ক্ষমা প্রার্থনা এবং একটি প্রস্তাব

এক সাগর রক্তের বিনিময়ে
বাংলার স্বাধীনতা আনলে যারা
আমরা তোমাদের ভুলব না
আমরা তোমাদের ভুলব না।

এটুকু আপাতত শুধু গানের কথাই; জীবনবৃত্তের ব্যস্ত চক্রে বছরের গুটি কয়েকদিনই গানটির জন্য বরাদ্দ। বাকি দিনগুলি যে বিস্মৃত হতেই হয়; কীই বা করার আছে বলুন। আর সবকিছু তো মনে রাখাও যায় না; তাই না। এই দেখুন না; গত সেমিস্টারে যে অর্ধপরিবাহীর সূত্রগুলো আঁওড়ে গিয়েছি; মাস না পেরুতেই তা ভুলেও বসে আছি। আর ঊনচল্লিশ বছরের পুরনো মানুষগুলোকে ভুলে যাবো না; তা কি আদৌও আশা করা যায়। আচ্ছা; একটু বরং পেছন থেকে ভাবা যাক, ঠিক ৩৯ বছর আগে।

১৯৭১ সাল। একটা যুদ্ধ হয়েছিলো; মুক্তির জন্য যুদ্ধ। রূপকথার গল্পকেও বোধহয় হার মানাবে। এক পক্ষে সশস্ত্র সুপ্রশিক্ষিত এক সৈন্যবাহিনী; আরেক পক্ষে হাতে গোণা কিছু বাঙ্গালি সৈনিকের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়ানো এক দঙ্গল সাধারণ মানুষ। যাদের অস্ত্র বলতে মান্ধাতার আমলের রাইফেল, হ্যান্ড গ্রেনেড, এল,এম,জি আর সর্বোচ্চ মাসখানিকের নামমাত্র প্রশিক্ষণ। অসম যুদ্ধের দারুণ এক দৃষ্টান্ত, তাই না!!! তবে কীসের বলে এই মানুষগুলো মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধে নিজের জীবন বিলিয়ে দিতে কার্পণ্য করেননি? প্রশ্নের উত্তরটা আজ খুঁজবো না; তবে এটুকু নিশ্চিতভাবে বলতে পারি- কোন প্রতিদানের লোভে নয়; কেবল মাত্র একটা লাল-সবুজ পতাকাকে বিশ্ব মানচিত্রে এঁকে দিতেই তাঁরা রক্ত দিয়েছিলেন।

এবারে বরং বর্তমানে ফিরে আসি, ২০১০ সালে। একটু চোখ মেলে চেয়ে দেখুন তো চারপাশে। স্বীকৃত যুদ্ধাপরাধী এবং রাজাকারেরা আজ মন্ত্রীর গদিতে বসে; রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত প্রতিনিধিত্বশীল অতিথি হয় এরা। আজকাল নিজেদের স্বাধীনতার অগ্রপথিক বলে ঘোষণা দেবার মতো ধৃষ্টতা তারা দেখায়। আমরা কি করতে পারি বলুন; খুব বেশি হলে নিজেকে ধিক্কার দেবো; নাহ আজকাল অবশ্য ওটাও করতে ইচ্ছা হয় না।

সরকার বদলায়; নতুন প্রতিশ্রুতির স্বপ্ন দেখিয়ে নতুন কেউ গদিতে বসে; কিন্তু শেষতক সেই পুরানো কাসুন্দিই নতুন পাত্রে ঢেলে আমজনতার মাঝে ছড়িয়ে দেয়া হয়। মন্দ কী!! পেছনের দীর্ঘ সময়ে অবশ্য রাষ্ট্র কম করেনি…… এই দেখুন না; স্বাধীন বাংলাদেশের সূর্যসন্তানদের জন্য স্মৃতিসৌধ বানিয়েছে; ২৬ মার্চ, ১৬ ডিসেম্বরে তোপধ্বনি করে সেখানে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা হয়। যারা এখনো ভুল করে বেঁচে আছেন তাদের ডেকে এনে সংবর্ধনা দেয়া হয়, একবেলা ভালো মতো পেট পুরে খাওয়ানো হয়। কপাল ভালো হলে নতুন কাপড় আর পদিন পেপারের প্রথম পাতায় ছবি উঠে। আমরা সাতসকালে উঠে নাস্তার টেবিলে ছবিটা এক নজরে দেখেই হয়তো পরের কলামে চলে যাই। সময় কই বলুন; পুরানো ইতিহাস নিয়ে পড়ে থাকলে কি চলে! এগিয়ে যেতে হবে না। ভুলে যাই একটা ভয়ানক সত্য— শিকড় বিহীন যেমন কোন গাছই বাঁচে না; তেমনি ইতিহাসের শিঁকড় উপড়ে ফেলে কোন জাতি মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে না।

ক্ষমা করবেন মুক্তিযুদ্ধের সকল শহীদ যোদ্ধারা। আপনাদের মনে রাখবার মতো মতো সময় এখন আমাদের হাতে নেই; ভুলে যাবার জন্য ৩৯ বছর তো খুব একটা কম সময় নয়। তাছাড়া আপনাদের জন্য তো মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় নামক একটা ঠুঁটো জগন্নাথ তো রয়েছেই। আমাদের আর কী বা করার আছে বলুন!!

সেজন্যই বোধহয় বকশীগঞ্জে রাস্তার পাশে পলিথিনের খুপড়িতে মাথা গুঁজে পড়ে থাকা মুক্তিযোদ্ধা হাছেন আলীর জর্জরিত জীবনের গল্পটুকু সুকৌশলে আমাদের দৃষ্টি এঁড়িয়ে যায়। জীবনের মায়া ত্যাগ করে ১১নং সেক্টরের অধীনে বকশীগঞ্জ সহ জামালপুর ও টাঙ্গাইলের বিভিন্ন এলাকায় সম্মুখ সমরে অংশ গ্রহন করে মুক্তি সংগ্রামে বিজয়ী হয়েছিলেন; কিন্তু জীবন যুদ্ধের করাল গ্রাসে আজ তিনি পরাজিত। সুইপারের চাকরি করে জীবিকা যুগিয়ে ক্লান্ত বিমর্ষ মুক্তিযোদ্ধা হাফিজুলের কন্ঠে আক্ষেপ ঝড়ে পড়েঃ
এই দেশে এহনো গেরামের মানুষ শীতে পলিফিনের ঠুঙ্গা মাথাত দেয় আর এম পি মন্ত্রীরা কোটি কোটি টেহা দামের গাড়ীত চড়ে..!
বাবা এইতা কইয়া লাভ নাই… আমি ছুডু মানুষ.. আমার কতা কেউ হুনবো..?
সত্যি কতা কই – দেশটার লেইগ্যা খুব খারাপ লাগে! কষ্ট অয়! কান্দুন আয়ে!

আমাদের অবশ্য কোন উদ্বেগ হয় না। আমরা কী বোকা নাকি!!!

বরং আরেকটা গল্প বলি। খুলনা শহর থেকে খানিকটা দূরেই গল্লামারী খাল। খাল পেরুলেই গল্লামারী স্মৃতিসৌধ। ৯৫ এ স্মৃতিসৌধ প্রতিষ্ঠা হবার পর থেকেই প্রতিদিন নিয়ম করে এই স্মৃতিসৌধে জাতীয় পতাকা উঠাতেন মুক্তিযোদ্ধা সিকদার; কমান্ডার আবদুস সাত্তার সিকদার। মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণে শয্যাশায়ী এই বীর মুক্তিযোদ্ধা আজ আর শক্ত হাতে তুলে ধরতে পারেন না তাঁর পতাকা। দুটো গরু ছিলো; দুধ বেঁচেই কোন রকমে সংসার চালাতেন। গরুগুলি জোর করেই নিয়ে গেছেন গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গেরা; ৭১ এ যাদের অবশ্য ভিন্ন একটা পরিচয় ছিলো; রাজাকার। শুনবেন তাঁর কন্ঠঃ দেশ স্বাধীন করেছি যুদ্ধ করে। পতাকা পেয়েছি। আর কিছু চাইনা। কিন্তু বাবা দুবেলা খেয়ে বাঁচতে হবে তো। আর তো পারি না।
কে খেলো আর কে খেলো না তা দেখবার সময় কী আমাদের আছে? দেশসেবকদের কত কাজঃ বিজয় দিবস-স্বাধীনতা দিবসে মঞ্চে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা করা, গাড়িতে লাল-সবুজের পতাকা লাগিয়ে ঘুরে বেড়ানো কিংবা টিভি ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে জনগণকে বুকে জড়িয়ে, পরক্ষণেই বিদেশি সাবানের মুহুর্মুহু ঘষায় ঘাঁমের গন্ধ মুছে ফেলার প্রচেষ্টা। মুক্তিযুদ্ধ কিংবা মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে ভাববার সময় কোথায় বলুন !

সাতজন শহীদ বীরশ্রেষ্ঠের নামগুলো কী মনে পড়ে? কেমন আছেন তাঁদের পরিবারের সদস্যরা? শহীদ মোস্তফা কামালের জন্মদাত্রী আজো রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে আসেন ছেঁড়া স্যান্ডেল পায়ে; তবুও আক্ষেপ নেই এই মহীয়সী নারীর। যুবরাজ ভাইয়ের মাধ্যমে জানা গেলো কো্ন প্রকার সাহায্য- সহায়তা নিতেও তিনি অনাগ্রহী। ভাগ্যকে হাসি মুখে বরণ করে নিয়ে তিনি শহীদ পুত্রের স্মৃতি বুকে ধারণ করে বেঁচে থাকতে চান; এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি তাঁর কাছে অসম্ভবপর।

শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনকে বোধহয় ভুলে যান নি। মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও যিনি হার না মেনে যুদ্ধ চালিয়ে গিয়েছিলেন গানবোট পলাশকে রক্ষা করতে। কেমন আছেন তাঁর সন্তানেরা? সংবাদ পত্রের পাতায় ছোট্ট কলামে রুহুল আমিনের ছেলে শওকত আলী পাটোয়ারীর নাম আসে; বীরশ্রেষ্ঠের মতো সর্বোচ্চ সম্মানপ্রাপ্ত দেশের শ্রেষ্ঠ নাগরিকদের উত্তরসূরীরা চরমতম অসহায়ত্ব এবং দারিদ্রের মধ্যে দিন কাটায়, ধুঁকে ধুঁকে মরে। এমন কী একবারের জন্য তাঁর বীরশ্রেষ্ঠ বাবার কবরটুকু দেখবার সুযোগও তাঁর হয় না। হাসি পায় যখন শুনি, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট সরকারী কর্মকর্তারা বলে তারা সাহায্য করবার চেষ্টা করবে; কেবলই চেষ্টা।

বছরের শুরুতেই বড্ড বেশি বাজে বকে ফেলছি; ক্ষমা করবেন। ধৈর্য্য ধরে যখন এতদূর পড়লেন, তখন আরেকটু শুনবেন। প্রশ্ন হলো, আমার বা আপনার ব্যক্তি পর্যায়ে এই তথাকথিত সমাজব্যবস্থায় জর্জরিত মুক্তিযোদ্ধা এবং তাঁদের পরিবারের জন্য আদৌও কি কিছু করার আছে? আছেই তো—আমরা সবাই মিলে খানিকক্ষণ- আঁহা, উঁহু করতে পারি। কিংবা আমাদের রাজনৈতিক গণমান্যদের মতো বুক চিতিয়ে বলতে পারি, আমরা অবশ্যই উনাদের সাহায্য করবার চেষ্টা করবো। মেকি লজ্জায় হেট না হলে করজোরে ক্ষমা প্রার্থনা করতে পারেন; না এতোটা বোধহয় পারা যাবে না।

খুব খেয়াল করে; মুক্তিযোদ্ধারা কোন কিছু পাবার আশায় যুদ্ধ করেননি; শহীদ বীরশ্রেষ্ঠগণ কোন মরণোত্তর উপাধি কিংবা পদকের লোভে জীবন উৎসর্গ করেননি। কিন্তু তবুও তাঁদের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা অস্বীকার করবার নয়। তাঁরা এই রাষ্ট্রের বোঁঝা বা ভিখীরি নন। যাদের রক্তে রঞ্জিত হয়ে; আত্মত্যাগের অঞ্জলীতে আমি-আপনি-আমরা আজ লাল-সবুজের পতাকাটা দুচোখ মেলে দেখতে পারছি; তাঁদের স্থান সবার উপরে। একটু চোখ ঘুরিয়ে দেখুন তো; “মুক্তিযুদ্ধের চেতনা”, “মুক্তিযুদ্ধ” কিংবা “মুক্তিযোদ্ধা”- শব্দগুলো আজ প্রায়শঃই রাজনৈতিক ধারাপাতের মিথ্যাবুলিতে পরিণত হয়েছে। এমন কী গদি দখলের টোটকা বললেও ভুল হয়না। সরকারী জমি, বিনামূল্যে সর্বোত্তম চিকিৎসাসেবা; বিনা শুল্কের গাড়ি—সবই হাসিল হয়; শুধু অবহেলিত হয়ে পড়ে থাকেন মুক্তিযোদ্ধারা এবং তাঁদের পরিবার। অথচ এঁদের স্কন্ধে ভর দিয়েই এসেছে স্বাধীনতা। ইতিহাসের বইটা বন্ধ করলেই তাঁদেরকে ভুলে যেতে আমাদের দেরি হয় না।

সিসিবির কাছে তাই নতুন বছরের শুরুতেই আমার একটা প্রস্তাব। শুধু করবো বলেই বসে থাকা জড় মানবদের দলে নাম না লিখিয়ে আমরা কি সত্যিই কিছু করতে পারি না অসহায় মুক্তিযোদ্ধা পরিবারগুলোর জন্য? সরকারি তরফ থেকে সাহায্য বেশ জটিল প্রক্রিয়া; আদৌ কার্যকর হবে কী না তাও সন্দেহ। আর ক্ষুদ্র প্রয়াসে হয়তো সবাইকে সাহায্য করাও সম্ভব নয়; তবুও সিসিবির পক্ষ থেকে যদি একটা মুক্তি্যোদ্ধা তহবিল গঠন করে আমরা কী তাঁদের বেঁচে থাকবার যুদ্ধটা একটু সহজ করে দিতে পারি না? পারি না নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী তাঁদের পাশে দাঁড়াতে? বয়সে আমি এখনো বেজায় কাঁচা; বৃহত্তর পরিসরে ভাববার সীমাবদ্ধতাটুকু এখনো কাটিয়ে উঠতে পারিনি। তাই প্রস্তাবটা যদি সবার ভাবনার খোরাক যোগায়, তবে হয়তো সবাই মিলে কিছু করতে পারি। হয়তো নববর্ষের প্রাক্কালে, আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রয়াস চারপাশের বিবেকবান মানুষদের উৎসাহিত করবে এগিয়ে আসবার জন্য। আসুন না আমরা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে আরো একবার জানান দেই, মুক্তিযোদ্ধারা কেবলমাত্র বিশেষ দিবস উদযাপনের জন্য “গৌরবময় ইতিহাসের” আর্কাইভ কিংবা “যাদুঘরের পুরাতাত্ত্বিক উপাদান” নন; তাঁরা দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান। আমরা তাঁদের ভুলিনি; ভুলবো না।

৪৪ টি মন্তব্য : “ক্ষমা প্রার্থনা এবং একটি প্রস্তাব”

  1. মুসতাকীম (২০০২-২০০৮)

    পইড়াই ফার্ষ্ট 😀 😀 😀

    আমরা তাঁদের ভুলিনি; ভুলবো না।

    :boss: :boss: :boss: :boss: :boss:


    "আমি খুব ভাল করে জানি, ব্যক্তিগত জীবনে আমার অহংকার করার মত কিছু নেই। কিন্তু আমার ভাষাটা নিয়ে তো আমি অহংকার করতেই পারি।"

    জবাব দিন
  2. মিশেল (৯৪-০০)
    আমরা তাঁদের ভুলিনি; ভুলবো না।

    :thumbup:

    তবুও সিসিবির পক্ষ থেকে যদি একটা মুক্তি্যোদ্ধা তহবিল গঠন করে আমরা কী তাঁদের বেঁচে থাকবার যুদ্ধটা একটু সহজ করে দিতে পারি না?

    অবশ্যই পারি। আজ এখন থেকেই শুরু করি না কেন? খুবই মনে ধরল কথাটা। পোস্টটাকে কয়েকদিনের জন্য স্টিকি করার অনুরোধ করছি যাতে এ ব্যাপারে আলোচনাটা চলতে পারে।

    জবাব দিন
  3. মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

    পোস্টটি স্টিকি করা হলে ভাল হয়।সিসিবির সদস্যরা ছোটখাটো একটি তহবিল করে কোন মুক্তিযোদ্ধার জন্যে (হোকনা সেটা মাত্র একজন) যদি কিছু করতে পারি-তাহলে এই সর্বস্বত্যাগী মানুষদের একজন অন্তত জানবেন-নতুন প্রজন্ম অকৃতজ্ঞ নয়,সবাই ভুলে গেলেও আমরা ভুলিনি।মনে রাখতে হবে-আমরা কোন দান-খয়রাত করছিনা,যে কর্তব্যটি আমাদের অথর্ব নেতাদের করার কথা ছিল সেটাই পালন করছি নিজ সাধ্যমত।

    জবাব দিন
  4. সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

    দারুণ ভাবনা রকিব। সহমত তোমার সঙ্গে। যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবিতে জনমত গড়ে তোলা এবং নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধ ও যুদ্ধাপরাধ জানানোর একটা উদ্যোগে সিসিবি ইতোমধ্যে যুক্ত হয়েছে। আমাদের বেশ কয়েকজন সদস্য যথেষ্ট শ্রম-ঘাম, মেধা দিয়ে একটা ই-লাইব্রেরি তৈরি করছেন। একই সঙ্গে আমরা মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে সহায়তার জন্য প্রতি মাসে কিছু কিছু অর্থ জমা করে একটা স্থায়ী তহবিল গড়ে তুলতে পারি। এই পোস্টে এ নিয়ে আলোচনা হোক। সবাই মন খুলে বলুন এটা সম্ভব কিনা। হলে এর বাস্তবায়ন কিভাবে হবে?


    "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

    জবাব দিন
  5. ফয়েজ (৮৭-৯৩)

    দারুন প্রস্তাব। তবে আমার মনে হয় আমাদের আরও বেশি কিছু করা দরকার।

    মুক্তিযুদ্ধের সময় সক্রিয় ভুমিকা রেখেছেন কিন্তু নানা কারনে মুল্যায়ন পাননি এদের একটা লিস্ট করে ফেলে তাদেরকে আনুষ্ঠানিক সম্মান জানানো দরকার। অনেক বিদেশীও আছেন যাদের আমরা প্রাপ্য সম্মান দিতে পারিনি, সেটাও বে-সরকারী ভাবে হলেও সেরে ফেলা দরকার। আমার কাছ এটাও একটা দায় তাদের কাছে।


    পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

    জবাব দিন
  6. রাব্বী (৯২-৯৮)

    খুউব ভালো প্রস্তাব। আমি যুক্ত হলাম এই উদ্যোগের সাথে। আপাতত রকিবের প্রস্তাবটা সামনে রেখে বাকি কাজগুলোর সাথে এগোতে চাই। একটা সিসিবি মুক্তিযোদ্ধা সহায়তা সেল করা যেতে পারে, আর তহবিল এবং সেটা কিভাবে কাজে লাগানো হবে সেটা নিয়ে আলোচনা হোক। ধন্যবাদ রকিব!


    আমার বন্ধুয়া বিহনে

    জবাব দিন
  7. রকিব (০১-০৭)

    প্রস্তাবের মূল উদ্দেশ্য ছিলো অসহায় মুক্তিযোদ্ধা পরিবারবর্গের জন্য কিছু অর্থসাহায্য সংগ্রহ করে তাদের খানিকটা সহযোগিতা করা। আশা করি, পোষ্টে গঠনমূলক আলোচনার মাধ্যমে আমরা মুক্তিযোদ্ধা সহায়তা সেল এবং তহবিল গঠন করে কিছুটা হলেও তাদের কষ্ট লাঘব করবার চেষ্টা করতে পারবো। পাশাপাশি ফয়েজ ভাইয়ের প্রস্তাবিত একটা মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণকারীদের লিস্ট তৈরী এবং ওডারল্যান্ডের মতো যে সকল বিদেশি নাগরিক আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন তাঁদের যথাযথ স্বীকৃতি প্রদানের ব্যবস্থা করবো। স্বপ্ন দেখেই শেষ করতে চাই না; বরং এর বাস্তব রূপটা দেখতেই আমরা সবাই আগ্রহী। দেখা যাক, সবাই কি বলেন।


    আমি তবু বলি:
    এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

    জবাব দিন
    • ফয়েজ (৮৭-৯৩)

      প্রথমেই আমাদের একটা ব্যাংক একাউন্ট তৈরী করা দরকার। এর আগেও বিভিন্ন কারনে আমাদের টাকার দরকার পরেছে, এবং আমাদের মধ্যে থেকেই কেউ একজন টাকা ডোনেট করেছে। এই বৃত্ত ভাংগা দরকার। আমাদের নিজস্ব ব্যাংক একাউন্ট থাকলে আমরা ব্লগের সদস্যদের প্রয়োজনেও টাকা খরচ করতে পারবো।

      আমার প্রস্তাব হল আমরা ব্লগের একজন একাউন্ট্যান্ট মনোনীত করতে পারি। আর সংগে থাকবেন সানাউল্লাহ ভাই। জয়েন্ট একাউন্ট হবে একটা। আমরা যারা পারি তারা প্রতিমাসে কিছু চাদা দেব। যিনি অন্য কিছু পারবেন না তিনি এক দিনের বিড়ির টাকা জমা দিবেন। এর পর আমরা ব্লগে আলোচনা করবো আমাদের প্রোগ্রাম নিয়ে। বড় প্রোগ্রামে আমরা অবশ্যই স্পন্সর জোগার করতে পারবো, আর ছোট খাট কাজ আমরা সদস্যদের চাদার টাকা নিয়ে সেরে নিতে পারবো। সেই সাথে যারা ব্লগ মডারেশন এর কাজে জড়িত, তাদের অন্ততঃ ইন্টারনেটের বিলটা ব্লগ থেকে দেয়ার ব্যবস্থা করা দরকার।

      এর মধ্যে অবশ্যই প্রায়োরিটি পাবে মুক্তিযোদ্ধা এবং ১৯৭১ সম্পর্কিত প্রোগ্রাম, জাতীয় দূর্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়ানো এবং নতুন এক্স ক্যাডেট মটিভেশন।


      পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

      জবাব দিন
      • মিশেল (৯৪-০০)
        নতুন এক্স ক্যাডেট মটিভেশন।

        সেই সাথে আমাদের পুরানো এক্স ক্যাডেটদেরও নিয়ে আসতে হবে সিসিবিতে। সিসিবির সদস্য সংখ্যা মাত্রই ১৪০০র মত। অথচ মাত্র তিন বছরেই এর চেয়ে বেশী সংখ্যক ক্যাডেট বের হয় কলেজগুলো থেকে। তাই নতুন এক্স ক্যাডেটদের পাশাপাশি পুরনো এক্স ক্যাডেটদেরও খুঁজে বের করতে হবে। আর সদস্য বেশী হলে তহবিল সংগ্রহ থেকে শুরু করে সব কাজেই গতি আসবে।

        যদিও সদস্য বাড়ানোর কাজটা আমরা সবাই বিচ্ছিন্ন ভাবে করে গিয়েছি, কিন্তু আমার মনে হয় আনুষ্ঠানিক ভাবে কিছু একটা করা দরকার। সব কলেজের প্রত্যেক ব্যাচের নুন্যতম একজনকে খুঁজে বের করে তাদেরকে দায়িত্ব দেয়া যেতে পারে ব্যাচমেটদের ইনফর্ম করার। ওল্ড ক্যাডেটস্ এসোসিয়েশন থেকে সাহায্য নেয়া যেতে পারে। মোট কথা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কাজ করার পাশাপাশি আমাদের ইউনিটিও আরো স্ট্রং করা দরকার।

        জবাব দিন
      • আমিন (১৯৯৬-২০০২)

        মোটামুটি ফয়েজ ভাইয়ের মন্তব্যে পুরাটাই উঠে এসেছে। আমার মাসের বিড়ির খরচ আমি পৌছে দেব তার সাথে সুযোগ সুবিধা মত যা পারি। আর সাথে সাথে মানুষকে মোটিভেশনের কাজটাও। কারণ এখানে লোকের সংখ্যা যত বাড়বে ততই জিনিসটা অনেক বেশি ইফেক্টিভ হবে। ব্যাক্তিগত ভাবে আমি প্রথমেই কিছু বেসিক জিনিস সিসবির খরচ চালানো মাডারেটরদের জন্য কিছুটা সম্মানী প্রদানের পক্ষপাতী। মুক্কিযোদ্ধা পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়ানোর মাধ্যমে এদেশের মানুষের টাকায় ১১ বছর পড়ালেখা করা এই আমি একটু ঋণশোধের আত্মতৃপ্টি হিসাবে পেতে চাই (াওবশ্যই সেটা বিপুল ঋণের কাছে কিছুই না।)।আমাদের সিসবির প্লাটফর্ম এখন হয়তো অতটা বড় নয় কিন্তু সময় হলে নিশ্চয়ই অনেক বড় হবে। আর তারপরে যে কোন রকম মানবিক আবেদনেও আমরা সারাদেশের মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারবো।
        আপাতত ব্যাংক একাউন্টের কাজ কি আমরা শুরু করতে পারি?

        জবাব দিন
      • মোস্তফা (১৯৮৮-১৯৯৪)

        ফয়েজ ভাইয়ের মন্তব্যের সাথে সহমত। রকিবকে ধন্যবাদ বিষয়টি সামনে নিয়ে আসার জন্য। সিসিবির একটি নিজস্ব ফান্ড থাকলে অনেক কাজই সহজ হয়। মাঝে মাঝেই বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী অসুস্থ ছাত্র/ছাত্রীদের জন্য সাহায্য লাগে, এক্স ক্যাডেটদের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন পরে, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্যও প্রয়োজন পরে। প্রয়োজনের শেষ নেই, সে তুলনায় আমাদের কোন প্রস্তুতি নেই। তাই একটি ফান্ড থাকলে কাজ অনেক সহজ হয়। যৌথ একাউন্ট করে আমরা একটি ফান্ড গড়তে পারি। যথসাধ্য সাহায্য করবো। সাথে আছি প্রকল্পের। মূল টাকাটি কোথাও রেখে সেখান হতে লাভ/ইন্টারেস্ট দিয়ে কিছু করতে পারি যেন মূল টাকাটি সব সময় থাকে। মূলধনটি প্রতি বছর বাড়ানোর জন্য নানান প্রোগ্রাম করতে পারি। আপাতত এই।

        জবাব দিন
  8. জুলহাস (৮৮-৯৪)

    ব্লগের একাউন্ট শুরু-র ব্যাপারে তীব্র সহমত!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!
    কর্মপরিধি নির্ধারণের জন্য যোগ্যতর জনবল রয়েছে... আমার মত ইর্‌রেগুলার লোক সে বিষয়ে কোন মতামত দিচ্ছি না...

    "জানি ...যেহেতু আমরা আমরা-ই...,
    সেহেতু কোন মহৎ কাজে কিংবা প্রয়োজনের কারণেই সকল ব্যয় করা হবে"

    ...
    ফান্ড রেইজের ব্যাপারে আরেকটু নির্দিষ্ট প্রস্তাবনা পেশের জন্য ফয়েজ ভাইরে অনুরোধ জানাই...


    Proud to be an ex-cadet..... once a cadet, always a cadet

    জবাব দিন
  9. মেহেদী হাসান (১৯৯৬-২০০২)

    আমি মনে করি ফান্ড রেইজিং এর প্রয়োজন আছে। আমরা যারা ঢাকার বাইরে থাকি তাদের জন্য কন্ট্রিবিউট করা সহজ হবে তাহলে। সিসিবিতে নিজস্ব এবং কল্যানমূলক কাজের জন্য আলাদা ফান্ডের প্রয়োজন। আপাতত কিছু একটা দাড় করিয়ে শুরু করা টাই জরুরি।

    জবাব দিন
  10. সাদিক (২০০০-২০০৬)

    আর নয় আমাদের ঘুরে দাড়াতে হবে এর জন্য কিন্তু অনেক মূল্য দিতে হবে।আসলে আমরা শুধু পত্রিকায় লিখতে পারি,মিটিংয়ে চিল্লাতে পারি,কিন্তু আমার গায়ে আচ লাগলেই সব শেষ।আমরা কেউ নিজের ক্ষতি করতে চাই না।এভাবে মুখ বলে কোন কাজ হবেনা।চাই আঘাতের বদলে আঘাত।

    জবাব দিন
  11. তৌফিক (৯৬-০২)

    আমি এইব্যাপারে ব্যক্তিগতভাবে খোঁজ খবর নিছিলাম একটু। পেপালে একাউন্ট খোলা যায়। ব্লগে তার একটা লিংক থাকবে ডোনেশানের জন্য। পেপালে অবশ্য কিছু টাকা দিতে হবে প্রতি ট্রানজেকশান বাবদ। পেপালের একাউন্টের জন্য অবশ্য আসল একটা একাউন্ট থাকতে হবে। প্রবাসীদের ডোনেশান সংগ্রহের জন্য ভালো একটা উপায় হতে পারে সেটা। কারো আপত্তি না থাকলে কানাডা ফেরার পর আমি ওখানকার ব্যাংকের সাথে যোগাযোগ করতে পারি, যদি সিসিবির নামে একটা একাউন্ট খোলা যায় কিনা। কারো কোন অল্টারনেটিভ আইডিয়া থাকলে জানান।

    জবাব দিন
  12. এদেশ রক্ষায়, লাল সবুজ পতাকা পাবার জন্যে আনাচে-কানাচে অনেক আদিবাসী মুক্তিযোদ্ধা এগিয়ে এসেছিল। "মুক্তি যোদ্ধা" সার্টিফিকেট নেয়া প্রযোজন আছে বলে অনেকে মনেও করেন না। আনুপাতিক ভাবে এদের সংখ্যাও নেহায়েত নগণ্য নয়।
    লেখকের এই সুন্দর লেখার পাশাপাশি আদিবাসী মুক্তি যোদ্ধাদের নিয়েও লেখার অনুরোধ করছি।

    জবাব দিন
    • রকিব (০১-০৭)

      Jasheswar ভাই,
      ইচ্ছা ছিল লিখবার, কিন্তু যথাযথ তথ্য-উপাত্ত এবং সময়ের অভাবে শুরু করতে পারিনি। তবে ইচ্ছাটা মারাও পড়েনি। লেখবো শীঘ্রি, কথা দিচ্ছি।


      আমি তবু বলি:
      এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

      জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।