হাইকু সম্পর্কে নতুন ভাবে কিছু বলতে চাইনা কারন এ সম্পর্কে বোদ্ধা অনেক। তবে একটা কথা বলবো, পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় চমৎকার সব হাইকু রচিত হলেও বাংলা ভাষায় হাইকু হয়নি খুব বেশী। বুদ্ধদেব চ্যাটার্জী তাঁর তিনশো বছরের হাইকু – গ্রন্থের ভূমিকায় প্রথমেই বলেছেন, সুন্দরের প্রকাশ ব্যাপ্তিতে আছে আবার ক্ষুদ্র পরিসরেও আছে।তার পরে তিনি অবশ্য হাইকুর গঠন নিয়ে অন্য প্রসঙ্গ টেনেছেন। যে কথাটা অব্যক্ত রয়ে গেছে তা হলো, হাইকু কেবল ক্ষুদ্র পরিসরে সুন্দরের প্রকাশ নয়, ক্ষুদ্রতার মধ্য দিয়ে ব্যাপ্তির সৌন্দর্যকে উপলব্ধি করাও বটে। যেমন, একটি বনসাই বৃক্ষের দিকে তাকিয়ে আমরা এক বিশাল মহীরূহের ব্যাপ্তি ও বিন্যাশ উপলব্ধি করতে পারি। এটা জাপানের সৌন্দর্য চর্চার একটি বিশেষ দিক। আমার মনে হয়, বাংলায় হাইকুর প্রসার না ঘটার অন্যতম কারণ, কঠোর নিয়ম ও অতিসংক্ষিপ্ততার কারণে তিন লাইনে সেই ভাবের জানালাটি ঠিক মতো তৈরী করার ব্যর্থতা, যেখান দিয়ে ব্যাপ্তির সৌন্দর্য দেখার প্রয়াস থাকবে।
হাইকু পৃথিবীর সংক্ষিপ্ততম কাব্যরূপ। তিনটি লাইনে, থাকে ১৭টি সিলেবল, যা ৫-৭-৫ পদ্ধতিতে সাজানো। হাইকুর আর এক বৈশিষ্ট, এর সাথে ঋতুর সম্পৃক্ততা। পৃথিবীর অনেক ভাষাতেই, হাইকু কবিরা প্রথমেই আটকে গিয়েছেন এই কঠোর নিয়মের বেড়াজালে। তবে বর্তমানে বিদেশী ভাষায় রচিত হাইকুতে সিলেবলের শাসন নেই বললেই চলে। ঋতুর সম্পৃক্ততাও অনেক ক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না। এমনকি তিন লাইনের জায়গায় এক বা দুই লাইনের হাইকুও লেখার দাবীও করছেন অনেকে।
আমি হাইকু রচনা করতে গিয়ে ১৭টি সিলেবলের স্থানে ব্যবহার করেছি ১৭টি শব্দ, কারণ আমার মনে হয়েছে সেটাই বাংলা ভাষায় রচিত হাইকুর নিয়মকে আরো সহজবোধ্য করতে পারে। ৫-৭-৫ পদ্ধতিতে, তিন লাইনের মৌলিক ব্যাকরণ অনুসরণ করেছি একান্ত নিষ্ঠায়। অনেক হাইকু ঋতু বিস্মৃত, কারণ অনেকের মতো আমিও মনে করি তা হওয়া যায়। জাপানের চার ঋতুর তুলনায় আমাদের রয়েছে ছয় ঋতু, কাব্যের বাতাবরণ দেশে দেশ ভিন্ন হবে সেটাই স্বাভাবিক। বিদেশী ভাষায় হাইকু রচনার ক্ষেত্রে, হাইকু- শব্দটি, হাইকু ও সেনরিউ এমনকি তানকা, এ সব মিলিয়ে ব্যাপক অর্থেই ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে শব্দের আড়ালে শব্দের যে অন্য অর্থ আরোপ বা অন্য ইমেজ সৃষ্টি করা, তা বজায় রেখেছি, কারণ এটাই হলো হাইকুর আত্মা।
পরিশেষে বলবো, দীর্ঘ দুই দশকের প্রবাস জীবনে জাপানীদের খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে।তিন পঙক্তির জানালা দিয়ে বিশ্বকে দেখার যে জাপানী প্রয়াস, সেই জানালা দিয়ে যাতে বাঙ্গালীরাও সহজে উঁকি দিতে পারেন, আমার হাইকু তারই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা।
:boss: :boss:
ভাই আপনার অন্য হাইকুগুলা তো দিলেন না। 🙁
নামকরণে তো লেখাই আছে এইটা হাইকু ভূমিকা :grr:
সাতেও নাই, পাঁচেও নাই
ভূমিকা পড়তে অসাধারণ লাগলো।কারণ আমি জানতাম হাইকু তিন লাইনের কবিতা। কিন্তু এই তিনলাইনের ভেতরকার এত ইতিহাস আগে জানা ছিলনা।অনেক ধন্যবাদ নতুন একটা বিষয়ের সাথে নতুন ভাবে পরিচয় করিয়ে দেবার জন্য।
আমরা খুব শিগগিরই হাইকু পাচ্ছি বলে আশা করতে পারি।
আর আলীমুজ্জামান ভাইকে ব্লগে দ্বিতীয়বারের মত স্বাগতম 😀
সাতেও নাই, পাঁচেও নাই
ভাই, হাইকুর ব্যাখ্যা দিলেন উদাহরণ ছাড়া...কেম্নে কি!!! :-B
একবার হাইকু দিয়েছিলেন সে তো প্রায় ১০/১৫ বছর আগের কথা... :dreamy:
আপনি এখানে নিয়মিত হবেন এই দাবী এবং প্রত্যাশা করছি... ;;)
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
ভাই,
হাইকু আর সেনরিয়ু এর মধ্যে পার্থক্য কি বিশেষ কোন পার্থক্য আছে?আমি অবশ্য একেবারেই বেশি কিছু জানিনা, তবে যদ্দূর শুনছিলাম, 'সেনরিয়ু'তে মনে হয় ঋতু বহির্ভূত বিষয় নির্বাচনও সিদ্ধ, তাই কি?
"আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস"
ভাইয়া, ভূমিকাটা দারুণ হয়েছে। :boss: :boss:
নতুন একটা বিষয় সম্পর্কে জানতে পারলাম।
আশা করি এখন থেকে নিয়মিত আপনার হাইকু পাব।
হাইকু কি বস্তু এইবার বুঝছি। 😀
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx