শিক্ষকের ডায়রি (পর্ব ১৬) – আত্মনির্ভরশীলতায় আত্মসম্মান

শিক্ষকের ডায়রি (পর্ব ১৬) – আত্মনির্ভরশীলতায় আত্মসম্মান

oplus_131105


oplus_131074

ছেলেটার নাম জয়। সে ফেনী ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের ছাত্র। প্রথম ছবিটা ক্যাম্পাসের মাঠে তোলা, পেছনের অটোরিক্সাটা তার নিজের। দ্বিতীয় ছবিটা ফেনী পুলিশ লাইন্স ক্যান্টিনে তোলা, একজন সার্ভার তুলে দিয়েছেন ছবিটা। ছেলেটার বাবা এখন কৃষক, মা গৃহিনী, আর সে নিজে ক্লাস এবং পড়াশোনার ফাঁকে অটো চালায়। সেটা নিয়ে তার মাঝে বিন্দুমাত্র সঙ্কোচ নেই। আমার সাথে সে প্রচুর গল্প করে, বিশেষ করে বাড়িতে গেলে তার মা কি কি লোকাল ফুড বানিয়ে খাওয়ায়, সেসবের গল্প। আমি মন ভরে তার ছোট ছোট ইমোশনে ভরা ম্যাজিক্যাল গল্পগুলো শুনি। কি যে ভাল লাগে।

আমি এই ছেলেটাকে, কিংবা হয়তোবা তার পার্সোনালিটিকে, অনেক সম্মান করি। ক্যাম্পাসে যে কোন শিক্ষকের কোথাও আসা যাওয়ার পথে সে সামনে থাকলে সেই সকলের প্রেফার্ড বাহক। আমার তো বলা চলে প্রায় নিয়মিতই। প্রায় প্রতি সকালেই হয় সে আমাকে ফোন দেয়, নয়তো আমিই তাকে ফোন দেই। আমাকে প্রায় দিনই সে বাংলো থেকে ভার্সিটি আনা-নেয়া করে। কোনদিনই জোর করেও দশটা টাকা বেশি ভাড়া তাকে আমি দিতে পারিনি। একদিন বেশ কিছু সময় নিয়ে নানান জায়গায় ঘুরে জোর করে একটা একশ টাকার নোট দিয়ে তাড়াতাড়ি সরে গিয়েছিলাম বলে পরদিন সে আমার কাছে কোন ভাড়াই নেয়নি। সেদিন থেকে আমি ভাড়া নিয়ে আর জোরাজুরি করি না। কে জানে, হয়তো আমার অজান্তেই তার আত্মসম্মান আহত হয়েছে বা হতে পারে। তবে আমি যেদিনই বলি, “চল চা খাই”, সে তাতে না করে না। আমার মতন তারও চায়ের নেশা আছে। তবে ওই চা পর্যন্তই। এক কাপ চায়ের বাইরে আর কিছুই তাকে জোর করেও খাওয়ানো যায় না।

চলতে ফিরতে অনেক কথা হয়, সে ভীষণ কিউরিয়াস। সে যদি মনে করে, এই মানুষটার কাছে আমি এই জিনিষটা শিখতে/জানতে পারি, তাহলে সেই মানুষটাকে সে প্রচুর প্রশ্ন করে, যেমন আমাকে। আমি কোন কিছুতে জ্ঞান রাখি বা না রাখি, আমার চলন-বলন, ক্যাডেট কলেজ ব্যাকগ্রাউন্ড, ইংরেজির নানান বিষয়, সেন্স অফ ডিসিপ্লিন, এসবে তার আগ্রহের শেষ নেই। আমাকে নিতে বাংলোতে এসে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হলে সে নিচতলায় একটা চেয়ারে বসে পড়তে থাকে। ক্যাম্পাসেও দেখি তার অটোরিক্সাটা মাঠে পার্ক করে হয়তো কোন একটা বিল্ডিঙের নিচতলার কোন কোনায় বসে পড়ছে। আমি বা অন্য কোন শিক্ষক তার বাহন পার্ক করা দেখলেই তাকে কল দিলে সে মুহূর্তেই চলে আসে।

মাঝে মাঝে নিজের কথা ভাবি, আমার বাচ্চাটার কথা ভাবি। আমাকে এমন কষ্ট করতে হয়নি, আমার বাচ্চাটাকেও এমন কষ্ট করতে হচ্ছে না। আমি যেখানেই তার অটোতে চেপে যাই, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে অন্যদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেই। এতে করে সে খুশি হয় কিনা তা অত বেশি ঠিক বুঝতে পারি না, তবে সাথে সাথেই তার প্রতি অন্যদের যে সম্মানের দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হয়, সেটা ঠিকই বুঝতে পারি।

আহমদ মাহবুব-উল-আলম
(এক্স-ক্যাডেট, সিসিআর, ১৯৮৮-১৯৯৪)
সহযোগী অধাপক (ইংরেজি) ও ডিন (এক্টিং)
কলা, সামাজিক বিজ্ঞান, এবং আইন অনুষদ
ফেনী ইউনিভার্সিটি, ফেনী-৩৯০০, বাংলাদেশ

৪১ বার দেখা হয়েছে

১টি মন্তব্য “শিক্ষকের ডায়রি (পর্ব ১৬) – আত্মনির্ভরশীলতায় আত্মসম্মান”

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।