প্রবাসজীবন, পরবাস এবং

এটা আমার লেখা প্রথম ব্লগ। লেখার ইচ্ছা থাকলেও সময়ের অভাবে লেখা হয়ে ওঠেনা। তবে মাঝে মাঝে পড়ি, বিশেষত ব ক ক র নাজমুল (২৫) যখন কোনও লেখা সম্পর্কে আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
লন্ডন বা ইংল্যান্ড এ প্রচুর বাঙালি ছাত্র রয়েছে, আর এদের মাঝে ক্যাডেটদের সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়। যারা আছে তারা তো আছেই নতুন যারা এখানে আসতে চায় তারা যাতে এই ভুল না করে এই লেখার উদ্দেশ্য সেটাই।

লন্ডনে আছি বছর ছয়েক। এক স্ত্রী, দুই কন্যা।

অনেকেই হয়তো জানে ব্রিটেনে এই মুহূর্তে কোয়ালিশন সরকার ক্ষমতায়; টোরি আর লিবারেল ডেমোক্রেট। লেবারের ইরাক, আফগান যুদ্ধ, চরম অর্থনৈতিক মন্দা, এমনকি লেবার দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের পরও টোরি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। মানে একটাই এই বিশ্বায়নের যুগে ব্রিটেনে টোরিরা আর থাচার, মেজরের মত জনপ্রিয় নয়। টনি ব্লেয়ের ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ব্রিটেন মোটামুটি উন্মুক্ত হয়ে যায় বহির্বিশ্বের কাছে।

আমার এতদিনের অভিজ্ঞতায় দেখা ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টরা লন্ডনের সবচাইতে লাভজনক সম্প্রদায় (ব্রিটিশ সরকারের দৃষ্টিকোণ থেকে)। আমার হাতে এই মুহূর্তে কোনও ডাটা নাই, থাকলে এদের জিডিপিতে ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টদের অবদানটা ঠিক কত তা বলতে পারতাম। সত্যি বলতে কি আমরা যারা এখানে আছি তাদের পেছনে সরকারের খরচ শুধুমাত্র ফ্রি মেডিকেল; মেডিসিন কিনতে হয়।
এমনকি লেবারদের পাওয়ারে থাকার শেষ বছরে স্টুডেন্ট ভিসাতে প্রায় কয়েক লক্ষ স্টুডেন্ট আনা হয়।

আমার জানামতে বাংলাদেশ থেকে একজন CNG চালক, একজন পিওন, একজন এক্স সেক্রেটারি, একজন বাসার কাজের লোক স্টুডেন্ট ভিসায় লন্ডন এসেছে। ইন্ডিয়া থেকেতো শুনেছি প্লেন চার্টার করে পর্যন্ত স্টুডেন্ট ভিসায় ছেলেপেলে এসেছে। আমি যা বুঝি, মালয়েশিয়া, দুবাই, কুয়েতসহ অন্যান্য দেশে লেবার ভিসায় যেতে যে পয়সা লাগে লন্ডনে স্টুডেন্ট ভিসায় আসতে তার চাইতে কম পয়সা লাগে।
তো মামা ঠেকায় কে!

আমার এক বন্ধু এখানেই থাকে (এক্স ক্যাডেট); সে ঐ সুবর্ণ সময়ে দেশে যায় ভিসা স্ট্যাটাস পরিবর্তন করার জন্য। যথারীতি তাকেও সায়মন সেন্টারে যেতে হয় পেপারস জমা দেওয়ার জন্য। তার ঐ অভিজ্ঞতা মোটেই সুখকর না। তার একতা কথাই উল্লেখ করব, ” এ কারা লন্ডন যাচ্ছে।”

ইস্ট লন্ডনের কলেজগুলোর সামনে বিকালবেলা ক্লাস শেষ হওয়ার পর যে ভিড় হয় তা সত্যি ———-(বলার ভাষা নেই); এদের অনেকের হয়তো তোলারাম কলেজে পড়ারও যোগ্যতা নেই। (আমাদের এক অ্যাডজুটান্ট আমাদেরকে তোলারাম কলেজে গিয়ে ভরতি হতে বলতেন। উনি ছিলেন ঝ ক ক র; কলেজ আউট; জানিনা কোন কলেজ থেকে ইন্টার পাস করেছিলেন! উনি আমাদের হাউসকে প্রচণ্ড যন্ত্রণা করতেন, কারণ আমাদের হাউস মাস্টার ছিলেন সৈয়দ রফিক হোসাইন ওরফে পামোশ।

যাই হোক পুরানো কথায় ফেরত আসি।

যারা ঐ সময় লন্ডন আসলো তাদের অনেকে মসজিদে, পার্কে রাত কাটানো শুরু করলো, বাসা ভাড়া নাই বলে। একবার শুনলাম কোনও এক স্টুডেন্ট নাকি আত্মহত্যা পর্যন্ত করেছে। আমার পরিচিত এক ছেলে হিথরো গেছে সী অফ করতে, এক ছেলেকে পেল বাংলাদেশ থেকে আসছে পকেটে ২০ পাউন্ড নিয়ে। আমরা তো গ্রাম থেকে শহরে আসলেও হাজার খানেক টাকা পকেটে নিয়ে আসি।
আর ছেলেপেলেদের এই দুরবস্থার জন্য সবচেয়ে বড় দায়ভার বাংলাদেশের দালাল এজেন্সিগুলোর; যারা কিনা মোহময় এড দিয়ে ওইসব ছেলেপেলেদের মাছের ছিপ দিয়ে ধরেছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে ক্যাডেট কলেজের অনেক ছেলেও এদের ফাঁদে পড়েছে। এজেন্সিগুলো যে বেতন বা চাকুরীর কথা বলেছে তা আমরাও করতে পারিনা। আমার পরিচিত এক বাঙ্কার তো এখানে এসে প্রথম কয়েক মাস রিকশা পর্যন্ত চালিয়েছে। (এখানে সেন্ট্রাল লন্ডনে টুরিস্ট attraction এর জন্য কিছু পরিমাণ রিকশা চলে)। সরকার কি কোনোদিন এইসব এজেন্সিগুলার বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিবে; কোনোদিনও না। যদিও এদের পেছন দিয়ে চট্টগ্রামের স্পেশাল বাঁশ দেয়া উচিৎ।

আমি ৬ বছর আগে যখন আসি তখন ১৫০০ পাউন্ড নিয়ে এসেছিলাম হাত খরচ হিসাবে। ৩ মাস ওয়েট করতে হয়েছে জব খুঁজে পেতে; তাও যেটা পেয়েছিলাম সেটা দিয়ে কোনোরকম রুম ভাড়া দিতে পারতাম। এক বছর পর যখন বউ আসলো দেশ থেকে তখন চাকরি নাই।

অনেকেই হয়তো লন্ডনের ৩ W (woman, work, weather) সম্পর্কে জানে; ব্যাখ্যায় গেলাম না। যাই হোক সেই সময় পার করে এসেছি। এখন অবশ্য আগের সেই খারাপ অবস্থা নেই। সত্যি বলতে কি অনেকেই অন্যান্য ইউরোপের দেশে যেমন স্পেন, ফ্রান্স, ইতালি চলে গেছে। আমরা যারা আছি তারা পড়েছি বিপদে (আমি না, আমি মহা খুশি)। কনজারভেটিভ পার্টি চাচ্ছে না আমরা আর এই দেশে থাকি। এমনিতেই সবাই জানে যে এরা চরম রেসিস্ট। এমনকি লেবারদের হারার অন্যতম একটা কারণ তাদের লিডার ছিল স্কটিশ; এদের কাছে শুধু সাদা চামড়া হইলেই হবেনা, ইংলিশ হতে হবে। অনেকেই হয়তো এটা জানেনা। লন্ডন যদিও মাল্টি-কালচারাল। অন্যান্য ইউরোপীয়দের যেহেতু এদেশে আসা বন্ধ করতে পারছেনা তো কি আর করা, ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট আসা বন্ধ কর; তাও ঠিক বন্ধ বলা ঠিক না, বলা হচ্ছে যারা কলেজে (ভাল কলেজ)পড়বে তারা কাজ করতে পারবেনা; এমন কী যারা ভার্সিটিতে আন্ডার-গ্রাজুয়েটে আসবে তারা বউ আনতে পারবেনা, এমনি আরও নানা কিছু।
এত কথা বলার উদ্দেশ্য একটাই যারাই লন্ডন আসতে চাও স্টুডেন্ট ভিসায় তারা এসোনা। যে পরিমাণ টাকা তোমার যাবে ডিগ্রি নিতে (আন্ডারগ্রাজুয়েটে ৩০০০০ আর পোস্ট এ আরও ১০০০০)

সো বাবারা অন্য দেশে যাও যদি বাইরে পড়ার ইচ্ছা থাকে। অ্যাট লিস্ট আগামী ১০ বছর লন্ডন বন্ধ।

২৩ টি মন্তব্য : “প্রবাসজীবন, পরবাস এবং”

    • রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

      হা হা হাসান, নারে। উপায় নাই। তোর ভাবি প্রথম। যদিও নেগেটিভ রিঅ্যাক্ট।
      সে পোস্ট করার আগেই পড়ে ফেলছে। আর বলছে এসব নিয়ে ব্যাস্ত না থেকে ফ্যামিলির দিকে মনোযোগ দিতে।


      এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

      জবাব দিন
  1. সাব্বির (৯৫-০১)

    থাক তাইলে আর বিলাত যামু না।
    নিয়ম কানুন কি সব অচল হইয়া গেল নাকি। ১ম পোষ্ট বইলা কথা 😕

    রাজীব ভাই কিমুন আছেন? কত দিন দেখি না আপ্নারে 🙁
    ভাতিজী দুই টারে আদর আর নাজমুইল্যারে দুইডা বন চটকানা দিয়েন আমার পক্ষ থেকে।

    জবাব দিন
  2. রকিব (০১-০৭)

    প্রথম ব্লগের শুভেচ্ছা ভাইয়া।ভাত পা খুলে লিখতে থাকুন। ভাতিজী দুই টারে আদর আর নাজমুইল্যারে দুইডা বন চটকানা দিয়েন আমার পক্ষ থেকে। 😀


    আমি তবু বলি:
    এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

    জবাব দিন
  3. মামুন (২০০২-২০০৮)

    ভালো লাগলো ভাইয়া আপনার লেখা দেখে। শুনতেছি আমাদের PSW ভিসা নাকি বাতিল করে দিছে। আসলেই এখন লন্ডন এ আসার আগে অন্য বিকল্প ভাবা উচিত।

    শুভ লেখালেখি। :clap:

    জবাব দিন
    • রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

      জিকো, ভাই তোমার বিপদের কথা শুনে খারাপ লাগলো। কিন্তু এই ফেসবুকের যুগে এই দেশে আসার আগে কি একটু যোগাযোগ করা যেতনা!
      তুই কোন ব্যাচের। যোগাযোগ করিস।


      এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

      জবাব দিন
    • রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

      রেজওয়ান, শুভেচ্ছা নিলাম।
      আদর দিলাম।
      নাজমুলরে তুই ই মারিস।
      ঘটনা কি বুঝলাম না!
      সবাই দেখি নাজমুলরে মারতে চায়???
      কবে জানি আমিই পিটাইতে চাই ওরে।
      নাজমুল সাবধান।


      এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

      জবাব দিন
  4. পাবন (২০০৪-২০১০)

    কারো যদি বাংলাদেশ এ কিছুই করার না থাকে তবে নিউ ইয়র্ক খুব একটা খারাপ না .........
    Racism এখনো চোখে পড়ে নাই ...........
    ইংরেজী জানলে কাজ পাওয়াও খুব একটা কঠিন না ..........
    আর Grad-Undergrad এর জন্য খুব একটা আহামরি কলেজে না গেলে Tuition Fee হিসাবে ফুটা পয়সাও লাগে না ............


    Proud to be a Cadet,
    Proud to be a Faujian.

    জবাব দিন
  5. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    পাবন,
    খুব ভালো কথা।
    অনেকেই হয়তো তোর কথায় উৎসাহিত হবে ইউ এস এ যাবার জন্য।
    তুই দেখিস নাই রেসিজম, বেশ।
    আমরা কিন্তু সবাই র‍্যাসিস্ট; শুধুমাত্র প্রিটেন্ড করি যে, না।
    যাই হোক ভালো থাক।
    আর আমেরিকায় এইটা অইভাবে বোঝা সম্ভব না।
    সবই তো উইড়া আইসা জুইড়া বসছে।


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।