আমাদের লাল মিয়া

এস এম সুলতান

S M Sultan - Self-portrait

(শিল্পীর আঁকা আত্মপ্রতিকৃতি)

বাংলাপিডিয়ায় সুলতানের জীবনীর লেখক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম লিখেছেন:

” তাঁর কাছে অবয়বধর্মিতাই প্রধান। তিনি আধুনিক, বিমূর্ত শিল্পের চর্চা করেননি; তাঁর আধুনিকতা ছিলো জীবনের শাশ্বত বোধ ও শিকড়ের প্রতিষ্ঠা করা। তিনি ফর্মের নিরীক্ষাকে গুরুত্ব দেননি, দিয়েছেন মানুষের ভেতরের শক্তির উত্থানকে, ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই এবং ঔপনিবেশিক সংগ্রামের নানা প্রকাশকে তিনি সময়ের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে উপস্থাপন করেছেন। এটাই তাঁর কাছে ছিলো ‘আধুনিকতা’, অর্থাৎ তিনি ইউরো-কেন্দ্রিক, নগর নির্ভর, যান্ত্রিকতা-আবদ্ধ আধুনিকতার পরিবর্তে অন্বেষণ করেছেন অনেকটা ইউরোপের রেনেসাঁর শিল্পীদের মতো মানবের কর্মবিশ্বকে। ” 

s_m_sultan

 

এস এম সুলতানের পুরা নাম শেখ মোহম্মদ সুলতান। ডাক নাম লাল মিয়া। ১৯২৩ সালের ১০ই আগষ্ট নড়াইল জেলার (তৎকালীন যশোর) মাছিমদিয়া গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ১০ ই অক্টোবর ১৯৯৪ সালে একাত্তর বছর বয়সে যশোরে সুলতান মারা যান।

বৃক্ষরোপণ

(বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী প্রকাশিত বইয়ের প্রচ্ছদে শিল্পীর আঁকা বিখ্যাত ছবি “প্রথম রোপন”)

সুলতানের জন্ম বেশ দরিদ্র পরিবারে। বাবার নাম শেখ মোহাম্মদ মেছের আলী; পেশায় ঘরামি (অন্যত্র পাওয়া যায় রাজমিস্ত্রি) । মাতা মোছাঃ মাজু বিবি।  বাবার সাথে সুলতান ঘরামির কাজ ও করেছেন। (এই কারণে সুলতানের জন্ম তারিখ নিয়ে আমার বেশ সন্দেহ রয়েছে)। শৈশবে পরিবারের সবাই তাকে লাল মিয়া বলে ডাকতো। ছোটবেলা থেকে ছবির প্রতি ছিল লাল মিয়ার ভীষণ টান। কোনোকিছু ভালো লাগলেই চক-খড়ি, কাঠ-কয়লা, হলুদ ও পুঁই ফলের রস দিয়ে ছবি আঁকতেন। তাঁকে বিদ্যালয়ে পড়ানোর মতো অতোটা সামর্থ্য তাঁর বাবার ছিলো না। বহু কষ্ট হওয়া সত্ত্বেও তাঁকে নড়াইলের ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেয়া হয়। তিনি এখানে পাঁচ বছর অধ্যয়ন করেন। এরপর স্কুল ছেড়ে বাড়ি ফিরে রাজমিস্ত্রীর কাজ শুরু করেন। রাজমিস্ত্রীর কাজ করার পাশাপাশি তিনি সেই দালানগুলোর ছবি আঁকতেন। ১০ বছর বয়সে যখন তিনি স্কুলে পড়েন তখন ড: শাম্যপ্রসাদ মুখার্জ্জী স্কুল পরিদর্শনে এসে তাঁর আঁকা ছবি দেখে প্রশংসা করেছিলেন। তাঁর খুব ইচ্ছা ছিলো ছবি আঁকা শিখবেন, এজন্যে দরকার হলে কলকাতায় যাবেন। কিন্তু এরকম আর্থিক সঙ্গতি তাঁর পরিবারের কখনোই ছিলোনা। এসময় তাঁর এলাকার জমিদার ধীরেন্দ্রনাথ রায় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। জমিদারের সাহায্য নিয়ে সুলতান ১৯৩৮ সালে কলকাতা যান।

524db313b451a-Untitled-2

(ছবিটি খুব সম্ভবত না আ মামুনের ক্যামেরায় তোলা)

তাঁর ইচ্ছা ছিলো কলকাতায় গিয়ে অর্থ উপার্জনের কোনো চেষ্টা করার পাশাপাশি চিত্রশিল্পের শিক্ষা চালিয়ে যাবার। এই ইচ্ছা নিয়েই তিনি প্রথমে ধীরেন্দ্রনাথ রায়ের কলকাতার বাড়িতে উঠেন। এসময় তৎকালীন সময়ের প্রখ্যাত শিল্প সমালোচক এবং কলকাতা আর্ট স্কুলের পরিচালনা পরিষদের সদস্য হাসান শাহেদ সোহরাওয়ার্দী সাথে তাঁর পরিচয় হয় (সোহরাওয়ার্দী পরিবার খুব বিখ্যাত পরিবার ছিলো। তার বাবা কলকাতা হাই কোর্টের জাষ্টিস ছিলেন, আর ছোটভাই হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী পাকিস্থানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। ) । সোহরাওয়ার্দী, সুলতানকে সব ধরণের পৃষ্ঠপোষকতা করতে থাকেন, জানা যায় তিনিই লাল মিয়ার নাম বদলে রাখেন শেখ মোহম্মদ সুলতান। তাঁর গ্রন্থাগার সুলতানের জন্য সব সময় উন্মুক্ত ছিলো। ১৯৪১ সালে তিনি কলকাতা আর্ট স্কুলে ভর্তি হন। ভর্তির জন্য প্রয়োজনীয় সব যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও (এন্ট্রান্স পাশ ছিলেন না সুলতান) সোহরাওয়ার্দীর চেষ্টায় তিনি ভর্তি হতে পেরেছিলেন। এখানে তিনি তিন বছর পড়াশোনা করেন। পড়াশুনায় তিনি বেশ ভালো ছিলেন। জানা যায় তিনি ক্লাসে ২য় হয়েছিলেন।কিন্তু তিনি ছিলেন স্বাধীনচেতা ও ভবঘুরে প্রকৃতির। তাই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার রীতিনীতি তিনি মেনে নিতে পারেননি। তিনি ছিলেন প্রকৃতি প্রেমী একজন আবেগি মানুষ তাই তিনি অস্বীকার করেছিলেন যান্ত্রিকতা পিষ্ট নগর ও নাগরিক জীবনকে। ১৯৪৩ সালে তিনি খাকসার আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন।

S-M-Sultan-3

পড়াশুনা শেষ না করেই ১৯৪৪ সালে তিনি বেরিয়ে পড়েন, ঘুরতে থাকেন ভারতবর্ষের পথে প্রান্তরে। ইংরেজ ও আমেরিকান সৈন্যদের জন্য ছবি একে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেছেন এ সময় তিনি এবং এভাবেই একজন ফ্রিল্যান্স চিত্রশিল্পী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। এছাড়া ছবি প্রদর্শনী ও ছবি বিক্রি করে চলত তাঁর জীবন। শিল্পী হিসেবে তিনি তখন কিছুটা পরিচিতি লাভ করেছিলেন। কিন্তু জাগতিক বিষয়ের প্রতি ছিল তাঁর প্রচণ্ড অনাগ্রহ। শিকড় ছড়াবার আগেই তিনি ছুটে বেড়িয়েছেন। আর তাই তখনকার আঁকা তাঁর ছবির নমুনা, এমনকি ফটোগ্রাফও এখন আর নেই। তবে সে সময় তিনি নৈসর্গিক দৃশ্য ও প্রতিকৃতির ছবি আঁকতেন। কাশ্মীরে কিছুদিন থেকে তিনি প্রচুর ছবি এঁকেছিলেন।

SMSultan
১৯৪৬ সালে ভারতের সিমলাতে সুলতানের প্রথম প্রদর্শনী হয়৷ সেখানকার মহারাজা প্রদর্শনীটির উদ্বোধন করেন।
এরপর ১৯৪৭। দেশ ভাগ। সুলতান সে সময়ের কথা বলতে গিয়ে বলেন, 

” একেক জায়গায় এভাবে পড়ে আছে সব। শ্রীনগরে গেলাম। সেখানকার কাজও নেই। শ্রীনগরে থাকাকালীন পাকিস্তান হয়ে গেলো। ‘৪৮-এ সেখান থেকে ফিরে এলাম। কোনো জিনিসই তো সেখান থেকে আনতে পারিনি। একটা কনভয় এনে বর্ডারে ছেড়ে দিয়ে গেলো। পাকিস্তান বর্ডারে। আমার সমস্ত কাজগুলোই সেখানে রয়ে গেলো। দেশে দেশে ঘুরেছি। সেখানে এঁকেছি। আর সেখানেই রেখে চলে এসেছি। ” 

দেশভাগের পর এস এম সুলতান কিছু দিনের জন্য নিজ দেশ তথা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ফিরে আসেন। এখানে কিছুদিন থেকেই করাচি চলে যান। সেখানে পারসি স্কুলের শিল্প শিক্ষক হিসেবে দুই বছর চাকুরি করেছিলেন। সেখানে চাকুরিরত থাকা অবস্থায় তাঁর সাথে পরিচয় হয় আবদুর রহমান চুঘতাই এবং শাকের আলী মত বিখ্যাত শিল্পীদের। ১৯৪৮ সালে লাহোরে সুলতানের একক চিত্র প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন ফিরোজ খান নূন। ১৯৪৯ সালে করাচিতে আরেকটি চিত্র প্রদর্শনী হয় এবং তা উদ্বোধন করেন মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর বোন ফাতেমা জিন্নাহ।  ১৯৫০ সালে চিত্রশিল্পীদের এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দেয়ার উদ্দেশ্যে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে যান। সেখানে নিউ ইয়র্ক,ওয়াশিংটনশিকাগো এবং বোস্টনে তাঁর ছবির প্রদর্শনী হয়। সে সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তার একক প্রদর্শনী আয়োজিত হয়। লন্ডনের হ্যামস্টিডের ভিক্টোরিয়া এমব্যাঙ্কমেন্টে আয়োজিত এক দলগত প্রদর্শনীতে বিখ্যাত পশ্চিমা শিল্পী পাবলো পিকাসো, দালি, ক্লি প্রমুখের সঙ্গে আমাদের সুলতানও অংশগ্রহণ করেন।  ১৯৫৩ সালে আবার নড়াইলে ফিরে আসেন। এবার এসে তিনি শিশু শিক্ষার প্রসারে কাজ শুরু করেন যা নিয়ে তাঁর অনেক স্বপ্ন ছিলো। শেষ বয়সে তিনি নড়াইলে শিশুস্বর্গ এবং চারুপীঠ নামে দুটি শিশু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় তুলেছিলেন। এছাড়া সেখানে “নন্দন কানন” নামের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং একটি উচ্চ বিদ্যালয় এবং “নন্দন কানন স্কুল অব ফাইন আর্টস” নামে একটি আর্ট স্কুলও প্রতিষ্ঠা করেন।

SM_Sultan_Untitled_Landscape_(1952)

(SM Sultan. Untitled – 1952 Watercolor on card) 

অনেকটা সময় তাঁর নড়াইলেই কেটে যায়। ঢাকায় আধুনিক চিত্রশিল্পের বিকাশের সময়টায় তিনি প্রায় সকলের অজ্ঞাতেই ছিলেন। ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত তিনি শিল্পরসিকদের চোখের আড়ালেই থেকে যান। সত্তরের দশকের মধ্যভাগে তাঁর কিছু শুভানুধ্যায়ী তাঁকে ঢাকায় নিয়ে আসেন।

462b4aaec20dfa501454bf4be9347b3a

(শামসুর রাহমান ও আহমদ ছফার সঙ্গে সুলতান)

এখানে এসে তিনি কিছু ছবি আঁকেন। তাঁর আঁকা এইসব ছবি নিয়ে ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী এক প্রদর্শনীর আয়োজন করে। এই প্রদর্শনীর মাধ্যমেই তিনি নতুন করে শিল্পসমাজে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। 

Sultan চরদখল ১৯৭৬

(Chardakhal, Oil painting on board, 1976)

SM_Sultan_Char_Dakhal_(1976)

(SM Sultan. Char Dakhal – 1976 Bengal Foundation)

0XmSOsT

পঞ্চাশের দশকের মধ্যভাগে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় আধুনিক চিত্রকলার ক্ষেত্রে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছিলো। অনেক শিল্পীই সেখানে নব নব শৈলী, গড়ন এবং মিডিয়া নিয়ে উপস্থিত হচ্ছিলেন। কিন্তু এস এম সুলতান সেসময়ও নড়াইলে থেকে যান, অনেকটা লোকচক্ষুর অন্তরালে। এর কারণ অবশ্য গ্রামীণ জীবনের প্রতি তাঁর চিরন্তন আকর্ষণ এবং সহমর্মিতা। তাঁর শিল্পকর্মের স্বরূপটিও খুঁজে পাওয়া যায় এই গ্রামীণ জীবনযাত্রার প্রেক্ষাপটে। তাঁর সে সময়কার ছবিগুলোতে গ্রামীণ কৃষকদের দেখা যায় পেশীবহুল এবং বলশালী হিসেবে। এর কারণ হিসেবে তাঁর বক্তব্য হলো, 

” আমাদের দেশের মানুষ তো অনেক রুগ্ন, কৃষকায়। একেবারে কৃষক যে সেও খুব রোগা, তার গরু দুটো, বলদ দুটো -সেটাও রোগা…। [আমার ছবিতে তাদের বলিষ্ঠ হওয়াটা] মনের ব্যাপার। মন থেকে ওদের যেমনভাবে আমি ভালোবাসি যে আমাদের দেশের কৃষক সম্প্রদায়ই তো ব্রিটিশ সাম্রাজ্য গড়েছিলো। অর্থবিত্ত ওরাই তো যোগান দেয়। …আর এই যত জমিদার রাজা মজারাজা আমাদের দেশের কম কেউ না। সবাই তো কৃষিনির্ভর একই জাতির ছেলে। আমার অতিকায় ছবিগুলোর কৃষকের অতিকায় অতিকায় দেহটা এই প্রশ্নই জাগায় যে, ওরা কৃশ কেন? ওরা রুগ্ন কেন- যারা আমাদের অন্ন যোগায়। ফসল ফলায়। ” 

বাঙলাদেশের প্রতিথযশা ফটোগ্রাফার নাসির আলী মামুন শিল্পীকে প্রথম দেখেন ১৯৭৬ সালে, ঢাকার শিল্পকলা একাডেমি তে শিল্পীর প্রথম একক চিত্রকলা প্রদশর্নীর সময়।ঐ প্রদর্শনীতে শিল্পীর ৭৫ টির অধিক ছবি ছিলো। শিল্পী সম্পর্কে না আ মামুনের প্রথম অনুভূতি,

” I was startled by Sultan’s weird behaviour, his black Alkhella (long gown), wild long hair and his avant-garde temperament –witness his kissing of the kittens, carrying snakes in pockets, playing the flute, his paintings and his smoking habits which made an impression on me.”

এরপর মামুন সময় পেলেই নড়াইল চলে যেতেন, চিত্রা নদীর পাড়ে। ১ম নড়াইলের অভিজ্ঞতার কথা তিনি বলেন এইভাবে,

” It was back in winter of 1978 when I first went to Sultan’s 150- year- old residence at Narail — a broken edifice of a bygone zamindar. But the first such meeting wasn’t that pleasant as I was frightened out of my wits to see the artist playing with a poisonous cobra in his yard.”

রাতে ও মামুন সেখানে থাকেন। সেই অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি বলেন,

” The cold night was similarly horrible as I was given a dark and damp room without any furniture and electricity. As the night advanced, the icy wind from the river outside chilled me to the bone. My sleep was also interrupted by the sounds of serpents, birds and small animals that were kept in a series of racks on the wall. Then suddenly I saw a shadow in the room which conversed with those animals. I was amazed by the sudden break in the noises and those strange conversations of the artist with the creatures. This became a regular phenomenon in Sultan’s house and I could barely get a good night’s sleep.”

অবশ্য আশির দশক থেকে তিনি আবার নড়াইলেই থাকতে বাধ্য হোন। তাঁর কাছে যেসব মানুষ এবং শিশু আশ্রয় নিয়েছিলো তাদের জন্য তিনি নিজের ঘর ছেড়ে দেন। জীবজন্তুর প্রতি ভালোবাসা থেকে তিনি একটি চিড়িয়াখানা তৈরি করেন এবং সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে শিশুদের জন্য সুন্দরী কাঠ দিয়ে একটি বড় আকারের নৌকাও তৈরি করেছিলেন। তাঁর ইচ্ছা ছিলো শিশুরা সেই নৌকায় চড়ে সমুদ্র পরিভ্রমণে বের হবে আর শিল্পচর্চার উপকরণ খুঁজে পাবে। 

১৯৮৭ সালে ঢাকার গ্যেটে ইনস্টিটিউটে সুলতানের একটি প্রদর্শনী হয়। এই প্রদর্শনীর ক্যাটালগে বষয়বস্তু সম্পর্কে লেখা ছিলো, 

“These people who lived close to the soil, who bore on their shoulders the burden of civilization did not appear to Sultan to be weak, debilitated, starving creatures who deserved pity and sympathy. Quite the contrary, he saw their bulging muscles, their vigorous torso, their overpowering vitality, their well-rounded buttocks and swelling breasts ready to come to grip with life.”

সুলতানের চোখে গরীবেরাই নায়ক। তাই তিনি বলেন,

” The matter of my paintings is about the symbol of energy. The muscle is being used for struggling, struggling with the soil. Power of those arms drives the plough into the soil and grows crops. Labor is the basis and because of that labor of our farmers this land has been surviving over thousand of years. “

আশির দশকের শেষদিকে তাঁর স্বাস্থ্য খারাপ হতে থাকে। ১৯৯৪ সালে ঢাকার গ্যালারি টোনে তাঁর সর্বশেষ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। সে বছরেরই আগস্ট মাসে নড়াইলে ঘটা করে তাঁর জন্মদিন পালন করা হয়। 

sultan -studio_te
১৯৮২ সালে সুলতান একুশে পদক পান।
কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ১৯৮২ সালে তাঁকে এশিয়ার ব্যক্তিত্ব হিসেবে ঘোষণা করে।
১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ সরকারের রেসিডেন্স আটির্ষ্ট হিসেবে স্বীকৃতিলাভ। 

১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ চারু শিল্পী সংসদ পুরষ্কার পান।
১৯৮৯ সালে তারেক মাসুদ সুলতানের জীবনের উপর “আদম সুরত” নামে ৫৪ মিনিটের একটা ডকুমেন্টারী বানান। 
১৯৯৩ সালে তিনি স্বাধীনতা দিবস পুরষ্কার পান।
২০০৫ সালে নাসির আলী মামুন সুলতান এর ফটোগ্রাফ নিয়ে গুরু নামে  বই প্রকাশ করেন। (৬৮ টি ফটো নিয়ে)
২০১০ সালে এস এম সুলতানের জীবন ও কর্মের ওপর ফাহিম মিউজিকের ব্যানারে “লাল মিয়া” নামে একটি প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করেছেন আমিরুল ইসলাম।

sultan - nasir ali mamun(১৯৮২ সালে নড়াইলে না আ মামুনের তোলা শিল্পীর ফটোগ্রাফ)

17

(ধারণা করছি এটাও না আ মামুনের তোলা ছবি)

 

শিল্পী নিজের কাজের স্থায়িত্ব বা রক্ষণাবেক্ষণের প্রতি তেমন মনোযোগী ছিলেন না তাই তার অনেক কাজ হারিয়ে গেছে। তাছাড়া দেশ ভাগের সময় ও অনেক কাজ হারিয়ে যায়।
তাঁর কাজগুলোর যেগুলো বেচে গেছে তা বাংলাদেশ জাতীয় যাদুঘর, জাতীয় আর্ট গ্যালারী, এস এম সুলতান মেমোরিয়াল মিউজিয়াম এবং বেঙ্গল ফাউন্ডেশনে রক্ষিত রয়েছে।

 

প্রদর্শনীসমূহ

একক

যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে তাঁর ১৭টি একক প্রদর্শনী হয়েছিলো।
চিত্র শিল্পী এসএম সুলতান ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় জেলার বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে ঘুরে যুদ্ধের ছবি আঁকেন।

যৌথ

এছাড়াও লন্ডনে পিকাসোমার্টিন ও ডালির সাথে যৌথ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়।
১৯৫০ সালে ইউরোপ সফরের সময় যৌথ প্রদর্শনীতে তার ছবি সমকালনী বিশ্ববিখ্যাত চিত্রশিল্পী পাবলো পিকাসো, ডুফি, সালভেদর দালি, পল ক্লী, কনেট, মাতিসের ছবির সঙ্গে প্রদর্শিত হয়। সুলতানই একমাত্র এশীয় শিল্পী যার ছবি এসব শিল্পীদের ছবির সঙ্গে একত্রে প্রদর্শিত হয়েছে।

এস এম সুলতান ১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর যশোরে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে বিকেল ৪ টা ৩৫ মিনিটে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। চিত্রা নদীর পাড়ে নড়াইলে তাকে দাফন করা হয়।

SM Sultan Memorial+Narail+02

তথ্যসূত্রঃ
০১ উইকিপিডিয়া (বাঙলা ও ইংরেজি)
০২ ইন্টার্নেট
০৩ Great Master SM Sultan – বেঙ্গল গ্যালারি অফ ফাইন আর্টস
০৪ ডেইলি স্টার
০৫ বিশেষ কৃতজ্ঞতা – মোস্তাক আহমেদ
০৬ নাসির আলী মামুন
০৭ প্রফেসর সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম
০৮ প্রথম আলো
০৯ বাংলাপিডিয়া
১০ অন্যান্য

২২ টি মন্তব্য : “আমাদের লাল মিয়া”

    • রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

      ধন্যবাদ জিয়া ভাই। :teacup:
      ছবি দিতে গিয়ে দেখি বেশি বড় হয়ে যাচ্ছে।
      দেখি আরেক পর্বে দিয়ে দিবো।
      তাছাড়া সুলতানের গ্রাম এর ছবি প্রায় কিছুই এখানে দেয়া হয় নি।


      এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

      জবাব দিন
  1. ফরিদ (৯৫-০১)

    কোথায় যেন পড়েছিলাম অধ্যাপক রাজ্জাক একবার সম্ভবত আহমদ ছফার সহায়তায় ঢাকার নবাবপুর বা কাছাকাছি কোন এলাকা থেকে সুলতানের প্রায় ৫০টার মত পেইন্টিং উদ্ধার করেছিলেন। পরে সেগুলো যাচাই বাছাই শেষে বেংগল গ্যালারীতে প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়। সুলতানের মৃত্যুর পর পরই এই ঘটনা। (সম্পাদিত)

    জবাব দিন
    • রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

      আমি নিশ্চিত নই হাসনাত আবদুল হাই এর সুলতান পড়েছি কিনা।
      তবে নভেরা টা পড়েছি।
      এবং নভেরা তার উপর মোটেও খুশি হননি।
      তবে সুলতানের উপর লেখা বেশ পেটমোটা একটা বই পড়েছিলাম আমাদের ব্যাচমেট মোস্তাকের সৌজন্যে।
      তা সেই ৯৬-৯৭ সালের দিকে।


      এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

      জবাব দিন
      • সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

        নব্বইয়ের দশকের শুরুতে ঈদ সংখ্যা বিচিত্রায় মনে হয় সুলতান পড়েছিলাম প্রথমে। 🙂 পরে এটি বই আকারে প্রকাশিত হয়। সেই প্রথম সুলতানের সাথে পরিচয় আমার। তাঁর জীবন অথবা জীবনবোধ দুটোই টেনেছিল সেই সময়ে। সত্যিকারের মাটির শিল্পী তিনি!
        নভেরাও পড়েছিয়াম পরবর্তীতে। নভেরার সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়েছিল লেখা প্রকাশের পরপর। নভেরা বহু বছর প্রবাসী তখন...

        জবাব দিন
        • রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

          যখন নভেরা পড়েছিলাম তখন সেভাবে মনে হয় নি।
          আজ কে মনে হলো, লেখক নভেরা কে খুব বাজে ভাবে উপস্থাপন করেছেন উপন্যাসে।
          যেনো শরীরকে নভেরা অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করেছে। যেখানে প্রয়োজন সেখানেই শরীর, রূপ ব্যবহার করেছে।


          এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

          জবাব দিন
  2. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    সত্যি কথা বলতে সুলতান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানতাম না, ধন্যবাদ রাজীব ভাই তথ্যবহুল লেখাটার জন্য :boss:


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  3. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)
    ” The matter of my paintings is about the symbol of energy. The muscle is being used for struggling, struggling with the soil. Power of those arms drives the plough into the soil and grows crops. Labor is the basis and because of that labor of our farmers this land has been surviving over thousand of years. “

    এক সময় আমি মনে করতাম তিনি শুটকা-পটকা ছিলেন বলেই হয়ত আক্ষেপ থেকে এরকম ছবি আকঁতেন... :no:

    রাজীব ভাই, তথ্যবহুল পোস্টটার জন্য অনেক ধন্যবাদ! :clap: :thumbup:


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন
  4. মোকাব্বির (৯৮-০৪)

    কিচ্ছু জানতাম না। একদম কিছুই না। আমার জানার সম্বল বলতে উনার কিছু আঁকা ছবি আর উনার বাঁশি বাজানোরত ছবিটি। অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই। :boss:


    \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
    অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

    জবাব দিন
    • রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

      এখান থেকে এইটা কাটপিস মারি, ঐখান থেকে আরেকটু।
      নিজের সাথে প্রতারণা করছি বলে মনে হয়।
      তারপরো যখন দেখি কারো না কারো ভালো লেগেছে।
      চিন্তার খোরাক জুগিয়েছে, তখন সত্যি বলতে কি ভালো লাগে।
      নে, চা খা :teacup:


      এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

      জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।