এটা কোন গল্প নয়। কোন অনুধাবনও নয়; আবার হতেও পারে। আসলে এই লেখাটাকে আমার সামান্য কিছু স্মৃতির দিনলিপি বলা যেতে পারে। লেখাটার টাইটেলের সাথে পুরো লেখাটার মিল নাও থাকতে পারে।
বছরখানেক আগে আমার একটা স্টুডেন্ট ছিলো।সদ্য ইন্টারমিডিয়েট সেকেন্ড ইয়ারে ওঠা।ঢাকার মোটামুটি নামজাদা কলেজের।কাছাকাছি বয়সের হওয়ায় পড়াশুনার চেয়ে ওর সাথে গল্পগুজবই হত বেশি।তাসরীফের(আমার ছাত্র) একটা প্রেমিকা ছিলো,ওর ৩বছরের ছোট(ক্লাস নাইন পড়ুয়া),একটা ব্যান্ড টীম ছিলো নাম COOL-5,একটা ফুটবল ক্লাব ছিলো,নাম ভুলে গেছি,সেইসাথে ভিডিও গেমস খেলার প্রচন্ড নেশাও ছিলো।পড়াতে বসলেই এসব কথা উঠে আসত।ও ওর স্বপ্নের কথা বলত।গার্লফ্রেন্ডকে পালিয়ে নিয়ে দার্জিলিং যাওয়ার স্বপ্ন,ব্যান্ডটীম নিয়ে রকনেশানে যাওয়ার স্বপ্ন,একটা এক্সবক্স কেনার স্বপ্ন,আরো অনেক কিছু।কিছু মাথায় ঢুকত,কিছু মাথার উপর দিয়ে চলে যেত।এরপরেও হাসি হাসি মুখ করে মাথা নাড়তাম ওর কথা শুনে।কোন পরামর্শ দিতাম না,পাছে যদি আমার অজ্ঞতা প্রকাশ পেয়ে যায়।কারণ ঠিক ওই বয়সে,সদ্য দ্বাদশ শ্রেণীতে ওঠার পরে আমার একটাই স্বপ্ন ছিলো,কলেজে একটা মোবাইল ফোন ফোন নিয়ে যাওয়া!!!
ছেলেগুলোর সাথে প্রথম দেখা একটা প্রাচীর ঘেড়া জায়গায়। ছয় ফিট উঁচু প্রাচীরের এক পাশে ট্রেন লাইন এগিয়ে গেছে বহু দূর।আরেক পাশে সবুজ রংগা পাহাড় আকাশের কোল ঘেঁষে দাড়িয়ে আছে। জায়গাটা বাংলাদেশ মিলিটারী একাডেমী। জানুয়ারী মাসের এক রাতে ওদের একজনের সাথে প্রথম পরিচয়।ওরা ফিলিস্তিনি। খবরের কাগজ বা টিভী পর্দার বাইরে এই প্রথম ওদের দেখলাম। দেশ ছেড়ে,পরিবার ছেড়ে আমাদের দেশে এসেছে সামরিক প্রশিক্ষণ নিতে।। বয়স আঠার পেরোইনি কারো।তবে এ বয়সেই বেশ সুপুরুষ।
“Which one for you dear?”
একটু অবাক হয়েই উপরে তাকিয়ে দেখি একজন বয়স্কা মহিলা হাতে একটি ক্লিপবোর্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে। বুঝতে পারিনি আমাকেই জিজ্ঞেস করা হচ্ছে কিনা।
আসলে অনেক্ষন ধরেই বসে আছি এই অজানা জায়গাতে। একটি বড় রুম। রুমের এক সাইডে একটি বড় টিভি। আর সাথে টিভি দেখার জন্যেই বোধহয় অনেক গুলো চেয়ার রুম জুড়ে গোল করে সাজানো। আমি একা নই,
মনিষী বলেছিলেন -‘জীবনে শুধু তিনটি জিনিষের প্রয়োজন। আর তা হল বই,বই এবং বই’।
কথাগুলার মর্মার্থ বুঝতে আমারও বেশী দিন লাগে নি ।আগে টুকটাক বই পড়লেও ,বইয়ের নেশা মূলত চেপে ধরে ক্যাডেট কলেজে ভর্তি হবার পর । কলেজ এর সুবিশাল পাঠাগার দেখে নিজেকেই হারিয়ে ফেলতাম । বই,বই আর বই । সব ধরনের বই সুন্দর করে সাজানো । সপ্তম শ্রেণীর এই পুচকে তখনি একটা নিয়ত করে ফেলে,
মাথা নিছু করে কাঁদছিলাম আম্মুর হাত ধরে। কিন্তু ওসির কথায় সম্বিত ফিরল।আমি থাকতে আরিফ হাজতে ঢুকবে! আহারে, আমার জন্য বেচারা আর কত কষ্ট করবে!
আমিঃ আব্বু, আমার ১৮ বছর হয়েছে। আমার জন্ম ১৯৮৪ সালের ৫মে।
ওসিঃ উনি কি ঠিক বলেছেন?
আব্বুঃ হ্যা।
ওসিঃ তাহলে আপনি বাবা হিসেবে কেস তুলে নিতে পারেন
আমিঃ আমাকে কেউ জোর করে আনেনি এখানে।
তখন বয়স আর কত হবে, মনে হয় ক্লাস ১ এর মাঝামাঝি টাইমের কথা এটা। আমি যেখানে থাকতাম, সেখান থেকে আমাদের থানা সদরের (মনোহরদীর) একমাত্র বাজারটির দূরত্ব ১ কিলোমিটারের কিছু কম। বাচ্চাকালে বাসার পাশে স্কুলে হেঁটে গেলেই অবস্থা খারাপ হয়ে যেত (লুতুপুতু বাচ্চা আছিলাম আর কি!!), আর ১ কিলোমিটারের মত হাঁটা তো অনেক কিছু। তখন আবার ঘুড়ি উড়ানোর সিজন চলছিলো। বাসার সামনের মাঠে, পাশের ধানক্ষেতের উপরের আকাশ বিকালবেলা ভরে যেত নানা রঙ-বেরঙয়ের,
সিরিয়াল ২১
২২ ডিসেম্বর, ২০০২, বাসর নাকি বেদনার আসর!
পুলিশঃ আপনি আমার সাথে আসেন(আমার দিকে তাকিয়ে)।কি নাম?
আমিঃ শর্মিলী
পুলিশঃ আনোয়ার হোসেন
পুলিশঃ বয়স কত?
আমিঃ ১৮
পুলিশঃ দেখেতো মনে হচ্ছে না। কাগজ দেখান
আমিঃ আমার কাছে কাগজ নেই স্যার
পুলিশঃ তাহলে বুঝব কিভাবে এটা বাল্যবিয়ে না?
আমিঃ স্যার মে মাসেই আমার ১৮ হয়ে গেছে।
সরগরমে কাবাব বানায় যে ছেলেটা সে আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে দিয়ে ব্যস্ত হয়ে কাবাব বানাচ্ছে। সন্ধ্যায় ভালই ট্য্রাফিক থাকে। তার ঠিক সামনেই পার্কিং লটে একটা সাদা রঙের মিনি পিক আপ ভ্যান। আশেপাশে প্রচুর নাগরিক ব্যস্ততা। হঠাৎ কথা নাই বার্তা নাই একটা লোক, বয়স ত্রিশের কাছাকাছি, একটা স্যান্ডো গেঞ্জি আর পুরনো জিন্স পরনে, পিক আপে উঠে গেল। মোচ-দাড়িওয়ালা লোকটাকে চে’র অনুচর বলে ভুল হয়। সে মুষ্টিবদ্ধ দুই হাত উপরে তুলে হুট করে তারস্বর শ্লোগান শুরু করল
“ব্রা আ আ আ আ আ জিল,
রোদ নেই,বৃষ্টি নেই।মেঘলা অলস দুপুর। আমি রুমের দরজা জানালা খুলে, বিছানার কিনারে চিৎ হয়ে অর্ধেকটা শরীর ঝুলিয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছি। ফ্রেঞ্চ রেডিও স্টেশনটাতে একের পর এক অপার্থিব গান বেজে যাচ্ছে। কয়েকদিন হল এটার প্রেমে পড়েছি আমি। আমি অবসেসিভ মানুষ, প্রেমে পড়ে গেলে উঠতে পারি না। মাঝেমাঝে চোখ মেলে উল্টো পৃথিবী দেখছি, সিলিং এর মরচেধরা লোহার বীম গুনছি। হুড়মুড় করে বিষাদ-বাতাস এসে দুলিয়ে যাচ্ছে সিলিং এর ঝুলগুলোকে।
প্রত্যেক সফল পুরুষের নেপথ্যে থাকে একজন নারী। এই যেমন আমি। সাধারণ দেখোয়াড় থেকে বিশ্বকাপ দেখোয়াড় হয়েছি। শ্রেষ্ঠতর অর্ধাংশের অনবদ্য অনুপ্রেরণায় পদোন্নতি ঘটতে চলেছে। এবার হব রাজ দেখোয়াড়। বিশ্বকাপ ফাইনাল ছাড়া ফুটবল খেলা দেখবনা।পদোন্নতি ঘটলেই যে পরমানন্দ লাভ করা যায় তা কিন্তু নয়। আমাদের মহামান্য রাষ্ট্রপতি কিন্তু তাঁর আগের জীবনকে ঈর্ষা করেন।আমিও করছি। এলোমেলো অনেক কথাই মনে হচ্ছে তাই।
ব্রাজিলের সমর্থকরা নিজেদের ফুটবল বোদ্ধা মনে করে আর অন্যদের আঁতেল ।
ভাল, আমরা(ইনক্লুডিং মি) এখন বড় হয়ে গেছি। আমরা এখন জীবনের অনেক বড় বড় বিষয় নিয়ে ব্যাস্ত। এসব ছোটবেলার ফালতু বিষয়ে নষ্ট করার মত সময় আমাদের হাতে নাই। আমরা এখন প্রাগমেটিক। আমরা এখন জীবনের বড় বড় কঠিন সব ভারী বোঝা টানার জন্য নিজেদের জীবনের ছোট ছোট ভাল লাগাগুলোকে ত্যাগ করতে শিখেছি।
১৬বছর আগে এই দিনের এমন সময় মন খারাপ করে বাপের চৌদ্দ গুষ্টী মনে মনে উদ্ধার করতে করতে পাবনা ক্যাডেট কলেজের দিকে যাচ্ছিলাম।
সিরিয়াল ১৯
২২ ডিসেম্বর, ২০০২ বর কোথায়!
বারবার ফোন করেও বরের জবাব নেই। সবাই ভাবল হয়ত বর সিদ্ধান্ত বদলিয়েছে বিয়ের। হয়ত আমাকে চলে যেতে হবে বিয়ে না করেই। কেবল আমি ভয়ে ছিলাম নিশ্চয়ই আমার আরিফ এর কিছু হয়েছে। না হলে আমাকে অপেক্ষা করাবে! জীবনেও না।আজকের দিনটার জন্য এত বছর অপেক্ষা করেছে।এতক্ষণে বাসায় ফিরে যাবার কথা।কিন্তু বিয়েই হল না। বাসায় কি বলব। ভয়ে আমার জীবন যায় যায়।