ভাল, আমরা(ইনক্লুডিং মি) এখন বড় হয়ে গেছি। আমরা এখন জীবনের অনেক বড় বড় বিষয় নিয়ে ব্যাস্ত। এসব ছোটবেলার ফালতু বিষয়ে নষ্ট করার মত সময় আমাদের হাতে নাই। আমরা এখন প্রাগমেটিক। আমরা এখন জীবনের বড় বড় কঠিন সব ভারী বোঝা টানার জন্য নিজেদের জীবনের ছোট ছোট ভাল লাগাগুলোকে ত্যাগ করতে শিখেছি।
১৬বছর আগে এই দিনের এমন সময় মন খারাপ করে বাপের চৌদ্দ গুষ্টী মনে মনে উদ্ধার করতে করতে পাবনা ক্যাডেট কলেজের দিকে যাচ্ছিলাম। সেদিন ঠিক করেছিলাম জীবনে যদি কিছু করতে পারি সবার আগে বাপটাকে একটা শিক্ষা দেব। আমাকে বাসা থেকে দূরে পাঠিয়ে দেয়ার জন্য। মনে অসামান্য দুঃখ আর সামান্য কৌতুহল নিয়ে পাবনা শহরে এমন সময়।
সেই ৪ফিট ৫ইঞ্চির আমি এখন বড় হয়ে গেছি প্রায় ৫ফিট ১১ইঞ্চি। এখন এই দিনে সেই সব বন্ধু যারা নিজেদের ভাল মন্দ স্বার্থ কোনো কিছু হিসেব না করে সেই বয়সের বা অবস্থায় মাক্সিমাম লেভেলের ঝুকি নিয়ে আমার সাথে ছিল, এবং তার জন্য কোনো আত্মীয়তা বা কোনো এগ্রিমেন্টের দরকার হয় নি, দরকার হয় নি কোনো স্বার্থ চিন্তার, দরকার হয়নি কোনো কমিটমেন্টের তাদের দেয়ার জন্য আমার কাছে এখন একঘন্টা সময়ও নাই। আমি বড় হয়ে গেছি। এখন আমি নিজের লাভের হিসেব বুঝতে পারি।
যখন আমি কেবল হাটতে শিখেছি ভাল মত, রিডিং পড়তে পারি বাংলা বা ইংরেজী, তখনো আমার একটা রেজারেরই দরকার হয় না দুইটার কথা বাদই দিলাম, সে সময়কার আমাকে দেখে রাখা, বিপদ থেকে আগলিয়ে রাখা বন্ধুদের আমি ভুলে যাচ্ছি। আমি বড় হয়ে যাচ্ছি, আর যত বড় হচ্ছি তত অকৃতজ্ঞ আর স্বার্থপর হচ্ছি। বন্ধুরা তোরা আমাকে মাফ করে দিস। দিবি না জানি, কারন আমিও মাফ করতে পারতেছি না তোদের। তোদের এত কাজ?!?!?! তোরা এত ব্যস্ত???
আজ আমি আমার সেই সব বন্ধুদের খুব মিস করছি, যারা আমাকে কাটা চামচ আর চামচ কিভাবে ধরতে হয় শিখিয়েছে, যারা আমাকে সিগারেট খাওয়া শিখিয়েছে, যারা আমাকে প্রথম মেয়েদের শরীর সম্পর্কে সচিত্র জ্ঞান(জীবনমুখি শিক্ষা আরকি) দিয়েছে, যারা আমি কাঁদলে আমাকে “মেয়েদের মত কাঁদছিস কেন? প্রতিশোধ নিতে হবে” বলে আমার কান্না থামিয়েছে, যারা আমি ঘুমিয়ে পড়ার পর নাম নোট হচ্ছে দেখে আমার মশারী টানিয়ে দিত, হাউসে প্রিন্সিপাল আসছে আমাকে সেই খবর দিতে গিয়ে সিগারেট খাওয়া পার্টির সাথে ধরা খেত, যারা আমার করা অপরাধের জন্য আমার সাথে কাধে কাধ মিলিয়ে পানিশমেন্ট খেয়েছে কিন্তু আমার নাম বলে দেয় নি, যারা ওয়াটার পালিশ করলে জুতা চকচক করত না জন্য আমারটায় ফিনিশিং টাচ দিয়ে দিয়েছে, যারা জানত ওদের খাবার আমি চুরি করেছি কিন্তু এমন ভাব দেখাত কে খাইল!, আমি পছন্দ করতাম বলে যারা আমার টেবিলে ১২-১৫টা করে সুইট পাঠিয়েছে, পরীক্ষার হলে “বোকাচোদা বসে আসিছ কেন?” বলে ওর খাতা দিয়ে দিয়েছে লেখ বলে, যারা এক্সারশনে গিয়ে আমার টাকা হারিয়ে যাওয়ার পর পকেটের প্রতিটি টাকা আমাকে বের করে দিয়ে বলেছে “এতে তো তোর হবে না, চিটাগাং গিয়ে বাসা থেকে আরো নিয়ে দিচ্ছি”, যারা প্যারেন্টস ডে’ র খাবার আমার জন্য লুকিয়ে রাখত ডিনারে আমি পরোটা খাইনা বলে, যাদের ঘন্টার পর ঘণ্টা টিজ করতাম কিন্তু সামান্য জ্বর হলেও সারা রাত মাথা টিপে দিত আমার, এরকম লিখতে থাকলে আমি মহাকাব্য লিখতে পারব দোস্ত তোদের নিয়ে। আই মিস ইউ অল, মাই ফ্রেন্ডস।
আমার জীবনে এটাই আমার ফ্রেন্ডশিপ ডে। হ্যাপি ১৭ই জুন টু ইউ অল। তোদের সাথে আমার আত্মীয়তা নাই কিন্তু আত্মার সম্পর্ক আছে। আমি যতই অকৃজ্ঞ হই তোদের কথা কখনো অস্বীকার করতে পারব না, ভুলে যেতে পারব না। জানি তোরাও পারবি না। ভুলতে পারলে এত বড় একটা বোরিং লেখা পড়ে শেষ করতে পারতি না।
দূর্দান্ত লেখা, ছুঁয়ে গেল :boss: :boss: :boss:
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
হ্যাপি বার্থ ডে দোস্ত 😀
একটি বাংলাদেশ তুমি জাগ্রত জনতার,সারা বিশ্বের বিস্ময় তুমি আমার অহংকার
:clap: :clap: :clap: :clap:
মানুষ* হতে চাই। *শর্ত প্রযোজ্য
ভচ টাইপের( মানে ভয়ানক চরম) লেখা...
:boss:
... কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালবাসে!
মোর্শেদ ভাই, আপনার লেখার মধ্য দিয়ে এক ধরণের অশান্ত সময়কে ফুটিয়ে তুলছেন আপনি। শুধু এই লেখা না, আপনার ফেইসবুকের লেখা পড়েও সময়গুলোকে দেখি। দুর্দান্ত খোঁচা দিয়ে সত্যকে বুঝিয়ে দেন।
:boss: :boss: :boss: :boss: :boss:
হেরে যাব বলে তো স্বপ্ন দেখি নি