেটা আমরা কিন্তু ভাষায় প্রকাশ করতে পারি না। অর্থাৎ আমাদের সৃষ্ট ভাষা এবং আবেগ প্রকাশের অন্যান্য সকল ফরম্যাট সেখানে হার মানে। চিন্তা করো, একেবারে গোড়াতে, পথের পাঁচালী'র চিত্রনাট্য তৈরিরও আগে, সত্যজিত যখন উপন্যাসটি পড়ছেন, তাঁর চিন্তাশীল (এবং ততোধিক কল্পনাপ্রবণ) মস্তিষ্কে সেটা কী অভিঘাত তৈরি করলো! তাঁর সেই তাড়না থেকেই কিন্তু পথের পাঁচালী চলচ্চিত্রের সৃষ্টি। তিনি সম্ভবত বাজারি জনপ্রিয়তার চিন্তাও করেননি, শুধু এই উপন্যাসের পটভূমিটাই নিলেন। কিন্তু তাঁর পুরো মেকিং, পুরো দর্শন এতটা শক্তভাবে বলতে পেরেছেন যে আত্মবিশ্বাসের মাধ্যমে, সেটা সেই উপন্যাস পাঠের সময়েই তাঁর মধ্যে রোপিত হয়ে গেছে। এখানেই সেভেন্থ আর্ট বা অনেকগুলো শিল্পের সমন্বয়ে গঠিত চলচ্চিত্রের হার। একটা গান বা কবিতা পড়ে আমি একটা উপন্যাসের আইডিয়া পেতে পারি, কিন্তু সেখানে সেটার প্রভাব এতটা প্রকট হয় না, যেটা সিনেমাতে ঘটে (আমি বাজে এডাপ্টেশনের কথা বলছি না)।
এখানে মনে হয় পরিচালকদের সবচেয়ে বড়ো কাজঃ ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে আমাদের একটা পরাবাস্তব জগতের আবেশ দেয়া, (ক্লকওয়ার্ক/মুলহল্যান্ড/মেমেন্টো এমন বেশ কিছু ছবি মনে পড়ছে), আমাদের দৃশ্যমান বাস্তবতার মাঝেও স্নায়ু অবশ করে দেয়া অনুভূতি টেনে বের করে আনার ক্যারিকেচার। সেটা আরো দক্ষভাবে করে গেলে আমরা হয়ত ইন্দ্রিয়ের জগত থেকে আরো বেশি সেরিব্র্যাল অনুভূতি পাবো। তারপরেও সেই অনুভূতিটা, সরাসরি বই থেকে প্রাপ্ত কল্পনার সমান হবে কী না, তা অনিশ্চিত। (আমি আশাবাদী বলে নাকচ করে দিচ্ছি না)
আমার কাছে ক্লকওয়ার্ক'কে শাইনিং থেকে অনেক "লেয়ার্ড" মনে হইছে। শাইনিংয়ের গতি, ধারা এগুলোতে কোন চমক নাই, শিহরণ নাই। হয়তো মেসেজ আছে, অনেক গঠনগত ব্যাপার আছে, কিন্তু ক্লকওয়ার্ক খুব সহজেই ধাক্কা দেয়, চমকে দেয়, এবং অনেকটা বইয়ের মত, মনের মধ্যে অনুরণন হতে থাকে দৃশ্যাবলি।
স্থায়িত্ব এবং তীব্রতা নিয়ে যা বললেন সেটার সাথে একমত। আসলেই চলচ্চিত্র এখন পর্যন্ত খুব ইন্দ্রিয়নির্ভর। কিন্তু অবস্থান পরিবর্তন এখনই হতে শুরু করেছে। এটা নিয়ে আমি কয়েকদিন আগে একটু ভেবেছিলাম। সারাংশটা বলি।
আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের "রচনা সমগ্র ১" পড়ছিলাম। এতে "চলচ্চিত্রের সীমাবদ্ধতা" নামে একটা প্রবন্ধ আছে। প্রবন্ধের বেশ কিছু বক্তব্যের সাথে আমি একমত। আপনার এই স্থায়িত্ব ও তীব্রতার বিষয়টাও সেখানে এসেছে। কিন্তু কবিতার উদাহরণ দিয়ে সায়ীদ আরও যে কয়েকটা বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন সেগুলো পড়তে গিয়ে আমার আব্বাস কিয়ারোস্তামির কথা মনে হয়েছে। সত্যি কথা আব্বাস কিয়ারোস্তামির সিনেমা দেখে, মনের মধ্যে আরও হাজারটা সিনেমা তৈরী করার উপায় আছে। কিয়ারোস্তামি নিজেও সেটা বলেছেন। কুবরিকের ক্লকওয়ার্ক অরেঞ্জ, স্পেস অডিসি বা ডক্টর স্ট্রেঞ্জলাভ দেখেও সেই প্রতিক্রিয়া হতে পারে বলে মনে হয়েছে। আর স্করসেজির ট্যাক্সি ড্রাইভারের কথা তো না বললেই নয়। কিন্তু কথা সত্য, এ ধরণের চিরন্তন ক্ল্যাসিক চলচ্চিত্রে এখনও দুর্লভ, তাই বলে একদম নেই এটা ঠিক না।
দেবদাসের উদাহরণ দিয়ে আরও কিছু বিষয় সায়ীদ উল্লেখ করেছেন। সেগুলো নিয়ে একটা আলাদা লেখা দেব বলে ঠিক করেছি।
আমি আরেকটা বিষয় লক্ষ্য করেছি: পথের পাঁচালী উপন্যাস পড়ার সবাই প্রচণ্ড মুগ্ধ হয়। এরপর যখন হঠাৎ শুনে এই উপন্যাসের একটা সিনেমা ভার্সন আছে তখন তাদের উৎসাহ কয়েকগুণ বেড়ে যায়। পথের পাঁচালীতে আবার অভিযান চালানোর রোমাঞ্চে তারা শিহরিত হয়ে উঠে। এ অবস্থায় যখন সিনেমা দেখতে বসে তখন প্রতি পদে পদে তাদের হতাশ হতে হয়। কারণ উপন্যাসের প্রতিটি লাইন তার মধ্যে যে মুগ্ধতা তৈরী করেছিল তার কোনটাই সিনেমাতে খুঁজে পান না। এবং না পাওয়াটাই স্বাভাবিক।
এজন্যই পথের পাঁচালীর শতকরা ৮০ ভাগ পাঠক সিনেমা দেখে হতাশ। এই দৃষ্টিভঙ্গি আমার মতে পরিবর্তন করা দরকার, কারণ তা না হলে সত্যজিতের অন্যতম সেরা সৃষ্টিটাকে আমরা কখনও মূল্যায়ন করতে পারব না।
অপু ত্রয়ীর কিছু সীমাবদ্ধতা অবশ্যই আছে, কিন্তু ঔপন্যাসিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে আমরা সেই সীমাবদ্ধতাগুলোর ধারেকাছেও যেতে পারি না, যার ফলে সঠিক মূল্যায়ন হয় না। পথের পাঁচালীর বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা সত্যজিৎ পরবর্তীতে কাটিয়ে উঠেছেন।
এটার সাথে আমি পুরোপুরি একমত। সবাইকে এই প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে দেখি। মজার ব্যাপার কি, আমার সৌভাগ্য (বা দূর্ভাগ্য)-বশত উল্টোপ্রক্রিয়ায় প্রবেশ ঘটেছে। আমি মুভি আগে দেখেছি, উপন্যাস পড়েছি তার অনেক পরে! 🙂
হয়তো একারণে আমার কাছে দু'টোর বিচার কিছুটা হলেও আলাদা। তবে এটা টের পেয়েছি, মিডিয়ামের (বা পরিচালকের) সীমাবদ্ধ পরিসর। কেন জানি মনে হয় প্রযুক্তি যতই বাড়ছে ততই এই পরিসর আরো সংকুচিত হচ্ছে। এখন তো একটাও "স্টার ওয়ার্স" বা "সিটিজেন কেইন"-এর মত চমক লাগানো ছবি দেখি না)।
ঠিক কথা। প্রযুক্তির উন্নতি সিনেমায় সুফল বয়ে আনতে পারেনি। তবে কিয়ারোস্তামিদের হাত ধরে অবস্থার পরিবর্তনের ব্যাপারে আমি আশাবাদী। ডিজিটাল এক্ষেত্রে খুব কাজে দেবে। আসলে অনেক অনেক এক্সপেরিমেন্টাল সিনেমা হওয়া উচিত। ক্যামেরাকে আমার খুব জাদুকরী মনে হয়। এটা দিয়ে যে কতকিছু করা সম্ভব- সেটা আমরা আখনও বুঝতে পারিনি মনে হয়।
পথের পাঁচালীর উল্টো প্রক্রিয়ার কথা শুনে অন্যরকম লাগল। নিঃসন্দেহে আপনার প্রতিক্রিয়াটা ভিন্ন হবে। এ নিয়ে পারলে কিছু লিইখেন।
প্রিয়তে রাখার মতোই পোস্ট।
সের্জিও লেওনেকেই প্রথম গড ফাদার পরিচালনার কথা বলা হয়েছিল। তিনি রাজী হননি। ফলে পেলাম কপোলার মতো একজন পরিচালক।
আমারো মনে হয় সাম লাইক ইট হট সেরা কমেডি।
আ্যমাদিউস আমার কাছে আছে।
আমাদেউস দেখতে হবে। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ মাসুম ভাই।
জটিল... :clap: :clap: :thumbup: :thumbup:
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
ধন্যবাদ জুনায়েদ ভাই।
এতো খেটেখুটে কিভাবে লিখিস!
তালিকাটা পছন্দ হয়েছে ,প্রিয়তে রাখলাম।
কয়েকজনের ছবি দেখা হয়নি, দেখার জন্যে নোট করলাম।
আমাকে একটা ছবি দেবার কথা ছিল, মনে আছে?
---------------------------------------------------------------------------
বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।
হলে সিনেমা দেখা হয় নাই। অন্য একটা কাজে একটুর জন্য শহরে আসছিলাম। কিন্তু মুভিটা জোগাড় করতে পারি নাই দেখেই আপনার বাসায় যাই নাই। কারণ উইকএন্ডে পোলাপান কেউ ছিল না। এই সপ্তাহে জোগাড় হলে দেখি আগামী সপ্তাহে আপনারে দিতে পারি কি-না।
মোহাম্মাদ ভাই, কোন সাইট থেকে শুধু মুভি ডাউনলোড করা যায়?>
ফোরাম গুলা ভালো লাগেনা 🙁
আমি সবসময় টরেন্ট থেকেই মুভি নামাই। টরেন্টের এই সার্চ ইঞ্জিন থেকে:
isohunt.com
ভালো লাগল মুহাম্মদ।
আমি অবশ্য সবসময় পরিচালক দেখে ছবি দেখিনা। কোন ছবি ভালো লেগে গেলে পরিচালকের নাম দেখি। ছবিটা পছন্দ হলে ঐ পরিচালকের অন্য মুভিগুলো যোগাড় করে দেখি।
ধন্যবাদ তানভীর ভাই।
মুহাম্মদ জনরা ভিত্তিক সেরা ছবির একটা পোস্ট দাও । আমাদের মত মুভিপ্রেমীদের ভাল লাগবে । সায়েন্স-ফিকশন জনরার একটা পোস্ট তোমার কাছে আশা করছি । আমি অবশ্য পরিচালক দেখে মুভি দেখিনাই, তবে তোমার লিস্টের বেশ কিছু মুভি উইশলিস্টে রেখে দিলাম, সময় করে দেখব ।
সায়েন্স ফিকশন আমার খুব প্রিয় জনরাঁ। এগুলা নিয়ে লেখার ইচ্ছা আছে।
আমি স্ক্রল করে নামি আর নামি। বিশ্বাসই হয় নাই, তুই সবাইরে নিয়াই লিখছস। :thumbup:
তা তোর আব্বাস চাচ্চু এত্তো নীচে ক্যান?
আব্বাস চাচ্চুরে মনে হয় আরেকটু টাইম দিতে হবে 😀
সবাইরে নিয়া লেখিনাইতো। ১০০-র মধ্যে মনে হয় ৩০-৩৫ জনরে নিয়া লিখছি।
আরে তাই তো। 😛 খালি স্ক্রল করে মন্তব্য করলে যা হয় আর কী :frontroll:
তোমার কাজ খুব গোছানো মুহাম্মদ। :thumbup:
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
ধন্যবাদ ফয়েজ ভাই।
😀
😀
তারকোভস্কি রে বাদ দেওয়ায় মুহম্মদের ভ্যাঞ্চাই। 😀
পোস্ট ভাল হইছে।
তারকভস্কির কোন সিনেমা দেখার সৌভাগ্য হয় নাই। 😀
মুহম্মদ ভাইয়ের কাছ থেকে আমার মুভি লাগবো!আপ্নে এত মুভি পান কই???
People sleep peaceably in their beds at night only because rough men stand ready to do violence on their behalf.
ভাই তালিকা প্রণয়নটা দেখে ভালো লাগসে। কিন্তু এইখানে তো মোট ৩৭ জনের নাম উল্লেখ আছে। বাকিদের নাম কই?