পুরোনো ঢাকার কড়চা

১।

পুরোনো ঢাকা- আসলে কত পুরোনো? ফরাশগঞ্জ লাল কুঠির সামনে দাঁড়িয়ে কথাটা ভাবছিলাম। অনেকেই হয়তো তড়িৎ জবাব দেবেন, কেন? চারশো বছর! এই চারশো বছরটাও একেবারে কম নয়, আমার চতুর্দশ পূর্বপুরুষেরো আগেকার কথা। আজকের পৃথিবীর অনেক ভারি ভারি শহরের চেয়েও আগের। আমি এখানে সবিনয়ে দ্বিমত করবো। এই ‘চারশো বছর’ কথাটা আসলে এসেছে সুবাদার ইসলাম খাঁ এর সূত্রে, যখন নাকি প্রবল প্রতাপ মোঘল সম্রাটের সুবাদার ইসলাম খাঁ এখানে সুবে বাংলার রাজধানী স্থাপন করেছিলেন। কিন্তু, পেছনের কোন ইতিহাস বা কার্যকারন ছাড়া, এক আলোকোজ্জল সকালে, হঠাৎ এক নদীর কিনারে শাহী নাওয়ারা ভিড়িয়ে, সুবাদার সাহেব ঘোষনা করলেন- “আজ থেকে এই হোল রাজধানী!” জনশূন্য এক প্রান্তরে, সেনা ছাউনি নয়, গঞ্জ-বাজার নয়, আচমকা একেবারে গোটা একখানা রাজধানী- ঠিক যুক্তিসঙ্গত মনে হয় না। আমার ধারনা, সেখানে আরো অনেক আগে থেকেই লোকালয় ছিল, বিশেষ করে এর কৌশলগত অবস্থানটি লক্ষ্যনীয়। এর বাণিজ্যিক ও সামরিক সম্ভবনার ব্যাপারটি নিশ্চয়ই সেকালের বিচক্ষন মানুষদের নজর এড়িয়ে যায় নি।

ঢাকার নাম নিয়েও বিস্তর গবেষণা আছে। কেউ বলেন, জঙ্গলের ভেতরে দেবী প্রতিমা পাওয়ার কাহিনী, তারপর ঢাক পিটিয়ে তার প্রচার এবং দেবীর প্রতিষ্ঠা, এরপরে ঢাকেশ্বরী হয়ে সংক্ষেপে ঢাকা নামে এই জনপদের পরিচিতি। আবার কেউ বলেন, এখানে শিমুল গাছের ঘন বন ছিল, যা তুর্কি ভাষায় দক্কা, সেই থেকে ঢাকা। এমনি আরো কত তত্ত্ব। আমি অবশ্য এর কোনটাই পুরোপুরি বিশ্বাস করি না। দরকার কি? দুনিয়ায় বেশিরভাগ জায়গারই নামকরনের কোন মাথামুন্ডু নেই। তারচেয়ে থাক না রহস্যময় ধোঁয়াশায় ঢেকে এই শহরের ইতিবৃত্ত- সেই ভালো।

আগেই বলে রাখি, এই লেখাটা ইতিহাসের পাঠ নয়, নয় ঢাকা ভ্রমন সহায়িকা, নয় “ঐতিহাসিক লালবাগ কেল্লা” জাতীয় শিক্ষামূলক কোন রচনা। বাহান্নো বাজার-তিপ্পান্ন গলির শহর এই পুরোনো ঢাকা। সেই অলিগলির ভেতরে ঘুরে বেড়ানোর একটা মজা আছে। নতুন ও পুরাতনের এক অদ্ভূত মিশ্রন, লোকের ঘিঞ্জি ভীড় থেকে হঠাৎ নির্জন প্রকান্ড কোঠাবাড়ী, আর হাজারটা পণ্যের পাইকারি বাজার, বুড়িগঙ্গা নদী, ভুলে যাওয়া কারো নামে সরু গলি- সব মিলিয়ে কেমন নেশা জাগানো ব্যাপার। তাই ওখানে ঘোরাফেরা করি- নির্দিষ্ট কোন কারন ছাড়াই। আর ঘুরতে ঘুরতে যা দেখি, যা ভাবি, তারই কিছুটা এই লেখায় ধরতে চেয়েছি মাত্র। সতর্ক পাঠক এই লেখাতে অনেক ভুল পাবেন, কেননা এটা লেখার জন্য তেমন কোন গবেষণা করা হয়নি। তাই আগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।

লালকুঠির সামনে থেকে আমার কথকতা শুরু। ঢাকা নিয়ে বিস্তর গবেষণা করেন এমন একজনের একটা বই ঘাঁটাঘাটি করে কোথাও লালকুঠি নামটি খুঁজে পাইনি, তবে নর্থব্রুক হল নামটা আছে। এরপরে নানা লক্ষন মিলিয়ে, এবং অপেক্ষাকৃত কম বিখ্যাত লেখকের বই দেখে, নিশ্চিত হয়েছি যে, ওটাই লালকুঠি! রুপলাল হাউস, নবাব কাটরা- এগুলো নিয়েও একই রকম ভোগান্তি। বইয়ে শুধু নাম লিখেই খালাস- কোথায় আজকের কোন মহল্লায় কোন রাস্তায় যে ওগুলো আছে তার কোন সুলুক সন্ধান নেই! যাকগে, নর্থব্রুক নামের একজন ইংরেজ রাজপুরুষকে সংবর্ধনা দেবার জন্য নাকি স্থানীয় জমিদার বাবুরা চাঁদা করে ওটা বানিয়েছিলেন। এলাকাটা ফরাশগঞ্জ- এক কালে ফরাসী দেশের মানুষেরা এখানে বাস করতো। ফ্রেঞ্চ রোড নামে একটা রাস্তাও আছে কিছু তফাতে। কিছুদিন আগেও লালকুঠিতে বিয়েশাদি ইত্যাদি সামাজিক আচার অনুষ্ঠান হোত। এখন ঝুঁকিপূর্ন বলে তালাবদ্ধ থাকে। পাশের একদা প্রশস্ত আঙ্গিনায় বিকট আকারের দুটো দালান উঠেছে, বিকল্প হিসাবে। ক্লাবঘর, কমিউনিটি সেন্টার, আরো কি কি যেন। কিছু মানুষ সারাক্ষন সেখানে আড্ডা দিচ্ছেন। সামান্য বাগানের চিহ্ন আছে। কে জানে, গোটা স্থাপনাটাই হয়তো উন্নয়নের গাঁইতির জন্য অপেক্ষা করছে।

লালকুঠির ঠিক পেছনের সীমানা ঘেঁসে রাস্তা, বুড়িগঙ্গা নদীর সমান্তরাল। সেদিকে এগোই, দক্ষিনে নদীর দিকে। দুপাশে আলু পেঁয়াজ আদা রসুনের বিরাট সব আড়ৎ। দৈত্যাকার ট্রাক থেকে কুলিরা বস্তা নামাচ্ছে- গুদামের ভেতরে ছাত পর্যন্ত সাজিয়ে রাখা হচ্ছে সেসব। আবার সেখান থেকে রিক্সা ভ্যান ঠেলাগাড়িতে চাপিয়ে অমানুষিক পরিশ্রম করে সেসব পণ্য নিয়ে যাচ্ছে আরেকদল মানুষ। মালিক বা মহাজন লম্বা টালি খাতায় ধীরে সুস্থে হিসাব লিখছে, বেশ নির্লিপ্ত ভাব। ঝাঁঝালো গন্ধে ভরা রাস্তায়, রিক্সা আর ব্যাস্ত পথিকের পাশ কাটিয়ে সাবধানে যেতে যেতে পৌঁছে যাই বুড়িগঙ্গা তীরে- লালকুঠি ঘাট।

২।

আজ ঘোরাঘুরি শুরু বাহাদুর শাহ পার্ক থেকে। এর আদি নাম আন্টাগড়ের ময়দান। ইংরেজ আমলে নাম হয় ভিক্টোরিয়া পার্ক। সিপাহী বিদ্রোহের পরে অনেক সৈনিককে এখানে গাছে ঝুলিয়ে ফাঁসি দেয়া হয় বলে শুনেছি। ইংরেজ বিদায়ের পরে এর নাম হয় ভারতের শেষ মোগল সম্রাট বাহাদুর শাহের নামে। সাম্রাজ্য বলতে অবশ্য তখন তাঁর তেমন কিছুই ছিলো না, মোগল গৌরব সূর্য বহু আগেই ডুবে গেছে। দিল্লীর সিংহাসন নিয়ে বিভিন্ন শক্তি টানা টানা হেঁচড়া করছে বহুদিন ধরেই। এবং ইতিহাসের অমোঘ পথ ধরে, সারা ভারত জুড়ে অনৈক্য, বিশৃংখলা আর হানাহানির সু্যোগে, দূর দ্বীপের বাসিন্দা শ্বেতকায় ইংরেজ হয়ে উঠেছে এই বিশাল ভারতের শাসক। সিপাহী বিদ্রোহের সময় খুঁজে পেতে বৃদ্ধ শাহকে আবারো সিংহাসনে বসায় সিপাহীরা, তাঁর প্রতীকী মূল্যের কারনে। আর সে জন্যই বোধহয়, দিল্লীর পতনের পর, বাহাদুর শাহের সন্তানদের হত্যা করলেও, ইংরেজ তাঁকে হত্যা না করে নির্বাসন দেয় একেবারে ভারতবর্ষের বাইরে, সুদুর বর্মা মুলুকে। তাঁর সমাধি আছে রেঙ্গুনের আশে পাশে কোথাও। হতভাগ্য বাদশাহ কাব্যপ্রিয় এবং নিজেও কবি ছিলেন। তাঁর কলমে তাই বের হয়েছে দীর্ঘশ্বাসঃ

কিৎনা হ্যায় বদনাসীব যাফর দাফন কে লিয়ে

দো গয যমীন ভি না মিলি কুয়েঁ ইয়ার মে

পার্কে দাঁড়ালে এসব কথা অজান্তেই ভেসে উঠে মনে। পার্কের এক কোনে বিরাট উঁচু স্মৃতিসৌধ। যথেষ্ঠ ভীড়, নানা বয়েসের মানুষ চানাচুর ঝালমুড়ি চীনাবাদাম খেতে খেতে আড্ডা দিচ্ছে। অনেকে আবার স্বাস্থ্য সচেতন, বাঁধানো গোল পথটা ধরে চক্কর দিচ্ছেন। নিয়মিত যারা হাঁটেন তাদের একটা ক্লাবও আছে মনে হয়, সেরকম একটা সাইন বোর্ড দেখলাম। আবার কারা যেন বিনে পয়াসায় সেখানে মানুষের রক্তচাপ, ওজন, ডায়াবেটিস সহ আরো কটা কঠিন রোগ শনাক্ত করে থাকে- এই মর্মেও একটা ব্যানার ঝুলছে। গোল পার্কটার চারপাশে রাস্তায় বিকট শব্দে হর্ন বাজিয়ে চলছে রাজ্যের গাড়ীঘোড়া। ইংরেজ মুক্ত দেশে এই প্রানের বন্যা দেখে হয়তো সেই বীর সিপাহীদের আত্মা শান্তি পায়।

এখান থেকে তিনটা রাস্তা তিন দিকে চলে গেছে। একটা গেছে পূবে, লক্ষ্মীবাজারের দিকে। বেশি পথ নয়, কিন্তু এইটুকুন দূরত্বের মধ্যেই আছে নিদেন গোটা ছয়েক নামজাদা পুরোনো স্কুলকলেজ। এর মধ্য সেন্ট গ্রেগরীজ তো খুবই বিখ্যাত। আর আছে একই রকম প্রাচীন কয়েকটি গীর্জা। প্রতিষ্টান গুলোর পুরোনো লাল ইঁটের দরদালান আজো আছে। এত কাছাকাছি এতগুলো বিদ্যাপীঠ দেখে অনুমান করা যায়, এই এলাকা অনেক আগে থেকেই শিক্ষা দীক্ষার এবং নাগরিক জীবনের কেন্দ্রবিন্দু ছিল। কথাটা আরো জোরালো হয় যদি বলি, পার্ক থেকে দক্ষিন মুখো রাস্তা ধরে একটু এগোলেই পড়বে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (আগে কলেজ ছিল), ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল, এবং ব্রাহ্মসমাজ লাইব্রেরি। তার পাশেই বাংলাবাজার- প্রকাশনা শিল্পের একেবারে পীঠস্থান। এদেশে এমন কোন বইয়ের প্রকাশক আছেন কিনা সন্দেহ যাঁদের একখানা অফিস বা শোরুম এখানে নেই। ছাপাখানা গুলোও এদিকেই। আরো আছে পুরোনো বইয়ের বিশাল বাজার।

লক্ষীবাজার গিয়ে রাস্তাটা হঠাৎ বাঁক নিয়েছে ডানে। সেই বাঁকের মুখে শহীদ সোহরাওয়ার্দি কলেজ। কলেজের গেটের লাগোয়া বাড়িটি সব্যসাচী লেখক সৈয়দ সামসুল হকের পৈত্রিক ভিটে। সেখান থেকে আবারো এলো মেলো হাঁটা হাঁটি, কখনো রিক্সায় চেপে অলিগলি ঘোরাঘুরি। কোন নির্দিষ্ট ভৌগলিক সম্বন্ধ ছাড়াই কিছু নাম বলছি। হরনাথ ঘোষ রোড, গির্দা উর্দু রোড, দীননাথ সেন রোদ, সতীশ সরকার রোড, এস কে দাশ রোড, আর এম দাশ রোড, প্যারীদাস রোড, গোবিন্দ দত্ত লেন, পাতলা খান লেন, নবদ্বীপ বসাক লেন, শ্যামা প্রসাদ লেন, চিত্তরঞ্জন এভেনিউ, হেমেন্দ্র দাস রোড, আগা সাদেক রোড, কাজি আলাউদ্দিন রোড, মাজেদ সর্দার লেন। এমনি আরো হাজারটা ইতিহাসের গন্ধমাখা পথ মাকড়শার জালের মত ছড়িয়ে আছে সমস্ত এলাকা জুড়ে।

পুরোনো ঢাকার আদি বনেদী রূপ এখন খুঁজে পাওয়া কঠিন। আগেকার ঘরবাড়ি প্রায় সবই ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। সেখানে উঠেছে অতি কুৎসিত সব কংক্রীটের দানব। তারপরো, এসবের আড়াল থেকে কখনো উঁকি দেয় সেকালের দু’একটা ভবন। যত্নের অভাবে বয়েসের ভারে মলিন, জীর্ন, দেয়ালে বট-অশ্বত্থের  বাড়বাড়ন্ত, ওদের শেকড় চলে গেছে একেবারে দালানের ভিত্তিমূল পর্যন্ত। কিন্তু নিজস্ব স্থাপত্য রীতিতে বাড়িগুলো আজো সুন্দর। এসব বাড়ীর সামনে দঁড়ালে চোখ বুঁজে ভাবতে ইচ্ছে করে- একদিন কেমন প্রানের উচ্ছাস ছিল এখানে! জুড়ি গাড়ী হাঁকিয়ে বাবুদের আসা যাওয়া, পাইক পেয়াদাদের হাঁকডাক, অন্তঃপুরে সুসজ্জিতা নারীদের বৈঠক। একেকটা বাড়ী যেন একেকটা গল্প, হারিয়ে যাওয়া সময়ের। সেদিন কাগজে দেখলাম, নিকোলাস পোগোজ সাহেবের বাড়ীটা ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। এটা ছিল ঢাকার সবচেয়ে সুন্দর বাড়ীগুলোর একটা। কোন এক “উন্নয়ন কারক”এর গাঁইতির ঘা পড়ার আগে কেউ একবার ভাবলো না, এভাবে ইতিহাসের একটা পাতা ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে! এমনি ভাবে আরো কত শত বাড়ী যে হারিয়ে গেছে তার হিসাব কে রাখে! আর্মেনিয়া দেশের মানুষেরা একসময় ঢাকায় থাকতেন, আরমানিটোলা নামের মহল্লা এবং বিশাল গীর্জা এর সাক্ষী। পোগোজ সাহেব ছিলেন এদের মধ্যমনি। শিক্ষার ব্যাপারে তাঁর খুব উৎসাহ ছিল, তাঁর প্রতিষ্ঠিত স্কুলটি ঢাকার সবচেয়ে পুরোনো স্কুল গুলোর মধ্যে একটি। স্কুল ভবনটি এখনো আছে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের চৌহদ্দির ভেতর।

৩।

সারা ভারত জুড়ে ছড়িয়ে আছে অগুন্তি রাজপ্রাসাদ, দূর্গ। লালবাগের কেল্লা সেসবের কাছে লাগে না, না আকারে বিস্তারে, না স্থাপত্য শৈলিতে। নিতান্ত ম্লান, তবুও এই সুবে বাংলায় মোঘল দূর্গ ঐ একটাই। এটা আসলে একটা অসমাপ্ত কেল্লা, এর কাজ শুরু করেছিলেন শাহজাদা আজিমুশ্বান। পরে কেল্লার কাজে হাত দেন সুবাদার শায়েস্তা খাঁ, কিন্তু আদরের কন্য পরীবিবির আকস্মিক মৃত্যুতে শোকার্ত পিতা কেল্লার কাজ বন্ধ করে দেন। পরে কেউ আর ওটা শেষ করার উদ্যোগ নেন নি। একসময় বাংলার রাজধানী ঢাকা থেকে সরিয়ে নিলে এর গুরুত্ত্ব আরো কমে যায়, সেই সাথে কমে ঢাকার জৌলুস। কেল্লার ঠিক মাঝখানে পরীবিবির সমাধি আজো দর্শকদের ভাবায়।

শাহজাদা আজিমুশ্বান, এঁর নামেই অদূরে আজিমপুর মহল্লা। সেখানে, লালবাগ কেল্লার ভগ্নছায়ায় আমার ছেলেবেলা কেটেছে। কতবার ওখানে বন্ধুদের সাথে বেড়াতে গেছি, তখন ছিল নিতান্ত ভাঙ্গাচোরা অবস্থা। ওখানে নাকি একটা সুড়ংগ আছে, কেউ বলতো সেটা বুড়িগঙ্গার তীরে যাবার গোপন পথ। কল্পনাশক্তি একটু বেশি যাদের, তারা বলতেন একেবারে মুরশিদাবাদ। এমন একটা জমকালো জায়গা ভুতপ্রেতের আস্তানা হতে বাধ্য। ওখান থেকে নাকি রাতে নানা রকম শব্দ ভেসে আসে, আলো জ্বলতে দেখা যায়। একবার নাকি সুড়ংগটার ভেতরে খুব সাহসী কয়েকজন ঢুকেছিল, যারা আর ফেরেনি। ভুতের গল্পের জন্য দরকার অপমৃত্যু, তার কোন অভাব নেই অবশ্য। সিপাহী বিদ্রোহের সময় এখানে ইংরেজ সৈন্যদের সাথে দেশি সেপাইদের জোর লড়াই হয়েছিল।

কতোদিন- রাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলে আমিও ভয় পেয়েছি ওসব ভুতুড়ে কান্ডের কথা ভেবে। এতো বছর পরে, এখনো সেখানে বেড়াতে যাই। প্রত্ন বিভাগের যত্নে আর চারপাশে গজিয়ে ওঠা দালানকোঠার আবহে কেল্লাটাকে আর আগের মতো রহস্যময় মনে হয় না। ভেতরে রীতিমতো টিকিট কেটে ঢুকতে হয়, ছুটির দিন গুলোতে বেজায় ভীড়। রাজ্যের লোক, বাচ্চাকাচ্চা সহ, যেন পিকনিকে এসেছে। গোটা এলাকা জুড়ে বাগান, আর বাগান ভরা মানুষের আড্ডা, ছেলেছোকড়াদের ছবি তোলার ধুম, বাদাম চানাদুর হাওয়া মিঠাই আর বিবিধ শিশুতোষ খেলনা নিয়ে ফিরিওয়ালাদের অবস্থান। কেল্লাদারের দোতলা সুন্দর বাড়িটাতে হয়েছে যাদুঘর। কেল্লার পাঁচিলের বাইরে অনেক রেস্তোরাঁ, একেবারে ছাত পর্যন্ত। সেখানে বসে পুরো কেল্লাটা পাখির চোখে দেখা যায়।

ঢাকার কথায় নবাবদের কথা আসবেই। ব্যাপারটা বেশ বিভ্রান্তিকর। নবাব কাটারা বলে একটা মহল্লাই আছে, এখনকার আগা মসি লেনের ওদিকে। কাটারা মানে তো বাড়ি বা প্রাসাদ, কোথাও নিমতলী প্রাসাদের ছবিও দেখেছি। কিন্তু ঐ এলাকায় বিস্তর ঘোরাঘুরি করেও কোন রাজবাড়ি জাতীয় কিছু খুঁজে পাইনি। এলাকাবাসির অবস্থাও তেমনি, কেউ জানিয়েছেন যে, এই এলাকার নামই ঐরকম, প্রাসাদ থাকবেই এমন কি কথা আছে! তবুও ভয়ে ভয়ে বলি, গবেষণা মূলক বইপত্র ঘাটার আপাততঃ ইচ্ছে নেই, ওখানে মোঘল শাহী কিংবা পরে আলিবর্দী খাঁ সিরাজ উদ দৌলার সময়, যখন রাজধানী আর ঢাকায় নেই, এখানে রাজপ্রতিনিধি বা নায়েবে নাজিম এর বাসভবন ছিলো। এছাড়া ঐ সময়ের দুটি গুরুত্ত্বপূর্ন স্থাপনা, ছোট কাটরা ও বড় কাটরা। সেগুলো রাজভবন হতে পারে, আবার সরাই খানাও। অনেক খুঁজেপেতে একটাকে পেয়েছিলাম, কোন ভবন বলে চেনার যো নেই, মনে হবে মস্ত একটা তোরন মাত্র। মূল ভবনটা অগুন্তি দোকানপাট আর হতকুচ্ছিত ঘরবাড়ির আড়ালে অদৃশ্য হয়েছে। সত্যি, প্রত্নবস্তু্র উপর এতো অত্যাচার অবহেলা আর কোন সভ্য দেশে হয় কিনা সন্দেহ।

আহসান মঞ্জিলের সাথে যে নবাবদের কথা জড়িত, তাঁরা আবার সম্পূর্ন ভিন্ন। ততদিনে বাংলায় মোঘল পাঠান সবারই রাজত্ব শেষ, চলছে ইংরেজের কাল। তখন টাকা দিয়ে জমিদারি কেনা যেতো, সারা বাংলাতে তখন এক অভূতপূর্ব যুগের সুচনা হয়। ইংরেজের সাথে ব্যাবসা বানিজ্য করে এক ধনী শ্রেনীর উদ্ভব হয়, এবং লাভের টাকা দিয়ে সবচেয়ে নিরাপদ বিনিয়োগ অর্থাৎ জমিদারি কেনেন, পরের কয়েক পুরুষ আরাম করে চলার ব্যাবস্থা আর কি।

৪।

বুড়িগঙ্গা ঢাকার জীবন ধমনী। আজো যে পরিমান পণ্য ও মানুষ এই নদী বেয়ে ঢাকা আসে, অন্য কোন উপায়ে তার একটা ভগ্নাংশও সম্ভব নয়। এখানে নদীর বিস্তার পূর্ব-পশ্চিম, নদীর সমান্তরাল উঁচু রাস্তা, যেটাকে বাকল্যান্ড বাঁধ বলা হোত এক সময়। সেখানে নাকি ঢাকা বাসী বিকেলে হাওয়া খেতে যেতেন, অন্ততঃ ইশকুলের রচনা বইতে তাই পড়েছি। বিশ্বের অনেক শহরই গড়ে উঠেছে নদীর পাড়ে, এবং নদীর কিনারে হাওয়া খাওয়ার ব্যবস্থাও অনেক শহরেই আছে। ইয়োরোপের শহর গুলোর কথা ছেড়েই দেই, আমাদের পাশের দেশেই, কোলকাতায় গঙ্গার ধারে বেড়ানো এমনই নৈমিত্তিক ব্যাপার যে, সাহিত্যের পাতায় পাতায় এর উল্লেখ আছে। দুঃখের বিষয়, বাকল্যান্ড বাঁধে এমন হবার আর কোন উপায় নেই। একে তো রাস্তাটা সরু, প্রচন্ড ভীড়, দুপাশ দোকান পাটে ছেয়ে আছে, তার উপর নদী দূষন। বুড়িগঙ্গা বাঁচাও বলে কিছুদিন পর পর আন্দোলন হয়। দুই পাড়ের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের অভিযানও চলে। কিন্তু নদীর পানি কালোই থেকে যায়, অনেক দূর থেকেও তার বিকট দুর্গন্ধ পাওয়া যায়। এই পানিতে কোন মাছ বা জলজ প্রানী বেঁচে থাকতে পারে কিনা সন্দেহ।

বুড়িগঙ্গার এপাড়ে পর পর কয়েকটি ঘাট। লালকুঠি, সদরঘাট, বাদামতলী। সবচেয়ে বড় আর গুরুত্ত্বপূর্ন হচ্ছে সদরঘাট। সামান্য দক্ষিনা দিয়ে সেখানে ঢুকে পড়ি, যেন আরেক জগতে। এটা পুরোনো নয়, নতুনও নয়, এর আসলে কোন বয়েস নেই।  দেখছি একটার পর একটা ভাসমান লোহার জেটি, সেগুলোর সাথে মোটা মোটা কাছি দিয়ে বাঁধা দৈত্যাকার সব লঞ্চ। বিচিত্র তাদের নাম, দূর দূরান্তে তাদের গন্তব্য। চাঁদপুর, বরিশাল, ভোলা, পয়সার হাট, হুলারহাট, বোরহানুদ্দিন- এমনি সব দূরের পাল্লা। ওসব জায়গায় যাওয়া হয়নি কখনো, অজানা অদেখা সেইসব জনপদ যেন অতলান্তিকের ওপার থেকে হাতছানি দেয়। ইচ্ছে হয়, যে কোন একটাতে উঠে পড়ি, অজানার পথে। কিন্তু করা হয় না, আপাততঃ জেটিতে দাঁড়িয়ে জীবনের প্রবাহ দেখি। একে একে লঞ্চ এসে ধীরে সুস্থে ঘাটে ভেড়ে, আর সাথে সাথে খালাসীর দল সেটাকে জেটির সাথে বেঁধে ফেলে। কাঠের তক্তা বেয়ে নেমে আসে সারি সারি মানুষ, হাতে পায়ে কোলে কাঁধে সংসারের বোঝা, বাচ্চাকাচ্চা। আবার কোনটার সামনে কর্মচারীরা সুর করে হাঁকডাক তুলছে যাত্রী টানার আশায়। কিছু লোক আবার পরিবার ও মালপত্র সহ উদ্ভ্রান্ত চোখে তাদের জন্য সঠিক লঞ্চটার খোঁজে জেটিময় ঘুরপাক খাচ্ছে। হঠাৎ পিলে চমকানো ভোঁ বাজিয়ে একটা লঞ্চ যাত্রা করে, ডেকে দাঁড়ানো মানুষগুলো ডাঙ্গার দিকে চেয়ে থাকে, হাত নাড়ে। দৃশ্যটা সম্পূর্ন করে রাজ্যের ফিরিওলা এবং ভিক্ষুক। সার্কাসের নৈপুন্যে, যাবতীয় পণ্যের বোঝা সমেত, তারা একটা থেকে অন্যটায় অনায়সে বিচরন করে। কিছু আছে ভাসমান দোকান। পাঁউরুটি, বিস্কুট, ফলমূল সহ রাজ্যের জিনিসপত্র নৌকায় তুলে লঞ্চ গুলোর ফাঁকে ফোকরে ঘুরছে। এখনেই শেষ নয়- ছেড়ে যাওয়া লঞ্চটা যখন মাঝ নদীতে, ঠিক তখন কিছু দুঃসাহসী যাত্রী, জেটির পাশে ডিঙ্গি নৌকাগুলোর একটিতে লাফিয়ে পড়ে, এবং মাঝিও প্রানপনে বৈঠা চালিয়ে তাদেরকে ওই মাঝগাঙ্গে চলমান লঞ্চে তুলে দেয়। আমি যতবার এই কান্ড দেখেছি ততবারই আমার হাত পা ঘেমে উঠেছে। কোথায় লাগে হলিউড বলিউডের স্টান্টবাজি!

বিশালকায় লঞ্চ ছাড়াও আছে মালবাহী বার্জের আনাগোনা, আর আছে অসংখ্য ডিঙ্গি নৌকা- খেয়া পারাপারের জন্য। বুড়িগঙ্গার ওপারের জনপদ কেরানিগঞ্জ, সেটাও, যদ্দুর দেখা যায়, ঘিঞ্জি দরদালানে ঠাসা। রোজই হাজার মানুষ এখানে এসে খেয়া পার হয়। কোন এক অলৌকিক কৌশলে ডিঙ্গি গুলো নিজেদের মধ্যে, এবং দৈত্যাকার লঞ্চ ও বার্জ গুলোর পাশ কাটিয়ে, এপার ওপার করে। এই দৃশ্য কিছুক্ষন দেখলে যে কেউ আতঙ্ক বোধ করবেন।

এসব দেখে কয়েক ঘন্টা কিভাবে কেটে যায়। ঘাট থেকে বেরিয়ে আবার বাকল্যান্ড বাঁধ ধরে পশ্চিম মুখে হাঁটা শুরু করি। বাঁদিকে বুড়িগঙ্গার উপর বিচিত্র জীবনের প্রবাহ। বেশ কটা ভাসমান জিনিস আছে নদীতে, কিন্তু সেগুলো ঠিক কি তা জানিনা। দু’-তিন তলা উঁচু, সারি সারি ছোট জানালা – দেখে শুনে মনে হয় মেসবাড়ি বা হোটেল জাতীয় কিছু। নীচে পন্টুনের বাড়তি অংশে কয়েকজন কাপড় কাঁচা, গোসল করা ইত্যাদি নিত্যকাজে ব্যাস্ত। মনে হয় ওখানেই তাদের বসবাস। ‘পিনিশ’ বলে ভাসমান রেস্তোরাঁর কথা শুনেছিলাম, সেগুলো বোধহয় আর নেই। রাস্তার ডান ধারে আহসান মঞ্জিল, যা নবাব বাড়ি বলেও পরিচিত। বিরাট রাজপ্রাসাদের মত বাড়ি, তার দক্ষিন পাশের সবুজ চত্ত্বর একেবারে রাস্তা পর্যন্ত, সুন্দর লোহার রেলিং দিয়ে ঘেরা। তবে রাস্তা থেকে নবাব বাড়ির সৌন্দর্য বোঝার তেমন সুবিধে নেই। সুরুচির চরম নমুনা, ওটাকে ঢেউটিনের বেড়া দিয়ে আড়াল করে রাখা হয়েছে।

একটু এগোলেই বাদামতলী ঘাট- ফলের পাইকারি বাজার। আমাদের দেশে কমলা, আপেল, নাশপাতি, আঙ্গুর, খেজুর- এসব ফল হয় না, বিদেশ থেকে কিনে আনা হয়। আমদানী করা ফলের বেশির ভাগটাই প্রথমে এখানে এসে উঠে। ছাত পর্যন্ত সাজিয়ে রাখা ফলের গন্ধে জায়গাটা ম ম করছে। পাশেই ইসলামপুর- ঢাকার প্রধান কাপড়ের পাইকারি বাজার এখানে। শত শত ছোট বড় দোকানে লক্ষ লক্ষ টাকার কাপড় বিক্রি হচ্ছে ওখানে। সেদিকে না গিয়ে সোজা এগিয়ে যাই, বুড়িগঙ্গা ব্রীজের গোড়ায় এসে পড়েছি।

ব্রীজে উঠে চারদিক দেখতে বেশ লাগে। নদীর বুকে লঞ্চ গুলো সার বেঁধে দাঁড়ানো, ছবির মত। ব্রীজের একেবারে গোড়ার পাশে মীটফোর্ড হাসপাতালের পুরোনো লাল দালানটি দেখা যায়। দেখা যায় আহসান মঞ্জিলের গম্বুজ ও প্রশস্ত সিঁড়ি। ব্রীজের উপরে অনেক মানুষ হাওয়া খাচ্ছে। এই গরমের কালেও এখানটায় বেশ আরাম, ফুরফুরে বাতাস দিচ্ছে। ফিরিওয়ালা ও ভিক্ষুকের দল যথারীতি তাদের নিজস্ব রীতিতে জনসেবা করে যাচ্ছে। সূর্য ডোবার পালা এলো- মসজিদের মিনার থেকে সান্ধ্য উপাসনার আহ্বান ভেসে আসছে। মন্দ্র গম্ভীর সন্ধ্যাকাল, পাখিরা বাড়ি ফিরছে, রাত্রি নামবে এই ব্যাস্ত শহরে, তবু কোলাহলে জেগে থাকবে নগরবাসী অনেক রাত অবধি। চরশো বছর আগেও কি এমন ভাবে রাত নামতো, নগরের হৈহল্লা চলতো এতক্ষন- কে জানে।

লঞ্চঘাটের মত রেল ষ্টেশনও আমার পরম কৌতূহলের বস্তু। ঢাকার আদি রেলষ্টেশন ফুলবাড়িয়া এখন আর নেই। ফুলবাড়িয়া পর্যন্ত রেল লাইনও তুলে ফেলা হয়েছে। সেখানে এখন পীচঢালা রাজপথ। তবে পুরোনো গন্ধ মেখে গেন্ডারিয়া ষ্টেশন এখনো দাঁড়িয়ে আছে। সেই লাল অপিস ঘর, লম্বা টিনের ছাউনি, ছোট ছোট গুমটি ঘর। রিক্সা চেপে সেখানে যাচ্ছি, দুপাশের পথঘাট দেখতে দেখতে। রাস্তার নাম গুলো পড়ার চেষ্ঠা করি। বেশিরভাগই কোন ব্যাক্তির নামে। কিছু নাম চেনা, অন্যদের সম্পর্কে কিছুই জানি না। পথে পড়ে অনেক পুরোনো প্রকান্ড এক বাড়ী, উঁচু পাঁচিলে ঘেরা। সেখান থেকে অদ্ভুত কেমন একটা গন্ধ ভেসে আসছে। ভালো করে লক্ষ্য করে মনে হোল ওটা সাধনা ঔষধালয়ের কারখানা। তার ঠিক উল্টোদিকে, অনেকটা জায়গা জুড়ে পাঁচিল ঘেরা, চমৎকার একটা একতলা বাগানবাড়ি। ওটা কার, কে থাকে, জানতে ইচ্ছে করে।  ডিস্টিলারি রোড বলে একটা রাস্তাও দেখলাম। মনে হয় ইংরেজ আমলে এদিকে কোথাও মদ চোলাইয়ের কারখানাও ছিলো। পথে গেন্ডারিয়া হাইস্কুলের প্রাচীন লাল দালানটি এখনো আছে দেখে বেশ বিস্মিত হই। রেলষ্টেশনে পৌঁছে প্লাটফরমে ঘোরাঘুরি করি। লাইনের ওপারে আবার পীচ ঢালা রাজপথ, সেদিকের একালাটার নাম মীর হাজীরবাগ। ওদিকে আর যাওয়া হয়নি। আপাততঃ ঝালমুড়ি খেতে খেতে ট্রেনের অপেক্ষা করি। এটা ঢাকা-নারায়নগঞ্জ লাইনের উপর। অসংখ্য যাত্রী প্রতিদিন এপথে আসাযাওয়া করেন। বেশ কিছুক্ষন পরে মাত্র তিন চারটে বগি অলা একখানা রেলগাড়ী ধীরেসুস্থে এসে দাঁড়ায়। যথারীতি সারা ষ্টেশন জুড়ে একদফা ছুটোছুটি শুরু হয়। গাড়ী বোঝাই মানুষ- ছাতে, এঞ্জিনের সামনের বারান্দা মতো জায়গায়, এমনকি দু’ কামরার যোজকের উপরেও। একটু পড়েই ভোঁ বাজিয়ে ধীরেসুস্থে গাড়ীটা চলে যায় নারায়নগঞ্জ পানে। সব আবার কেমন ঝিমিয়ে পড়ে। গেন্ডারিয়া ষ্টেশনের এই রূপ আর বেশিদিন থাকবেনা। ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত যে রেল লাইন হচ্ছে, সেটা এই পথেই যাবে। সেই বিশাল কর্মযজ্ঞে হারিয়ে যাবে ছোট্ট ষ্টেশনটি, সেখানে হবে বিরাট অত্যাধুনিক সু্যোগসুবিধা সমেত বিরাট আরেকটি ষ্টেশন।

৫।

আজ আবারো বাহাদুর শাহ পার্ক থেকে শুরু করি। পার্কের ঠিক বাইরেই একটা ইঁটের তৈরী পানির ট্যাঙ্ক। পানির ট্যাঙ্ক ঢাকায় আছে বেশ কয়েকটি, সেগুলো বিভিন্ন এলাকার ল্যান্ডমার্ক হয়ে আছে, জায়গা চেনাতে সাহায্য করে। কিন্তু এটি তেমন না, তাছাড়া এমন ইঁটের তৈরি জলাধার আর আছে কিনা সন্দেহ। এর গোড়াতে আবার একটা মাজার বা খানকাহ জাতীয় ব্যাপার আছে, একটা সাইনবোর্ডে বেশ দুর্বোধ্য ভাষায় তার পরিচয় ও মহিমা লেখা আছে। যাহোক, ওর পাশ দিয়ে তে-রাস্তায় ডানে যাই। ঠিক মোড়েই একটা গীর্জা, অনেক খানি জায়গা জুড়ে। রাস্তার এই অংশ জনসন রোড, কোট-কাচারি বলে লোকে। অর্থাৎ আদালত পাড়া। মূখ্য মহানগর হাকিমের এজলাস, পুলিশ ক্লাব ছাড়াও আছে একটা প্রাচীন সিনেমা হল। আজকের সিনেপ্লেক্সের যুগে, কোন আধুনিক সুযোগ সুবিধা ছাড়াই ওটা আজো কিভাবে চলছে, যেখানে ঢাকার অনেক এককালের বিখ্যাত সিনেমা হল উধাও হয়েছে, ভেবে অবাকই লাগে। সামনেই আবার এক চৌ-রাস্তা, একদিকে রায় সাহেব বাজার, অন্যদিকে নবাবপুর। ডানে এগুলে দোলাই পাড়- যাবতীয় লোহা লক্কড় আর পুরোনো মোটর গাড়ীর হাজারো পার্টসের দোকান। এখানে একটা বড় খাল ছিলো, সুত্রাপুরের ওদিকে সেই খালের উপরে দিয়ে একটা সেতুও ছিলো, যা লোহার পুল বলে পরিচিত ছিল। সেতু ও খাল দুটিই এখন অদৃশ্য হয়েছে কালভার্টের তলায়।

আজ আবার ঢুকে পড়েছি শাঁখারি বাজারে। পুরোনো ঢাকার একটা চেহারা এখানে এখনো টিকে আছে। একটা সরু রাস্তার দুপাশে গা ঘেঁষাঘেসি করে দাঁড়িয়ে আছে অনেক পুরোনো বাড়ি, প্রায় প্রতিটির সামনে একতলায় দোকান। বাড়িগুলিতে কয় পুরুষ ধরে এরা বাস করছে কে জানে। এক কালের বড় বাড়িগুলি ক্রমশঃ নানান শরীকে ভাগ হতে হতে একেবারে ঘুপচি হয়ে গেছে। শরীকদের অনেকেই হয়টো এদেশে নেই, অথবা বেঁচে নেই। শঙ্খ দিয়ে তৈরি হাতের বালা এখানকার বিশেষ পণ্য। এখানেই কারিগরেরা সেগুলো হাতে বানায়। আরো আছে তামা কাঁসার জিনিস, পূজা আর্চার নানা জিনিস, দই-মিষ্টির দোকান। বাদ্যযন্ত্রের দোকানও আছে দেখলাম। দূর্গা পূজার সময় এখানে বেশ কটা মন্ডপ হয়। ভক্তদের আনাগোনায় সরু রাস্তাটা একেবারে কানায় কানায় ভরে যায়।

আজ আবার বাবু বাজার থেকে শুরু করি। ইসলাম খাঁ নাকি এখানেই প্রথমে ঘাঁটি করেছিলেন। অল্পকাল পরেই, রাজকাজের সুবিধা এবং রাজপরিবার ও কর্মচারিদের থাকার জন্য, ঘরবাড়ি বানানো হয়। যেখানে এখন ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগার, সেখানেই নাকি ছিল এসব স্থাপনা। তিনি ছাড়া আর যে সব মোঘল রাজপুরুষদের নাম ঢাকার সাথে জড়িয়ে আছে, তাঁরা হলেন শায়েস্তা খাঁ, শাহজাদা আজিমুশ্বান, এবং সম্রাট শাহজাহানের দ্বীতিয় পুত্র শাহ সুজা স্বয়ং। শূজা ভারতের ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ ভ্রাতৃঘাতী সংঘাতে জড়িয়ে পড়েন, এবং একসময় সপরিবারে রাজত্বের মায়া ছেড়ে আরাকান দেশে পালিয়ে যান। সেখানেই এই হতভাগ্য রাজুপুত্রের করুন সমাপ্তি ঘটেছিল। আজিমুশ্বান লালবাগের কেল্লা নির্মান শুরু করেন। ঢাকার আজিমপুর এলাকাটা তাঁর নামেই। তিনি অবশ্য বেশিদিন ঢাকায় ছিলেন না, সেখানে শায়েস্তা খঁ এসে অনেকদিন ছিলেন।

ঢাকায় একসময় বেশ কিছু খাল ছিল, রীতিমতো নৌকা চলতো সেখানে। সেগুলো এখন প্রায় বিলুপ্ত। কয়েকটার উপর দিয়ে বানানো হয়েছে রাস্তা। আবার কতগুলো হয়েছে বেদখল, সেগুলো ভরাট করে তার পরে দালান কোঠা বানানো হয়েছে। কয়েকটির উপরে সেতুও ছিল। ঢাকার প্রাচীন ছবিও বেশি নেই। ইংরেজ আমলে ডয়েলি সাহেব কতগুলো ছবি এঁকেছিলেন। মোগল স্থাপনাগুলোর ততদিনে জীর্ন ভাঙ্গাচোরা চেহারা। মজার বিষয়, তাঁর আঁকা লালবাগের কেল্লার ছবিতে দেখা যায়, জলের উপর কেল্লার প্রতিবিম্ব। তার অর্থ বুড়িগঙ্গা একসময় একেবারে কেল্লার সীমানা ঘেঁষে বয়ে যেতো। এখন সেটা অনেক দূরে সরে গেছে, আর মধ্যের জায়গাটুকু ঘিঞ্জি দালানকোঠায় ঠাসা। আর আছে কিছু ফোটো, খুব কম হলেও কৌতূহল জাগানোর মতো। খালগুলো নিয়মিত সংস্কার করে রেখে দিলে একদিকে যেমন যোগাযোগের কাজে লাগতো, অন্যদিকে শহরের জলাবদ্ধতারও কিছুটা সুরাহা হোত। নগরবাসীর বেড়ানোরও কিছু জায়গা মিলত।

চাঁন খাঁর পুলের নাম সবাই জানেন। সেখানেও নাকি একটা সেতু ছিল! আমি অবশ্যি জন্মাবধি ওখানে কোন খাল-বিল বা সেতুর কোন চিহ্ন দেখেনি। তবে জায়গাটা বিখ্যাত, পুরোনো ঢাকার প্রবেশ দ্বার বলা যায়। সেখান থেকে খাজা নাজিম উদ্দিন রোড চলে গেছে সোজা দক্ষিনে। রাস্তার দুপাশে কোন পুরানো ঘরবাড়ি আর নেই। বেশ কিছু হোটেল রেস্তোঁরা আর আশে পাশে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল গুলোর কারনে এলাকাটা বেশ সরগরম থাকে। কিছুদূর গেলেই ঢাকা সেন্ট্রাল জেল। এই জায়গাটা আসলে অনেক আগে থেকেই গুরুত্ত্বপূর্ন। মোঘল আমলে রাজকর্মচারীদের থাকার জন্য এখানেই প্রথম, বলা যায়, নগরায়ন শুরু হয়। পরে ইংরেজ আমলে আগের দরদালান ভেঙ্গে নতুন করে আবার সব বানানো হয়। কিছুদিন আগে জেলখানা বুড়িগঙ্গার ওপারে, কাশিমপুরে সরিয়ে নেয়ার পর এলাকাটা ফাঁকা পড়ে আছে। শুনেছি ওখানে একটা পার্ক ও যাদুঘর হবে।

জেল গেটের মুখোমুখি রাস্তা তিন ভাগ হয়ে তিন দিকে চলে গেছে। যে কোন একটা ধরে এগুলেই হয়। দুধারে দেখার কিছু নেই, আবার অনেক কিছুই আছে। একেক রাস্তায় একেক বৈচিত্র। কোথাও পুরানো স্তুপ করে রাখা শিশিবোতল, ভেতরে কয়েকজন উবু হয়ে বসে সেগুলো ধুচ্ছেন। কোথাও শুধু জুতোর তলী। একজায়গাতে দেখা যাবে জাহাজের নানা জিনিস- মোটা মোটা লোহার শেকল, নোঙ্গর, কপিকল- তাজ্জব ব্যাপার বটে। সিদ্দিকবাজারের ওদিকে পাইপ, তালাচাবি, রবার আর ফোমের অনেক দোকান। চকবাজারে বাচ্চাদের খেলনা, চামড়ার জিনিস, মসলাপাতি। তবে চকবাজারের ঐতিহ্য হলো রমজান মাসের ইফতার বাজার। ঢাকার মানুষ এমনিতেই ভোজন রসিক, রমজান এলে সেটা আরো বেড়ে যায় কয়েকগুন। ইফতার কেন্দ্র করে খাদ্য বিলাসের চরম নিদর্শন হয়ে উঠে চকবাজারের চত্ত্বরটি- একশ কি দুশো বছর আগেও নাকি এমনটাই হোত! হাজার রকমের পদ- পেঁয়াজি বেগুনি ঘুঘ্নি থেকে ‘বড় বাপের পোলায় খায়’ নামের বিচিত্র খাদ্য-অখাদ্যের বিরাট সমাহার। আর কি প্রচন্ড ভীড়!

আগামসি লেনে পুরোনো কাগজ, ভাঙ্গাচোরা জিনিসের রাজত্ত্ব। ঈসলামপুরে কাপড়, পটুয়াটুলিতে ঘড়ি, বাংলাবাজারে বই, নয়া বাজারে কাগজ। সিক্কাটুলির ওদিকে দেখি বড় বড় লোহার মই- কারা এসব কেনে কে জানে! নবাবপুর রোডের দুধারে চলছে সারাক্ষন হাতুড়ী পেটা- দোকানের ঝাঁপ বানানো হচ্ছে ওখানে। এখানে বেশিক্ষন থাকলে শ্রবন ইন্দ্রের ক্ষতি হবার সম্ভবনা। অন্যত্র চলছে ব্যাপক ঝালাইএর কাজ।  ঘন ঘন বিদ্যুত স্ফুলিঙ্গের ঝলকানিতে চোখের ক্ষতি। এরকম, পুরোনো ঢাকা যে বাহান্নো বাজার, আর প্রত্যেকটা বাজারই যে ভিন্ন, সেটা এখানে ঘোরা ঘুরি না করলে বোঝা যাবে না।

বাজারের কোলাহল এড়িয়ে দু’দন্ড নিরিবিলির খোঁজে এসে পড়ি বলধা গার্ডেন। পাশেই টিকাটুলির বিখ্যাত খ্রীষ্টান গোরস্থান।

বলধা গার্ডেন শুধু একটা বাগান নয়, বাগান করার মত শৌখিন মানুষ এদেশে অনেকেই ছিলেন। বলধা গার্ডেন রীতিমতো একটা উদ্ভিদ সংগ্রহশালা। জমিদার নরেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরী এর অনন্য কীর্তি। এটা মীরপুরের বোটানিকাল গার্ডেন হবার অনেক আগের জিনিস। এখন শুধু বাগানের অর্ধেকটা দর্শকদের জন্য খোলা আছে। টিকিট কেটে ভেতরে যাওয়া যায়। আকারে তেমন বড় না হলেও, গাছপালার বৈচিত্রে অসাধারন। একটা ঘাট বাঁধানো পুকুর আছে ভেতরে, তার পাড় ঘেঁসে চমৎকার দোতলা বাংলো। দোতলার বারান্দা অনেকখানি বাড়িয়ে একেবারে পুকুরের উপর নিয়ে আসা হয়েছে। সেখানে বসে বাগানের শোভা দেখতে দেখতে হয়তো ভদ্রলোক ইয়ার বক্সীদের নিয়ে সান্ধ্য আড্ডা উপভোগ করতেন। আরো আছে, দুটি স্মৃতি চিহ্ন, তাতে উনার নিজের লেখা কবিতা খোদাই করা। পরিবারের কোন নিকটজনের মৃত্যুতে মনে গভীর ব্যাথা পেয়েছিলেন, এবং জীবনের অনিত্যতা অনুভূতি ফুটে উঠেছে কবিতায়। একটা সূর্যঘড়ি আছে- দর্শকদের পরম কৌতূহলের বস্তু। এখানে এলে কিছুক্ষনের জন্য পাঁচিলের ঠিক বাইরেই যেসব ইন্দ্রিয় ও মনন বিধ্বংসী বিকটদর্শন দালান কোঠা, রাজপথ আর উড়ালপথে গাড়ীঘোড়ার প্রচন্ড কোলাহল, ওগুলোর হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায়।

৬।

ফুলবাড়িয়া রেলষ্টেশন উঠে যাবার পর অনেকদিন ওখানে আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল ছিল। পুরোনো ষ্টেশনের ছাঊনি ও ঘরগুলো তখনো ছিল। হালে সেসব ভেঙ্গে প্রকান্ড পাকা বাজার হয়েছে। জুতো পাঞ্জাবি-লুঙ্গি-গামছার আড়ত সেখানে। আর রেল লাইন উপড়ে ফেলে যে রাস্তাটা হয়েছে, তার এক জায়গায়, চাঁন খাঁর পুলের কাছেই, উঠেছে উড়াল সড়ক। চাঁন খাঁর পুল থেকে একটু এগোলেই, বংগ বাজারের মোড়- এটাও একটা চৌরাস্তা, পুরোনো ও নতুন ঢাকার আরেকটি সীমানা নির্দেশক বলা যায়।

বংগবাজার খুবই কৌতুহলোদ্দীপক জায়গা। এখানে প্রকান্ড টিনের চালার তলায় পায়রার খোপের মতোন অগুন্তি দোকান। আগে এখানে বিদেশি পুরোনো জামা কাপড় বিক্রী হোত। এখন তো বাংলাদেশ থেকেই অনেক তৈরি পোষাক বিদেশে যাচ্ছে। বলা হয়, সামান্য খুঁতের কারনে যেসব পোষাক বিদেশে ক্রেতারা নেবে না, সেগুলোর গতি হয় এই বাজারে। ঢাকাবাসির পাশাপাশি বিশাল বপু পশ্চিমাদেরও এখানে ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। ভীড়ের চাপ, দোকানীর চালাকি ও মধুর ব্যাবহার সইতে পারলে, এখানেই হয়তো পেয়ে যাবেন নামি দামি মার্কা মারা পোষাক। তবে ঠকে যাবার সম্ভবনাই বেশি।

বঙ্গবাজারের আশে পাশে বাংলাদেশ টমটম চালক সমিতির আপিস। অর্থাৎ, ঢাকা থেকে নবাবি জৌলুষের প্রতীক ঘোড়ার গাড়ি এখনো একেবারে বিলুপ্ত হয়নি। দুই ঘোড়ায় টানা প্রকান্ড গাড়ি গুলো আজো কিছু রাস্তায় নিয়মিত চলাচল করে। ঢাকার ভয়াবহ যানজটের মধ্যে কিভাবে ওই প্রানী গুলো, কোচোয়ানের চাবুক খেতে খেতে এবং রাস্তায় বিষ্ঠা ছড়াতে ছড়াতে আজো ছুটছে- সে একই সাথে বিস্ময়কর ও ট্র্যাজিক। আশাকরি নগরপতিরা শীগগীরই এটা বন্ধ করবেন। ঘোড়ার গাড়ি গুলোর আরেকটা ব্যাবহার প্রায়শঃ দেখা যায়- সেটা হচ্ছে নানা কিসিমের শোভা যাত্রায়। আশে পাশে বিদ্যাপীঠ তো অনেক- মাঝে সাজেই নতুন-পুরাতন ছাত্র ছাত্রীদের বিবিধ অনুষ্ঠানে, কিংবা এলাকাবাসির বিয়েশাদী খৎনা ইত্যাদি উপলক্ষ্যে ঘোড়ার গাড়ি সহ শোভাযাত্রা হচ্ছে প্রায়ই। সাথে থাকে আরেক প্রাচীন বিস্ময়- ব্যান্ড পার্টি। ওদেরও অপিস আছে আশে পাশে কোথাও। মিছিলের মাথায় বিচিত্র পোষাক পরা অপুষ্ট চেহারার কয়েকজন মানুষ বাজনা বাজাতে বাজাতে চলেন। দেশি বাদ্যযন্ত্র নয়, রীতিমত ইয়োরোপীয়। সেই কোন কালে এদেশে আমদানী হয়েছিল, মূলত ইংরেজ সেনাদলের সাথে, এদেশে যা কিনা গোরার বাদ্য বলে পরিচিত হয়েছিল। খুব অল্প দিনেই এদেশের শিল্পীরা সেসব যন্ত্রপাতি দিয়ে দেশি বিদেশি সুর তোলা শিখে নেয়, এবং বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানে বাজনা বাজিয়ে রোজগারের একটা পেশা চালু হয়। উড়াল পুলের নীচে ঘোড়ার আস্তাবল, দুর্গন্ধে সেখানে বেশিক্ষন দাঁড়ানো কঠিন। তাই ঢুকে পড়ি কাজি আলাউদ্দিন রোডে। কিছু দুরেই নাজিরাবাজার

পুরোনো ঢাকার ঐতিহ্য মোগলাই ঘরানার খাবার- এটা ঢাকাই সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। আর নাজিরাবাজার হচ্ছে ভোজন বিলাসিদের তীর্থভূমি। লালসালু মোড়ানো প্রকান্ড হাড়িতে নানাবিধ বিরিয়ানি, মোরগ পোলাও, খিচুড়ি, মাংসের বিপুল আয়োজন। এখানে, কোন এক গলির মুখে, হয়তো হঠাৎ করেই কোন ছোট ঝুপড়ি দোকানে, এমনই স্বাদের খাবার পাওয়া যাবে, যার জুড়ি মেলা ভার। খাওয়া দাওয়ার বিবরন দেয়া কঠিন কাজ, হালে ফুড ভ্লগার বলে কেউ কেউ এই লাইনে কাজ করছেন- ইউটিউবে সচিত্র বয়ান দেখা যায়। তাই এ নিয়ে লেখালেখিতে না গিয়ে আপাতত হাজীর বিরিয়ানীর দোকানে ঢুকে পড়ি। সেই সাথে পাঠকদের শুভেচ্ছা জানিয়ে, পুরোনো ঢাকা ঘুরে যাবার আমন্ত্রন জানিয়ে, আমার ঘোরাঘুরির বয়ান শেষ করি।

 

৩ বার দেখা হয়েছে

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।