বুলেট খরচ না করেই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ জিতে চীন। কথিত আছে, তাদের ল্যাবরেটরীতে তৈরী করা করোনা ভাইরাস কোভিড অতিমারির কারণ। বিশ্বব্যাপী সেই মহামারি থেকে বাঁচতে লকডাউনের বকলমে মানুষ নিজেদের ঘরবন্দী করে। নিতান্ত প্রয়োজনে বাইরে বের হত মুখোশ পরে। প্রকৃতির সবচেয়ে বড় ক্ষতি করে মানুষ। তাদের ঘরবন্দী থাকাকালে ক্ষতি গ্রস্ত প্রকৃতির নিরাময় শুরু হয়। সমুদ্র সৈকতের কাছাকাছি আবার দেখা যায় ডলফিন। লুপ্তপ্রায় প্রাণি বা উদ্ভিদের খোঁজ পাওয়া যেতে তাকে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে। কিন্তু বিষয়টি ক্ষমতা মেরুর নিকটবর্তীদের নজরে আসেনি। তাদের গোঁয়ার্তুমির ফলে একটি পারমাণবিক যুদ্ধ। হিরোশিমা নাগাসাকির বিপর্যয় আরও বড় আকারে নেমে আসে, এবার পৃথিবী জুড়ে। অতঃপর ধ্বংস স্তুপ থেকে আবার আস্তে আস্তে জাগতে শুরু করে মানব সভ্যতা। যা কিছু প্রকৃতি থেকে কেড়ে নেয়া হয়েছে তার সবই ফেরত দিতে হবে। অন্যথায় ধ্বংস অনিবার্য। প্রকৃতির ক্ষয়ক্ষতি নিরাময়ের দায়িত্ব মানুষেরই। নীতিনির্ধারকদের মতে সেটি মানবিকতার চূড়ান্ত প্রতিশ্রুতি। এখন যাবতীয় কর্মকাণ্ড সুশৃঙ্খলতার সাথে পরিবেশ সচেতন ভাবে করা হয়। ছোট থেকেই মানব শিশুদের এসব শেখানো হচ্ছে। ভাগ্যক্রমে তার কিছুটা পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ পেলাম।
একটা অফহোয়াইট তিন তলা বিল্ডিংয়ের নিচতলায় নার্সারি স্কুল। নার্সারিটির কেবল করিডোরই নয় ক্লাস রুম গুলোর ভিতরেও সারিবাঁধা টবে বাহারি ফুলের মেলা। কয়েকজন কর্মকর্তার সাথে ঘুরে ঘুরে দেখলাম। পড়াশোনার মৃদু গুঞ্জনের বাইরে অতিরিক্ত শব্দ নেই। কান্না কিংবা হাসির শব্দও নয়। টবের সতেজ গাছগুলোর কাছে গেলে অদৃশ্য মায়ার স্পর্শ। একটি সাইনবোর্ডে লেখা – আমরা সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে পরিবেশের নিরাময় করি। কার্বন সংরক্ষণ করে প্রাকৃতিক পরিবেশের স্বাস্থ্য উন্নত করি। যা কিছু প্রকৃতি থেকে হারিয়ে গেছে তা পুনরুদ্ধার করে প্রকৃতিতে ফিরিয়ে দেই। প্রকৃতির সন্তান মানুষের সবচে বড় দায়িত্ব এটাই। এখানে সবকিছুই মানবিক। এমনকি ফুলের টবের মাটিও। দেশ ও জাতির স্বার্থে মানবিক হোন। বিস্তারিত জানতে পাশের স্ক্যনার স্পর্শ করুন। স্বেচ্ছাসেবকরা আপনার সাথে যোগাযোগ করবে।
নার্সারি ভবনের উত্তর দিকে ঢালু কনক্রিটের পথে আধা কিলো হাঁটার পর বাম দিকে পরস্পরকে ছেদ করা অসমান দুটো বৃত্তাকার কটকটে হলুদ এবং কালো ডোরাকাটা ভবন চোখে পড়ে। দক্ষিণের বৃত্তটির ব্যাস উত্তরের বৃত্তের দুই-তৃতীয়াংশ। দক্ষিণের ভবনটিতে বড় একটি লোগো। কাল রুপ রেখায় সবুজ ভরাট দেয়া তিনটি ধাওয়া করা তীর যা মোবিয়াস স্ট্রীপে ভাঁজ করা। মাঝে পৃথিবীর আইকনের উপরে লেখা নিরাময়। উত্তরের ভবনে তেজস্ক্রিয় পদার্থের সতর্কতা চিহ্ন। দক্ষিণের ভবনের পশ্চিমে প্রায় তেতলার মতো উঁচু একটা এক্সক্যাভেটার। দক্ষিণের ছোট ভবনটির ছাদে পাঁচজন খনির শ্রমিকদের মত পোশাক পরা। তাদের মাথায় টর্চ যুক্ত হলুদ হেলমেট। তারা ইশারায় কিছু একটা আলাপ করছে। উত্তরের ভবনের ছাদে গোলাকার হ্যাচের উপর একজন সবুজ-কালো মোটা স্ট্রাইপড শার্ট-প্যান্ট পরা। মাথায় হাঁস ক্যাপ। অভিব্যক্তিহীন মুখ। মাঝে মাঝে ইঞ্জিনের শব্দ আসছে।
হঠাৎ পিছনে তাকিয়ে দেখি আমার ছেলে তারই সমবয়সী এক কিশোরের সাথে হেঁটে আসছে। খারাপ কিছু দেখে ফেলতে পারে এমন অনুভব থেকে তাকে মাথা নেড়ে ইশারা করি যেন সে এদিকে না আসে। বোঝা যাচ্ছিল ঐ কিশোর হ্যাচের উপর দাঁড়িয়ে থাকা লোকটির ছেলে। তার পোশাকও তার বাবার মত। সবুজ-কালো স্ট্রাইপড শার্ট-প্যান্ট। মাথায় ক্যাপ। ছেলেটির মন খারাপ। সে হাত নেড়ে, মাথা নাড়িয়ে ইশারায় তার বাবাকে কিছু একটা নিষেধ করছিল কিংবা কিছু জানতে চাচ্ছে। কিন্তু তার বাবা বারবার ডানে বামে মাথা নাড়ে। সে কোন কথা বলতে রাজি নয়। তবে মুখে এক অচেনা মলিনতা। আমি একবার লোকটির দিকে তাকাই আরেকবার ছেলেটির দিকে তাকাই। হঠাৎ ইঞ্জিনের ঘরঘর শব্দ। লোকটির দাড়িয়ে থাকা হ্যাচ আস্তে আস্তে নীচে নামতে শুরু করে।
ছেলেটি শূন্য দৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে।
নিরাময় ঘর
©টিটো মোস্তাফিজ
[ ফিচার্ড ফটোটি চ্যাটজিপিটির মাধ্যমে প্রস্তুত করা ]
সুন্দর ফিকশন। একদিন এমনই হবে। পৃথিবীতে এর আগে যত প্রাণী এসেছে বা বিলুপ্ত হয়েছে কোনটাই নিজেদের দোষে হয়নি। কিন্তু মানুষ হবে, এরা এতটাই নির্বোধ যে বিলুপ্ত হবার জন্য অন্য কাউকে লাগবে না।
মানুষ* হতে চাই। *শর্ত প্রযোজ্য
হ্যাঁ, আমার আশঙ্কা এমনটিই। আসলে এটি আমার একটি প্রলম্বিত দুঃস্বপ্ন। গল্পের রূপ দেয়ার চেষ্টা করেছি।
পুরাদস্তুর বাঙ্গাল