হুমায়ূন আহমেদ আমার কাছে একজন মিশ্র মানুষ। তার ছোটগল্প যতটা ভালো লাগে উপন্যাস ততটা লাগে না। কিছু কবিতাও তিনি লেখার চেষ্টা করেছেন ; ভালো লাগেনি। তবে তিনি কবিতা, পূর্ণিমা, বৃষ্টি, নদী, নৌকা পছন্দ করতেন এরকম প্রমাণ তার লেখা থেকে পাওয়া যায়।
মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বেশ কিছু উপন্যাস হুমায়ূন আহমেদ আগেই লিখেছিলেন। অনীল বাগচীর একদিন, ১৯৭১, সূর্যের দিন, আগুনের পরশমণি, শ্যমল ছায়া অন্যতম। যারা মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক বই খোঁজেন তাদের জন্য লিঙ্ক। এছাড়াও তার নানান ছোটগল্পে ১৯৭১ এসেছে। বিভিন্ন আত্মজীবনীমূলক লেখায় ১৯৭১ সালে নিজের ও নিজ পরিবারের কাহিনী এসেছে। অনেকেই হয়তো জানেন হুমায়ূন আহমেদ নিজে ও তার ছোটভাই মুহম্মদ জাফর ইকবাল মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তাদের বাবা ফয়জুর রহমান একজন শহীদ।
হুমায়ুন আহমেদের একটি বইয়েই প্রথম পাই পাকিস্থানের দোসর এক পীর কে স্বাধীনতা পদক দেবার কথা ; যেটি আবার দিয়েছেন একজন মুক্তিযোদ্ধা প্রেসিডেন্ট। তিনিই প্রথম তার নাটকে টিয়ে পাখি দিয়ে বলান,
“তুই রাজাকার।”
লেখক জীবনের এক পর্যায়ে এসে হুমায়ূন আহমেদ অতিহাস ভিত্তিক বই বা উপন্যাস লেখা শুরু করেন। দেশভাগের আগের সময় নিয়ে মধ্যাহ্ন, স্বাধীনতা পূর্ববর্তী উত্তাল সময় নিয়ে মাতাল হাওয়া, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে জোছনা ও জননীর গল্প, মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময় বিশেষ বঙ্গবন্ধু হত্যা নিয়ে দেয়াল। বাদশাহ হুমায়ুন কে নিয়ে বাদশাহ নামদার ।
হুমায়ূন আহমেদের ঐতিহাসিক উপন্যাস কতটুকু ইতিহাস ধারণ করে আছে তা বলা কষ্টকর। তারপরো অনেক ভাবনার খোরাক যোগায় বই কি।
নীলগঞ্জের এক মিনারী মসজিদের মাওলানা ইরতাজউদ্দিনের কথাই ধরা যাক। পরাধীন দেশে জুমার জামাজ হয় না এই ফতোয়া দেয়ায় ক্যাপ্টেন বাসেতের নির্দেশে তাকে উলঙ্গ করে বাজারে ঘুরানো হয়। এরপর সোহাগী নদীর তীরে দাড় করিয়ে গুলি করে তাকে হত্যা করা হয়। বাজারের একজন দর্জী মাওলানা সাবকে নগ্ন দেখে দৌড়ে এসে একটি কাপড় দিয়ে তাকে ঢেকে দেন। তাকেও মাওলানা সাবের সাথে গুলি করা হয়। দর্জী বেঁচে যান। তার মুখেই লেখক এই কাহিনী শুনেন।
মতলুব মিয়ার নামের আগে হাজি। কিন্তু বলা হচ্ছে শেষ বয়সে এসে তিনি ধর্ম কর্মে মন দেন। মসজিদের কাজ শুরু করলে তিনি এক ওলি কে স্বপ্ন দেখেন। লাঠির খোঁচা, কালো দাগ কিছুই অবিশ্বাস্য নয়। ৭০ বছর বয়স, মৃত্যুচিন্তা থেকে এইসব ঘটা অসম্ভব নয়। কিন্তু ইতিহাসনির্ভর উপন্যাসে এইসব কাহিনী যায় কিনা এতে সন্দেহ রয়েছে।
ইদানিং কোন কোন বিশেষ বাহিনীতে ঢোলা কুর্তা পরিধান করার হার বেশ বেড়েছে। লেখক সম্ভবত দেয়াল ঘড়ির কথা বলছেন। ৭১ সালে নেত্রকোনা জেলার নীলগঞ্জ গ্রামে হাতঘড়ি; যায় না।
তসবিহ পড়ার এই নিয়মটি বেশ চমৎকার। হিন্দুরা অনেকে কৃষ্ণের সব নাম একসাথে জপেন। আল্লাহর ৯৯ নাম, তসবিহের ৯৯ গোটায় পড়ার ধারণাটি চমৎকার। এই লিঙ্কে ৯৯ নাম পাবেন। এছাড়াও ইসমে আজম বলে একটি লুকানো নাম আছে। লহুব সম্ভবত এটি কোরানের কোন একতি আয়াত বা আয়াতের অংশ।
আমার ব্যক্তিগত অভিমত ইরতাজউদ্দিনের জুম্মার নামাজ বিষয়ক ব্যাখ্যা ভুল।
মক্কার কাবাঘরের ভিতরে ও বাইরে ছিলো ৩৬০ টি মূর্তি। মাঝে মাঝে নবী মুহম্মদ সেখানে নামাজ পড়তে যেতেন কিন্তু বেশিরভাগ সময় তাকে অত্যাচার করা হতো। নামাজের সময় কাধের উপর উটের নাড়িভুড়ি ফেলা হতো। যেখানে নামাজ পড়ার সুযোগই প্রায় নেই সেখানে জুম্মার নামাজ পড়াটা প্রায় অসম্ভব। মক্কা ছেড়ে মদীনা বা ইয়াতরিবে যাওয়া ও হয় জীবন সংশয় হবার জন্য। মদীনায় যাওয়ার পরই ইসলামের প্রথম মসজিদ হয়। সুতরাং তখনই তো জুম্মার নামাজ পড়ার হুকুম আসবে।এর সাথে স্বাধীন-পরাধীন যুক্তি যায় না যা মাওলানা ইরতাজ ভেবেছেন।
মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়েও নির্ভীক এই দেশপ্রেমিকের অবিচল থাকা সত্যি বিরল। শহীদ ইরতাজউদ্দিনের স্মৃতির উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা।
অবাক ব্যাপার হচ্ছে আমার কোন বন্ধু নেই। মনসুর সাহেবের মতো এমন বন্ধুও বন্ধুপত্নী মাওলানা ইরতাজ পেয়েছিলেন বলে কিছুটা হিংসা হচ্ছে।
আর বালুচ রেজিমেন্টের আসলাম খাঁ র বিষয়টি ভেবে দেখার মতো।
২০০৪ এ বের হওয়া জোছনা ও জননীর গল্পের ভূমিকার শেষে লেখক লেখেন,
হুমায়ূন আহমেদের বইসমূহের লিষ্ট।
এছাড়াও মুক্তিযুদ্ধের বইএর লিষ্ট ; বাঙলায়।
পরিশেষে লেখককে শ্রদ্ধা।
* স্ক্রিন শটগুলি লেখকের জোছনা ও জননী উপন্যাস থেকে নেয়া হয়েছে।
* ২য় ছবিটি এঁকেছেন মাসুক হেলাল।
সাংস্কৃতিক দেউলিয়াত্ব নিদারুন
তোমার অভাব টের পাই
গুরু আহমেদ হুমায়ূন 🙁
পুরাদস্তুর বাঙ্গাল
আপনার পদ্যটির সাথে দ্বিমত পোষণ করছি।
হুমায়ূন আহমেদ নামটির সাথে সাংস্কৃতিক দেউলিয়াত্ব (যদি বাঙালি সংস্কৃতির কথা বলে থাকেন) র সম্পর্ক নেতিবাচক।
আর পদ মিলানোর জন্য আহমেদ হুমায়ূন করলেন ; খুঁজলে হয়তো এই নামে লেখক পেয়েও যাবেন।
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
আহমেদ হুমায়ূন নামে একজন কথাসাহিত্যিক আছেন বটে।
উনার লেখা টুকটাক পড়তাম বিচিত্রায়।
দেউলিয়াত্ব নিয়ে তোমার মতের সাথে শতভাগ সহমত রাজীব।
প্রচুর দেউলিয়াপনার কাণ্ডারী ছিলেন হু আ।
উপন্যাস লেখাকে এমন ছ্যাবলামির পর্যায়ে নিয়ে গেছে এমন একজন মেধাবী মানুষ মেনে নিতে কষ্ট হয়।
তাছাড়া টিভি নাটক, সিনেমা সংক্রান্ত ভাঁড়ামোগুলোর কথা তো বাদই দিলাম।
কৃতিত্ব নাকি পাঠক সৃষ্টি করে গেছেন। ছো!
যেই পরিবারে বড় হয়েছি সেই পরিবারের ক্রমশ ছোট হয়ে আসা বুক শেলভে নন্টে ফন্টে থেকে War and Peace সব ধরণের বই ছিল। দুই ধরণের বই পড়ার ক্ষেত্রে নিয়মিত অনুৎসাহী করে তোলার চেষ্টা আমার সৎ বাবা করে গিয়েছেন। বইগুলো ছিল ১) হুমায়ুন আহমেদের বই, ২) মাসুদ রানা। এদিকে কৈশোরের বেশীরভাগ সময় কেটেছে উনার ভাইয়ের সাই-ফাই জগতে। তারপরেও হাতের কাছে দুই-চারটা বই পেয়ে ঠিকই পড়া হয়েছে। এরপরে বড় ভাইয়ের দেখাদেখি আমিও হাত বাড়াই ইংরেজী থ্রিলার, ড্রামা, ফিকশানের দিকে। দেশটি ছোট, হাওয়ায় গা ভাসানোর জন্য বিখ্যাত হওয়ায় উনার এই বিশাল গুণমুগ্ধ ভক্তকূল তৈরী করতে বেশী বেগ পেতে হয় নি। আরো দুঃখজনক হলো আর কেউ নিজের মত করে উপন্যাস লেখার চেষ্টাও করেন নি। হয়তো করেছেন কিন্তু চাপা পড়ে গিয়েছেন।
উনার মৃত্যুবার্ষিকীতে তাই একটাই আশা, উনার গুণমুগ্ধ পাঠকেরা সামনে তাকাবে। প্রয়াত হুমায়ুন আহমেদ আঁকড়ে ধরা বাদ দিয়ে কিংবা আরেকজন হুমায়ুন আহমেদের আশায় বসে না থেকে নতুন লেখকদের কলম ধরতে আগ্রহী করে তুলবে। তৈরী হবে পাঠক, তৈরী হবে লেখক।
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\
:clap: :clap: :clap:
ইসসিরে মাসুদ রানা পড়িস নাই!
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
এক দুইটা ঠিকই পড়সি! 😛 মানে কাভার টু কাভার পড়া হয় নাই। কাজী আনোয়ার হোসেনের ঘটনা, স্থান ডিটেইলিং এর সাথে আমি পরবর্তিতে ইয়ান ফ্লেমিং (বন্ড), ও মাইকেল ক্রিকটনের লেখার আমেজ পাইসি। এইটাই আফসোস রাজিব ভাই। মাসুদ রানা পড়ি নাই সেটা আমার ব্যাপার কিন্তু কাজী আনোয়ার হোসেনের পর বাঙলাদেশে থ্রিলার লেখক কি আর আসছে? আসে নাই। কেনরে ভাই। সমস্যা কোথায়? সমস্যা হলো টুকলিফাই বলেন আর যাই বলেন, একটা ডিটেইলড থ্রিলার লিখতে গেলে যেই পরিমাণ টেকনিক্যাল জ্ঞানের দিকে নজর দিতে হবে সেইটা দেয়ার চেষ্টা আমাদের দেশে আর কেউ করে না। এত কষ্ট কে করে বলেন? আফসোস!
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\
কথা একেবারে ভুল বলিস নাই।
আবার আরেক অর্থে নামের সাথে ব্যবসায়ের যোগটাও আছে।
যেমন কাজী আনোয়ার হোসেনের জবানীতে অন্তত কয়েকবার আমি পড়েছি যে গত এক যুগের বেশি সময় তিনি নিজে মাসুদ রানা লিখেন না। সেবার চার পাচজন লেখক লিখেন, উনি প্লট দিয়ে দেন। এরপর লেখা শেষ হলে উনি ভেরিফাই করেন।
সেবার বেশ কয়েকজন লেখক কিন্তু ভালো লিখেন।
আর থ্রিলার এর সাথে সিনেমা, সমাজ অনেক কিছু জড়িত। ভাল কোন থ্রিলার ছবি বানাবার ক্ষমতা ঢালিউডের নাই। থ্রিলার মানে প্রচুর সেক্স, অনেক সময় কনস্পিরেসি থিউরি ইত্যাদি। সমাজ, রাষ্ট্র এইসব খায় না।
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
🙂
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
তথ্য সংবলিত সুন্দর উপস্থাপন :clap:
😀
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ