উৎসর্গ

নোটঃ খুবই শরমিন্দা নিয়ে এই লেখাটা এখানে আজ প্রকাশের জন্য দিচ্ছি। শরমিন্দা-র কারণ খুব সিম্পল…আমি এই লেখাটি সিসিবি-তে প্রকাশ না করে আমার টাইম লাইন এবং অন্য একটি ব্লগে দিয়েছিলাম। এক বড়ভাই (সংকোচ এবং শরমের কারণেই বড় ভাইয়ের নাম বললাম না…) আমার লেখাটি আমার টাইম-লাইনে পড়ে সিসিবি-তে লেখি কি না জানতে চেয়েছিলেন এবং লেখাটিকে এখানে দিতে বলেছিলেন। আসলে, আমার লেখালেখির শুরু এই প্লাটফর্মেই। তবে, এই লেখাটি সম্পূর্ণই মজা করে লেখা…তা ছাড়া বিষয়বস্তুটাও খুবই সামান্য…সে কারণেই এখানে আগে লেখাটি দেয়া হয়নি…

রম্য রচনা
—————

“শয়তান, তুই আমার বই পাবি…. অটোগ্রাফ পাবি না!!!”
বিড়বিড় করে মনে মনেই দুষ্ট লোকটিকে খানিকটা গালি দিলেন লেখক সাহেব।
একবার অবশ্য ইচ্ছে হচ্ছিল জোরে জোরেই গালিগুলি লোকটিকে শুনিয়ে দেন…সাহসে কুলালো না।
দিনকালের অবস্থা ভাল নয়, সামান্য একটু গালির জন্য গুলি খেয়ে লাভ আছে??
গাড়ি থেকে নেমেই কবীরকে ডাকলেন…কবীর লেখক সাহেবের আপন ছোট ভাই হলেও বই বিক্রির দিকটা ওকেই সামলাতে দিয়েছেন তিনি।
“ভাই, শোন…খুব তাড়াতাড়ি আমার নতুন লেখা বইটার একটা কপি সামনে দাঁড়ানো ওই গুন্ডা কিসিমের লোকটাকে দিয়ে আসবি। আর বলবি, সৈকত সাহেবের কাছ থেকে আপনার জন্য সৌজন্য উপহার হিসেবে এই বইটা।”
কবীর নীচে গিয়ে গুন্ডা কিসিমের কোন লোককে খুঁজে না পেয়ে ফিরে এলো। পরে চট্টগ্রামের নেভী হাসপাতাল গেট সংলগ্ন এলাকার এক ভদ্রলোকের ফোন পেয়ে….সমুদয় অর্থ পরিশোধের পর…ঠিকানা অনুযায়ী নতুন বইটির সেই কপিটি কুরিয়ার করে দিল।

কয়েকদিন পরে সৈকত সাহেবের মোবাইলে গভীর রাতে কল এলোঃ
– “ভাইসাহেব, বিখ্যাত হইছেন বলে আপনার অটোগ্রাফসহ একটা লেটেস্ট বই সৌজন্য কপি দিলেন না!”
# কি যে বলেন ভাই, আপনি চেয়েছেন…আর আমি আপনাকে সৌজন্য কপি দেবো না, তা কি হয়? আমি কালকেই পাঠিয়ে দিচ্ছি ভাই!!
-“থাক, আর লাগবে না।আমি আপনার সেক্রেটারীর কাছ থেকে কিনে নিয়েছি। শুধু আফসোস, আপনার অটোগ্রাফ নেই সেটাতে……”
# কি যে বলেন ভাই, আমি আপনাকে কালকেই আমার অটোগ্রাফসহ আরেকটা কপি পাঠিয়ে দিচ্ছি…”
– “নাহ, তার চেয়ে আরেকটা ভাল বুদ্ধি পেয়েছি…..কয়েকটা বইয়ের কপি নিয়ে আপনি বরং চট্টগ্রাম চলে আসেন….চাইলে সাথে বউ-বাচ্চাও নিয়ে আসতে পারেন। আমার ছেলে এবং মেয়েকে আপনার মতন বিখ্যাত লেখকদের দেখানোর ইচ্ছা ছিলো…এবার অটোগ্রাফসহ বইয়ের পাশাপাশি বিখ্যাত লেখক সৈকত সাহেবের পরিবারের উপস্থিতি আমার স্ট্যাটাস অনেক হাই করে দেবে… :)”
প্রমাদ গুনলেন সৈকত সাহেব…সেদিনের সামান্য অবহেলার জন্য আজ জান-টাই না যায়…
– “আরে, আপনি কি ভয় পাচ্ছেন না কি? ভুলে যাবেন না, আপনার মতন লেখকদের বিখ্যাত করি কিন্তু আমরা-ই।”
# “ঠিক বুঝলাম না ভাই….”
– “কেন, আমরা যদি আপনার বই না পড়তাম…না কিনতাম…আপনি কি আর এতো বিখ্যাত হতে পারতেন??সেই ফেসবুকে স্ট্যাটাস সম্বলিত সেলিব্রিটি হয়েই তো থাকা লাগতো…!!”
# “তা তো বটেই…তা তো বটেই ভাই!! তবে এই ফেব্রুয়ারী মাসটার পরে আসলে হয় না? বোঝেনই তো, অফিস…বইমেলা…সংসার…সবকিছু সামলে হুট করে চট্টগ্রাম আসাটা…”
– “ঠিক আছে, সময় নিয়েই আসেন। আমি আপনার মন…শরীর সবই চাই…কাজেই আপনি, আপনার পরিবারের সকল সদস্য…এমনকি আপনার ভাই…সবাইসহ-ই চট্টগ্রাম চলে আসেন।আমার দেয়া জায়গায় থাকবেন, আমার দেয়া ট্রান্সপোর্টে ঘুরবেন, মনের আনন্দে শপিং করবেন…এবং অটোগ্রাফসহ বই উপহার দিয়ে যাবেন!!!”
———————————————————–
সৈকত সাহেব ভীষন ব্যস্ততার সাথে পরবর্তী কয়েকটা দিন কাটালেন। যে গিট্টু লেগে গিয়েছে…সেটা থেকে ছাড়া তাঁকে পেতেই হবে….

———————————————————–
* “স্যার, ওই লেখক স্যারের আরেকটা বই বের হয়েছে।”
– “তাই না কি? দেখি একটা কপি!”
বলে সৈকত সাহেবের নতুন বইটার প্রথম পৃষ্ঠা খুললেন বিগ বস্‌….
দেখলেন, লেখা আছে…
” উৎসর্গ- জুলহাস ভাইকে…..দূর হতে আমায় যিনি স্নেহ-ভালবাসা দিয়ে ধন্য করেছেন, কাছে না গেলেও যিনি আমাকে কোনদিনই ভুল বুঝবেন না।”
———————————————————–

৫,৮০৯ বার দেখা হয়েছে

১টি মন্তব্য “উৎসর্গ”

মওন্তব্য করুন : মোস্তাফিজ (১৯৮৩-১৯৮৯)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।