কাজের কারণে দেশের নানা জেলায় যেতে হয়। কখনও রেলগাড়িতে, কখনও বাসে, কখনও বিমানে। দু-তিন দিন করে থাকাও হয়। হোটেলে থেকে কাজ করা বেশ অন্যরকম অভিজ্ঞতা। হোটেলগুলোর স্থাপত্যকলা চমৎকার, থাকার রুমগুলো ঝকঝকে, আসবাবপত্র অপূর্ব, গোসলখানা আরামদায়ক! সুইমিং পুল আছে, শরীরচর্চার জন্য জিম আছে। কোথাও-কোথাও আবার বারও আছে। মনে হয় পারলে হোটেলেই থেকে যাই। ঢাকায় ফেরার দরকার নেই।
তবে প্রায় প্রতিটি হোটেলেই আপ্যায়নের অভাব। আর এতেই ভাটা পড়ে আমার উৎসাহে।
দৈবায়ত্তং কুলে জন্ম, মদায়ত্তং হি পৌরুষম্
১.
কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিখ্যাত গণিতবিদ জি এইচ হার্ডি বিরক্তমুখে তার অফিসে বসে আছেন। কিছুক্ষণ আগে একটি চিঠি এসেছে তাঁর হাতে। শ্রীনিবাস রামানুজন নামে এক ভারতীয় তাঁর মতামত জানতে চেয়ে ১২০ টি গাণিতিক উপপাদ্য পাঠিয়েছে। যার সবগুলোই নাকি সে ‘আবিষ্কার’করেছে! হার্ডি প্রায়ই এরকম উদ্ভট চিঠি পেয়ে থাকেন। এটাও সেরকমই হবে হয়তো। চরম বিতৃষ্ণার সাথে তিনি চিঠিটাতে একনজর চোখ বুলালেন।
বেশিরভাগ উপপাদ্যেরই মাথামুন্ডু স্পষ্ট নয়।
বিস্তারিত»স্নানপর্ব – ৮
ফোঁপালো না?
আধভেজা তোয়ালেটা?
ফোঁস করে ফুলেছে
অভিমান,
বিরহের নরোম তান
গুনগুনিয়ে এগুতে’
ঝপ করে
পড়েছে র্য্যাকে –
মরুময়
ধবল ব্যারাকে
জুলুজুলু চোখে
সে-অজগর
অত:পর
শুষে নিতে চায়
তোমার স্নানাবশেষ –
তুলতুলে হরিণছানার মতন
বিন্দু বিন্দু জল
জীবনের জার্নাল – ২১
পকেট মানি’র অবিশ্বাস্য বরকতঃ
প্রতি টার্মের শুরুতে আমাদের অভিভাবকদেরকে আমাদের পকেট মানি বাবদ কলেজ কর্তৃপক্ষের নিকট ৫০.০০ (পঞ্চাশ টাকা মাত্র) পাঠাতে হতো। আজকের দিনে কি এটা বিশ্বাস করা যাবে, যে তিন মাসের জন্য মাত্র পঞ্চাশ টাকা হাতখরচ? অথচ তখন এই ক্ষুদ্র এমাউন্ট থেকেও কিছুটা হলেও বাঁচানো সম্ভব হতো। কোন দুষ্টামির কারণে কিংবা কোন কিছু হারিয়ে ফেলার কারণে কারো কোন মাইনর ফাইন হলে সেটাও এখান থেকে মিটানো হতো।
আমি আবার সমুদ্রে যেতে চাই
আমি আবার একদিন সমুদ্রে যেতে চাই,
হোক তা রৌদ্র করোজ্জ্বল চকচকে দিন,
কিংবা কোন দুঃখিনী নারীর মুখের মত
মেঘাচ্ছন্ন মলিন, তবু সমুদ্রে যেতে চাই।
সৈকত যেমনই হোক, সমুদ্রে যেতে চাই,
বালুময় কিংবা প্রস্তরাকীর্ণ, সমস্যা নাই।
সৈকত থেকে যদি দূরের কোন বাতিঘর
আমাকে ইশারায় ডাকে, আমি প্রফুল্ল হই।
হোক সে সৈকত ভীড়াক্রান্ত বা পরিত্যক্ত,
তবু আমি আনমনে সমুদ্রে বেড়াতে চাই।
নির্জনতা প্রিয়তা
নির্জনতা প্রিয়তা
“প্রত্যেকদিন রাতে, আমি যখন কুণ্ডলী পাকিয়ে বিছানায় শুতে যাই, লেপ টেনে নিতে নিতে আমি কী এক মধুর আতঙ্কে তলিয়ে যাই, তলিয়ে যাই স্বপ্ন আর একাকীত্বের মাঝে, জীবনের সৌন্দর্যগুলোর ফাঁকে, এর নির্মমতার খাঁজে; আর ঠিক তখনই আমি কাঁপতে শুরু করি, ঠিক যেরকমভাবে আমি কাঁপতাম আমার ছোট্টকালে, ভয়ের গল্প শুনে বা রূপকথার রাজ্যে…” –ওরহান পামুক
ছোটবেলায় আমাদের বাড়ীতে আমার বয়সী কোন ছেলেমানুষই ছিলনা!
বিস্তারিত»লজ্জা, লজ্জা, লজ্জা…
ক্ষমতার অংশীদারিত্বে বাংলাদেশের অধিকাংশ বুদ্ধিজীবীরা এখন আজ্ঞাবহ, ভারবাহী, মেরুদন্ডহীন মানুষে পরিণত হয়ে গেছেন। আমাদের চারপাশে তিন শ্রেণীর মানুষ আছেন যারা আপাত-প্রগতিশীলতার মুখোশে প্রতিক্রিয়াশীলতাকেই লালন করে চলেছেন। কেউ কেউ পরিশীলিত বাচনভঙ্গীর সুকৌশলে, কেউবা নির্লজ্জ-নগ্নতার বেশে, আবার কেউ কেউ আছেন অনেকটা “হতভম্ব-বোকার” মত এই প্র্যাকটিসটি করে চলেছেন…
“আমি কিংবদন্তীর কথা বলছি
আমি আমার পূর্বপুরুষের কথা বলছি।
তাঁর করতলে পলিমাটির সৌরভ ছিল
তাঁর পিঠে রক্তজবার মত ক্ষত ছিল
কারণ তিনি ক্রীতদাস ছিলেন” *।
দুটো কবিতা
১
স্রষ্টা জিজ্ঞাসা করেছিল
“কোন শেষ ইচ্ছা?”
চিন্তায় পড়ে গেলাম,
কোনটা ছেড়ে কোনটা?
সকালের পিটি ফাঁকি নাকি
নাকি এক্সট্রা পরোটা
নাকি চার পিরিয়ড টানা ঘুমিয়ে
মিল্কব্রেকের তাল বরাটা।
যেটা দিয়ে ছুঁড়ো ছুড়ি করতাম-
এপাশ থেকে ওপাশ, এ টেবিল থেকে ও টেবিল।
নাকি আফটারনুন প্রেপের ঘুম নেব
নাকি শুক্রবারের অপশনাল
নাকি জুম্মার পরে ব্লক ক্রিকেটে
মশারীর সূক্ষ্মজাল।
চিন্তা খেলা করে ২
ট্রেনে যেতে যেতে
ট্রেনে যেতে যেতে অনেক কিছুই মনে পড়ে যায়। সবকিছুই ট্রেন কেন্দ্রিক। ভাবি, রবী বাবুর ‘হঠাত দেখা’ কবিতার মতো দেখা হয়ে যাবে কোন ডুরে শাড়ি পড়া নারীর সাথে। যেতে যেতে কতো যে গল্প হবে আমাদের। তারপর কোন অচেনা স্টেশনে সে নেমে গেলে মনে হবে, ফেসবুক আইডিটা সাহস করে চাইতে পারতাম।
আবার, পথের পাচালির অপু আর দুর্গাকে মনে পড়ে।
বিস্তারিত»লেখালেখি
যাতনাকে সরিয়ে পাশে
যাই লিখে যাই কবিতা
ঝড়ো হাওয়ায় পড়ে বক
হয় নিদারুণ ছবি তা।
বন্ধু জোটে ভক্ত জোটে
জোটে আঁতেল সমালোচক
জোরসে হবে লেখালেখি
যা খুশি তা বলুক লোক।
লোকের বলায় কি আসে যায়,
যা খুশী তা বলুক লোক,
আম জনতার মনের কথাই
কবির পদ্য, কবির শ্লোক!
জলজ
চট্টগ্রামে পানির ধারে আমার বড় হওয়া। শহরের ভেতরেই ফয়েজ লেক, পা বাড়ালেই কর্ণফুলীর তীর আর পতেঙ্গা সৈকত, একটু দূরে কাপ্তাই লেক, কক্সবাজার, টেকনাফ, উখিয়া — কত দিন যে কেটেছে এসব জায়গায়! পানির সেই টান এখনো ছাড়েনি। ভাগ্যক্রমে সহধর্মিনীরও একই নেশা। বেড়ানোর সুযোগ পেলেই আমরা খুঁজে বের করি পানির কাছাকাছি কোন জায়গা। ঘুরতে গিয়ে এমন বিভিন্ন জলাশয়ের পাশে তোলা ছবি জোর করে জুড়ে দিয়ে তৈরি এই এলেবেলে জলজ প্রেমের ছবিগল্প।
বিস্তারিত»বিনিময়
বিনিময়
টাকাটা আমার প্রয়োজন ছিল, তবে বিনিময়টা যে এধরনের হবে সেটা আমার ধারনার ভেতরেও ছিলনা!
একটা ‘যা ইচ্ছে তাই’ ধরনের স্বাধীন শৈশব আমি পেয়েছিলাম। আমি সাঁতার শিখেছিলাম সবার অজান্তে এক বিশাল বাঁশঝাড়ের তলা দিয়ে বয়ে যাওয়া সদ্য আসা বানের পানির প্রবল স্রোতের ভেতরে এক দঙ্গল পিঁপড়ের সাথে ঘোলা পানি খেতে খেতে! আগের দিন সারাদিন ধরে আমি এবং আমার বন্ধুরা সবাই মিলে ঝাড়কাটা নদী থেকে এই বানের পানিকে আমন্ত্রন করে এখানে ডেকে এনেছিলাম।
বিস্তারিত»রক্ত
অন্ধকার ঘরটার স্যাঁতসেঁতে বিছানায় শুয়ে কোঁকাতে কোঁকাতে বিড়ি ফোঁকে জুন্নুন মিয়া । এ মুহূর্তে তামাকের গন্ধকে দমিয়ে দিয়ে বাতাসে পোলাও-মাংসের গন্ধ । মেয়ে আর নাতনী আসছে শহর থেকে । জুন্নুন মিয়ার স্ত্রী সালেহা বেগম মরচে ধরা নড়বড়ে শরীর নিয়েই রান্নাবান্না আর ঘরদোর গোছগাছের তদারকিতে নেমে গেছে । জুন্নুন মিয়াকে অ্যান্টাসিড এগিয়ে দেয়া,পান-সুপারি পিষে দেয়া এমনকি ঝগড়া করারও ফুরসত নেই তার। কাজের লোকের আকাল পড়েছে এই গাঁয়েও।
বিস্তারিত»ঢাকার শুনানি, ঢাকায় শুনানি (ছ)
মানুষজন ইদানিং বুঝে রসিকতা করে নাকি দৈব্যক্রমে ঘটে যায় সেটা চিন্তা করি। সেনানিবাস থেকে বাসে করে অফিস যাচ্ছি। ট্রাস্ট ট্রান্সপোর্ট সার্ভিসের এই রুটে ছাড়া নতুন বাস। জ্যামে আটকা পড়ে বিরক্ত কন্ডাক্টর ছেড়ে দিল ধুমধাড়াক্কা হিন্দী গান। মিনিট দুয়েক সহ্য করার পর পিছেন থেকে গোটা কয়েক যাত্রী বজ্রনিনাদে বকাঝকা শুরু করলেন, “ঐ শালা বান্দীর বাচ্চা হেল্পার, এইটা ইন্ডিয়া পাইছস? গান ছাড়লে বাংলা গান ছাড়!” ঘটনার আকস্মিকতায় কন্ডাক্টর তড়িঘড়ি করে গান বন্ধ করে বক্স থেকে আরেকটি সিডি বের করে ছেড়ে দিতেই হেসে দিলাম।
বিস্তারিত»নিউরনে আলাপনঃ দশ
: দু’দিন কথা না হলেই ভেতরটা কেমন করে! মনে হয় বুঝিবা মাস পেরিয়ে বছর হতে চলল!
: ভালো আছো?
: থাক, যদি বুঝতে?
: তুমি সুন্দর ক’রে চোখে কাজল দিও ঠিক,
কপালে একটা ছোট টিপ আর ঠোঁটে লিপস্টিক!
: ইস, আমার বয়েই গেছে।
আচ্ছা, কোনটা বেশি সুন্দর লাগে কাজল, টিপ না লিপস্টিক?
: শৈশবে কপালের টিপ খুব লাগতো,