আমার মেয়েটা একটা রিতীমতো গল্পখোড়। প্রায়ই মায়েদের দেখি অনুযোগ করতে তাদের বাচ্চাদের টেলিভিশন আসক্তি নিয়ে। আমার তো মাঝে মাঝে বিরক্তিই লাগে যে টেলিভিশন নিয়ে মারযুকাহ যদি ব্যাস্ত থাকতো, তাইলে তো আমি অন্তত সংসারের কাজ, পড়াশুনা ঠিকঠাক মত করতে পারতাম। নাহ, তাকে গল্প শোনাতে হবে। যাই হোক অনেক অনেক গল্পের মধ্যে তার ভীষন পছন্দ আমার স্বরচিত একটা গল্প। গল্পটা অনেকটা এমন,
” আমার কাছে আসার আগে তুমি আল্লাহ’র কাছে ছিলে, জানো? আল্লাহ’র কাছে খুব মজার একটা নার্সারি আছে। সেখানে সব ছোট্টো ছোট্টো বাচ্চারা থাকে। সেখানে সব বাচ্চারা অনেক মজার মজার খেলা খেলে। অনেক খেলনা আছে সেখানে। তুমি সেখানে সারাক্ষন খেলাধুলা করতে। কিন্তু সারাক্ষন খেলতে কি ভালো লাগে বল? একদিন তুমি খুব বোর হয়ে গেলে। আল্লাহ কে তখন তুমি বললে, “আল্লাহ, আমার এতো খেলতে ভাল্লাগছে না, অনেক বোর লাগছে।” আল্লাহ তখন তোমাকে জিজ্ঞেস করলেন তাইলে তুমি কি চাও?” তুমি বললে “আমি আইস ক্রীম আর চকলেট চাই।” আল্লাহ তো তোমাকে অনেক আদর করতেন তাই তোমাকে এত্তো এত্তো চকলেট আর আইস ক্রীম দিয়ে দিলেন…কিন্তু একটা সময় তোমার সেগুলোও আর ভালো লাগল না, সারাক্ষন চকোলেট আর আইস ক্রীম খেতে কি ভালো লাগে? তখন তুমি আবার আল্লাহ কে বললে, “আল্লাহ আমার এসবও ভালো লাগছে না…” আল্লাহ বললেন, “তাইলে তুমি কি চাও?” তুমি বললে, “আমি জানি না…” আল্লাহ বললেন, “তুমি মা চাও?” তুমি বললে, “মা কে?” আল্লাহ তখন তোমাকে বললেন, “মা হচ্ছে তোমার সব থেকে আপন মানুষ, যে তোমাকে সারাক্ষন আদর করবে, যত্ন করবে, গোসল করিয়ে দেবে, খাবার খাইয়ে দেবে, তোমাকে নিয়ে খেলা করবে, বেরাতে নিয়ে যাবে…” তখন তুমি বললে, “আল্লাহ আমাকে তারাতারি আমার মা’র কাছে নিয়ে যাও।” আল্লাহ তখন তোমাকে আমার কাছে ছুড়ে দিল, আর তুমি আমার পেটের ভিতর ঢুকে গেলে*। আস্তে আস্তে সেখানে তুমি একটু একটু করে আমাকে চিনা শুরু করলে। যখন পুরাপুরি আমাকে চিনে গেলে আর আমি ও তোমাকে পুরা চিনে গেলাম আমি তখন ডাক্তার আন্টির কাছে দিয়ে পেট কেটে তোমাকে বের করে নিয়ে আসলাম। এ পর তুমি আমাকে আর আমি তোমাকে পেয়ে গেলাম।”
এই হচ্ছে মারযুজার প্রিয় গল্প। কিন্তু একটা পর্যায় এসে আমি খেয়াল করলাম এই পুরা প্রসেসে জন্মদাতা পিতার কোন ভূমিকাই রাখা হয়নি। তাই তখন এই গল্পের মাঝে একটা লাইন ঢুকিয়ে দিলাম যে *আল্লাহ তখন তোমার আব্বু কে ডেকে বলল, “যাও, মারযুকাহ কে ওর মার কাছে নিয়ে যাও।”
এই মোটামোটি দীর্ঘ্ গল্পটা বলার একটা কারণ আছে। কারণটা হচ্ছে কন্যা হিসেবে বাবার অবদান অনুধাবন করা। জন্মের ইতিহাসে একজন পিতার অবদান অনস্বীকার্য। তবে কোথায় যেন শুনেছিলাম, গর্ভে ধারন করলেই মা হওয়া যায় তবে বাবা ডাকটা অর্জন করে নিতে হয়। দায়িত্ব, কর্তব্য, ভালোবাসা, আদর, আহ্লাদ, আবদার পূরণ ,মাথার উপর নিশ্চিন্ত আশ্রয়, শাসন, গাইডলাইন দেখানো, বন্ধুত্ব এসব কিছু দিয়ে তবেই কেউ বাবা হবার যোগ্যতা অর্জন করে।
আমার ছেলেবেলায় আমার মায়ের চাইতে বাবার সাথে অনেক বেশী সখ্যতা ছিল। আমার জন্মের ৯ বছর পর আমার ছোট ভাইটি জন্মায়, তাই একচ্ছত্র আদর আহ্লাদ উপভোগ করার সৈভাগ্য আমার হয়েছিলো। মা মোটামোটি শাসনকারী রোল প্লে করতেই মনে হয় বেশী পছন্দ করতেন, আর বাবা তার সদা হাস্যজ্জল আর বন্ধুসুলভ স্বভাব দিয়ে খুব সহযেই আমার অনেক বেশী কাছে আসতে পেরেছিলেন। মনে আছে মা সারাদিন অনেক চেঁচামেচী করেও পড়াতে বসাতে পারে নি, তখন রাতের বেলায় বাবার একটা কথায় কেন যেন সুর সুর করে বই নিয়ে বসে গিয়েছিলাম, নাহ, আমার বাবা কে এতোটুকু ভয়ও আমি কক্ষন পাইনি। তারপরও বাবার ব্যাক্তিত্বে, তার কথায়, তার কন্ঠে কিছু একটা ছিল। এটাকে কমান্ডিং বললেও ভুল হবে। আমার বাবা একাধারে আমার বন্ধু ও আমার গাইড। জীবনের যত বড়ই সমস্যায় পড়েছি, যেকোন জটিলতায় বাবার সাথে নির্দ্বিধায় আলোচনা করতে স্বাছ্যন্দ্য বোধ করেছি। এবং আমার কখনও মনে পরে না বাবা তার নিজস্ব সিদ্ধান্ত আমার উপর চাপিয়ে দেবার চেষ্টা করেছে। কিন্তু তার গাইডলাইনটা এমন ছিলো যে ভালো খারাপ দুই দিক সমানভাবে আলোচনা করতেন আর সবসময় আমাকেই উদবুদ্ধ করতেন নিজের সিদ্ধান্ত নিজেকেই নিতে। অনেক খোলামেলা একটা সম্পর্ক আমাদের ভিতর। এখনও এমনকি ফেইসবুকে পর্যন্ত আমার আর বাবার কমন ফ্রেইন্ডের সংখ্যা ৮৭!
শুধু বাবা হিসেবে না, একজন স্বামী হিসেবেও তিনি প্রচন্ড সফল। দুনিয়াতে খুব কম স্ত্রীদের মধ্যে আমার মা একজন যিনি তার স্বামিটিকে নিয়ে ১০০% সুখী। আসলে কথাটা উল্টাভাবে বললে আরো ভাল এক্সপ্লেইন করা যাবে, আমার মা একবাক্যে স্বীকার করে নেবেন যে, আমার বাবা আমার মাকে ১০০% সুখে রেখে এসেছেন তাদের ৩৩ বছরের বিবাহিত জীবনে। আসলে আমরা পুরো ফ্যামিলী আমার বাবার উপর খুব বেশীই ডিপেন্ডেন্ট। এ কারণে দেখা যায়, অন্যান্য ফ্যামিলী গুলোর সাথে আমাদের পরিবারের কালচারে অনেক তফাত। আমার বাবার রান্নার হাত প্রচন্ড ভালো, আর রান্নার শখও তার অনেক। তার তৈরী তাজিকিস্তানী বিরিয়ানী একবার খেলে সারাজীবন সেটার স্বাদ মুখে লেগে থাকার কথা, শীতকালে আমার বাবাই জোগাড় যন্তর করে আচার বানান। আমার মাকে অনেক রাত জেগে থাকতে হয় বলে সকালে উঠতে পারেন না, তাই সকালের নাস্তা বা আমার ছোট ভাইয়ের টিফিনটা পর্যন্ত ঠিকঠাক করে দিতে দেখেছি বাবাকে। আমি মাঝে মাঝে বলি বাবা আমার মা কে পঙ্গু করে রেখেছেন। বাবা একদিন ওয়াশিং মেশিন না চালালে তাদের বাসায় কাপড়টা ধোয়া হয় না! এগুলো খুব বেশী হাড়ির খবর, আমি জানি। কিন্তু আমার বাবার সম্পর্কে বলতে গেলে এগুলো না বললে অনেক কিছুই বোঝানো যাবে না।
বাবার বন্ধুপ্রিতীর কথা অল্প হলেও না বললেই না। বন্ধুদের জন্য অন্তপ্রান হওয়ায় মাঝে মাঝেই আমার মায়ের খুন্সুটি অভিযোগ, “তোমার বাবার বিয়ে করার দরকারই ছিলো না!” মা বলে তাদের বিয়ের প্রথম দিকে এতো বন্ধুবান্ধব দেখে, তাদের আপ্যায়ন করতে করতে, সামাজিকতার খাতিরে নয়, হৃদয়ের টানেই তাদের সাথে বেহিসাবী সময় কাটাতে গিয়ে খুব ভ্যাবাচেকা খেয়েছিলো। আমরা তো জন্মের পর থেকেই বাবার বন্ধু-বান্ধব দেখে দেখে অভ্যস্ত। বাবার ব্যাচে বাবার একটা নিক নেইমও আছে, “জিন্দা ফ্রেইন্ড ডাইরেক্টরী”! বাবার বাসার একটা গেষ্টরুম বরাদ্দ আছে বাবার বন্ধুদের জন্য। বিশেষ করে ওল্ড ফৌজিয়ানের অনেকেই চিটাগং চ্যাপ্টারের ১০ম ব্যাচের সাইফুল ইসলামকে অনেকেই চিনে থাকবেন। উনি আমাদের একজন ফ্যামিলী মেম্বার হয়ে দাড়িয়েছেন, এমনকি আমার মেয়ে পর্যন্ত জেনে যে সেই রুমটি তার সাইফ নানা ভাইর রুম!
নানা হিসেবে আমার বাবা কেমন সেটা সিসিবিতে আর নতুন করে বলার কোন প্রয়োজন নাই, বাবাএ প্রথম এবং একমাত্র ব্লগ আমার নতুন বান্ধবী এতো কষ্ট করে বাংলাতে টাইপ করে লিখেছে সে শুধুমাত্রই নাত্নীর প্রতি তার অকৃত্তিম ভালোবাসা থেকে। অবাক হয়ে লক্ষ্য করি মারযুকার সাথে আজ এই বয়সেও বাবা ঠিক একই আদর, আহ্লাদ, মাতামাতি, আবদার পূরণ করে যা অনেক দিন আগে মারযুকার মায়ের সাথে করতেন। এতোটুকু বিরক্তি বা ক্লান্তি নেই!
আমি গর্বিত, কৃতজ্ঞ সৃষ্টি কর্তার কাছে, সৌভাগ্যবান এমন বাবার মেয়ে হবার জন্য। আজ ১৩ নভেম্বর আমার বাবার ৬৩ তম জন্মদিন। শুভ জন্মদিন, বাবা।
শুভ জন্মদিন বজলু ভাই / কেককুক খাইতে চাই 🙂
পুরোদমে সাপোর্ট :awesome:
ডবল কেকুক পাওনা হইলাম 😀
শুভ জন্মদিন বজলু ভাই।
বজলু "ভাই"য়ের জন্মদিনে অনেক শুভেচ্ছা...বজলু ভাই রক্স :thumbup:
জিতু "আপু"কেও বাবার জন্মদিনের শুভেচ্ছা... 😉 :goragori:
নিশ্চই বজলু ভাইয়ের বান্ধবীও আজকে পার্টি দিবে... :party: তার বান্ধবী কি গিফট দেয় জানায়েন তো আপু :gulti: (সম্পাদিত)
শুভ জন্মদিন বজলু ভাই। 🙂
অসাধারণ লেখার জন্য আপু কে :hatsoff:
আপনি সত্যি ই ভাগ্যবতী .....সবার এমন বাবা-ভাগ্য হয়ত হয়না .....
শুভ জন্মদিন বজলু ভাই 😀
কেক্কুক কই?মাস্রুফ ভাই আসেন কেকের দাবীতে একাত্ম হই...
কেক না রে,তাজিকিস্তানি বিরিয়ানি...
😀
You cannot hangout with negative people and expect a positive life.
বজলু ভাই
শুভ জন্মদিন বজলু ভাই। আপনার পারিবারিক জীবন ২০০% সুখের হোক। :hatsoff:
জিতু আপুর গল্পটা সুন্দর ছিল। :thumbup:
ধন্যবাদ শরীফ শুভকামনা আর লেখার প্রশনহসা দুইয়ের জন্যই।।
You cannot hangout with negative people and expect a positive life.
আপা খুবই ভালো লাগলো আপনার লেখাটা . আমাদের অনেকের মনেই বাবা মা এর জন্য এরকম ভালবাসা লুকিয়ে আছে যেটাক হয়ত আমরা শব্দ রূপ দিতে পারিনা... আপনি খুব সুন্দর করে এটা পেরেছেন . .
শুভ জন্মদিন বজলু ভাই :hatsoff:
"Never think that you’re not supposed to be there. Cause you wouldn’t be there if you wasn’t supposed to be there."
- A Concerto Is a Conversation
কেমন বাবা হওয়া দরকার সেটা বজলু ভাইয়ের কাছে থেকে শেখার চেষ্টা করব। যদিও অনেক দেরী আছে।
আপনাদেরকে শুভেচ্ছা।
শুভ জন্মদিন বজলু ভাই। :awesome: :tuski: :party:
জিতু আমার বন্ধু তাই আপনাকে ভাই/ওর মাকে ভাবী/আপনার বান্ধবীকে নাতনী বলার জন্য মাঝে মাঝে ঝারি দিলেও আমি জানি সে খুশিই হয়।আমি এমন ফৌজিয়ান দেখেছি যার বাবা ফৌজিয়ান হলেও তার বাবার বন্ধুদের আংকেল বলতে।কিন্তু আমার জন্য কোন কারনেই কোন ফৌজিয়ানকে চাচা বলা সম্ভব না।আর এ কথাও সত্যি আপনার সাথে ব্যাচের ব্যবধান ৩০ না হয়ে ৬০ হলেও ভাই বলতাম।অবশ্যই ক্যাডেট(বিশেষ করে ফৌজিয়ান) নিয়ে আমার আবেগ একটু বাড়াবাড়ি রকমের বেশি।
জিতু,
তোর লেখা অসাধারণ হয়েছে।এক টানে পড়ে শেষ করলাম।আরো বেশি বানান ভুল হলেও কিছু বলার ছিলনা।গালি দেয়ার চাঞ্চ নাই। 😛
হ্যাপী বাড্ডে বজলু ভাই আংকেল 😀
আপনার জন্মদিন উপলক্ষ্যে কি কি খাইতে চাওয়া যায় তার একটা লিস্টি বানাইতে বসছি B-)
শুভ জন্মদিন বজলু ভাই। শতায়ু হোন আর মেয়ের-পরিবারের ভালোবাসায় বেঁচে থাকুন এই দোয়া করি।
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
কবে খেতে আসবো শিজ্ঞিরি বলেন-ইয়ে,জিটুজিতে এইটা একটা আইটেম রাখা যায়না? :shy:
আহা,তাজিক বিরিয়ানির( তাজিক ভাষায় বলে প্লভ বা পোলাও) ছবি দেখলাম...বজলু ভাই...খিদা লাগছে... :((
অন্তত রেসিপিটা পাওয়া গেলে ভাল হইত। সবাই হয়ত সেখানে যেতে পারব না। অন্যভাবে যদি কোন ব্যবস্থা করা যায় আর কি...
শুভ জন্মদিন বজলু ভাই......বুঝলাম না...সবাই তাজিকিস্তানী বরয়ানী রাইখা শুধু কেক খাইতে চায় ক্যান ??? আমি তো বিরিয়ানীর স্বপ্নে বিভোর হয়ে যাচ্ছি । B-)
শুভ জন্মদিন বজলু ভাই/আংকেল। তাজিকিস্তানী বিরিয়ানী খাইতে চাই।
জিতুপ্পীর ব্লগ বরাবরের মত বোস হইসে। :thumbup: :boss:
বরাবরের মতই সুন্দর!....লিখাগুলো পড়ার সময় মনে হয়- তুই কথা বলছিস! কক্ষনও ফেক lagey na re! আঙ্কেলের বিরানী খেতে মন চায়!
যাহ্, একদিন দেরীতে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি বজলু ভাই কে।
তাঁর আরো পোস্টের অপেক্ষায় আছি।
জিতু, বাবাকে বলো আরেকটা মারদাঙ্গা পোস্ট দিতে।
তুমি একটু চুপচাপ ছিলে ক'দিন। ব্যস্ত, না মন খারাপ!
দেরি হয়ে গেল! :(( :((
শুভ জন্মদিন ভাইয়া (আংকেল কমু না 😛 , আফটার অল ক্যাডেটস আর অলওয়েজ ইয়ং)।
তাজিক বিরিয়ানী দিয়া লাঞ্চ করতে মঞ্চায়! 😕
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
এইটা আমিও বলতে চাইছিলাম মেনু হিসেবে রাখার জন্য।যদি না থাকে তাইলে বজলু ভাই এন্ড জিতুপি দুইজনেরই খবর কইরা ফালামু :grr: :duel: :gulli2: :chup: :goragori: