একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। নানাভাবে উৎযাপন করা হয় এ বিশেষ দিনটি। তাদেরই কিছু অনুচিত্র নিয়ে আজকের এই আয়োজন।
ক্লাস ৮ থেকেই হাউজের জাতীয় মুরগী হিসেবে যোগদান করলাম (পড়ুন করানো হল) ওয়াল ম্যাগাজিন পার্টিতে। যদিও কোন আর্টিস্টিক প্রতিভা ছিল না, খুচরা কাজকর্মে সাহায্য করতাম আর কি। ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে হাউসে ট্রেডিশনাল মুড়ি পার্টি হত। শেষ মুহূর্তের ফিনিশিং টাচ দেয়ার কাজ চলত এদিন। সকল কাজ কোনমতে শেষ করে পাঞ্জাবিটা গায়ে জড়িয়েই দৌর দিতাম মস্কে “বিশেষ নামাজ”এ শামিল হয়ে নিজেকে সচেতন নাগরিক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে।
‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ নামের এক শব্দবন্ধের সঙ্গে আমাদের তারুণ্যের বেড়ে ওঠার অনেক স্মৃতি জড়িত। মনে পড়ে, তখন হঠাত করেই পত্র-পত্রিকা, মিডিয়া, বিজ্ঞাপন কিংবা জনমুখে ‘ডিজিটাল’ শব্দের ব্যবহার বেড়ে গেলো। সে সময়ে মানুষের মস্তিষ্কে তা এমন অভিঘাত তুলেছিলো যে শহর কিংবা মফস্বলে বিভিন্ন দোকানপাটের নামের সঙ্গে দেদার্চে ডিজিটাল শব্দটি যুক্ত হওয়া শুরু করলো। ‘মায়ের দোয়া ফুচকা’ হয়ে গেলো ‘ডিজিটাল ফুচকা শপ’, ‘আল্লাহর দান বিরিয়ানি’ হয়ে গেলো ‘ডিজিটাল বিরিয়ানি হাউজ’ এমন অজস্র উদাহরণ রয়েছে।
‘ক্যাডেট রম্য’ নামে আমার একটা বই আছে। ২০১৬ সালের বইমেলায় বইপত্র প্রকাশন থেকে বইটি প্রকাশ পেয়েছিলো। মাত্র আটদিন বইটি মার্কেটে ছিলো। চাহিদা থাকা সত্ত্বেও মেলার পর বিভিন্ন কারণে বইটার হার্ড কপি আর প্রকাশ করা হয় নি। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মানুষ বইটির খোঁজ করেছেন। ‘ক্যাডেট রম্য’ নামে প্রথম আলোর অধুনালুপ্ত ফান সাপ্লিমেন্ট রস+আলো এবং দৈনিক ইত্তেফাকের ফান সাপ্লিমেন্ট ঠাট্টায় ২০১১-২০১৪ সময়কালে লিখেছি। ফলে, ‘ক্যাডেট রম্য’-এর এক ধরণের পাঠক শ্রেণী গড়ে উঠেছিলো।
মধুমাসে মৌ মৌ ফুল গন্ধের সাথে
বাতাসে উড়ছে ধবধবে এপ্রোনের খুঁট
ঘরের ভিতর টুকরো মেঘের ভেলা
যেনো খুঁজে পেয়েছে
সংসারে ফেলে যাওয়া তার
অতল স্মৃতির ঘাটে বাঁধা অমূল্য পল্টুন
পড়ার ঘরে আধো আলোয় নিস্তব্ধ ছেলেটার
উড়ুক্কু বইয়ের পাতায় খেলা করে শুধু
নিস্পন্দ নিথর বাবার ঘুমন্ত মুখ
টিপয়ে সাজানো ফুলদানি খানি
ফাঁকা গল্পের আলপনা ভেবে
এক মনে ধরে থাকে দেবযানী
শেষ চুম্বনের গন্ধ তখনও তাজা
কপোলে তার যতোই ভাসুক
শেষ দেখা না হবার অব্যক্ত বেদনা
মায়ের চোখে ভিজেছে প্রার্থনার হাত
স্মৃতির ফলায় যতোটা ছিঁড়ে নিলে
ভেসে ওঠে উপড়ানো বৃক্ষের শিকড়
বল্কলের প্রলেপে প্রলেপে মিশে
গায়ে লেগে থাকে প্রথম চুম্বনে মাখামাখি
সন্তানের অমূল্য ভাপখানি
সেই মাপে ভেঙেচুরে উপচে ওঠে
পাঁজর দাপানো জলোচ্ছ্বাস
শয়ানে গিয়েছে যে ফেলে রেখে পাতলুন
রোজকার হাতে বাঁধা কলম কিংবা ঘড়ি
স্তব্ধ মুঠোফোনে সহস্র কথার বুনন ঘিরে
ছড়িয়ে রাখা সখ্যের সালতামামি
এই যে এতো সব বাগান উঠোন এলো ঘরদোর
এইখানে আজও এলো ভোর
তোমার সিথানে ভেঁজা মাটি জানি
আলিঙ্গনে বেঁধেছে নতুন ডোর
তুমি নিরালায় ফিসফাস
ছুঁড়ে দিচ্ছো না বলা কথার দীর্ঘশ্বাস
সহস্র সংলাপ গাথা অনুক্ত ভালোবাসা
বুকে তুলে রাখা অযুত কলতান
গোনাগুনতিহীন আনন্দ উচ্ছ্বাস দুঃখ বেদনা
সখ্যের দুরন্ত আলাপ
যা কিছু যতনে
তুলে রাখা ছিলো গভীর গোপনে
কখনো কোনো নিরালা দুপুর সন্ধ্যা কিংবা
পড়ন্ত বিকেল জুড়ে
একলা প্রহরে নিমগ্ন গভীর স্বরে
একাগ্রে কাউকে বলবে বলে
কিছু অনুযোগ
খুনসুটির ময়ান মাখা বাখরখানি
চারকোলের তপ্ত আঁচে আঙুল ছোঁয়া
স্পর্শ আঁকা কথার বকুল
যেটুকু জানতো শুধুই দেবযানী
কিংবা ধুন্ধুমার এক ঝগড়া
জমিয়ে রাখা সাতশো গালাগালের মরমী মাখা
ওই অতটুকু শৈশবের চাতালে
হাফ প্যান্টের পকেট ভর্তি মার্বেলে
খুব মারকুটে এক খেলার বিবাদ
গলার সবক’টা রগ ফুলিয়ে তীব্র বিসম্বাদ
মিহি মসলিন একটা সকাল ফালি ফালি করার মতো
তীব্র স্বরে রাগ সপ্তমী সাধার তান
বোনের কিংবা ভায়ের
আম-কাঁঠালের ভাগ-বাটোয়া’
কানের মধ্যে চাপ বাড়ার সাথে সাথে হাসানের ঘুমটা ভেঙে গেল। সাথে সাথে ফ্লাইট এটেন্ডেন্টের লাউড স্পীকারে ভেসে আসা কন্ঠে ইংরেজীতে স্পষ্ট উচ্চারণে শুনতে পেল, “আর দশ মিনিটের মধ্যে আমাদের ফ্লাইট লেক্সিংটন ব্ল গ্রাস এয়ারপোর্ট এ ল্যান্ড করবে”। পুরো দেড় ঘণ্টার ফ্লাইটে প্রায় পুরোটা সময় গভীর ঘুমে আছন্ন ছিল প্রফেসর হাসান। শিকাগো থেকে টেক অফ করার পর আর নিজেকে ধরে রাখতে পারেনি। ক্লান্তির কাছে মাথা পেতে চোখ বুঝতেই সব অন্ধকার হয়ে যায়।
বিশ্বকাপ ফুটবল একটা প্রতিযোগিতা না, উৎসব। চার বছর ধরে বিশ্বব্যাপী ফুটবলপ্রেমীরা বুভুক্ষের মতো অপেক্ষায় থাকে ফুটবল যাদুর মুগ্ধতায় প্লাবিত হতে। এই ফুটবলের সেরা তারকারা স্রেফ খেলোয়াড় নয়, ফুটবলের, এই উৎসবের এক একটি কুশলী দেবতা। তাদের নৈপুণ্য চাঁদ তারা নক্ষত্রের মতো মুগ্ধতার আলো ছড়াবে, এটাই ফুটবল আমোদীদের প্রার্থনা।
প্রথম যাদের খেলা দেখে মুগ্ধতা বেশী মাত্রায় গাঢ় হয়ে জমা হয় কারো মনে, সে হয়ে ওঠে সেই দল,
নেশাগ্রস্ত হতে হয়, বুঁদ হতে হয়। পাঠের অলিগলি ঘুরে যেনো শব্দে শব্দে উন্মোচিত হয় এক চুম্বকাকর্ষী কামার্ত শরীর। না প্রেম নয় নারী নয় তার উপজীব্য। খুব লাগসই আর নির্ভুল কথাটুকুন কাভারের ফ্ল্যাপেই অনবদ্য শব্দমালায় গাঁথা আছে।
[ ‘আমি প্রেমের কবিতা লিখতে পারি না, হাঁটু কাঁপে’ – একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন সুবোধ। প্লেটো থেকে পাওলি দাম (বইটাতে) এমন একটা দীর্ঘ সময়ের কথা ধরে আছেন এখানে যেখানে ‘সিস্টেম’ হয়ে ওঠে সুবোধের লক্ষ্য।
পনেরো থেকে আঠারো শতকে বিশ্ব জিডিপির ঊনত্রিশ শতাংশের উৎস ছিল মুঘল সম্রাজ্যের ভারতবর্ষ। সেই ভারতবর্ষের জিডিপির আটষট্টি শতাংশ জোগান দিত বাঙলা। মুঘল সম্রাজ্যের বানিজ্যিক রাজধানী, দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে সমৃদ্ধশালী বৃহৎ এক শহর ঢাকাকে ঘিরে পূর্ব বাঙলা এমনই প্রণিধানযোগ্য ছিল প্রায় চারশো বছর ধরে।
ঊনিশ শতকে বৃটিশ শাসনাধীন হলো যখন তখনও বিশ্ব জিডিপির বাইশ শতাংশ জোগান দিতো ভারতবর্ষ। অথচ বৃটিশরা যখন ভারতবর্ষ ছেড়ে যায় তখন বিশ্ব জিডিপিতে তাদের ভাগ নেমে আসে দুই শতাংশেরও নীচে।
অনেক দিন কথা হয় না।
আট দিন এগারো ঘন্টা। একে কি অনেক বলে !
সব খবর ভালো তো ?
যেমন হয় আর কি।
অভিমান নাকি রাগ !
বলেছি !
রাগ তো বিশ্বের সুলভতম বিষয়টি বৈ অন্য কিছু নয়।
সেজন্যেই তো ওসব করা ছেড়েছি।
মন অবশ্য মানুষের সব দিন এক রকম থাকেনা।
ফিরে যদি যেতেই হয়
তবে আজ আর দীর্ঘশ্বাস নয়;
আজ শুধু মেনে নেয়ার পালা।
যুদ্ধ করতে করতে সবগুলি তারা খসে গেছে
দূরত্ব ক্রমশ হয়েছে সমুদ্রের মত
তবুও একটি মুহূর্ত কোথাও উল্লেখিত হয়নি।
তুষারে কি ঢাকা পড়েছে তোমাদের শহর?
মধ্য রাতের নীল রঙ দেখার ইচ্ছায় কি রাত জাগা হয়?
চাঁদের সাথে মেঘেদের লুকোচুরি
আঙ্গুস এবং জুলিয়াস্টোনের গান এখনো কি বাজে?
বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে কবিতার জন্য একটা বিশেষ দিন পালনের এক রীতির শুরু। ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো প্রতি বছর ২১ মার্চ তারিখে এ দিন পালনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়।
আজ ’বিশ্ব কবিতা দিবস’ (World Poetry Day)। গোটা বিশ্ব যে দিবস পালন করছে তা আমরা কতোটা জানি-মানি পালন করি! কবিতাকে কতোটা ব্যবচ্ছেদ করি, কবিকে করি কতোটা! কাব্যচর্চা বা কাব্য আন্দোলন আসলে কোথায় পড়ে আছে আমাদের নিজেদের দেশে সমাজে কী সাহিত্য চর্চার ডেঁরায়।
বইমেলা প্রাণের মেলা। দীর্ঘ একটা মাস ধরে এমন বইমেলা পৃথিবীর কোথাও হয়না। লেখক-কবি-প্রকাশক-পাঠক সবার জন্য এমন একটা মেলা নিঃসন্দেহে দারুন প্রাণসঞ্চারী ভাব বিনিময়, কৃষ্টির চর্চা এবং প্রসারের এক মহামঞ্চ হবারই কথা। তা হবার জন্য এর চেয়ে বড় কোনো আয়োজন-উৎসব এদেশে নেইও। এক সময় বাঙলা একাডেমীর প্রাঙ্গন জুড়ে বসতো এ সৃজনশীলতার মেলা। গোটা প্রাঙ্গনে বইয়ের স্টল নিয়ে প্রকাশকরা সাজিয়ে তুলতেন নতুন পুরোনো সব প্রকাশনার এক আলোকজ্জ্বল গ্রন্থসমাবেশ।