সিরিয়াল ১৯
২২ ডিসেম্বর, ২০০২ বর কোথায়!
বারবার ফোন করেও বরের জবাব নেই। সবাই ভাবল হয়ত বর সিদ্ধান্ত বদলিয়েছে বিয়ের। হয়ত আমাকে চলে যেতে হবে বিয়ে না করেই। কেবল আমি ভয়ে ছিলাম নিশ্চয়ই আমার আরিফ এর কিছু হয়েছে। না হলে আমাকে অপেক্ষা করাবে! জীবনেও না।আজকের দিনটার জন্য এত বছর অপেক্ষা করেছে।এতক্ষণে বাসায় ফিরে যাবার কথা।কিন্তু বিয়েই হল না। বাসায় কি বলব। ভয়ে আমার জীবন যায় যায়।
সন্ধ্যা ৭.৩০ এ এলেন বর। পাক্কা সাড়ে তিন ঘন্টা লেট।বনানীতে কাজ শেষ করে তার নাকি আব্বুর সাথে দেখা। আব্বুকে বাসায় পৌছে দিয়ে আসলেন। তাই দেরি হয়েছে। আর আব্বু ছিল বলেই কল ধরেন নি।
****যারা আরিফকে লেট বলেন, তাদের বলি ” যে নিজের বিয়েতে সাড়ে তিন ঘন্টা লেট ছিল, সে তো আজীবন লেটই হবে সব জায়গায়”
যাই হোক পাত্র ফিরে এসেছে। পালিয়ে যায়নি। এটাই বড় কথা। সবাই আবারো আনন্দে মেতে উঠল।বিয়ে হবে তাহলে!
আমিঃ সবাই তো ভাবছিল আপনি আমার চেহারা দেখে পালিয়ে গেছেন বিয়ের ভয়ে
আরিফঃ ছি ছি
আমিঃ হাজার হলেও এইটা তো আর প্রথম না! আগেও বিয়ের ভয়ে পালিয়েছেন!
আরিফঃ শামছুল ভাই তাহলে সব বলে দিছে না? শামছু…… আগামী এক মাস আমি বাসায় তোর খাওয়া বন্ধ করে দিলাম
বড়ভাইঃ আমার কি দোষ ওইতো জানতে চাইছে। তখন এটাও বলেছি যে তুই ঘুমের মধ্যে আমার হাত জড়ায়ে ঘুমাইছিলি
আরিফঃ কি? বড়ভাই তুই আজকে মরবি আমার হাতে
বড়ভাইঃ আমিতো মাত্র একদিনের কথা বলেছি। আসলে তুই তো ডেইলি এমন করতি।ওইটা কি বলছি?
আরিফঃ শামছু…তুই চুপ করবি নাকি আমি তোর মুখে লেমিনেশন করে দিব?
আমিঃ হাহাহাহাহা, থাক আর কিছু করা লাগবে না।
আরিফঃ লক্ষী তুমি থামো। এইটা আমার ইজ্জতের প্রশ্ন
আমিঃ থাক আমার কাছে ইজ্জত হারালে কিছু হবে না। আমি আর ভাইয়া ছিলাম। আর কেউ শুনে নাই
জনগণঃ হাহাহাহাহা
বড়ভাইঃ লক্ষী তাহলে তুমি? আমিতো ভাবছিলাম অন্যকেউ
আরিফঃ মানে তুই লক্ষী আরেকজন ভেবে…তার মানে…আমার নামে উলটা বলেছিস?
আরিফঃ তুই আজকে মরবি বড় ভাই। আমার ইস্ত্রী করা জামা পড়ছিলি না? ঐটার জন্য ১০০০ টাকা দিবি।
আমিঃ থাক থাক আজকে আর না। মাফ করে দেন
আরিফঃ লক্ষী তুমি বললে দেখে, মাফ পেল।
খুলে ফেলা শাড়ী আবারো পড়ে রেডী হলাম। মাথায় ফুলের মালা। আর এক গাছি চুড়ী। এই আমার সাজ।
আরিফঃ এতো সাজে সবাই নিজের বিয়েতে! আর তোমার গায়ে গয়না পর্যন্ত নেই।
আমিঃ কই, এই যে! ফুলের মালা, শাড়ী, চুড়ি। সোনার গয়না আমার ভালো লাগে না।
আরিফঃ চুলটাও তো বাধা হল না
আমিঃ সবাই চুল বেধে বিয়ে করে, আমি নাহয় ছেড়েই করব!
আরিফঃ কোন সমস্যা? অমন করে হাটছো যে?
আমিঃ সমস্যা হল শাড়ির অনেক ওজন। আমি নড়াচড়া করতে পারছি না। জীবনে প্রথমবারের মত শাড়ি পড়েছি। মনে হচ্ছে উলটে যাবো।আরিফ হাত ধরে ধরে নিয়ে বসাল।
সিরিয়াল ২০
২২ ডিসেম্বর, ২০০২ বিয়ের ঢোল বাজল!
বিয়ের বর কনে আর বাকি সবাইই এক রুমে মেঝেতে বসল চাদর পেতে।হুজুর এল।কনে লজ্জায় লাল। মাথা নিচু করে ওই যে বস্ল, আর মাথা তুলে না। কাপা কাপা হাতে রেজিস্ট্রি হল।কাবীন হল। মালাবদল হল। মিষ্টিমুখ হল। এবার ছবি তুলা হবে।কিন্তু হুজুর ছবি তুলবেন না। এমনকি নিজের মুখটাও ঢেকে রেখেছেন। বিয়ে পড়িয়েই চলে গেলেন। খেলেন পর্যন্ত না হুজুর।সবাই আমরা অবাক হুজুরের কান্ড দেখে।
যে ঘরকে বাসর বানানো হয়েছে, ওইঘরে ছবি তোলা হবে। কিন্তু এই উচু খাটে উঠে বসব কিভাবে এই শাড়ি নিয়ে! উঠতে গিয়ে পড়ি পড়ি! ধরে ফেলল আমার সদ্য বিবাহিত পতি। সবার সামনে উলটে পড়ে যাওয়া থেকে মুক্তি দিল।
আমিঃ ভেবেছিলাম পড়ে যাব
আরিফঃ আমি থাকতে! বলেছিলাম না, যে হাত একবার ধরেছি, এত সহজে ছাড়ব না
নতুন বর ৫০ কেজি ওজনের বউকে অনায়াসে তুলে বিছানায় বসিয়ে দিল। যেমন সে বলেছিল, হারডীঞ্জ ব্রীজে। একদিন কোলে ৫০ কেজি নিয়ে দেখিয়ে দিবে। বন্ধুরা মিটিমিটি হাসলো। চলছে ছবি তোলা। এরপর খাওয়া দাওয়া।খিচুড়ী রান্না হয়েছে। সবাই মিলে খাওয়া হবে। আরিফ আমাকে খাইয়ে দিল দেখে সবাই হেসেই কুল পায় না।বড় ভাইয়ারা, আঙ্কেল, সবাই খেয়ে বাইরে চলে গেছে, যাতে আমরা আড্ডা দিতে পারি। কেবল আরিফ আমি আর বন্ধুরা খাচ্ছি।হঠাত রাত ৮ টা ৩০ মিনিটে কলিংবেল বাজলো। দরজায় পুলিশ দাঁড়িয়ে।সবার ভয়ে চোখমুখ কালো হয়ে গেল। কি ব্যাপার!
:hatsoff: :hatsoff:
ঘটনার ঘনঘটা!
তোমার গল্প বলার ক্ষমতা সহজাত।মুগ্ধ।
অনেক ধন্যবাদ দাদা
জমজমাট গল্প। মনমুগ্ধকর বর্ননা।
বানানো গল্প হলে কাহিনীর বুনন নিয়ে নানা সমালোচনা করা যেতো। অনেক কিছুকেি মেলোড্রামা বলে হালকা করা, ঊড়িয়ে দেয়া যেতো।
সত্যি ঘটনায় সে সুযোগ থাকে না। কিন্তু সত্যি ঘটনার আবার অন্য সমস্যা আছে। তা হলো, এটা পাঠককে জাজমেন্টাল হতে উদ্বুদ্ধ করার সম্ভবনা থাকে।
বারো বছর পর একজন কেন নিজের জীবনের একান্ত কথা বলতে চাচ্ছে, বারো বছরে কি এমন বদলে গেছে যে সেই একান্ত অভিজ্ঞতা গুলো শেয়ার করাটা জরুরী হয়ে পড়েছে, সেইসব নিয়ে জল্পনা করতে ইচ্ছা হওয়ার সম্ভবনা থাকে।
এতসব একান্ত বিষয় যে প্রকাশ করছে, সে নিশ্চয়ই বহুমুখি সমালোচনাকেও স্পোর্টিংলি নিতে পারবে, এটা ধরে নিয়েই এই কমেন্টটা করলাম। শুনতে আপত্তি থাকলে তা জানাতে অনুরোধ করছি, আর কিছু লিখব না। আপত্তি না পেলে ছোট ছোট কিছু রিলেটেড ঘটনা উল্লেখের ইচ্ছা রইল।
শুভেচ্ছা রাশি রাশি.........
Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.
ওবশ্যই যা বলতে চান বলবেন ভাইয়া। ১২ বছর পর বলছি কারণ, পুরোটাই আমার বন্ধু , সিনিয়র আপু, ভাইয়া সবার অজানা। আমার বাবা মায়েরও। বৃদ্ধকালীন স্মৃতিচারণ বলা যায় ভাইয়া...এবছর ১২ বছর হবে ত।।"তাই লুকিং ব্যাক