বইপোকার আত্মকথা

মনিষী বলেছিলেন -‘জীবনে শুধু তিনটি জিনিষের প্রয়োজন। আর তা হল বই,বই এবং বই’।

কথাগুলার মর্মার্থ বুঝতে আমারও বেশী দিন লাগে নি ।আগে টুকটাক বই পড়লেও ,বইয়ের নেশা মূলত চেপে ধরে ক্যাডেট কলেজে ভর্তি হবার পর । কলেজ এর সুবিশাল পাঠাগার দেখে নিজেকেই হারিয়ে ফেলতাম । বই,বই আর বই । সব ধরনের বই সুন্দর করে সাজানো । সপ্তম শ্রেণীর এই পুচকে তখনি একটা নিয়ত করে ফেলে, আর তা হল বইপোকা তার হতেই হবে ।এরপর অনেক বই পড়া হয়েছে, এখনও পড়ি। অনেকের তুলনায় হয়ত আমার পড়াশুনা কছুই না । তার পরেও বই  পড়তে যেয়ে একেকটা বই আমাকে একেক রকমের আবেগ,অনুভুতি এর সাথে পরিচয় করিয়েছে ।মাঝে মাঝে ভাবি আবেগগুলা শব্দের জালে জড়াবো ।হয়ে উঠে না অলসতার কারনে।আপাতত একটা অনুভুতি ভাগাভাগি করতেই এই লেখা…

সময়টা ২০০৬,নবম শ্রেণী ।কৈশোরের আবেগে আক্রান্ত। সব রঙ বেশী রঙ্গিন লাগে,সব সুর মন ছুয়ে যায় । আকাশের নিরাকার মেঘ মনের ভীতরে না না আকারের সপ্ন ছড়ায় । বিকালের বাতাস সেই স্বপ্নের পালে হাওয়া দেয় ,আর মাঝ রাতের জ্যোৎস্নায় সেই সপ্ন আর বাস্তব মিলিয়ে বুদ হয়ে বসে থাকি।আহা… এতে কি সুখ না দুঃখ … কি আছে সেইটাও বোধগম্য হত না। কি নেই ,কি নেই একটা ভাব সারাদিন তারায় বেড়াতো । যদিও এইসব আবেগ, মনের রসায়ন বেশীক্ষণ ধারণ করতে পারতাম না ক্যাডেট কলেজ এর নিয়ম মাফিক জীবনযাত্রার কারনে ।এই নিয়ম গুলো যেন মনের আবেগের সুবিশাল ঢেউ আটকানর বাঁধ হিসেবে কাজ করতো ।এইরকম আবেগের মুল উৎস ছিল উপন্যাস । একেকটা বই যেন একেকটা দুনিয়া । পড়া শুরু করলে চরিত্রের সাথে সখ্যতা হয়ে যেত । বাস্তব তখন আর ভাল লাগত না ।দিন নেই,রাত নেই বই নিয়ে বসে থাকতাম। প্রেপ টাইমে স্যার এর চোখ ফাকি দিয়ে বই পড়া, লাইটস আউট এর পর ঘড়ির লাইট জ্বালিয়ে রাত জেগে বই পড়ার স্মৃতিগুলো এখনো  তাড়িয়ে  নিয়ে বেড়ায় । রেস্ট টাইমে সবাই যখন ঘুমাচ্ছে আমি তখন বিছানায় শুয়ে থাকলেও মনে মনে বিচরণ করছি বইয়ের রঙ্গিন রাজ্যে ।বন্ধুরা বলত এত বড় বড় বই পরস ক্যামনে ? হেসে উত্তর দিতাম লেখকরা যদি  কয়েক মাস/বছর ব্যয় করে বই লিখতে পারে,তাইলে আমি ক্যান ১ সপ্তাহ এইটার পিছে দিতে পারবো না ? এখনও যখন কোন কাজ ভালো লাগে না, মুভি দেখতে বিরক্ত লাগে ,আমি পুরান বইগুলা নিয়ে মাঝ থেকে পড়া শুরু করি । বেশীক্ষণ না ৫-১০ মিনিট লাগে পুরানো সব চরিত্রের সাথে মিশে যেতে ।তখন আর নিজেকে একা লাগে না ।

তেমনি একটা বইএর শেষ কয়টা লাইন । আমার মনে আছে বইটা পরে যেই শূন্যতা আর হাহাকার তৈরি হইছিল মনের ভীতরে, সেইটা কাটায় উঠতে সপ্তাহ পার হয়ে গেছিল। মহাকাব্যিক এক উপন্যাস ।এতোই পরিচিত উপন্যাস যে নাম লেখার প্রয়োজনবোধ করলাম না

 

“তারপর ওরা হাত ধরে চুপ করে বসে রইল।আর কোনও কথা নেই,সমস্ত কথার প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে। ওরা বসেই রইল। ঘাট ক্রমশ নির্জন হয়ে আসছে । বাতাস বইছে বেশ জোরে ।সবাই ঘরে ফিরছে ।এই দুজনের যেন কোন ঘরবাড়ি নেই, কোথাও ফিরতে হবে না। এরকম একটি অনন্তকালের দৃশ্য হয়ে ওরা বসেই থাকবে ।

১,৮০০ বার দেখা হয়েছে

১৪ টি মন্তব্য : “বইপোকার আত্মকথা”

  1. সামিউল(২০০৪-১০)

    বই পড়া আমারও নেশা, প্রায় তোর মতই। একটু একটু পড়তে পড়তে অনেক মোটা বই শেষ হয়ে গেছে আমারও। এইটাই একমাত্র কাজ যা করতে কখনোই খারাপ লাগেনা। 😀
    লেখা ভাল্লাগছে খুব। ব্লগে স্বাগতম। নতুন ব্লগে আসলে ১০ টা ফ্রন্টরোল দিতে হয়। এ্যাডজুটেন্ট আসার আগেই দিয়ে দে। 😛

    আর ওই লাইন গুলো সুনীলের "প্রথম আলো" বইয়ের, তাই না??


    ... কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালবাসে!

    জবাব দিন
  2. সোহান (২০০৪-১০)

    ব্লগে স্বাগতম ফেন্দু। সামির কথায় আগেই লাগায় দিলা ফ্রন্টরোল?? ভাইরা আসলে কি করবা? :grr:
    পড়ে ভাল্লাগলো। আরও লেখার অপেক্ষায় রইলাম।


    আমি সিগারেটের ছাই, জানালার ধুলো। চাইলেই ফু দিতে পার। ঊড়ে যাব।

    জবাব দিন
  3. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    ব্লগে স্বাগতম।

    যদিও অনেকটা ফাকিবাজি টাইপ লেখা তবে স্মৃতিকথা হিসাবে মন্দ না।

    একটা কাজ করতে পারো।
    যেহেতু তুমি বইয়ের পোকা, একে একে প্রিয় বা অপ্রিয় বইগুলোর রিভিউ করতে পারো।


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
  4. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

    লেখা ভাল হয়েছে! :thumbup:

    ফ্রি টিপসঃ
    ১। লেখার পর অভ্র স্পেল চেকার দিয়ে টেস্ট করে নিস, বেশিরভাগ বানান ভুল/টাইপো ধরা পড়বে।
    ২। দাঁড়ি, কমা ইত্যাদির আগে না, পরে একটা স্পেস দিস। দেখতে এবং পড়তে ভাল লাগে।

    নির্দেশঃ
    ১। নিয়মিত লিখবি
    ২। ছদ্মনাম বদলে ক্যাডেট নাম দে, সিসিবিতে অনেক আগেই সিদ্ধান্ত হয়েছে- আমরা সবাই স্বনামেই লেখা-লিখি করব। ঠিক আছে?

    সিসিবিতে স্বাগতম। 😀 :clap:


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।