১। এই সিরিজটি শুরু করার সময়ে ভেবেছিলাম…পরের কয়েকটি পর্ব জুড়েই শুধু বদরুল ভাইয়ের (নামঃ বদরুল আলম, ক্যাডেট নং-৩৯৯, বদর হাউস, ৮ম ইনটেক, ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজ, কলেজে অবস্থানকালীন সময়ঃ ১৯৭১-৭৭) কথা লিখবো। কিভাবে তিনি তুরস্কে আসলেন…কিভাবে ভাবী-র সাথে তাঁর পরিচয়…বিবাহ…সন্তানদের গল্প…ইত্যাদি …ইত্যাদি।
২। পরের দিকে লিখতে চেয়েছিলাম…কিভাবে তিনি তুরস্কের মার্সিন শহরে একজন অনাহুত আগন্তক থেকে সেখানে একজন ব্যবসায়ী হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন…কিভাবে তিনি বাংলাদেশের একজন ব্যবসায়ী-র পাল্লায় পড়ে ২/৩ লাখ মার্কিন ডলার লস খেয়েছিলেন……আবার ঘুরে দাঁড়িয়ে নতুন করে ব্যবসা শুরু করেছিলেন…।
৩। সবশেষে লিখতে চেয়েছিলাম……আমাদের সাথে পরিচয় হবার পরে তাঁর শেয়ার করা একান্ত কথাগুলি ……
“আমরা তিনজন বদরুল ভাইয়ের বাসায় গিয়েছি…তাঁর জরুরী তলবে। গিয়ে দেখি…বাসায় কেবল তিনিই আছেন…বাসার অন্যান্যরা কেউ নেই। শুনলাম, ভাবী-বাচ্চারা সবাই সামার হাউজে গিয়েছেন…৫/৬ ঘন্টার ড্রাইভ। আমাদের সাথে গল্প করার জন্যেই না কি তিনি একা থেকে গিয়েছেন…আমাদের সাথে অ-নে-ক গল্প করবেন তিনি!
তাঁর কাছে শুনলাম..কিভাবে বাংলাদেশ থেকে এই দেশে আসলেন…তাঁর সকল উত্থান-পতনের গল্প, কিভাবে তিনি দিনের পর দিন বাংলা ভাষায় একা একা বকবক করেছেন…শোনানোর মত কাউকে পান নি…কিভাবে স্ত্রী-পুত্র-কন্যা সাথে থাকার পরে-ও প্রাণ খুলে বাংলায় কথা বলার জন্য হাহাকার করেছেন…!! ”
৪। বদরুল ভাইকে কাছে পেয়ে আমার মনে হচ্ছিলো…আমার নিজের বাবাকে কাছে পেয়েছি…আমার নিজের ভাইকে কাছে পেয়েছি…আমার খুব প্রিয় একজন বন্ধুকে বহুদিন পরে কাছে পেয়েছি। । একজন মানুষকে দেখে কারও যে এত ভাল লাগতে পারে… এত আপন মনে হতে পারে…এত নিজের মনে হতে পারে…এত দাবী… এত অধিকার (এবং কর্তৃত্ব) আসতে পারে…তা বলে বোঝাবার নয়।
৫। অত্যন্ত দুঃখ এবং গভীর বেদনার সাথে জানাচ্ছি…আমার অতি প্রিয় এই ভাইটি আমাদের মাঝ থেকে চিরবিদায় নিয়ে মহান আল্লাহ্র নিকটে প্রত্যাবর্তন করেছেন। গত ১২ই জানুয়ারী, ২০১১ তারিখে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। প্রথমে তাঁর হার্ট এটাক হয়েছিল…ফলে তাঁর বাম পার্শ্ব প্যারালাইজ্ড হয়ে গিয়েছিল। পরে আবার স্ট্রোক করার কারণে তাঁর ব্রেন অপারেশন করা লেগেছিল। ফাইনালি তিনি আর রিকভার করতে পারেননি। প্রথম অসুস্থ্যতার পরে তাঁর সাথে আমি মোবাইলে আলাপ করেছিলাম…তুরষ্কে গেলে আবার ইনশা-আল্লাহ্ তাঁর সাথে দেখা করার প্রতিশ্রুতি-ও দিয়েছিলাম। কিন্তু, তাঁর সাথে আর দেখা হলো না।
৬। সাগরে টহলরত থাকায় আমরা সংবাদটি এতদিন পরে পেয়েছি…। এর মাঝে তাঁর খোঁজ করিনি বলে নিজের উপরেই বেশ রাগ হচ্ছে…।
৭। বদরুল ভাইকে হারিয়ে আজ মনে হচ্ছে…আমার নিজের একজন ভাইকে হারিয়েছি…আমার খুব প্রিয় একজন বন্ধুকে হারিয়েছি। আল্লাহ্ আমাদের এই বড় ভাইটির সকল প্রকার অপরাধ ক্ষমা করে তাঁকে জান্নাত দান করুন…আমীন। আপনারা সবাই বদরুল ভাইয়ের জন্য দোয়া করবেন।
ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
আমাদের একজন চলে গেলেন। কিন্তু রেখে গেলেন তুরস্কের মত দেশে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিয়ে প্রতিষ্ঠিত করার বিরল এক উদাহরণ। উনার পরকালীন শান্তি কামনা করি।
বদরুলের কথা দেখে খুবই আনন্দ নিয়ে পড়া শুরু করেছিলাম। লেখার শেষে এসে সেটা যে এত বেদনাদায়ক হবে বুঝি নি। খুব কষ্ট লাগছে। আমি বদরুলের লকার পার্টনার ছিলাম।
ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। আল্লাহ তাকে বেহেশত নসীব করুন এই প্রার্থনা।
ওই দুনিয়ায় তিনি ভাল থাকবেন দোয়া করি ...
দোয়া করি তাঁর শোক সন্তপ্ত পরিবার দ্রুত এই সীমাহীন ক্ষতি সামলে উঠুক ...
বদরুল ভাই নাই তাতে কি জুলহাস ভাই। উনাকে নিয়ে লিখতে থাকুন ...
ব্লগের মাধ্যমে ব্লগের মাঝে হলেও তাঁকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করুন ...
পথ ভাবে 'আমি দেব', রথ ভাবে 'আমি',
মূর্তি ভাবে 'আমি দেব', হাসে অন্তর্যামী॥
বদরুল ভাই বেছে থাকবেন জুলহাস ভাইয়ের লেখনীতে
আর অপরের দুনিয়ায় তিনি থাকুন পরম শান্তিতে
আল্লাহ উনাকে বেহেশত নসীব করুন।
ইন্না...রাজিউন।
খুব খারাপ লাগল শুনে...
আল্লাহ উনাকে বেহেশত নসীব করুন।
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
বদরুল ভাইকে নিয়ে লিখতে থাক জুলহাস, তিনি আমাদের জন্য অনুপ্রেরনার উৎস হয়ে থাকবেন
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন.........
আল্লাহ উনাকে বেহেস্ত নসীব করুন.............