তখন বয়স আর কত হবে, মনে হয় ক্লাস ১ এর মাঝামাঝি টাইমের কথা এটা। আমি যেখানে থাকতাম, সেখান থেকে আমাদের থানা সদরের (মনোহরদীর) একমাত্র বাজারটির দূরত্ব ১ কিলোমিটারের কিছু কম। বাচ্চাকালে বাসার পাশে স্কুলে হেঁটে গেলেই অবস্থা খারাপ হয়ে যেত (লুতুপুতু বাচ্চা আছিলাম আর কি!!), আর ১ কিলোমিটারের মত হাঁটা তো অনেক কিছু। তখন আবার ঘুড়ি উড়ানোর সিজন চলছিলো। বাসার সামনের মাঠে, পাশের ধানক্ষেতের উপরের আকাশ বিকালবেলা ভরে যেত নানা রঙ-বেরঙয়ের, নানা আকারের ঘুড়িতে। একেকটার আবার বিভিন্ন লোকাল নাম ছিলো….. “তেলেঙ্গা” (যেটাকে নরমালি শহরবাসীরা ঘুড়ি বলে জানে), “ডাহুক>ডাউড” (পাখি শেপের বড় সাইজের ঘুড়ি), সাপ ঘুড়ি, ঝাড় ঘুড়ি…নামের সাথে সাথে তাদের আকারও নানা রকম।
একদিন বন্ধু টুটুল বললো, সে নাকি তার কোন মামাকে দিয়ে একটা বড় “ডাউড” ঘুড়ি বানিয়েছে; কিন্তু সেটা উড়ানোর জন্য যে নাইলনের সুতা লাগে, সেটা তার কাছে নেই। সেটা কিনতে হলে যাওয়া লাগবে ঐ বাজারে। মোটামুটি জোর করেই আমাকে সে নিয়ে গেলো তার সাথে। আমি এমনেই তখন অত হাঁটতে পারি না, মোটামুটি অর্ধেক পথ গিয়েই আমার অবস্থা কাহিল। টুটুল আমাকে মোটামুটি তাড়া দিয়ে বাজারের দিকে হাঁটিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলো।
বাজারে ঢুকতে নিবো, এমন সময়ে মনে হল আমার পেটের মাঝে কি যেন গুড়গুড় করে উঠলো, সাথে পেট ব্যাথা। বুঝলাম, এমন সময়ে প্রকৃতি আমাকে স্মরণ করেছে। পাশে হাঁটতে থাকা টুটুলকে বললাম, “দোস্ত, অবস্থা তো ভালো না।”
– ক্যান, হইছে কি?
– খুব বাথরুমে পাইছে রে!
– কয় নং? ১ না ২?
– ২ নং দোস্ত (ততক্ষণে আমার মুখ লাল হওয়া শুরু হয়ে গেছে চাপ আটকাতে গিয়ে)
– আরে ব্যাপার না, আয় আগে কাম শেষ কইরা লই।
বলে আমাকে আর সুযোগ দিলো না ও, টেনে নিয়ে গেলো বাজারের ভিতর।
এত্ত দোকান ঘুরছে, অথচ তার মনমতো সূতা পাচ্ছে না সে। আমার অবস্থা খারাপ থেকে খারাপতর হচ্ছে আরো। তাকে যে বলবো, ঐ সাহসও পাচ্ছি না……পাছে আবার ধমক মেরে বসে আমাকে। শেষে যখন একদমই পারছি না, তখন তার পিঠে কিল মারলাম, “দোস্ত, আর কতক্ষণ?” আমার কণ্ঠের অস্বাভাবিক অবস্থার জন্যই সে আমার দিকে তাকালো; তার উপর যখন দেখলো আমার মুখ পুরা লাল, পুরা ঘেমে গেছি আমি……সে বলে, “চল আগে, তোর ব্যবস্থা করি।”
বাজারের বাইরে এক পাশে তখন একটা পাবলিক টয়লেট ছিলো, কিন্তু নানারকম পাবলিকদের জন্য সে টয়লেটের অবস্থা ছিলো খুবই খারাপ। মোটামুটি দৌড়িয়েই আমি ঢুকতে গেলাম ১ নং টয়লেটে; কিন্তু বসতে গিয়েই খেয়াল হল, বদনা নেই। ৪ টা টয়লেট পাশাপাশি, আমি মোটামুটি ঝড়ের বেগে বের হলাম, ২ নং টয়লেটের দরজা খুললাম। আমার অবস্থা দেখে টুটুল বুঝে ফেলেছে যে ১ নং এ বদনা নেই, সে ও আমার পিছুপিছু আসলো। ২ ৩ নং এ বদনা পেলাম না……৪ নং দরজাটা খুললাম, আর সঙ্গে সঙ্গে একগাদা গালিগালাজ শুনতে হল আমাদের দুইজনকে। জনৈক ব্যক্তি পাবলিক টয়লেটের একমাত্র বদনা দখল করে আরামে ২ নং কাজ সারছিলেন, আর ঐ জায়গার কোন টয়লেটেই ছিটকিনি নেই। উনি ভাবতেও পারেননি যে তার আরামের কাজে আমরা দুই বিটলা গিয়ে বাধা দিবো! গালিগালাজ শুনতে যা দেরি, সঙ্গে সঙ্গে উনার মুখের উপর দরজায় ধাক্কা মেরে আমরা দুইজন দৌড়……দৌড়াতে দৌড়াতে একদম আমাদের বাসার সামনে। ঐ লোকের ধমক খেয়ে প্রকৃতিও ভয় পেয়ে আমাকে ডাকা বন্ধ করে দিয়েছিলো হয়ত!
ঐ ঘটনার পর স্কুলে আমার একটা নতুন নাম হয়ে গিয়েছিলো……আর বললাম না নামটা।
বাজারে পাবলিক টয়লেট! বলিস কিরে? 😮
যাই হোক, এসব ক্ষেত্রে মসজিদের টয়লেট সবচেয়ে সেইভ। মোটামুটি ভালই পরিষ্কার থাকে এবং সাথে আনুষঙ্গিক সামগ্রীও থাকে... 😀
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
ভাইয়া, ঠেলায় পড়লে যা হয় আর কি 😕
:khekz: :khekz: :khekz:
মানুষ* হতে চাই। *শর্ত প্রযোজ্য