ফাইট ক্লাব

‘ফাইট ক্লাবে’র সাথে আমার প্রথম পরিচয় বুয়েটে গিয়ে।

আমি তখন ঢাবি’র একুশে হলে থাকি। আমাদের ব্যাচের আর কেউ নেই কার্জন হলে। বন্ধু-বান্ধব সব কলা ভবনে। সনেট ম্যানেজম্যান্টে, সুব্রত ল’তে। সারাদিন ওখানে আড্ডা দেই আর রাতে বুয়েটে গিয়ে মাসুদের রুমে থাকি। কি করবো ? বন্ধুদের ছাড়া থাকতে আমার একদম ভালো লাগে না। তাই নিজের হলের রুম আর ডিপার্টমেন্টের ধারে কাছেও যাই না। এমন অনেক সময় গেছে আমি মাসের পর মাস ধরে বুয়েটে মাসুদের রুমে। আশে-পাশের রুমের অনেকেই মনে করতো আমি বুঝি বুয়েটেরই ছাত্র। শেষে এমন অবস্থা হলের ক্যান্টিনের ম্যানেজার, বয়’রাও রশিদ হল-২০০৪ এর কামরুল ভাই হিসেবে চিনে গেলো। আমার অবশ্য তাতে লাভই হলো। দিব্যি বাকি-টাকিতে খেয়ে আসতাম। 😛

এমনই এক সময়ে আমি বুয়েটে ‘ফাইট’ দেয়া কথাটা শুনি। ‘ফাইট দেয়া’ মানে হেভি সিরিয়াসলি পড়াশুনা করা ! :-B প্রথমে আমি অবাক। একে সবাই কেন ‘ফাইট’ দেয়া বলে ? কিন্তু দেখলাম পরীক্ষার আগে মাসুদের রুমমেটরা ওকে ডাকে, ‘মাসুদ যাবি নাকি লাইব্রেরিতে, চল ‘ফাইট’ দিয়ে আসি !!’ কেউ কেউ রমে বসেই ‘ফাইট’ দেয়। কেউ আবার গ্রুপ স্টাডি করার জন্যে এক হল থেকে অন্য হলে যায় ‘ফাইট’ দিতে। 😀

একদিন এক বড় ভাইয়ের কাছে একটা গল্প শুনলাম। এক পাকিস্তানী ছেলে নাকি থাকতো আহসানউল্লাহ হলে। কোন এক বিকালে নজরুল ইসলাম হলে গেলো অন্য পোলাপানের সাথে পড়াশুনা করতে। এমন সময় হলের রিসিপশনে সুদূর পাকিস্তান থেকে ওই পোলার মায়ের ফোন। পাকিস্তানীটা নেই ,তাই নিচে নেমে গেটের কাছে রাখা ফোন ধরলো রুমমেট। নির্বিকার চিত্তে সে জানিয়ে দিলো… “ও গেছে নজরুল ইসলাম হলে।’ 🙂 ‘কি করতে?’ 😕 ‘ওহ! ও তো ‘ফাইট’ দিতে গেছে! একটু পরেই চলে আসবে!” পোলার মায়ের জান খারাপ! সুদুর বাংলাদেশে গিয়ে ছেলে ‘ফাইট’ দিচ্ছে মানে ‘ডুইং মারামারি, মেকিং মিসটেক’! :gulli: সংগে সংগে পাকিস্তান হাই কমিশনে ফোন…সেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অফিসে ফোন …সেখান থেকে একগাদা পুলিশ নিয়ে নজরুল ইসলাম হলে কর্তৃপক্ষের সদলবলে আগমন…তারপর? সবাই আবিষ্কার করলো ছেলে তার বন্ধুর সাথে ‘ফাইট’ দিচ্ছে! 😮
সামনে পরীক্ষা … ‘ফাইট’ দেয়া ছাড়া তো আর উপায় নেই!

তারপর এলো গ্রামীণফোনের ‘ডিজুস’। একবার সবার মাথা খেয়ে ফেললো। ২ টাকায় সারারাত কথা । রাত ১২ টা বাজলেই… খেলা শুরু হয়ে যায় ! মুড়ি মুড়কির মত কমবেশী সবাই ডিজুসের সিমকার্ড কিনে ফেললো! বুয়েটের করিডোরের কোনায়…ছাদের উপর…বিছানার চাদরের নিচে.. 😉 .বাগানে ফুলগাছের তলায়…সবাই নিজ নিজ ডার্লিংয়ের সাথে ‘ফাইট’ দিতো ! ততোদিনে ফাইট দেয়ার আরেকটা ‘মিনিং’ পাওয়া গেলো! মাসুদের রুমমেটরে দেখি সারারাত বারান্দায় চেয়ার বিছিয়ে ‘ফাইট’ দিচ্ছে। :-* আরেকজন ছিলো সে নিজের গলা মেয়েদের মতো করে কথা বলতে পারতো। ওই ব্যাটা মেয়ে সেজে ‘ফাইট’ দিয়ে দিয়ে পাশের রুমের আরেক ছেলেকে পটিয়ে ফেললো। দুইজনে হেভি এফ্যেয়ার। 😉 ডেটিংয়ের দিন তারিখও ঠিক হয়ে গেলো। 😮

এরপর কেউ ‘ফাইট’ দেয়ার কথা বললে আমি ধন্দে পড়ে যেতাম। হালায় আসলে কি করবে? পড়াশুনা না ফোন?

এমন একদিন বৃহস্পতিবার রাতে মাসুদের পাশের রুমের নববিবাহিত এক বড়ভাই ব্যাগ গোছাচ্ছিলো। বুয়েটে শুক্রবার-শনিবার একাডেমিক ছুটি। তাই অনেকেই বৃহস্পতিবার রাতে বাসায় যায়। বড়ভাইকে জিজ্ঞাসা করলো একজন, “ভাই কোথায় যাচ্ছেন?” বড়ভাই একটু লজ্জা মেশানো মুচকি হাসি দিয়ে বললো, “শ্বশুর বাড়ি যাই। একটু ফাইট দিয়ে আসি!” :-B

১০,১৯৪ বার দেখা হয়েছে

১৫৪ টি মন্তব্য : “ফাইট ক্লাব”

  1. আমিন (১৯৯৬-২০০২)

    ভাইয়া রশীদ হলে আসতেন নাকি। আমার সিট রশীদের ৩০১১ তে। যে ফোন ফাইটের কাহিনী কইলেন মাইয়া ভয়েসে কথা কইতো ও আমার ফ্রেন্ড। ঐ সময় আমিও ঐ দিকে যাইতাম।
    পরার বয়াপারে ফ্রীডম ফাইটার।( মুক্তিযোদ্ধা না। গ্রুপ ফাইটের বিপরীত ফ্রীডম ফাইট)।
    লেখাটা পইড়া মজা পাইলাম।

    জবাব দিন
  2. তাইফুর (৯২-৯৮)

    তিন রকমের 'ফাইট'এর গল্প লিখলি ...
    তুই তিন নম্বর 'ফাইট'টা কবে দিতেছিস ??
    (কামরুল আমি তোর 'ভক্ত' শ্রেণী ... চমৎকার লিখছিস)


    পথ ভাবে 'আমি দেব', রথ ভাবে 'আমি',
    মূর্তি ভাবে 'আমি দেব', হাসে অন্তর্যামী॥

    জবাব দিন
  3. তাইফুর (৯২-৯৮)

    অফটপিকঃ শিরোনাম দেইখা ব্রাড পিট'এর ফাইট ক্লাব মুভিটার কথা মনে পইরা গেল।


    পথ ভাবে 'আমি দেব', রথ ভাবে 'আমি',
    মূর্তি ভাবে 'আমি দেব', হাসে অন্তর্যামী॥

    জবাব দিন
  4. মান্নান (১৯৯৩-১৯৯৯)

    বুয়েটের ফাইট একটা ভয়াবহ ব্যাপার। অনেক আয়োজন করে খুব সিরিয়াস ভঙ্গিতে পড়াশুনার জন্য রেডি হওয়া। সব আয়োজন করে বসতে বসতে রাত এগারোটা। ঘন্টাখানেক পড়ার নামে আড্ডাবাজি করে আবার রাত একটায় পরাটা-গরুরমাংস খেতে দলবেঁধে বকশিবাজার যাওয়া। তারপর রাত আড়াইটায় গান গেতে গেতে রুমে ফিরে পরের দিন কোমর বেঁধে পড়ার প্রতিজ্ঞা করে , পিএল এর আরেকটা দিন চলে গেল পরীক্ষা না পেছালে খবর আছে এমন অপরাধী মন নিয়ে ঘুমিয়ে পড়া।

    আহ , অসাধারন সেই দিনগুলো !!!

    পুরান দিনের কথা মনে করিয়ে দিলিরে কামরুল ।

    জবাব দিন
  5. ওবায়দুল্লাহ (১৯৮৮-১৯৯৪)

    সিম্পলি ফাটাফাটি ! :))
    :clap:

    কঠিন 'ফাইট' সমাচার। তিনটাই । 😛
    তয় আমার বর্তমান পরিস্থিতিতে এখন পরথম ফাইট টা দরকার। 😉

    আর আমি কিনা দিব্য ব্লগায় বেড়াইতেছি। B-)
    এলাহী ভরসা।


    সৈয়দ সাফী

    জবাব দিন
  6. রহমান (৯২-৯৮)

    কঠঠিন হইছে কামতাজ :thumbup: থুক্কু কামরুল :P।

    ৩ নং ফাইটের কথা চিন্তা করতে গিয়া তোমার নামটা বিকত করে ফেললাম। মনে কষ্ট নিওনা ভাইডি :no:

    লেখাডা পইড়া বড় মজা পাইলাম। ক্যাম আসলেই ভস :boss:

    জবাব দিন
  7. তানভীর (৯৪-০০)

    আহারে! মনে পইড়া গেল বুয়েটের টার্ম-ফাইনালগুলার কথা। সারা টার্ম না পইড়া পিএল-এ চরম জোশ নিয়া গ্রুপ-স্টাডি, ক্যাফেতে খাওয়া, পলাশীতে রাতে গিয়ে চা খাওয়া!!!
    আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম! 🙁 🙁

    কামস, দারুণ লিখছিস! :thumbup: :thumbup:

    দুই আর তিন নাম্বার ফাইট এখনও দেয়া হইলনা! :no: :no:

    জবাব দিন
  8. সাইফ (৯৪-০০)

    কেম,তুই ত মামা পুরা বাংলা সিনেমার সেই গান............।আমি কলকাতার রসগোল্লা............হইয়া গেলি............হা হা ,
    আমাগো পাড়ায় এক চাচা চাচি ছিল......।দুইজনেই বুড়া বয়সে বেশ ্্যৈবন ধরে রাখসিল......আমার এক দোস্তের ওষুধের দোকান ছিল............
    এক রাইতে চাচায় কনডম নিতে আসছে............রাতে ১১টার দিকে.........আইস্যা নাকি কয়............তোমার আব্বা নাই........পরে অর আব্বা নাই শুইন্যা উলটা ঘুরে চলে যাচ্ছিল.........পরে ও তখন বলে...ক্যান চাচা?কিছু লাগব নাকি?......চাচা একটু ইতস্তত করে বলে......।।না তোমারে ক্যাম্নে কই,পোলাপাইন মানুষ,ও বলে না চাচা...অসুবিধা কি বলেন?তখন আমতা আমতা করে চাচায় বলেন,আসলে......বোঝ না,আমার একটু কন্ডম দরকার ছিল......ও বলে আরে চাচা আপ্নে এইডার লাইগ্যা এত লজ্জা পাইতেছেন.........।অই সুযোগে ও অইদিন চাচারে এক কার্টূন ধরাইয়া দিসিলো...চাচা,আপনি ত সব সময় সবার সামনে চাইতে পারবেন না,এক কাজ করেন একবারে বেশি কইরা লইয়া যান.........।এরপর দিন থেইক্যা অই চাচার নাম হইয়া গেলো.........মজনু ফাইটার.........এখনো কেউ দূর থেকে আসলে বলে.........মজনু ফাইটার এর বাড়িটা কোন দিকে ভাই?

    জবাব দিন
  9. আন্দালিব (৯৬-০২)
    “শ্বশুর বাড়ি যাই। একটু ফাইট দিয়ে আসি!”

    শেষলাইনের শেষ ধাক্কাটা দিলেন! আমি হাসতে হাসতে :just: :pira:

    তয় বস্‌, একটা কারেকশন, বুয়েটে ছুটি তো বৃহঃ আর শুক্র। (শনিবার সকালটা এজন্যে খুবই বিচ্ছিরি লাগত!) ঠিক কইরা দেন! 🙂

    জবাব দিন
  10. কাইয়ূম (১৯৯২-১৯৯৮)

    গত দুইদিন একটা পোস্ট ও পড়ি নাই 😀 (খালি আন্দালিবের গল্পটা ৯ বার পড়ছি 😀 ) এখন শুরু করলাম সিসিবি ফাইট 😀 😀 এক লগে সব কয়ডা পোস্ট B-)

    কামরুলের লেখা নিয়া বলার কিছুনাই, ক্যান যে পোলাটা ইদানিং লেখতে চায়না x-( x-( ভাবতাছি রেগুলার মেডালিয়নের সামনে.. না থাউক, 'যথারীতি কামরুলীয় সেইরকমতা' বজায় রাইখা একটা লেখা দেয়ার লাইগা মাফ কিরি দিলিম 😀 😀
    জটিল লাগছে, সেরম সেরম :boss: :boss:


    সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!

    জবাব দিন
  11. টুম্পা (অতিথি)

    আরে, তুমি রশীদ হলে থাকতা নাকি?!
    বুয়েটের PL আসলেই জোশ একটা টাইম। রাত জেগে পড়বো এই বাহানায় বিশাল মগে কফি বানাতাম। তারপর ফ্রেন্ডরা মিলে সেই কফি খেতে খেতে লনে আড্ডা দিতে দিতে টের পেতাম যে রাত বহুত হইছে....এমনি করে ঠিক পরীক্ষার দুদিন আগে গিয়ে আক্কেল হতো। আর তখন জেনুইন ফাইট দেয়া ছাড়া কোন উপায় থাকতো না...আহা, কি দারুন দিনগুলি..

    জবাব দিন
  12. আজহার (২০০০-২০০৬)

    ভাই,জোশ হইছে। আমিও রশিদ হলের বাসিন্দা। 🙂
    এখন নতুন এক ফাইট শুরু হইছে। রাত হইলেই পলাপান পিসির সামনে বসে সারা রাত ল্যানে ফাইট দেয় আই মিন গেম খেলে। এই ফাইটই এখন ব্যাপক পপুলার বুয়েটে। আমিও এরকম এক ফাইটার। 😀

    জবাব দিন
  13. মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

    হায় খোদা,কামরুল্ ভাইয়ের এই পোস্টটা পড়লে আমার মন যত খারাপই থাকুক না কেন হাসতে হাসতে সব মনখারাপ দূর হয়া যায়।মাত্র দেড়শ কমেন্ট দেইখা আমি এইখানে হাজার কমেন্টের ইটা ফালায় গেলাম...

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।