অস্ত্র থেকে অক্ষর(পূর্ণাংগ)

[ সতর্কীকরণঃ এটি সম্ভবত সিসিবির দীর্ঘতম পোস্টগুলোর একটি,তাই পাঠকের সুবিধার্থে এটিকে ৯টি অনুচ্ছেদে ভাগ করে দিলাম। আগ্রহী পাঠক ইচ্ছে করলে এটি এক বসায় পাঠ না করে ধীরে ধীরে দুই-তিনটি অনুচ্ছেদে পড়তে পারেন যাতে ধৈর্যচ্যুতি না ঘটে। আলোচনার ক্ষেত্রেও বিষয় অনুযায়ী অনুচ্ছেদ উল্লেখ করলে সুবিধা হবে। ]

“I offer neither pay, nor quarters, nor food; I offer only hunger, thirst, forced marches, battles and death. Let him who loves his country with his heart, and not merely with his lips.”

-Giuseppe Garibaldi

ইতালির স্বাধীনতা সংগ্রামের নায়ক গ্যারিবল্ডির উক্তির মতই আজ থেকে প্রায় চার দশক আগে ক্ষুধা,তৃষ্ণা যুদ্ধ আর মৃত্যুর বিনিময়ে অর্জিত হয়েছিলো আমাদের স্বাধীনতা। কিন্তু এই চার দশক পর নানারকম সমস্যায় আমরা আজ নিমজ্জিত। সকাল বেলা ট্রাফিক জ্যামে দিনের অর্ধেকটা মাটি হয়, বিভিন্ন অফিসের প্রতিটা ইট ঘুষ খায়, বাংলা ভাষাকে ধর্ষণ করে ডিজুস ভাষা জন্ম নেয় কতিপয় রেডিও জকির মুখে। দারিদ্র্য, অব্যবস্থাপনা, খাদ্য-সংকট, সিডর-সাইক্লোন-আইলা, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, লোভ… সমস্যার তালিকায় কি কি যুক্ত করা যায় এই চিন্তা না করে মনে হয় কি বাদ দেয়া যায় (বা আদৌ কিছু বাদ যায় কিনা) সেটাই আজকাল মাথায় ঘুরপাক খায়।

প্রতিটি মানুষের এগিয়ে যাবার জন্যে কোন না কোন অনুপ্রেরণার প্রয়োজন পড়ে। ব্যক্তিগত সাফল্যের জন্যে নানা উৎস থেকে আমরা অনুপ্রেরণা খুঁজি। তবে অন্ধকারের চরম গভীরতায় নিমজ্জিত হতে হতে কখনও কখনও আমাদের এমন কোন উৎস খুঁজতে হয় যার মৃদু আলোকচ্ছ্বটাও তীব্রতম অন্ধকারকে দূরীভূত করতে সক্ষম। আমার মনে হয় আমরা খুব সৌভাগ্যবান একটি জাতি, যাদের সামনে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের মত এরকম একটি উৎস। কোন কাজ যখন অসম্ভবপ্রতিম লাগে, আমি দুচোখ বন্ধ করে নিজেকে কল্পনা করতে চেষ্টা করি ১৯৭১ সালে রোহানপুর গ্রামের নাম না জানা সেই কিশোরটির ভূমিকায়, যে বলেছিলো তার মৃত্যু মাতৃভূমির মুক্তিকে ত্বরান্বিত করবে। পাকিস্তানি মেজর “আর” এর নির্দেশে স্টেনগানের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যাবার আগে কি বিপুল অবজ্ঞাতেই না সে মৃত্যুর দিকে তাকিয়েছিল!

যখন মনে করি আমার পূর্বপুরুষেরা একটি পেশাদার সেনাবাহিনীর দানবীয় অপচেষ্টাকে প্রায় খালি হাতেই পিষে ফেলেছিলেন, নিপাট অসম্ভব কাজকেও কেন জানি হাতের নাগালের মধ্যে বলেই মনে হয়। আমি জানি একাত্তরের মুক্তিসেনার অস্ত্রের ঝনঝনানি আমার মত আরো হাজার হাজার বাংলাদেশি মানুষের অনুপ্রেরণার উৎস, সেটা ক্রিকেট মাঠ থেকে পরীক্ষার হল-সব জায়গাতেই। বাকি সব অবদানের কথা যদি বাদও দেই, শুধুমাত্র এই অনুপ্রেরণার কারণেই মুক্তিযোদ্ধাদের ঋণ আমার কাছে পরিশোধ করা সম্ভব নয় বলে মনে হয়।

আমরা নানা সমস্যায় জর্জরিত একটি জাতি। জন্মের পর থেকে একটি দুইটি উপলক্ষ্য ছাড়া সত্যিকার অর্থে দেশের গৌরবে আনন্দে মাতোয়ারা হবার সুযোগ আমরা খুব কমই পেয়েছি। তবে অল্প যে কটি ক্ষেত্র আমাদেরকে আনন্দে মাতোয়ারা হওয়ার সুযোগ এনে দিয়েছে ক্রিকেট তাদের মধ্যে অন্যতম। ২০০৫ সালে তৎকালীন বিশ্বসেরা দল অস্ট্রেলিয়াকে পরাজিত করবার পর পরীক্ষার প্রস্তুতি ভুলে উল্লাসে মেতে উঠেছিলাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। নিয়তির কি অদ্ভুত খেলা- ঠিক একই সময়ে আরো একজন বিশেষ মানুষ এই উল্লাস উপভোগ করছিলেন। সেই একজনের নাম মেজর (অবঃ) কামরুল হাসান ভূইয়া; প্রাক্তন ক্যাডেট, মুক্তিযোদ্ধা এবং গবেষক। তাঁর একটি বইয়ে এই বিজয়োল্লাসের বর্ণনা অনেকটা এরকম- “একাত্তরে প্রাণ বাজি রেখে যুদ্ধ করার সময় আমাদের কল্পনায় তো ঠিক এরকম একটি জাতি-ই ছিলো, যার সন্তানেরা লাল-সবুজ পতাকা নিয়ে বিজয়োল্লাসে চিৎকার করে চারদিক মাতিয়ে তুলবে “বাংলাদেশ-বাংলাদেশ” ধ্বনিতে!”

এর পাঁচ বছর পরের কথা। “জনযুদ্ধের গণযোদ্ধা”, “বিজয়ী হলে ফিরব নইলে ফিরবোই না”, “পতাকার প্রতি প্রণোদনা” প্রভৃতি অসাধারণ বইয়ের লেখক মেজর কামরুল হাসান ভুইয়ার সাথে আকস্মিকভাবেই দেখা হয়ে গেল ফেব্রুয়ারির বইমেলায়। তাঁর মুক্তিযুদ্ধকালীন অভিজ্ঞতা নিয়ে একটি পোস্ট দেবার কথা বলেছিলাম প্রায় আট মাস আগে । আমাদের ব্যাঘ্রশাবকেরা নিউজিল্যান্ডকে বাংলাওয়াশ করায় পতাকা নিয়ে উচ্ছ্বাস দুচোখ ভরে যখন দেখছি ঠিক তখনই মনে হল, আরে, এখনই তো সময় স্যারের সাথে দেখা করার!

পূর্ব-নির্ধারিত সময় অনুযায়ী বারিধারা ডিওএইচএস এ স্যারের প্রতিষ্ঠিত “সেন্টার ফর বাংলাদেশ লিবারেশন ওয়ার স্টাডিজ” অফিসে ঠিক সন্ধ্যা ৬ টায় আমি আর জ্যেতি উপস্থিত হলাম স্যারের রুমে।

সম্পূর্ণ বেসরকারি উদ্যেগে এ প্রতিষ্ঠানটি স্যার গড়ে তুলেছেন আমাদের মুক্তিযুদ্ধের উপরে গবেষণা করার উদ্দেশ্যে। এ প্রতিষ্ঠান থেকে প্রকাশিত (স্যারের সম্পাদিত) বই স্বাধীনতাঃদ্বিতীয় খণ্ডে তিনি বলেছেন-

“‘সেন্টার ফর বাংলাদেশ লিবারেশন ওয়ার স্টাডিজ’ মুক্তিযোদ্ধাদের লেখা ছাপাবে-এই প্রত্যয় নিয়ে তাদের লেখা সংগ্রহ করছে। মুক্তিযোদ্ধারা যেন পরবর্তী প্রজন্ম দ্বারা এই দোষে দুষ্ট আখ্যায়িত না হন যে তারা তাদের যুদ্ধকথা রেখে যাননি।”

মূলতঃ তিনটি প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করার অভিপ্রায়ে গিয়েছিলাম স্যারের কাছে

১) স্যার কিভাবে যুদ্ধে গেলেন এবং সম্মুখ সমরে তাঁর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা
২) ভারতীয় বাহিনী কর্তৃক পরবর্তীকালে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধকে শুধুমাত্র ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ হিসেবে আখ্যায়িত করার ব্যাপারে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তাঁর অভিমত এবং
৩) বিভিন্ন বীরত্ব পদক প্রদানে সামরিক বাহিনীর সদস্যদের প্রাধান্য অর্থাৎ একটি যুদ্ধে বীরত্বের সামরিকায়ন প্রসঙ্গে।

এছাড়াও সিসিবির সদস্যদের উল্লেখ করা অন্যান্য কিছু প্রশ্ন নিয়েও আলোকপাত করার ইচ্ছে ছিল। মূলতঃ এ বিষয়গুলো নিয়েই আমাদের আলোচনা শুরু হল।



“আমাদের মুক্তিযুদ্ধ কোন একক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের প্রচেষ্টার ফসল নয়- এটি ছিলো একটি সামষ্টিক যুদ্ধ। যুদ্ধের ময়দানে যে যুবক দণ্ডায়মান তাকে কমান্ডার কখনো জিজ্ঞাসা করেনা সে কোথা থেকে এসেছে, কেন এসেছে। সে যে যুদ্ধ করতে এসেছে এটাই মূল কথা। কাজেই, আমার ব্যক্তিগত ভূমিকা কি ছিলো, আমি কোথায় ছিলাম- ১৯৭১ এর গণযুদ্ধে এর উল্লেখ নিতান্তই অপ্রয়োজনীয় ”

স্যারের লেখা বইগুলোতে মুক্তিযুদ্ধের অসম্ভব মর্মস্পর্শী বহু উপাখ্যানের খোঁজ পেলেও ১৯৭১ সালে তিনি ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ছিলেন- তাঁর সম্পর্কে এর চাইতে বেশি কিছুই পাওয়া যায়না। একই কলেজের ছাত্র হওয়ায় মুক্তিযুদ্ধে স্যারের অংশগ্রহণ আমার কাছে কিছুটা অতিপ্রাকৃতিক বলে মনে হয়। আমি একই মাঠে খেলেছি, একই ডাইনিং টেবিলে খাওয়া-দাওয়া করেছি, তারপরেও নিজেকে বার বার প্রশ্ন করি- ১৯৭১ যদি ২০০৩ হত আর স্যারের জায়গায় যদি আমি হতাম, আমি কি পারতাম এভাবে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে? এ কারণে সে সময়ে স্যারের ব্যক্তিগত তথ্যাবলী দিয়েই আলোচনা শুরু করতে চেয়েছিলাম। আমার এ জিজ্ঞাসার উত্তর তিনি তাঁর স্বভাবসুলভ জলদগম্ভীর কণ্ঠে দিয়েছিলেন উপরোক্ত বাক্যে। তিনি আরো বলেছিলেন-

“Anybody who has seen 1971 has a story to tell, so, there will be hundreds of stories from every corner. That is why you must focus on overall war than someone’s personal experience”.

টক-শোয়ের জয়জয়কারের এই যুগে যখন পঙ্কিল কীটও প্রচারের আলোয় সোনালী ঈগল সাজতে চায়, স্বীয় গৌরব লুক্কায়িত রেখে সামগ্রিক অর্জন তুলে ধরতে স্যারের এই প্রচেষ্টা তখন বড় বেমানান লাগে। মনে মনে ভাবি, একাত্তর কি কোন আশ্চর্য পরশপাথর- যার ছোঁয়ায় মানুষের অন্তর খাঁটি সোনায় পরিণত হয়েছিল? স্যারের কাছেই শুনেছি মুক্তিযুদ্ধের সময় চোর, ডাকাত, পকেটমার- যাদের পেশাই ছিলো অন্যের সম্পদ লুণ্ঠন, তারা দলে দলে এসেছিলো দেশের জন্যে নিজের সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদ, নিজ জীবনকে উৎসর্গ করতে। মুক্তিযুদ্ধের স্পর্শমণি দস্যু রত্নাকরকে করেছে বাল্মিকী, শয়তানকে করেছে সাধক আর কূপমণ্ডুককে করেছে দিগ্বিজয়ী- অথচ গুটিকয় বরাহশাবক রয়ে গেলো বরাহশাবকই। ১৯৭১ তো বটেই, এই ২০১০ এ এসেও তাদের বরাহত্ব ঘোঁচেনি, বরং যে কোন নিম্নশ্রেণীর প্রাণীর মতই তারা বংশবিস্তার করে চলেছে সবেগে। একথা ভাবতে ভাবতেই আমার হঠাৎ করুণা হল সেইসব কুলাঙ্গারদের কথা মনে করে- একাত্তরের পরশপাথরের সংস্পর্শে থাকার পরেও যারা পিশাচদের দলেই রয়ে গেলো।

( এই কুলাঙ্গারদের উদ্দেশ্য করে সচলায়তনের কার্টুনিস্ট সুজন চৌধুরীর আঁকা এ কার্টুনটি আমার খুব প্রিয়, বেশ “ভালগার” হলেও উপরে সেটি যোগ করে দিলাম। কার কারো কাছে অশালীন মনে হলেও কার্টুনটির বক্তব্য আমার পছন্দ হয়েছে-রাজাকারগোত্রীয় ছাড়া আর কেউ মনে হয় এ বক্তব্যে আহত হবেন না। )

“আমি জানতে চাইনি, তবুও নারায়নগঞ্জের ফার্স্ট ইয়ারে পড়ুয়া এক কিশোর বলতে শুরু করল তার যুদ্ধে আসার গল্প। এই ছেলেটি ভালোবাসত তারই পাড়ার ক্লাস টেনের একটি মেয়েকে। এখন যেমন আশে পাশে চোখ বুলালেই কপোত-কপোতীর দেখা পাওয়া যায়, ১৯৭১ সালের প্রেক্ষাপটে সেটি ছিল অকল্পনীয়। এমনকী আত্মীয়-আত্মীয়াদের মধ্যে কথা বলাটাও বিশাল সামাজিক অপরাধ বলে গন্য হত। এরকম পরিবেশে মেয়েটির সাথে দেখা করতে ছেলেটির অনেক বেগ পেতে হত। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ায় পাড়ার প্রায় সবাই যুদ্ধে চলে যাওয়ায় ছেলেটির খুব সুবিধা হল-মনের আনন্দে প্রেম করে বেড়াতে লাগল সে। হঠাৎ বলা নেই কওয়া নেই,কোন রকমের কারণ ছাড়াই মেয়েটি কথা বলা বন্ধ করে দিল ছেলেটির সাথে। ছেলেটির তো মাথা খারাপ অবস্থা- খুব কষ্ট করে একদিন সরাসরি মেয়েটি কি কারণে এমন আচরণ করছে তা জানতে চাইলো। উত্তরে ক্লাস টেনে পড়ুয়া কিশোরী মেয়েটির উচ্চারিত শব্দগুলো ছিলো এরকমঃ “এলাকার প্রতিটা মানুষ আজ দেশকে শত্রুর হাত থেকে রক্ষা করতে যুদ্ধে গেছে আর তুমি ঘরে বসে আমার সাথে প্রেম-ভালোবাসা দেখাচ্ছো? লজ্জা করেনা তোমার? এমন যে কাপুরুষ, তার সাথে প্রেম করার কোন ইচ্ছে আমার নেই। যুদ্ধে যাও- যদি দেশ স্বাধীন হয় তাহলে আমাদের আবার দেখা হবে, নাহলে নয়।

মৃদু হেসে একাত্তরের এক সহযোদ্ধার যুদ্ধে আসার গল্প বলছিলেন স্যার। নিজের কথা কিছুতেই বলতে চাননা-তার পরেও বহু পীড়াপীড়ি করে যেটুকু জানতে পারলাম, ১৯৭১ সালে তাঁর বয়েস ছিল ১৮ বছর ৩ মাস। তখন ক্যাডেট কলেজ ছুটি হয়ে গিয়েছিলো, তাঁর বাবা যশোরের মার্শাল ল এ্যাডমিনিস্ট্রেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছ থেকে বহু কষ্টে একটি সার্টিফিকেট যোগাড় করেছিলেন যেটিতে লেখা ছিলো যে তিনি পাকিস্তানের নাগরিক এবং তাঁকে যেন প্রদেশের যে কোন জায়গায় বিনা বাধায় চলাফেরা করতে দেয়া হয়। পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আগত অশিক্ষিত এবং বর্বর সেপাইগুলো জায়গায় জায়গায় বাস থামিয়ে অত্যন্ত অপমানজনকভাবে তল্লাশী করছিলো।সার্টিফিকেট দেখিয়েও কোন কাজ হয়নি কেননা সেপাইরা একটা অক্ষরও ইংরেজি পড়তে পারতোনা। বরং ছবিতে ক্যাডেট কলেজের ইউনিফর্ম দেখে এক সেপাই বেয়োনেট চার্জ করার জন্যে স্যারকে খাম্বার সাথে বেঁধে বলে উঠলো- “সালে,তুম তো ফৌজ কা আদমী হো, ভাগে কিঁউ?” সে সময়ে স্যার তীব্রভাবে প্রার্থনা করছিলেন- “আমাকে মেরে ফেলা হোক তাতে আপত্তি নেই কিন্তু বাসে বসা আমার বাবা-মায়ের সামনে যেন না মারে।” এই পরিস্থিতি থেকে তিনি কিভাবে বেঁচে ফিরলেন তা বহু চেষ্টা করেও জানতে পারিনি। তাঁর একটাই কথা– “Ask me questions that are more important.”

গ্রামের বাড়ি থেকে মাত্র এগারো পাকিস্তানি রূপি সম্বল করে পালিয়ে যুদ্ধে যোগদান করেন ক্যাডেট কামরুল হাসান ভুইয়া।ক্যাডেট কলেজে বেড়ে ওঠা তৎকালীন ১৮ বছরের এই সদ্য তরুণ ৫ বার পাকিস্তানিদের হাতে এবং ১ বার ভারতীয়দের হাতে প্রহৃত হয়েছিলেন। পদে পদে মৃত্যুর হাতছানিও তাঁকে যুদ্ধে যাওয়া থেকে বিরত রাখতে পারেনি। যুদ্ধে যাবার পথে শহুরে আরামদায়ক পরিবেশ থেকে কর্কশ বাস্তবতার মুখোমুখি হয়েছেন,নিজ চোখে দেখেছেন পাকিস্তানিদের নির্যাতন আর অপমানজনক আচরণ। মুক্তিযুদ্ধের প্রেরনার কথা জিজ্ঞাসা করলে তাই তিনি বলেন-

আমি জানি আমি ক্যাডেট কলেজে পড়েছি যেখানে রাজনৈতিক চেতনার উপস্থিতি ছিল অকল্পনীয় ।আমি ছয় দফা কি জানতাম না, ৬৯ এর গণঅভ্যূত্থান কি বুঝতাম না। কিন্তু সেই উত্তাল সময়ে যুদ্ধে যাবার জন্যে এসবের প্রয়োজনও ছিলোনা। আমার নিজের, আমার পরিবারের, আমার দেশের অপমান অনুভব করার মত বোধশক্তি সে সময়ে আমার ছিলো- আর যুদ্ধে যাবার জন্যে ওটুকুই যথেষ্ট।

মুক্তিযুদ্ধের সামরিকায়ন নিয়ে কথা হচ্ছিলো স্যারের সাথে। স্যার তাঁর জনযুদ্ধের গণযোদ্ধা বইটির ভূমিকায় অনেক আগেই বলেছেনঃ

স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রসঙ্গে বলতে বা লিখতে গেলে জনগণের ভূমিকা সম্বন্ধে সচরাচর যা বলা হয়, তা হল- বাংলাদেশের কৃষক, জনতা, পেশাজীবী শ্রেনী-গোত্র নির্বিশেষে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তারপর আলোচনার চরিত্র ক্রমাগত সীমিত হয়ে আসে অল্প কিছু রাজনৈতিক নেতা, কিছু সামরিক ব্যক্তিত্ব, কিছু বুদ্ধিজীবী এবং আরও অল্প কিছু নির্বাচিত ব্যক্তির মধ্যে। সাড়ে সাত কোটি জনগণের জন্য বরাদ্দ রইল ওই একটি লাইন, কখনও বা একটি অনুচ্ছেদ বড়জোর……… জনযুদ্ধের এসব গণযোদ্ধা, ঐতিহাসিকদের গ্রহণ-বর্জনের যে ছাঁকনি, তার ভিতর দিয়ে বার বার নিচে পড়ে গেছে। তারা না পেরেছে নিজেদের কথা লিখতে, না পেরেছে ঐতিহাসিকদের কলম বা কথায় উঠে আসতে। অল্পশিক্ষিত, অশিক্ষিত এবং সমাজের নিচুতলার এ যোদ্ধারা স্বাধীনতা উত্তরকালে নিজেরাও তাদের সে লড়াইয়ের কথা কোথাও বলতে পারেনি। এ সুযোগ হরণ করে নিল রাজনীতিক, বুদ্ধিজীবী ও সামরিক বাহিনীর কিছু মুক্তিযোদ্ধা।

কথাবার্তা চলাকালীন তিনি দুঃখ করে বলছিলেনঃ

– “যুদ্ধের আগে যারা বলেছিলো শরীরের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও দেশকে শত্রুমুক্ত করবে, যুদ্ধের ময়দানে দেখা গেলো তাদের কাছ থেকে একবিন্দু রক্তও পাওয়া যাচ্ছেনা। আর যারা কথার তুবড়ি ছোটাতে পারেনি, দেখা গেলো তারাই নীরবে দান করে দিয়েছে নিজের জীবন।”

একথা সত্য যে মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বের খেতাবসমুহের অধিকাংশই গিয়েছে সামরিক মুক্তিযোদ্ধাদের নামে। ৭ জন বীরশ্রেষ্ঠের ভেতরে একজনও বেসামরিক মুক্তিযোদ্ধা নন। মুক্তিযুদ্ধে খেতাবপ্রাপ্ত বীরদের প্রতি পূর্ণ সম্মান রেখেই এ কথা বলা যায়- অসংখ্য গণযোদ্ধার কথা আড়ালেই রয়ে গিয়েছে। এ প্রসংগটি তুলতেই স্যার নিজেই বললেন যে কথাটি সত্য। ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন যাঁদের বীরত্ব সর্বোচ্চ খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বের চাইতে কম নয় কোন অংশেই। তবে কেউ যদি মনে করে যে ইচ্ছাকৃতভাবেই এই বৈষম্য করা হয়েছে তবে সেটিও পুরোপুরি সঠিক নয়। তিনি হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধঃ দলিলপত্র-১১তম খণ্ড বইটির ৫৩৯ পৃষ্ঠা খুলে জেনারেল ওসমানী কর্তৃক বীরত্ব পদকের জন্যে “সাইটেশন” (citation) বা “উদ্ধৃতি” আহবান করে সব সেক্টর ও সাব-সেক্টর কমান্ডারদের পাঠানো চিঠির অনুলিপি (Appendix A) দেখালেন। সেখানে দেখতে পেলাম কি প্রক্রিয়ায় পদকপ্রাপ্তদের নির্বাচন করা হবে তার বর্ণনা দিয়ে Highest Order, Higher Order, High Order ও Bravery Certificate খেতাবের জন্যে নাম চাওয়া হয়েছে (পরবর্তীতে এই চারটি খেতাবের নাম হয় বীরশ্রেষ্ঠ, বীর উত্তম, বীর বিক্রম এবং বীর প্রতীক)।

স্যার বললেন- এই বার্তা সেক্টর পেরিয়ে বড়জোর সাবসেক্টর হেডকোয়ার্টার পর্যন্ত পৌঁছেছে। অসংখ্য যোদ্ধা প্রবল বিক্রমে লড়াই করে শহীদ হয়েছেন যাঁদের নাম সেক্টর বা সাব-সেক্টর হেডকোয়ার্টার পর্যন্ত পৌঁছোয়নি। যুদ্ধের ডামাডোলে সেটি আসলে সম্ভবও ছিলোনা। খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধারা নিঃসন্দেহে মহান বীর তবে শুধু খেতাবপ্রাপ্তদেরকেই বীর হিসেবে ধরে নিলে ভুল হবে। নাম-না-জানা অসংখ্য বীরদের মূল্যায়ন যথাযথভাবে না হওয়াটা অবশ্যই দুঃখজনক তবে এর পেছনে গূঢ় ষড়যন্ত্র ছিলো এমনটি ভাবা অযৌক্তিক।

নাম না জানা মুক্তিযোদ্ধারা-যাঁদের অনেকেই হয়তো বীরত্বের স্বীকৃতি পাননি

স্যারের এই ব্যাখ্যা আমার বহুদিনের জমে থাকা একটি প্রশ্নের উত্তর যোগালো। আমার মনে হয় এ প্রশ্নটি অনেকের মধ্যেই জেগেছে- আশা করি এরপর এই প্রশ্নের সম্মুক্ষীন হলে আমরা উপরোক্ত ব্যাখ্যাটি প্রদান করতে পারব।

আমাদের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান অনস্বীকার্য। ভারতীয় অফিসারদের অহংকারী উক্তির জবাবে তৎকালীন ক্যাপ্টেন (পরবর্তীতে মেজর জেনারেল-সদ্যপ্রয়াত) মইনুল হোসেন চৌধুরি বলেছিলেন-

“You have fought 2 wars with Pakistan and both were zero-sum game for you.Now you have an opportunity to break Pakistan and we want to give birth to an independent country”.

তাঁর এ কথায় ১৯৭১ সালের যুদ্ধে ভারতের স্বার্থের দিকটি সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে।কিন্তু এর পরেও শরনার্থীদের আশ্রয়দান, মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং এবং অস্ত্রশস্ত্র প্রদান, ভারতীয় সেনাদের মৃত্যুবরণ, ভারত ও রাশিয়ার কূটনৈতিক সহায়তা ইত্যাদিকে শুধু স্বার্থের বিচারে মাপলে তা অন্যায় হবে। একাত্তরে ভারতের ভূমিকা (যেখানে আমাদের আরবদেশী “ভাইদের” কীর্তি আমরা সবাই জানি) নিয়ে আমরা যদি নিরপেক্ষভাবে চিন্তা করি তাহলে প্রতিটি বাংলাদেশি নাগরিকের এজন্যে কৃতজ্ঞ থাকা উচিত।

তবে এই কৃতজ্ঞ থাকতে গিয়ে বহু বাংলাদেশের নাগরিক এমন বাড়াবাড়ি করে ফেলেন যা দেশের ইতিহাসের প্রতি, জাতিগত গৌরবের প্রতি লজ্জাষ্কর হয়ে পড়ে। পিতার বয়েসি অনেককে বলতে শুনেছি-

“আরে ধুরো, আমাগো দ্যাশ স্বাধীন হইছে ইন্ডিয়ার জন্য- মুক্তিযোদ্ধাগো কি ক্ষ্যামতা ছিলো নাকি পাইক্কাগো লগে পারার?”

শুধু তাই নয়- ২০০৫ সালে ভারত ভ্রমণের সময় আমার বাংলাদেশি পরিচয় শুনে এক ভারতীয় নাগরিকের এ জাতীয় মন্তব্যে তার সাথে হাতাহাতি বেঁধে যাবার উপক্রম হয়েছিলো। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে ভারতীয়দের এহেন মনোভাবের কথা স্যারকে বলতেই তিনি বলেছেন-

No wonder Indians say that. They have not seen a 9-month long war, their war was for 13 days only: from 4th December to 16th December.

এ প্রসঙ্গে মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক জেনারেল ওসমানী বলেছেন-

“ডিসেম্বরের আগে ভারতীয় বাহিনী সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেয়নি। মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত নানান প্রতিকুল অবস্থা সহ্য করে এককভাবে যুদ্ধ করেছে আমাদের বীর মুক্তিবাহিনী এবং ডিসেম্বরে ভারতীয় বাহিনী এবং মুক্তিবাহিনী উভয়ই যৌথ কমান্ডের অধীনে লড়েছে। কাজেই, মুক্তিবাহিনীকে ভারতীয় বাহিনীর সহায়ক শক্তি হিসেবে বর্ণনা করা শুধু অপমানজনকই নয়, এ ধরণের যে কোন মন্তব্য ইতিহাস বিকৃতির সামিল।”

১৯৯৬ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের উদ্বোধন করতে জেনারেল অরোরা বাংলাদেশে আসেন। স্যার তখন জেনারেল অরোরাকে জিজ্ঞাসা করেন- “স্যার, আপনি তো যৌথ কমান্ডের অধিনায়ক ছিলেন- মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্ব সম্পর্কে আপনি সুস্পষ্টভাবে কিছু বলেননি কেনো?”

জেনারেল অরোরা বলেছিলেনঃ

-“মুক্তিযোদ্ধারাই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে অন্ধ ও বধির (blind and deaf) করে ফেলেছিলো যার ফলে ভারতীয় বাহিনীর পক্ষে তাদেরকে সহজে পরাজিত করা সম্ভব হয়।”

স্যার তখন তাঁকে বলেন-“এ কথাগুলো শুধু মুখে না বলে আপনি যদি লিখতেন তাহলে অনেক বিভ্রান্তির সৃষ্টি হতোনা।”

২০০৮ সালে লেফটেন্যান্ট জেনারেল জ়ে এফ আর জ্যাকব ঢাকায় এলে (উপরের ছবিতে সর্বডানে দণ্ডায়মান) তাঁর বইয়ের (সারেন্ডার এ্যাট ঢাকা- বার্থ অফ এ ন্যাশন) ভুলভ্রান্তি দেখিয়ে দিলে তিনি স্যারকে পরবর্তী সংস্করণে সেগুলো শুধরে নেবার কথা দেন। স্যার তখন বলেন– “ইউ মাইট নট লিভ দ্যাট লং” এবং প্রমাণ হিসেবে ভুলযুক্ত পৃষ্ঠায় তাঁর স্বাক্ষর সংগ্রহ করেন। জেনারেল জ্যাকবের স্বাক্ষরযুক্ত সেই পৃষ্ঠা আমি নিজে দেখে এসেছি এবং পরের পর্বে এটি নিয়ে বিস্তারিত লেখবার আশা রাখি।

জনযুদ্ধের গণযোদ্ধা বইটির ভূমিকায় স্যার এ বিষয়টি নিয়ে লিখেছেনঃ

“মুক্তিবাহিনীর সামগ্রিক অর্জন ও কার্যকরী সহায়তার কারণেই মুখ্যত ভারতীয় বাহিনীর পক্ষে সম্ভব হয়েছে মাত্র ৮ ডিভিশন সৈন্য দিয়ে পাকিস্তানের ৫টি পদাতিক ডিভিশনকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়া। অথচ প্রচলিত যুদ্ধের নিয়ম অনুযায়ী ৫ ডিভিশন শত্রু সৈন্যের বিপরীতে ভারতীয়দের যুদ্ধে মোতায়েন করার কথা ১৫ ডিভিশন সৈন্য (আক্রমণের ক্ষেত্রে ১:৩ প্রচলিত আনুপাতিক হার অনুযায়ী)। ভারতীয় সেনানায়কেরা কোথাও তাদের বইয়ে লিখলেন না- মুক্তিবাহিনী কিভাবে শত্রুকে “অন্ধ ও বধির” করে ফেলেছিলো… অথচ তারা লিখলেন কী করে ১.৮:১ আনুপাতিক সৈন্যের হারে তারা যুদ্ধে জয়ী হয়েছেন। পাকিস্তানি ও ভারতীয়দের একটি বিষয়ে দৃষ্টিভঙ্গী অভিন্ন-বাংলাদেশিদের তারা কেউ প্রশংসা করেননি। পাকিস্তানিরা ভারতীয়দের বেশি আপন মনে করল। কারণ ছিলো, তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করে মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ না করে ভারতীয় বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করতে চাইলো। এটা স্বাভাবিক। একটা নিয়মিত বাহিনী অনিয়মিত বাহিনীর (মুক্তিবাহিনী) কাছে আত্মসমর্পণ না করে আরেকটি নিয়মিত বাহিনীর (ভারতীয় বাহিনী) কাছে আত্মসমর্পণ করতে। চাইবে অবশিষ্ট আত্মসম্মানটুকু (?) রক্ষা করতে। কিন্তু যা অস্বাভাবিক তা হল আমাদের মিত্রবাহিনী হয়ে ভারতীয়রা বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর অংশগ্রহণ ব্যতিরেকে আত্মসমর্পণের দলিল সম্পন্ন করল। মুক্তিযুদ্ধের পুরোটা গৌরব যেন ভারতীয়দের। যেন তাদের গৌরবেই আমরা গৌরবান্বিত হব। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এ ঘটনায় ম্লান হয়ে এল যুদ্ধ বিজয়ের সমূহ অহংকার।”

এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করার সময় স্যার আরেকটি অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ বিষয় তুলে ধরলেন। তিনি বললেন, ভারতীয়দের দিকে আঙ্গুল তোলার আগে আমাদের নিজেদের চেহারা আয়নায় দেখা উচিত। ভারতীয়রা তাদের গৌরবের কথা বলবে এটাই স্বাভাবিক, কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য- আমরা নিজেরাই আমাদের গৌরবের কথা লিখিনি। ব্রিটিশ প্রকাশক মিঃ জোনাথন স্যারকে প্রশ্ন করেছিলেন-

“There are so many Indian books about your liberation war, why there is hardly any of them from Bangladeshi writers?”

এ প্রশ্নের সদুত্তর স্যার সেদিন দিতে পারেননি। আমরা চাতকপাখির মত বসে আছি কবে কোন ভারতীয় লেখক বাংলাদেশিদের বীরত্বের প্রশংসা করবে অথচ স্যারের বই থেকে আমরা জানতে পারি-

“মুক্তিযুদ্ধ বলতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে অফিসার ও সৈনিকেরা ৩ ডিসেম্বর থেকে ১৬ ডিসেম্বর যৌথ বাহিনীর সর্বাত্মক যুদ্ধ (final offensive) অধ্যয়ন করেন। বাকি যা সামান্য তা- ১ম, ২য়, ৩য়, ৪র্থ এবং ৮ম এবং পরবর্তীতে ৯ম, ১০ম আর ১১তম ইস্ট বেঙ্গলের তথা এস ফোর্স, কে ফোর্সের যুদ্ধের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। অথচ গণযোদ্ধাদের নিয়েই অপ্রতুল এই ইউনিটগুলোর সৈন্যসংখ্যা পূরণ করা হয়েছিল এবং পরের তিনটি ব্যাটালিয়ন গঠন করা হয়েছিলো। নয় মাসের বাংলাদেশের ভিতরের নির্ভীক গণযোদ্ধাদের বীরত্বপূর্ণ অপ্রচলিত যুদ্ধগুলির (unconventional war) কোনও গবেষণা বা পঠন নেই আমাদের সেনাবাহিনীতে।”

যেখানেই মুক্তিযোদ্ধা দেখি সেখানেই তাঁর কাহিনী লিপিবদ্ধ করার প্রায় শিশুসুলভ প্রচেষ্টা পর্যন্তই আমার দৌড়-টেকনিক্যাল জ্ঞানের অভাবে ভুলভ্রান্তিতে ভরা আমার এই চেষ্টাকে আর যা-ই হোক গবেষণা বলা যায়না। আমি আশা করব, বাংলাদেশের সামরিক এবং বেসামরিক নির্বিশেষে সুযোগ্য গবেষকেরা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গবেষণার মাধ্যমে ইতিহাসের প্রতি তাঁদের দায়বদ্ধতা মিটিয়ে নেবেন- যাতে নিজ বীরত্বকথা শোনার জন্যে আমাদেরকে বিদেশি গবেষকদের উপর নির্ভর করতে না হয়।

বান্ধবী জ্যেতিকে নিয়ে স্যারের অফিসে গিয়েছিলাম সাক্ষাতকার নেবার উদ্দেশ্যে। কিন্তু সেখানে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধসম্পর্কিত টেকনিক্যাল নলেজের অপ্রতুলতা এতটাই প্রকট হয়ে দেখা দিলো যে সাক্ষাতকার আর নেয়া হলোনা, স্যারের সাথে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আলোচনাই শুধু হল। নিজ জ্ঞানের এ সীমাবদ্ধতা আমি নতমস্তকে স্বীকার করে নিচ্ছি এবং যাঁরা সাক্ষাতকারের অপেক্ষায় ছিলেন (বিশেষ করে নুপুর ভাই) তাঁদের কাছে করজোড় ক্ষমা চাইছি। স্যারের সাথে প্রায় তিন ঘণ্টা আলোচনার চুম্বক অংশ তুলে দিলাম উপরে, বাকি ছোটখাটো যে অংশগুলো(নূপুর ভাইয়ের কয়েকটি প্রশ্ন রয়েছে এর মধ্যে) সেগুলো নীচে মন্তব্য আকারে দেবার ইচ্ছে আছে। ডিসেম্বরের ১ তারিখ কর্মক্ষেত্রে যোগদানের আগে স্যারের সাথে আরেকটি আলোচনা, রাজশাহী ক্যাডেট কলেজের সেকেন্ড ইনটেকের কলেজ প্রিফেক্ট জনাব মোশাররফের সাথে আলোচনার উপর একটি ব্লগ (যাঁর যুদ্ধক্ষেত্রে নৈপুন্যের কারণে প্লাটুন কমান্ডার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় সে বয়েসেই-ভাবতেই রোমাঞ্চিত বোধ করি) এবং দুর্ধর্ষ ক্র্যাক প্লাটুনের গেরিলা জনাব ফতেহ আলী চৌধুরির সাথে আলোচনা করে সেটির উপর আরেকটি ব্লগ দেবার ইচ্ছে আছে। জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কারণে আমার লেখায় যদি তথ্যগত কোন ত্রুটি ধরা পড়ে তাহলে সেগুলো ধরিয়ে দেবার জন্যে সবাইকে বিনীত অনুরোধ করছি।

মেজর কামরুল হাসান ভুইয়া স্যারের ছবি উপরে ৩ নং অনুচ্ছেদের “আটমাস আগে” লিঙ্কে গেলে দেখতে পাবেন। এই পোস্টে পাঠকদের সুবিধার জন্যে বইমেলায় তোলা ছবিটি আবার দিচ্ছিঃ

১৯৭১ সালে যুদ্ধ করেছিলেন অস্ত্রহাতে আর ২০১০ সালে করছেন কলম হাতেঃনিরন্তর যোদ্ধা মেজর কামরুল হাসান ভুইয়া

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের গানে আমরা শুনেছিঃ

বজ্র যেমন বেগে, গর্জে ঝড়ের মেঘে,
অট্টহাস্যে সকল বিঘ্ন-বাধার বক্ষ চেরে।।
হারেরেরেরেরে আমায় ছেড়ে দে রে দে রে…

মুক্তিযুদ্ধ হোক আমাদের চিত্তচেতনার সেই বজ্রধ্বনি, যার হুঙ্কারে প্রতিটি বাংলাদেশি নাগরিক সকল বাধা-বিপত্তি অট্টহাস্যে দু-টুকরো করে ফেলবে।

জয়তু বাংলাদেশ।


সহায়ক পুস্তকঃ

১) জনযুদ্ধের গণযোদ্ধা- মেজর কামরুল হাসান ভুইয়া
২) স্বাধীনতাঃ১ম ও ২য় খণ্ড- মেজর কামরুল হাসান ভুইয়া সম্পাদিত
৩) মুক্তিযুদ্ধে মুজিবনগর- শামসুল হুদা চৌধুরী
৪) উইটনেস টু সারেন্ডার- সিদ্দিক সালিক
৫) এক জেনারেলের নীরব সাক্ষ্যঃ স্বাধীনতার প্রথম দশক- মেজর জেনারেল মইনুল হোসেন চৌধুরী

কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ

১) ওয়ারদা নাসের আলী জ্যেতিঃ চিকিৎসক, বাংলাদেশ বেতারের সংবাদ পাঠিকা এবং মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মাতামাতিতে আমাদের প্রজন্মের প্রথম সারির একজন।
২) সিসিবির সকল পাঠক-পাঠিকাঃযাঁদের উৎসাহে অতি ক্ষুদ্র সামর্থ নিয়েও এধরণের কাজে হাত দেবার সাহস পাই।

১৭,৯৩৭ বার দেখা হয়েছে

১০৭ টি মন্তব্য : “অস্ত্র থেকে অক্ষর(পূর্ণাংগ)”

  1. কামরুলতপু (৯৬-০২)

    অনেক দিন ধরে অপেক্ষায় ছিলাম।
    মাস্ফ্যু খুব ভাল হয়েছে। তবে আরো অনেক কিছু জানব ভেবেছিলাম। আর একটা কথা মুক্তিযুদ্ধ ট্যাগ যোগ করে দিলে ভাল হয়। সেই সাথে কার্টুনটি সরিয়ে দিলে ভাল হত। ব্যক্তিগত মতামত। লেখাটা হয়ত একসময় রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার হতে পারে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে। সেখানে এমন জিনিস না থাকাই ভাল বলে মনে করলাম।

    জবাব দিন
    • মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

      তপু ভাই,আপনার প্রশ্নগুলো কষ্ট করে একটু এখানে লিখলে ভালো হয়-সামনে স্যারের সাথে আরেকটি মিটিং আছে।আপনার কথামত মুক্তিযুদ্ধ ট্যাগ যোগ করে দিলাম 🙂
      আর কার্টুনটা আমি ব্যক্তিগতভাবে রাখার পক্ষপাতী৯কেন,তার ব্যাখ্যা ওটার নিচে দিয়েছি) তবে অধিকাংশ পাঠক যদি আপত্তি করেন তাহলে সরিয়ে দেব।

      পাকমনপেয়ারুদের কি করা উচিত তার চমৎকার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে এটিতে।আমি আসলে নিশ্চিত নই এ লেখাটি আসলে রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহারের যোগ্য হয়েছে কিনা তবে এটি যে গবেষনাপত্র নয় বরং একটি ব্লগমাত্র তা নিশ্চিত।এ পর্বে আমার উদ্দেশ্য ছিলো মুক্তিযুদ্ধের দুটো গুরুত্বপূর্ণ ধারণাকে(ভারতের ভূমিকা এবং খেতাবের সামরিকীকরণ) নিয়ে একজন মুক্তিযোদ্ধার বক্তব্য তুলে ধরা।বিশেষ করে লেখায় না হোক,"মুক্তিযুদ্ধ তো ইন্ডিয়া কইরা দিছে" টাইপ কথাবার্তা কেউ বললে তাকে যেন নগদে উত্তর দেয়া যায় এটাও একটি উদ্দেশ্য।আর খেতাবের সামরিকায়ন সম্পর্কিত রায়হান রশিদ ভাইয়ের কমেন্টেও স্যারের বক্তব্য তুলে ধরতে চেয়েছি।

      আনাড়ী হাতের ব্লগ-তাই ভুলত্রুটি থাকা অতি স্বাভাবিক।চোখে পড়ামাত্র ধরিয়ে দিলে কৃতজ্ঞ থাকবো।

      অফ টপিক-আপনি তো আমাকে ভুলেই গেছেন একেবারে... (সম্পাদিত)

      জবাব দিন
  2. অরপিয়া (২০০২-২০০৮)

    খুব ভালো লাগলো ভাইয়া। সারেন্ডার এ্যাট ঢাকার সাক্ষরযুক্ত পৃষ্ঠা দেখার অপেক্ষায় রইলাম।
    অফটপিকঃ১১টা অনুচ্ছেদের জায়গায় ৯টা দেখতে পাচ্ছি কেন?

    জবাব দিন
  3. আছিব (২০০০-২০০৬)

    জটিল হইছে বস। ইনশাল্লাহ এটা যখন শেষ করবেন,একটা মাস্টারপিস হবে। :boss:
    মাঝে মাঝে পড়ার জন্য প্রিয়তে নিচ্ছি 🙂

    পোস্টটা স্টিকি করার অনুরোধ জানাচ্ছি

    জবাব দিন
  4. গুলশান (১৯৯৯-২০০৫)

    “যুদ্ধের আগে যারা বলেছিলো শরীরের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও দেশকে শত্রুমুক্ত করবে, যুদ্ধের ময়দানে দেখা গেলো তাদের কাছ থেকে একবিন্দু রক্তও পাওয়া যাচ্ছেনা। আর যারা কথার তুবড়ি ছোটাতে পারেনি, দেখা গেলো তারাই নীরবে দান করে দিয়েছে নিজের জীবন।”
    আড়ালে থাকা এক চরম সত্য...
    পোস্টটা স্টিকি করার অনুরোধ রইল। শেয়ার করলাম।

    জবাব দিন
  5. খুব ভালো লাগলো পড়ে, বাইরে মোবাইল এ অনেক বার ঢোকার চেষ্টা করলাম কিন্তু লেখা বড় দেখে টাইম আউট হয়ে যায়
    তাই বাসায় এসে পড়লাম 🙂
    মাশ্রুফ ভাই, অনেক ধন্যবাদ এ ধরণের পদক্ষেপ নেয়ার জন্য 🙂

    জবাব দিন
  6. যে ৭ জঙ্কে বীরশ্রেষ্ঠ পদক দেওয়া হলো, তাতে আপত্তি থাকার কথা না, সামগ্রিক ভাবেই তাদের বীরশ্রেষ্ঠ বলা যায়, এটা নিয়ে বিতর্ক অনাবশ্যক, কিন্তু যখন এদেশেরি সরকার ও সামরিক বাহিনীকে পদক প্রদানের ক্ষেত্রে সিভিলিয়ান্দের ছোট করতে দেখি, কথা ভঙ্গ করতে দেখি, সেই ইতিহাস জানতে পারি, তখন আসলে ওই জলপাই রঙ এর বাহিনীর প্রতি ক্ষোভ আসা কী স্বাভাবিক নয়?!
    নিচে অনেক আগে সামু'তে পোস্টক্রিত ২ টা লিঙ্ক দিলাম। অনেকেই হয়তো পড়েছেন। নতুন পুরানো সবাই পড়ে দেখতে পারেন-
    ১।জগৎজ্যোতি! যিনি ছিলেন বাংলার প্রথম বীরশ্রেষ্ঠ/............ভাস্কর চৌধুরী
    ২।সংশপ্তক মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি আমাদের ক্ষমা করুন! বীরশ্রেষ্ঠ নিয়েও চলেছে প্রতিশ্রুতিভঙ্গের খেলা

    সময় এসেছে এগুলো নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলার।

    জবাব দিন
  7. জুলফিকার (২০০০-২০০৬)

    "আমি জানি আমি ক্যাডেট কলেজে পড়েছি যেখানে রাজনৈতিক চেতনার উপস্থিতি ছিল অকল্পনীয় ।আমি ছয় দফা কি জানতাম না, ৬৯ এর গণঅভ্যূত্থান কি বুঝতাম না। কিন্তু সেই উত্তাল সময়ে যুদ্ধে যাবার জন্যে এসবের প্রয়োজনও ছিলোনা। আমার নিজের, আমার পরিবারের, আমার দেশের অপমান অনুভব করার মত বোধশক্তি সে সময়ে আমার ছিলো- আর যুদ্ধে যাবার জন্যে ওটুকুই যথেষ্ট।"
    এখনকার ছেলেমেয়েরা(আমরা) যদি এই চেতনায় উদ্বুদ্ধ হতে পারতাম 🙁
    ধন্যবাদ মাসরুফ ভাই, এই রকম একটা লেখা পড়তে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি।
    ভবিষ্যতের গুলোর জন্য অপেক্ষায় রইলাম।

    জবাব দিন
  8. সাবিহা জিতু (১৯৯৩-১৯৯৯)
    “Anybody who has seen 1971 has a story to tell, so, there will be hundreds of stories from every corner.

    আমার মায়ের যখনই মন বা মেজাজ খারাপ থাকে আমরা তাকে শুধু একবার অই ৯ মাসের কথা তুলে দেই, মা তার সব কাজ ভুলে গিয়ে সেই ৯ মাসের গল্পে বিভোর হয়ে যায়। প্রতিবার শোনা সেই সব স্মৃতিগুলো যা শুরুর দিকে আমাদের কাছে কল্প কাহিনীর মত শোনাতো, এখন যেন সেগুলো স্পষ্ট দেখতে পাই।

    ম্যাশ, তুই এতো সুন্দর করে লিখেছিস, খুব ভালো লেগেছে। অষ্পষ্ঠতা ছিল পদক দেবার ব্যাপারে। ধন্যবাদ।

    অপেক্ষায় থাকলাম জনাব ফতেহ আলী চৌধুরির উপর তোর লেখা পড়ার জন্য।


    You cannot hangout with negative people and expect a positive life.

    জবাব দিন
    • মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

      জিতুপ্পি,মায়ের মুখ থেকে শোনা সেই গল্পগুলো নিয়ে একটা লেখা দিন না! মুক্তিযুদ্ধের হাজার হাজার দিক আছে-মায়ের মুখ থেকে শোনা গল্পগুলোও সেরকম একটা দিক।মুক্তিযুদ্ধ দেখেছেন এমন মানুষেরা আর ২০-৩০ বছর পর হারিয়ে যাবেন-কাজেই তাঁদের মুখ থেকে যতটা সম্ভব শুনে রেখে কথ্য ইতিহাস ধারণ করা আমাদের কর্তব্য।অপেক্ষায় রইলাম আপনার ব্লগের জন্য।

      জবাব দিন
  9. সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

    দারুণ কাজ করেছো মাসরুফ। তোমার উৎসাহ, তোমার সাহস, তোমার স্পষ্টকথন, তোমার সরল সততা- সবমিলিয়ে আমি এই বোকা বোকা ছেলেটার মুগ্ধভক্ত হয়ে আছি। যেখানেই থাকো, যে পরিস্থিতিতেই- এরকম কিছু ভালো কাজ করে যেও সবসময়।

    লেখাটাও চমৎকার হয়েছে। তথ্য, বিশ্লেষণ, আবেগ সবমিলিয়ে বেশ ম্যাচিউরড। আরো ভালো লাগলো যে লেখাটা তৈরি করতে গিয়ে নিজেও কিছু পড়াশুনা, গবেষণা করেছো। ক্যাডেট কলেজের ভাষায় বলি, Keep it up.


    "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

    জবাব দিন
  10. আয়েশা ( মগকক) আয়েশা

    আবারও দেরী করে ফেললাম পড়তে.
    তোমার প্রতিটা লিখাতে বা মন্তব্যগুলোতে এক ধরনের সরলতা সব সময়েই আমাকে আকর্ষণ করে. সেই ছেলেটা এত বড় একটা উদ্যোগ নিল এবং তা কি সুন্দর করে তার লিখনীর মাঝে প্রকাশ করলো, তা ভেবে একটু অবাক-ই হচ্ছি. মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে তোমাদের মত ছেলেরা দেশ গড়তে এগিয়ে আসুক.
    অনেক অনেক শুভ কামনা.

    জবাব দিন
  11. মাসুদুর রহমান (৯৬-০২)

    প্রায় একবছর পর এখানে এখানে আসলাম। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখা এবং চেস্টা করা অসাধারণ একতি কাজ। তাই অভিনন্দন। আমরা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অনেক কথা বলি কিন্তু আমার ধারণা আমরা মুক্তিযুদ্ধের ১০% ইতিহাসও সংগ্রহ করতে পারি নাই। আমার মনে হয় তথ্যের প্রতি আরও গুরুত্ব দেওয়া উচিত। কারণ মুক্তিযুদ্ধের তথ্যের বড় অভাব। আমি স্যার নয় তাকে ভাইয়া বলছি, কাম্রুল ভাইয়ার নিকত থেকে যত পার তত তথ্য সংগ্রহ করে নাও। তুমার লেখা, এবং অনূভুতি অসাধারণ।

    জবাব দিন
  12. প্রিয়তে নিলাম,বিভিন্ন সময়ে তোমার লেখা তে দেশপ্রেমের যে বহিপ্রকাশ দেখি তা সত্যি আমাকে অনুপ্রাণিত করে, ...অনেক ধন্যবাদ,মাসরুফ...আর লেখাটা ফেসবুক এ শেয়ার করলাম,তোমার পূর্বানুমতি না নিয়েই

    জবাব দিন
    • আদনান (১৯৯৭-২০০৩)

      তবে বন্ধু, আমার মনে হয় ঐ কার্টুনটা এই লেখার বিষয়বস্তুর যে weight সেটার সাথে যাচ্ছেনা। এটা ভাল লেখা, অনেকেই শেয়ার করতে চাইবে ---- নাহ, আমার কাছে ভাল ঠেকলো না। ভেবে দেখ আবার।

      ওটা মুছে ফেলার সিদ্ধান্ত নিলে সেটার সাথে এই কমেন্ট-ও মুছে দিতে পারিস যদি চাস (যেহেতু ওটার অস্তিত্বহীনতার সাথে সাথে এটাও অপ্রয়োজনীয় হয়ে যাবে)।

      সামনে এরকম আরো জিনিস চাই। এ্যাকাডেমীতে গেলে ফ্রি টাইম পাবি-কি-পাবিনা, এখুনি পার্ফেক্ট টাইম ব্যাটা!!

      জবাব দিন
      • মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

        আসলে রাজাকারদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশের সাথে সাথে এখানে আরো একটি বিষয় আছে- এত বড় লেখা পড়তে গিয়ে পাঠক হাঁপিয়ে উঠতে পারে(সেটাই স্বাভাবিক)।কিছুটা কমিকাল রিলিফের জন্যেও কার্টুনটি দেয়া হয়েছে।এছাড়া আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি যে এই একটি ক্ষেত্রে(রাজাকারদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ) কোনরকমের লোয়ার লিমিট থাকা উচিত না।

        জবাব দিন
          • আনোয়ারুল হক তারিক (১৯৬৯-১৯৭৫)

            স্নেহাস্পদ মাসরুফ ,
            খুব ভালো উদ্যোগ এবং ভালো লেখা | সন্দেহ নাই | কার্টুন রাখার প্রয়োজন আছে | পাকিদের প্রতি ঘৃনা আর রাজাকারদের প্রতি এই প্রজন্মের অনুভূতি প্রকাশে লেখকের সব ধরনের স্বাধীনতা থাকাটা আবশ্যক মনে করি |

            সত্য প্রকাশে সব ভাষায়ই ব্যবহার করা জায়েজ | তুমি বরং ভদ্রভাবে বলেছ |

            তোমার আরো অনুসন্ধিত্সু লেখার প্রত্যাশায় থাকলাম | তোমার সফলতার জন্য প্রার্থনা করি |

            জবাব দিন
            • মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

              আঙ্কেল,( তারিক "ভাই" আমার ব্যাচমেট আদনানের আব্বু)

              অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।রাজাকারদের ক্ষেত্রে ঘৃণার আসলে কোন সীমা পরিসীমা নেই।যেমনঃ "আই পিস(piss) অন ইয়োর গ্রেভ" অত্যন্ত ঘৃণার প্রকাশকারী একটি কথা-কথাটি শুনলে গা শিরশির করে উঠত।কিন্তু একটু বড় হয়ে রাজাকারদের কীর্তিকলাপ জানতে পারার পর বুঝলাম ঠিক কোন ধরণের বদমায়েশদের কারণে এজাতীয় প্রবাদের উদ্ভাবন করা হয়েছে।

              আবার অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

              জবাব দিন
  13. রুম্মান (১৯৯৩-৯৯)

    মাস্ফ্যু,
    তোরে স্যালুট রে ভাই । এই কয়েকদিন আগেই পড়লাম জেনারেল রাও ফরমান আলি খানের how pakistan got divided.এই বইয়ের রিভিউ লিখলে ২ টা সমস্যা । ১। রক্ত গরম হয়ে যায় ২। লেখা আনেক বড় হয়ে যায় । দেখি কোন এক সময়ে.........। কিন্তু আমি গুছায়ে লিখতে পারিনা রে তোর মত.........।।
    আবারো স্যালুট । কিপ গোয়িং......... (সম্পাদিত)


    আমার কি সমস্ত কিছুই হলো ভুল
    ভুল কথা, ভুল সম্মোধন
    ভুল পথ, ভুল বাড়ি, ভুল ঘোরাফেরা
    সারাটা জীবন ভুল চিঠি লেখা হলো শুধু,
    ভুল দরজায় হলো ব্যর্থ করাঘাত
    আমার কেবল হলো সমস্ত জীবন শুধু ভুল বই পড়া ।

    জবাব দিন
  14. আহ্সান (৮৮-৯৪)

    মাস্ফ্যু,
    কোনদিন তোর মত লিখতে পারবো কিনা জানিনা...কিন্তু খুব ইচ্ছে করে তোর মত সুন্দর করে লিখতে...। অনেক সুন্দর হয়েছে রে...।
    তোর লেখাটা পড়ে আবারো মনে হলো, এই দেশে তোর মত পুলিশ অফিসার অনেক বেশী প্রয়োজন...। তোকে নিয়ে স্বপ্ন দেখার মাত্রাটা আরো বেড়ে গেল...।

    জবাব দিন
  15. মাসুদুর রহমান (৯৬-০২)

    কার্টুনটা নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে ........................ অশ্লীল কোনো শব্দ নাই তবে অশ্লীল প্রকাশ আছে তেমনি অশ্লীল কোনো দেহ নাই তবে অশ্লীল স্পর্শ আছে ........................ আমার মনে হয়না যে কার্টুনটা েখানে বিষয়বস্তুকে লগু করছে ............... বরং একটি কার্টুন অনেক কিছুই বিনা শব্দে বলে দিচ্ছে

    জবাব দিন
  16. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    অসাধারন একটা কাজ হয়েছে মাস্ফ্যু... কাজের চাপে এতদিন কমেন্ট করতে পারিনি।

    প্রশ্ন বেশ কয়েকটি ঘুরপাক খাচ্ছিলো, আপাতত একটা বলছি। ভারতীয় বাহিনী প্রথম কবে সরাসরি পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছিল? যদিও অফিসিয়ালি সেটা ৩ ডিসেম্বর, কিন্তু 'হিলি' তে নভেম্বরেই ভারতিয় নিয়মিত বাহিনী পাকিস্তানি বর্ডার পোস্টে আক্রমন করে এবং প্রথম বার পরাজিতও হয়। সরাসতি যুদ্ধ ঘোষনার আগেই কিভাবে এটা সম্ভব হলো? এটাই কি প্রথম নাকি এর আগেও ভারতিয় বাহিনী সরাসরি যুদ্ধ করেছে?

    জনাব ফতেহ আলী চৌধুরিকে নিয়ে পোস্টের অপেক্ষায় রইলাম, বিশেষ করে মেজর হায়দার সম্পর্কে শোনার জন্য।

    আবারো ধন্যবাদ, শুভ কামনা।


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  17. রায়হান রশিদ (৮৬ - ৯০)

    স্রেফ দারুণ। ধন্যবাদ মাসরুফ। পরের সাক্ষাৎ পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম। কার্টুনের ব্যাপারটি পুরোটাই দৃষ্টিভঙ্গীর ব্যাপার। মুক্তিযুদ্ধের সময়কার এম আর আখতার মুকুলের 'চরমপত্র' এর প্রকাশভঙ্গীও অনেকের হয়তো পছন্দ হতো না, কিন্তু স্বাধীনতাকামী আপামর মানুষের মনবল রক্ষায় সেই প্রচারের গুরুত্ব কমে যায়নি। আবার 'এই জানোয়ারদের হত্যা করতে হবে' - পোস্টারটির সরাসরি বক্তব্য হয়তো অনেকের রুচিকেই আঘাত করতে পারতো, কিন্তু সেখানেও একটা বিশেষ সময়ের আবেগ আর চেতনা উঠে এসেছিল, যা একটা সময়ের গোটা একটা প্রজন্মের যুদ্ধে যাওয়ার সংকল্পকে ধারণ করেছে। সুতরাং, পুরোটাই দৃষ্টিভঙ্গীর ব্যাপার। কার্টুনটি থাকবে কি থাকবে না, তা নিয়ে তুমি বাকিদের মতামতের অপেক্ষায় আছো। কেন? অন্যদের মতামতকে গুরুত্ব দিতে চাইছো বুঝতে পারছি, সেটা শ্রদ্ধা করার মতো, সন্দেহ নেই। কিন্তু আমার মনে হয় এই বিষয়টিতে নিজের পছন্দ এবং সিদ্ধান্তকেই বেশী গুরুত্ব দিলে ভাল করবে, আমরা যে যাই মনে করি। আবারও ধন্যবাদ। (সম্পাদিত)

    জবাব দিন
    • মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

      রায়হান ভাই,
      এই একটা ক্ষেত্র(রাজাকার ও দেশদ্রোহী) যেখানে আমার যাবতীয় ভদ্রতাবোধ,সভ্যতা,দয়ামায়া ইত্যাদি মানবিক গুনাবলী সম্পূর্ণ রূপে অনুপস্থিত।এদের প্রতি ঘৃণার ক্ষেত্রে কোন লোয়ার লিমিট রাখার পক্ষপাতী আমি নই-ব্যক্তিগতভাবে তাই কার্টুনটি এবং এর বক্তব্য আমার খুবই প্রিয় এবং আমি তা রাখার পক্ষে।তবে এটি ওপেন ব্লগ এবং এখানে অনেক সিনিয়র মানুষ রয়েছেন।আমার লেখার পেছনে সিসিবির পাঠকদের অনুপ্রেরণা খুব গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল্ করে আছে-সে কারণেই আসলে তাঁদের মতামত চাওয়া।

      ভালো থাকবেন ভাই,কষ্ট করে পড়বার জন্যে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

      জবাব দিন
  18. নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

    কার্টুনটি যা বলছে সেইসব ***** দের নিয়ে, আমার মনের ভাষা তার থেকেও অনেক ভয়ংকর, শালীনতাবর্জিত।
    এই কার্টুনটি থাক। বাংলাদেশ একদিন এদের ** মারছে এটা দেখার আগে আমার যেন মৃত্যু না হয়।

    জবাব দিন
  19. "স্যার বললেন- এই বার্তা সেক্টর পেরিয়ে বড়জোর সাবসেক্টর হেডকোয়ার্টার পর্যন্ত পৌঁছেছে। অসংখ্য যোদ্ধা প্রবল বিক্রমে লড়াই করে শহীদ হয়েছেন যাঁদের নাম সেক্টর বা সাব-সেক্টর হেডকোয়ার্টার পর্যন্ত পৌঁছোয়নি। যুদ্ধের ডামাডোলে সেটি আসলে সম্ভবও ছিলোনা। খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধারা নিঃসন্দেহে মহান বীর তবে শুধু খেতাবপ্রাপ্তদেরকেই বীর হিসেবে ধরে নিলে ভুল হবে। নাম-না-জানা অসংখ্য বীরদের মূল্যায়ন যথাযথভাবে না হওয়াটা অবশ্যই দুঃখজনক তবে এর পেছনে গূঢ় ষড়যন্ত্র ছিলো এমনটি ভাবা অযৌক্তিক।" বে সামরিকী করনে প্রথম এত সুন্দর কথা শুনলাম ।
    পরের পর্বের অপেক্ষায় । ধন্যবাদ মাসরুফ সুন্দর উপস্থাপনার জন্য ।

    জবাব দিন
  20. মাহতাব (১৯৯৬-২০০২)

    অনেক ধন্যবাদ। লিখাটা কেমন হয়েছে সেই সম্মন্ধে আমার বলার কিছু নাই। এই ব্যাপারে আমি সবসময় একটু বেশী আবেগপ্রবন। আরো জানার অপেক্ষায় থাকলাম।সবশেষে তোমাকে :salute:

    জবাব দিন
    • মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

      এধরণের একটি প্রশ্ন এই পোস্টে কিভাবে প্রাসঙ্গিক হলো ঠিক বুঝতে পারছিনা- কিছুটা বিরক্তবোধও করছি এরকম একজনের সাথে ক্যাডেট কলেজের নাম জড়িয়ে এ প্রশ্নটি আসার জন্যে।আপনার অবগতির জন্যে জানানো যাচ্ছে- এটি সত্য নয়।ব্লগার নিঝুম মজুমদারের এই লেখাটি থেকে জানা যায় ১৯৫৭ সালে তাকে পাঞ্জাবের সাদিক'স মাধ্যমিক স্কুলে পাঠানো হয়,পরে তাকে ফিরিয়ে এনে চট্টগ্রামের সেন্ট প্লাসিড স্কুলে তাকে ভর্তি করানো হয়।এই স্কুল থেকেই সে মাধ্যমিক এবং ঢাকার নটরডেম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে।

      গা ঘিনঘিন করছে প্রশ্নটির উত্তর দেবার সময়।জানিনা এধরণের একটি জঘন্য অপপ্রচার কিভাবে হালে পানি পেলো।

      (বিঃদ্রঃ নো অফেন্স টু নটরডেমিয়ান্স।এরকম একজন নিজেদের আলমা ম্যাটারের প্রোডাক্ট হিসেবে পরিচিতি পাবার এবং তা নিয়ে প্রশ্নের সম্মুক্ষীন হওয়া যে খুব একটা সুখকর অভিজ্ঞতা নয় তা আশা করি স্বীকার করবেন।আবার বলছি- একজন কুলাঙ্গারের কারণে কোন অবস্থাতেই নটরডেম কলেজকে খাটো করছিনা)

      জবাব দিন
      • দুঃখজনক হলেও ১০০% সত্যি যে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী (সাকা) ফৌজদারহাট কেডেটের ছাত্র ছিলেন। নিঝুম মজুমদার আসল তথ্য জানেন না বা ভূল জানেন। এ ব্যাপারে আরো তথ্য অনুসন্ধান করতে গিয়ে যা জানতে পারি তা অত্যন্ত কৌতুহল উদ্দীপক এবং হতাশার--

        Salahuddin Quader Chowdhury
        Batch- 08
        Cadet no- 253
        Class of 1967

        সূত্রঃ Specific Index Page- 28 (Ofa directory 2005)

        কষ্টের ব্যাপার হলো এ কলেজের Icon/বিখ্যাত ছাত্রদের ছবিগুলোর মাঝে সাকার ছবিটাও পেলাম। আশা করি আপনি আপনার বড়ভাইদের সাথে কথা বললেই এ ব্যাপারে আরো নিশ্চিত হতে পারবেন।

        জবাব দিন
        • কাইয়ূম (১৯৯২-১৯৯৮)

          উপরের তথ্য সঠিক। সাকা এফ সি সি'তে ছিলেন সম্ভবতঃ নাইন পর্যন্ত। তার ছোট ভাই গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরি (গিকা) ও ১৩ তম ব্যাচের এক্স ফৌজিয়ান।


          সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!

          জবাব দিন
          • মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

            কষ্টের ব্যাপার হলো এ কলেজের Icon/বিখ্যাত ছাত্রদের ছবিগুলোর মাঝে সাকার ছবিটাও পেলাম।

            এফসিসির বড়ভাইদের এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেবার জন্যে বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।এধরণের একটা ব্যাড এ্যাপল যে কোন প্রতিষ্ঠানের সুনামের ১২টা বাজানোর জন্যে যথেষ্ট-যেমন জর্জ বুশ হচ্ছেন বিশ্ববিখ্যাত "ইয়েল" এর গ্র্যাজুয়েট! তবে সুখের বিষয়-সম্ভবত ক্লাস নাইনেই এই কুলাঙ্গারটিকে কলেজ থেকে বের করে দেয়া হয় কারণ তা না হলে সে এখান থেকেই এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষা দিত।এফসিসির একাধিক ক্যাডেট মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন-তাঁদের গৌরবে আশা করি এরকম একটা কুলাঙ্গারের(যাকে ক্লাস নাইনে বের করে দেয়া হয়েছিলো পুরো ৬ বছরের কোর্স শেষ হবার অনেক আগেই) কুকীর্তি ম্লান হয়ে যাবে।

            মেহেদি সাহেবকে ধন্যবাদ,তবে এই পোস্টে বিষয়টির অবতারণা করার কারণ এখনো বুঝতে পারলামনা।

            জবাব দিন
            • নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

              জনাব মেহেদি,
              সাকা চৌধুরী এফসিসি-র ছাত্র ছিলেন এতে দুঃখ বা হতাশার কি আছে বুঝলামনা। তিনি তো সেখানে আর স্বাধীনতার পরে এসে ভর্তি হননি! সাকা যুদ্ধাপরাধী হলে তার দায় কি এফসিসির?
              আর icon প্রসংগে:
              সাকা চৌধুরীরা এখনো বাংলাদেশের রাজনীতির অংশ। যুদ্ধাপরাধের বিচার এখনো করে উঠতে পারিনি আমরা। যে বা যাঁরা তাকে icon হিসেবে ডিরেক্টরীতে জুড়ে দিয়েছেন তাঁদেরো স্বার্থের হিসাব থেকে থাকবে। এসব নিয়ে অবাক হবার কিছু নেই এই দেশে। এফসিসির ইয়াহু গ্রুপ মেইলেও সাকা-কে নিয়ে অনেক আলোচনা হয় , অনেকে আবার এড়িয়েও যাই। হ্যাঁ, আমরা বিব্রত যে, তিনি একই কলেজের প্রাক্তন ছাত্র।আমার শুধু এইটুকু উপলব্ধি: ইতিহাস সাকা-কে ক্ষমা করবেনা কখনো।যুদ্ধাপরাধের দণ্ড তাকে জীবিত অবস্থাতেই পেতে হবে।

              জবাব দিন
  21. আমিন (১৯৯৬-২০০২)

    লেখাটা বুকমার্কে রাখছিলাম। পড়ালেখার চাপে পরা হয় নাই। এখন সময় নিয়েই পড়লাম পুরা লেখাটা। মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধের গল্প শুনলেই রক্ত গরম হয়ে যায়। কিন্তু স্যারের প্রচারবিমুখী ভাব খুব জানার সুযোগ দিলো না। একই প্রবণতা অবশ্য আরও কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার মাঝেও দেখেছি।
    স্রেফ অসাধারণ পোস্ট হয়েছে মাস্ফ্যু। ভাষা আন্দোলন আর মুক্তিযুদ্ধ আসলেই আমাদের অসীম প্রেরণার উৎস।এখানে বিদেশি কারো সাথে একটু আলাপচারিতা হলেই তার সাথে আমি প্রথম শেয়ার করি ভাষা আন্দোলনের কথা তারপর মুক্তিযুদ্ধের কথা। এক ধরণের শিহরণ কাজ করে শরীরে। এই পোস্টের সবচেয়ে যেটা ভালো লেগেছে সেটা হলো জেনারেল অরোরার স্বী্কারোক্তি। বাপ বয়সী লোকদের বিরূপ মন্তব্যে বিব্রত ও বিভ্রান্ত দুই ই হতাম। আপাতত তার থেকে মুক্তি মিললো।
    আর সত্যিকার অর্থেই শিহরিত হয়েছি নারায়নগঞ্জের সেই বাঙালিবালার পরোক্ষ মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনে। আর হ্যা বীর খেতাব নিয়ে আমারো একটু কনফিউশন ছিলো এখনো আছে। আমাকে কি একটু পরিষ্কার করতে পারিস?
    পরিশেষে মাস্ফ্যু স্যালুট ইউ।
    তুই যে এই পোস্ট টা লিখে আমাকে কতটুকু ইনসপায়ার করছিস , সেটা বলে বুঝাতে পারছি না। আর পোস্ট অবশ্যই প্রিয়তে।

    জবাব দিন
    • মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

      আমিন ভাই- এ ব্যাপারটি নিয়ে ১৯৮১ সালে বিচিত্রায় স্যার একটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন-বর্তমানের অতি-স্পর্শকাতরতার কারণে সেটি নিয়ে তিনি মুখ খুলতে চাননি।তবে তিনি যা বলেছেন তার মর্মার্থ অনেকটা এরকমঃ খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধারা নিঃসন্দেহে বিতর্কের ঊর্ধ্বে,কিন্তু এ কথাও আমাদের মনে রাখতে হবে যে কোনও খেতাব না পাওয়া-নাম না জানা শত শত মুক্তিযোদ্ধা আছেন যাঁদের বীরত্বের কোন তুলনা হয়না।পদকপ্রাপ্ত যোদ্ধাদের বীরত্বগাথা(আবারও বলছি-তাঁদের বীরত্ব নিয়ে বিন্দুমাত্র প্রশ্ন তোলা হচ্ছেনা) সেক্টর এবং সাব-সেক্টর হেডকোয়ার্টার পর্যন্ত পৌঁছেছে এবং যোগ্যতাবলেই তাঁরা খেতাব পেয়েছেন।তবে এ কথাও সত্য যুদ্ধের ডামাডোলে বহু বীর যোদ্ধাদের আত্মত্যাগকেই স্বীকৃতি দেয়া হয়ে ওঠেনি(কারণ প্রত্যন্ত অঞ্চলে যুদ্ধ করে শহীদ হওয়া অনেক বীরের যুদ্ধকথা সে সময়ে সেক্টর এবং সাব-সেক্টর কমান্ডারদের কানে পৌঁছোয়নি)।এটি সম্ভবত ইচ্ছাকৃত নয় তবে নিঃসন্দেহে দুঃখজনক।হয়তো ভবিষ্যত ইতিহাস তাঁদেরকে সেই স্বীকৃতি দেবে।

      জবাব দিন
  22. মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)

    মাসরুফ,
    এই পোষ্টটা এই নিয়ে ছয়বার পড়লাম। কিন্তু কি লিখবো বুঝতে পারছি না। নানা বিষয় মাথার মধ্যে ভিড় জমাচ্ছে। আবেগের জায়গাটা দারুন উঠে এসেছে। :hatsoff:

    তবে কিছু কথা না-বলা থেকে যাচ্ছে, যা' মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বেশিরভাগ লেখার ক্ষেত্রেই আমার মনে হচ্ছে। সেইদিক থেকে, তোমার লিখাটা আরো সমৃদ্ধ হতে পারতো।


    There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

    জবাব দিন
    • মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

      না-বলা কথাগুলোর উপস্থিতির দায় একান্তরূপেই আমার,এধরণের কাজে বিন্দুমাত্র টেকনিকাল নলেজ না নিয়ে শুধুমাত্র আবেগকে ভরসা করে এগুলে যা হয় আরকি।এই কারণেই এই লেখাটা শেষ পর্যন্ত "ব্লগ" বা ব্যক্তিগত কথামালার বেশি কিছু হয়ে উঠতে পারেনি বলেই আমি মনে করি।

      মাহমুদ ভাই,পরবর্তীতে আপনি দেশে আসলে চলেন দুইজন মিলে কিছু একটা করি-একজন রিসার্চার হিসেবে আপনার অভিজ্ঞতা নিঃসন্দেহে এই জাতীয় লেখালেখির ভুলত্রুটির পরিমাণ একেবারেই কমিয়ে দেবে।স্যারের সাথে আরেকবার সাক্ষাতের ইচ্ছে আছে রাজশাহী যাবার আগে- সেক্ষেত্রে না বলা জায়গাগুলো যদি একটু কষ্ট করে ধরিয়ে দিতেন তাহলে হয়তো লেখাটা আরেকটু সমৃদ্ধ করার সুযোগ থাকতো।অপেক্ষায় রইলাম।

      অনেক দিন পর আপনার মন্তব্য পেয়ে খুব খুব খুব ভালো লাগলো।

      অফ টপিকঃ এই বি-শা-ল লেখা ছয়বার পড়েছেন ভাবতেই মাথা ঘুরাচ্ছে!! 😮

      জবাব দিন
  23. আদনান (১৯৯৪-২০০০)

    মাসরুফ দারুন কাজ করছিস । মুক্তিযোদ্ধারা কি এক আজব কারনে নিজেদের ব্যাপারে বলতে চান না । কামরুল ভাইয়ের ব্যক্তিগত কথা জানতে পারলে আরো ভালো লাগতো । নভেন্বর তো শেষ হয়ে গেল পরের পর্ব কোথায় আর প্রশ্ন নিয়ে আলোচনাই বা কোথায় । তাড়াতাড়ি আপডেট কর । শেষে বলি মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যে দারুন একটা কাজ করছিস এজন্য তোকে :salute: ভাল থাক ।

    জবাব দিন
  24. একজন গুরুত্তপূর্ন মুক্তিযোদ্ধার সাক্ষাতকারের মাঝে এতো বেশি নিজের মনের মন্তব্য না দিলে ভাল হোত। কারন আমি বার বার গুলিয়ে ফেলছিলাম কোন টা সারের কথা আর কোনটা আপনার। নিজেদের কথা তো সব সময় ফেসবুক কি ব্লগে দিতেই থাকবেন। কিন্তু এনারা যারা সত্যিকারের উইটনেস তারা কিছুদিন পর আমাদের মাঝে থাকবেন না...তাদের কথা অনেক অমিশ্রিত আর আন ইন্টারাপ্তেড থাকা উচিত।

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।