বাঙলাদেশ

 

যেহেতু লেখাটা সংগৃহীত তাই কিছুটা ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখার এবং তা প্রকাশ করার লোভ সামলাতে পারলাম না। আজিজ ভাই কিছু মনে করবেন না আশা করি। আর বিজয়ের মাস এখনো বর্তমান, তাই উত্তেজনাও প্রশমিত হয় নাই।

আজো আমি বাতাসে লাশের গন্ধ পাই

বাংলাদেশ বিশ্বের ৭৬তম ধনী রাষ্ট্র।

ধনী শব্দটার মধ্যে যে প্রাচুর্য রয়েছে তা হয়তো বাংলাদেশের বড়-বড় শহরগুলোর বিপণনকেন্দ্রের দিকে তাকালে কিংবা অত্যাধুনিক গাড়ির দিকে তাকালে খুব সহজেই অনুধাবন করা যায়। কিন্তু আসল চিত্রটি কি তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এমনকি ঢাকা শহরে চাকুরীরত বেশবাসে চৌকস তরুণটির দুপুরের টিফিনের বাক্সে কি থাকে তা হয়তো আমরা অনেকেই জানিনা।মঙ্গা বা গ্রামগুলোর কথা না হয় ছেড়েই দিলাম।

বাংলাদেশ অন্যতম শক্তিশালি ১০টি মুসলিম দেশের একটি।

শক্তিশালী মুসলিম রাষ্ট্র বলতে আমরা কি বুঝি? যদি এভাবে দেখি মুসলিম মুসলিম ভাই ভাই তাহলে যে সুখ পাবার কথা তার বিন্দুমাত্রও অনুভব করিনা। কেননা ১৯৭১ সালে ইয়াহিয়া ও ভূট্টোর বাহিনী যখন আমাদের উপর ঝাপিয়ে পড়েছিলো তখন কোনো মুসলিম রাষ্ট্র এর প্রতিবাদ তো করেইনি বরং অর্থ, অস্ত্র, বিমান দিয়ে সাহায্য করেছে। খুব সম্ভবত শিয়াদের (যাদেরকে সুন্নীরা মুসলমানই মনে করে না) ইরান এর প্রতিবাদ করেছিলো।

বাংলাদেশে রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সমুদ্র সৈকত(কক্সবাজার)

আরেকটু স্পেসিফিকালি বললে হয়তো এভাবে বলা যায় পৃথিবীর দীর্ঘতম বালুকাময় সমুদ্রসৈকত।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় লোনা পানির বনাঞ্চল (সুন্দরবন) এখানে।

এর সাথে দ্বিমত করার কোনো উপায়ই নাই। তবে এক্ষেত্রেও আরেকটু স্পেসিফিকালি বললে হয়তো এরকম হতো; পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বনটির নাম সুন্দরবন; যা ভারত ও বাংলাদেশে অবস্থিত। তবে সুন্দরবনের অধিকাংশই বাংলাদেশে পড়েছে।

বিশ্বের ১১তম দীর্ঘ সেতু(যমুনা সেতু) তো এদেশেই।

অতীব সত্যি কথা। তবে কিনা ব্রিজটির কোথাও কোথাও ফাটল ধরা পড়েছে; আর মাঝে মাঝে পাইপ (গ্যাসের???) খুলে পড়ে যায়। তাতে কি নিঃসন্দেহে যমুনা সেতু নাকি বঙ্গবন্ধু সেতু (আমি দুঃখিত সত্যি জানিনা এর বর্তমান নাম) ১১তম দীর্ঘ সেতু।

জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনে সবচেয়ে বেশী সৈন্য প্রেরন করা দেশ।

আমরা এখন জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনে সবচেয়ে বেশী সৈন্য প্রেরন করা দেশ। এক কথায় আমরা এখন পৃথিবীতে সব চাইতে সহজলোভ্য ‘মার্সিনারী দল’ এই কি আমরা চেয়েছিলাম? (সাইফ শহীদ)

রপ্তানিকারক দেশ হিসাবে বিশ্বে ২৭তম, গার্মেন্টস শিল্পে প্রথম।

হাঁ সেই অর্থে বাংলাদেশের জি ডি পি বাড়ছে নিঃসন্দেহে। লাখ লাখ লোকের গায়ে কাপড় না থাকুক (বা সেইরকম আরকি) দেশে তো টাটা, বিড়লা তৈরি হচ্ছে। ক্ষতি কি?

প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর এ দেশটি ২০৫০ সালে বিশ্বের অন্যতম ১০টি ক্ষমতাধর দেশের একটিতে পরিণত হতে যাচ্ছে।

দেশের মানুষ ক্ষমতা চায় না; ভাত চায়, কাপড় চায়, নিরাপত্তা চায়, মাথার উপর ছাদ চায়।

তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে বাংলাদেশের কি কিছুই নেই? আছে, আছে।কি সেটা; মানব সম্পদ। এটা যে কতো বড় একটা সম্পদ তা ব্যাবহারের উপরেই প্রমাণসাপেক্ষ।

আমাদের সাথের বেশ কয়েকজন –  মোস্তাক, মাহমুদ, নজরুল খুলনা বিশবিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। ওদের কারো একজনের মুখে অভিনব এক প্রতিবাদের ভাষা শুনি। বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষের কোনো এক অন্যায়ের প্রতিবাদ তারা জানায় এইভাবে; রেজিস্টার অফিসের সামনে একটা বালতি রাখা হয়। আর সব ছাত্ররা গিয়ে ঐ বালতিতে থুতু নিক্ষেপ করে।

হঠাতই সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের একটা কবিতা পেলাম;

থু
থু
থু
এই একটি শব্দে
গলা চিরে
এবার আমি আগুন ওগরাব

তবুও আমরা আশায় বুক বাধি। আমি যখন বাংলাদেশের দিকে তাকাই তখন দেখতে পাই;

নিলক্ষা আকাশ নীল, হাজার হাজার তারা ঐ নীলে অগণিত আর
নিচে গ্রাম, গঞ্জ, হাট, জনপদ, লোকালয় আছে ঊনসত্তর হাজার।
ধবলদুধের মতো জ্যোৎস্না তার ঢালিতেছে চাঁদ – পূর্ণিমার।
নষ্ট খেত, নষ্ট মাঠ, নদী নষ্ট, বীজ নষ্ট, বড় নষ্ট যখন সংসার
তখন হঠাৎ কেন দেখা দেয় নিলক্ষার নীলে তীব্র শিস
দিয়ে এত বড় চাঁদ?
অতি অকস্মাৎ
স্তব্ধতার দেহ ছিঁড়ে কোন ধ্বনি? কোন শব্দ? কিসের প্রপাত?
গোল হয়ে আসুন সকলে,
ঘন হয়ে আসুন সকলে,
আমার মিনতি আজ স্থির হয়ে বসুন সকলে।
অতীত হঠাৎ হাতে হানা দেয় মরা আঙিনায়।
নূরলদীনের বাড়ি রংপুরে যে ছিল,
রংপুরে নূরলদীন একদিন ডাক দিয়েছিল
১১৮৯ সনে।
আবার বাংলার বুঝি পড়ে যায় মনে,
নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়
যখন শকুন নেমে আসে এই সোনার বাংলায়;
নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়
যখন আমার দেশ ছেয়ে যায় দালালেরই আলখাল্লায়;
নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়
যখন আমার স্বপ্ন লুট হয়ে যায়;
নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়
যখন আমার কণ্ঠ বাজেয়াপ্ত করে নিয়ে যায়;
নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়
যখন আমারই দেশে এ আমার দেহ থেকে রক্ত ঝরে যায়
ইতিহাসে, প্রতিটি পৃষ্ঠায়।
আসুন, আসুন তবে, আজ এই প্রশস্ত প্রান্তরে;
যখন স্মৃতির দুধ জ্যোৎস্নার সাথে ঝরে পড়ে,
তখন কে থাকে ঘুমে?কে থাকে ভেতরে?
কে একা নিঃসঙ্গ বসে অশ্রুপাত করে?
সমস্ত নদীর অশ্রু অবশেষে ব্রহ্মপূত্রে মেশে।
নূরলদীনের কথা যেন সারা দেশে
পাহাড়ী ঢলের মতো নেমে এসে সমস্ত ভাসায়,
অভাগা মানুষ যেন জেগে ওঠে আবার এ আশায়
যে, আবার নূরলদীন একদিন আসিবে বাংলায়,
আবার নূরলদীন একদিন কাল পূর্ণিমায়
দিবে ডাক,”জাগো, বাহে, কোনঠে সবায়?”

(সৈয়দ শামসুল হকের নূরলদীনের সারাজীবন থেকে)

১৩ টি মন্তব্য : “বাঙলাদেশ”

  1. তাওসীফ হামীম (০২-০৬)

    :boss: সুন্দর লেখার জন্য ধন্যবাদ। ফেবুতে পড়েছিলাম, খেয়াল করে দেখিনি এখানেও ছিল,প্রিয়তে।


    চাঁদ ও আকাশের মতো আমরাও মিশে গিয়েছিলাম সবুজ গহীন অরণ্যে।

    জবাব দিন
  2. ইফতেখার (৯৫-০১)

    বেন্জামিন ডিজরায়েলির একটা কোট আছে: দেয়ার আর লাইজ, ড্যাম লাইজ এ্যান্ড দেন দেয়ার ইস স্ট্যাটিসটিক্স - অনেকটা ঐ মালীর হাতে কাস্তে আর বাচ্চার হাতে কাস্তে - টাইপ । এতগুলো 'স্ট্যাট' দেয়া হলো ওখানে - (মানে যে এইটা লিখলো) -- তার প্রায় প্রতিটার ই যে তেমন কোনো বেজ নাই সেটা দেখতে মনে হয় স্ট্যাট বা ইকোনোমিক্স জানা লাগে না। এইগুলা ব্যাবহার করে আমাদের কি লাভ হবে তা কে জানে।

    বিজয়ের মাসে কতগুলা ছেলেভুলানো সংখ্যার দিকে তাকিয়ে ইয়াম ইয়াম না করে বা "এই জন্য স্বাধীনতা চেয়েছিলাম' জাতীয় ডায়ালগ না নিয়ে, বা "হুদাই বক্তব্য বা বিতর্ক" না করে কাজ করে দেখা যাক। হেন করেন্গা ত্যান করেন্গা না করে সবাই একটা করে কাজ শুরু করি আসেন। লেটস ওয়াক দ্যা ওয়াক - টুগেদার অর এ্যালোন।

    জবাব দিন
      • ইফতেখার (৯৫-০১)

        সেটাই ...

        আমাদের সমস্যার সমাধান আম্রিকা য়ুরোপ বা ইউএন এসে করে দিয়ে যাবে না। লিস্টের উপরের বা নিচের পচাত্তরটাও না বা বাকি নয়টা মুসলিম দেশের একটাও না। নিজেদেরই করে নিতে হবে। আর এই জন্য আমি বড় কিছু করতে পারি না বা পারবো না মনে করে শিককাবাব খাইতে খাইতে মুভি দেখতে বসলে তো হৈলো না। বা ধর্ম-সাহিত্য নিয়ে বিরাট সব বক্তৃতা-চায়ের কাপে ঝড় তুলতে বসলেও হৈলো না। ঐ টাইমটা ভালো একটা কাজে ব্যাবহার করি ... কিছু একটা তো করা হবে।

        সপ্তাহে একটা দুইটা মুভি দেখার টাইমটাতে গরিবদের কোনো স্কুলে ভালান্টারি শিক্ষকতা করি আসেন - দরকার হৈলে ওপেনসোর্স-আউটসোর্স ইত্যাদি নিয়ে কোনো একটা সেমিনার-ওয়ার্কশপে কিছু সময় দেন। বাসার পাশের ডোবায় মশার রাজত্ব? সিটি করপোরেশনের জন্য বসে না থেকে নিজেই হাফপ্যান্টটা পড়ে নেমে যান না। তাও পারবেন না? আপনার পরিচিত বড় বা ছোটভাইবোনের ক্যান্সার বা কিছু একটা খরুচে রোগ থাকতেই পারেন, তার জন্য একটু ফান্ডরেইজিং করে দেন। তারও সময় হবে না? ঐ মুভি বা খেলা দেখার ফাকে দুইপৃষ্ঠা বাংলা উইকি যোগ করেন, খান একাডেমির অনুবাদ বা এইরকম কিছুতে কিছু সময় দেন।এক-দুইদিন ফখরুদ্দিন বা ব্যটনরুজে না খেয়ে টাকাটা কারও দরকার আছে এমন কাউকে দেন ... তাও কষ্ট হলেঅন্তত ঠিক করেন যে বাসার সপ্তাহের বাজারের ৩০-৪০% বিদেশী জিনিষ না কিনে দেশী প্রোডাক্ট কিনবেন। সবাইই কিছু না কিছু করতে পারে, এই জন্য কীবোর্ডে ঝড় তোলা লাগে না, ধর্ম বা রাজনীতির পক্ষ বিপক্ষও নেয়া লাগে না । ঐযে বলে না ... ছোটোছোটো বালুকনা বিন্দু বিন্দু জল ...

        জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।