বাঙ্গালী লাদেন!

(প্রারাম্ভ-কথাঃ লেখাটা আরম্ভ করেছিলাম ১৫ আগষ্ট। শেষ করা হয়ে ওঠেনি নানান ঝামেলায়। কিন্তু আজ যখন বাবা তার এক বন্ধুর ফেইসবুক স্ট্যাটাস দেখাল, তখন হুহু করে লেখাটা চলে আসলো। মনে আরো অনেক কথা ঘুরপাক খাচ্ছে- গুছাতে পারলাম না সেভাবে- দুঃখিত।)

আমি নিজেকে খুব ভাগ্যবানদের মধ্যে গন্য করি কারণ পরিবার থেকে শ্রদ্ধাভাজনকে শ্রদ্ধা করার মত শিক্ষা পেয়ে এসেছি, নিজের অস্তিত্বের প্রতি সম্মান করতে শিখিছি। আমি আমার জাতি ও নাগরিক সত্বা নিয়ে গর্ববোধ করি আর আমার এই গর্বের কারণ এই দেশের জন্মের ইতিহাস, জন্মদানের ইতিহাস। আমি এমন একটা দেশে জন্ম নিয়েছি যে দেশে লক্ষ্যপ্রান হাসতে হাসতে দেশকে ভালোবেসে শহীদ হয়েছে, যে দেশ এমন একজন বলিষ্ঠ নেতা পেয়েছে যার সুযোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের মানচিত্রের ময়দানে মাথা উঁচু করে নিজের অবস্থানের কথা জানান দেয়। তাই আমি ভনিতা না করেই বলি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে আমি ভালোবাসি, শ্রদ্ধা করি, উনি পূজনীয়। আর এই জন্য যারা তাকে হত্যা করেছে বা হত্যার সাথে জড়িত ছিলেন তাদের আমি ধিক্কার জানাই এহেন কাপূরুষচিত লজ্জাষ্কর কর্মকান্ডের জন্য। যত ক্ষোভই থাকুক না কেন, রাতের অন্ধকারে লুকিয়ে লুকিয়ে আচমকা কারো ঘরে ঢুকে কেবল আক্রোশ আর ক্ষোভের বশেই পুরো পরিবারকে হত্যা করা- এ কেমন ন্যায়? সবচাইতে দুঃক্ষজনক ব্যাপার হচ্ছে এর মধ্যে অনেকেই আবার মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুরই পথ অনুসারী। আত্মপক্ষ সমর্থন করে তারা বলেছেন এই হত্যা দেশ ও জাতির জন্য প্রয়োজন হয়ে পরেছিল। কাকে হত্যাটা জরুরী হয়ে পরেছিল? বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, শেখ জামাল, শেখ কামাল কে? শেখ ফজিলতুন্নেসা কে? শেখ রাসেলকেও? জাতির প্রয়োজনে, দেশের প্রয়োজনে পুরো পরিবারকে কেন হত্যা করা হল আজ অব্দি আমার মাথায় খেলে না।

এতো ক্ষোভ? এতো রাগ? মজার ব্যাপার হল খুনীদের স্বজন-পরিজনেরা এখনো বিশ্বাস করে খুনীরা কোন পাপ করেনি! আজ সকালে আমার বাবা আমাকে তার এক বন্ধুর ফেইসবুক স্ট্যাটাস এবং এর প্রেক্ষিতে আসা মন্তব্যগুলো দেখাচ্ছিল। এর মধ্যে একজন রমনী যিনি আবার খুনীদলের মধ্যেকার আলোচিত দুই খুনীর বেশ কাছের জন, বেশ দাম্ভিকতা পূর্ণ সব মন্তব্য করেছেন- বঙ্গবন্ধু পরিবারকে হত্যার মধ্য দিয়ে তার ওই দুই স্বজন জাতির প্রতি ন্যায় প্রতিষ্ঠা করেছে এবং তাদের “শহীদ” উপাধীতে ভূষিত করার মধ্য দিয়ে “ন্যাশনাল হিরো” বানানোর জোড়দার প্রস্তাব তিনি উত্থাপন করেছেন। স্বজন হারিয়ে উনি যদি পাগলের প্রলাপ বকেন, তাহলে আর কিছু বলার নাই। তবে উনি মানসিক বিকারগ্রস্থ নন- সুস্থ, স্বাভাবিক এবং বেশ কর্মঠ-উদ্যমী নারী। তার মন্তব্য পড়ে মনে হয়েছে, উনি তাহলে নিশ্চই ওসামা বিন লাদেনের ভক্ত হবেন। কারণ, টুইন টাওয়ার ধ্বংসের পরও লাদেনের স্বীকারোক্তি এমনই নির্ভিক ও পাপ-মুক্ত ছিল। উনারা একই ধারার দর্শনে বিশ্বাসী- কাউকে পছন্দ হল না, বা দেশ ও জাতির (!) জন্য তাদের নিজস্ব বিচারে ক্ষতিকর মনে হল- গুষ্টিসুদ্ধ টপাটপ মেরে ফেল। লাদেনের বিচারেও মার্কিনীরা তাদের গোষ্ঠির জন্য হুমকিস্বরুপ ছিল বলেই এমন হামলা তারা চালিয়েছে। এখন যদি আমার কাছে দেশের কোন শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্বকে দেশ ও জাতির জন্য ক্ষতিকর বলে মনে করি, তাহলে তার চৌদ্দগুষ্টিসুদ্ধ সব্বাইকে মেরে ফেলব? তবে আর বিশ্ববাসী তোমরা লাদেনকে কেনো বর্বর বলছ? বাংলাদেশী ভাই ও বোনেরা, দয়া করে চোখ মেলে তাকান- দেখুন, আসে পাশে কত কত বাঙ্গালী লাদেন ঘুড়ে বেড়াচ্ছে!

১,৩৫৫ বার দেখা হয়েছে

৬ টি মন্তব্য : “বাঙ্গালী লাদেন!”

  1. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    ফেসবুক আর বিভিন্ন ব্লগে মানুষের লেখা, মনোভাব দেখে আমি মাঝে মাঝে রীতিমত শিউরে উঠি... আমাদের আশেপাশে শুধু লাদেন না, অগনিত সাইদী-নিজামী, পরিমল, হাসান সাইদ সহ আরো সব ভয়ঙ্কর চরিত্র ঘুরে বেড়াচ্ছে।

    লেখা ভাল লেগেছে :thumbup:


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  2. সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

    জিতু, তোমার পর্যবেক্ষণ ভালো লাগলো। আকাশের মন্তব্যেও একমত। অসুস্থ সব মানুষ আমাদের ঘরে, পরিবারে, সমাজে, রাষ্ট্রে ভিড় করে আছে! এদের জন্য ভালো কিছু স্বপ্ন দেখাও কঠিন!!


    "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

    জবাব দিন
  3. অয়ন মোহাইমেন (২০০৩-২০০৯)

    আপনার সাথে একমত না হয়ে পারলাম না আপু। চারপাশের সব চোর-বাটপারদেরও এ লিস্ট এই ফেলা যায়। তারাও তো তাদের কাজের পিছে কোনো না কোনো কারণ জড়িয়ে দিচ্ছে। প্রায় সবাই যখন একই অপরাধ করে তখন তা আর অপরাধ থাকে না, অবশেষে হয়তো এ লাদেনদেরই জয় হবে।

    ভালো লাগলো লেখাটি :thumbup:

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।