বউ কথা কও

আজীজ সাহেবকে দেখে কখনও মনে হয় না তিনি পশ্চিম পাকিস্তানী। ততটা লম্বাও নন; ফর্সাও নন। যখন বাংলায় কথা বলেন, তখন তো সন্দেহের কিয়দংশও অবশিষ্ট রাখেন না। পুলিশের চাকরী নিয়ে সেই দেশভাগের আগ থেকে আব্দুল আজিজ ঢাকায়। এখন ‘৪৭। এতেই কিনা তিনি রীতিমত বাংলায় কথা বলেন! সহকর্মীরা তার এ গুণ দেখে ভেবে পান না, তার প্রমোশন না হয়ে থাকে কি করে?
কিন্তু আজীজ সাহেব জানেন, তিনি বাংলায় খুব একটা ভাল নন। যুক্তাক্ষর তো দূরের কথা শ, ষ, স এর পার্থক্যই ধরতে পারেন না। শিক্ষক রেখে অনেক চেষ্টা করেছিলেন শেখার। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছেন। তাই ঘেন্না ধরেছে এমন হিন্দুয়ানী ভাষার উপর। শেখার কারণ অবশ্য তেমন বড় কিছু না । বাঙালিদের কাছে এটি ঘুষ চাইতে সহায়ক। আর এখানে বদলীর আগে তার উপরস্থ অফিসার বলেছিলেন- ন্যাটিভদের রুল করতে হলে তাদের কালচার বোঝাটা জরুরি।
তিনি কালচার বোঝার ব্রত নিয়েছেন।

অবশ্য বাংলা শিখতে গিয়ে আজীজ সাহেব বুঝতে পারেন, তিনি আসলে উর্দুকে কত ভালবাসেন! নিজের ভাষা বলে কথা! একই তো দেশ পাকিস্তান! ধর্ম এক, বিশ্বাস এক। অথচ সামান্য ভাষা আজ তাদের মানসিকভাবে আলাদা করে রেখেছে! তাই এতো ঝামেলা না করে দুদেশের ভাষা এক করে ফেললেই তো হয়! রাষ্ট্রভাষা এক না হলে কোন জাতিই উন্নত হতে পারে না! বড় বড় দেশ তার প্রমাণ!
পূর্ব পাকিস্তানের ভাষাও যদি উর্দু করা হতো, তাহলে সব দূরত্বটুকু ঘুঁচে যেত! হ্যা! উর্দুই হোক পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা! কারণ তারা রুলার, বাঙালিরা ন্যাটিভ।
তাই, আজিজ সাহেবের প্রিয় একটি কল্পনা, এক বিশাল জনসভা হচ্ছে। সেখানে তিনি উর্দুতে ভাষণ দিচ্ছেন আর সমস্ত বাঙালি তার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছে!

শুধু স্বপ্ন দেখেই আজীজ সাহেব ক্ষান্ত হননি। তিনি চিঠিও পাঠিয়ে দিলেন প্রেসিডেন্টের কাছে। ইনিয়ে বিনিয়ে যা লিখলেন তার মূলভাব- `পূর্ব পাকিস্তানের ভাষাও উর্দু করা হোক’।
তাই, জিন্নাহ সাহেব যেদিন ঘোষণা দিলেন, `উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা`, সেদিন আনন্দে তিনি অফিসের সবাইকে মিষ্টি খাওয়ালেন। তিনি নিশ্চিত, জিন্নাহর এ ঘোষণা আর কিছুই নয়, তারই চিঠির ফল।

এক সুন্দর সকালে আজীজ সাহেবের ঘুম ভাঙল পাখির ডাকে। জিন্নাহর ঘোষণার পর এমনিই তার ভাল ঘুম হয় না মিছিলের ভয়ে। তবে তিনি জানেন, আমজনতার মিটিং মিছিলে হুকুম নড়া শক্ত। লাঠির মুখে বাঙালিদের যে উর্দু বলতেই হবে! বাধ্য।

পাখিটা দ্বিতীয়বার ডাকতেই তার ঘুমোত্তর আড়মোড়া মাঝপথে থেমে গেল। চমকে উঠলেন তিনি। আরো কানখাড়া করে শুনলেন। নাহ্। ঠিকই শুনেছেন। পাখিটা অবিকল ডাকছে `বউ কথা কও’।
সর্বনাশ!
এই বোকা পাখিটা ভয়ংকর সর্বনাশ করে ফেলবে। সমস্ত বাঙালিরা ক’দিন পরেই `আব্বাজান আব্বাজান’ করে উর্দুতে কথা বলতে শুরু করবে, আর এই পাখিটা তখনও কিনা বাংলায় কথা বলবে?? অসম্ভব!

আবার চিঠি পাঠালেন তিনি। বিষয়- `শুধু মানুষ নয়, পশুপাখির রাষ্ট্রভাষাও উর্দু করা হোক`।
কিন্তু এবারের চিঠির কোন ফল তিনি দেখতে পেলেন না। জিন্নাহ সাহেব পশুপাখি সংক্রান্ত নতুন কোনো ঘোষণা দিলেন না।

আজীজ সাহেব অবশ্য এতে তেমন বিচলিত হলেন না। প্রতিবারই তার চিঠি সরাসরি প্রেসিডেন্ট এর কাছে যাবে এতোটা আশাও তিনি করেন না। এবার হয়ত ভুল হাতে পরেছে। কিন্তু এটা পাকিস্তানের অস্তিত্বের প্রশ্ন, সবার বোধগম্য হবার কথাও নয়। বিশেষত প্রেসিডেন্টর সহকারীদের। তারা কম বুদ্ধির বলেই না ভাষা নিয়ে এখনও তালবাহানা চলছে। তিনি হলে কবেই এর একটা বিহিত করে ফেলতেন! হ্যা, এই ব্যাপারে অন্তত তাকেই বিহিত করতে হবে। তিনি, পুলিশ মানুষ। শান্তি শৃংখলা রক্ষায় উপরের নির্দেশের বাইরেও তার কিছু করণীয় রয়েছে। আর যদি ব্যপারটা ঘটানোই যায়,মেডেল, জাতীয় বীর খেতাব, উফ! কত্ত কি!

তার রুমমেট বাঙালি। আজীজ সাহেবের জন্য তিনিই বাংলার শিক্ষক ঠিক করে দিয়েছিলেন। তাকেই ধরলেন,
– মহিন সাহেব, আপনারা বাঙালিরাতো খুব বুদ্ধিমান?
মহিন সাহেব অবাক হন। তিনি কোমরের বেল্টটা ঠিক করছিলেন। ঘাড় বাঁকিয়ে জিজ্ঞেস করেন
– হঠাৎ?
– আপনারা পাখিদের……।
আজীজ সাহেব মাঝপথে থেমে যান। বলাটা ঠিক হচ্ছে না, একদমই।

বাঙালিরা বুদ্ধি করে পাখিদের ভাষা শিখিয়ে রেখেছে যাতে তারা মৃত্যু ভয়ে উর্দু বললেও, বাংলা ভাষার যেন মৃত্যু না হয়। কিন্তু তিনি বুদ্ধিটা ধরে ফেলেছেন। ভাগ্যিস বাংলাটা শিখেছিলেন! আজ কাজে লেগে গেলো! ইতিহাসের এই ক্রান্তিলগ্নে তিনি যদি বোকার মত বলে ফেলেন, তখন বাঙ্গালিরা নতুন আবার কোন বুদ্ধি বের করে কে জানে!
তারচে’ এটার ব্যবস্থা তিনি একাই করবেন।

চৌদ্দ পনের বছরের একটা ছেলে আজীজ সাহেবের রুমে চা নিয়ে আসত। মহিন সাহেব তখন রুমে ছিলেন না। ওয়ারীতে ডিউটি। ছেলেটি তার চা পানোত্তর ফিরতি কাপ নিতে এসেছিলো। আজীজ সাহেব ফিসফিস করে ডাকলেন- `মজু……..’।
মইজুদ্দিন চটপটে ছেলে। তার জবাবও তাই চটপটে- `জে স্যার?’
`তু‍মি কি কথা বলা পাখিটা দেখেছো?’
মইজু‍দ্দনি যেন উত্তর দেয়ার জন্য তৈরীই ছিল। ‍কোন পা‍খি, কি পাখি এসব জিজ্ঞেস করার কোন প্রয়োজন সে অনুভব করল না।
বলল, `দেখছি স্যার! ওর নাম ময়না। আমগোর গ্যারামের মাইনকা‍গো একটা আছিল। শুদ্ধ কথা কইত- মানিক ভাত খাব।’
বলেই হি হি করে হেসে ফেলে মজু। মানিক্কে নিয়ে নিশ্চয়ই কোন মজার ঘটনা আছে !
আজীজ সাহেব কিন্তু গোপনে চমকেই ওঠেন। তিনি খোঁজ নিয়ে দেখেছেন এই পাখিটা শুধু ‘বউ কথা কও’ই বলে। এখন শুনছেন আরেকটা বলে `ভাত খাব’। কি সর্বনাশ!
এরপর নিশ্চয়ই একটা পাখি চিৎকার করবে, “রাষ্ট্রভাষা”, অন্য পাখিরা চ্যাচাবে, “বাংলা চাই”। খুবই অবশ্যম্ভাবী ব্যাপার। নাহ! আশু এর প্রতিকার না করলেই নয়। তার কন্ঠ খাঁদে নামে, যেন ষড়যন্ত্র করছেন এমন ভঙ্গিতে বলেন, `মজু, ওই যে বউকে সাধাসাধি করে এমন একটা পাখি আছে না! তুমি ওইটা এনে দিতে পারবে?
মজু মাথা নাড়ে। সম্ভব না।
কিন্তু আজীজ সাহেব নাছোড়বান্দা। বললেন, `একশ টাকা দেব। শুধু . . ‘
মজুর চটপটে মাধা দ্রুত উপর নিচ হয়।
`সম্ভব’।
একটা পাখি ধরতে একশ টাকা! তাও তার! একশ টাকা মানে . . .তার কয়েকটা জামাপ্যান্ট, জুতা, আরও আরও . . .। বেশি ভাবতে পারে না মজু। জান গেলেও তার এ পাখিটা আনা চাই।

দিন পাঁচেক পরেই আজীজ সাহেবের রুমের বারান্দায় একটা খাঁচা ঝুলতে দেখা গেল। শুধু খাঁচা নয়, খাঁচা অন্তস্থ পাখিও দেখা গেল। পাখিটা ইতস্তত উচ্চারণ করে `বউ কথা কও’।

আজীজ সাহেব ভেবেছিলেন কাজটা বুঝি খুব সোজা। ভেবেছিলেন বাঙালিদের পথ ধরে- তারা পাখিদের ধরে ধরে বাংলা শিখিয়েছে। তিনি শেখাবেন উর্দু। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল কাজটি ভারি কঠিন। তিনি যেই বলেন,`বোল, পাকিস্তান জিন্দাবাদ’, তখন পাখিটা বড্ড উদাস দৃষ্টিতে তাকায়। আজীজ সাহেবের মেজাজ যায় খিঁচড়ে। তবু ধৈর্য্যের সাথে আবার চেষ্টা করেন।
কিন্তু তার চেষ্টা ফলদায়ক হয় না মোটে। বিরক্ত হয়ে চিমটি কাটেন পাখির গায়ে। তখন মুখে বোল ফোটে পাখির-`বউ কথা কও’।

এমন করে দিন যায়, মাস যায়, ঘুরে আসে বছরও। একদিকে মিছিল দাবড়ানো অন্য দিকে চুপি চুপি পাখিকে প্রাথমিক শিক্ষাদান ইত্যাদি নিয়ে ভালই ব্যস্ত হয়ে পড়লেন আজীজ সাহেব। কিন্তু শান্তি আর মেলে না। পাখিটাকে আর বুঝি উর্দু শেখানো গেল না।
এতদিনের আপ্রাণ চেষ্টার পর বাঙালিদের প্রতি তার শ্রদ্ধা বেড়ে গেল। কি অসীম ধৈর্য্য নিয়েই না তারা এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছে! কিন্তু যে ইতিহাস গড়তে চায় তাকে কি হার মানলে চলে?

মহিন সাহেব অনেক আগে একবার বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করেছিলেন, `আজীজ সাহেবের হঠাৎ পাখি পোষার শখ হল যে!’
আজীজ সাহেব বিচলিত হেসেছিলেন। বলেছিলেন,`ইয়ে. . . শখ . . . আর কি’
মহিন সাহেবের বিরক্তি আরো বাড়ে।
– ‘শখ! তাই বলে এই রকম একটা পাখি। টিয়া হলেও না হয় কথা ছিল’!
পরে অবশ্য আর কিছু বলেননি।
আরো দিন যায় তবু পাখির শিক্ষিত হয়ে ওঠার কোনো লক্ষণ দেখা যায় না।

আজীজ সাহেবের আর ধৈর্যে কুলায় না। এখন তিনি প্রায়ই টর্চার করেন পাখিটাকে। চিমটি, খামচি, টোকা কোনটাই বাদ যায় না। এমনকি মাঝে মাঝে খাঁচা ঝাকাঝাকিও করেন। একদিন তো রাগ করে একটা ডানাই ভেঙে দিলেন। তবু আশা আলো দেয় না। শেষে দানা-পানি দিলেন বন্ধ করে!

একদিন বিকেলে ডিউটি শেষে আজীজ সাহেব রুমে ফিরলেন। খাকি শার্ট খুলে হ্যাঙ্গারে রাখতে গিয়ে হঠাৎ চোখ যায় বারান্দায়, খাঁচার দিকে। মুহূর্তে চমকে ওঠেন তিনি। খাঁচার ভিতর সটান শুয়ে আছে পাখিটা। মরে গেল নাকি! তাই তো ! প্রাণের কোনো চিন্হই যে নেই! তবু অলৌকিক কিছুর আশায় আজীজ সাহেব আরো কাছে যান। তাকান পাখির চোখে। না, মরেনি! তবে অনুভূতিহীন চোখে ঘুম ঘুম নিস্তেজ দৃষ্টি। খাঁচার খুব কাছে যেতেই পাখিটা দুর্বল শরীর নিয়েও সরে যাবার আপ্রাণ চেষ্টা করে। কিন্তু এগুতে পারে না একটুও। কেবল থরথর করে কাঁপতে থাকে। সচল এক ডানা একটু উপরে উঠে আবার সেটে যায শরীরে।

আজীজ সাহেবের কি যে হল! দ্রুত পাখির দানার পাত্রে দানা দিলেন, পানির পাত্রে পানি। তারপর একরাশ লজ্জা আর তীক্ষ্ণ গ্লানি নিয়ে ভাবলেন কিছুক্ষণ। বুঝলেন, তিনি একটি বোকা পাখিকে উর্দু শেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন।
তাহলে জিন্নাহ সাহেব কেমন করে চার কোটি আশরাফুল মাখলুকাতকে উর্দু শেখাবেন?

আবার কি একটা চিঠি জরুরি নয়? হয়ত! কিন্তু তারচেয়েও বেশি জরুরি পাখিটাকে এই মুহূর্তে মুক্তি দেয়া। খাবার আর পানির পর পাখি কিছুটা প্রাণ ফিরে পেয়েছে। আজীজ সাহেব দ্রুত খাঁচা খুললেন, তারপর উড়িয়ে দিলেন। পড়ি পড়ি করেও পড়ল না পাখি, সোজা উড়তে থাকল আকাশের দিকে। এক ডানায়, বড় অদ্ভুদভাবে। কষ্টকর, তবু তো সে উড়ছে মুক্তির দিকে, স্বাধীনতার দিকে…

১৬,৬৭১ বার দেখা হয়েছে

১৩০ টি মন্তব্য : “বউ কথা কও”

    • তারেক (৯৪ - ০০)

      আহ, এই গল্পের প্রশংসা আর কেমনে কীভাবে করবো!
      তারপরেও টিটো যেহেতু এইটারে এখানে নিয়ে আসছে, আমিও আমার পোস্টটারে এখানে কপি করে দিলাম। দুইটা পাশাপাশিই থাকুক-
      -------------------------------------------------
      ‘সবচেয়ে ভালো…/ পছন্দের/ শক্তিশালী…’ এইরকম শর্ত দিয়ে কিছু বেছে নিতে বললে বিপদে পড়ে যাই। এই ব্যাপারগুলো সময়ের সাথে বারবার বদলে যায়। আজ এটা ভালো লাগলো, কাল হয়তো অন্যটা।
      তবু মাঝে মাঝে অল্প কিছু লেখা মনে খুব দাগ কেটে যায়। বদলে যাবার তালিকায় ওরা আর থাকে না তখন, বরং পাহাড়ের মতন অবিচল থেকে মনের ভেতর একটা জায়গা করে নেয়।

      একাত্তর নিয়ে সবচেয়ে শক্তিশালী লেখা বেছে নিতে বললে আমি তাই চোখ বুজে আহমদ ছফা-র ওঙ্কার তুলে নিবো। তেমনি করে একুশ নিয়ে যদি বাছতে চাই- জহির রায়হানের একুশের গল্প থাকবে লিষ্টিতে, সাথে আরেকটা গল্প- টিটো রহমানের ‘বউ কথা কও’।

      টিটো আমার জিগরি দোস্ত। একই ব্যাকগ্রাউন্ডের কলেজে পড়েছি আমরা, ও বরিশালে, আমি কুমিল্লায়। পরিচয় হয়েছে ঢাবি-তে এসে। ঢাবি-র ফিল্ম সোসাইটির জান-প্রাণ দেয়া সদস্য ও। প্রথম বর্ষে এসে ওর তালে পড়ে আমিও ঢুকে গেছি ওখানে। ভালই সময় কাটাতাম টিএসসি-র দোতলায় ফিল্ম সোসাইটির রুমটায়। বিশেষত জমত যখন কোন একটা চলচ্চিত্র উৎসব হতো, দিনরাত খাটুনি, এড জোগাড় করো, স্যুভেনির ছাপাতে ফকিরাপুলে মাহী ভাইয়ের প্রেসে দৌড়াও। এত সব কষ্টের পরে আনন্দে মন ভরে উঠত, যখন টিএসসির অন্ধকার অডিটরিয়মে টর্চ হাতে নিয়ে ঘুরতাম টিকেটম্যান হিসেবে। আর অপেক্ষায় থাকতাম কখন কোন এক সুন্দরী অন্ধকার হাতড়ে এসে টিকেট বাড়িয়ে দিবে, আর আমরা এক হাতে তলোয়ার (থুড়ি, মানে টর্চ) আর অন্যহাতে সুন্দরীর হাত ধরে বীরের বেশে তাকে জায়গামতন বসিয়ে দিবো।
      দিনশেষে আমাদের মধ্যে প্রতিযোগীতা হতো আজ কে কজনকে হাত ধরে সিটে পৌঁছে দিয়েছে। টিটো-মিশু-মাসুমের জ্বালায় আমি টপে থাকতে পারতাম না অবশ্য, তবে আমার পার্ফর্মেন্সও নেহায়েত খারাপ থাকতো না।

      সেই সময় টিটো যুগান্তরের ফান ম্যাগাজিন বিচ্ছু-তে নিয়মিত ‘আজেবাজে’ লেখা লিখতো। আজেবাজে বললাম এ কারণে, টিটোর ক্ষমতা জানা আছে আমার, তাই ওর হাত দিয়ে বের হওয়া ঐ লেখাগুলোকে আজেবাজে বলতে বাঁধে না একটুও।
      সেইসময় পকেটমানি-র খানিকটা টানাটানি চলছিলো আমার। টিটোই একদিন জোর করে পরিচয় করিয়ে দিলো রবি ভাই ( আশীফ এন্তাজ রবি, বিচ্ছুর সম্পাদক) - এর সাথে। ব্যস, আমিও তারপর কদিন অনিয়মিত ভাবে টিটোর চেয়েও ‘আজেবাজে’ লেখা নামিয়ে বিচ্ছুর ফাঁকা জায়গাগুলো ভরতাম। বিপদের দিনে হাল্কা-পাতলা রোজগার হয়েছিলো, রবি ভাইয়ের কাছে তাই অশেষ কৃতজ্ঞতা। আমাদের তিন বন্ধুকে- আমি,আহসান, টিটো- যথেষ্ঠ লাই দিয়েছিলেন তিনি। এমনও দিন গেছে, সকালে উঠে রবি ভাইয়ের কাজীপাড়ার বাসায় চলে গেছি আমরা, ওখানেই নাস্তা করেছি। তারপর দুইজনে কাগজ কলম নিয়ে ওখানে বসেই হাবিজাবি লিখে রবি ভাইয়ের হাতে তুলে দিয়ে দুপুরে আবার মিতু ভাবীর মজাদার রান্নার লাঞ্চ সেরে তারপর বেরিয়েছি।
      আহ, সে বড় সুখের দিন ছিলো।

      তো, আমরা যখন কার্জন হল থেকে একটা পত্রিকা বের করলাম যুযুধান নাম দিয়ে, তখন টিটোকে চেপে ধরতেই ব্যাটা দুদিন খেঁটেখুঁটে এই গল্প নামিয়ে দিলো। আর আমি সেই গল্প পড়ে পারলে ওরে ধরে মাথায় তুলে নাচি! এই রকম উড়াধুড়া কল্পনাশক্তি না থাকলে আবার লেখক কীসের!

      সেই গল্প প্রথম ছাপা হলো আমাদের পত্রিকা- যুযুধানে। একুশের গল্প হিসেবে আমার সবচেয়ে পছন্দের গল্প।
      ———–


      www.tareqnurulhasan.com

      জবাব দিন
  1. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    অসাধারন :boss: এইটাই তো মুভি হচ্ছে?

    (বস, কলেজের ট্যাগ লাগান)


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  2. টিটো রহমান (৯৪-০০)

    ২ টা কারণে লেখাটা দিলাম
    ক. অনেকদিন ধরে কিছু লিখি নাই..সময় পাই না...আবার নিয়মিত হব..এটা তার আমন্ত্রনপত্র
    খ. লেখাটার কোন সফট কপি আমার কাছে ছিল না.. তাই সফট বানাইলাম...তারেক কিছু মনে করিস না দোস্ত


    আপনারে আমি খুঁজিয়া বেড়াই

    জবাব দিন
  3. মহিব (৯৯-০৫)

    কেউ যদি আমারে প্রিয় কয়েকটা ছোটগল্পের নাম বলতে বলে প্রথম দুই একটার মধ্যেই "বউ কথা কও" থাকবে।

    টিটো ভাই, এমন গল্প যে লিখছে তার প্রশংসা করাও অনেক কষ্টের। শব্দসংকট চারপাশে।

    হ্যাটস অফ। 🙂

    জবাব দিন
  4. ফয়েজ (৮৭-৯৩)

    যাক, গল্পটা দিলা শেষ পর্যন্ত।

    থ্যাঙ্কু।

    অফঃ তুমি আমার পোষ্টে কমেন্ট কর না ক্যান? পুরান গুলার কথা কইছি, নতুন গুলার না।


    পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

    জবাব দিন
  5. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

    তৌকির ভাইজান ছবি বানাইতেছেন...তাই ট্যাগে জেসিসি দেবার দাবী জানাই... ;))

    টিটো ভাই গল্প ভাল ছিল, তবে আরো ভাল করার...(গণ খাওয়ার আগেই বলি এরচেয়ে ভাল সম্ভব না, এইটা ভাষার উপর লেখা দ্যা বেস্ট এভার ছোট গল্প... :salute: )


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন
  6. নাজমুল (০২-০৮)

    ভাই আমি এটার লিঙ্ক এখনি ফেইসবুকে দিতাসি......। আমার কাছেও একুশের গল্পটা ছিল বেষ্ট। কিন্তু এখন চেঞ্জ করে বউ কথা কও কে বেষ্ট বানালাম।
    ছবি বানানো হলে টিকেট চাই...।।
    সিসিবির আরেকটা গেট টু গেদার হবে সিনেমা হলে 😀
    :boss: :boss: :salute:

    জবাব দিন
  7. সাকেব (মকক) (৯৩-৯৯)

    তারেকের পোস্টের লিঙ্ক থেকে এই গল্প পইড়া আমি অন দ্যা স্পট টিটোরে ফেসবুকে খুঁইজা বাইর করসি...
    ইউ আর এ মাস্টার :boss:

    এইরকম অসাধারণ আরো কোন গল্প নিয়ে একদিন আমাদের টিটো নিজেই ছবি বানাবে- সেই দোয়া থাকল...


    "আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
    আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস"

    জবাব দিন
  8. কাইয়ূম (১৯৯২-১৯৯৮)

    তারেকের লিঙ্কের স্ক্যান করা পেইজটা এখোনো মনে আছে।
    টিটোরে পুরা মাল কইলেও কম হইবো।
    এইজন্যেইতো পোলাটারে মাহফিলে এক্সট্রা কেক খাওয়াইছি 😀


    সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!

    জবাব দিন
  9. রকিব (০১-০৭)

    আমি প্রায় প্রতি মাসেই একবার করে এই গল্পটা পড়ি।
    আবার পড়লাম অনেক দিন পর।আবার অসাধারণ লাগল টিটো ভাই।

    চল চল চল
    টিটো ভাই বস!


    আমি তবু বলি:
    এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

    জবাব দিন
  10. আজ থেকে ঠিক এক বছর আগের এই লেখাটি আজ স্টিকি করা হোক।
    কিভাবে এইটা আমার চোখ এড়িয়ে গেল, তা বোধগম্য হচ্ছে না। :((

    টিটো ভাই, আপনাকে স্যালুট। একুশ নিয়ে পড়া এটা আমার সেরা গল্প। :salute: :salute: :salute: :salute:

    জবাব দিন
  11. রকিব (০১-০৭)

    কতগুলো গল্প আছে, যেগুলো পড়বার লোভ জাগিয়ে তোলে, ছোট গল্পের প্রতি একটা আকর্ষণ তৈরি করে। এটা তেমনই।


    আমি তবু বলি:
    এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।